Ajker Patrika

রেলের লক্ষ্যমাত্রা টানা ছয় অর্থবছর অধরা

তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
আজকের পত্রিকা গ্রাফিক্স
আজকের পত্রিকা গ্রাফিক্স

বাংলাদেশ রেলওয়ে টানা ছয় অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আয় করেছে। প্রতিবছর লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও এই ছয় অর্থবছরের মধ্যে প্রথম তিন অর্থবছরে আয় কম হয়েছে। তবে পরের তিন অর্থবছরে আয় পর্যায়ক্রমে বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি।

রেলওয়ের আয়ের এই চিত্র ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, আয় কম হওয়ার কারণ বিভিন্ন প্রকল্প ও নানা ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক ব্যয়। অন্তর্বর্তী সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা রেলওয়ের লোকসান কমিয়ে আয় বাড়ানোর পথ বের করতে বিভিন্ন সময় নির্দেশনা দিয়েছেন।

জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিগত সময়গুলোতে ব্যয় ছিল বেশি, নানা কারণে আয় ছিল কম। বিভিন্ন প্রকল্প থেকে শুরু করে নানা জায়গায় অস্বাভাবিক ব্যয় ছিল। তবে আমরা আয় বাড়ানোর জন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কাজও হচ্ছে। আশা করছি, বছর শেষে ভালো কিছুই হবে।’

রেলওয়ের সূত্র বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা, অর্জন হয়েছে ১ হাজার ৫৯০ কোটি ১ লাখ টাকা। পরের অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ১২ কোটি ৩ লাখ টাকা ধরা হলেও আয় হয়েছে ২ হাজার ১৯৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ২৫৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জন হয়েছে ১ হাজার ১৬৬ কোটি ৭ লাখ টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৫২৩ কোটি ৩৮ লাখ, অর্জন হয়েছে ১ হাজার ৪৬৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ৩৬৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও অর্জন হয় ১ হাজার ৭৮৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৪৭০ কোটি ২ লাখ, অর্জন হয়েছে ১ হাজার ৯২৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

আয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রেলওয়ে মূলত আটটি খাত থেকে আয় করে। সবচেয়ে বেশি আয় করে যাত্রী পরিবহনে, এরপর পণ্য পরিবহনে। অন্য খাতগুলো হলো পার্সেল পরিবহন, বাণিজ্যিক, ভূ-সম্পত্তি, স্ক্র্যাপ, বিদ্যুৎ ও টেলিকম। যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে বিগত চার অর্থবছরেই আয় পর্যায়ক্রমে বাড়লেও তা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম। পার্সেল ও ভূ-সম্পত্তি থেকেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় অনেক কম হয়েছে। তবে টেলিকম খাত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় করেছে।

এ বিষয়ে রেলওয়ের অপারেশন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন কিছু ট্রেন যুক্ত হওয়ায় যাত্রী পরিবহনে আয় বেড়েছে। লোকোমোটিভের অভাবে অনেক লোকাল কমিউটার ট্রেন বন্ধ রয়েছে। ফলে সেই জায়গায় আয় কম হচ্ছে। সব ট্রেন পুরোপুরি চালু থাকলে এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব। লক্ষ্যমাত্রা সব সময় পূরণ করা যায় না। তবে লক্ষ্যমাত্রা ধরেই তাঁদের এগোতে হবে।

সূত্র জানায়, আয় বাড়াতে রেলওয়ে সম্প্রতি তিন মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে।

আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা জানতে চাইলে রেলসচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, যাত্রী ও মালপত্র পরিবহন থেকে হুট করে আয় বাড়বে না। ভূ-সম্পত্তি, স্ক্র্যাপ, অপটিক্যাল ফাইবার—এগুলোতে আয় বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে ব্যয় কমানোর চেষ্টা চলছে। এতে রেলের অপারেটিং খরচের হার কমে আসবে।

আয় বাড়ানোর তিন মেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনায় রয়েছে, যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ, আপাতত ২৬টি ইঞ্জিন ও ক্রু সরবরাহ, আন্তনগর কোটা সমন্বয়, নতুন ট্রেন ও কোচ সংযোজন, অপটিক্যাল ফাইবার ও লাগেজ ভ্যান বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার, টিকিট চেকিং জোরদার এবং অবৈধ জমি উদ্ধার করে ইজারা দেওয়া।

মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় রয়েছে, সরকারি পণ্য পরিবহন, লাগেজ ভ্যান ব্যবহারে নীতিমালা অনুসরণ, স্টেশন ও ট্রেনে বিজ্ঞাপন প্রচার, ট্রাফিক কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ফেরত এবং টঙ্গী-তেজগাঁওয়ে আনলোডিং সুবিধাসম্পন্ন ইয়ার্ড নির্মাণ।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় রয়েছে অব্যবহৃত রেলভূমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করে মার্কেট, হোটেল, অফিস ইত্যাদি ভাড়া দিয়ে আয় বাড়ানো, এজন্য ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা সংশোধন প্রয়োজন।

এ ছাড়া ৫০টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) সংগ্রহ এবং মেরামত শপগুলোর যন্ত্রপাতি ও লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়িয়ে কর্মদক্ষতা উন্নয়ন করতে চায় রেলওয়ে। ধীরাশ্রম আইসিডির নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন করা এবং মোংলা-পদ্মা সেতু রুটে নিমতলীতে নতুন আইসিডি নির্মাণ। স্টেশনগুলোর সিএসএল ৭৫০ মিটারে উন্নীত করা এবং ইয়ার্ড লাইন সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

যমুনা রেলসেতু চালুর ফলে নতুন কোচ, ওয়াগন সংগ্রহ করে যাত্রী ও মালগাড়ি পরিচালনা বাড়ানো এবং মির্জাপুর, নিমতলী, টঙ্গী, তেজগাঁওয়ে আধুনিক গুডস ইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

রেল সূত্র বলছে, এগুলোর পাশাপাশি জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডাবল লাইন, টঙ্গী-আখাউড়া, লাকসাম-চট্টগ্রাম ডুয়েলগেজ, বগুড়া-জামতৈল নতুন লাইন, জয়দেবপুর-জামালপুর ডুয়েলগেজ, আখাউড়া-সিলেট ডুয়েলগেজ, ঢাকা-লাকসাম কর্ড লাইন, ফৌজদারহাট-লাকসাম ফ্রেইট করিডর নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে রেলওয়ের অপারেশনাল দক্ষতা ও রাজস্ব আয় উভয়ই উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালনার দক্ষতার অভাব। দীর্ঘদিন রেলে বড় বড় বিনিয়োগ হচ্ছে; কিন্তু আয় বাড়েনি। ফলে বেসরকারিভাবে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অপারেটর দিয়ে পরিচালনা করলে রেল লাভে ফিরবে। এতে যাত্রীসেবা বাড়বে; বাড়তি ব্যয়, অনিয়ম, চুরি, দুর্নীতি দূর হবে। তখন রেলওয়ের পরিচালন নিয়ে মাথাব্যথা থাকবে না। তারা অবকাঠামোর উন্নয়নে কাজ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই অভ্যুত্থানের পর সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা দিল সেনাবাহিনী

নানা গুঞ্জনের মধ্যে ড. ইউনূসের সঙ্গে নাহিদের সাক্ষাৎ

অভ্যুত্থানের পরে সেনানিবাসে প্রাণ রক্ষার্থে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিবর্গ প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর অবস্থান

ভারতে জাহাজ নির্মাণের জন্য ২১ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিল করল বাংলাদেশ

যে কুমির ডেকে আনছেন, তা আপনাদেরকেই খাবে: কাদের ইঙ্গিত করলেন উপদেষ্টা আসিফ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত