Ajker Patrika

করোনা নিয়ন্ত্রণের চেয়ে সামালে জোর

আজাদুল আদনান, ঢাকা
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২১, ০৮: ২৯
করোনা নিয়ন্ত্রণের চেয়ে সামালে জোর

মহামারি করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে শুরু থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কঠোরনীতি অনুসরণ করে। ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীন থেকে শুরু করে ইউরোপের দেশগুলোতে সামাজিক সংক্রমণ রোধে দীর্ঘদিন কঠোর লকডাউনের আওতায় ছিল।

বিশেষ করে চীন, তাইওয়ান ও নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘর থেকে বের হতে বাধা দেওয়া হয় মানুষকে। ফলে এসব দেশে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। আর বাংলাদেশসহ অনেক দেশই করোনার মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে।

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে অধিক পরীক্ষা ও ট্রেসিংয়ের ব্যবস্থা হয়নি। ফলে সাময়িক বিধিনিষেধে অনেক সময় সংক্রমণের তীব্রতা কমলেও নির্দিষ্ট সময় পরপর পরিস্থিতি আবারও জটিল রূপ নিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুরু থেকে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা ঠেকাতে বারবার স্থায়ী একটি পরিকল্পনা তথা রোডম্যাপের কথা বলা হলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি না মানা, টিকার স্থায়ী সমাধান করতে না পারায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বসংকটের কারণে ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমদের মতে, ‘শুরু থেকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন রোডম্যাপের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য দেখা যাচ্ছে না। সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় জুলাইয়ের শুরু থেকে চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। সবকিছু করা হচ্ছে সাময়িক ব্যবস্থাপনার ভিত্তিতে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মাসেই দেশে প্রথম দৈনিক সংক্রমণ দশ হাজার অতিক্রম করে। পাশাপাশি প্রাণহানি দুই শতাধিক পেরিয়ে যায়। এমনকি সবচেয়ে জোরালো বিধিনিষেধ বা লকডাউনের পরও জুলাইয়ের প্রথম ১৫ দিনেই করোনার সংক্রমণ ও প্রাণহানি আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়।

দেশে গত ফেব্রুয়ারিতেও সংক্রমণের হার ৩ শতাংশের নিচে ছিল। দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয় মার্চে। এর মধ্যে একবার সংক্রমণ সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশে (৫ এপ্রিল) ওঠার পর কমতে থাকে। এপ্রিলে প্রথম ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। এরপর মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করে।

প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনার ডেলটা ধরনের সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করলে সরকার তড়িঘড়ি করে সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও এর মধ্যে ভারত থেকে অনেকেই দেশে ফিরেছেন এবং তাঁদের মধ্যেই প্রথম ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।

অপরদিকে ভারতে প্রথম ঢেউয়ে সংক্রমণ শীর্ষ ছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে। এরপর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয় চলতি বছরের এপ্রিলে। সংক্রমণ শীর্ষে ওঠে ২৫ এপ্রিল, হার ছিল ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ। বর্তমানে দৈনিক আক্রান্ত ৫০ হাজারের নিচে। কঠোর বিধিনিষেধ আর টিকা নিশ্চিতের কারণে বর্তমানে সেখানে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।

তবে বাংলাদেশে মারাত্মক এই পরিস্থিতির জন্য নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ের দুর্বলতাকেই দায়ী করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, করোনার মতো মহামারি দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার অনেক পরিকল্পনা নিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও গাইডলাইন আছে। সমস্যা হচ্ছে জনগণকে সম্পৃক্ত করার কাজটা ঠিকঠাক হয়নি। প্রধান সমস্যা হলো, নির্দেশনা বাস্তবায়নে নেতৃত্বের সংকট।

ডা. কামরুল হাসান বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা বলে আসছি, নমুনা পরীক্ষা বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের গোটা দেশে চমৎকার নেটওয়ার্ক আছে। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে দুজন করে স্বাস্থ্যকর্মী আছে। তাঁরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের নিয়ে সুন্দর কাজ করতে পারে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। দায়িত্ব পালন করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও সক্ষমতার ঘাটতি আছে। এটা বাস্তব সমস্যা, কারও ওপর চাপ দেওয়া যাবে না।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

‘ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির’, কারখানার ভেতর আত্মহত্যার আগে শ্রমিকের ফেসবুক পোস্ট

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত