Ajker Patrika

সাগরপথে ইউরোপগামীদের শীর্ষে বাংলাদেশি

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৯: ৪৮
ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

সাগরপথে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টাকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ এখন শীর্ষে রয়েছে। এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই প্রায় ৯ হাজার ৭৩৫ জন বাংলাদেশি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করেছেন। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্যমতে, গত এক যুগে এই পথে অন্তত ৭০ হাজার বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশ করেছেন।

এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বেশির ভাগ মাদারীপুর, শরীয়তপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ অন্তত ১০-১২টি জেলার বাসিন্দা। তাঁরা অধিকাংশই ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করে দালালদের ফাঁদে পড়েন। প্রতিশ্রুত চাকরির বদলে তাঁদের লিবিয়ায় আটকে নির্যাতন, জিম্মি করে অর্থ আদায় এবং নানা নিপীড়নের শিকার হতে হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালেই মানব পাচার আইনে নতুন ১ হাজার ৩৪টি মামলা হয়েছে। বর্তমানে মানব পাচারসংক্রান্ত মোট ৪ হাজার ৩৬০টি মামলা ঝুলে আছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৩৪৬টি মামলা তদন্তাধীন এবং ৩ হাজার ১৪টি বিচারাধীন। অনেক মামলায় বিচার সম্পন্ন হলেও অপরাধীরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় আগামীকাল (৩০ জুলাই) পালিত হবে আন্তর্জাতিক মানব পাচারবিরোধী দিবস। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ ৩০ জুলাইকে মানব পাচারবিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এ বছরের প্রতিপাদ্য— ‘সংঘবদ্ধ অপরাধ মানব পাচার, বন্ধ হোক শোষণের অনাচার।’

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। বাংলাদেশ এখন সেন্ট্রাল মেডিটেরিয়ান রুটে ইউরোপগামী অভিবাসীদের শীর্ষে। লিবিয়ায় আটক বাংলাদেশিদের ক্যাম্পে রেখে নির্যাতন, টাকা আদায়, এমনকি মৃত্যুও হচ্ছে। দালালেরা এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সে তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো—মামলা হলেও বিচার হচ্ছে না।’

ফ্রন্টেক্সের তথ্যমতে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই রুটে অন্তত ৯২ হাজার ৪২৭ জন বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে লিবিয়ায় ২৩ জন বাংলাদেশির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

ব্র্যাকের গবেষণা অনুযায়ী, এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ৬০ শতাংশ ভালো চাকরির প্রলোভনে পড়ে লিবিয়ায় পাড়ি জমান। কিন্তু ৮৯ শতাংশ কোনো কাজ পান না, বরং ক্যাম্পে বন্দী হয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে ৭৯ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার, ৫৪ শতাংশ তিনবেলা খাবার পাননি এবং ২২ শতাংশ দিনে মাত্র একবেলা খাবার পেয়েছেন।

ঢাকা থেকে দুবাই-মিসর, ইস্তাম্বুল-কাতার বা সিরিয়া হয়ে লিবিয়ায় যাওয়ার পথ এখন পাচারকারীদের ব্যবহৃত প্রধান রুট। পাশাপাশি মানব পাচারের নতুন রুট ও কৌশলও বাড়ছে। বর্তমানে পাচারকারীরা হজ ভিসা, ভিজিট ভিসা, এমনকি কনফারেন্স ইনভাইটেশন দেখিয়ে বিদেশে পাঠানোর নামে পাচার করছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুবাই, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, সৌদি আরব, নেপাল, কম্বোডিয়া, সার্বিয়া, ভিয়েতনাম, আলজেরিয়া, মৌরিতানিয়া, তিউনিসিয়ার মতো দেশগুলো নতুন গন্তব্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

দুবাইতে পার্লার বা রেস্টুরেন্টে চাকরির কথা বলে নারীদের ডান্সক্লাবে ও যৌন পেশায় বাধ্য করা হচ্ছে। একইভাবে মালয়েশিয়ায় বিউটি পার্লারে পাঠানোর নামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। গত বছর আইজেএমের সহায়তায় ছয় নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ছাড়া মিয়ানমারে ‘স্ক্যাম সেন্টারে’ বাংলাদেশিদের অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক সাইবার অপরাধে বাধ্য করা হয়েছে। এমন ১৮ জন বাংলাদেশিকে ব্র্যাক উদ্ধার করেছে। অন্যদিকে, অন-অ্যারাইভাল ভিসা সহজলভ্য হওয়ায় পাচারকারীরা এখন বাংলাদেশিদের নেপালে নিয়ে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সমুদ্রপথে সোয়া লাখ মানুষ পাচারের শিকার হয়, যার বেশির ভাগই রোহিঙ্গা। মালয়েশিয়া সীমান্তে একাধিক গণকবরের সন্ধান মেলে তখন। বর্তমানে আবার বিয়ে ও চাকরির প্রলোভনে রোহিঙ্গাদের পাচার শুরু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত