অদ্রিতা দাস
যানজট, কোলাহল, হর্নের আওয়াজ, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা ফেরিওয়ালার হাঁক—এ হলো বাংলাদেশের শহরগুলোর নিত্যদিনের প্রতিচ্ছবি। শহরের এই ব্যস্ততার মাঝেও প্রতিনিয়তই আমাদের নজর কেড়ে নেয় দেয়ালে এঁটে থাকা বৈচিত্র্যময় নানান পোস্টার। কখনো রাজনৈতিক নেতার মুখ, আবার কখনো পণ্যের বিজ্ঞাপনই যেন শহরের দেয়ালগুলোর ভাষা হয়ে উঠেছে; যেখানে ফুটে ওঠে সমাজ, রাজনীতি ও বাণিজ্যের রঙিন প্রতিযোগিতা। কিন্তু পোস্টারের এই সংস্কৃতি কি আদৌ শহরের পরিবেশকে রঙিন করে তোলে, নাকি এটি শুধু দৃষ্টিদূষণের আরেক নাম?
পোস্টার একটি বহুল প্রচলিত প্রচারমাধ্যম। কিন্তু পোস্টারকে প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা আজকের কথা নয়; বরং এর ইতিহাস অনেক পুরোনো। ১৪৪০ সালে জোহানেস গুটেনবার্গ মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের পর থেকে লিখিত ও চিত্রভিত্তিক প্রচারণা সহজ হয়। তবে পোস্টার তৈরিতে বিপ্লব ঘটে ১৯ শতকের শেষে লিথোগ্রাফি প্রযুক্তির আবিষ্কারের পর থেকে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধসহ বিভিন্ন স্বাধীনতা আন্দোলন, নারী অধিকার, শ্রমিক অধিকার আদায়ে পোস্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে ওঠে। পোস্টার মানুষের মনে জাগ্রত করে দেশপ্রেম এবং গড়ে তোলে সচেতনতাবোধ।
তবে আমরা এখন যখন রাস্তায় বের হয়েই হাজারটা রাজনৈতিক নেতার মুখদর্শন করি, তা কখনো কখনো সচেতনতা তৈরির বদলে বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। শুধু রাজনৈতিক কিংবা বিজ্ঞাপনের পোস্টারই নয়, বিভিন্ন চলচ্চিত্রের অরুচিকর পোস্টার যেন শহরের দেয়ালগুলোর প্রতিদিনের সঙ্গী। দেয়ালের বাইরেও দোকানের শাটার, রাস্তার ধারের বৈদ্যুতিক খুঁটি, এমনকি বাড়ির দরজাতেও দেখা যায় বিভিন্ন পোস্টারের সমাহার। বিশেষ করে নির্বাচনকালে প্রচারণার জন্য পোস্টারের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। এখন আবার নতুন করে দৃষ্টি কাড়ে স্কুল-কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞাপনের লিফলেট বিতরণের কাজ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এত এত পোস্টারের শেষ আশ্রয়স্থল কোথায়?
এর উত্তর হিসেবে বলা যায়, বেশির ভাগ দেয়াললিপি তথা পোস্টার পড়ে থাকে নর্দমা কিংবা জলাশয়ে। যার কারণে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতাসহ নানান সমস্যা। তা ছাড়া, পোস্টারে ব্যবহৃত সলভেন্টভিত্তিক কালি কিংবা পেট্রোলিয়ামনির্ভর কালি আমাদের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে, ২০১২ সালে দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইন অনুযায়ী দেয়ালে পোস্টার লাগানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, যাঁদের দ্বারা এই আইন বাস্তবায়ন হওয়া উচিত, সেসব রাজনীতিবিদই অসংখ্য পোস্টার ছাপিয়ে আইন লঙ্ঘনের জন্য জনসাধারণকে উসকে দেয়। ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, আইনটি প্রণয়নের এক দশক পরও কার্যকর ছিল না। ২০২৩ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) আইন বাস্তবায়নের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যাতে যত্রতত্র পোস্টার লাগালে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ থাকে। কিন্তু সার্বিকভাবে বলা যায়, আইনের প্রয়োগ না থাকার কারণে ২০১২ সালের আগের চেয়ে পরে দেয়ালে পোস্টার লাগানোর হার আরও কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।
পোস্টার সংস্কৃতি আমাদের সামাজিক ইতিহাসের একটি অংশ হলেও বর্তমানে শহরের সৌন্দর্য নষ্টের একটি বড় কারণ হলো এই পোস্টার। আধুনিক যুগে সবকিছু যেহেতু অনলাইনের মাধ্যমে করা হচ্ছে, তাই পোস্টার ছাপানোর পরিবর্তে অনলাইনকে কাজে লাগিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো অসম্ভব কিছু নয়। এমনকি এখন অনেক সচেতন নাগরিক বিকল্প হিসেবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, ব্যানার ও অনলাইন বিজ্ঞাপন ব্যবহার করছে। এই পরিবর্তনই প্রমাণ করে, প্রযুক্তি এখন পরিবেশবান্ধব প্রচারের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
যানজট, কোলাহল, হর্নের আওয়াজ, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা ফেরিওয়ালার হাঁক—এ হলো বাংলাদেশের শহরগুলোর নিত্যদিনের প্রতিচ্ছবি। শহরের এই ব্যস্ততার মাঝেও প্রতিনিয়তই আমাদের নজর কেড়ে নেয় দেয়ালে এঁটে থাকা বৈচিত্র্যময় নানান পোস্টার। কখনো রাজনৈতিক নেতার মুখ, আবার কখনো পণ্যের বিজ্ঞাপনই যেন শহরের দেয়ালগুলোর ভাষা হয়ে উঠেছে; যেখানে ফুটে ওঠে সমাজ, রাজনীতি ও বাণিজ্যের রঙিন প্রতিযোগিতা। কিন্তু পোস্টারের এই সংস্কৃতি কি আদৌ শহরের পরিবেশকে রঙিন করে তোলে, নাকি এটি শুধু দৃষ্টিদূষণের আরেক নাম?
পোস্টার একটি বহুল প্রচলিত প্রচারমাধ্যম। কিন্তু পোস্টারকে প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা আজকের কথা নয়; বরং এর ইতিহাস অনেক পুরোনো। ১৪৪০ সালে জোহানেস গুটেনবার্গ মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের পর থেকে লিখিত ও চিত্রভিত্তিক প্রচারণা সহজ হয়। তবে পোস্টার তৈরিতে বিপ্লব ঘটে ১৯ শতকের শেষে লিথোগ্রাফি প্রযুক্তির আবিষ্কারের পর থেকে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধসহ বিভিন্ন স্বাধীনতা আন্দোলন, নারী অধিকার, শ্রমিক অধিকার আদায়ে পোস্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে ওঠে। পোস্টার মানুষের মনে জাগ্রত করে দেশপ্রেম এবং গড়ে তোলে সচেতনতাবোধ।
তবে আমরা এখন যখন রাস্তায় বের হয়েই হাজারটা রাজনৈতিক নেতার মুখদর্শন করি, তা কখনো কখনো সচেতনতা তৈরির বদলে বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। শুধু রাজনৈতিক কিংবা বিজ্ঞাপনের পোস্টারই নয়, বিভিন্ন চলচ্চিত্রের অরুচিকর পোস্টার যেন শহরের দেয়ালগুলোর প্রতিদিনের সঙ্গী। দেয়ালের বাইরেও দোকানের শাটার, রাস্তার ধারের বৈদ্যুতিক খুঁটি, এমনকি বাড়ির দরজাতেও দেখা যায় বিভিন্ন পোস্টারের সমাহার। বিশেষ করে নির্বাচনকালে প্রচারণার জন্য পোস্টারের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। এখন আবার নতুন করে দৃষ্টি কাড়ে স্কুল-কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞাপনের লিফলেট বিতরণের কাজ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এত এত পোস্টারের শেষ আশ্রয়স্থল কোথায়?
এর উত্তর হিসেবে বলা যায়, বেশির ভাগ দেয়াললিপি তথা পোস্টার পড়ে থাকে নর্দমা কিংবা জলাশয়ে। যার কারণে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতাসহ নানান সমস্যা। তা ছাড়া, পোস্টারে ব্যবহৃত সলভেন্টভিত্তিক কালি কিংবা পেট্রোলিয়ামনির্ভর কালি আমাদের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে, ২০১২ সালে দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইন অনুযায়ী দেয়ালে পোস্টার লাগানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, যাঁদের দ্বারা এই আইন বাস্তবায়ন হওয়া উচিত, সেসব রাজনীতিবিদই অসংখ্য পোস্টার ছাপিয়ে আইন লঙ্ঘনের জন্য জনসাধারণকে উসকে দেয়। ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, আইনটি প্রণয়নের এক দশক পরও কার্যকর ছিল না। ২০২৩ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) আইন বাস্তবায়নের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যাতে যত্রতত্র পোস্টার লাগালে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ থাকে। কিন্তু সার্বিকভাবে বলা যায়, আইনের প্রয়োগ না থাকার কারণে ২০১২ সালের আগের চেয়ে পরে দেয়ালে পোস্টার লাগানোর হার আরও কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।
পোস্টার সংস্কৃতি আমাদের সামাজিক ইতিহাসের একটি অংশ হলেও বর্তমানে শহরের সৌন্দর্য নষ্টের একটি বড় কারণ হলো এই পোস্টার। আধুনিক যুগে সবকিছু যেহেতু অনলাইনের মাধ্যমে করা হচ্ছে, তাই পোস্টার ছাপানোর পরিবর্তে অনলাইনকে কাজে লাগিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো অসম্ভব কিছু নয়। এমনকি এখন অনেক সচেতন নাগরিক বিকল্প হিসেবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, ব্যানার ও অনলাইন বিজ্ঞাপন ব্যবহার করছে। এই পরিবর্তনই প্রমাণ করে, প্রযুক্তি এখন পরিবেশবান্ধব প্রচারের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে জুলাই জাতীয় সনদ সই করা হয়েছে। ১৭ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।
১১ ঘণ্টা আগেএ বছর পৃথিবীতে বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহর। আর মেলবোর্ন আছে চতুর্থ স্থানে। ২৯ বছর আগে এক ভোরবেলায় এ দেশের মাটিতে পা রেখেছিলাম। ট্যাক্সিতে চড়ে যাওয়ার সময় ছবির মতো বাড়িঘর, সামনে বাগান, সারি সারি বৃক্ষ ও সাজানো রাস্তাঘাট দেখে মনে হচ্ছিল আমি কোনো সিনেমার শুটিং...
১১ ঘণ্টা আগেহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি পণ্য কমপ্লেক্সে ১৮ অক্টোবর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে তিনটি বড় দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটল।
১১ ঘণ্টা আগেজুলাই সনদ ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভূমিকা, জোট রাজনীতি, নারীনীতি, নির্বাচনী প্রতীক ইস্যু থেকে শুরু করে ফান্ডিং ও ‘মেধা বনাম কোটার’ বিতর্ক—এসব বিষয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা..
১ দিন আগে