Ajker Patrika

আদিবাসী, উপজাতি না ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী— নাম নিয়ে বিতর্কে চাপা পড়ছে অধিকার

রাঙামাটিতে আদিবাসী ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাঙামাটিতে আদিবাসী ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘আদিবাসী’ শব্দটি নিয়ে বাংলাদেশে এখন ব্যাপক তর্ক-বিতর্ক চলছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পেছনের প্রচ্ছদ থেকে আদিবাসী শব্দ সংবলিত গ্রাফিতি সরানো নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর জের ধরে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন কমিটির একজন সদস্য এরই মধ্যে পদত্যাগও করেছেন। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠী আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে সোচ্চার। পাহাড় ও সমতলের এসব বিশেষ জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের পরিচয় দিতে ‘ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার মানুষ’, ‘উপজাতি’, ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ এবং ‘আদিবাসী’ও ব্যবহার করা হতো।

তবে বাংলাদেশের সংবিধানে ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি নেই। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তিতেও পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেখানেও আদিবাসীর কোনো উল্লেখ নেই। উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা নৃ-গোষ্ঠীকে গণমাধ্যমে ‘আদিবাসী’ হিসেবে যাতে উপস্থাপন করা না হয়, সেবিষয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়।

‘আদিবাসী’ স্বীকৃতির পক্ষে যারা সোচ্চার তাঁরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রকে সামনে তুলে ধরেন। ওই ঘোষণাপত্রের নাম ‘United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples (ইউনাউটেড ন্যাশনস ডিক্লারেশন অন দ্য রাইটস অব ইনডিজেনাস পিপল)। ২০০৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬১তম অধিবেশনে গৃহিত এই ঘোষণাপত্রে বিশ্বব্যাপী ‘ইনডিজেনাস পিপলের’ অস্তিত্ব, আত্মনিয়ন্ত্রণ, কল্যাণ ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা আছে। বিশ্বের ১৪৫টি দেশ এই ঘোষণাপত্রের পক্ষে অবস্থান নিলেও গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র বিপক্ষে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশ এই ঘোষণাপত্রে ভোটদানে বিরত থাকে।

ইনডিজেনাস পিপল কারা?

‘ইনডিজেনাস পিপল’ শব্দটিকে বাংলায় আদিবাসী বলা হচ্ছে। কিন্তু জাতিসংঘ এখনও ‘ইনডিজেনাস পিপল’ আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞা নির্ধারণ করেনি। ইনডিজেনাস ইস্যু বিষয়ক জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরাম বলছে, সংজ্ঞায়িত না করে ইনডিজেনাস পিপলকে শনাক্ত করাই সর্বোত্তম ফলদায়ক পদ্ধতি। মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদে বিধৃত মৌলিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শনাক্তকরণের সুপারিশ রয়েছে।

এতে বলা হয়, জেনেরিক শব্দ হিসেবে ‘ইনডিজেনাস’ বহু বছর ধরে প্রচলিত আছে। কিছু দেশে ইনডিজেনাস পিপলের বিকল্প হিসেবে ‘ফার্স্ট পিপলস/ন্যাশনস’, ‘অ্যাবোরিজিনালস’, ‘এথনিক গ্রুপ’, ‘আদিবাসী’ ও ‘জানাজাতি’ ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে পেশাগত ও ভৌগোলিক শব্দ যেমন নোম্যাডস, পিজ্যান্টস, হিল পিপল ইত্যাদি শব্দও প্রচলিত আছে। বাস্তব প্রয়োগের উদ্দেশ্যে এসবই ‘ইনডিজেনাস পিপল’ এর পরিবর্তে ব্যবহার করা যায়।

‘আদিবাসী’ শব্দটি দীর্ঘদিন ধরে একটি সাধারণ শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে, কিছু দেশে ‘ট্রাইব’ বা ‘উপজাতি’, ‘ফার্স্ট পিপলস/ন্যাশনস’ বা ‘প্রথম জাতি’, ‘অ্যাবোরিজিনালস’ বা আদিবাসিন্দা, ‘জাতিগোষ্ঠী’, আদিবাসী ও ‘জনজাতি’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহারে বেশি ঝোঁক দেখা যায়। ‘হান্টার-গ্যাদারার্স’ বা শিকারি-সংগ্রাহক, ‘নোম্যাডস’ বা যাযাবর, ‘পিজ্যান্টস’ বা কৃষক, ‘হিল পিপল’ বা পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ইত্যাদি পেশাগত ও ভৌগোলিক শব্দও আদিবাসী জনগণের সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রে, ‘ইনডিজেনাস’ শব্দটিকে নেতিবাচক অর্থে গ্রহণ করা হয় এবং কেউ কেউ নিজেদের পরিচয় প্রকাশে বা সংজ্ঞায়িত করতে অনিচ্ছুক। অন্যদের উচিত এই পছন্দের প্রতি সম্মান দেখানো, পাশাপাশি আদিবাসীদের প্রতি বৈষম্য নিরসনে কাজ করা।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে ৭০টি দেশে ৩৭ কোটিরও বেশি ইনডিজেনাস পিপল রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাঁদের আছে স্বকীয় ঐতিহ্য এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য। এসব মানুষেরা সেসব অঞ্চলে বসবাসরত সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা। তাঁরা এমন দেশ বা ভৌগোলিক অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের বংশধর, যেখানে ভিন্ন সংস্কৃতি বা নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা পরে উপস্থিত হয়েছেন। আর্কটিক থেকে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত এই মানুষদের বিচরণ ছিল। কিন্তু নবাগত মানুষেরা যুদ্ধ, দখল, বসতি স্থাপন বা অন্যান্য উপায়ে সেসব অঞ্চলে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে।

ইনডিজেনাস পিপলের মধ্যে আমেরিকার জনগোষ্ঠী (যুক্তরাষ্ট্রের লাকোটা, গুয়াতেমালার মায়া বা বলিভিয়ার আইমারা) যেমন আছে, তেমনি আছে সার্কমপোলার অঞ্চলের ইনুইট ও আলেউটিয়ানরা, উত্তর ইউরোপের সামি ভাষাভাষী, অস্ট্রেলিয়ান অ্যাবরিজিনাল ও টরেস স্ট্রেইট দ্বীপবাসী এবং নিউজিল্যান্ডের মাওরি। এসব জনগোষ্ঠী জাতীয় জনসংখ্যার অন্যান্য অংশ থেকে স্পষ্টত আলাদা বৈশিষ্ট্যের।

ইনডিজেনাস পিপল শনাক্ত হবে যেভাবে

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশনে (নং ১৬৯) ‘ইনডিজেনাস পিপল’ সম্পর্কে একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে। স্বাধীন দেশসমূহে আদিবাসী ও উপজাতীয় জনগণের অধিকার সম্পর্কিত ধারায় বলা হয়েছে:

১. যারা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন দেশের জাতীয় সম্প্রদায়ের অন্যান্য অংশ থেকে আলাদা এবং যাদের মর্যাদা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে তাদের নিজস্ব রীতিনীতি বা ঐতিহ্য অথবা বিশেষ আইন বা বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তাদের ‘উপজাতীয় জনগণ’ হিসেবে ধরা যাবে।

২. স্বাধীন দেশের জনগণের যে অংশকে ‘ইনডিজেনাস পিপল’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাঁদের পূর্বপূরুষরা সেই দেশ বা ভূখণ্ড দখল বা উপনিবেশ স্থাপন বা রাষ্ট্র সীমানা প্রতিষ্ঠার আগে থেকে সেখানে বসবাস করত এবং আইনি অবস্থা নির্বিশেষে তাঁরা নিজেদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধরে রেখেছে।

জাতিসংঘের আদিবাসী ইস্যু বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের মতে, ‘ইনডিজেনাস পিপলের’ ধারণা নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে—

* আদিবাসী মানুষ হিসেবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আত্মপরিচয় এবং সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা

* উপনিবেশপূর্ব বা উপনিবেশ স্থাপনের পূর্ববর্তী সমাজের সঙ্গে ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা

* সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ড ও প্রাকৃতিক সম্পদের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক

* স্বকীয় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা

* স্বতন্ত্র ভাষা, সংস্কৃতি ও বিশ্বাস

* সমাজের অপ্রধান জনগোষ্ঠীর অংশ

* স্বতন্ত্র জনগোষ্ঠী ও সম্প্রদায় হিসেবে পূর্বপুরুষের পরিবেশ ও পদ্ধতি বজায় রাখা ও পুনরুৎপাদনের দৃঢ় সংকল্প

ইনডিজেনাস পিপলের অধিকার কী

সাংস্কৃতিক ভিন্নতা সত্ত্বেও নানা অঞ্চলের ইনডিজেনাসরা একই ধরনের অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার সমস্যার সম্মুখীন হন। পরিচয়, জীবনধারা এবং ঐতিহ্যবাহী ভূমি, ভূখণ্ড ও প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকার স্বীকৃতির জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইনডিজেনাস পিপল বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের ৪৬টি অনুচ্ছেদে এই জনগোষ্ঠীর স্বীকৃত অধিকারগুলোর কথা তুলে ধরা হয়েছে। এসবের অন্যতম হলো—

১. আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার

২. ভূমি ও ভূখণ্ডের উপর অধিকার

৩. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি ও ভূখণ্ডের উপর সামরিক কার্যক্রম বন্ধের অধিকার

৪. মানবিক ও বংশগত সম্পদসহ সাংস্কৃতিক অভিপ্রকাশের উপর নিয়ন্ত্রণের অধিকার

৫. আদিবাসীদের ভূমি ও ভূখণ্ডের উপর থেকে তাদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ প্রক্রিয়া থেকে রেহাই পাওয়ার অধিকার

৬. সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রথা অনুশীলন ও পুনরুজ্জীবিতকরণের অধিকার

৭. মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার

৮. নিজস্ব ভাষায় নিজস্ব সংবাদ মাধ্যম প্রতিষ্ঠার অধিকার

৯. উন্নয়নের অধিকার প্রয়োগ করার জন্য অগ্রাধিকার তালিকা ও কর্মকৌশল নির্ধারণ ও গ্রহণের অধিকার

১০. নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী ঔষধি ও স্বাস্থ্যসেবা সংরক্ষণের অধিকার

১১. স্বাধীন ও অবহিতকরণ সাপেক্ষে সম্মতি গ্রহণ ব্যতীত ছিনিয়ে নেয়া ভূমি, ভূখণ্ড এবং সম্পদ পুনরুদ্ধার ও ফেরত পাওয়ার অধিকার

১২. নিজেদের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করার অধিকার।

আদিবাসী শব্দ নিয়ে সরকারের আপত্তি কেন

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি ২০১১ সালে ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের আহবান জানান, যাতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর’ জনগণকে ‘আদিবাসী’ বলা না হয়। তিনি বিদেশি কূটনীতিকদের পরিষ্কার জানিয়ে দেন, বাঙালিরাই এখানকার আদিবাসী।

১. সরকারের যুক্তি হচ্ছে, এখানকার মানুষের ইতিহাস ও সংস্কৃতি চার হাজার বছরের পুরনো, প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা সেটিই প্রমাণ করে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবারত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষরা ১৬শতকে মিয়ানমার ও কম্বোডিয়া থেকে আসা শুরু করে। তাই, তাঁরা আদিবাসী নয়।

২. সরকারের আরেকটি যুক্তি হচ্ছে, আদিবাসী হতে হলে ‘কলোনি কিংবা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কলোনি’ হতে হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে সে ধরনের কিছুই হয়নি। অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় যাদের আদিবাসী বলা হয়, তাদের ক্ষেত্রে যে ধরনের পরিস্থিতি হয়েছিল বাংলাদেশে সে রকম কিছু হয়নি।

৩. তাছাড়া ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত শান্তি চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘উপজাতি অধ্যুষ্যিত অঞ্চল’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সরকার বলছে, সে চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের নেতারা ‘উপজাতি’ শব্দটিই মেনে নিয়েছেন।

৪. জাতিসংঘের কোনো দলিলে ‘আদিবাসীর’ সর্বসম্মত সংজ্ঞা নেই। ২০০৭ সালে গৃহীত ঘোষণাপত্রে অধিকার তুলে ধরা হলেও ‘আদিবাসীদের’ কোনো সংজ্ঞা দেয়া হয়নি।

আদিবাসী দাবিদারদের পক্ষে যুক্তি কী

বাংলাদেশ সরকারের ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক গেজেটে দেখা যায়, বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং দেশের অন্যান্য এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংখ্যা ৫০টি। তাদের সবাই নিজেদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে দাবি করে। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিরা দেওয়ানের মতে, সমাজের মূলধারা থেকে যাদের ভাষা ভিন্ন এবং সংস্কৃতি ভিন্ন, তাঁরাই আদিবাসী। ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা উপজাতি’ শব্দগুলো বৈষম্য ও বঞ্চনার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংগঠনগুলোর দাবি, ১৯৯০ এর দশকের শুরু থেকে আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করা হতো। তখন আদি বাসিন্দা হিসেবেই এটি ব্যবহার হতো। কিন্তু সে সময় বিষয়টি নিয়ে সরকারগুলো এতোটা প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।

যখন আদিবাসীদের অধিকারের স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘে তোড়জোড় শুরু হয় তখন সরকারও নড়েচড়ে বসে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০০৭ সালে যখন আদিবাসীদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়, তখন ‘আদিবাসী’ প্রশ্নে সরকার জোরালো অবস্থান নেয়।

জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র অনুযায়ী, ইনডিজেনাস পিপলের কোনো অভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক সংজ্ঞা নেই। আদিবাসী এর একটি বিকল্প শব্দ। কিন্তু পাশাপাশি ‘উপজাতি’, ‘ফার্স্ট পিপলস/ন্যাশনস’, ‘অ্যাবোরিজিনালস’, ‘জাতিগোষ্ঠী’ ও ‘জনজাতি’ ইত্যাদি শব্দেরও স্বীকৃতি আছে। সুতরাং যে নামেই পরিচিতি থাকুক, ‘ইনডিজেনাস পিপল’ হিসেবে সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের এসব জনগোষ্ঠী জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রে স্বীকৃত অধিকারগুলোর দাবিদার। তাই, আদিবাসী, উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী— নাম নিয়ে বিতর্কে সময় নষ্ট না করে পাহাড় ও সমতলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জাতিস্বত্ত্বা মানুষদের অধিকারের প্রশ্নে সোচ্চার হওয়া উচিত।

লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিষাক্ত গ্যাস

সম্পাদকীয়
বিষাক্ত গ্যাস

মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার—তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই ভাববেন। এ রকম একটা অবস্থায় দুর্ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে খুব কম মানুষই মাথা ঘামায়। দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়টিতে স্থানীয় পরিবেশ ও পরিস্থিতি যে মোটেও অনুকূল থাকে না, সেটা বোঝা দরকার।

সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেদক শিয়ালবাড়ীর ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক গুদামে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেছেন, এতগুলো দিন পার হওয়ার পরও বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে এখনো অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। রাসায়নিকের ড্রাম থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া মানুষকে অসুস্থ করে দিচ্ছে। অসুস্থদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। প্রায়ই দেখা যায়, একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর দু-এক দিন সংবাদপত্রে রিপোর্ট হয়, তারপর একসময় সেটা ভুলে যায় মানুষ। কিন্তু যে মানুষেরা ভুক্তভোগী, তাদের প্রতিটি দিনই যে কাটছে ভয়ংকর রাসায়নিকের সঙ্গে লড়াই করে, সে খবর কয়জন রাখে?

চিকিৎসকেরা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের কয়েক দিন পরও বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়ার ঘনত্ব বেশি থাকে। পরে ধীরে ধীরে তা কমে যায়। মাটিতে পড়ে থাকা রাসায়নিক দ্রব্যের অবশিষ্টাংশ ভুক্তভোগীর শরীরে ঢোকে। ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। এই কারণে ভবিষ্যতেও তা বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।

বিষাক্ত কণিকা বা গ্যাস মানবদেহে ঢোকে শ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের মাধ্যমে এবং খাদ্যের মাধ্যমে। এই গ্যাস অ্যাজমা, কাশি, গলাজ্বলা বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চোখ আর ত্বকও তাতে আক্রান্ত হতে পারে। তৈরি হতে পারে মাথাব্যথা, বমি ও ক্লান্তির মতো ঘটনা। ভারী ধাতু দীর্ঘ মেয়াদে স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল করে দেয়। তাতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।

শিয়ালবাড়ীর দুর্ঘটনাস্থলের অন্তত এক হাজার গজ পর্যন্ত এলাকায় বাতাসে এখনো পোড়া জিনিস ও গ্যাসের মতো কটু গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাতে মনে হয়, এই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখনো রয়েছে সংকটের মুখে।

আমরা সবাই জানি, স্বাস্থ্য আমাদের মৌলিক অধিকারের একটি। কিন্তু দেশের মানুষ এ কথাও জানে, সেই মৌলিক অধিকার সব সময় সমুন্নত রাখা হয় না। রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে কীভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে, তার পূর্বপ্রস্তুতি কয়টি গুদামে আছে? এসব জায়গায় কি নিয়মিত ইন্সপেকশন হয়? শুধু গুদাম কেন, কারখানাগুলোয় কি সঠিক নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে? শ্রমিকেরা কি নিরাপদে তাঁদের কাজ করে যেতে পারেন?

এসব দুর্ঘটনায় মূলত সমাজের নিচুতলার মানুষেরা বিপদে পড়েন। তাঁদের পাশে যদি দাঁড়ানো না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, শিল্প-ব্যবস্থাপনায় যে ঘাটতি আছে, তা নিরসনের কোনো চিন্তা কারও নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রশ্নবিদ্ধ উপদেষ্টারা ও সরকারের নিরপেক্ষতা

অরুণ কর্মকার
প্রশ্নবিদ্ধ উপদেষ্টারা ও সরকারের নিরপেক্ষতা

না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ এক্সিটের প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। আর এবার তো জানা গেল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গত বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দৃষ্টিতে দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের নামধামের তালিকাই নিয়ে গিয়েছিল। তবে ওই দিন সেই তালিকা তারা প্রধান উপদেষ্টাকে দেয়নি। প্রয়োজন হলে পরে দেবে। এবার শুধু বিষয়টি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং কয়েকজন উপদেষ্টা বিএনপির পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছে।

শুধু উপদেষ্টা নয়, জামায়াত সুনির্দিষ্ট নাম-ঠিকানা নিয়ে গিয়েছিল প্রায় ৪০ জন আমলারও, যাঁরা তাদের দৃষ্টিতে কোনো না কোনো দলের হয়ে, বিশেষত বিএনপির হয়ে কাজ করছেন। আর বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ ব্রিফিংয়ে জামায়াতের নেতারা উল্লেখ করেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন ও পুলিশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ লোকই বিএনপির। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত বলেছে, নির্বাচনের আগে সরকারকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। এ জন্য সচিবালয়, পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে রদবদল আনতে হবে। বিএনপির বিরুদ্ধে জামায়াতের আরও অভিযোগ, বিএনপি রাজনৈতিক চাপে পড়ে গণভোটে রাজি হলেও এখন জটিলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

ওই দিনই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি প্রতিনিধিদলও পৃথকভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, নির্বাচনের আগে বড় রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসন ও পুলিশে নিজেদের মতো ভাগ-বাঁটোয়ারা শুরু করেছে। ডিসি-এসপিদের তালিকা করে সরকারকে দিচ্ছে এবং সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মধ্য থেকেও এ ব্যাপারে তারা সহযোগিতা পাচ্ছে।

এনসিপির আরও বড় অভিযোগ নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে। প্রধান উপদেষ্টাকে তারা বলেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। কোনো কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। শাপলা প্রতীক পাওয়া প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলামের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, যে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন এবং প্রতীকের বিষয়ে এনসিপির সঙ্গে ন্যায়বিচার করে না, তার অধীনে নির্বাচনে গিয়ে ন্যায়বিচার এবং নিরপেক্ষতা বা সঠিক ফলাফল পাওয়ার ব্যাপারে ভরসা করা যায় না। তাই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের যুক্তি হলো, নির্বাচন কমিশনের কারণে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়, সেই দায়ও সরকারের ওপরই পড়বে।

উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রশ্ন আছে বিএনপিরও। জামায়াত ও এনসিপির এক দিন আগে, গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। সেই বৈঠকে তারাও কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি তুলেছে। কারও নাম উল্লেখ না করেই বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছে দলটি। এর আগেও বিএনপির পক্ষ থেকে এমন আহ্বান জানানো হয়েছিল। তখন দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল বলেও খবর বেরিয়েছে। তবে তাঁরা তখনই তাতে রাজি হননি। উপদেষ্টাদের ছাড়াও প্রশাসন নিয়েও অন্য দুই দলের মতোই উদ্বেগ আছে বিএনপিরও। মঙ্গলবারের বৈঠকে তারা এই বলে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যে প্রশাসন, পুলিশ এবং বিচার বিভাগের প্রায় ৫০ ভাগ ফ্যাসিস্টের দোসর।

তিনটি দলের সঙ্গে বৈঠকেই প্রধান উপদেষ্টা সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আমরা ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি; সামনে আরও অনেক উদ্যোগ আপনারা দেখতে পাবেন।’

তা প্রধান উপদেষ্টা যতই নিশ্চয়তা দিন না কেন, যেখানে সব দলের কাছেই উপদেষ্টাদের (সবার নয়) এবং প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্টতা স্পষ্ট, যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে উল্লেখ করে যখন প্রকাশ্যে বারবার অভিযোগ করা হচ্ছে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে নিশ্চিন্তে নিশ্চিত থাকতে পারে! তা ছাড়া, মাঝেমধ্যেই তো দলগুলোর পরস্পরের প্রতি বৈরী বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। যেমন কিছুদিন আগে এনসিপির আহ্বায়ক তাঁর ফেসবুক পোস্টে বললেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (পিআর) নিয়ে জামায়াতের আন্দোলন রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। কিংবা জামায়াত জুলাই অভ্যুত্থানের আগে-পরে কখনোই সংস্কার আলোচনায় যুক্ত হয়নি। তারা কোনো কার্যকর প্রস্তাব দেয়নি। কোনো সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেনি এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতি কোনো অঙ্গীকারও দেখায়নি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বললেন আরও একটু শক্ত কথা—‘জন্মের পরই বাপের সাথে পাল্লা দিতে যেও না।’ সরকার ভাবতে পারে যে এগুলো তো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার বাহাস। এটা নিয়ে তাদের অতটা না ভাবলেও চলবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই বাহাসগুলো তো রাজনৈতিক বাস্তবতা। এগুলো তো রাজনৈতিক অঙ্গনকে অস্থিতিশীল করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশেও প্রভাব ফেলতে পারে।

তারপর উল্লেখ করা যায় মঙ্গলবারের বৈঠকে বিএনপি যে অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, সে সম্পর্কে এনসিপির প্রতিক্রিয়ার কথা। এনসিপি বলল হঠাৎ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শটি দুরভিসন্ধিমূলক। কারণ, অন্তর্বর্তী সরকার গণ-অভ্যুত্থানের সরকার। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি তাদের ম্যান্ডেট। অথচ বিএনপির বক্তব্যটি ছিল—নিরপেক্ষতার নিরিখে এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা নিতে হবে।

এইসব রাজনৈতিক টানাপোড়েন ছাড়াও কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। যেমন জামায়াতের কাছে অমীমাংসিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, ওই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরে গণভোট। এই দাবিতে জামায়াতসহ আটটি দল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এনসিপির কাছে অমীমাংসিত বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন এবং তাদের দাবিকৃত নির্বাচনী প্রতীক শাপলা বরাদ্দ দেওয়া। বিএনপির কাছে সবচেয়ে বড় ইস্যু সময়মতো সুষ্ঠু নির্বাচন। এ ছাড়া এই তিনটি দলের কাছেই (হয়তো আরও অনেক দলের কাছে) সাধারণ ইস্যু হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়া। এর মধ্যে বেশ কিছু বিষয় প্রতিটি দল চায় না। এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সেই ভূমিকা নিরপেক্ষ হিসেবেই প্রতীয়মান হওয়া এক বড় চ্যালেঞ্জই বটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাঠকের লেখা /স্বার্থের সমাজে বন্ধুত্ব

হেনা শিকদার
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ১১
স্বার্থের সমাজে বন্ধুত্ব

সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি। এমন এক পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে যে সম্পর্কটি, মানুষের আত্মার সঙ্গে মিশে থাকে—বন্ধুত্ব।

একসময় বন্ধুত্ব ছিল নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক দারুণ উদাহরণ। সেখানে লেনদেনের কোনো হিসাব ছিল না, ছিল শুধু একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা এবং নির্ভরতা। শৈশবের সেই দিনগুলোর কথা মনে করলে আজও অনেকের মন আর্দ্র হয়ে ওঠে। টিফিনের খাবার ভাগ করে খাওয়া, বন্ধুর দুঃখে নির্দ্বিধায় পাশে দাঁড়ানো, কিংবা সামান্য কারণে অহেতুক ঝগড়া করে আবার মুহূর্তেই সব ভুলে গিয়ে একে অপরের হাত ধরার মধ্যে যে পবিত্রতা ছিল, আজকের যান্ত্রিক সভ্যতায় তা যেন এক দুর্লভ বস্তু।

বর্তমান সমাজব্যবস্থা আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে সবকিছুকে ব্যক্তিগত লাভের নিরিখে বিচার করতে হয়। আমরা এখন বন্ধু বানানোর আগেও অবচেতন মনে বিচার করে নিই—এই সম্পর্কটি আমার জীবনে কতটা মূল্য যোগ করবে? তার সামাজিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, কিংবা তার মাধ্যমে আমার কোনো উপকার হবে কি না—এইসব প্রশ্নই এখন বন্ধুত্বের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, একধরনের ‘শর্তাধীন’ বন্ধুত্বের জন্ম হচ্ছে, যেখানে স্বার্থের লেনদেন শেষ হলেই সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে যায়। এই ধরনের বন্ধুত্ব অনেকটা ব্যবসায়িক চুক্তির মতো, যেখানে একে অপরকে ব্যবহার করে নিজের আখের গোছানোই মূল উদ্দেশ্য।

এই স্বার্থপরতার পেছনে অবশ্য বেশ কিছু সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণও রয়েছে। প্রথমত, আধুনিক জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান চাপ এবং প্রতিযোগিতা মানুষকে এতটাই আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে যে, সে নিজের জগৎ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছে না। দ্বিতীয়ত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তার এক মায়াবী জগতের সৃষ্টি করেছে। এখানে মানুষের বন্ধুর সংখ্যা হাজার হাজার, কিন্তু সত্যিকার অর্থে ভরসা করার মতো বন্ধুর সংখ্যা প্রায় শূন্য। লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ারের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব আসলে একধরনের লোকদেখানো সম্পর্ক, যার গভীরে কোনো প্রাণের ছোঁয়া নেই। এখানে সবাই যেন এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে—কার কত বন্ধু, কে কতটা জনপ্রিয়। এই জাঁকজমকপূর্ণ সংস্কৃতি আমাদের সত্যিকারের আবেগ এবং অনুভূতি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

তবে এই হতাশাজনক চিত্রের মধ্যেও আশার আলো রয়েছে। স্বার্থের এই ঝোড়ো হাওয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়েও কিছু মানুষ এখনো সত্যিকারের বন্ধুত্বের পতাকা উড়িয়ে চলেছেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, বন্ধুত্ব মানে শুধু দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক নয়, বরং এটি একটি আত্মিক টান, যা কোনো স্বার্থের বিনিময়ে বিক্রি হয় না। একজন সত্যিকারের বন্ধু আয়নার মতো, যে কেবল আমাদের ভালো দিকগুলোই তুলে ধরে না, বরং আমাদের ভুলগুলোও দেখিয়ে দেয়। সে আমাদের বিপদের দিনে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় এবং আনন্দের দিনে মন খুলে হাসে।

এই স্বার্থপর সময়ে সত্যিকারের বন্ধু খুঁজে পাওয়া হয়তো কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। বন্ধুত্বের সম্পর্ককে যদি আমরা লাভ-ক্ষতির হিসাব থেকে মুক্ত করতে পারি, তবেই এর আসল সৌন্দর্য উপলব্ধি করা সম্ভব। বন্ধুত্ব কোনো পণ্য নয় যে তাকে ব্যবহার করে ফেলে দিতে হবে। এটি একটি চারা গাছের মতো, যাকে যত্ন, বিশ্বাস এবং সময় দিয়ে বড় করে তুলতে হয়। যখন একজন মানুষ সব ধরনের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আরেকজন মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তখনই জন্ম নেয় এক নির্মল বন্ধুত্ব।

স্বার্থের এই সমাজে বন্ধুত্বের মানে হলো এক নিঃস্বার্থ আশ্রয়। এমন এক সম্পর্ক, যেখানে আপনি কোনো মুখোশ ছাড়াই নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন, যেখানে আপনার দুর্বলতাগুলো নিয়ে কেউ উপহাস করবে না, বরং আপনাকে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। এই বন্ধুত্ব আপনাকে শেখাবে যে পৃথিবীতে এখনো এমন কিছু সম্পর্ক আছে, যা অর্থ বা ক্ষমতার বিনিময়ে কেনা যায় না, যা কেবল হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। তাই এই যান্ত্রিক সভ্যতায় হারিয়ে যাওয়ার আগে আমাদের উচিত জীবনের সেই নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলোকে খুঁজে বের করা এবং পরম মমতায় সেগুলো আগলে রাখা। কারণ, দিন শেষে এই সম্পর্কগুলোই আমাদের বেঁচে থাকার আসল প্রেরণা জোগায়।

শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাঠকের লেখা /বাঘ সংরক্ষণের গুরুত্ব

রিয়াদ হোসেন
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৪৩
বাঘ সংরক্ষণের গুরুত্ব

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।

সাধারণ মানুষের মতো বাঘেরও প্রধান দুটি মৌলিক চাহিদা হলো খাদ্য ও বাসস্থান। বিশেষ করে খাদ্যের জোগান এবং আবাসস্থল নিরাপদ করতে পারলে বাঘ বাঁচিয়ে রাখা কিংবা তাদের প্রজনন বৃদ্ধিতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এ জন্য সুন্দরবনকে বন্য প্রাণীর অবাধ বিচরণের জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে বাঘসহ অন্য প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর মাত্র ১৩টি দেশে এখন বাঘের অস্তিত্ব আছে। বাঘ বাঁচাতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সেসব দেশের সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান রক্ষায় অন্য প্রজাতির প্রাণী থেকে বাঘ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সুন্দরবনে চোরা শিকারি বাঘের প্রধান হুমকি। কিছু অতিলোভী চোরা শিকারি ও বনদস্যুদের জন্য দিন দিন বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। সবশেষ তথ্যমতে, সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ১১৪টি। কয়েক বছর আগে বড় বড় বনদস্যু দলের আত্মসমর্পণের ফলে বাঘনিধন কিছুটা কমে এসেছে। দুই বছর আগেও খাদ্যসংকটে বাঘ লোকালয়ে এলে হত্যা করা হতো। এখন সেটিও অনেকটা বন্ধ হয়েছে। বন সংরক্ষণে বন মন্ত্রণালয়ের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে সুন্দরবনসংলগ্ন স্থানীয় মানুষ আগের থেকে অনেক সচেতন হয়ে উঠেছে। এ জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর জীবিকায় সরকারকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের জীবন-জীবিকার জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়ে আরও বেশি কাজ করতে হবে।

সুন্দরবনকে বাঁচাতে এবং বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে বাঘ সংরক্ষণের বিকল্প নেই। আর এ জন্য বন বিভাগ কিংবা সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে সুন্দরবন বা বাঘ কোনোটাই রক্ষা করা সম্ভব হবে না; যদি আমরা আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে সচেতন না হই। পাশাপাশি বাঘনিধন ও হরিণ শিকার বন্ধের জন্য ২০১২ সালে বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যে আইনের ৩৬ ধারায় বাঘশিকারি বা হত্যাকারী জামিন-অযোগ্য হবেন এবং সর্বোচ্চ সাত বছর সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদণ্ড ও ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ আইনটিও অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে সুন্দরবন বাঁচানোর পাশাপাশি বাঘ, হরিণসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত