Ajker Patrika

আদিবাসী, উপজাতি না ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী— নাম নিয়ে বিতর্কে চাপা পড়ছে অধিকার

হুসাইন আহমদ
Thumbnail image
রাঙামাটিতে আদিবাসী ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘আদিবাসী’ শব্দটি নিয়ে বাংলাদেশে এখন ব্যাপক তর্ক-বিতর্ক চলছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পেছনের প্রচ্ছদ থেকে আদিবাসী শব্দ সংবলিত গ্রাফিতি সরানো নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর জের ধরে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন কমিটির একজন সদস্য এরই মধ্যে পদত্যাগও করেছেন। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠী আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে সোচ্চার। পাহাড় ও সমতলের এসব বিশেষ জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের পরিচয় দিতে ‘ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার মানুষ’, ‘উপজাতি’, ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ এবং ‘আদিবাসী’ও ব্যবহার করা হতো।

তবে বাংলাদেশের সংবিধানে ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি নেই। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তিতেও পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেখানেও আদিবাসীর কোনো উল্লেখ নেই। উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা নৃ-গোষ্ঠীকে গণমাধ্যমে ‘আদিবাসী’ হিসেবে যাতে উপস্থাপন করা না হয়, সেবিষয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়।

‘আদিবাসী’ স্বীকৃতির পক্ষে যারা সোচ্চার তাঁরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রকে সামনে তুলে ধরেন। ওই ঘোষণাপত্রের নাম ‘United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples (ইউনাউটেড ন্যাশনস ডিক্লারেশন অন দ্য রাইটস অব ইনডিজেনাস পিপল)। ২০০৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬১তম অধিবেশনে গৃহিত এই ঘোষণাপত্রে বিশ্বব্যাপী ‘ইনডিজেনাস পিপলের’ অস্তিত্ব, আত্মনিয়ন্ত্রণ, কল্যাণ ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা আছে। বিশ্বের ১৪৫টি দেশ এই ঘোষণাপত্রের পক্ষে অবস্থান নিলেও গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র বিপক্ষে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশ এই ঘোষণাপত্রে ভোটদানে বিরত থাকে।

ইনডিজেনাস পিপল কারা?

‘ইনডিজেনাস পিপল’ শব্দটিকে বাংলায় আদিবাসী বলা হচ্ছে। কিন্তু জাতিসংঘ এখনও ‘ইনডিজেনাস পিপল’ আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞা নির্ধারণ করেনি। ইনডিজেনাস ইস্যু বিষয়ক জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরাম বলছে, সংজ্ঞায়িত না করে ইনডিজেনাস পিপলকে শনাক্ত করাই সর্বোত্তম ফলদায়ক পদ্ধতি। মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদে বিধৃত মৌলিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শনাক্তকরণের সুপারিশ রয়েছে।

এতে বলা হয়, জেনেরিক শব্দ হিসেবে ‘ইনডিজেনাস’ বহু বছর ধরে প্রচলিত আছে। কিছু দেশে ইনডিজেনাস পিপলের বিকল্প হিসেবে ‘ফার্স্ট পিপলস/ন্যাশনস’, ‘অ্যাবোরিজিনালস’, ‘এথনিক গ্রুপ’, ‘আদিবাসী’ ও ‘জানাজাতি’ ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে পেশাগত ও ভৌগোলিক শব্দ যেমন নোম্যাডস, পিজ্যান্টস, হিল পিপল ইত্যাদি শব্দও প্রচলিত আছে। বাস্তব প্রয়োগের উদ্দেশ্যে এসবই ‘ইনডিজেনাস পিপল’ এর পরিবর্তে ব্যবহার করা যায়।

‘আদিবাসী’ শব্দটি দীর্ঘদিন ধরে একটি সাধারণ শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে, কিছু দেশে ‘ট্রাইব’ বা ‘উপজাতি’, ‘ফার্স্ট পিপলস/ন্যাশনস’ বা ‘প্রথম জাতি’, ‘অ্যাবোরিজিনালস’ বা আদিবাসিন্দা, ‘জাতিগোষ্ঠী’, আদিবাসী ও ‘জনজাতি’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহারে বেশি ঝোঁক দেখা যায়। ‘হান্টার-গ্যাদারার্স’ বা শিকারি-সংগ্রাহক, ‘নোম্যাডস’ বা যাযাবর, ‘পিজ্যান্টস’ বা কৃষক, ‘হিল পিপল’ বা পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ইত্যাদি পেশাগত ও ভৌগোলিক শব্দও আদিবাসী জনগণের সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রে, ‘ইনডিজেনাস’ শব্দটিকে নেতিবাচক অর্থে গ্রহণ করা হয় এবং কেউ কেউ নিজেদের পরিচয় প্রকাশে বা সংজ্ঞায়িত করতে অনিচ্ছুক। অন্যদের উচিত এই পছন্দের প্রতি সম্মান দেখানো, পাশাপাশি আদিবাসীদের প্রতি বৈষম্য নিরসনে কাজ করা।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে ৭০টি দেশে ৩৭ কোটিরও বেশি ইনডিজেনাস পিপল রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাঁদের আছে স্বকীয় ঐতিহ্য এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য। এসব মানুষেরা সেসব অঞ্চলে বসবাসরত সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা। তাঁরা এমন দেশ বা ভৌগোলিক অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের বংশধর, যেখানে ভিন্ন সংস্কৃতি বা নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা পরে উপস্থিত হয়েছেন। আর্কটিক থেকে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত এই মানুষদের বিচরণ ছিল। কিন্তু নবাগত মানুষেরা যুদ্ধ, দখল, বসতি স্থাপন বা অন্যান্য উপায়ে সেসব অঞ্চলে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে।

ইনডিজেনাস পিপলের মধ্যে আমেরিকার জনগোষ্ঠী (যুক্তরাষ্ট্রের লাকোটা, গুয়াতেমালার মায়া বা বলিভিয়ার আইমারা) যেমন আছে, তেমনি আছে সার্কমপোলার অঞ্চলের ইনুইট ও আলেউটিয়ানরা, উত্তর ইউরোপের সামি ভাষাভাষী, অস্ট্রেলিয়ান অ্যাবরিজিনাল ও টরেস স্ট্রেইট দ্বীপবাসী এবং নিউজিল্যান্ডের মাওরি। এসব জনগোষ্ঠী জাতীয় জনসংখ্যার অন্যান্য অংশ থেকে স্পষ্টত আলাদা বৈশিষ্ট্যের।

ইনডিজেনাস পিপল শনাক্ত হবে যেভাবে

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশনে (নং ১৬৯) ‘ইনডিজেনাস পিপল’ সম্পর্কে একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে। স্বাধীন দেশসমূহে আদিবাসী ও উপজাতীয় জনগণের অধিকার সম্পর্কিত ধারায় বলা হয়েছে:

১. যারা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন দেশের জাতীয় সম্প্রদায়ের অন্যান্য অংশ থেকে আলাদা এবং যাদের মর্যাদা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে তাদের নিজস্ব রীতিনীতি বা ঐতিহ্য অথবা বিশেষ আইন বা বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তাদের ‘উপজাতীয় জনগণ’ হিসেবে ধরা যাবে।

২. স্বাধীন দেশের জনগণের যে অংশকে ‘ইনডিজেনাস পিপল’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাঁদের পূর্বপূরুষরা সেই দেশ বা ভূখণ্ড দখল বা উপনিবেশ স্থাপন বা রাষ্ট্র সীমানা প্রতিষ্ঠার আগে থেকে সেখানে বসবাস করত এবং আইনি অবস্থা নির্বিশেষে তাঁরা নিজেদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধরে রেখেছে।

জাতিসংঘের আদিবাসী ইস্যু বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের মতে, ‘ইনডিজেনাস পিপলের’ ধারণা নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে—

* আদিবাসী মানুষ হিসেবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আত্মপরিচয় এবং সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা

* উপনিবেশপূর্ব বা উপনিবেশ স্থাপনের পূর্ববর্তী সমাজের সঙ্গে ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা

* সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ড ও প্রাকৃতিক সম্পদের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক

* স্বকীয় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা

* স্বতন্ত্র ভাষা, সংস্কৃতি ও বিশ্বাস

* সমাজের অপ্রধান জনগোষ্ঠীর অংশ

* স্বতন্ত্র জনগোষ্ঠী ও সম্প্রদায় হিসেবে পূর্বপুরুষের পরিবেশ ও পদ্ধতি বজায় রাখা ও পুনরুৎপাদনের দৃঢ় সংকল্প

ইনডিজেনাস পিপলের অধিকার কী

সাংস্কৃতিক ভিন্নতা সত্ত্বেও নানা অঞ্চলের ইনডিজেনাসরা একই ধরনের অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার সমস্যার সম্মুখীন হন। পরিচয়, জীবনধারা এবং ঐতিহ্যবাহী ভূমি, ভূখণ্ড ও প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকার স্বীকৃতির জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইনডিজেনাস পিপল বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের ৪৬টি অনুচ্ছেদে এই জনগোষ্ঠীর স্বীকৃত অধিকারগুলোর কথা তুলে ধরা হয়েছে। এসবের অন্যতম হলো—

১. আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার

২. ভূমি ও ভূখণ্ডের উপর অধিকার

৩. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি ও ভূখণ্ডের উপর সামরিক কার্যক্রম বন্ধের অধিকার

৪. মানবিক ও বংশগত সম্পদসহ সাংস্কৃতিক অভিপ্রকাশের উপর নিয়ন্ত্রণের অধিকার

৫. আদিবাসীদের ভূমি ও ভূখণ্ডের উপর থেকে তাদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ প্রক্রিয়া থেকে রেহাই পাওয়ার অধিকার

৬. সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রথা অনুশীলন ও পুনরুজ্জীবিতকরণের অধিকার

৭. মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার

৮. নিজস্ব ভাষায় নিজস্ব সংবাদ মাধ্যম প্রতিষ্ঠার অধিকার

৯. উন্নয়নের অধিকার প্রয়োগ করার জন্য অগ্রাধিকার তালিকা ও কর্মকৌশল নির্ধারণ ও গ্রহণের অধিকার

১০. নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী ঔষধি ও স্বাস্থ্যসেবা সংরক্ষণের অধিকার

১১. স্বাধীন ও অবহিতকরণ সাপেক্ষে সম্মতি গ্রহণ ব্যতীত ছিনিয়ে নেয়া ভূমি, ভূখণ্ড এবং সম্পদ পুনরুদ্ধার ও ফেরত পাওয়ার অধিকার

১২. নিজেদের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করার অধিকার।

আদিবাসী শব্দ নিয়ে সরকারের আপত্তি কেন

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি ২০১১ সালে ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের আহবান জানান, যাতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর’ জনগণকে ‘আদিবাসী’ বলা না হয়। তিনি বিদেশি কূটনীতিকদের পরিষ্কার জানিয়ে দেন, বাঙালিরাই এখানকার আদিবাসী।

১. সরকারের যুক্তি হচ্ছে, এখানকার মানুষের ইতিহাস ও সংস্কৃতি চার হাজার বছরের পুরনো, প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা সেটিই প্রমাণ করে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবারত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষরা ১৬শতকে মিয়ানমার ও কম্বোডিয়া থেকে আসা শুরু করে। তাই, তাঁরা আদিবাসী নয়।

২. সরকারের আরেকটি যুক্তি হচ্ছে, আদিবাসী হতে হলে ‘কলোনি কিংবা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কলোনি’ হতে হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে সে ধরনের কিছুই হয়নি। অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় যাদের আদিবাসী বলা হয়, তাদের ক্ষেত্রে যে ধরনের পরিস্থিতি হয়েছিল বাংলাদেশে সে রকম কিছু হয়নি।

৩. তাছাড়া ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত শান্তি চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘উপজাতি অধ্যুষ্যিত অঞ্চল’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সরকার বলছে, সে চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের নেতারা ‘উপজাতি’ শব্দটিই মেনে নিয়েছেন।

৪. জাতিসংঘের কোনো দলিলে ‘আদিবাসীর’ সর্বসম্মত সংজ্ঞা নেই। ২০০৭ সালে গৃহীত ঘোষণাপত্রে অধিকার তুলে ধরা হলেও ‘আদিবাসীদের’ কোনো সংজ্ঞা দেয়া হয়নি।

আদিবাসী দাবিদারদের পক্ষে যুক্তি কী

বাংলাদেশ সরকারের ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক গেজেটে দেখা যায়, বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং দেশের অন্যান্য এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংখ্যা ৫০টি। তাদের সবাই নিজেদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে দাবি করে। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিরা দেওয়ানের মতে, সমাজের মূলধারা থেকে যাদের ভাষা ভিন্ন এবং সংস্কৃতি ভিন্ন, তাঁরাই আদিবাসী। ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা উপজাতি’ শব্দগুলো বৈষম্য ও বঞ্চনার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংগঠনগুলোর দাবি, ১৯৯০ এর দশকের শুরু থেকে আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করা হতো। তখন আদি বাসিন্দা হিসেবেই এটি ব্যবহার হতো। কিন্তু সে সময় বিষয়টি নিয়ে সরকারগুলো এতোটা প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।

যখন আদিবাসীদের অধিকারের স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘে তোড়জোড় শুরু হয় তখন সরকারও নড়েচড়ে বসে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০০৭ সালে যখন আদিবাসীদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়, তখন ‘আদিবাসী’ প্রশ্নে সরকার জোরালো অবস্থান নেয়।

জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র অনুযায়ী, ইনডিজেনাস পিপলের কোনো অভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক সংজ্ঞা নেই। আদিবাসী এর একটি বিকল্প শব্দ। কিন্তু পাশাপাশি ‘উপজাতি’, ‘ফার্স্ট পিপলস/ন্যাশনস’, ‘অ্যাবোরিজিনালস’, ‘জাতিগোষ্ঠী’ ও ‘জনজাতি’ ইত্যাদি শব্দেরও স্বীকৃতি আছে। সুতরাং যে নামেই পরিচিতি থাকুক, ‘ইনডিজেনাস পিপল’ হিসেবে সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের এসব জনগোষ্ঠী জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রে স্বীকৃত অধিকারগুলোর দাবিদার। তাই, আদিবাসী, উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী— নাম নিয়ে বিতর্কে সময় নষ্ট না করে পাহাড় ও সমতলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জাতিস্বত্ত্বা মানুষদের অধিকারের প্রশ্নে সোচ্চার হওয়া উচিত।

লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত