Ajker Patrika

বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ পরিবারে বাল্যবিয়ের চর্চা: গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৬: ২৬
বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ পরিবারে বাল্যবিয়ের চর্চা: গবেষণা

বাংলাদেশের ৬০ শতাংশেরও বেশি পরিবারে বাল্যবিয়ের চর্চা রয়েছে। অর্থাৎ গত ৫ বছরে এসব পরিবারে যে সব মেয়ের বিয়ে হয়েছে অথবা পুত্রবধূ হিসেবে যারা এসেছে তাদের বয়স বিয়ের সময় ১৮ বছরের কম ছিল। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের ‘বর্ন টু বি অ্যা ব্রাইড, চাইল্ড ম্যারেজ: ট্রেন্ডস অ্যান্ড কজেস’ শীর্ষক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচির (সেলপ) প্রধান শাশ্বতী বিপ্লব। তিনি জানান, বাল্যবিয়ের প্রবণতা ও কারণ জানতে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচি দেশের ২৭টি জেলার প্রায় ৫০ হাজার খানায় এই গবেষণা জরিপ চালিয়েছে। জরিপের তথ্য বলছে, এ সকল জেলায় ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ মেয়ে ১৮ বছরের আগেই বাল্যবিয়ের শিকার হয়। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পিরোজপুর, সেখানে বাল্যবিয়ের হার ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ। বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে কম নেত্রকোনায় ২৪ দশমিক ১ শতাংশ।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের ৬ দশমিক ৯ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে। পিরোজপুরের পর বাল্যবিয়ের শীর্ষে থাকা জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ (৬৫ দশমিক ২ শতাংশ), নওগাঁ (৬৫ দশমিক), ঠাকুরগাঁও (৬২ দশমিক ৫ শতাংশ) এবং জয়পুরহাট (৬১ দশমিক ৪ শতাংশ)।

৫৬ শতাংশ বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের মাধ্যমিক পাশ করার আগেই বিয়ে হয়েছে। যোগ্য পাত্র পাওয়ার কারণে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন ৪৪ শতাংশ অভিভাবক। বাল্যবিয়ের কারণ হিসাবে বাকিদের মধ্যে ১৮ শতাংশ দারিদ্র্য, যৌতুক কম বা না চাওয়ার কারণে ১০ শতাংশ, সামাজিক নিরাপত্তার অভাবের কথা বলছেন ৭ শতাংশ, পড়ালেখায় ভালো না হওয়ার কারণে ৬ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণের কথা বলেছেন ১৫ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসন বেগম মেহের আফরোজ। তিনি বলেন, ‘বাল্যবিয়ে নিয়ে যেসব গবেষণা হয় সব একই ধরনের স্টাডি দেখা যায়। যেসব ছেলেরা অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে করছে তাদের নিয়ে কোনো গবেষণা হচ্ছে না। সেসব ছেলের ছবি তুলে পত্রিকায় প্রকাশ করেন। গবেষণাকে আধুনিক করেন। বিদেশ থেকে ছেলেরা এসেই খোঁজে অল্পবয়সী মেয়ে কোন বাসায় আছে। অল্প বয়সী কোনো মেয়েকে বিয়ে করলে প্রথমে ভালো লাগবে কিন্তু কিছুদিন পর বউকে পছন্দ হবে না। কারণ অনেক দিক দিয়ে অনভিজ্ঞ থাকবে। শিক্ষায়, চিন্তায় ওর বয়স থাকবে ছোট। নাকি তখন একটা বাদ দিয়ে আরেকটা বিয়ে করবেন? এই অভ্যাসও অনেকের আছে।’

মেহের আফরোজ আরও বলেন, ‘স্কুলে বিনা মূল্যের বই দেওয়া হচ্ছে সেকারনেই দেখেন মেয়েদের সংখ্যা বেশি স্কুল পর্যন্ত। তাদের উচ্চশিক্ষায় বাবা মা আর পাঠান না।’

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (যুগ্ম সচিব) সালেহা বিনতে সিরাজ বলেন, ‘বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য সরকার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে যেন বাল্যবিয়ে না হয়। কিশোর কিশোরী ক্লাব আছে আমাদের। আরও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তবুও বাল্যবিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী, জাতিসংঘ, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচি একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যার অংশ হিসাবে বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে থাকা কিশোরীদের নিয়ে গ্রামভিত্তিক ‘স্বপ্নসারথি’ দল গঠন করেছে ব্র্যাকের সেলপ প্রোগ্রাম। কিশোর-কিশোরীদের অভিভাবকদেরও এই প্রোগ্রামের আওতায় আনা হচ্ছে। তাদের বাল্যবিয়ের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে স্বপ্নসারথি প্রোগ্রাম ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে বক্তারা আশা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত