Ajker Patrika

ছাগল-কাণ্ডের মতিউরের গ্রামের বাড়িতে কেউ নেই, স্বজনেরা লাপাত্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল ও মুলাদী প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ জুন ২০২৪, ২২: ০৩
Thumbnail image

ছাগল-কাণ্ডে দেশজুড়ে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা ড. মো. মতিউর রহমান পিন্টুর গ্রামের বাড়ি মুলাদীর কাজীরচর ইউপির বাহাদুরপুরে এখন সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। ক্ষমতার বাহাদুরির সেই ছাপ যেন নিমেষেই মুছে গেছে। কদিন আগেও এ বাড়িটি গমগম করত। মতিউরের ছোট ভাই পরিবার নিয়ে দাপটের সঙ্গে বসবাস করতেন। তবে বর্তমানে খাঁ খাঁ করছে তালাবদ্ধ দোতলা বাড়িটি। যেন উধাও হয়ে গেছে মতিউরের স্বজনেরাও। 

সরেজমিন আজ মঙ্গলবার সকালে মুলাদীর বাহাদুরপুর গ্রামে গিয়ে কারও দেখাই পাওয়া যায়নি।

বাহাদুরপুর গ্রামের রাজমিস্ত্রি আব্দুল জলিল বলেন, মতিউর রহমান পিন্টুর বাবা আব্দুল হাকিম হাওলাদার ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ক্ষমতার দাপট দেখাতে মতিউর তাঁর বাবা হাকিমকে দিয়ে ২০০৩ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করান। তৎকালীন বিএনপির সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন মঙ্গুকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়ে তাঁর সমর্থন নিয়ে কাজীরচর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত করান বাবা আব্দুল হাকিমকে।

একই গ্রামের বাসিন্দা মো. রুবেল হোসেন বলেন, গ্রামে মতিউর রহমানের পরিবারের প্রায় ৬০ বিঘা জমি রয়েছে। কিছু জমি নিলামের মাধ্যমে দখল নিয়েছেন তাঁর ভাই। স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, মতিউরের বাবা পৈতৃক সূত্রে  ৪০ বিঘা জমি পেয়েছিলেন। 

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মতিউর ছয় ভাইবোনের মধ্যে বড়। বাড়িতে থাকতেন শুধু ছোট ভাই নুরুল হুদা। তবে মতিউর মাঝেমধ্যে গ্রামে আসতেন। তাঁর মেজো ভাই যুবদল নেতা কাইউম হাওলাদার ঢাকার একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। 

স্থানীয়দের তথ্যমতে, মতিউর গ্রামে যা উন্নয়ন করেছেন তাঁর সবই পরিবারভিত্তিক। অজপাড়া গ্রামের বাবার ভিটেতে দোতলা ভবন করেছেন। বাড়ির সামনে রয়েছে একটি করে মসজিদ-মাদ্রাসা ও বাড়িসংলগ্ন বাহাদুরপুর রহমানিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজ। 

২০০৩ সালের নির্বাচনে আব্দুল হাকিম হাওলাদারের কাছে হেরেছিলেন বর্তমানে মুলাদী উপজেলা ১৪ দলের সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ আলী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার মতো আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না হাকিমের। কিন্তু ছেলে মতিউর অগাধ টাকা খরচ করে তাঁকে জয়ী করেন। তখনকার বিএনপি সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন মঙ্গু নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে হাকিমকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর বাড়ির অধিকাংশই ছিলেন বিএনপিপন্থী। 

বাড়ির সামনে রয়েছে মসজিদ-মাদ্রাসা। ছবি: আজকের পত্রিকামতিউরের চাচাতো ভাই মাসুম হাওলাদার বলেন, মতিউরের সঙ্গে তেমন একটা যোগাযোগ নেই। চাচাতো ভাই মাসুমসহ গ্রামে কয়েকজন বলেন, ছাগল-কাণ্ডের পর মতিউরের দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি তাঁরা জেনেছেন। গ্রামের বাড়িতে থাকেন মতিউরের ছোট ভাই নুরুল হুদা। তিনি মাঝেমধ্যে বাড়িতে থাকতেন। কিন্তু এখন লাপাত্তা হয়ে গেছেন। 

এ বিষয়ে কাজীরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মন্টু বিশ্বাস বলেন, হাকিম হাওলাদারের পরিবারের আগে তেমন সচ্ছলতা ছিল না। বড় ছেলে মতিউর চাকরি নেওয়ার পর গ্রামে তাঁরা ধনাঢ্য পরিবারে পরিণত হন। ইউনিয়নের সন্তান সরকারি বড় পদে আছেন—এ নিয়ে তাঁরা গর্ববোধ করতেন। এখন মতিউরকে নিয়ে যা শুনতে পাচ্ছেন, এতে চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি লজ্জিত।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত