আব্দুর রহমান

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন আজ। শেখ হাসিনা এক ফিনিক্স পাখি। তিনি পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী বাংলাদেশের স্বপ্ন, সম্ভাবনা ও সক্ষমতার প্রোজ্জ্বল প্রতীক। তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্র দেশকে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন আলোকোজ্জ্বল এক স্বপ্নের সরণিতে। বহু ঘাত-প্রতিঘাতে বিপর্যস্ত জাতির মননে তিনি গেঁথে দিয়েছেন মর্যাদাপূর্ণ এক লক্ষ্যের পানে এগিয়ে যাওয়ার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষা।
ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে এসে তিনি তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করেছেন এই বাংলার আপামর মানুষের কল্যাণে। সমস্ত জীবন ধরে কণ্টকাকীর্ণ এক দীর্ঘ পথ হেঁটে, সহস্র বাধা মাড়িয়ে তিনি হয়েছেন আজকের শেখ হাসিনা। এই পথের বাঁকে বাঁকে ছিল জীবনের ঝুঁকি। শত্রুর শ্যেনদৃষ্টি তাঁকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখে, যা এ দেশের প্রতিটি মানুষ উপলব্ধি করে। দিনে দিনে শেখ হাসিনার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য। তাঁর সুদক্ষ ও আন্তরিক নেতৃত্বের কারণে এ দেশের মানুষ একটি উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। কেননা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, তথা ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়েই তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনা করছেন। এ দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটিয়ে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার এক প্রত্যয়দীপ্ত নতুন লড়াইয়ে আজ তিনি অবতীর্ণ। সেই নিরিখেই তিনি ঘোষণা করেছেন রূপকল্প ২০৪১। এই লড়াইয়ের প্রতিটি সুচিন্তিত ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নিয়ে যাবে। তাঁরই সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণে আমরা আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভ করেছি। বিশ্ববাসীকে বিস্মিত করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত।
শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে রাজনীতি তাঁর রক্তে প্রবহমান। পারিবারিক আবহের কারণেই, পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীদের নানা কর্মসূচি নিয়ে আলাপচারিতা ও কর্মতৎপরতা প্রত্যক্ষ করে তাঁর মধ্যে একটি রাজনীতিসচেতন মনন তৈরি হয়ে যায়। এরই প্রভাবে দেশ ও সমাজ নিয়ে ভাবনার এক দুর্নিবার তাড়না তাঁর মননে গেঁথে গিয়েছিল ছোটবেলা থেকেই। সেই চেতনা ও তাড়না থেকে স্বাভাবিক কারণেই স্কুলজীবন থেকে তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তখন থেকেই সব গণ-আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তৎকালীন সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমানে বদরুন্নেসা কলেজ) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তী সময়ে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি ওই কলেজের ছাত্রী সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাবাহিক সংগ্রামের তিনি নিবিড় ও প্রত্যক্ষ সাক্ষী। মুজিবকন্যা হওয়ার কারণেই পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বহু ঘাত-প্রতিঘাত ও সংকটময় পরিস্থিতি তাঁকে পার করতে হয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের প্রায় সব সদস্যসহ বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সেই ক্ষত বাংলাদেশকে বয়ে যেতে হবে চিরকাল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ক্ষতি কোনো দিনই পূরণ হওয়ার নয় এবং সেই শোক আমাদের বহন করে যেতে হবে আজীবন। সৌভাগ্যবশত পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন এবং সেই সূত্রে বেঁচে গিয়েছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাসহ পরিবারের সব সদস্যকে হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণায় দগ্ধ হতে হতে দীর্ঘ ছয় বছর ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে প্রবাসে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছে তাঁকে। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতেই সর্বসম্মতভাবে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সে বছরের ১৭ মে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। আওয়ামী লীগের সেদিনের এই সিদ্ধান্ত পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ভাগ্যলিপিই বদলে দিয়েছে। একটি অন্ধকার সময় পার করে বস্তুত শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সম্ভাবনা ও স্বপ্নের পথে হাঁটতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সামরিক সরকারকে উচ্ছেদ করে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা থেকে সরে এসে সংসদীয় পদ্ধতির মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় তিনি ভূমিকা রাখেন।
১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। পরবর্তী সময়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব ষড়যন্ত্র ও বাধা উপেক্ষা করে তিনি ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করান। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচার প্রক্রিয়া এখনো চলমান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর স্বৈরাচারী সামরিক শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট বাংলাদেশে পাকিস্তানি ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠার সমস্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়। যুদ্ধোত্তর স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ অভিভাবকহীন ও নেতৃত্বশূন্য অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় না পেয়ে অসহায় ও দিশেহারা অবস্থায় নিপতিত হয়। জাতি প্রত্যক্ষ করেছে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের যেন বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে না হয়, সেই লক্ষ্যে বেইমান খুনি মোশতাক কর্তৃক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। পরে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এই অধ্যাদেশকে পার্লামেন্টের মাধ্যমে বৈধতা প্রদান করেন। অধিকন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ খুনিদের বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করা হয়। তাদের অনেককে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব দিয়ে পুনর্বাসিত করা হয়। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার যে প্রক্রিয়া এ দেশে শুরু হয়েছিল, তার বিপরীতে জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এই কাজ মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তাঁর অঙ্গীকার পূরণে তিনি সব সময়ই অটল ও আপসহীন থেকেছেন।
শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ২০০৪ সালে সরাসরি রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে ন্যক্কারজনক ও ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দেওয়ার এমন প্রচেষ্টা দেখে সেদিন সমগ্র জাতি স্তম্ভিত হয়ে যায়। বৃষ্টির মতো একের পর এক গ্রেনেড হামলার পরও দলীয় নেতাদের তৈরি মানববর্ম ও আল্লাহর অশেষ রহমতে সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। শেখ হাসিনার সাথে বেঁচে যায় বাংলাদেশ এবং এ দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ। সেই হামলায় শ্রদ্ধেয় আইভী রহমানসহ ২৪ জন দলীয় নেতা-কর্মী নিহত হন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান লন্ডনে পলাতক আছেন।
জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দুরন্ত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন, যোগাযোগ অবকাঠামোর অভূতপূর্ব উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক সাফল্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন, হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু নিয়ন্ত্রণ, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, নারী উন্নয়ন, সর্বোপরি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তাঁর অতুলনীয় সাফল্য একজন সফল নেতা হিসেবে শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে।
জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতায় জর্জরিত বাংলাদেশে একটি সভ্য ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর নিরলস ও আন্তরিক প্রচেষ্টা সার্বক্ষণিক। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখেন, একদিন একটি উন্নত রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে এ দেশের প্রতিটি মানুষ গৌরবের সঙ্গে বিশ্বের কাছে নিজের পরিচয় দেবে। আর সেই লক্ষ্যেই দীর্ঘমেয়াদি নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে তিনি তাঁর লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের সময় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়নের ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। সারা দেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্ধারণ করে ইপিজেড স্থাপন করার কাজ চলমান আছে। সবগুলো অর্থনৈতিক অঞ্চলে আইসিটি পার্ক নির্মাণের কাজ চলছে। বেশির ভাগ মহাসড়ককে ফোর লেন ও সিক্স লেনে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে এর সফল বাস্তবায়ন শেখ হাসিনা সরকারের একটি বিস্ময়কর সাফল্য। দেশের বড় বড় অর্থনীতিবিদ মন্তব্য করেছিলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাদের ভবিষ্যদ্বাণীকে ভুল প্রমাণ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রমাণ করলেন দেশের অর্থনীতিকে কতটা মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছেন। এ ছাড়া রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, মাতারবাড়ী বহুমুখী প্রকল্পসহ তাঁর সরকারের গৃহীত দশটি মেগা প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার পথে। সেগুলো সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরও অনেক বেশি গতি সঞ্চারিত হবে। করোনার প্রভাবে যখন সারা বিশ্বের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে, শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে সবাইকে অবাক করে বাংলাদেশ তখনো উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২৮২৪ ডলার। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ স্থাপন করে তিনি বাংলাদেশকে প্রথম নিজস্ব স্যাটেলাইট স্থাপনের গৌরব এনে দিয়েছেন।
১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর পার্বত্য চট্টগ্রামের ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে শান্তিচুক্তির ব্যবস্থা নেন শেখ হাসিনা। এর স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৮ সালে ইউনেসকো তাঁকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তিপদকে ভূষিত করে। ওই সরকারের সময় ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার সরকার ভারতের সাথে ৬৮ বছর ধরে বিদ্যমান সীমানা বিরোধ ও ছিটমহল সমস্যার নিষ্পত্তি করে। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে বাংলাদেশের সাফল্য শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে। মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তিনি মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর এই মানবিক ভূমিকার জন্য ব্রিটিশ মিডিয়া তাঁকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ বলে আখ্যা দেয়। পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। যাদের নেতৃত্ব ও কর্মকাণ্ড একটি টেকসই বিশ্ব নিশ্চিত করতে এবং সবার জন্য মর্যাদাসম্পন্ন জীবন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, তাদের এই সম্মান দেওয়া হয়।
এখানে উল্লেখ্য, কার্বন নিঃসারণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতি তিনি সব সময়ই আহ্বান জানিয়ে আসছেন। সদ্য অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিয়ে তিনি আবারও বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতি জোরালো কণ্ঠে একই আহ্বান রেখেছেন। শান্তির সপক্ষে যুদ্ধমুক্ত বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর প্রতি তিনি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
করোনার ভ্যাকসিন সংগ্রহে বিশ্বের সব দেশ যখন মরিয়া হয়ে ওঠে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক দক্ষতা, দূরদর্শিতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন সংগ্রহে সবচেয়ে সফল দেশগুলোর মধ্যে সামনের সারিতে ছিল। করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ এর অংশীদারত্ব নিশ্চিত করেছে। ফলে করোনার প্রভাবে মহামারি ও বিপর্যয় এড়াতে বাংলাদেশ অবিশ্বাস্য সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়। মুজিববর্ষে তিনি ভূমিহীন ও হতদরিদ্র মানুষের জন্য গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ২ লাখ ১৩ হাজার ২২৭টি পরিবারকে ঘর উপহার দিয়ে পুনর্বাসন করেছেন। সমগ্র বিশ্বে এটি নজিরবিহীন।
শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র ও নারীর ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বের অনেকগুলো খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন সম্মানসূচক ডিগ্রি ও পুরস্কার প্রদান করেছে। এর সবগুলো উল্লেখ করতে হলে নিবন্ধের কলেবর বৃদ্ধি পাবে।
শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ আজ একটি সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করার পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে এখন আমরা ঋণ দিতে শুরু করেছি। আজকের বাংলাদেশের এই সমুদয় অগ্রগতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব ছাড়া সম্ভব হতো না। তিনি অবিকল্প। বাংলাদেশের আপামর মানুষের অপার ভালোবাসার কারণেই তিনি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে দেশের মানুষের ভাগ্য বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়—
‘অন্ধকারের সিন্ধুতীরে একলাটি ওই মেয়ে
আলোর নৌকা ভাসিয়ে দিল আকাশপানে চেয়ে।’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমার আনত শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন। তাঁর সুস্থতা ও দীর্ঘজীবন বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের আরও সুন্দর ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিতের জন্য বড় বেশি প্রয়োজন। জয়তু বঙ্গবন্ধুকন্যা।
লেখক: সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন আজ। শেখ হাসিনা এক ফিনিক্স পাখি। তিনি পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী বাংলাদেশের স্বপ্ন, সম্ভাবনা ও সক্ষমতার প্রোজ্জ্বল প্রতীক। তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্র দেশকে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন আলোকোজ্জ্বল এক স্বপ্নের সরণিতে। বহু ঘাত-প্রতিঘাতে বিপর্যস্ত জাতির মননে তিনি গেঁথে দিয়েছেন মর্যাদাপূর্ণ এক লক্ষ্যের পানে এগিয়ে যাওয়ার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষা।
ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে এসে তিনি তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করেছেন এই বাংলার আপামর মানুষের কল্যাণে। সমস্ত জীবন ধরে কণ্টকাকীর্ণ এক দীর্ঘ পথ হেঁটে, সহস্র বাধা মাড়িয়ে তিনি হয়েছেন আজকের শেখ হাসিনা। এই পথের বাঁকে বাঁকে ছিল জীবনের ঝুঁকি। শত্রুর শ্যেনদৃষ্টি তাঁকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখে, যা এ দেশের প্রতিটি মানুষ উপলব্ধি করে। দিনে দিনে শেখ হাসিনার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য। তাঁর সুদক্ষ ও আন্তরিক নেতৃত্বের কারণে এ দেশের মানুষ একটি উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। কেননা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, তথা ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়েই তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনা করছেন। এ দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটিয়ে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার এক প্রত্যয়দীপ্ত নতুন লড়াইয়ে আজ তিনি অবতীর্ণ। সেই নিরিখেই তিনি ঘোষণা করেছেন রূপকল্প ২০৪১। এই লড়াইয়ের প্রতিটি সুচিন্তিত ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নিয়ে যাবে। তাঁরই সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণে আমরা আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভ করেছি। বিশ্ববাসীকে বিস্মিত করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত।
শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে রাজনীতি তাঁর রক্তে প্রবহমান। পারিবারিক আবহের কারণেই, পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীদের নানা কর্মসূচি নিয়ে আলাপচারিতা ও কর্মতৎপরতা প্রত্যক্ষ করে তাঁর মধ্যে একটি রাজনীতিসচেতন মনন তৈরি হয়ে যায়। এরই প্রভাবে দেশ ও সমাজ নিয়ে ভাবনার এক দুর্নিবার তাড়না তাঁর মননে গেঁথে গিয়েছিল ছোটবেলা থেকেই। সেই চেতনা ও তাড়না থেকে স্বাভাবিক কারণেই স্কুলজীবন থেকে তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তখন থেকেই সব গণ-আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তৎকালীন সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমানে বদরুন্নেসা কলেজ) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তী সময়ে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি ওই কলেজের ছাত্রী সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাবাহিক সংগ্রামের তিনি নিবিড় ও প্রত্যক্ষ সাক্ষী। মুজিবকন্যা হওয়ার কারণেই পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বহু ঘাত-প্রতিঘাত ও সংকটময় পরিস্থিতি তাঁকে পার করতে হয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের প্রায় সব সদস্যসহ বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সেই ক্ষত বাংলাদেশকে বয়ে যেতে হবে চিরকাল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ক্ষতি কোনো দিনই পূরণ হওয়ার নয় এবং সেই শোক আমাদের বহন করে যেতে হবে আজীবন। সৌভাগ্যবশত পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন এবং সেই সূত্রে বেঁচে গিয়েছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাসহ পরিবারের সব সদস্যকে হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণায় দগ্ধ হতে হতে দীর্ঘ ছয় বছর ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে প্রবাসে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছে তাঁকে। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতেই সর্বসম্মতভাবে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সে বছরের ১৭ মে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। আওয়ামী লীগের সেদিনের এই সিদ্ধান্ত পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ভাগ্যলিপিই বদলে দিয়েছে। একটি অন্ধকার সময় পার করে বস্তুত শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সম্ভাবনা ও স্বপ্নের পথে হাঁটতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সামরিক সরকারকে উচ্ছেদ করে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা থেকে সরে এসে সংসদীয় পদ্ধতির মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় তিনি ভূমিকা রাখেন।
১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। পরবর্তী সময়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব ষড়যন্ত্র ও বাধা উপেক্ষা করে তিনি ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করান। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচার প্রক্রিয়া এখনো চলমান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর স্বৈরাচারী সামরিক শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট বাংলাদেশে পাকিস্তানি ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠার সমস্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়। যুদ্ধোত্তর স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ অভিভাবকহীন ও নেতৃত্বশূন্য অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় না পেয়ে অসহায় ও দিশেহারা অবস্থায় নিপতিত হয়। জাতি প্রত্যক্ষ করেছে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের যেন বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে না হয়, সেই লক্ষ্যে বেইমান খুনি মোশতাক কর্তৃক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। পরে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এই অধ্যাদেশকে পার্লামেন্টের মাধ্যমে বৈধতা প্রদান করেন। অধিকন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ খুনিদের বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করা হয়। তাদের অনেককে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব দিয়ে পুনর্বাসিত করা হয়। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার যে প্রক্রিয়া এ দেশে শুরু হয়েছিল, তার বিপরীতে জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এই কাজ মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তাঁর অঙ্গীকার পূরণে তিনি সব সময়ই অটল ও আপসহীন থেকেছেন।
শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ২০০৪ সালে সরাসরি রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে ন্যক্কারজনক ও ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দেওয়ার এমন প্রচেষ্টা দেখে সেদিন সমগ্র জাতি স্তম্ভিত হয়ে যায়। বৃষ্টির মতো একের পর এক গ্রেনেড হামলার পরও দলীয় নেতাদের তৈরি মানববর্ম ও আল্লাহর অশেষ রহমতে সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। শেখ হাসিনার সাথে বেঁচে যায় বাংলাদেশ এবং এ দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ। সেই হামলায় শ্রদ্ধেয় আইভী রহমানসহ ২৪ জন দলীয় নেতা-কর্মী নিহত হন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান লন্ডনে পলাতক আছেন।
জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দুরন্ত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন, যোগাযোগ অবকাঠামোর অভূতপূর্ব উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক সাফল্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন, হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু নিয়ন্ত্রণ, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, নারী উন্নয়ন, সর্বোপরি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তাঁর অতুলনীয় সাফল্য একজন সফল নেতা হিসেবে শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে।
জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতায় জর্জরিত বাংলাদেশে একটি সভ্য ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর নিরলস ও আন্তরিক প্রচেষ্টা সার্বক্ষণিক। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখেন, একদিন একটি উন্নত রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে এ দেশের প্রতিটি মানুষ গৌরবের সঙ্গে বিশ্বের কাছে নিজের পরিচয় দেবে। আর সেই লক্ষ্যেই দীর্ঘমেয়াদি নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে তিনি তাঁর লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের সময় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়নের ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। সারা দেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্ধারণ করে ইপিজেড স্থাপন করার কাজ চলমান আছে। সবগুলো অর্থনৈতিক অঞ্চলে আইসিটি পার্ক নির্মাণের কাজ চলছে। বেশির ভাগ মহাসড়ককে ফোর লেন ও সিক্স লেনে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে এর সফল বাস্তবায়ন শেখ হাসিনা সরকারের একটি বিস্ময়কর সাফল্য। দেশের বড় বড় অর্থনীতিবিদ মন্তব্য করেছিলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাদের ভবিষ্যদ্বাণীকে ভুল প্রমাণ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রমাণ করলেন দেশের অর্থনীতিকে কতটা মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছেন। এ ছাড়া রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, মাতারবাড়ী বহুমুখী প্রকল্পসহ তাঁর সরকারের গৃহীত দশটি মেগা প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার পথে। সেগুলো সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরও অনেক বেশি গতি সঞ্চারিত হবে। করোনার প্রভাবে যখন সারা বিশ্বের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে, শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে সবাইকে অবাক করে বাংলাদেশ তখনো উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২৮২৪ ডলার। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ স্থাপন করে তিনি বাংলাদেশকে প্রথম নিজস্ব স্যাটেলাইট স্থাপনের গৌরব এনে দিয়েছেন।
১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর পার্বত্য চট্টগ্রামের ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে শান্তিচুক্তির ব্যবস্থা নেন শেখ হাসিনা। এর স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৮ সালে ইউনেসকো তাঁকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তিপদকে ভূষিত করে। ওই সরকারের সময় ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার সরকার ভারতের সাথে ৬৮ বছর ধরে বিদ্যমান সীমানা বিরোধ ও ছিটমহল সমস্যার নিষ্পত্তি করে। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে বাংলাদেশের সাফল্য শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে। মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তিনি মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর এই মানবিক ভূমিকার জন্য ব্রিটিশ মিডিয়া তাঁকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ বলে আখ্যা দেয়। পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। যাদের নেতৃত্ব ও কর্মকাণ্ড একটি টেকসই বিশ্ব নিশ্চিত করতে এবং সবার জন্য মর্যাদাসম্পন্ন জীবন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, তাদের এই সম্মান দেওয়া হয়।
এখানে উল্লেখ্য, কার্বন নিঃসারণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতি তিনি সব সময়ই আহ্বান জানিয়ে আসছেন। সদ্য অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিয়ে তিনি আবারও বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতি জোরালো কণ্ঠে একই আহ্বান রেখেছেন। শান্তির সপক্ষে যুদ্ধমুক্ত বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর প্রতি তিনি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
করোনার ভ্যাকসিন সংগ্রহে বিশ্বের সব দেশ যখন মরিয়া হয়ে ওঠে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক দক্ষতা, দূরদর্শিতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন সংগ্রহে সবচেয়ে সফল দেশগুলোর মধ্যে সামনের সারিতে ছিল। করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ এর অংশীদারত্ব নিশ্চিত করেছে। ফলে করোনার প্রভাবে মহামারি ও বিপর্যয় এড়াতে বাংলাদেশ অবিশ্বাস্য সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়। মুজিববর্ষে তিনি ভূমিহীন ও হতদরিদ্র মানুষের জন্য গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ২ লাখ ১৩ হাজার ২২৭টি পরিবারকে ঘর উপহার দিয়ে পুনর্বাসন করেছেন। সমগ্র বিশ্বে এটি নজিরবিহীন।
শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র ও নারীর ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বের অনেকগুলো খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন সম্মানসূচক ডিগ্রি ও পুরস্কার প্রদান করেছে। এর সবগুলো উল্লেখ করতে হলে নিবন্ধের কলেবর বৃদ্ধি পাবে।
শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ আজ একটি সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করার পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে এখন আমরা ঋণ দিতে শুরু করেছি। আজকের বাংলাদেশের এই সমুদয় অগ্রগতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব ছাড়া সম্ভব হতো না। তিনি অবিকল্প। বাংলাদেশের আপামর মানুষের অপার ভালোবাসার কারণেই তিনি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে দেশের মানুষের ভাগ্য বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়—
‘অন্ধকারের সিন্ধুতীরে একলাটি ওই মেয়ে
আলোর নৌকা ভাসিয়ে দিল আকাশপানে চেয়ে।’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমার আনত শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন। তাঁর সুস্থতা ও দীর্ঘজীবন বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের আরও সুন্দর ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিতের জন্য বড় বেশি প্রয়োজন। জয়তু বঙ্গবন্ধুকন্যা।
লেখক: সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

একটি দুঃসংবাদ আর একটি আশাপ্রদ খবর দিয়ে শুরু করছি। প্রথম দুঃসংবাদ হলো, আইসল্যান্ডে মশা পৌঁছে গেছে। দ্বিতীয় সংবাদ, অস্ট্রেলিয়ায় চিরহরিৎ বনাঞ্চল কার্বন শোষণের চেয়ে নিঃসরণ করছে বেশি। দুটি তথ্যই জানিয়েছেন গবেষকেরা। আপাতদৃশ্যে খুব সাধারণ মনে হলেও, দুটি খবরই ভয়ংকর এক পরিস্থিতির আভাস দিচ্ছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
হাজার বছরের অপমান, বঞ্চনা আর বন্দিত্বের নাগপাশ পেরিয়ে ফিলিস্তিন আবার নবজন্ম নিচ্ছে, যেখানে প্রতিটি শিশুর কান্না ইতিহাসে প্রতিরোধের ভাষা হয়ে উঠছে। দীর্ঘ দশক ধরে বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে এক বিভ্রম ছড়ানো হয়েছিল—‘শুধু আলোচনাই শান্তি আনতে পারে।’ সেই বাক্যটি ছিল সভ্যতার মুখে পরানো এক মুখোশ, যার আড়ালে...
১৪ ঘণ্টা আগে
প্রযুক্তিই সব সময় মানবসভ্যতার ইতিহাসের গতিপথ বদলেছে। একসময় আগুন ও চাকা করেছিল এ কাজটি। এরপর বিজ্ঞান মানুষকে মাটির নিচ থেকে ‘তরল সোনা’ তেল আবিষ্কারের পথ দেখিয়েছে। এই আবিষ্কারের পর দীর্ঘদিন ধরে ভূ-রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে একে কেন্দ্র করে। এমনকি এখনো।
১৪ ঘণ্টা আগে
আজকের পত্রিকায় অনলাইন ভার্সনে ঘুষবিষয়ক একটি সংবাদ চোখে পড়ল। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা টানাপোড়েনের মধ্যে সংবাদটিকে নিরীহ গোছের সংবাদ হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু যিনি ঘুষ গ্রহণ করেছেন তিনি অকপটে তা স্বীকার করেছেন। বলেছেন, ঘুষ হিসেবে তিনি পাকা কলা গ্রহণ করেছেন।
১৫ ঘণ্টা আগেরাজিউল হাসান

একটি দুঃসংবাদ আর একটি আশাপ্রদ খবর দিয়ে শুরু করছি। প্রথম দুঃসংবাদ হলো, আইসল্যান্ডে মশা পৌঁছে গেছে। দ্বিতীয় সংবাদ, অস্ট্রেলিয়ায় চিরহরিৎ বনাঞ্চল কার্বন শোষণের চেয়ে নিঃসরণ করছে বেশি। দুটি তথ্যই জানিয়েছেন গবেষকেরা। আপাতদৃশ্যে খুব সাধারণ মনে হলেও, দুটি খবরই ভয়ংকর এক পরিস্থিতির আভাস দিচ্ছে। তা হলো, উষ্ণ হয়ে উঠছে বিশ্ব।
আশাপ্রদ খবরটি হলো, গত ফেব্রুয়ারিতে জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশের প্রথম কার্বন নিরপেক্ষ শিশু। তার নাম আয়ান খান রুহাব। তার বাবা-মা ৫৮০টি গাছ লাগিয়েছেন। শিশু আয়ান তার জীবদ্দশায় যত কার্বন নিঃসরণ করবে, এই গাছগুলো তা শোষণ করে নেবে। আয়ান যদি দেশের প্রথম কার্বন নিরপেক্ষ শিশু হয়, তাহলে বিশ্বের প্রথম কার্বন নিরপেক্ষ শিশু কে? সে ভারতের তামিলনাড়ুর আদাভি। ২ বছর বয়সী এই শিশু জন্মানোর আগেই তার বাবা-মা প্রায় ৬ হাজার গাছ লাগিয়েছেন। এই দুটি উদ্যোগ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের জন্য বড় আশার খবর।
কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার প্রচেষ্টার আগে দুঃসংবাদ দুটি নিয়ে আগে কিছু কথা বলি। বিশ্বে এত দিন দুটি জায়গা মশামুক্ত ছিল। এর একটি অ্যান্টার্কটিকা, অপরটি আইসল্যান্ড। এখন রইল বাকি অ্যান্টার্কটিকা। সে হিসেবে বলাই যায়, বিশ্ব এখন মশার কবজায়। মশার কামড় থেকে মানুষ বেশ কয়েক ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া অন্যতম। এ ছাড়া জিকা, ফাইলেরিয়া ও ওয়েস্ট নাইল রোগের ভাইরাসও ছড়ায় মশার মাধ্যমে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ (সিডিসি) সংস্থার হালনাগাদ তথ্যমতে, মশা হলো বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাণী। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে শুধু ম্যালেরিয়ায় প্রায় ৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বিশ্বের প্রায় ৩২০ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বেশি। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী, অর্থাৎ ৪০০ কোটির মতো মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি। ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের প্রকোপ বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। জিকার প্রকোপ বেশি আফ্রিকা, আমেরিকা, প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে। ফাইলেরিয়ার ঝুঁকিতে আছে বিশ্বের ৪৪টি দেশের অন্তত ৫ কোটি মানুষ।
গবেষকেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বই উষ্ণ হচ্ছে। ফলে মশার জন্য পরিবেশ আরও আদর্শ হয়ে উঠছে। উষ্ণ ও আর্দ্র এলাকায় মশার উৎপাত সবচেয়ে বেশি। নতুন গবেষণাগুলো বলছে, আর্কটিক অঞ্চল বাকি বিশ্বের তুলনায় চার গুণ বেশি উষ্ণ হচ্ছে। চলতি বছর আইসল্যান্ড সবচেয়ে বেশি গরমে পুড়েছে। বর্তমানে দেশটিতে গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। আর শীতে সে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে যায়। মাইনাস ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও নামে তাপমাত্রা। উষ্ণায়নের কারণে এখন দেশটির এই অবস্থা। আগে দেশটি আরও শীতল ছিল।
গবেষকদের তথ্য মতে, আইসল্যান্ডে হিমবাহ গলে যাওয়া, ভেঙে যাওয়ার ঘটনা বেশ আগেই শুরু হয়েছে। সম্প্রতি দেশটিতে উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের মাছ ম্যাকেরেল পাওয়া গেছে। এসবই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।
এবার আসা যাক অস্ট্রেলিয়ার চিরহরিৎ বনাঞ্চলের বিষয়টিতে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের ২০টি চিরহরিৎ বনের ওপর গবেষণা করে একটি গবেষণানিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। এতে তাঁরা দাবি করেছেন, চিরহরিৎ এই বনগুলো এখন আর আগের মতো কার্বন শোষণ করছে না। বরং তারা কার্বন শোষণের চেয়ে নিঃসরণ করছে বেশি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এই বনগুলোয় দাবানলসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা কারণে নতুন গাছ জন্মানো কমে গেছে। তার চেয়ে গাছ মরছে বেশি। গাছের মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় সেসব গাছের দেহাবশেষ থেকে কার্বন নিঃসরণও বেড়ে গেছে। অপর দিকে নতুন গাছের জন্ম কমে যাওয়ায় কার্বন শোষণ কমে গেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের বনাঞ্চলের ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্বের সব চিরহরিৎ বনেই হয়তো এখন এই পরিস্থিতি চলছে। কারণ, চিরহরিৎ বনগুলোর প্রকৃতি একই রকম হয়।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন আমরা মানুষেরা কী করছি? একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে যে কেউ অনুধাবন করতে পারবেন, প্রকৃতিতে একমাত্র মানুষই নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য প্রকৃতির বিনাশ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। অনেকটা নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো। আমরা সবাই জানি, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, পরিবেশ ও বায়ুদূষণসহ মানবসৃষ্ট নানা কারণে জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তারপরও এগুলোর নেশা আমরা ছাড়তে পারি না। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই তাঁর প্রথম মেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘ধাপ্পাবাজি’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। আর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তাঁর দেশের সরকারের নানা উদ্যোগ হয় বন্ধ করেছেন, না হয় কাটছাঁট করেছেন। তিনি গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পর অভিষেক ভাষণেই খনিজ সম্পদ, বিশেষ করে তেল-গ্যাস আহরণে উৎসাহ দিয়েছেন।
প্রায় একই ধরনের কাজ করে গেছেন ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো। পৃথিবীর ফুসফুসখ্যাত আমাজন বনাঞ্চল তাঁর দেশেই। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে আমাজন ধ্বংস করে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছিলেন অনেকগুলো। একইভাবে বিশ্বের নানা দেশে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়, না হয় সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে জীবাশ্ম জ্বালানির আহরণ। অথচ উষ্ণায়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে এই জীবাশ্ম জ্বালানিই। বিজ্ঞানীরা আমাদের সামনে নানা বিকল্প হাজিরও করেছেন। যেমন সৌরশক্তি, বাতাসের শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন। কিন্তু সেসবে আমাদের আগ্রহ নেই। বরং মাটি খুঁড়ে পৃথিবীর বুক আর কতটা ছিন্নভিন্ন করা যায়, তার প্রচেষ্টা যেন আরও গতি পেয়েছে।
অথচ প্রতিবছরই জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ) বিভিন্ন রাষ্ট্র নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দেয়। জলবায়ু পরিবর্তন রুখে দিতে অনেক ভালো ভালো কথা বলেন নেতারা। তহবিল সংগ্রহে জোর তাগিদ দেয় জাতিসংঘ। কিন্তু গুটিকয়েক দেশ বাদে বাকি দেশগুলোয় আজ পর্যন্ত সেসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাটা পর্যন্ত দেখা যায়নি। জাতিসংঘের তহবিলে যে যৎসামান্য অর্থের জোগান আসে, তার প্রয়োগও দেখা যায় না। জাতিসংঘ অবশ্য বেশ আগেই ‘খোঁড়া হাতিতে’ পরিণত হয়েছে। তা না হলে তার সামনেই কীভাবে বিশ্বে এত অস্থিরতা চলতে পারে, নতুন করে যুদ্ধে জড়াতে পারে দেশগুলো, গাজায় কীভাবে গণহত্যা চলতে পারে?
কাজেই এ কথা নিঃসন্দেহে বলে দেওয়া যায়, নেতা, রাষ্ট্র আর বিশ্ব সংস্থার দিকে তাকিয়ে থাকলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা কোনো দিনই সম্ভব হবে না। আসন্ন এই বিপদকে রুখতে হলে বিশ্বের প্রতিটা মানুষকেই উদ্যোগী হতে হবে। আর আমরা সবাই জানি, একমাত্র গাছই হলো ‘উষ্ণায়ন নামক রোগটির’ মহৌষধ। সেই মহৌষধ আমাদের সাধ্যের মধ্যেই আছে। আমরা প্রত্যেকেই কার্বন নিরপেক্ষ হয়ে ওঠার চেষ্টা করি, তাহলে এই বিশ্বটা গাছে ভরে উঠতে খুব বেশি দিন লাগবে না।

একটি দুঃসংবাদ আর একটি আশাপ্রদ খবর দিয়ে শুরু করছি। প্রথম দুঃসংবাদ হলো, আইসল্যান্ডে মশা পৌঁছে গেছে। দ্বিতীয় সংবাদ, অস্ট্রেলিয়ায় চিরহরিৎ বনাঞ্চল কার্বন শোষণের চেয়ে নিঃসরণ করছে বেশি। দুটি তথ্যই জানিয়েছেন গবেষকেরা। আপাতদৃশ্যে খুব সাধারণ মনে হলেও, দুটি খবরই ভয়ংকর এক পরিস্থিতির আভাস দিচ্ছে। তা হলো, উষ্ণ হয়ে উঠছে বিশ্ব।
আশাপ্রদ খবরটি হলো, গত ফেব্রুয়ারিতে জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশের প্রথম কার্বন নিরপেক্ষ শিশু। তার নাম আয়ান খান রুহাব। তার বাবা-মা ৫৮০টি গাছ লাগিয়েছেন। শিশু আয়ান তার জীবদ্দশায় যত কার্বন নিঃসরণ করবে, এই গাছগুলো তা শোষণ করে নেবে। আয়ান যদি দেশের প্রথম কার্বন নিরপেক্ষ শিশু হয়, তাহলে বিশ্বের প্রথম কার্বন নিরপেক্ষ শিশু কে? সে ভারতের তামিলনাড়ুর আদাভি। ২ বছর বয়সী এই শিশু জন্মানোর আগেই তার বাবা-মা প্রায় ৬ হাজার গাছ লাগিয়েছেন। এই দুটি উদ্যোগ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের জন্য বড় আশার খবর।
কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার প্রচেষ্টার আগে দুঃসংবাদ দুটি নিয়ে আগে কিছু কথা বলি। বিশ্বে এত দিন দুটি জায়গা মশামুক্ত ছিল। এর একটি অ্যান্টার্কটিকা, অপরটি আইসল্যান্ড। এখন রইল বাকি অ্যান্টার্কটিকা। সে হিসেবে বলাই যায়, বিশ্ব এখন মশার কবজায়। মশার কামড় থেকে মানুষ বেশ কয়েক ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া অন্যতম। এ ছাড়া জিকা, ফাইলেরিয়া ও ওয়েস্ট নাইল রোগের ভাইরাসও ছড়ায় মশার মাধ্যমে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ (সিডিসি) সংস্থার হালনাগাদ তথ্যমতে, মশা হলো বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাণী। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে শুধু ম্যালেরিয়ায় প্রায় ৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বিশ্বের প্রায় ৩২০ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বেশি। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী, অর্থাৎ ৪০০ কোটির মতো মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি। ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের প্রকোপ বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। জিকার প্রকোপ বেশি আফ্রিকা, আমেরিকা, প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে। ফাইলেরিয়ার ঝুঁকিতে আছে বিশ্বের ৪৪টি দেশের অন্তত ৫ কোটি মানুষ।
গবেষকেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বই উষ্ণ হচ্ছে। ফলে মশার জন্য পরিবেশ আরও আদর্শ হয়ে উঠছে। উষ্ণ ও আর্দ্র এলাকায় মশার উৎপাত সবচেয়ে বেশি। নতুন গবেষণাগুলো বলছে, আর্কটিক অঞ্চল বাকি বিশ্বের তুলনায় চার গুণ বেশি উষ্ণ হচ্ছে। চলতি বছর আইসল্যান্ড সবচেয়ে বেশি গরমে পুড়েছে। বর্তমানে দেশটিতে গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। আর শীতে সে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে যায়। মাইনাস ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও নামে তাপমাত্রা। উষ্ণায়নের কারণে এখন দেশটির এই অবস্থা। আগে দেশটি আরও শীতল ছিল।
গবেষকদের তথ্য মতে, আইসল্যান্ডে হিমবাহ গলে যাওয়া, ভেঙে যাওয়ার ঘটনা বেশ আগেই শুরু হয়েছে। সম্প্রতি দেশটিতে উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের মাছ ম্যাকেরেল পাওয়া গেছে। এসবই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।
এবার আসা যাক অস্ট্রেলিয়ার চিরহরিৎ বনাঞ্চলের বিষয়টিতে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের ২০টি চিরহরিৎ বনের ওপর গবেষণা করে একটি গবেষণানিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। এতে তাঁরা দাবি করেছেন, চিরহরিৎ এই বনগুলো এখন আর আগের মতো কার্বন শোষণ করছে না। বরং তারা কার্বন শোষণের চেয়ে নিঃসরণ করছে বেশি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এই বনগুলোয় দাবানলসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা কারণে নতুন গাছ জন্মানো কমে গেছে। তার চেয়ে গাছ মরছে বেশি। গাছের মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় সেসব গাছের দেহাবশেষ থেকে কার্বন নিঃসরণও বেড়ে গেছে। অপর দিকে নতুন গাছের জন্ম কমে যাওয়ায় কার্বন শোষণ কমে গেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের বনাঞ্চলের ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্বের সব চিরহরিৎ বনেই হয়তো এখন এই পরিস্থিতি চলছে। কারণ, চিরহরিৎ বনগুলোর প্রকৃতি একই রকম হয়।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন আমরা মানুষেরা কী করছি? একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে যে কেউ অনুধাবন করতে পারবেন, প্রকৃতিতে একমাত্র মানুষই নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য প্রকৃতির বিনাশ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। অনেকটা নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো। আমরা সবাই জানি, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, পরিবেশ ও বায়ুদূষণসহ মানবসৃষ্ট নানা কারণে জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তারপরও এগুলোর নেশা আমরা ছাড়তে পারি না। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই তাঁর প্রথম মেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘ধাপ্পাবাজি’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। আর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তাঁর দেশের সরকারের নানা উদ্যোগ হয় বন্ধ করেছেন, না হয় কাটছাঁট করেছেন। তিনি গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পর অভিষেক ভাষণেই খনিজ সম্পদ, বিশেষ করে তেল-গ্যাস আহরণে উৎসাহ দিয়েছেন।
প্রায় একই ধরনের কাজ করে গেছেন ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো। পৃথিবীর ফুসফুসখ্যাত আমাজন বনাঞ্চল তাঁর দেশেই। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে আমাজন ধ্বংস করে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছিলেন অনেকগুলো। একইভাবে বিশ্বের নানা দেশে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়, না হয় সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে জীবাশ্ম জ্বালানির আহরণ। অথচ উষ্ণায়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে এই জীবাশ্ম জ্বালানিই। বিজ্ঞানীরা আমাদের সামনে নানা বিকল্প হাজিরও করেছেন। যেমন সৌরশক্তি, বাতাসের শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন। কিন্তু সেসবে আমাদের আগ্রহ নেই। বরং মাটি খুঁড়ে পৃথিবীর বুক আর কতটা ছিন্নভিন্ন করা যায়, তার প্রচেষ্টা যেন আরও গতি পেয়েছে।
অথচ প্রতিবছরই জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ) বিভিন্ন রাষ্ট্র নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দেয়। জলবায়ু পরিবর্তন রুখে দিতে অনেক ভালো ভালো কথা বলেন নেতারা। তহবিল সংগ্রহে জোর তাগিদ দেয় জাতিসংঘ। কিন্তু গুটিকয়েক দেশ বাদে বাকি দেশগুলোয় আজ পর্যন্ত সেসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাটা পর্যন্ত দেখা যায়নি। জাতিসংঘের তহবিলে যে যৎসামান্য অর্থের জোগান আসে, তার প্রয়োগও দেখা যায় না। জাতিসংঘ অবশ্য বেশ আগেই ‘খোঁড়া হাতিতে’ পরিণত হয়েছে। তা না হলে তার সামনেই কীভাবে বিশ্বে এত অস্থিরতা চলতে পারে, নতুন করে যুদ্ধে জড়াতে পারে দেশগুলো, গাজায় কীভাবে গণহত্যা চলতে পারে?
কাজেই এ কথা নিঃসন্দেহে বলে দেওয়া যায়, নেতা, রাষ্ট্র আর বিশ্ব সংস্থার দিকে তাকিয়ে থাকলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা কোনো দিনই সম্ভব হবে না। আসন্ন এই বিপদকে রুখতে হলে বিশ্বের প্রতিটা মানুষকেই উদ্যোগী হতে হবে। আর আমরা সবাই জানি, একমাত্র গাছই হলো ‘উষ্ণায়ন নামক রোগটির’ মহৌষধ। সেই মহৌষধ আমাদের সাধ্যের মধ্যেই আছে। আমরা প্রত্যেকেই কার্বন নিরপেক্ষ হয়ে ওঠার চেষ্টা করি, তাহলে এই বিশ্বটা গাছে ভরে উঠতে খুব বেশি দিন লাগবে না।

শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যাচেষ্টা হয়েছে। ২০০৪ সালে সরাসরি রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে ন্যক্কারজনক ও ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দেওয়ার এমন
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
হাজার বছরের অপমান, বঞ্চনা আর বন্দিত্বের নাগপাশ পেরিয়ে ফিলিস্তিন আবার নবজন্ম নিচ্ছে, যেখানে প্রতিটি শিশুর কান্না ইতিহাসে প্রতিরোধের ভাষা হয়ে উঠছে। দীর্ঘ দশক ধরে বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে এক বিভ্রম ছড়ানো হয়েছিল—‘শুধু আলোচনাই শান্তি আনতে পারে।’ সেই বাক্যটি ছিল সভ্যতার মুখে পরানো এক মুখোশ, যার আড়ালে...
১৪ ঘণ্টা আগে
প্রযুক্তিই সব সময় মানবসভ্যতার ইতিহাসের গতিপথ বদলেছে। একসময় আগুন ও চাকা করেছিল এ কাজটি। এরপর বিজ্ঞান মানুষকে মাটির নিচ থেকে ‘তরল সোনা’ তেল আবিষ্কারের পথ দেখিয়েছে। এই আবিষ্কারের পর দীর্ঘদিন ধরে ভূ-রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে একে কেন্দ্র করে। এমনকি এখনো।
১৪ ঘণ্টা আগে
আজকের পত্রিকায় অনলাইন ভার্সনে ঘুষবিষয়ক একটি সংবাদ চোখে পড়ল। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা টানাপোড়েনের মধ্যে সংবাদটিকে নিরীহ গোছের সংবাদ হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু যিনি ঘুষ গ্রহণ করেছেন তিনি অকপটে তা স্বীকার করেছেন। বলেছেন, ঘুষ হিসেবে তিনি পাকা কলা গ্রহণ করেছেন।
১৫ ঘণ্টা আগেড. জাহাঙ্গীর আলম সরকার

হাজার বছরের অপমান, বঞ্চনা আর বন্দিত্বের নাগপাশ পেরিয়ে ফিলিস্তিন আবার নবজন্ম নিচ্ছে, যেখানে প্রতিটি শিশুর কান্না ইতিহাসে প্রতিরোধের ভাষা হয়ে উঠছে।
দীর্ঘ দশক ধরে বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে এক বিভ্রম ছড়ানো হয়েছিল—‘শুধু আলোচনাই শান্তি আনতে পারে।’ সেই বাক্যটি ছিল সভ্যতার মুখে পরানো এক মুখোশ, যার আড়ালে জমে উঠেছিল নীরব হত্যার ইতিহাস। অসলো চুক্তি ছিল সেই মুখোশের শীর্ষ অলংকার—যেখানে কূটনৈতিক কলমের আড়ালে চাপা পড়েছিল রক্ত, অবরোধ আর পরাধীনতার ক্রন্দন। বিশ্বের চোখে সেটি ছিল শান্তির মাইলফলক; কিন্তু গাজার শিশুর চোখে, হেবরনের মাতৃহারা নারীর কণ্ঠে আর পশ্চিম তীরের বালুময় মাটিতে সেটি কেবল এক নিঃশব্দ প্রতারণা। এই শান্তির মুখোশের আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা—দখলদারি, নিপীড়ন ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতার দীর্ঘ ছায়া।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিধানে ‘শান্তি’ মানে ছিল আনুগত্য—এমন এক নতজানু নেতৃত্ব, যারা স্বাধীনতার দাবিকে গিলে ফেলে ‘সংলাপ’-এর নামে আত্মসমর্পণ করবে। সেই ‘শান্তি প্রক্রিয়া’ হয়ে উঠেছিল দখলের এক নতুন রূপ—এক প্রাতিষ্ঠানিক প্রহসন, যার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘শান্তি শিল্প’। ফিলিস্তিনকে নিয়ে নানা সময়ে নানা সংলাপ হয়েছে, কনফারেন্সে বাজানো হয়েছে করতালি, কিন্তু বাস্তবে গড়ে উঠেছে আরও উঁচু প্রাচীর। ইয়াসির আরাফাত, যিনি একদা মুক্তির প্রতীক ছিলেন, সেই প্রহসনের বৃত্তে প্রবেশ করেছিলেন আশায় যে আলোচনার টেবিলে হয়তো রক্তের ইতিহাসের অবসান ঘটবে। কিন্তু নির্মম সত্য হলো—তিনি যত ছাড় দিয়েছেন, তত বেড়েছে বন্দিত্বের পরিধি। তাঁর জনগণ পেয়েছে কাঁটাতারের বেড়া, চেকপোস্টের দীর্ঘ সারি আর ছিন্নভিন্ন মানচিত্র। অসলো চুক্তি তাই হয়ে উঠেছিল প্রতারণার দলিল। এখন সময় এসেছে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার: আলোচনার নয়, আত্মত্যাগের আগুনেই জেগে উঠতে হবে ফিলিস্তিনবাসীকে। এর বিকল্প কোনো পথ নেই।
১৯৫০-এর দশকে যখন আরব জাতিরা পরাজয়ের ভারে নুয়ে পড়েছিল, তখন এই সংকীর্ণ উপত্যকার বালুময় প্রান্তরে জন্ম নেয় ফেদায়িন আন্দোলন—মুক্তির জন্য আত্মোৎসর্গে প্রস্তুত এক প্রজন্ম। সমাজতান্ত্রিক স্লোগান, ইসলামি বিশ্বাস আর মুক্তিকামী রক্ত মিলেমিশে গড়ে তোলে এক আগুনে জনপদ—গাজা। যেখানে পশ্চিম তীরের শহরগুলো দমনযন্ত্র ও প্রশাসনিক বেষ্টনীর নিচে নিস্তব্ধ, সেখানে গাজা ছিল অগ্নিদীপ্ত দুর্গের মতো—এক ক্ষুদ্র স্পার্টা, যে জানে, পরাজয় মানে দাসত্ব, আর প্রতিরোধ মানে জীবন।
২০০৬ সালে হামাসের নির্বাচনী বিজয়ের পর শুরু হয় আধুনিক ইতিহাসের দীর্ঘতম অবরোধ—একটি নগরীকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় পৃথিবী থেকে, যেন তাকে নিঃশেষ করা যায় ক্ষুধা, অন্ধকার ও মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। কিন্তু গাজার মানুষ আত্মসমর্পণ করেনি। ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরের ইট দিয়ে তারা আবার ঘর তুলেছে; ভাঙা স্কুলের দেয়ালে লিখেছে বর্ণমালা; শত্রুর ফেলে যাওয়া গোলা দিয়ে বানিয়েছে নিজের অস্ত্র। এই প্রতিরোধ কোনো দলের নয়—এটি এক জাতির হৃদ্স্পন্দন, যা রক্তে, মাটিতে, শিশুর আঁকায় আর মায়ের অশ্রুতে মিশে আছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে আজ অবধি চলছে গাজার ওপর বোমা নিক্ষেপ। কিছু দিন আগেও যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, সেটা আসলে ছিল একটা প্রতারণার ফাঁদ। অবশ্য কিছু দিন বোমা নিক্ষেপ বন্ধ থাকলেও, আবারও শুরু হয়েছে আগের মতো পরিস্থিতি।
তবুও গাজার মানুষ নত হচ্ছে না। মৃত্যুর ছায়াতেও তারা খুঁজে নিয়েছে জীবনের আলো। যে শহরে আকাশ মানে এখন ড্রোনের গুঞ্জন, সেখানেও মায়েরা শিশুর কপালে চুমু খেয়ে বলে, ‘আমরা মরে যাব, কিন্তু হার মানব না।’ এই বাক্য কোনো সামরিক কৌশল নয়—এটি এক আত্মিক প্রতিজ্ঞা, এক জাতির পুনর্জন্মের ঘোষণা। ‘যে জাতি মৃত্যুকেও অবরোধ করতে শেখে, তাকে পৃথিবীর কোনো শক্তি দমন করতে পারে না।’
ইতিহাসে কিছু যুদ্ধ শুধু ধ্বংস নয়—তারা হয়ে ওঠে এক জাতির আত্মপরিচয়ের পুনর্লিখন। গাজার যুদ্ধ তেমনই এক অধ্যায়। ইসরায়েল এই ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে বর্ষণ করেছে দুই লাখ টনেরও বেশি বিস্ফোরক—ধ্বংস করেছে শহর, হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির। কিন্তু বিজয়ের মুকুট আজ তাদের মাথায় নয়। গাজার ধূলি আর ধোঁয়ার মধ্যেই ফিলিস্তিনের পতাকাই উড়ছে—অমর প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে। দুই হাজারেরও বেশি সামরিক যান ভস্মীভূত, শত শত ‘মেরকাভা’ ট্যাংক ইতিহাসের জঞ্জালে। যা করতে পারেনি কোনো আরব সেনাবাহিনী, তা করেছে অবরুদ্ধ গাজার মানুষ—নিজেদের ইচ্ছাশক্তি দিয়ে।
আজ গাজার মাটি পুরো আরব জাতির আত্মমর্যাদার প্রতীক। ইসরায়েলের নিজস্ব ইতিহাসবিদ ও সেনা কর্মকর্তারাও স্বীকার করছেন—গাজায় তাঁরা কেবল ব্যর্থ নয়, পরাজিত। গাজার মানুষ পুনরুদ্ধার করেছে তিনটি সত্য—আত্মসম্মান, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও জাতিসত্তা। এই প্রতিরোধ কোনো দলের নয়, কোনো মতবাদের নয়—এটি ফিলিস্তিন নামক আত্মার জয়গান, যা রক্তে লেখা, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহমান। গাজার ধ্বংসস্তূপ তাই শুধু যুদ্ধের সাক্ষী নয়; এটি নবজাগরণের প্রতীক—এক জাতির পুনর্জন্ম, যে জাতি জানে, ইতিহাসের শেষ কথা বলে তারাই, যারা শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকে।
ফিলিস্তিনের নতুন প্রজন্ম বুঝে গেছে, স্বাধীনতা চাওয়া যায় না—অর্জন করতে হয়। গাজা প্রমাণ করেছে, প্রতিরোধই একমাত্র ভাষা যা দখলদার বুঝতে পারে—এক ভাষা যেখানে শব্দ নেই, আছে আগুন; নেই বক্তৃতা, আছে আত্মত্যাগের সুর। যে নগরী মৃত্যুর উপত্যকায় পরিণত হয়েছে, সেখান থেকেই উঠেছে জীবনবোধের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিতা—‘আমরা আছি, আমরা থাকব।’ এই বাক্য কেবল এক জাতির নয়—এটি পুরো মানবজাতির বিবেকের উচ্চারণ। কারণ, গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে সভ্যতার ভণ্ড শান্তিনীতি, আর উঠে এসেছে এক নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন। যদি কেউ প্রশ্ন করে—‘শেষ পর্যন্ত কে জিতেছে?’ উত্তরটি লেখা আছে গাজার আকাশেই—যেখানে বোমার ধোঁয়া সরে গেলে দেখা যায় এক পতাকা, রক্তে ভেজা কিন্তু উড়ছে অবিচল; যেখানে প্রতিটি শিশুর চোখে প্রতিফলিত হয় সেই অমর ঘোষণা—‘আমরা আছি, আমরা থাকব।’

হাজার বছরের অপমান, বঞ্চনা আর বন্দিত্বের নাগপাশ পেরিয়ে ফিলিস্তিন আবার নবজন্ম নিচ্ছে, যেখানে প্রতিটি শিশুর কান্না ইতিহাসে প্রতিরোধের ভাষা হয়ে উঠছে।
দীর্ঘ দশক ধরে বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে এক বিভ্রম ছড়ানো হয়েছিল—‘শুধু আলোচনাই শান্তি আনতে পারে।’ সেই বাক্যটি ছিল সভ্যতার মুখে পরানো এক মুখোশ, যার আড়ালে জমে উঠেছিল নীরব হত্যার ইতিহাস। অসলো চুক্তি ছিল সেই মুখোশের শীর্ষ অলংকার—যেখানে কূটনৈতিক কলমের আড়ালে চাপা পড়েছিল রক্ত, অবরোধ আর পরাধীনতার ক্রন্দন। বিশ্বের চোখে সেটি ছিল শান্তির মাইলফলক; কিন্তু গাজার শিশুর চোখে, হেবরনের মাতৃহারা নারীর কণ্ঠে আর পশ্চিম তীরের বালুময় মাটিতে সেটি কেবল এক নিঃশব্দ প্রতারণা। এই শান্তির মুখোশের আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা—দখলদারি, নিপীড়ন ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতার দীর্ঘ ছায়া।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিধানে ‘শান্তি’ মানে ছিল আনুগত্য—এমন এক নতজানু নেতৃত্ব, যারা স্বাধীনতার দাবিকে গিলে ফেলে ‘সংলাপ’-এর নামে আত্মসমর্পণ করবে। সেই ‘শান্তি প্রক্রিয়া’ হয়ে উঠেছিল দখলের এক নতুন রূপ—এক প্রাতিষ্ঠানিক প্রহসন, যার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘শান্তি শিল্প’। ফিলিস্তিনকে নিয়ে নানা সময়ে নানা সংলাপ হয়েছে, কনফারেন্সে বাজানো হয়েছে করতালি, কিন্তু বাস্তবে গড়ে উঠেছে আরও উঁচু প্রাচীর। ইয়াসির আরাফাত, যিনি একদা মুক্তির প্রতীক ছিলেন, সেই প্রহসনের বৃত্তে প্রবেশ করেছিলেন আশায় যে আলোচনার টেবিলে হয়তো রক্তের ইতিহাসের অবসান ঘটবে। কিন্তু নির্মম সত্য হলো—তিনি যত ছাড় দিয়েছেন, তত বেড়েছে বন্দিত্বের পরিধি। তাঁর জনগণ পেয়েছে কাঁটাতারের বেড়া, চেকপোস্টের দীর্ঘ সারি আর ছিন্নভিন্ন মানচিত্র। অসলো চুক্তি তাই হয়ে উঠেছিল প্রতারণার দলিল। এখন সময় এসেছে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার: আলোচনার নয়, আত্মত্যাগের আগুনেই জেগে উঠতে হবে ফিলিস্তিনবাসীকে। এর বিকল্প কোনো পথ নেই।
১৯৫০-এর দশকে যখন আরব জাতিরা পরাজয়ের ভারে নুয়ে পড়েছিল, তখন এই সংকীর্ণ উপত্যকার বালুময় প্রান্তরে জন্ম নেয় ফেদায়িন আন্দোলন—মুক্তির জন্য আত্মোৎসর্গে প্রস্তুত এক প্রজন্ম। সমাজতান্ত্রিক স্লোগান, ইসলামি বিশ্বাস আর মুক্তিকামী রক্ত মিলেমিশে গড়ে তোলে এক আগুনে জনপদ—গাজা। যেখানে পশ্চিম তীরের শহরগুলো দমনযন্ত্র ও প্রশাসনিক বেষ্টনীর নিচে নিস্তব্ধ, সেখানে গাজা ছিল অগ্নিদীপ্ত দুর্গের মতো—এক ক্ষুদ্র স্পার্টা, যে জানে, পরাজয় মানে দাসত্ব, আর প্রতিরোধ মানে জীবন।
২০০৬ সালে হামাসের নির্বাচনী বিজয়ের পর শুরু হয় আধুনিক ইতিহাসের দীর্ঘতম অবরোধ—একটি নগরীকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় পৃথিবী থেকে, যেন তাকে নিঃশেষ করা যায় ক্ষুধা, অন্ধকার ও মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। কিন্তু গাজার মানুষ আত্মসমর্পণ করেনি। ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরের ইট দিয়ে তারা আবার ঘর তুলেছে; ভাঙা স্কুলের দেয়ালে লিখেছে বর্ণমালা; শত্রুর ফেলে যাওয়া গোলা দিয়ে বানিয়েছে নিজের অস্ত্র। এই প্রতিরোধ কোনো দলের নয়—এটি এক জাতির হৃদ্স্পন্দন, যা রক্তে, মাটিতে, শিশুর আঁকায় আর মায়ের অশ্রুতে মিশে আছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে আজ অবধি চলছে গাজার ওপর বোমা নিক্ষেপ। কিছু দিন আগেও যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, সেটা আসলে ছিল একটা প্রতারণার ফাঁদ। অবশ্য কিছু দিন বোমা নিক্ষেপ বন্ধ থাকলেও, আবারও শুরু হয়েছে আগের মতো পরিস্থিতি।
তবুও গাজার মানুষ নত হচ্ছে না। মৃত্যুর ছায়াতেও তারা খুঁজে নিয়েছে জীবনের আলো। যে শহরে আকাশ মানে এখন ড্রোনের গুঞ্জন, সেখানেও মায়েরা শিশুর কপালে চুমু খেয়ে বলে, ‘আমরা মরে যাব, কিন্তু হার মানব না।’ এই বাক্য কোনো সামরিক কৌশল নয়—এটি এক আত্মিক প্রতিজ্ঞা, এক জাতির পুনর্জন্মের ঘোষণা। ‘যে জাতি মৃত্যুকেও অবরোধ করতে শেখে, তাকে পৃথিবীর কোনো শক্তি দমন করতে পারে না।’
ইতিহাসে কিছু যুদ্ধ শুধু ধ্বংস নয়—তারা হয়ে ওঠে এক জাতির আত্মপরিচয়ের পুনর্লিখন। গাজার যুদ্ধ তেমনই এক অধ্যায়। ইসরায়েল এই ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে বর্ষণ করেছে দুই লাখ টনেরও বেশি বিস্ফোরক—ধ্বংস করেছে শহর, হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির। কিন্তু বিজয়ের মুকুট আজ তাদের মাথায় নয়। গাজার ধূলি আর ধোঁয়ার মধ্যেই ফিলিস্তিনের পতাকাই উড়ছে—অমর প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে। দুই হাজারেরও বেশি সামরিক যান ভস্মীভূত, শত শত ‘মেরকাভা’ ট্যাংক ইতিহাসের জঞ্জালে। যা করতে পারেনি কোনো আরব সেনাবাহিনী, তা করেছে অবরুদ্ধ গাজার মানুষ—নিজেদের ইচ্ছাশক্তি দিয়ে।
আজ গাজার মাটি পুরো আরব জাতির আত্মমর্যাদার প্রতীক। ইসরায়েলের নিজস্ব ইতিহাসবিদ ও সেনা কর্মকর্তারাও স্বীকার করছেন—গাজায় তাঁরা কেবল ব্যর্থ নয়, পরাজিত। গাজার মানুষ পুনরুদ্ধার করেছে তিনটি সত্য—আত্মসম্মান, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও জাতিসত্তা। এই প্রতিরোধ কোনো দলের নয়, কোনো মতবাদের নয়—এটি ফিলিস্তিন নামক আত্মার জয়গান, যা রক্তে লেখা, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহমান। গাজার ধ্বংসস্তূপ তাই শুধু যুদ্ধের সাক্ষী নয়; এটি নবজাগরণের প্রতীক—এক জাতির পুনর্জন্ম, যে জাতি জানে, ইতিহাসের শেষ কথা বলে তারাই, যারা শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকে।
ফিলিস্তিনের নতুন প্রজন্ম বুঝে গেছে, স্বাধীনতা চাওয়া যায় না—অর্জন করতে হয়। গাজা প্রমাণ করেছে, প্রতিরোধই একমাত্র ভাষা যা দখলদার বুঝতে পারে—এক ভাষা যেখানে শব্দ নেই, আছে আগুন; নেই বক্তৃতা, আছে আত্মত্যাগের সুর। যে নগরী মৃত্যুর উপত্যকায় পরিণত হয়েছে, সেখান থেকেই উঠেছে জীবনবোধের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিতা—‘আমরা আছি, আমরা থাকব।’ এই বাক্য কেবল এক জাতির নয়—এটি পুরো মানবজাতির বিবেকের উচ্চারণ। কারণ, গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে সভ্যতার ভণ্ড শান্তিনীতি, আর উঠে এসেছে এক নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন। যদি কেউ প্রশ্ন করে—‘শেষ পর্যন্ত কে জিতেছে?’ উত্তরটি লেখা আছে গাজার আকাশেই—যেখানে বোমার ধোঁয়া সরে গেলে দেখা যায় এক পতাকা, রক্তে ভেজা কিন্তু উড়ছে অবিচল; যেখানে প্রতিটি শিশুর চোখে প্রতিফলিত হয় সেই অমর ঘোষণা—‘আমরা আছি, আমরা থাকব।’

শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যাচেষ্টা হয়েছে। ২০০৪ সালে সরাসরি রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে ন্যক্কারজনক ও ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দেওয়ার এমন
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
একটি দুঃসংবাদ আর একটি আশাপ্রদ খবর দিয়ে শুরু করছি। প্রথম দুঃসংবাদ হলো, আইসল্যান্ডে মশা পৌঁছে গেছে। দ্বিতীয় সংবাদ, অস্ট্রেলিয়ায় চিরহরিৎ বনাঞ্চল কার্বন শোষণের চেয়ে নিঃসরণ করছে বেশি। দুটি তথ্যই জানিয়েছেন গবেষকেরা। আপাতদৃশ্যে খুব সাধারণ মনে হলেও, দুটি খবরই ভয়ংকর এক পরিস্থিতির আভাস দিচ্ছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
প্রযুক্তিই সব সময় মানবসভ্যতার ইতিহাসের গতিপথ বদলেছে। একসময় আগুন ও চাকা করেছিল এ কাজটি। এরপর বিজ্ঞান মানুষকে মাটির নিচ থেকে ‘তরল সোনা’ তেল আবিষ্কারের পথ দেখিয়েছে। এই আবিষ্কারের পর দীর্ঘদিন ধরে ভূ-রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে একে কেন্দ্র করে। এমনকি এখনো।
১৪ ঘণ্টা আগে
আজকের পত্রিকায় অনলাইন ভার্সনে ঘুষবিষয়ক একটি সংবাদ চোখে পড়ল। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা টানাপোড়েনের মধ্যে সংবাদটিকে নিরীহ গোছের সংবাদ হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু যিনি ঘুষ গ্রহণ করেছেন তিনি অকপটে তা স্বীকার করেছেন। বলেছেন, ঘুষ হিসেবে তিনি পাকা কলা গ্রহণ করেছেন।
১৫ ঘণ্টা আগেআব্দুর রহমান

প্রযুক্তিই সব সময় মানবসভ্যতার ইতিহাসের গতিপথ বদলেছে। একসময় আগুন ও চাকা করেছিল এ কাজটি। এরপর বিজ্ঞান মানুষকে মাটির নিচ থেকে ‘তরল সোনা’ তেল আবিষ্কারের পথ দেখিয়েছে। এই আবিষ্কারের পর দীর্ঘদিন ধরে ভূ-রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে একে কেন্দ্র করে। এমনকি এখনো। যদি আমরা রাশিয়াকে রুখতে পশ্চিমা বিশ্বের তোড়জোড় দেখি, তাহলেই বুঝব—তেল এখনো কৌশলগত অস্ত্র। কিন্তু সেই অবস্থাও দ্রুত বদলাচ্ছে। ক্রমেই তেলের জায়গা নিচ্ছে তথ্য এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)।
মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় ক্ষমতার ভারসাম্য সব সময়ই প্রযুক্তির সীমানা দিয়ে নির্ধারিত হয়েছে। যে প্রথম লোহা গলিয়েছে, সে-ই রাজ্য গড়েছে। যে প্রথম বন্দুক বানিয়েছে, সে-ই সাম্রাজ্য চালিয়েছে। আর এখন—যে প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণ করবে, সে-ই পুরো সভ্যতার নিয়ন্ত্রণ হাতে নেবে। ২১ শতকের ভূ-রাজনীতিতে ক্ষমতা ক্রমেই কেন্দ্রীভূত হচ্ছে ডেটা, অ্যালগরিদম আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সক্ষমতায়। এআই-ই হয়ে উঠছে আগামী দিনের নতুন ‘পারমাণবিক বোমা।’ যার কাছে এই ‘অস্ত্র’ থাকবে, তথ্য থাকবে, আগামীর বিশ্ব থাকবে তারই পদতলে।
আজকের দুনিয়ায় সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদগুলোর একটি—ডেটা। আর এর পরিচালনার ইঞ্জিন ‘অ্যালগরিদম।’ ব্রিটিশ বিজ্ঞানী নিক বোস্ট্রম লিখেছিলেন, ‘যে মুহূর্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবমস্তিষ্ককে ছাড়িয়ে যাবে, সেই মুহূর্তে মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে কাদের হাতে সেই শক্তি থাকবে তার ওপর।’
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখনো হয়তো সেই অবস্থানে যায়নি, কিন্তু এরই মধ্যে তা বিশ্বরাজনীতির নয়া ‘হট জোনে’ পরিণত হয়েছে। একে শুধু প্রযুক্তিগত বিপ্লব বলা যায় না; বরং এটি ক্ষমতার পুনর্বিন্যাস।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোসেফ নাই বলেছেন, যে রাষ্ট্র তথ্যপ্রবাহ ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখবে, ভবিষ্যতের ক্ষমতার ভারসাম্য তার হাতেই থাকবে। বিষয়টি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে বর্তমান বিশ্বের দুই শীর্ষ শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। এর বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানও প্রবেশ করেছে এই প্রতিযোগিতায়।
এআই বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের ধারণাও পাল্টে গেছে। এখন যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষ নয়, সিদ্ধান্ত নিচ্ছে মেশিন। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে চালু করে জয়েন্ট আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সেন্টার (জেএআইসি), যার লক্ষ্য যুদ্ধক্ষেত্রে এআই ব্যবহার বাড়ানো। পরে এটি একীভূত হয় চিফ ডিজিটাল অ্যান্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অফিসের (সিডিএও) সঙ্গে, যা এখন পেন্টাগনের এআই কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ‘প্রজেক্ট মেভেন’-এর উদ্যোগে মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে হাজারো ঘণ্টার ড্রোন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করা হয় কয়েক সেকেন্ডে।
অন্যদিকে, চীনও বসে নেই। প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ২০১৭ সালে ঘোষণা দেন ‘নিউ জেনারেশন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানের।’ যেখানে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে চীন হবে বিশ্বের প্রধান এআই শক্তি। দেশটির সেনাবাহিনী বা পিপলস লিবারেশন আর্মি এখন ‘ইন্টেলিজেন্টাইজড ওয়ারফেয়ার’ ধারণার ওপর কাজ করছে। এই ধারণা অনুযায়ী, ভবিষ্যতের যুদ্ধ মানবশক্তি নয়, তথ্যশক্তি দ্বারা পরিচালিত হবে। এরই মধ্যে চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত রোবট ডগ, বিভিন্ন ধরনের ড্রোন তৈরি করার কাজে লেগে পড়েছে। এসব কাজে গতি আনতে চীন তাদের ‘সামরিক-বেসামরিক সমন্বয়’ নীতির মাধ্যমে বেসরকারি প্রযুক্তি কোম্পানি যেমন বাইদু, আলিবাবা ও টেনসেন্টকে সরাসরি প্রতিরক্ষা গবেষণায় যুক্ত করেছে।
নিজ দেশে নৈতিকতার কথা বললেও ওরাকল, মাইক্রোসফট, আমাজন, গুগল, স্টারলিংক, পলান্টির, ক্লিয়ারভিউয়ের মতো মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ইউক্রেনকে তাদের ‘নেক্সট জেনারেশন ওয়ারফেয়ারের’ প্রযুক্তিভিত্তিক অস্ত্র পরীক্ষার ‘এআই ওয়ার ল্যাবে’ পরিণত করেছে। তবে বিষয়টি কেবল পরীক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ইসরায়েল এরই মধ্যে গাজায় আরবেল নামক এআই–চালিত এক ধরনের অস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে।
তাই বলা যায়, বিশ্ব নতুন এক ডিজিটাল শীতল যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে অস্ত্র হলো ডেটা, যুদ্ধক্ষেত্র হলো ক্লাউড, আর সৈনিকের নাম এআই। এর লক্ষণ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনে মার্কিন উৎপাদিত চিপ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। বিপরীতে চিপ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় বিরল খনিজ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ দিয়েছে চীন।
এ তো গেল ছোট উদাহরণ। বড় পরিসরে যুক্তরাষ্ট্র এখনো হয়তো এআই নিয়ে মাঠে নেমে যুদ্ধ করছে না, কিন্তু তারা এই খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেই চলেছে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি এআই খাতে বিনিয়োগ ছিল ১০৯.১ বিলিয়ন ডলার, যা চীনের ৯.৩ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় অনেক বেশি। তবে গবেষণায় কিন্তু এগিয়ে চীন। দেশটি ২০১৪-২০২৩ পর্যন্ত ৩৮,২১০টি জেনারেটিভ এআই সম্পর্কিত আবিষ্কার করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ৬,২৭৬টির তুলনায় অনেক বেশি। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, চীন প্রায় ৮.২ বিলিয়ন ডলারের রাষ্ট্রীয় তহবিল ঘোষণা করেছে, যা এআই উদ্যোগে প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগ করা হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৫ সালের মধ্যে এআই উন্নয়নে ২০০ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। ফ্রান্সও এআই উন্নয়নে ১০৯ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এআই খাতে নীতি ও নিয়ন্ত্রণকাঠামো শক্তিশালী করতে চাইলেও তারা উদ্ভাবনে পিছিয়ে আছে এবং বাজারে তার প্রভাব কম। এর বাইরে, আগামী দিনে ব্যবসায় বিনিয়োগের অন্যতম জায়গা হয়ে উঠতে যাচ্ছে ডেটা সেন্টার। এমনকি দুনিয়ার বুক থেকে ডেটা সেন্টার মহাশূন্যে নিয়ে যাওয়ার নীরব এক প্রতিযোগিতা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
এআই এখনো হয়তো ব্যাপকভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার শুরু হয়নি। কিন্তু এমন দিন দেরি নয়, যেখানে আমরা মানুষের পরিবর্তে যুদ্ধক্ষেত্রে মেশিন দেখতে পাব। চীনের রোবট ডগ, ইসরায়েলের এআই-চালিত অস্ত্র ব্যবস্থার কথা আমরা বলেছি। ফলে, এটি স্পষ্ট যে যত সময় যাবে—এআইকে যুদ্ধক্ষেত্রে তো বটেই, কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলেও অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না। এই আশঙ্কায় ‘এআই গডফাদার’ খ্যাত জিওফ্রে হিনটন বলেছিলেন, ‘যদি কোনো ধনী দেশ গরিব দেশ আক্রমণ করতে চায়, তবে তাদের বড় সুবিধা দেবে লেথাল অটোনমাস ওয়েপনস বা স্বচালিত স্বয়ংক্রিয় মারণাস্ত্র।’
তবে পদার্থবিদ ও গবেষক ম্যাক্স টেগমার্ক সতর্ক করেছেন, ‘যে মুহূর্তে মেশিন যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করবে, তখনই যুদ্ধ মানবিক সীমা ছাড়িয়ে যাবে।’ যার প্রমাণ আমরা গাজায় পেয়েছি। মানবিকতার সব উদাহরণ সেখানে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। তবু বড় শক্তিগুলো এখনো প্রতিযোগিতায় বুঁদ হয়ে আছে। কারণ, যে দেশ আগে এআই সামরিক ব্যবহারে এগিয়ে যাবে, ভবিষ্যতের ক্ষমতার মানচিত্র সে-ই আঁকবে। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যৎ বিশ্ববাণিজ্যের গতিপথও অনেকটাই নির্ধারিত হবে এই এআই দিয়েই।

প্রযুক্তিই সব সময় মানবসভ্যতার ইতিহাসের গতিপথ বদলেছে। একসময় আগুন ও চাকা করেছিল এ কাজটি। এরপর বিজ্ঞান মানুষকে মাটির নিচ থেকে ‘তরল সোনা’ তেল আবিষ্কারের পথ দেখিয়েছে। এই আবিষ্কারের পর দীর্ঘদিন ধরে ভূ-রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে একে কেন্দ্র করে। এমনকি এখনো। যদি আমরা রাশিয়াকে রুখতে পশ্চিমা বিশ্বের তোড়জোড় দেখি, তাহলেই বুঝব—তেল এখনো কৌশলগত অস্ত্র। কিন্তু সেই অবস্থাও দ্রুত বদলাচ্ছে। ক্রমেই তেলের জায়গা নিচ্ছে তথ্য এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)।
মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় ক্ষমতার ভারসাম্য সব সময়ই প্রযুক্তির সীমানা দিয়ে নির্ধারিত হয়েছে। যে প্রথম লোহা গলিয়েছে, সে-ই রাজ্য গড়েছে। যে প্রথম বন্দুক বানিয়েছে, সে-ই সাম্রাজ্য চালিয়েছে। আর এখন—যে প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণ করবে, সে-ই পুরো সভ্যতার নিয়ন্ত্রণ হাতে নেবে। ২১ শতকের ভূ-রাজনীতিতে ক্ষমতা ক্রমেই কেন্দ্রীভূত হচ্ছে ডেটা, অ্যালগরিদম আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সক্ষমতায়। এআই-ই হয়ে উঠছে আগামী দিনের নতুন ‘পারমাণবিক বোমা।’ যার কাছে এই ‘অস্ত্র’ থাকবে, তথ্য থাকবে, আগামীর বিশ্ব থাকবে তারই পদতলে।
আজকের দুনিয়ায় সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদগুলোর একটি—ডেটা। আর এর পরিচালনার ইঞ্জিন ‘অ্যালগরিদম।’ ব্রিটিশ বিজ্ঞানী নিক বোস্ট্রম লিখেছিলেন, ‘যে মুহূর্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবমস্তিষ্ককে ছাড়িয়ে যাবে, সেই মুহূর্তে মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে কাদের হাতে সেই শক্তি থাকবে তার ওপর।’
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখনো হয়তো সেই অবস্থানে যায়নি, কিন্তু এরই মধ্যে তা বিশ্বরাজনীতির নয়া ‘হট জোনে’ পরিণত হয়েছে। একে শুধু প্রযুক্তিগত বিপ্লব বলা যায় না; বরং এটি ক্ষমতার পুনর্বিন্যাস।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোসেফ নাই বলেছেন, যে রাষ্ট্র তথ্যপ্রবাহ ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখবে, ভবিষ্যতের ক্ষমতার ভারসাম্য তার হাতেই থাকবে। বিষয়টি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে বর্তমান বিশ্বের দুই শীর্ষ শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। এর বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানও প্রবেশ করেছে এই প্রতিযোগিতায়।
এআই বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের ধারণাও পাল্টে গেছে। এখন যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষ নয়, সিদ্ধান্ত নিচ্ছে মেশিন। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে চালু করে জয়েন্ট আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সেন্টার (জেএআইসি), যার লক্ষ্য যুদ্ধক্ষেত্রে এআই ব্যবহার বাড়ানো। পরে এটি একীভূত হয় চিফ ডিজিটাল অ্যান্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অফিসের (সিডিএও) সঙ্গে, যা এখন পেন্টাগনের এআই কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ‘প্রজেক্ট মেভেন’-এর উদ্যোগে মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে হাজারো ঘণ্টার ড্রোন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করা হয় কয়েক সেকেন্ডে।
অন্যদিকে, চীনও বসে নেই। প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ২০১৭ সালে ঘোষণা দেন ‘নিউ জেনারেশন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানের।’ যেখানে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে চীন হবে বিশ্বের প্রধান এআই শক্তি। দেশটির সেনাবাহিনী বা পিপলস লিবারেশন আর্মি এখন ‘ইন্টেলিজেন্টাইজড ওয়ারফেয়ার’ ধারণার ওপর কাজ করছে। এই ধারণা অনুযায়ী, ভবিষ্যতের যুদ্ধ মানবশক্তি নয়, তথ্যশক্তি দ্বারা পরিচালিত হবে। এরই মধ্যে চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত রোবট ডগ, বিভিন্ন ধরনের ড্রোন তৈরি করার কাজে লেগে পড়েছে। এসব কাজে গতি আনতে চীন তাদের ‘সামরিক-বেসামরিক সমন্বয়’ নীতির মাধ্যমে বেসরকারি প্রযুক্তি কোম্পানি যেমন বাইদু, আলিবাবা ও টেনসেন্টকে সরাসরি প্রতিরক্ষা গবেষণায় যুক্ত করেছে।
নিজ দেশে নৈতিকতার কথা বললেও ওরাকল, মাইক্রোসফট, আমাজন, গুগল, স্টারলিংক, পলান্টির, ক্লিয়ারভিউয়ের মতো মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ইউক্রেনকে তাদের ‘নেক্সট জেনারেশন ওয়ারফেয়ারের’ প্রযুক্তিভিত্তিক অস্ত্র পরীক্ষার ‘এআই ওয়ার ল্যাবে’ পরিণত করেছে। তবে বিষয়টি কেবল পরীক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ইসরায়েল এরই মধ্যে গাজায় আরবেল নামক এআই–চালিত এক ধরনের অস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে।
তাই বলা যায়, বিশ্ব নতুন এক ডিজিটাল শীতল যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে অস্ত্র হলো ডেটা, যুদ্ধক্ষেত্র হলো ক্লাউড, আর সৈনিকের নাম এআই। এর লক্ষণ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনে মার্কিন উৎপাদিত চিপ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। বিপরীতে চিপ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় বিরল খনিজ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ দিয়েছে চীন।
এ তো গেল ছোট উদাহরণ। বড় পরিসরে যুক্তরাষ্ট্র এখনো হয়তো এআই নিয়ে মাঠে নেমে যুদ্ধ করছে না, কিন্তু তারা এই খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেই চলেছে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি এআই খাতে বিনিয়োগ ছিল ১০৯.১ বিলিয়ন ডলার, যা চীনের ৯.৩ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় অনেক বেশি। তবে গবেষণায় কিন্তু এগিয়ে চীন। দেশটি ২০১৪-২০২৩ পর্যন্ত ৩৮,২১০টি জেনারেটিভ এআই সম্পর্কিত আবিষ্কার করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ৬,২৭৬টির তুলনায় অনেক বেশি। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, চীন প্রায় ৮.২ বিলিয়ন ডলারের রাষ্ট্রীয় তহবিল ঘোষণা করেছে, যা এআই উদ্যোগে প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগ করা হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৫ সালের মধ্যে এআই উন্নয়নে ২০০ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। ফ্রান্সও এআই উন্নয়নে ১০৯ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এআই খাতে নীতি ও নিয়ন্ত্রণকাঠামো শক্তিশালী করতে চাইলেও তারা উদ্ভাবনে পিছিয়ে আছে এবং বাজারে তার প্রভাব কম। এর বাইরে, আগামী দিনে ব্যবসায় বিনিয়োগের অন্যতম জায়গা হয়ে উঠতে যাচ্ছে ডেটা সেন্টার। এমনকি দুনিয়ার বুক থেকে ডেটা সেন্টার মহাশূন্যে নিয়ে যাওয়ার নীরব এক প্রতিযোগিতা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
এআই এখনো হয়তো ব্যাপকভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার শুরু হয়নি। কিন্তু এমন দিন দেরি নয়, যেখানে আমরা মানুষের পরিবর্তে যুদ্ধক্ষেত্রে মেশিন দেখতে পাব। চীনের রোবট ডগ, ইসরায়েলের এআই-চালিত অস্ত্র ব্যবস্থার কথা আমরা বলেছি। ফলে, এটি স্পষ্ট যে যত সময় যাবে—এআইকে যুদ্ধক্ষেত্রে তো বটেই, কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলেও অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না। এই আশঙ্কায় ‘এআই গডফাদার’ খ্যাত জিওফ্রে হিনটন বলেছিলেন, ‘যদি কোনো ধনী দেশ গরিব দেশ আক্রমণ করতে চায়, তবে তাদের বড় সুবিধা দেবে লেথাল অটোনমাস ওয়েপনস বা স্বচালিত স্বয়ংক্রিয় মারণাস্ত্র।’
তবে পদার্থবিদ ও গবেষক ম্যাক্স টেগমার্ক সতর্ক করেছেন, ‘যে মুহূর্তে মেশিন যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করবে, তখনই যুদ্ধ মানবিক সীমা ছাড়িয়ে যাবে।’ যার প্রমাণ আমরা গাজায় পেয়েছি। মানবিকতার সব উদাহরণ সেখানে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। তবু বড় শক্তিগুলো এখনো প্রতিযোগিতায় বুঁদ হয়ে আছে। কারণ, যে দেশ আগে এআই সামরিক ব্যবহারে এগিয়ে যাবে, ভবিষ্যতের ক্ষমতার মানচিত্র সে-ই আঁকবে। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যৎ বিশ্ববাণিজ্যের গতিপথও অনেকটাই নির্ধারিত হবে এই এআই দিয়েই।

শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যাচেষ্টা হয়েছে। ২০০৪ সালে সরাসরি রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে ন্যক্কারজনক ও ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দেওয়ার এমন
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
একটি দুঃসংবাদ আর একটি আশাপ্রদ খবর দিয়ে শুরু করছি। প্রথম দুঃসংবাদ হলো, আইসল্যান্ডে মশা পৌঁছে গেছে। দ্বিতীয় সংবাদ, অস্ট্রেলিয়ায় চিরহরিৎ বনাঞ্চল কার্বন শোষণের চেয়ে নিঃসরণ করছে বেশি। দুটি তথ্যই জানিয়েছেন গবেষকেরা। আপাতদৃশ্যে খুব সাধারণ মনে হলেও, দুটি খবরই ভয়ংকর এক পরিস্থিতির আভাস দিচ্ছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
হাজার বছরের অপমান, বঞ্চনা আর বন্দিত্বের নাগপাশ পেরিয়ে ফিলিস্তিন আবার নবজন্ম নিচ্ছে, যেখানে প্রতিটি শিশুর কান্না ইতিহাসে প্রতিরোধের ভাষা হয়ে উঠছে। দীর্ঘ দশক ধরে বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে এক বিভ্রম ছড়ানো হয়েছিল—‘শুধু আলোচনাই শান্তি আনতে পারে।’ সেই বাক্যটি ছিল সভ্যতার মুখে পরানো এক মুখোশ, যার আড়ালে...
১৪ ঘণ্টা আগে
আজকের পত্রিকায় অনলাইন ভার্সনে ঘুষবিষয়ক একটি সংবাদ চোখে পড়ল। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা টানাপোড়েনের মধ্যে সংবাদটিকে নিরীহ গোছের সংবাদ হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু যিনি ঘুষ গ্রহণ করেছেন তিনি অকপটে তা স্বীকার করেছেন। বলেছেন, ঘুষ হিসেবে তিনি পাকা কলা গ্রহণ করেছেন।
১৫ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

আজকের পত্রিকায় অনলাইন ভার্সনে ঘুষবিষয়ক একটি সংবাদ চোখে পড়ল। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা টানাপোড়েনের মধ্যে সংবাদটিকে নিরীহ গোছের সংবাদ হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু যিনি ঘুষ গ্রহণ করেছেন তিনি অকপটে তা স্বীকার করেছেন। বলেছেন, ঘুষ হিসেবে তিনি পাকা কলা গ্রহণ করেছেন। যিনি কলা দিয়েছেন ঘুষ হিসেবে, তিনি অবশ্য বলেছেন কলার সঙ্গে ১০ হাজার টাকাও দিতে হয়েছে ঘুষ গ্রহণকারীকে। ফলে জমে গেছে খেলা। স্বীকারোক্তির কারণে বদলি হয়েছেন যশোর জেলা পরিষদের সেই উচ্চমান সহকারী। ২৬ অক্টোবর রোববার যশোরে গণশুনানি চলাকালে দুদক কমিশনার মিয়া মোহাম্মদ আলী আকবর আজিজী এই আদেশ দেন।
ঘুষ নিয়ে নানা ধরনের গল্প প্রচলিত আছে। ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশ অফিসারদের ঘুষ বিষয়টি বোঝানোর জন্য কেউ কেউ চেষ্টা করেছেন। একবার হাতেনাতে ঘুষ খাওয়া ধরা পড়েছিল। ব্রিটিশ অফিসার দেখলেন, অভিযুক্ত কর্মচারীকে কলা দেওয়া হচ্ছে। কলাকে যখন ঘুষ বলা হলো, তখন তিনি খুশি হয়ে বললেন, ঘুষ খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। সে কারণেই কিনা জানি না, শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর ঘুষ এখনো সরকারি বিভিন্ন মহলে দেদার খাওয়া হচ্ছে।
ঘুষ, দুর্নীতি আর লুটপাট মূলত হয় অসৎ আমলা, ব্যবসায়ী আর রাজনৈতিক নেতার অসৎ মেলামেশা থেকে। দুর্নীতি, ঘুষ ও লুটপাট বনেদি অপরাধ। প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় এরা অভিজাতন্ত্র মেনে চলে। খুবই সহজ একটি কাজকে জটিল বানিয়ে ঘুষ খাওয়ার রেওয়াজ বন্ধ করা কঠিন। যাঁরা ঘুষের খবর প্রকাশ করবেন কিংবা যাঁরা ঘুষখোরকে শায়েস্তা করবেন, তাঁরাও অনেক সময় কী কারণে নিশ্চুপ হয়ে যান, তা বুঝতে রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না। মুশকিল হলো, আমাদের যে নৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে, সেটা নিয়ে খুব বেশি মাথাব্যথা নেই।
একজন ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ তাঁর দামি গাড়িটা নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন দেশ, সবাই তাঁকে সমীহ করে চলেছে, এ রকম ঘটনা কি দুর্লক্ষ্য? যাঁর বেতন ৫০ হাজার টাকা, তিনি সে মাসের বেতন দিয়ে স্ত্রীকে দুই ভরি স্বর্ণালংকার কিনে দিচ্ছেন, সন্তানের হাতে তুলে দিচ্ছেন গাড়ির চাবি, এ রকম ঘটনা ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, টাকাটা কোত্থেকে এল সে প্রশ্ন কেউ আর তুলতে চায় না। এই মহাবিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া যেত যদি পারিবারিক শিক্ষায়, বিদ্যায়তনের পরিবেশে এবং সামাজিক শৃঙ্খলায় গড়ে তোলা যেত নতুন প্রজন্মকে। একটি শিশু জন্মের পরই যখন চারপাশে অনৈতিকতার চাষবাস দেখে, তখন তার কাছ থেকে সাচ্চা আদর্শবান একজন মানুষকে পাওয়ার ভাবনা শুধু বোকারাই করতে পারেন।
কলা হোক আর টাকা হোক, ঘুষ বিষয়টা যে অন্যায়, তা যদি অন্তর থেকে না বোঝা হয়, শুধু কথা বলার রাজনীতি দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়, তাহলে ঘুষ, দুর্নীতি দূর হওয়ার কোনো কারণ থাকে না। যশোরের ওই উচ্চমান সহকারীর মতো হয়তো বদলির ঘটনা ঘটবে, কিন্তু ঘুষকে বদলি করার পর ঘুষহীন সমাজ তাতে গড়ে উঠবে না।

আজকের পত্রিকায় অনলাইন ভার্সনে ঘুষবিষয়ক একটি সংবাদ চোখে পড়ল। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা টানাপোড়েনের মধ্যে সংবাদটিকে নিরীহ গোছের সংবাদ হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু যিনি ঘুষ গ্রহণ করেছেন তিনি অকপটে তা স্বীকার করেছেন। বলেছেন, ঘুষ হিসেবে তিনি পাকা কলা গ্রহণ করেছেন। যিনি কলা দিয়েছেন ঘুষ হিসেবে, তিনি অবশ্য বলেছেন কলার সঙ্গে ১০ হাজার টাকাও দিতে হয়েছে ঘুষ গ্রহণকারীকে। ফলে জমে গেছে খেলা। স্বীকারোক্তির কারণে বদলি হয়েছেন যশোর জেলা পরিষদের সেই উচ্চমান সহকারী। ২৬ অক্টোবর রোববার যশোরে গণশুনানি চলাকালে দুদক কমিশনার মিয়া মোহাম্মদ আলী আকবর আজিজী এই আদেশ দেন।
ঘুষ নিয়ে নানা ধরনের গল্প প্রচলিত আছে। ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশ অফিসারদের ঘুষ বিষয়টি বোঝানোর জন্য কেউ কেউ চেষ্টা করেছেন। একবার হাতেনাতে ঘুষ খাওয়া ধরা পড়েছিল। ব্রিটিশ অফিসার দেখলেন, অভিযুক্ত কর্মচারীকে কলা দেওয়া হচ্ছে। কলাকে যখন ঘুষ বলা হলো, তখন তিনি খুশি হয়ে বললেন, ঘুষ খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। সে কারণেই কিনা জানি না, শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর ঘুষ এখনো সরকারি বিভিন্ন মহলে দেদার খাওয়া হচ্ছে।
ঘুষ, দুর্নীতি আর লুটপাট মূলত হয় অসৎ আমলা, ব্যবসায়ী আর রাজনৈতিক নেতার অসৎ মেলামেশা থেকে। দুর্নীতি, ঘুষ ও লুটপাট বনেদি অপরাধ। প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় এরা অভিজাতন্ত্র মেনে চলে। খুবই সহজ একটি কাজকে জটিল বানিয়ে ঘুষ খাওয়ার রেওয়াজ বন্ধ করা কঠিন। যাঁরা ঘুষের খবর প্রকাশ করবেন কিংবা যাঁরা ঘুষখোরকে শায়েস্তা করবেন, তাঁরাও অনেক সময় কী কারণে নিশ্চুপ হয়ে যান, তা বুঝতে রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না। মুশকিল হলো, আমাদের যে নৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে, সেটা নিয়ে খুব বেশি মাথাব্যথা নেই।
একজন ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ তাঁর দামি গাড়িটা নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন দেশ, সবাই তাঁকে সমীহ করে চলেছে, এ রকম ঘটনা কি দুর্লক্ষ্য? যাঁর বেতন ৫০ হাজার টাকা, তিনি সে মাসের বেতন দিয়ে স্ত্রীকে দুই ভরি স্বর্ণালংকার কিনে দিচ্ছেন, সন্তানের হাতে তুলে দিচ্ছেন গাড়ির চাবি, এ রকম ঘটনা ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, টাকাটা কোত্থেকে এল সে প্রশ্ন কেউ আর তুলতে চায় না। এই মহাবিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া যেত যদি পারিবারিক শিক্ষায়, বিদ্যায়তনের পরিবেশে এবং সামাজিক শৃঙ্খলায় গড়ে তোলা যেত নতুন প্রজন্মকে। একটি শিশু জন্মের পরই যখন চারপাশে অনৈতিকতার চাষবাস দেখে, তখন তার কাছ থেকে সাচ্চা আদর্শবান একজন মানুষকে পাওয়ার ভাবনা শুধু বোকারাই করতে পারেন।
কলা হোক আর টাকা হোক, ঘুষ বিষয়টা যে অন্যায়, তা যদি অন্তর থেকে না বোঝা হয়, শুধু কথা বলার রাজনীতি দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়, তাহলে ঘুষ, দুর্নীতি দূর হওয়ার কোনো কারণ থাকে না। যশোরের ওই উচ্চমান সহকারীর মতো হয়তো বদলির ঘটনা ঘটবে, কিন্তু ঘুষকে বদলি করার পর ঘুষহীন সমাজ তাতে গড়ে উঠবে না।

শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যাচেষ্টা হয়েছে। ২০০৪ সালে সরাসরি রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে ন্যক্কারজনক ও ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দেওয়ার এমন
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
একটি দুঃসংবাদ আর একটি আশাপ্রদ খবর দিয়ে শুরু করছি। প্রথম দুঃসংবাদ হলো, আইসল্যান্ডে মশা পৌঁছে গেছে। দ্বিতীয় সংবাদ, অস্ট্রেলিয়ায় চিরহরিৎ বনাঞ্চল কার্বন শোষণের চেয়ে নিঃসরণ করছে বেশি। দুটি তথ্যই জানিয়েছেন গবেষকেরা। আপাতদৃশ্যে খুব সাধারণ মনে হলেও, দুটি খবরই ভয়ংকর এক পরিস্থিতির আভাস দিচ্ছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
হাজার বছরের অপমান, বঞ্চনা আর বন্দিত্বের নাগপাশ পেরিয়ে ফিলিস্তিন আবার নবজন্ম নিচ্ছে, যেখানে প্রতিটি শিশুর কান্না ইতিহাসে প্রতিরোধের ভাষা হয়ে উঠছে। দীর্ঘ দশক ধরে বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে এক বিভ্রম ছড়ানো হয়েছিল—‘শুধু আলোচনাই শান্তি আনতে পারে।’ সেই বাক্যটি ছিল সভ্যতার মুখে পরানো এক মুখোশ, যার আড়ালে...
১৪ ঘণ্টা আগে
প্রযুক্তিই সব সময় মানবসভ্যতার ইতিহাসের গতিপথ বদলেছে। একসময় আগুন ও চাকা করেছিল এ কাজটি। এরপর বিজ্ঞান মানুষকে মাটির নিচ থেকে ‘তরল সোনা’ তেল আবিষ্কারের পথ দেখিয়েছে। এই আবিষ্কারের পর দীর্ঘদিন ধরে ভূ-রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে একে কেন্দ্র করে। এমনকি এখনো।
১৪ ঘণ্টা আগে