Ajker Patrika

উদ্বেগ-আশ্বাসের দোলাচলে বাংলাদেশে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি

ডয়চে ভেলে
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৪: ৩৬
উদ্বেগ-আশ্বাসের দোলাচলে বাংলাদেশে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি

চার দিন পর শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। কিন্তু এবার পূজা শুরুর বেশ আগে ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বেশ কিছু ঘটনায় নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদ্‌যাপন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ঘিরেও ঘটেছে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা; পূজামণ্ডপ বা প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে৷ তাই, উৎসবের তেমন স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা যাচ্ছে না। পূজা নির্বিঘ্ন করতে সরকার উদ্যোগের আশ্বাস দিলেও ভরসা পাচ্ছেন না সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তার ওপর কয়েকটি জেলায় আকস্মিক বন্যাও পূজার আয়োজনকে ম্লান করেছে৷ সব মিলে উদ্বেগ-আশ্বাসের দোলাচলের মধ্যে চলছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘বিগত সরকারগুলোর মতো বর্তমান সরকারেরও পূজার নিরাপত্তা দেওয়ার একধরনের চেষ্টা আছে৷ আবার পূজা না করতে দেওয়ার হুমকিও আছে৷ এর মধ্যে গত ১৩ দিনে ১৩টি জেলায় ১৭টি মণ্ডপে প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে কতটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পূজা করা সম্ভব সেটা বোঝাই যায়৷ অনেক সার্বজনীন মণ্ডপে এবার শুধু ঘট পূজা হচ্ছে৷’

তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় দুজন ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ বলেন, ‘এখন শুধু থানার ওসিকে বদলানোতেই তো দুর্বৃত্তদের থামানো যাবে না৷ বরং তাদের গ্রেপ্তার না করায় তারা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠছে৷’

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর নিরাপত্তার বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে৷ সরকারের সেই চেষ্টাও আমরা দেখছি৷ আমরা নিজেরাও নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি৷’

এবার পূজায় স্বতঃস্ফূর্ততা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে৷ কেউ যদি মানসিকভাবে ভালো না থাকেন, তাহলে তো তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে পূজা করতে পারবেন না৷ আবার কেউ ভালো থাকলে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে করবেন৷ তবে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় আমাদের সবারই মন খারাপ৷ আসলে মন্দিরে হামলার বিচার না হওয়ায় এসব ঘটনা কমছে না৷’

যেসব স্থানে ভাঙচুরের ঘটনা

গত তিন দিনের মধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের শ্রীশ্রী জিউর আখড়ায় দুর্গাপূজার সাতটি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে৷ বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম শ্যামপুর দেউরীবাড়ি সার্বজনীন দুর্গামন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে৷ এ ঘটনার পর বাকেরগঞ্জ থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলামকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ পাবনার সুজানগরে চার দিনের ব্যবধানে দুটি মন্দিরে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে৷ এতে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্গাপূজা উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে৷ এ ঘটনার পর সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাকিউল আজমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ কিন্তু এসব ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি৷

যারা প্রতিমা ভাঙচুর করছে তাদের কেন গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না—এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র এআইজি ইনামুল হক সাগর জানান, তাঁরা দায়ীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, "পূজার নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ আইজিপি প্রতিদিনই এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিচ্ছেন৷ কোথাও কোনো ঘটনার খবর পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে ওসিদের প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ পাশাপাশি অপরাধীদেরও খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও কাজ করছে৷’’

পূজামণ্ডপকেন্দ্রিক পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে এবং পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সারা দেশে দুর্গাপূজা ঘিরে আট দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি৷

কয়েক দিন আগে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় হরি মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর হয়৷ সেখানে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানায় সে ভারতীয় নাগরিক৷ যদিও পরে ডয়চে ভেলের অনুসন্ধানে জানা যায় তিনি বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের বাসিন্দা৷ এখন ওই মন্দিরের অবস্থা কী, কতটা নিরাপত্তা সেখানে নিশ্চিত হয়েছে জানতে চাইলে ভাঙ্গা বাজার হরি মন্দির কমিটির সভাপতি স্বপন সাহা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গতকালও পুলিশের ডিআইজি আমাদের এখানে এসেছিলেন৷ তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন৷ আমরা নিজেরাও নিয়মিত পাহারা দিচ্ছি৷ এখন পর্যন্ত নতুন করে আর কোনো সংকট হয়নি৷ তার পরও সভাপতির মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের বিষয়ে অন্যরা তো শঙ্কিত৷ তাঁদের মধ্যে একধরনের শঙ্কা আছে৷ আসলে যত কথাই বলেন, পূজা হচ্ছে, কিন্তু আমাদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা নেই৷ একধরনের উৎকণ্ঠা আছে৷” 

পূজার প্রস্তুতি

মন্দির-মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা নির্মাণ, প্যান্ডেল-মঞ্চ স্থাপন, সাজসজ্জাসহ নানা ধরনের প্রস্তুতি চলছে৷ হিন্দুদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব ৯ অক্টোবর শুরু হয়ে চলবে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত৷ ২ অক্টোবর দুর্গাদেবীর আবাহন তথা মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দেবীর আরাধনা৷ এর এক সপ্তাহ পর ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা৷ সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার দোলায় (পালকি) চড়ে স্বর্গলোক থেকে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন; যার ফল হচ্ছে মড়ক৷ এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ ও মহামারির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে৷ দেবী স্বর্গলোকে বিদায় (গমন) নেবেন গজে (হাতি) চড়ে; যার ফল হিসেবে বসুন্ধরা শস্যপূর্ণা হয়ে উঠবে৷

এবার বাংলাদেশে পূজামণ্ডপের সংখ্যা কিছুটা কমার কথা বলছে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ৷ যদিও পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী এবার পূজা হচ্ছে ৩২ হাজার ৬৬৬টি মণ্ডপে৷ গত বছর ৩২ হাজার ৪০৮টি মণ্ডপে পূজা হয়েছে৷ তাদের হিসাবে ঢাকায় গত বছর ২৫৩টি মণ্ডপে পূজা হলেও এবার হচ্ছে ২৬০টি মণ্ডপে৷

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘সারা দেশে এবার কত মণ্ডপে পূজা হচ্ছে, সেটা এখনো আমরা নিশ্চিত নই৷ দুই-এক দিনের মধ্যে পুরো তালিকা চলে আসবে৷ পুলিশ সদর দপ্তর আমাদের জানিয়েছে, ৩২ হাজার ৬৬৬টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে৷ তবে অনেক এলাকায় পূজার উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত হচ্ছে না৷ যেমন বন্যদুর্গত এলাকাগুলোতে তো আর পূজার কোনো অবস্থাই নেই৷ সেই হিসাবে কিছু কমে যাবে৷ ফলে পুরো তালিকা পেতে আমাদের আরও দুই-এক দিন অপেক্ষা করতে হবে৷”

সাম্প্রতিক ঘটনায় অনেকে মণ্ডপেই পূজার আয়োজনে কাটছাঁট করছেন আয়োজকেরা৷  অনেকেই এবারের উৎসব কমিয়ে পূজাকে শুধু ঘট পূজায় নিয়ে গেছেন৷ 

রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের পূজামণ্ডপ নিরাপত্তাজনিত কারণে এবার কুমারি পূজার আয়োজন না করার ঘোষণা দিয়েছিল৷ তবে শনিবার রাতে সেনা কর্মকর্তারা মঠ কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করে নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে কুমারি পূজা আয়োজনের সিদ্ধান্ত জানায় রামকৃষ্ণ মিশন৷৷

আট দফা দাবি

এদিকে বর্তমান সরকারকে অবিলম্বে আট দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের নেতারা৷ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা রাজপথ ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন৷ গত শুক্রবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট আয়োজিত এক গণসমাবেশে এসব কথা বলেন জোটের নেতারা৷ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে এই জোট গঠিত৷ দেশব্যাপী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িঘর, মন্দির, দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাট, দখল, হত্যা, ধর্ষণ, দেশত্যাগের হুমকি, মব জাস্টিসের নামে আইনবহির্ভূতভাবে হত্যাচেষ্টাসহ সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধকরণপূর্বক প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ প্রদান, দোষীদের দ্রুতবিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ এবং সরকারের কাছে পেশকৃত আট দফা বাস্তবায়নের দাবিতে এই গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়৷ গত ১৩ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আট দফা দাবি পেশ করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা৷

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য

এদিকে বাংলাদেশে দুর্গাপূজার মণ্ডপে হামলা ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ এবং সামাজিক সম্প্রীতির বিষয়ে সঠিক বার্তা দেয় না বলে মন্তব্য করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ শুক্রবার নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন৷ তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের বিষয়ে ভারত বারবার বাংলাদেশকে জানিয়েছে এবং বলেছে যে সেখানে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার প্রয়োজন৷ এটা আমাদের প্রত্যাশা যে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়া উচিত৷ দুর্গাপূজার মণ্ডপে হামলার বিষয়টি বাংলাদেশের আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে দেখা উচিত৷’

দিল্লির এমন মন্তব্যের বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন বাড়ার প্রেক্ষাপটে বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত৷

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা স্থগিত

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ২০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে জারি করা প্রজ্ঞাপন স্থগিত করেছে সরকার। ফলে আপাতত কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হচ্ছে না।

আজ শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক বিমান উড্ডয়ন কমিটির সভাপতি ও বিমানবন্দর পরিচালক এয়ার কমোডর মো. নুর-ই-আজম।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক ঘোষণা করার প্রজ্ঞাপন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আগের মতোই অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা চলবে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়।

বিমানবন্দরসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অবকাঠামোগত ও প্রশাসনিক কিছু প্রস্তুতি সম্পূর্ণ না হওয়ায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ পর্যটন খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছিল। বিশেষ করে, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতের সঙ্গে সরাসরি আকাশপথে সংযোগের পরিকল্পনাও ছিল সরকারের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা বাংলাদেশের

বাসস, ঢাকা  
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ২৭
পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা বাংলাদেশের

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করতে সম্প্রতি খসড়া আইন অনুমোদন দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট নেসেট।

তথাকথিত ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ আরোপের নামে এই আইনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ।

আজ শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করছে যে, পূর্ব জেরুজালেমসহ দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের কোনো অংশে ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌমত্ব নেই।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েল পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে বেআইনি দখলদারি চালিয়ে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব, বিশেষ করে রেজল্যুশন ২৩৩৪-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।

২২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) দেওয়া অ্যাডভাইজরি ওপিনিয়ন বা পরামর্শমূলক মতামতকে স্বাগত জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ওই মতামতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে ইসরায়েলের বাধ্যবাধকতাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাধারণ জনগণকে, ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।

বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার, তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমানার ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন এজেন্সির প্রতারণার শিকার ১৭ ওমরাহযাত্রী

আয়নাল হোসেন, ঢাকা 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ওমরাহ হজ পালন করতে গিয়ে এজেন্সির প্রতারণার শিকার হয়েছেন ১৭ জন যাত্রী। পরে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে দুটি এজেন্সি টাকা ফেরত দিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে। অন্য একটি এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রতারণার শিকার ওমরাহযাত্রীরা প্রতিকার চেয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। গত বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানি শেষে দুটি এজেন্সি টাকা ফেরত দিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে। আর একটি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে ত্রুটিগুলো লিখিতভাবে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে।

প্রতারণার অভিযোগ ওঠা তিন এজেন্সির একটি হলো দেশ ও বিদেশ হজ এজেন্সি। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা ওমরাহ যাত্রীরা হলেন আজহারুল ইসলাম, খোরশেদ আলম, নূর মোহাম্মদ, মো. খোরশেদ আলম, খোদেজা আলম, কোহিনুর আক্তার, রহিমা আক্তার, সারোয়ার আলম চৌধুরী ফরিদা ইয়াসমিন লাভলী, শফিকুল আলম ও শাহেনা আকতার। এজেন্সির বিরুদ্ধে তাঁদের দেওয়া অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ওমরাহ পালনকালে জেদ্দা বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সুনির্দিষ্ট হোটেল বুকিং না থাকা, নিজ উদ্যোগে হোটেলে লাগেজ বহন, হোটেল ব্যবস্থাপনায় চরম ভোগান্তি, সংকীর্ণ আবাসস্থল, অতিরিক্ত টাকা নেওয়া, হজের পাঁচ দিন বাস সার্ভিসে চরম অব্যবস্থাপনা এবং নিম্নমানের খাবার পরিবেশন।

জানতে চাইলে দেশ ও বিদেশ এজেন্সির মালিক এহসানুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওমরাহ যাত্রীরা মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। কয়েকজন টাকা বকেয়া রেখেই ওমরাহ পালনে যান। এ-সংক্রান্ত সব কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়েছে।

মো. শামীম হোসেন নামের একজন অভিযোগ করেন ড. মুফতি এম এ আজিজ হজ অ্যান্ড ট্যুরস এজেন্সির কাছে। তিনজনে ওমরা পালনের জন্য গত ১০ ফেব্রুয়ারি ৩ লাখ টাকা জমা দেন। অফিসে গিয়ে সেটি তালাবদ্ধ দেখেন। এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ড. মুফতি এম এ আজিজ হজ অ্যান্ড ট্যুরস প্রতিষ্ঠানের কাছে ধর্ম মন্ত্রণালয় নোটিশ পাঠায়। এতে বুধবার বেলা সাড়ে ৩টায় অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের কক্ষে শুনানির জন্য ডাকা হয়। শুনানিতে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হলে ধরে নেওয়া হবে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দিতে ইচ্ছুক নয়। পরে জমা দেওয়া টাকার মধ্যে২ লাখ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

শাহনেওয়াজ নামের অন্য একটি ব্যক্তি লাইম স্টোন রিসোর্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, জনপ্রতি ১ লাখ ৭০ হাজার করে তিনজনের জন্য ৫ লাখ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ওমরাহ পালনে যান তাঁরা। মদিনায় ৪ দিন ও মক্কায় ১০ দিন রাখার শর্তে টাকা দেওয়া হয়। এজেন্সি মদিনায় ফ্লাইট না দিয়ে জেদ্দায় ফ্লাইট দেয়। এরপর জেদ্দা-মদিনায় যাতায়াতের জন্য অতিরিক্ত ৩০০ রিয়াল করে আদায় করে। মদিনায় হোটেল নিম্নমানের দেওয়া হয়। একই কক্ষে নারী-পুরুষকে রাখা হয়। মক্কায়ও নিম্নমানের হোটেল দেওয়া হয়। সেখানেও নারী-পুরুষকে একত্রে রাখা হয়। মক্কা থেকে ফ্লাইট না দিয়ে মদিনা থেকে ঢাকায় ফ্লাইট দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোটকেন্দ্রে ‘প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর’ হবেন ৬ লাখ আনসার সদস্য: মহাপরিচালক

বাসস, ঢাকা  
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। ছবি: বাসস
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। ছবি: বাসস

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (আনসার-ভিডিপি) পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিয়েছে। এবারের নির্বাচনে ৬ লাখ আনসার সদস্য মাঠে থাকবে, যারা ভোটকেন্দ্রগুলোতে ‘প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। একই সঙ্গে তাঁরা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গেও সমন্বয় করে কাজ করবেন।

আনসার ও ভিডিপির সদরদপ্তরে গতকাল বৃহস্পতিবার বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ এই প্রস্তুতির কথা জানান।

বাসসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডিজি সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, এবারের নির্বাচনে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের নিশ্চয়তা দিতে এবং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে আনসার বাহিনী প্রথমবারের মতো ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম চালু করছে। তিনি বলেন, ‘এবার ভোট কেন্দ্রে প্রশিক্ষিত আনসার সদস্যদের পাঠানো হচ্ছে। তারা সদরদপ্তরের সঙ্গে ডিজিটাল সিস্টেমে যুক্ত থাকবে। ফলে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের নিশ্চয়তা থাকবে।’

এই ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিটি সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর, কিউআর কোড এবং কর্মতথ্য সফটওয়্যারে সংরক্ষিত থাকবে। ফলে দায়িত্ব পালনের দক্ষতা, অবস্থান ও আচরণ রিয়েল টাইমে ট্র্যাক করা সম্ভব হবে। মহাপরিচালক বলেন, নির্বাচনের দিন আনসার বাহিনী জনগণের নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক হয়ে কাজ করবে।

নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ৬ আগস্ট থেকে আনসার সদস্যদের মৌলিক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে লিডারশিপ ট্রেনিং, অ্যাডভান্স ট্রেনিং এবং ইয়ুথ লিডারশিপ ট্রেনিং অন্তর্ভুক্ত।

মহাপরিচালক জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দুই বা তিনদিনের রিফ্রেশার ট্রেনিং দেওয়া হবে, যেখানে আচরণবিধি, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং যোগাযোগের কৌশল শেখানো হবে; নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে এবং পেশাগত ভূমিকায় একনিষ্ঠ সদস্যদের নির্বাচন করার জন্য পুরোনো সদস্যদের তথ্য ফিল্টারিং করা হবে; বাহিনীতে তরুণ ও কর্মক্ষম সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ থেকে ২৫ বছর করা হয়েছে; বাহিনীতে নারী সদস্যের সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ; নারী-পুরুষ সমানভাবে নেতৃত্বে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং প্রতিটি উপজেলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একজন পুরুষ ও একজন নারী প্রশিক্ষক রাখা হয়েছে।

মেজর জেনারেল সাজ্জাদ মাহমুদ আরও জানান, এবার নির্বাচনী সশস্ত্র ও নিরস্ত্র উভয় ধরনের আনসার সদস্যরা দায়িত্বে থাকবেন। তাদের জন্য নতুন ইউনিফর্ম, জ্যাকেট ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হচ্ছে।

ডিজি বলেন, এখন থেকে আনসার বাহিনী ব্যক্তিনির্ভর নয় বরং সিস্টেম নির্ভর হবে। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পেলে দ্রুত তদন্ত ও শাস্তির ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

তিনি আনসার বাহিনীর বৃহত্তর ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, বাহিনীটি শুধু নির্বাচনের সময়ই নয়, বরং সারাবছরই উন্নয়ন, দুর্যোগ মোকাবিলা ও সামাজিক সচেতনতা কার্যক্রমে ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে প্রায় ৬০ লাখ আনসার সদস্যের মধ্যে ৫৯ লাখই স্বেচ্ছাসেবক। তাদের জীবনমান উন্নয়নে ‘সঞ্জীবন প্রকল্প’ চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সদস্যরা দলভিত্তিক ক্ষুদ্রঋণ, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ (যেমন ড্রাইভিং, নার্সিং, ফ্রিল্যান্সিং) সহায়তা পাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত