Ajker Patrika

১৩ দিনে গুম কমিশনে ৪০০ অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১: ৩২
১৩ দিনে গুম কমিশনে ৪০০ অভিযোগ

গুম ব্যক্তিদের সন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিশনের কাছে ১৩ দিনে ৪০০ অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রমাণ মিলেছে ডিজিএফআই পরিচালিত আয়না ঘরের। আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী এসব তথ্য জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় বাহিনী বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগগুলো আমরা তদন্ত করছি। অভিযুক্তদের তলব করা হবে। তারা হাজির না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। 

কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী যে কোনো বাহিনী বা সংস্থার কোনো সদস্য বা সরকারের সহায়তায় বা সম্মতিতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টি কর্তৃক আয়না ঘর বা যে কোনো জ্ঞাত বা অজ্ঞাত স্থানে বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাদের শনাক্ত করা ও তথ্য সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে। 

এ পর্যন্ত কমিশনে ৪০০ জনের গুম সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ৭৫ জন সশরীরে উপস্থিত হয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। 

তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে আমরা প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) এর জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল যা আয়না ঘর নামে পরিচিত, ডিবি ও সিটিটিসি–এর ইন্টারোগেশন সেল পরিদর্শন করেছি। 

গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমিশনে গুম সংক্রান্ত অভিযোগ জমা দেওয়ার সময়সীমা ছিল। অভিযোগ জানানোর সময়সীমা ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে জানান কমিশনের চেয়ারম্যান।

সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমদ শিবলী, মো. নূর খান, ড. নাবিলা ইদ্রিস এবং মো. সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এবার মতিঝিল থেকে শাহবাগ অংশে মেট্রোরেল চলাচল শুরু

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দুর্ঘটনার পর মতিঝিল থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বন্ধ থাকা মেট্রোরেল চলাচল আবার শুরু হয়েছে। আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে এই অংশের ট্রেন চলাচল চালু হয়।

এর আগে বেলা ৩টায় উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত আংশিকভাবে ট্রেন চলছিল। অর্থাৎ বিজয় সরণি, ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার বন্ধ ছিল।

আজ রাতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, সম্মানিত যাত্রীসাধারণের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, অদ্য বেলা ৩টা থেকে উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এবং সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিট থেকে মতিঝিল থেকে শাহবাগ পর্যন্ত মেট্রোরেল সেবা চালু করা হয়েছে।

এর আগে আজ দুপুরে ফার্মগেটে মেট্রোরেলের ৪৩৩ নম্বর পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড পড়ে একজন পথচারীর মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেল চলাচল আংশিকভাবে দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছিল।

এদিকে দুর্ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অর্থ পাচারের মামলায় সম্রাটের জামিন বাতিল, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট
ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট

১৯৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় করা মামলার আসামি ক্যাসিনোকাণ্ডের আলোচিত যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের জামিন বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

আজ রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামান এই আদেশ দেন বলে নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর অতিরিক্ত পিপি মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন।

গত বৃহস্পতিবার আদালত এক আদেশে আজ সম্রাটকে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। ওই দিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল ও আসামিদের হাজিরার জন্য দিন ধার্য ছিল। সম্রাটের পক্ষে তাঁর আইনজীবী আফরোজা শাহনাজ পারভীন হাজিরা দেন।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দেওয়ার আগের আদেশ বাতিল চেয়ে আবেদন করেন।

এ বিষয়ে শুনানি চলাকালে বিচারক আসামিপক্ষের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, ‘সম্রাট কোথায় আছেন?’

জবাবে আইনজীবী জানান, তিনি কোথায় আছেন, জানা নেই।

এরপর বিচারক আজ আসামি সম্রাটের উপস্থিতিতে এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন। কিন্তু আজ হাজির না হওয়ায় সম্রাটের ব্যক্তিগত হাজিরা মওকুফ করে আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দেওয়ার আগের নির্দেশ বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে তাঁর জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেওয়া হয়।

২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিআইডির এসআই রাশেদুর রহমান বাদী হয়ে রাজধানীর রমনা মডেল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এ মামলা করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, কাকরাইলের ‘মেসার্স হিস মুভিজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে বসে মতিঝিল, ফকিরাপুল, পল্টন, কাকরাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘অবৈধ কর্মকাণ্ড’ চালাতেন সম্রাট।

এভাবে তিনি ২০১৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত বিপুল অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন। এসব অর্থের উৎস গোপন করার জন্য সহযোগী এনামুল হক আরমানের মাধ্যমে তিনি সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় অর্থ পাচার করেন। পাচার করা টাকার পরিমাণ আনুমানিক ১৯৫ কোটি টাকা।

২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ৩৫ বার সিঙ্গাপুর, তিনবার মালয়েশিয়া, দুবার দুবাই ও একবার হংকংয়ে যান সম্রাট।

আর এনামুল হক আরমান ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৮ মে পর্যন্ত সময়ে ২৩ বার ‍সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করেছেন বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এ মামলায় বেশ কিছুদিন কারাগারে থাকার পর জামিন পান সম্রাট। পরে তিনি অসুস্থ মর্মে আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দেওয়ার আবেদন করলে আদালত ব্যক্তিগত হাজিরা মওকুফ করে আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দেওয়ার অনুমতি দেন।

গত বছরের ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সম্রাটের কোনো খোঁজ নেই। তাঁর বিরুদ্ধে করা অন্য মামলায় তিনি পলাতক রয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষ এ কারণে আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দেওয়ার আগের অনুমতি বাতিল চেয়ে আবেদন করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফারইস্ট লাইফ ইনস্যুরেন্স থেকে আত্মসাৎ হওয়া সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা উদ্ধারের দাবিতে মানববন্ধন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ের সামনে আজ রোববার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ের সামনে আজ রোববার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি থেকে আত্মসাৎ হওয়া প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা উদ্ধারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকেরা।

আজ রোববার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও পরিচালক এম এ খালেকের কঠোর শাস্তি দাবি করেন। পরে তাঁরা দুদকে একটি স্মারকলিপি জমা দেন।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামরুল হাসান বলেন, ‘আমরা গ্রাহকদের টাকার ন্যায্য প্রাপ্তি চাই। যারা প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

কোম্পানির রিকভারি সেকশনের ইনচার্জ মাসুদ বলেন, নজরুল-খালেক চক্র নজিরবিহীন লুটপাট চালিয়ে ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। টাকা পাচার করে তারা বিদেশে নিয়ে গেছে। এখন আইনের ফাঁকফোকর গলে বাঁচার চেষ্টা করছে।

গ্রাহকদের অভিযোগ, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তাঁদের অবদানে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের তহবিলে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা জমা পড়ে। কিন্তু তৎকালীন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও পরিচালক এম এ খালেক ভুয়া বিনিয়োগ, কাগুজে খরচ ও কারসাজির মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন। এর বড় অংশ বিদেশে পাচার করা হয়।

বর্তমানে প্রায় ৪০ লাখ গ্রাহক তাঁদের প্রাপ্য অর্থ না পেয়ে প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে ঘুরছেন বলে দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা।

গত ৩১ জুলাই দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ আতাউল কবির বাদী হয়ে নজরুল ইসলামসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা করেন। গত বৃহস্পতিবার নজরুল ইসলামের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, আসামিরা ঢাকার তোপখানা রোডের একটি স্থাপনা ২০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় অনিয়মের মাধ্যমে কেনাবেচা করে।

এর মধ্যে ৪৫ কোটি টাকা নজরুল ইসলাম, এম এ খালেক ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেন বলে দুদকের তদন্তে উঠে আসে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড বছর পার হতেই আবার খুলে পড়ল কেন, এবার প্রাণহানির দায় কার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ১৭
আজ রোববার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ফার্মগেট স্টেশনের ঠিক পশ্চিম পাশে ৪৩৩ নম্বর পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে একজন নিহত হন। উৎসুক মানুষের ভীড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ রোববার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ফার্মগেট স্টেশনের ঠিক পশ্চিম পাশে ৪৩৩ নম্বর পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে একজন নিহত হন। উৎসুক মানুষের ভীড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

এক বছর পার হতেই বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল লাইনের একই এলাকায় বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে গেল। আগেরবার হতাহতের কোনো ঘটনা না ঘটলেও এবার একজন নিহত হয়েছেন এবং আরো দুজন আহত হয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ এই অবকাঠামোতে একই ধরনের প্রাণহানিকর ঘটনা মেট্রোরেলের মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। প্রথমবার ত্রুটি ধরার পর মেট্রোরেল কি আদৌ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিল? কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে থাকলে এই প্রাণহানির দায় কার? শুধু ক্ষতিপূরণ দিলেই দায় শেষ করবে কর্তৃপক্ষ?

আজ রোববার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ফার্মগেট স্টেশনের ঠিক পশ্চিম পাশে ৪৩৩ নম্বর পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছে। ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, গত বছর যে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল, সেটি ছিল ৪৩০ নম্বর পিলার। একই জায়গায় না হলেও কাছাকাছি এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। মেট্রোরেলে (মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত) মোট পিলার আছে ৬২০টি। প্রতিটি পিলারে চারটি করে বিয়ারিং প্যাড আছে। সে হিসেবে মেট্রোরেলে মোট বিয়ারিং প্যাড আছে ২ হাজার ৪৮০টি।

‘বিয়ারিং প্যাড’ হচ্ছে রাবার ও ইস্পাতের মিশ্রণে তৈরি আয়তাকার একধরনের প্যাড, যা ম্যাট্রেসের মতো ব্যবহৃত হয়। মেট্রোরেলের ভায়াডাক্ট বা উড়ালপথের ওপরই রেললাইনসহ যাবতীয় স্থাপনা বসানো হয়। ভায়াডাক্ট বসানো হয় স্তম্ভ বা পিলারের ওপর। এই স্তম্ভকে প্রকৌশলের ভাষায় পিয়ার বলা হয়।

কংক্রিটের তৈরি ৩০ থেকে ৪০ মিটার লম্বা একেকটি স্প্যান জোড়া দিয়ে মেট্রোরেলের উড়ালপথ তৈরি করা হয়েছে। ভায়াডাক্ট ও পিয়ার দুটিই কংক্রিটের হওয়ায় দুটি কংক্রিটের বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণ থেকে ক্ষয় ও স্থানচ্যুতি ঠেকাতে ভায়াডাক্ট ও পিলারের মাঝখানে রাবার ও স্টিলের তৈরি বিয়ারিং প্যাড দেওয়া হয়, যা স্থাপনাটির সুরক্ষায় কাজ করে।

দুই পিলারের মাঝখানের প্রতিটি স্প্যানের জন্য চারটি করে বিয়ারিং প্যাড রয়েছে; অর্থাৎ একেকটি পিলারের আছে চারটি করে রাবার প্যাড। এগুলোর স্তরে স্তরে রাবার ও বিশেষ স্টিল দিয়ে তৈরি। প্রায় ১৪০ থেকে ১৫০ কেজি ওজন এই বিয়ারিং প্যাডের। সেটি সরাসরি এক পথচারীর মাথায় পড়লে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল। তখনও প্রায় ১১ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।

বিশ্বের যে কোন দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মেট্রোরেল নির্মাণের খরচ কয়েকগুণ বেশি। এই মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের ব্যাখ্যা হিসেবে মেট্রোরেল নির্মাণে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান জাইকা ‘উচ্চ গুণগত মান’ রক্ষার কথা বলেছিল। সংস্থাটি বলেছিল, প্রাথমিক নির্মাণ ব্যয় বেশি হলেও রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে ব্যয় কম হবে। তাহলে উচ্চ গুণ–মানসম্পন্ন মেট্রোরেল থেকে দ্বিতীয়বার ‘ভবনের ইট খুলে পড়ার মতো’ বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে কেন— সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রকৌশলী কল্লোল মুস্তফা। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা হচ্ছে।

ছিটকে নিচে পড়ে যাওয়া মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাডের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আয়তাকার প্যাডের এক কোণে ভর বেশি ছিল। ছবি: আজকের পত্রিকা
ছিটকে নিচে পড়ে যাওয়া মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাডের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আয়তাকার প্যাডের এক কোণে ভর বেশি ছিল। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাপানের কোম্পানি উচ্চ গুণ–মানের দাবি করলেও এই ঘটনার পেছনে ‘নকশাগত ত্রুটিকে’ দায়ী করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক ড. হদিউজ্জামান। আগেরবার বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার কারণ সম্পর্কে তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, মেট্রোরেলের যেখান থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে গেছে সেই জায়গাটিতে বাঁক আছে। ট্রেন যখন সেই জায়গাটি অতিক্রম করে তখন লাইনের একপাশে বাড়তি চাপ তৈরি হয়। তখন বিয়ারিং প্যাডের একদিকে বাড়তি চাপ পড়লে অন্য রাবারের বিয়ারিং প্যাড ছিটকে বেরিয়ে আসে।

তিনি বলেন, ‘এসব বাঁকে বাড়তি চাপ মাথায় রেখে লাইনে বিয়ারিং প্যাড ধরে রাখার জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে হয়। কিন্ত এই মেট্রোরেলের নকশায় বাঁকের মধ্যে বাড়তি চাপের বিষয়টি বিবেচনা না করেই ভায়াডাক্ট বসানো হয়েছে। সেখানে রাবারের বিয়ারিং প্যাডকে ধরে রাখার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। ফলে বাড়তি চাপ নিতে না পেরে রাবারের প্যাড খুলে গেছে।’

মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে উত্তরা অংশের নির্মাণকাজের সঙ্গে এক পূরকৌশলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যে বিয়ারিং প্যাডটি খুলে নিচে পড়ে গেছে, তার পিলার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলের সঠিক অবস্থানে সেটা বসানো হয়নি। সুষমভাবে ভরবণ্টন মাথায় রেখে সেটা বসানো ছিল না। ছিটকে পড়ে যাওয়া বিয়ারিং প্যাডের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আয়তাকার প্যাডের এক কোণে ভর বেশি ছিল।’

আগেরবার ঘটনার পর সমাধান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপায় হিসেবে পিলার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বিয়ারিং প্যাড আটকে রাখার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই সাথে রাবারের বিয়ারিং বাদ দিয়ে টেকসই ও অধিক চাপ সহনশীল ‘পড বিয়ারিং’ ব্যবহার করার কথাও বলেছিলেন বুয়েটের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাদী। ওই সময় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষও ভবিষ্যৎ দুর্ঘটনা এড়াতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিল।

প্রকৌশলী কল্লোল মুস্তফা ফেসবুকে প্রশ্ন তুলেছেন, এক বছরের বেশি সময় পার করে সেই ফার্মগেট এলাকাতেই আবারও বিয়ারিং প্যাড কেন খুলে পড়ে গেল। বুয়েটের পরামর্শ মতো মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ কি পিলার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বিয়ারিং প্যাড আটকে রাখার কোনো ব্যবস্থা করেছিল।

ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘এ ব্যাপারে জাপানের জাইকা ও মেট্রোরেলের নকশা ও নির্মাণের সাথে যুক্ত কোম্পানিগুলোই বা কি পদক্ষেপ নিয়েছিল? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া দরকার। সদ্য নির্মিত মেট্রোরেল থেকে এক বছরের ব্যবধানে দুইবার বিয়ারিং প্যাড খুলে যাওয়ার ঘটনা মেট্রোরেলের নিরাপত্তা বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। জাপান বেশি টাকা নেয়ার যুক্তি হিসেবে উচ্চগুণগত মানের যে যুক্তি দিয়েছিলো সেই যুক্তিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।’

তাই শুধু জাপানের উপর ভরসা না করে ‘অবিলম্বে স্বাধীন কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাচাই করা প্রয়োজন’ বলে এই প্রকৌশলীর দাবি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত