Ajker Patrika

চন্দ্রগ্রহণের সময় মুমিনের করণীয় আমল

ইসলাম ডেস্ক
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ২৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চন্দ্র ও সূর্য আল্লাহর অপার কুদরতের দুটি অন্যতম নিদর্শন। মহান আল্লাহর নির্ধারিত প্রাকৃতিক নিয়মেই চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ ঘটে।

ইসলাম পূর্ববর্তী যুগে মানুষ মনে করত, পৃথিবীতে কোনো বড় ব্যক্তিত্বের মৃত্যু বা জন্মের কারণে চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ছেলে ইবরাহিমের মৃত্যুর দিনে যখন সূর্যগ্রহণ হয়, তখন সাহাবিরা এই ধারণা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলেন। তাঁদের এই ভুল ধারণা দূর করতে বিশ্বনবী (সা.) চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেন।

হজরত মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারও মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে, তখন তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, তাঁর মহত্ত্ব ঘোষণা করবে, নামাজ আদায় করবে এবং সদকা প্রদান করবে।’ (সহিহ্ বুখারি ও সহিহ্ মুসলিম)

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আরও একটি হাদিসে একই নির্দেশনা পাওয়া যায়—‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর কুদরতের বিশেষ নিদর্শন। কারও মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ হয় না। অতঃপর যখন তোমরা চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ দেখতে পাও, তখন তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলবে, আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, নামাজ আদায় করবে এবং দান-সদকা করবে।’ (সহিহ্ মুসলিম)

এই হাদিসগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, চন্দ্র ও সূর্য নিজ ক্ষমতায় কিছু করে না; তাদের প্রতিটি গতিবিধি আল্লাহর হুকুমের অধীন। যখন গ্রহণ লাগে, তখন মুমিনদের কর্তব্য হলো, আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করা।

হাদিসে সূর্যগ্রহণের নামাজের মতো চন্দ্রগ্রহণের নামাজও প্রমাণিত এবং এটি একটি সুন্নত আমল। এই নামাজ জামাতে নাকি একাকী আদায় করা হবে, তা নিয়ে ফিকহবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে হানাফি মাজহাবের অনুসারীরা চন্দ্রগ্রহণের নামাজ একাকী নিজ নিজ ঘরে পড়ার ওপর জোর দিয়েছেন। ফিকহের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘বাদায়েউস সানায়ি’-তে উল্লেখ রয়েছে—‘চন্দ্রগ্রহণের সময় ঘরে নামাজ আদায় করা হবে। কেননা সুন্নত হচ্ছে, তখন একাকী নামাজ পড়া।’ (বাদায়েউস সানায়ি: ১ /২৮২)

সুতরাং, চন্দ্রগ্রহণের সময় মুমিনদের উচিত অযথা গল্প-গুজব বা হাসি-তামাশায় সময় নষ্ট না করে আল্লাহর প্রতি ভয়ে ভীত থাকা এবং বেশি বেশি ইবাদত করা। এই সময়গুলোতে দোয়া, তাসবিহ, তাওবা-ইস্তিগফার, নামাজ ও দান-সদকা করা আবশ্যক। কারণ, অনেক হাদিসে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণকে বিশেষ বিপদ বা ক্রান্তিকাল হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, যা বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সতর্কবার্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টাকে সাংবিধানিক আদেশ জারির প্রস্তাব আবেগতাড়িত, রাষ্ট্র আবেগের ওপর চলে না: সালাহউদ্দিন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

আসামিদের কোনো অনুশোচনা নেই, উল্টো সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উসকে দিয়েছে: চিফ প্রসিকিউটর

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

পলাতক আসামিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, আরপিও সংশোধন অনুমোদন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২৪ অক্টোবর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫ ইংরেজি, ০৮ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৪: ৪৩ মিনিট
ফজর০৪: ৪৪ মিনিট০৫: ৫৯ মিনিট
জোহর১১: ৪৩ মিনিট০৩: ৪৭ মিনিট
আসর০৩: ৪৮ মিনিট০৫: ২৪ মিনিট
মাগরিব০৫: ২৬ মিনিট০৬: ৪০ মিনিট
এশা০৬: ৪১ মিনিট০৪: ৪৩ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টাকে সাংবিধানিক আদেশ জারির প্রস্তাব আবেগতাড়িত, রাষ্ট্র আবেগের ওপর চলে না: সালাহউদ্দিন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

আসামিদের কোনো অনুশোচনা নেই, উল্টো সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উসকে দিয়েছে: চিফ প্রসিকিউটর

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

পলাতক আসামিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, আরপিও সংশোধন অনুমোদন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুসলিম রেনেসাঁর কণ্ঠস্বর: ফররুখ আহমদের কাব্যচেতনা

মুহাম্মাদ রাহাতুল ইসলাম 
কবি ফররুখ আহমদ। ছবি: সংগৃহীত
কবি ফররুখ আহমদ। ছবি: সংগৃহীত

বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ফররুখ আহমদ (১৯১৮-৭৪) এক স্বতন্ত্র ও উজ্জ্বল প্রতিভার নাম। তাঁকে তাঁর কাব্যিক মিশনের কারণে সাধারণত ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর কাব্যচেতনা ছিল মূলত একটি সামাজিক ও আত্মিক পুনর্জাগরণের ডাক, যেখানে ইসলামি আদর্শ ও বাঙালি মুসলিমের আত্মপরিচয় নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা এক শিল্পিত রূপ লাভ করেছিল।

এটি ছিল গভীর মননশীল সাহিত্য-আন্দোলন, যা আত্মবিস্মৃত জাতিকে তার স্বকীয়তা পুনরুদ্ধারে অনুপ্রাণিত করে।

ফররুখ আহমদের আবির্ভাবকাল ছিল বাংলার মুসলিম সমাজের জন্য এক ঘোর সংকটকাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, পঞ্চাশের মন্বন্তর, ঔপনিবেশিক শোষণ ও মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরীণ আত্মবিস্মৃতি—এই চতুর্মুখী অন্ধকারে কবি অনুভব করেছিলেন জাতির গভীর নিস্তব্ধতা। এই জরাগ্রস্ত ও হতাশাজনক বাস্তবতা তাঁকে স্থির থাকতে দেয়নি। তাঁর কবিতায় তিনি এই ঐতিহাসিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে এক বিপ্লবী দামামা বাজিয়েছেন।

কবির দৃষ্টিতে, মুসলিমদের অতীত ইতিহাস ছিল শৌর্য, বীরত্ব ও মানবতার। সেই ঐতিহ্য ভেঙে যাওয়ায় জাতির যে অধঃপতন, তা কবিকে ব্যথিত ও উদ্বেলিত করে তোলে।

তিনি উপলব্ধি করেন, এই জাতিকে জাগাতে হলে শুধু রোমান্টিকতা নয়, চাই এমন এক ‘পাঞ্জেরি’ (দিকনির্দেশক), যে অন্ধকার পেরিয়ে মঞ্জিলে পৌঁছানোর পথ দেখাবে। তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ‘সাত সাগরের মাঝি’ (১৯৪৪)-এর কালজয়ী কবিতা ‘পাঞ্জেরি’তে এই আর্তিই ধ্বনিত হয়:

‘রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?

এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?

সেতারা, হেলার এখনো ওঠেনি জেগে?’

এই ‘পাঞ্জেরি’ কবিতা কেবল একটি আশার বাণী নয়, বরং তা একটি জাতীয় আত্মসচেতনতার প্রতীক—যা বাঙালি মুসলিম সমাজকে তার সমৃদ্ধ অতীত ও ইসলামি সভ্যতা-সংস্কৃতির দিকে ফিরে তাকিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শেখায়। এটি ছিল অস্তিত্ব রক্ষার এক তীব্র ব্যাকুলতা।

রেনেসাঁর দার্শনিক ভিত্তি: ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন

ফররুখ আহমদের রেনেসাঁ চেতনা কেবল অতীত রোমন্থন ছিল না, বরং তা ছিল প্রাচীনকে ধ্বংস না করে পুরোনো ঐতিহ্যের ভিত্তির ওপর নতুন আদর্শ সৃষ্টি করার এক তাত্ত্বিক প্রয়াস। তাঁর চিন্তা ছিল আল্লামা ইকবালের মতো, যিনি পতনোন্মুখ মুসলিমদের মধ্যে আত্মমর্যাদা ও নতুন জীবনবোধ সঞ্চার করতে চেয়েছিলেন। ফররুখ বিশ্বাস করতেন, ইসলামের আদর্শই মানবমুক্তি, স্বাধীনতা ও চিন্তার মুক্তির প্রথম উদ্যোক্তা।

তাঁর এই বিশ্বাস কবিকে মানবতাবাদের প্রেরণা জুগিয়েছে, যা তাঁকে তৎকালীন ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার নির্মম শোষণ ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হতে সাহায্য করেছে। ‘লাশ’ কবিতায় তিনি যে অমানবিকতার চিত্র এঁকেছেন, তা প্রমাণ করে তাঁর কাব্য শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও মানবিক মুক্তির জন্যও নিবেদিত ছিল। তিনি লেখেন:

‘আজ এই উৎপীড়িত মৃত্যু-দীর্ণ নিখিলের অভিশাপ বও

ধ্বংস হও, তুমি ধ্বংস হও।’

তাঁর কাব্যচেতনা ছিল একটি বিশ্বজনীন আদর্শের প্রতিচ্ছবি, যা নিম্নোক্ত দুটি ধারায় প্রস্ফুটিত হয়েছে—

  • ১. ইসলামি ঐতিহ্য ও আরবীয় প্রতীক: কবি তাঁর কাব্যে মুসলিম ঐতিহ্য ও চেতনাকে উজ্জীবিত করার জন্য মরুচারিতা, সমুদ্রাভিযান, আরব্য আবহ ও পুরাণকে প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করেছেন। তিনি বঙ্গীয় শব্দ ও অনুষঙ্গ ত্যাগ করে ‘সিন্দাবাদ’, ‘হাতেম তায়ি’, ‘নৌফেল’-এর মতো আরব্য চরিত্র ও অনুষঙ্গ গ্রহণ করেন, যা তাঁর কাব্যকে ইসলামি স্বাতন্ত্র্যবাদী রূপ দেয়। এই অনুষঙ্গগুলো ছিল মূলত মুসলিম জাতির শৌর্য ও গৌরবোজ্জ্বল অতীতের স্মারক।
  • ২. আধুনিকতার অঙ্গীকরণ: মুসলিম ঐতিহ্যের ধারক হওয়া সত্ত্বেও ফররুখ আহমদ কখনোই আধুনিক কাব্যশৈলী থেকে দূরে সরে যাননি। বরং তিনি ছিলেন এক যুগসচেতন আধুনিক কবি। তাঁর কবিতা প্রকরণ-কৌশল, শব্দচয়ন ও বাক্-প্রতিমার অনন্য বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। তিনি সনেট রচনায় যে দক্ষতা দেখিয়েছেন, তা তাঁর আঙ্গিক সচেতনতার প্রমাণ। সমালোচকেরা তাঁর কবিতায় কিটস, শেলি, এমনকি টি এস এলিয়টের শূন্যতাবোধের প্রভাবও লক্ষ করেছেন। তাঁর এই আধুনিকতা রূঢ় বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি (যেমন: ‘লাশ’ কবিতায় দুর্ভিক্ষের বীভৎস চিত্র) অঙ্কনেও সক্ষম ছিল, যা তাঁর কাব্যকে শুধু ধর্মীয় ভাবধারায় সীমাবদ্ধ না রেখে মানবিক ও বিশ্বজনীন করে তুলেছে।

ফররুখ আহমদের কাব্যচেতনার একটি মৌলিক দিক হলো—তাঁর কাব্যভাষা নির্মাণে স্বাতন্ত্র্যবাদী অবস্থান। তিনি সচেতনভাবে বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি শব্দের প্রয়োগে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। এই শব্দভান্ডার কেবল ভাষার অলংকার ছিল না, বরং তা ছিল তাঁর সংস্কৃতি ও তাহজিব-তামাদ্দুনের প্রতি গভীর আস্থার বহিঃপ্রকাশ। তিনি বিশ্বাস করতেন, একটি জাতির স্বকীয় সাহিত্য নির্মাণের জন্য তার নিজস্ব শব্দভান্ডার ও ঐতিহ্যের মিশ্রণ অপরিহার্য। এই প্রয়াস ছিল কাজী নজরুল ইসলামের হাতে শুরু হওয়া বাংলা কাব্যের সেই ধারার সম্প্রসারণ, যেখানে আরবি-ফারসি মিশ্রিত একটি প্রাণের ভাষা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছিল।

সবশেষে বলা যায়, কবি ফররুখ আহমদের কাব্যচেতনা ছিল বস্তুত এক বৈপ্লবিক প্রত্যয় ও শৈল্পিক সংগ্রাম। তাঁর সাহিত্যকর্ম সেই সময়ের বাঙালি মুসলিম সমাজকে আত্ম-অনুসন্ধান ও আত্ম-প্রত্যয়ের পথে চালিত করেছিল। একদিকে তিনি ছিলেন ইসলামি আদর্শ ও ঐতিহ্যের প্রতি দ্বিধাহীনভাবে অনুরক্ত, অন্যদিকে ছিলেন আধুনিক কাব্যশৈলী ও মানবিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় আপসহীন। এই দুই আপাত-বিপরীতমুখী চিন্তাধারার শৈল্পিক ও দার্শনিক সমন্বয়ের ফলেই ফররুখ আহমদ বাংলা সাহিত্যে ‘মুসলিম রেনেসাঁর কণ্ঠস্বর’ হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর কবিতা প্রমাণ করে—আত্মপরিচয় ও আধুনিকতা একে অপরের পরিপূরক হতে পারে, যা একটি জাতির জাগরণের পথ দেখায়।

লেখক: রিসার্চ ফেলো, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টাকে সাংবিধানিক আদেশ জারির প্রস্তাব আবেগতাড়িত, রাষ্ট্র আবেগের ওপর চলে না: সালাহউদ্দিন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

আসামিদের কোনো অনুশোচনা নেই, উল্টো সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উসকে দিয়েছে: চিফ প্রসিকিউটর

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

পলাতক আসামিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, আরপিও সংশোধন অনুমোদন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নামাজে লুকিয়ে আছে শরীর, মন ও আত্মার প্রশান্তি

ইসলাম ডেস্ক 
নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। ছবি: সংগৃহীত
নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। ছবি: সংগৃহীত

নামাজ ইসলামের অনন্য বিধান। পাশাপাশি এটি এমন এক অনুশীলন, যা মানুষের শরীর, মন আর আত্মাকে একসঙ্গে সুস্থ রাখে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত: ৪৫)। এই আয়াত যেমন নৈতিকতার শিক্ষা দেয়, তেমনি এর মধ্যে লুকিয়ে আছে শারীরিক ও মানসিক কল্যাণের গভীর ইঙ্গিত।

শরীরচর্চার স্বাভাবিক রূপ: নামাজের সময় দাঁড়ানো, রুকু, সিজদা, বসা—প্রতিটি ভঙ্গিই যেন শরীরচর্চার একটি স্বাভাবিক ধারা। এতে শরীরের প্রায় সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালিত হয়। রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, পেশি ও জয়েন্ট সচল থাকে। মেরুদণ্ড সোজা রাখার অভ্যাসও গড়ে ওঠে। প্রতিদিন পাঁচবার এই অনুশীলন শরীরকে রাখে ফিট, ক্লান্তি দূর করে, মনেও আনে হালকা প্রশান্তি।

রক্ত সঞ্চালন ও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা: রুকুর সময় কোমর ও পিঠের অংশে রক্তপ্রবাহ সঠিকভাবে হয়। এতে হাড়ের জোড়াগুলো নমনীয় থাকে। সিজদার সময় মাথা নত করে রাখলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়—এই সময়ে মস্তিষ্ক যেন নতুন শক্তি পায়। ফলে স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ হয়, মনোযোগ বাড়ে, কাজের দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়। মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়লে মন হয় সতেজ ও শান্ত।

শ্বাসযন্ত্র ও অন্তঃস্রাব ব্যবস্থার উন্নতি: নামাজের প্রতিটি ভঙ্গি শ্বাসপ্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রিত রাখে। ফলে ফুসফুস ভালোভাবে কাজ করে, শরীরে অক্সিজেনের গ্রহণ বাড়ে। রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে। এই নিয়ন্ত্রিত ছন্দে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, বিশেষ করে পাচনতন্ত্র ও অন্তঃস্রাবী গ্রন্থি সুসমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে।

দেহভঙ্গির ভারসাম্য রক্ষা: নামাজ নিয়মিত আদায় করলে দেহভঙ্গি ঠিক থাকে। রুকু ও সিজদার পুনরাবৃত্তিতে পিঠ ও ঘাড়ের স্নায়ু সচল হয়। কিন্তু যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাজ করেন বা কম নড়াচড়া করেন, তাঁদের শরীর ধীরে ধীরে জড় হয়ে পড়ে। ফলে পেশি টান হারায়, মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বাঁক নষ্ট হয়। এতে শরীরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে অসুস্থতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

নিদ্রার মান উন্নয়ন: রাতে এশার নামাজের পর যে প্রশান্তি তৈরি হয়, তা ঘুমের জন্য উপকারী। মন স্থির হয়, শরীর শান্ত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, সিজদা ও ধ্যানমগ্ন অবস্থায় মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও মেলাটোনিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা ঘুমকে গভীর করে, উদ্বেগও কমায়।

অজু-পরিচ্ছন্নতা ও জীবনীশক্তির প্রতীক: অজু কেবল ইবাদতের প্রস্তুতি নয়, এটি পরিচ্ছন্নতারও অংশ। দিনে একাধিকবার মুখ, হাত, পা ধোয়ার ফলে শরীর থাকে সতেজ, রক্ত সঞ্চালন হয় স্বাভাবিক। জীবাণু ধুয়ে যায়, ত্বক হয় মসৃণ, মুখে আসে উজ্জ্বলতা। সবচেয়ে বড় কথা, এতে জাগে এক অন্তর্গত পবিত্রতার অনুভব। নবী করিম (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন অজু করা ব্যক্তিদের মুখমণ্ডল আলোকিত থাকবে, এটাই তার আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য।

মানসিক প্রশান্তি ও আত্মিক সংযোগ: নামাজে যখন মানুষ সকল চিন্তা ফেলে সিজদায় মাথা রাখে, তখন সে নিজের অস্তিত্বকে মহান স্রষ্টার হাতে সমর্পণ করে। এই আত্মসমর্পণ থেকেই জন্ম নেয় প্রশান্তি, আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ধৈর্যের সঙ্গে সাহায্য প্রার্থনা করো নামাজের মাধ্যমে।’ (সুরা বাকারা: ৪৫)। এই ধৈর্য ও মনোযোগ মানুষকে মানসিক দৃঢ়তা দেয়, তাকে রাখে ইতিবাচক পথে।

নামাজ আসলে শরীরচর্চা, ধ্যান ও আত্মার সংযোগ—এই তিনের অনন্য সমন্বয়। নামাজ দেহে আনে প্রাণশক্তি, মনে আনে প্রশান্তি, আত্মায় জাগায় আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা। তবে মনে রাখা দরকার, নামাজ মূলত ইবাদত, ব্যায়াম তার অনুষঙ্গ মাত্র। উদ্দেশ্য শুধু শারীরিক ফিটনেস নয়, বরং আল্লাহর আদেশ পালন ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন।

যে ব্যক্তি মনোযোগ ও নিয়মিতভাবে নামাজ আদায় করেন, সে প্রকৃত অর্থেই পায় শরীরের সুস্থতা, মনের শান্তি আর আত্মার মুক্তি।

লেখক: আসাদুজ্জামান খান মুকুল, শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টাকে সাংবিধানিক আদেশ জারির প্রস্তাব আবেগতাড়িত, রাষ্ট্র আবেগের ওপর চলে না: সালাহউদ্দিন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

আসামিদের কোনো অনুশোচনা নেই, উল্টো সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উসকে দিয়েছে: চিফ প্রসিকিউটর

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

পলাতক আসামিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, আরপিও সংশোধন অনুমোদন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম আচরণ মুমিনের বৈশিষ্ট্য

ফয়জুল্লাহ রিয়াদ
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ১৯
স্বামী-স্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত
স্বামী-স্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত

মানবসমাজের অর্ধেক অংশ হলো নারী। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কন্যা, বোন, স্ত্রী ও মা হিসেবে নারীরা মানুষের জীবনে অপরিসীম প্রভাব রাখে। তাই তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে জীবনযাপন করো।’ (সুরা নিসা: ১৯)

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইমানদার পুরুষদের কেবল ভরণপোষণের দায়িত্ব দেননি, বরং নারীদের সঙ্গে হৃদ্যতা, স্নেহ ও সম্মানের আচরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মহানবী (সা.) নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহারকে উত্তম চরিত্রের নিদর্শন হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের কাছে তোমাদের সবার চেয়ে উত্তম।’ (জামে তিরমিজি)

ইসলাম আগমনের পূর্বে নারীদের কোনো মর্যাদা ছিল না। আরব সমাজে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়ার কুপ্রথা ছিল। সেই অন্ধকার যুগে ইসলাম নারীদের দিয়েছে সম্মান, অধিকার ও নিরাপত্তা। শিক্ষা, উত্তরাধিকার, বিয়ে ও মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রেও ইসলাম নারীর যথাযোগ্য অধিকার নিশ্চিত করেছে।

হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) নারীদের কাচের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কাচ যেমন ভঙ্গুর, তেমনি নারীর মনও কোমল; ভালোবাসা ও যত্নেই তারা টিকে থাকে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তুমি যদি তা সোজা করতে চাও, তা ভেঙে যাবে; আর যদি ছেড়ে দাও, বাঁকাই থাকবে। তাই তাদের সদুপদেশ দাও।’ (সহিহ বুখারি)

একজন পুরুষের উচিত নারীর সঙ্গে কথা বলার সময় কোমল ভাষা ব্যবহার করা, পারিবারিক সিদ্ধান্তে তার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া এবং তাকে মানসিক প্রশান্তি দেওয়া। কারণ পরিবারে ভালোবাসা ও স্থিতি আসে পারস্পরিক সম্মান ও উত্তম আচরণের মাধ্যমে। স্ত্রীকে জীবনের সহযাত্রী হিসেবে দেখা এবং তার সঙ্গে উত্তম আচরণ করাই ইমানদারের বৈশিষ্ট্য।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টাকে সাংবিধানিক আদেশ জারির প্রস্তাব আবেগতাড়িত, রাষ্ট্র আবেগের ওপর চলে না: সালাহউদ্দিন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

আসামিদের কোনো অনুশোচনা নেই, উল্টো সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উসকে দিয়েছে: চিফ প্রসিকিউটর

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

পলাতক আসামিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, আরপিও সংশোধন অনুমোদন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত