Ajker Patrika

সেনাবাহিনী না থাকলে আরও প্রাণ ঝরত: চিফ প্রসিকিউটর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম। ফাইল ছবি
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম। ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে সব বাহিনীর সঙ্গে হেলমেট বাহিনীও ছিল। ওই হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগকে আজীবন ক্ষমতায় রাখা। প্রতিপক্ষকে নির্মূল করে দিতে চেয়েছিল সরকার। সব রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ব্যর্থ হওয়ার পর ছাত্ররা এগিয়ে এলে তাদের হুমকি মনে করে আক্রমণ করা হয়। আবেগ নিয়ে বাচ্চারা আন্দোলনে গিয়েছিল। তাদের কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। সব রিসোর্স ব্যবহার করা হয়েছে এই আক্রমণে। এই দেশে হাসিনার শাসনকে চিরস্থায়ী করতে হবে, কথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চিরস্থায়ী করতে হবে—এমন মাইন্ডসেট (মনোভাব) নিয়ে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। সব বাহিনী, হেলিকপ্টার, ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী নামানো হলেও তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে সেভাবে গুলি করেনি। সেনাবাহিনী ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নইলে আরও অনেক প্রাণ ঝরত।’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সারা দেশে চালানো হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় এসব কথা বলেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ পঞ্চম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তাজুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হলে আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী সোমবার দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

এই মামলার তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। আর পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হয়েছেন। শুনানির সময় তিনি ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বিটিভির মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

চিফ প্রসিকিউটর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১ হাজার ৪০০ জনকে হত্যা করা হয়; ৩৫ হাজারজন আহত হন। ১ হাজার ৪০০ জনকে হত্যায় প্রত্যেকের জন্য একবার করে হলেও শেখ হাসিনার ১ হাজার ৪০০ বার মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। যেহেতু সেটা সম্ভব না, তাই অন্তত একবার তাঁর চরম দণ্ড (মৃত্যুদণ্ড) হতে হবে। শেখ হাসিনা ছিলেন অপরাধীদের নিউক্লিয়াস, প্রাণভোমরা। এই নিউক্লিয়াস ভেঙে ফেলতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এ রকম নিউক্লিয়াস হয়ে উঠতে না পারেন। আসাদুজ্জামান খান কামাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সব অপরাধ বাস্তবায়নে-পরিকল্পনায় ছিলেন। শেখ হাসিনার নির্দেশ আইজিপির কাছে পৌঁছাতেন।

সাবেক আইজিপি ও এই মামলার রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আবদুল্লাহ আল-মামুন সত্য বলেছেন বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। তিনি সত্য প্রকাশ করে অ্যাপ্রুভার হয়েছেন। তাই তাঁর বিষয়ে আমাদের কোনো সাবমিশন নেই। এই বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত নেবেন।’

আজ শুনানির শুরুতে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করার দৃশ্য দেখানো হয়, যা বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিতে সরাসরি প্রচারিত হয়েছিল।

এ সময় প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে বলেন, তিনি সেই যুবক, যিনি নিজে ইতিহাস হয়ে ইতিহাসকে বদলে দেওয়ার সূচনা করেছিলেন; যার কারণে ইতিহাস বদলে গেছে। এখানে পুলিশকে আক্রমণ করার কোনো বিষয় ছিল না। লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা যুবককে পুলিশ বিনা উসকানিতে গুলি করেছে। আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়।

তাজুল ইসলাম যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে বলেন, এই মামলার পুরোটা হচ্ছে কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি (নির্দেশনার দায়) ও জয়েন্ট লায়াবিলিটি (যৌথ দায়)।

এ সময় তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আদালতের রায়, জেনেভা কনভেনশন, রোমস স্ট্যাটিউট, যুগোস্লাভিয়ার বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরেন।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল পুলিশের ওপর। তিনি সবকিছু জানার পরও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেননি, কাউকে শাস্তি দেননি। কারণ, নির্দেশ তিনি নিজেই দিয়েছিলেন। অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ওয়াইডস্প্রেডে (ব্যাপক মাত্রায়) ও সিস্টেমেটিক্যালি (পদ্ধতিগতভাবে)। দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির যে শর্ত, তা পুরোপুরিভাবে পূরণ হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের সর্বোচ্চ অপরাধ করেছেন তাঁরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সারা দেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন তাজুল ইসলাম। তবে পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিষয়ে কোনো দাবি না জানিয়ে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেন তিনি।

এ ছাড়া আসামিদের সম্পদ থেকে হতাহতদের ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিতে আবেদন জানান চিফ প্রসিকিউটর।

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা বিটিবি ভবন দেখতে গেলেও আহতদের দেখতে যাননি। পরে সমালোচনার মুখে গিয়েও চিকিৎসা না দিতে নির্দেশ দেন। এমনকি চিকিৎসার জন্য অন্য কোথায় যাতে যেতে না পারে, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেন। তাঁর টার্গেট ছিল একটি জনগোষ্ঠীকে শেষ করে দেওয়া। কী পরিমাণ জিঘাংসা ছিল তাঁর!’

মতিউর রহমান রেন্টুর লেখা ‘আমার ফাঁসি চাই’ বই থেকে উদ্ধৃত করে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘একবার ছাত্রলীগ নেতারা নিহত হয়েছে শুনে শেখ হাসিনা আনন্দিত হন। তাঁদের হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার আগে রুমালে গ্লিসারিন মেখে দিতে বলেন, যাতে রুমাল কাছে নিলে চোখে পানি চলে আসে। লাশ দেখে হাসিনা খুশি হতেন এবং ওই দিন বেশি করে খাবার খেতেন। জাহানারা ইমাম মারা যাওয়ার খবরে তিনি মিষ্টি ও গরিবদের মধ্যে টাকা বিলি করার নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা ছিলেন একজন হার্ডনাট ক্রিমিনাল। ভারত থেকে এখনো উসকানি দিচ্ছেন। এত মানুষ হতাহতের পরও তাঁর মধ্যে ন্যূনতম কোনো অনুশোচনা হয়নি। তাঁর প্রতি অনুকম্পা দেখানোর কোনো সুযোগ আমরা দেখি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপির সিদ্ধান্ত দুঃখজনক: আলী রীয়াজ

রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করবে ভারত—ট্রাম্পের দাবির জবাবে যা বলল নয়াদিল্লি

মোদির গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া সব মন্ত্রীর পদত্যাগ

ভাইকে ১১১ কোটি টাকার বাংলো তাহলে এ কারণেই দিয়েছেন কোহলি

চট্টগ্রামে অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল কারখানায় ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ২৩ ইউনিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত