জাহীদ রেজা নূর
ডিসেম্বর আর জুন নিয়ে যে বচসা (বচসা বলাই শ্রেয়, এটাকে সুস্থ মস্তিষ্কের আলোচনা বলার কোনো সুযোগ নেই) শুরু হয়েছে, তার অন্তর্নিহিত কারণ বোঝা দায়। অনেক ইউটিউবারই এই প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে এসেছেন এবং তাঁদের মতো করে আলোচনা করেছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি এ রকম কঠোর হচ্ছেন, অধ্যাপক ইউনূসই-বা কেন জুন পর্যন্ত সময় চাইছেন একেবারে একরোখাভাবে, তা নিয়ে গোটা দেশই যে বিরক্ত, সেটা রাজনীতির মাঠের এই দুই পক্ষের মানুষ ছাড়া আর সবাই বোঝে। এরাও যে বোঝে না, তা নয়; কিন্তু এদের কেউই ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী’ পণ করেছেন যেন। ‘তালগাছটা আমার’—এই যেন নীতি।
কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন, যদি জুন পর্যন্তই নির্বাচনকে প্রলম্বিত করা হয়, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে ডিসেম্বরের কথা বলা হচ্ছে কেন? ডিসেম্বর না বলে সরাসরি জুন বললে সমস্যা কী? ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে এমন কিছু প্রাকৃতিক ও শিক্ষাসংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে, যার কারণে নির্বাচনটি সময়মতো করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা, বন্যাসহ নানাবিধ কারণে নির্বাচন যদি পিছিয়ে দিতে হয়, তাহলে কি এই সরকারকে কথা না রাখতে পারার জন্য অভিযুক্ত করা যাবে? নাকি তারা এই অজুহাত দেখিয়েই আরও অনেক দিন ক্ষমতায় থাকার পাঁয়তারা করবে?
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর নিয়োগকর্তা হিসেবে যাদের কথা বলছিলেন, সেই বৃহৎ ছাত্রসমাজ আজ দ্বিধাবিভক্ত। গুটিকয় যে তরুণের দল ক্ষমতায় বা ক্ষমতার আশপাশে রয়েছে, তাদের কর্মকাণ্ড দেশের জনগণকে অনেকটাই হতাশ করেছে। অনভিজ্ঞতা আর অসততার তকমাও লেগেছে কারও কারও অবয়বে। সমন্বয়ক পরিচয়ে চিহ্নিত লুটেরাদের তিনজনকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার কারণে একজন এনসিপি নেতার প্রতি দলটি যে কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছিল, তা-ও উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে নেতাটি ক্ষমা চাওয়ার কারণে। কিন্তু তিনি থানায় গিয়ে এই মব সৃষ্টিকারীদের ছাড়িয়ে আনতে গিয়েছিলেন কোন আক্কেলে, সেটা বুঝলেই এই রাজনীতির মানচিত্র বোঝা যাবে। ক্ষমতায় না গিয়েই ক্ষমতা দেখানোর এই প্রবণতা যে কারও চোখে পড়বে। আওয়ামী লীগ আমলে কিংবা তার আগের বিএনপি আমলে যেসব অনাচার হয়েছে, তা যেন আর না হয়—এমন প্রতিজ্ঞা নিয়েই তো নতুন সরকার এসেছে, শিক্ষার্থীদেরও তো সেই অঙ্গীকারেই যুক্ত থাকার কথা, কিন্তু এই জায়গাটির খুব কি পরিবর্তন হয়েছে? হলে কোন দিকে সে পরিবর্তন, সেটা কি সাধারণ জনতা বুঝতে পারছে? ‘ছাত্র-জনতা’র নাম নিয়ে রাজনীতি করা হলে তা কি সাধারণ ছাত্র বা সাধারণ জনগণ সে রাজনীতির সঙ্গে থাকবে? এনসিপির জনসভায় লোকসমাগম দেখেই তো বোঝা যায়, জনগণ কী চায়।
বিএনপি কেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার ব্যাপারে এ রকম মরিয়া হয়ে উঠল? অনেকেই বলছেন, যেভাবে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের দুষ্ট ছেলেরা দেশজুড়ে চাঁদাবাজি, মাস্তানি শুরু করেছে, তাতে জুনে নির্বাচন হলে নির্বাচনের আগেই তাদের জনপ্রিয়তা ভীষণভাবে কমে যেতে পারে। ফলে, আওয়ামী লীগবিহীন ফাঁকা মাঠেও নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া সহজ না-ও হতে পারে। কেউ কেউ মশকরা করে বলছেন, বেআইনিভাবে চাঁদাবাজি, মাস্তানি করার চেয়ে নির্বাচিত হয়ে সেই একই কাজ করা সহজ বলেই বিএনপি ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইছে। সবকিছু নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা এটি—এমনটাও মনে করছেন কেউ কেউ।
আরও একটি শঙ্কা তাদের মনে কাজ করতে পারে। দেশের আগস্ট-পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে এমন কোনো ইতিবাচক ঘটনা ঘটেনি, যার ওপর বিশ্বাস রেখে সাধারণ মানুষ আশাবাদী হবে। ফলে আওয়ামী লীগের প্রতি যে রোষ আর ঘৃণা জন্মেছিল মনে, তা-ও ধীরে ধীরে ফিকে হতে শুরু করবে। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে এ সময়ের তরুণেরা শুধু আওয়ামী লীগের শাসনই দেখেছে। এখন দেখছে অন্তর্বর্তী সরকারের শাসন। বিএনপিও তার রূপ দেখিয়ে ফেলেছে। জামায়াত ক্ষমতায় না গিয়েও যেভাবে ক্ষমতার সুবিধা পাচ্ছে, সেটাও দেখা হয়ে গেছে। তাতে সাধারণ জনগণ যদি মনে করে, ‘সব শিয়ালের এক রা’—তাহলে কি তাদের খুব একটা দোষ দেওয়া যাবে?
যে তরুণেরা জীবন বাজি রেখে জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে নেমেছিল, তারা কি তখন ভাবতে পেরেছিল, নানা দিক থেকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর আঘাত আসবে? তারা কি ভাবতে পেরেছিল, একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা নানাভাবে এই সরকারের সমর্থন পাবে? বরাবরই আমি বলে এসেছি, তরুণেরাই দেখাতে পারে দিশা। প্রবীণের প্রজ্ঞা আর নবীনের প্রাণোচ্ছল গতিই পাল্টে দিতে পারে দেশের ভবিষ্যৎ। কিন্তু বারবার এই জায়গাতেই আমাদের পিছিয়ে পড়তে হয়েছে। ব্যক্তিস্বার্থের কারণে সমষ্টিকে অবহেলা করা হয়েছে। সুশাসনের জায়গায় বারবার দুঃশাসনের কবলে পড়তে হয়েছে। এবার এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সে সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হলো কি না, সেটাই দেখার বিষয়।
ডিসেম্বর আর জুন নিয়ে চলা এই বচসায় দেশের ছাত্র-জনতার কোন লাভ হবে? ছাত্র-জনতা মানে তো ক্ষমতাসীন বা ক্ষমতার আশপাশে থাকা কতিপয় মানুষ নয়, গোটা দেশের হৃৎস্পন্দন যে ছাত্র-জনতার হৃদয়ে, তার নাগাল পাওয়া কি এত সহজ?
যাঁরা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাইছেন, তাঁরা ক্ষমতায় এলে দেশের নাগরিকদের জন্য কী করবেন? যে প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়েছে, সেগুলো কীভাবে তাঁরা গড়ে তুলবেন? তাঁরাও কি ‘আওয়ামী দোসর’ ট্যাগ দিয়ে সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদায় করবেন? শুধু দলবাজদের নিয়ে গড়ে তুলবেন প্রতিষ্ঠান? দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হওয়া ঠিকুজি হাজির না করা পর্যন্ত কি নিয়োগ হবে না? দক্ষতা না দলবাজির ভিত্তিতে প্রশাসন গড়বেন তাঁরা? দেশের অর্থনৈতিক প্রশ্নগুলোকে কীভাবে সামলাবেন? আরও একটা ব্যাপার, জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান কী, সেটাও তো তাঁদের পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার করে বলতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার তাঁরা কীভাবে রক্ষা করবেন। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নামে থাকা কাপাসিয়ার কলেজটি থেকে তাঁর নাম উধাও করে দেওয়া রাজনীতির ব্যাপারে তাঁরা কী বলবেন? মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী স্থাপনাগুলো ভাঙচুরের ব্যাপারে তাঁদের মনোভাব কী, সেটাও তো স্পষ্ট করতে হবে তাঁদের। হ্যাঁ, যে অবহেলায় প্রাণপাত করে কৃষিজীবী মানুষ, তাদের ভাগ্য উন্নয়নে কী ভাবনা থাকবে তাঁদের? কেবল নির্বাচন চাইলেই হবে, কেন তাঁদের দলকে নির্বাচিত করতে হবে, সে বিষয়টি জনগণের কাছে পরিষ্কারভাবে বলতে হবে না?
যাঁরা জুন পর্যন্ত রবারের মতো টেনে নিয়ে যেতে চাইছেন নির্বাচনকে, তাঁরা বলুন, ডিসেম্বরের মধ্যে কী কী সংস্কার করতে পারবেন। আর জুন পর্যন্ত নির্বাচন টেনে নিয়ে গেলে এই সময়ের মধ্যে আরও বেশি কোন কোন সংস্কারের কথা আপনারা ভাবছেন? ছাত্র-জনতা যদি প্রশ্ন করে, এ পর্যন্ত কমিটি গড়ে তোলা আর কমিটির রিপোর্ট গ্রহণ করা ছাড়া সংস্কারের দৃশ্যমান কোনো নজির নেই কেন, তাহলে কী জবাব দেবে সরকার?
এবার সারা বিশ্ব তাকিয়ে থাকবে নির্বাচনের দিকে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। ছাত্র-জনতা বোঝার চেষ্টা করছে, কোনো শক্তির প্রতি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষপাতিত্ব আছে কি না। বোঝার চেষ্টা করছে, মব সন্ত্রাসের সময় সরকার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কেন নিশ্চুপ থেকেছে? ক্ষমতায় আসার এতগুলো মাস পরে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে ছাত্র-জনতা নতুন করে ভাবতে শুরু করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
দেশের মানুষ শান্তি চায়। ক্ষমতায় বঙ্গবন্ধু-কন্যা আছেন, নাকি নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস আছেন, নাকি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান-জায়া খালেদা জিয়া আছেন, তা নিয়ে ছাত্র-জনতা খুব বেশি আগ্রহী আর হবে না। রাষ্ট্র সংস্কারের পর দেশটা স্বৈরাচারী শাসন থেকে বেরিয়ে আসতে পারল কি না, সেটাই দেখবে।
ভুক্তভোগীদের কাছে প্রশ্ন করুন, সরকারি যে অফিসগুলোয় ‘মাল’ ছাড়া ফাইল নড়ত না, সেসব জায়গায় অবস্থার কোনো উন্নতি হয়েছে কি? যে উত্তর পাবেন, তাতে হতাশায় মন খারাপ হবে। ঠিকাদারি ব্যবসা কিংবা নিয়োগ-বাণিজ্য কি থেমেছে? সবকিছু কি মেধার মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে? কৃষক কি আগের চেয়ে ভালো আছে? স্টক এক্সচেঞ্জের এই হাল হলো কেন? করিডর, বন্দরবিষয়ক প্রশ্নগুলো কেন উঠছে, সেগুলোও তো সন্দেহের সৃষ্টি করে?
জনগণের জন্য যদি দেশ হয়ে থাকে, তবে জনগণের হাতেই তা ফেরত আসবে—এমন স্বপ্নে বিশ্বাস রাখতে মন চায়। কিন্তু কতটা ভরসা রাখা যায়, তা নিয়ে সংশয় কাটে না।
ডিসেম্বর আর জুন নিয়ে যে বচসা (বচসা বলাই শ্রেয়, এটাকে সুস্থ মস্তিষ্কের আলোচনা বলার কোনো সুযোগ নেই) শুরু হয়েছে, তার অন্তর্নিহিত কারণ বোঝা দায়। অনেক ইউটিউবারই এই প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে এসেছেন এবং তাঁদের মতো করে আলোচনা করেছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি এ রকম কঠোর হচ্ছেন, অধ্যাপক ইউনূসই-বা কেন জুন পর্যন্ত সময় চাইছেন একেবারে একরোখাভাবে, তা নিয়ে গোটা দেশই যে বিরক্ত, সেটা রাজনীতির মাঠের এই দুই পক্ষের মানুষ ছাড়া আর সবাই বোঝে। এরাও যে বোঝে না, তা নয়; কিন্তু এদের কেউই ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী’ পণ করেছেন যেন। ‘তালগাছটা আমার’—এই যেন নীতি।
কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন, যদি জুন পর্যন্তই নির্বাচনকে প্রলম্বিত করা হয়, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে ডিসেম্বরের কথা বলা হচ্ছে কেন? ডিসেম্বর না বলে সরাসরি জুন বললে সমস্যা কী? ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে এমন কিছু প্রাকৃতিক ও শিক্ষাসংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে, যার কারণে নির্বাচনটি সময়মতো করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা, বন্যাসহ নানাবিধ কারণে নির্বাচন যদি পিছিয়ে দিতে হয়, তাহলে কি এই সরকারকে কথা না রাখতে পারার জন্য অভিযুক্ত করা যাবে? নাকি তারা এই অজুহাত দেখিয়েই আরও অনেক দিন ক্ষমতায় থাকার পাঁয়তারা করবে?
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর নিয়োগকর্তা হিসেবে যাদের কথা বলছিলেন, সেই বৃহৎ ছাত্রসমাজ আজ দ্বিধাবিভক্ত। গুটিকয় যে তরুণের দল ক্ষমতায় বা ক্ষমতার আশপাশে রয়েছে, তাদের কর্মকাণ্ড দেশের জনগণকে অনেকটাই হতাশ করেছে। অনভিজ্ঞতা আর অসততার তকমাও লেগেছে কারও কারও অবয়বে। সমন্বয়ক পরিচয়ে চিহ্নিত লুটেরাদের তিনজনকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার কারণে একজন এনসিপি নেতার প্রতি দলটি যে কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছিল, তা-ও উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে নেতাটি ক্ষমা চাওয়ার কারণে। কিন্তু তিনি থানায় গিয়ে এই মব সৃষ্টিকারীদের ছাড়িয়ে আনতে গিয়েছিলেন কোন আক্কেলে, সেটা বুঝলেই এই রাজনীতির মানচিত্র বোঝা যাবে। ক্ষমতায় না গিয়েই ক্ষমতা দেখানোর এই প্রবণতা যে কারও চোখে পড়বে। আওয়ামী লীগ আমলে কিংবা তার আগের বিএনপি আমলে যেসব অনাচার হয়েছে, তা যেন আর না হয়—এমন প্রতিজ্ঞা নিয়েই তো নতুন সরকার এসেছে, শিক্ষার্থীদেরও তো সেই অঙ্গীকারেই যুক্ত থাকার কথা, কিন্তু এই জায়গাটির খুব কি পরিবর্তন হয়েছে? হলে কোন দিকে সে পরিবর্তন, সেটা কি সাধারণ জনতা বুঝতে পারছে? ‘ছাত্র-জনতা’র নাম নিয়ে রাজনীতি করা হলে তা কি সাধারণ ছাত্র বা সাধারণ জনগণ সে রাজনীতির সঙ্গে থাকবে? এনসিপির জনসভায় লোকসমাগম দেখেই তো বোঝা যায়, জনগণ কী চায়।
বিএনপি কেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার ব্যাপারে এ রকম মরিয়া হয়ে উঠল? অনেকেই বলছেন, যেভাবে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের দুষ্ট ছেলেরা দেশজুড়ে চাঁদাবাজি, মাস্তানি শুরু করেছে, তাতে জুনে নির্বাচন হলে নির্বাচনের আগেই তাদের জনপ্রিয়তা ভীষণভাবে কমে যেতে পারে। ফলে, আওয়ামী লীগবিহীন ফাঁকা মাঠেও নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া সহজ না-ও হতে পারে। কেউ কেউ মশকরা করে বলছেন, বেআইনিভাবে চাঁদাবাজি, মাস্তানি করার চেয়ে নির্বাচিত হয়ে সেই একই কাজ করা সহজ বলেই বিএনপি ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইছে। সবকিছু নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা এটি—এমনটাও মনে করছেন কেউ কেউ।
আরও একটি শঙ্কা তাদের মনে কাজ করতে পারে। দেশের আগস্ট-পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে এমন কোনো ইতিবাচক ঘটনা ঘটেনি, যার ওপর বিশ্বাস রেখে সাধারণ মানুষ আশাবাদী হবে। ফলে আওয়ামী লীগের প্রতি যে রোষ আর ঘৃণা জন্মেছিল মনে, তা-ও ধীরে ধীরে ফিকে হতে শুরু করবে। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে এ সময়ের তরুণেরা শুধু আওয়ামী লীগের শাসনই দেখেছে। এখন দেখছে অন্তর্বর্তী সরকারের শাসন। বিএনপিও তার রূপ দেখিয়ে ফেলেছে। জামায়াত ক্ষমতায় না গিয়েও যেভাবে ক্ষমতার সুবিধা পাচ্ছে, সেটাও দেখা হয়ে গেছে। তাতে সাধারণ জনগণ যদি মনে করে, ‘সব শিয়ালের এক রা’—তাহলে কি তাদের খুব একটা দোষ দেওয়া যাবে?
যে তরুণেরা জীবন বাজি রেখে জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে নেমেছিল, তারা কি তখন ভাবতে পেরেছিল, নানা দিক থেকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর আঘাত আসবে? তারা কি ভাবতে পেরেছিল, একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা নানাভাবে এই সরকারের সমর্থন পাবে? বরাবরই আমি বলে এসেছি, তরুণেরাই দেখাতে পারে দিশা। প্রবীণের প্রজ্ঞা আর নবীনের প্রাণোচ্ছল গতিই পাল্টে দিতে পারে দেশের ভবিষ্যৎ। কিন্তু বারবার এই জায়গাতেই আমাদের পিছিয়ে পড়তে হয়েছে। ব্যক্তিস্বার্থের কারণে সমষ্টিকে অবহেলা করা হয়েছে। সুশাসনের জায়গায় বারবার দুঃশাসনের কবলে পড়তে হয়েছে। এবার এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সে সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হলো কি না, সেটাই দেখার বিষয়।
ডিসেম্বর আর জুন নিয়ে চলা এই বচসায় দেশের ছাত্র-জনতার কোন লাভ হবে? ছাত্র-জনতা মানে তো ক্ষমতাসীন বা ক্ষমতার আশপাশে থাকা কতিপয় মানুষ নয়, গোটা দেশের হৃৎস্পন্দন যে ছাত্র-জনতার হৃদয়ে, তার নাগাল পাওয়া কি এত সহজ?
যাঁরা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাইছেন, তাঁরা ক্ষমতায় এলে দেশের নাগরিকদের জন্য কী করবেন? যে প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়েছে, সেগুলো কীভাবে তাঁরা গড়ে তুলবেন? তাঁরাও কি ‘আওয়ামী দোসর’ ট্যাগ দিয়ে সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদায় করবেন? শুধু দলবাজদের নিয়ে গড়ে তুলবেন প্রতিষ্ঠান? দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হওয়া ঠিকুজি হাজির না করা পর্যন্ত কি নিয়োগ হবে না? দক্ষতা না দলবাজির ভিত্তিতে প্রশাসন গড়বেন তাঁরা? দেশের অর্থনৈতিক প্রশ্নগুলোকে কীভাবে সামলাবেন? আরও একটা ব্যাপার, জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান কী, সেটাও তো তাঁদের পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার করে বলতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার তাঁরা কীভাবে রক্ষা করবেন। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নামে থাকা কাপাসিয়ার কলেজটি থেকে তাঁর নাম উধাও করে দেওয়া রাজনীতির ব্যাপারে তাঁরা কী বলবেন? মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী স্থাপনাগুলো ভাঙচুরের ব্যাপারে তাঁদের মনোভাব কী, সেটাও তো স্পষ্ট করতে হবে তাঁদের। হ্যাঁ, যে অবহেলায় প্রাণপাত করে কৃষিজীবী মানুষ, তাদের ভাগ্য উন্নয়নে কী ভাবনা থাকবে তাঁদের? কেবল নির্বাচন চাইলেই হবে, কেন তাঁদের দলকে নির্বাচিত করতে হবে, সে বিষয়টি জনগণের কাছে পরিষ্কারভাবে বলতে হবে না?
যাঁরা জুন পর্যন্ত রবারের মতো টেনে নিয়ে যেতে চাইছেন নির্বাচনকে, তাঁরা বলুন, ডিসেম্বরের মধ্যে কী কী সংস্কার করতে পারবেন। আর জুন পর্যন্ত নির্বাচন টেনে নিয়ে গেলে এই সময়ের মধ্যে আরও বেশি কোন কোন সংস্কারের কথা আপনারা ভাবছেন? ছাত্র-জনতা যদি প্রশ্ন করে, এ পর্যন্ত কমিটি গড়ে তোলা আর কমিটির রিপোর্ট গ্রহণ করা ছাড়া সংস্কারের দৃশ্যমান কোনো নজির নেই কেন, তাহলে কী জবাব দেবে সরকার?
এবার সারা বিশ্ব তাকিয়ে থাকবে নির্বাচনের দিকে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। ছাত্র-জনতা বোঝার চেষ্টা করছে, কোনো শক্তির প্রতি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষপাতিত্ব আছে কি না। বোঝার চেষ্টা করছে, মব সন্ত্রাসের সময় সরকার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কেন নিশ্চুপ থেকেছে? ক্ষমতায় আসার এতগুলো মাস পরে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে ছাত্র-জনতা নতুন করে ভাবতে শুরু করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
দেশের মানুষ শান্তি চায়। ক্ষমতায় বঙ্গবন্ধু-কন্যা আছেন, নাকি নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস আছেন, নাকি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান-জায়া খালেদা জিয়া আছেন, তা নিয়ে ছাত্র-জনতা খুব বেশি আগ্রহী আর হবে না। রাষ্ট্র সংস্কারের পর দেশটা স্বৈরাচারী শাসন থেকে বেরিয়ে আসতে পারল কি না, সেটাই দেখবে।
ভুক্তভোগীদের কাছে প্রশ্ন করুন, সরকারি যে অফিসগুলোয় ‘মাল’ ছাড়া ফাইল নড়ত না, সেসব জায়গায় অবস্থার কোনো উন্নতি হয়েছে কি? যে উত্তর পাবেন, তাতে হতাশায় মন খারাপ হবে। ঠিকাদারি ব্যবসা কিংবা নিয়োগ-বাণিজ্য কি থেমেছে? সবকিছু কি মেধার মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে? কৃষক কি আগের চেয়ে ভালো আছে? স্টক এক্সচেঞ্জের এই হাল হলো কেন? করিডর, বন্দরবিষয়ক প্রশ্নগুলো কেন উঠছে, সেগুলোও তো সন্দেহের সৃষ্টি করে?
জনগণের জন্য যদি দেশ হয়ে থাকে, তবে জনগণের হাতেই তা ফেরত আসবে—এমন স্বপ্নে বিশ্বাস রাখতে মন চায়। কিন্তু কতটা ভরসা রাখা যায়, তা নিয়ে সংশয় কাটে না।
শিল্পীর নিজস্ব রাজনৈতিক পছন্দ থাকতে পারে, কিন্তু তিনি দলবাজ হলেই বিপদ। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিল্পী প্রতিবাদ করতে পারেন। কিন্তু সেটা সুপ্রযুক্ত হচ্ছে কি না, সেটাও তাঁকে ভেবে দেখতে হবে।
১৩ ঘণ্টা আগেজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক আধার। ৭০০ একর বেষ্টিত এই প্রতিষ্ঠানে প্রাণ-প্রকৃতির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যে প্রগাঢ় বন্ধন, তা উচ্চশিক্ষার প্রকৃত পরিবেশ নিশ্চিত করে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি লেকের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সুইজারল্যান্ড নামে পরিচিত...
২ দিন আগেএকসময় যাকে কেবল বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ভাবা হতো, সেই ফেসবুক এখন আমাদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন হয়ে উঠেছে। বিশেষত, সংবাদ ও তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে ফেসবুকের ভূমিকা দিন দিন শুধু শক্তিশালীই হচ্ছে না, বরং প্রশ্ন উঠছে, মূলধারার গণমাধ্যম কি ক্রমেই...
২ দিন আগেরাজনীতি যদি জনগণের জন্য হয়, তাহলে সেই সাধারণ জনগণকে প্রতিদিন ভোগান্তির ভেতর যারা ফেলে, তারা কি আদৌ রাজনৈতিক দল? নাকি মুখে মুখে জনগণের কথা বলা সুবিধাবাদী দল? এই প্রশ্নটি রইল অতি ডান, মধ্যপন্থী ও বাম—সব দলের প্রতি। অন্য দেশেও মানুষ আন্দোলন করে, বিশেষ করে যদি ইউরোপের কথা বলি, সেখানে রাজপথের মাঝে খোলা
৩ দিন আগে