Ajker Patrika

আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস

প্রবীণদের প্রতি দায়িত্ববোধ

হাসান আলী 
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ১২
প্রবীণদের প্রতি দায়িত্ববোধ

প্রবীণ মানুষ সমাজের জীবন্ত ইতিহাস, অভিজ্ঞতার ভান্ডার ও জ্ঞানের আলোকবর্তিকা। তাঁরা শুধু পরিবার নয়, সমগ্র জাতির জন্য একটি ভিত্তি ও দিকনির্দেশনা। তাঁদের অবদানকে সম্মান জানাতে প্রতিবছর ১ অক্টোবর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। এ দিবসের মূল লক্ষ্য হলো প্রবীণদের সমস্যা, সম্ভাবনা ও অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘স্থানীয় ও বৈশ্বিক উদ্যোগে প্রবীণদের ভূমিকা: আমাদের আশা, আমাদের মঙ্গল, আমাদের অধিকার’। এ প্রতিপাদ্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রবীণেরা নিছক দর্শক নন; তাঁরা সক্রিয় নাগরিক, সমাজের চালিকাশক্তি এবং পরিবর্তনের সহযাত্রী।

প্রবীণদের আশা বেঁচে থাকার প্রেরণা

মানুষ যতই বয়সে প্রবীণ হোক, তাঁদের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা কখনো মরে যায় না। প্রবীণেরা চান সমাজে সম্মান, অংশগ্রহণ ও ভালোবাসা। তাঁরা চান নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে তরুণদের পথ দেখাতে। পরিবার ও সমাজের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, সন্তানসন্ততির ভালোবাসা পাওয়া এবং নিজেকে কার্যকর মনে করা—এসবই প্রবীণদের আশা।

প্রবীণদের মঙ্গল হলো স্বস্তিদায়ক ও শান্তিপূর্ণ জীবন বার্ধক্যে শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা স্বাভাবিক হলেও তা অবহেলার কারণ হতে পারে না। প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক নিরাপত্তা, পর্যাপ্ত আয় এবং মানসিক শান্তি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। শুধু চিকিৎসা নয়, তাঁদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ, বিনোদন, সাংস্কৃতিক অংশগ্রহণও সমান জরুরি। সক্রিয় ও সম্মানজনক বার্ধক্যই প্রকৃত মঙ্গল বয়ে আনে।

প্রবীণদের অধিকার

প্রবীণদের অধিকারও মানবাধিকারের আওতাভুক্ত। প্রবীণেরাও মৌলিক অধিকারভোগী নাগরিক। বয়সের কারণে বৈষম্য, অবহেলা ও হেনস্তার শিকার হওয়া তাঁদের জন্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। তাঁদের ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের অধিকার, সম্পদ ব্যবহারের অধিকার এবং নিরাপদ পরিবেশে বসবাসের নিশ্চয়তা দিতে হবে। প্রবীণবান্ধব আইন, নীতি ও কার্যকর বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন।

প্রবীণদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণ করতে প্রথমত রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। এরপর আসে পরিবার ও সমাজের দায়িত্বের কথা। তবে বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে পিতামাতার দায়িত্ব পালন করা সন্তানদের ওপর পড়ে। এটাকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

আমাদের সবারই উচিত পিতামাতার প্রতি দায়িত্বগুলো বিবেচনায় নেওয়া। প্রবীণদের সমাজের জন্য বোঝা মনে না করে, তাঁদের সমাজের অংশ মনে করা উচিত।

এবারের প্রবীণ দিবসের প্রতিপাদ্য আমাদের কিছু দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়। যেমন স্থানীয় পর্যায়ে প্রবীণদের সম্পৃক্ত করার জন্য গ্রাম বা শহর উভয় পর্যায়ে প্রবীণ পরামর্শ পরিষদ গঠন করা; স্বাস্থ্যসেবার প্রসারে নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা, হোম কেয়ার সার্ভিস, ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা করা; প্রবীণদের অধিকার রক্ষায় কঠোর আইন প্রয়োগ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

প্রবীণদের প্রতি সম্মান, মানসিকভাবে সঙ্গ এবং সহায়তা করা, ভালোবাসা ও ধৈর্যশীল আচরণ করলেই একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের শুভসূচনা হতে পারে। তবে আমাদের সবারই মনে রাখা দরকার—

প্রবীণেরা কোনো বোঝা নন, তাঁরা আমাদের সমাজের শক্তি ও প্রেরণার উৎস। তাঁদের অভিজ্ঞতা, ত্যাগ ও অবদানকে মূল্যায়ন করাই আমাদের কর্তব্য। তাই ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের প্রতিপাদ্য আমাদের শিক্ষা দেয়—প্রবীণদের আশা পূরণ, মঙ্গল নিশ্চিতকরণ এবং অধিকার রক্ষা করেই একটি মানবিক ও টেকসই সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। প্রবীণদের সম্মানিত করলে সমাজ হবে আলোকিত, পরিবার হবে সুদৃঢ় আর ভবিষ্যৎ হবে উজ্জ্বল।

লেখক: প্রবীণ বিষয়ে লেখক, ও সংগঠক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পর্নোগ্রাফিতে জড়িত সেই বাংলাদেশি যুগল গ্রেপ্তার

৪ হাজার এএসআই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি

দেবরের ছেলের সঙ্গে প্রেমের ইতি, থানায় বসে কবজি কাটলেন দুই সন্তানের মা

ভারত বলছে, ফোনালাপ হয়নি, জবাবে ট্রাম্প বললেন—তাহলে ওরা শুল্ক দিতে থাক

দনবাস রাশিয়ার দখলে চলে গেছে, সেটা মেনেই যুদ্ধ শেষ করো—জেলেনস্কিকে ট্রাম্প

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত