Ajker Patrika

জীবন রক্ষাকারী ওষুধের হঠাৎ দাম বৃদ্ধি, দুর্মূল্যের বাজারে বাড়তি খরচের বোঝা

মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৬: ৫১
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রতি মাসেই মায়ের জন্য উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগের ওষুধ কেনেন সাভারের বাসিন্দা মতিউর রহমান। সঙ্গে কেনেন কিছু ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনও। মায়ের ওষুধের পেছনে তিন মাস আগেই তাঁর মাসিক খরচ ছিল ৬ হাজার টাকা। ওষুধের দাম বাড়ার কারণে এখন সেই খরচ বেড়ে ৯ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। শুধু মতিউর নন, তাঁর মতো অসংখ্য মানুষের মাসের খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে ওষুধের দাম বাড়ায়, যদিও বাড়েনি আয়।

ওষুধের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর থেকে হঠাৎ করেই প্রায় অর্ধশত জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি। দাম বাড়ার তালিকায় শীর্ষে আছে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, স্নায়বিক সমস্যা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যাসিডিটি ও ব্যথানাশক ওষুধ। সরকারের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরও ভোক্তাদের বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা অনুযায়ী দাম বাড়ায় অনুমোদন দিচ্ছে।

সম্প্রতি দাম বেড়েছে এমন একটি ওষুধের নাম টোরাক্স। কিটোরোলাক ট্রোমেথামিন গোত্রের (জেনেরিক) ব্যথানাশক এই ওষুধটি উৎপাদন করে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। একটি প্যাকেটে ১০ মিলিগ্রামের ৫০টি ট্যাবলেট বাজারজাত করা হয়। গত আগস্টে উৎপাদন করা ওষুধটির এক প্যাকেটের দাম ছিল ৬০০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে গত সেপ্টেম্বরে উৎপাদিত টোরাক্স বাজারজাত হয়েছে ১ হাজার টাকায়। প্রতিটি ট্যাবলেটের জন্য ৮ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে ক্রেতাকে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, কিছু ওষুধের দাম বেড়েছে। তবে এই বাড়ার হার কোনোক্রমেই ১০ শতাংশের বেশি নয়।

তবে বাজার ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ওষুধের দোকানি ও বিপণনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দু-একটি ওষুধ ছাড়া সব ওষুধের দামই বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ। তাঁরা জানান, এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালসের টেট্রাসল ২৫ শতাংশ সলিউশনের (৩০ এমএল) বোতলের দাম সম্প্রতি ৬৮ টাকা থেকে বেড়ে ১২৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সে হিসাবে চুলকানির ওষুধটির দাম ৮৪ শতাংশ বেড়েছে।

দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনক ফুসফুসের রোগ বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি)-এর জন্য ডক্সোফাইলিন গোত্রের ওষুধ ‘ডক্সোভেন’ ট্যাবলেট উৎপাদন করে বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস। ২০০ মিলিগ্রামের এক প্যাকেট ডক্সোভেন ট্যাবলেটের দাম আগে ছিল ৬৫০ টাকা, এখন সেটি ৮০০ টাকা করা হয়েছে। শতাংশের হিসাবে দাম বেড়েছে ২৩ শতাংশ।

শ্বাসকষ্টের জন্য ব্যবহৃত উইন্ডেল প্লাস রেস্পিরেটর সলিউশনের ৩ এমএল বোতলের দাম ২০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫ টাকা হয়েছে। ইনসেপ্টার ফার্মার এই ওষুধের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ। একই প্রতিষ্ঠানের অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের বুটিকট (২ এমএল) নেবুলাইজার সাসপেনশন ওষুধের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ।

রাজধানীর মিরপুরের একটি ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী আজকের পত্রিকাকে জানান, বিভিন্ন প্রকার ওষুধের দাম বেড়েছে। গত তিন বছরে বিভিন্ন দফায় সব প্রতিষ্ঠানই ওষুধের দাম বাড়িয়েছে। কোনো কোনো ওষুধের ক্ষেত্রে একাধিক বার দাম বাড়ানো হয়েছে। যাঁরা নিয়মিত ওষুধ কেনেন, তাঁরা মাসের ব্যবধানে এসে দেখছেন, ৫০ টাকার ওষুধ ১০০ টাকা হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, গত তিন মাসে যেসব ওষুধের দাম বাড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তার সংখ্যা ১০টির বেশি হবে না। এখনো অন্তত ২০টি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অর্ধশত ওষুধের দাম বাড়ার জন্য কাগজ জমা দিয়ে রেখেছে। তবে এই মুহূর্তে আর দাম না বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আসরাফ হোসেন বলেন, ‘একই জেনেরিকের ওষুধ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করে। এসব ওষুধের দামের পার্থক্য ছিল, তা সমন্বয় করা হয়েছে। এখনো বিভিন্ন ওষুধের দাম বাড়ার জন্য ফার্মাসিউটিক্যালসগুলো আবেদন করেছে। তবে আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, এখন আর কোনো ওষুধের দাম বাড়ানো হবে না। আর ১১৭টি ওষুধের দাম আমরা নির্ধারণ করি। বাকি ওষুধের ক্ষেত্রে কেউ চাইলেই দাম বাড়াতে পারে এমনটি নয়। কেননা উৎপাদন খরচ থেকে শুরু করে সকল কাগজপত্র আমাদের দেখাতে হয়। দাম বাড়াতে এলে তা যাচাই-বাছাই করার সুযোগ আমাদের রয়েছে।’

ডায়াবেটিক রোগীদের ইনসুলিন হিউমুলিন এন ইনজেকশন কুইকপেন (৩ মিলি) তৈরি করে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সিজ (বিডি) লিমিটেড। এই ইনজেকশন এক প্যাকের (৫টি) দাম ৩ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ৬০০ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া ইনজেকশন হিউমুলিন আর কুইকপেনের (৩ মিলি ) দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৮৯০ টাকা করা হয়েছে। অপসোনিন ফার্মার তৈরি অ্যাসিডিটির ওষুধ ফিনিক্স (২০ এমজি)-এর দাম ১৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

একইভাবে বেড়েছে উচ্চ রক্তচাপের কাভারসিল ও বাইজোরানের দাম। ঠান্ডা-জ্বরের ওষুধের দামও সমানুপাতিক হারে বেড়েছে। ২০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে এসব ওষুধের। বিভিন্ন গোত্রের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের ক্ষেত্রেও দাম বাড়ানো হয়েছে। কোনোটির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ আবার কোনোটির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়।

ওষুধের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কয়েকটি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অন্তত চারজন দাবি করেন, ওষুধের কাঁচামাল অধিকাংশই চীন ও ভারত থেকে আমদানি করা হয়। কিছু কাঁচামাল ইতালি, পোল্যান্ডসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়। যে ফর্ম বা সংস্করণেই আসুক না কেন, সব কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে কাস্টমস শুল্ক দিতে হয়। হাতে গোনা কয়েকটি ওষুধের কাঁচামালের শুল্কছাড়ের সুবিধা রয়েছে। উৎপাদন খরচের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়, যা ১০ থেকে ২৯ শতাংশের বেশি নয় বলে দাবি তাদের।

এ বিষয়ে বীকন ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপক (পণ্য ব্যবস্থাপনা) মাসুদ বিল্লাহ বলেন, গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। এতে উৎপাদন খরচ ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। ওষুধের প্রায় শতভাগ কাঁচামাল আদমানিনির্ভর। উৎপাদনের পর ওষুধের দোকানকেও লাভের সুযোগ দিতে হয়। এমন পর্যায়ে গেছে, তাতে কোনো ওষুধে লাভ খরচের মার্জিনে গিয়ে দাঁড়ায়। মিনিমাম প্রফিট না থাকলে উৎপাদনও বন্ধ করে দিতে হয়।

ওষুধের দাম বাড়ানো ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছেমতো করতে পারে না বলে দাবি করেন বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এম শফিউজ্জামান। তিনি বলেন, ডলারের দাম, কাঁচামাল আমদানি খরচ, উৎপাদন খরচের সঙ্গে সমন্বয় করতে হলে দাম সামান্য বাড়াতে হয়। যেসব ওষুধের দাম ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ বাড়ার কথা বলেছেন, তা হয়তো ১০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে বাড়েনি। এখন উপায় না থাকায় বাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। দাম বাড়াতে বললেও যৌক্তিক কারণ না দেখাতে পারলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর অনুমোদন দেয় না।

তবে স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, যে পণ্যের চাহিদা বেশি, তার দাম কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু যেসব ওষুধ বেশি বিক্রি হয় বা চাহিদা বেশি রয়েছে, তার দাম কমেনি। উৎপাদন খরচ বাড়লেও তা নিশ্চয়ই ৫০ শতাংশ বাড়েনি। কিন্তু ওষুধের দাম তার চেয়েও বেশি বাড়ানো হচ্ছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ও স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে মানুষের আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার (নিজ পকেট থেকে বাড়তি ব্যয়) বেড়েছে। এর বড় অংশ ব্যয় হচ্ছে ওষুধে। বাংলাদেশে ৭০ শতাংশের ওপর আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার। এই ব্যয় কমাতে হলে ওষুধের ব্যয় কমাতে হবে। উৎপাদন খরচ বাড়তেই পারে, তবে তাতে দাম কত বাড়বে? মেডিসিন মানুষকে কিনতেই হয়। আয় বাড়েনি তবে ওষুধের ব্যয় বাড়লে অন্যান্য খাবারের খরচ কমিয়ে দিতে মানুষ বাধ্য হয়। এতে দেখা যায় মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে এবং অসুস্থই থেকে যায়।’

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশীয় চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। আর ইউরোপ ও আমেরিকার অঞ্চলসহ সারা বিশ্বের ১৫৭টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত ওষুধ। সর্বশেষ হিসাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদিত রপ্তানি আয় ৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি। দেশ ২২৯টি চালু অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানসহ ইউনানি, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথিক ও হারবাল ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৭৩৩টি। অ্যালোপ্যাথিক প্রায় ৩ হাজার জেনেরিকের ৩৭ হাজার ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে দেশে।

ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকারের কার্যকরী ভূমিকা নেই বলে জানিয়েছেন ওষুধ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, দেশে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের যে তালিকায় ২১৯টি ওষুধ রয়েছে, এর মধ্যে ১১৭টি ওষুধের দাম ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর নির্ধারণ করে দেয়। ১১৭টি ওষুধের মধ্যে ৫৩টি ওষুধের দাম দুই বছর আগে বাড়িয়েছিল সরকার। বাকি অত্যাবশ্যকীয় এবং সব ধরনের ওষুধের ক্ষেত্রেই উৎপাদক প্রতিষ্ঠান যে দামে বাজারজাত করতে চায়, তাতে অনুমোদন দেয় অধিদপ্তর। এদিকে অত্যাবশ্যকীয় তালিকার সব ওষুধ উৎপাদনের জন্য দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে ওসব ওষুধে লাভের চেয়ে উৎপাদন খরচ বেশি অজুহাত দেখিয়ে বেশির ভাগই প্রস্তুত করে না প্রতিষ্ঠানগুলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা দেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার অন্যতম ভিত্তি: আনসার মহাপরিচালক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আনসার মহাপরিচালক। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আনসার মহাপরিচালক। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেছেন, সঠিক পরিচর্যা, মানসম্মত শিক্ষা এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে পারলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হয়ে জাতির অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তিনি আরও বলেন, এই শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার অন্যতম ভিত্তি।

আনসার মহাপরিচালক ৫ ডিসেম্বর রাজধানীর উত্তরার জসীমউদ্‌দীন অ্যাভিনিউয়ের সুপরিচিত ‘প্যালেট গ্যালারি’তে ঢাকা সেনানিবাসের প্রয়াস স্কুলের আর্ট প্রশিক্ষক আফিফ আলভির একক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা এই নবীন শিল্পীর প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে মানবিক সংবেদন, প্রকৃতির সূক্ষ্ম সৌন্দর্য এবং সমকালীন জীবনের বহুরূপী অভিব্যক্তি। আফিফ আলভির শিল্পকর্মে সাহসী রঙের ব্যবহার, দৃঢ় ব্রাশস্ট্রোক এবং আবেগঘন উপস্থাপনা দর্শকদের গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।

চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আনসার মহাপরিচালক। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আনসার মহাপরিচালক। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহাপরিচালক বলেন, ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার অন্যতম ভিত্তি। সঠিক পরিচর্যা, মানসম্মত শিক্ষা ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে পারলে তারাই দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হয়ে জাতির অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’ তিনি আরও বলেন, সমাজের সম্মিলিত সহযোগিতাই পারে তাদের অন্তর্নিহিত শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে।

আনসার মহাপরিচালক এ সময় আনসার বাহিনীর ‘সঞ্জীবন প্রকল্প’-এর কথা উল্লেখ করে বলেন, এ প্রকল্প গ্রামীণ ও প্রান্তিক এলাকার প্রতিভা বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সমান সুযোগ সৃষ্টিতেও প্রকল্পটি কার্যকর অবদান রাখছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দ্য সিটি ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মাসরুর আরেফীন, প্রয়াস স্কুলের অধ্যক্ষ কর্নেল মো. আলতাফ আলী এবং বেক্সার সভাপতি মো. গোলাম রব্বানী। তাঁদের উপস্থিতিতে প্রদর্শনী আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

এই প্রদর্শনী শুধু আফিফ আলভির শিল্পযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ নয়, বরং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণ শিল্পীদের সৃজনশীল বিকাশে অনুপ্রেরণার নতুন দৃষ্টান্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন ১ লাখ ৯৩ হাজার ছাড়াল, চলবে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত

বাসস, ঢাকা 
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ০৬
প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন ১ লাখ ৯৩ হাজার ছাড়াল, চলবে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে ভোট দেওয়ার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৪ জন প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন।

আজ শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পোস্টাল ভোটিং আপডেট থেকে এই তথ্য জানা যায়। আউট অব কান্ট্রি ভোটিং সিস্টেম অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন (ওসিভি-এসডিআই) প্রকল্পের টিম লিডার সালীম আহমদ খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে মোট ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৪ জন প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯০৯ এবং নারীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৯৬৫ জন।

দেশভিত্তিক নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সৌদি আরবের প্রবাসী ভোটাররা শীর্ষে রয়েছেন; যেখানে ৩৮ হাজার ২৬৯ জন নিবন্ধন করেছেন। এরপরই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে ১৯ হাজার ২৭১ জন প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন করেছেন।

নির্বাচন কমিশন প্রবাসীদের সুবিধার্থে নিবন্ধনের সময়সীমা আরও বাড়িয়েছে। ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, নিবন্ধনের সময়সীমা ২৫ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর আগে এই সময়সীমা ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল। বর্তমানে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকেই এই অ্যাপ ডাউনলোড করে যে কেউ ভোটার নিবন্ধন করতে পারছেন।

নির্বাচন কমিশন পোস্টাল ব্যালট পেপার নির্বিঘ্নে ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর জন্য সঠিক ঠিকানা প্রদানের ওপর জোর দিয়েছে। ইসি থেকে পাঠানো এক বার্তায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনুরোধ জানানো হয়েছে:

নিবন্ধনের সময় আপনার অবস্থানকালীন দেশের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী সঠিক ঠিকানা দিন। প্রয়োজনে কর্মস্থল অথবা পরিচিতজনের ঠিকানা ব্যবহার করুন।

নিবন্ধনের সময় ভুল ঠিকানা দিয়ে থাকলে, ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে মোবাইল অ্যাপের এডিট মেনু ব্যবহার করে তা সংশোধন করুন।

ইসি সতর্ক করেছে যে সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা প্রদান ব্যতিরেকে পোস্টাল ব্যালট পেপার ভোটারদের নিকট পাঠানো সম্ভব হবে না।

সেই সঙ্গে প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধন ও ভোট দেওয়ার সময় ইন্টারনেট ভিপিএন ব্যবহার না করার ব্যাপারে সতর্ক করেছে।

অভ্যন্তরীণ পোস্টাল ভোটিং (আইসিপিভি) চালু হবে

ইসি সচিব আখতার আহমেদ আরও জানান, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া সরকারি কর্মকর্তা, আইনি হেফাজতে থাকা ভোটার এবং নিজ ভোটার এলাকার বাইরে অবস্থানরত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ইন-কান্ট্রি পোস্টাল ভোটিং (আইসিপিভি) প্রক্রিয়াও চালু করা হবে।

তিনি জানান, আইসিপিভির জন্য তফসিল ঘোষণার পর থেকে ১৫ দিনের মেয়াদে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া চালু করা হবে।

উল্লেখ্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনার গত ১৮ নভেম্বর ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের উদ্বোধন করেন এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৪৮টি নির্দিষ্ট দেশে ভোটার নিবন্ধনের সময়সূচি ঘোষণা করেছিলেন। পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটদানের জন্য প্রবাসী ভোটারকে অবশ্যই যেখান থেকে ভোট দেবেন, সেই দেশের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রোহিঙ্গাদের জন্য ইউক্রেন থেকে এল ৩০০০ টন সূর্যমুখী তেল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের সড়ক অবরোধ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের সড়ক অবরোধ। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তার জন্য ‘গ্রেইন ফ্রম ইউক্রেন’ উদ্যোগের অধীনে ৩ হাজার টন সূর্যমুখী তেল আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। গত ৩ ডিসেম্বর কক্সবাজারের মধুরছড়ায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)-এর লজিস্টিকস হাবে এই হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, সুইডেন এবং ইউক্রেন সরকারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।

ইউক্রেন সরকারের ২০২২ সালে চালু করা ‘গ্রেইন ফ্রম ইউক্রেন’ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক মানবিক সংকটে ইউক্রেনীয় খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করা। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য দেওয়া এই সূর্যমুখী তেল ইউক্রেনেই উৎপাদিত হয়েছে। এই তেলের সংগ্রহ ও পরিবহন বাবদ মোট ৭ মিলিয়ন (৭০ লাখ) মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে, যা সম্পূর্ণরূপে সুইডেন সরকার বহন করেছে।

অনুষ্ঠানের পর প্রতিনিধিদল খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সেখানে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে ডব্লিউএফপি-এর ই-ভাউচার পদ্ধতির মাধ্যমে সূর্যমুখী তেল ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এই সিস্টেমে প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারকে মাসিক মাথাপিছু ১২ মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা দিয়ে তাঁরা প্রয়োজনীয় খাদ্য, তাজা সবজি, মাছ ও মুরগি কিনতে পারেন। স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কেনার এই ব্যবস্থাটি স্থানীয় অর্থনীতিকেও সমর্থন জোগায়।

অনুষ্ঠানে ইউক্রেন, সুইডেন এবং ডব্লিউএফপি-এর প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক মহলের মনোযোগ বজায় রাখার এবং সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। বর্তমানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ডব্লিউএফপি-এর কার্যক্রমে ১৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিলের ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতির কারণে ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসেই খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শত্রুমুক্ত তিনটি জেলা

নতুন দেশের জন্য এল প্রথম স্বীকৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা, যশোর, কুড়িগ্রাম ও ফেনী প্রতিনিধি
নতুন দেশের জন্য এল প্রথম স্বীকৃতি

স্বাধীনতা ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া বাংলাদেশকে একই দিন স্বীকৃতি দিয়েছিল ভুটান ও ভারত। দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর। যুদ্ধের শেষ দিকে বাংলাদেশের বিজয় ক্রমেই নিশ্চিত হয়ে আসায় এই স্বীকৃতি এসেছিল। আবার একই দিন শত্রুসেনামুক্ত হয়েছিল দেশের সীমান্তবর্তী দুই জেলা যশোর ও ফেনী।

বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের কাছে ভুটানের তৎকালীন রাজা স্বীকৃতি দিয়ে পাঠিয়েছিলেন এক ঐতিহাসিক বার্তা।

ভুটান ও ভারতের মধ্যে কোন দেশ প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল, এ নিয়ে কখনো কখনো মিডিয়ার খবরের সূত্রে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। ভারত ও ভুটান যথাক্রমে ৬ ও ৭ ডিসেম্বর স্বীকৃতি দিয়েছে—মিডিয়ার একাংশের এমন খবরের পর একবার বিতর্ক ছড়ায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই ঐতিহাসিক সত্য নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই...। ১৯৭১ সালে ভুটান প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ৬ ডিসেম্বর একটি ওয়্যারলেস বার্তার মাধ্যমে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।...আমাদের ইতিহাসে রয়েছে যে এমনকি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের আগেই ভুটান প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারত ও ভুটান উভয়ই ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু প্রথমে দিয়েছে ভুটান।’

অর্থাৎ দুই প্রতিবেশীর স্বীকৃতি এসেছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে।

সচিব জানিয়েছিলেন, স্বীকৃতির বার্তায় ভুটানের তখনকার রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুক বাংলাদেশের জনগণের সাফল্য কামনা করেন এবং স্বাধীনতা-যুদ্ধের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করেন।’

ভুটান সরকার ২০১৪ সালে বাংলাদেশের কাছে সেই ওয়্যারলেস বার্তার একটি টেক্সট হস্তান্তর করেছিল।

এই দিনেই শত্রুমুক্ত যশোর ও ফেনী

একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ফেনী ও যশোরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান।

৬ তারিখ দুপুরের পরপরই যশোর সেনানিবাস ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনারা। শত্রুমুক্ত হয় যশোর জেলা। শহরে ওড়ে বিজয়ী বাংলাদেশের পতাকাখচিত প্রথম পতাকা।

যশোরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম জানান, ১৯৭১ সালের ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এ সময় সহায়তাকারী ভারতের মিত্রবাহিনীও সীমান্ত এলাকা থেকে যশোর সেনানিবাসসহ পাকিস্তানি সেনা স্থাপনায় বিমান হামলা ও গোলা নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে পর্যুদস্ত হয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ৫ ডিসেম্বর থেকে পালানো শুরু করে। যশোর সেনানিবাস ছেড়ে তারা খুলনার গিলাতলা সেনানিবাসের দিকে পালিয়ে যেতে থাকে। এ সময় ৫ ও ৬ ডিসেম্বর শহরতলির রাজারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের প্রচণ্ড লড়াই হয়। ৬ ডিসেম্বর বিকেলে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী সেনানিবাসে প্রবেশ করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বসিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ঢল নামে শহরে। মুক্তির আনন্দে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে ফেটে পড়ে গোটা জেলার মানুষ।

ঐতিহাসিক যশোর মুক্ত দিবস উপলক্ষে যশোর জেলা প্রশাসন আজ শনিবার বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। সকাল ১০টায় ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন জেলা প্রশাসক মো. আশেক হাসান।

৬ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামও হানাদার মুক্ত হয়। এই দিনে বীর প্রতীক আব্দুল হাই সরকারের নেতৃত্বে ৩৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল বিকেল ৪টায় কুড়িগ্রাম শহরে প্রথম প্রবেশ করে। এরপর তারা নতুন শহরের পানির ট্যাংকের ওপরে (বর্তমান সদর থানার উত্তরে অবস্থিত) স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে চারদিকে ছড়িয়ে দেয় বিজয়বার্তা। বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাগত জানাতে হাজারো মুক্তিকামী মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।

মুক্তিযুদ্ধে অর্ধশতাধিক অভিযানে অংশ নেওয়া আব্দুল হাই সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি। আমরা যুদ্ধ করেছি জাতির মুক্তির আশায়; প্রজাতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদের জন্য।...মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নেই। সবাই শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে।’

দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কুড়িগ্রাম জেলা ও সদর উপজেলা ইউনিট কমান্ড, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, প্রীতিলতা ব্রিগেডসহ কয়েকটি সংগঠন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আজ জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণে বিজয় র‌্যালি করে শহরের কলেজ মোড়ের বিজয়স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছিল আরেক জেলা ফেনী। পাকিস্তানি সেনারা প্রথম আত্মসমর্পণ করেছিল সীমান্তের বিলোনিয়ায়।

৬ ডিসেম্বর ভোর থেকে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের নেতৃত্বে ফেনী শহরে প্রবেশ করতে থাকেন। পরে শহরের রাজাঝির দীঘিরপাড়ে ডাকবাংলোর সামনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে কেঁপে ওঠে শহর। পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী আর তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস সদস্যরা ফেনীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে যান।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, এখনো তরুণ প্রজন্ম চাইলে এ দেশকে মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এজন্য সবার আগে দেশপ্রেমকে প্রাধান্য দিতে হবে।’

ফেনীমুক্ত দিবস সম্পর্কে বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন ভিপি বলেন, ‘ডিসেম্বরের শুরু থেকে গেরিলা যুদ্ধ করতে করতে আমরা পাঁচগাছিয়া এলাকার কাছাকাছি চলে আসি। ৫ ডিসেম্বর আমরা ঠিক ফেনীর কাছাকাছি যখন আসি, তখন পাকিস্তানি সেনারা রণেভঙ্গ দিয়ে শেষ রাতের দিকে শুভপুর ও বারইয়ারহাট হয়ে চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে যায়।

ঐতিহাসিক এদিনটি উপলক্ষে আজ ফেনীতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ এতে অংশ নিয়ে স্মরণ করবেন বিজয়ের সেই স্মরণীয় মুহূর্তকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত