Ajker Patrika

মাদক ধরতে গিয়ে টাকা লুট, ৭ কর্মকর্তা শাস্তির মুখে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৫, ২০: ১৭
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে মোট ৩১ লাখ টাকা ও মালামাল লুটের অভিযোগে শাস্তির মুখে পড়েছেন ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকসহ (এডি) মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাতজন স্টাফ। তাঁদের মধ্যে এডিসহ চারজনকে প্রত্যাহার এবং অন্য তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার রাতে অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. মাসুদ হোসেনের সই করা প্রজ্ঞাপন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রশাসনিক কারণে ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মারফিয়া আফরোজ, উপপরিদর্শক জান্নাতুল ফেরদৌস, সহকারী উপপরিদর্শক আতাউল হক ও সিপাহী সোহেল রানাকে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হলো। তাঁরা ৯ জুলাই অপরাহ্নে অবমুক্ত হবেন এবং ১০ জুলাই পূর্বাহ্নে প্রধান কার্যালয়ে যোগ দেবেন। আদেশ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে কার্যকর করা হবে।

অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, সহকারী পরিচালক মারফিয়া আফরোজের নেতৃত্বে টঙ্গীর দক্ষিণপাড়ায় এক মাদক কারবারির বাড়িতে অভিযানে গিয়ে জব্দ করা মাদক ও টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ঘটনার পর জানাজানি হলে এডি মারফিয়া আত্মগোপনে চলে যান। তাঁর অফিস কক্ষও বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

পরে অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস) অতিরিক্ত ডিআইজি বশির আহমদ, অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) বদরুদ্দিন, বিভাগীয় পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অফিস কক্ষ খুলে ইনভেন্টরি করা হয়। পরে তাঁর কক্ষ থেকে অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, ২৩ লাখ টাকার চেক, নগদ ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং ৫ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত ২২ জুন সন্ধ্যায় মারফিয়া আফরোজের নেতৃত্বে টঙ্গী থানার দক্ষিণপাড়ায় একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ১৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার, নগদ টাকা, চেক এবং ভাড়াটিয়া রমিজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তবে মামলার এজাহারে উদ্ধার করা অনেক মালামালের উল্লেখ না থাকায় অভিযানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আসামিপক্ষ অভিযোগ করে, অভিযানে জব্দ করা মোটা অঙ্কের টাকা ও মূল্যবান মালামাল আত্মসাৎ করেন চার কর্মকর্তা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ও অভিযানের অন্য সদস্যদের পক্ষ থেকে মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ জমা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত ও কক্ষ তল্লাশির নির্দেশ দেয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

এদিকে দুই দিন আগে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে সাড়ে ৮ লাখ টাকা লুটের অভিযোগে তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে অধিদপ্তর। ছালেহা বেগম নামের এক ভুক্তভোগীর বাড়ি থেকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ধারা ১২(১) অনুযায়ী এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ছালেহা বেগম অভিযোগে বলেন, ১৮ জুন সকালে প্রথম দফা অভিযান শেষে ১০ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায় মাদকের অভিযান দলটি। পরে আবার ফিরে এসে ‘নাটকীয় অভিযানে’ আলমারি থেকে ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ও ছেলের ঘর থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এ সময় তাঁকে ও তাঁর ছেলের স্ত্রীকে ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হয়।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোস্তাক আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখা হয়। কোনো ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠান নেবে না।

‘অভিযোগ ওঠা সকল ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন মহাপরিচালক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত