
‘উপকূলের ইলিশ ও জেলে’বিষয়ক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অগণিত দুই কেজির ইলিশ ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিলেন এক সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। তিনি নিজে সাম্প্রতিক সময়ে তিন কেজির ইলিশও খেয়েছেন বলেও জানান। যদিও সংলাপে উপস্থিত জেলেরা জানান, তাঁরা মাছ পাচ্ছেন না। ধারদেনায় জর্জরিত সংসার। সেই এমপিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের প্রশ্ন, ‘আপনি বাক্সভরে মানুষকে ইলিশ দিতে পারবেন, আরেকটা মানুষ কেন মাছ-ভাতের জন্য কাঁদবে?’
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই সংলাপের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ।
দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় জেলা থেকে সংলাপে অংশ নেন মৎস্যজীবী ও পরিবেশবাদী সংগঠকেরা। মোংলা, পটুয়াখালী, খুলনার বিভিন্ন নদী ও সাগরে ইলিশ আহরণকারী মানুষ জানান তাঁদের অবস্থার কথা। নদীতে ইলিশ না থাকায় জীবিকায় টান পড়েছে তাঁদের বেশির ভাগেরই। পাশাপাশি অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার, প্রশাসনের নানা বিষয় তুলে ধরেন জেলেরা। প্রজনন মৌসুমে সরকারের দেওয়া অপ্রতুল সহায়তা এবং তা বণ্টন নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতির বিষয়গুলোও আসে সংগঠক এবং গবেষকদের আলোচনায়।
মৎস্য অধিদপ্তরের (ইলিশ ব্যবস্থাপনা) উপপ্রধান মাসুদ আরা মমি বলেন, মৎস্য অধিদপ্তর পদক্ষেপ না নিলে বইপুস্তকে চলে যেত ইলিশ। বিএনপি সরকারের আমলে ইলিশের উৎপাদন একেবারেই শূন্যের কোঠায় নেমে আসে জানিয়ে বর্তমান সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।
মমি বলেন, ‘ইলিশ নাই কথাটা ঠিক না। এখন উৎপাদন ৫ লাখ ৬৭ হাজার টন। ২০০৯ সালে জাটকা নিধন, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং গবেষণা প্রকল্প চালু হয়। ইলিশের যে উন্নয়ন সেটা—এই সরকারের সময়ে হয়েছে। বেসরকারি সংস্থাও গবেষণায় সহায়তা করেছে। ২০১৫ সালে তা শেষ হওয়ার পর মাছ উৎপাদন বেড়েছে, কিন্তু ইলিশের কন্ট্রিবিউশন হয়তো কম। বর্তমানে দেশের ২৯ জেলার ১৩৬টি উপজেলায় ২৪৬ কোটি টাকার ইলিশ উৎপাদন, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’
মাছ ধরা বন্ধের মৌসুমে মাসে ৪০ কেজি ভিজিএফ চাল দেওয়ার বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান বলেন, ‘২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১ লাখ ৪৬ হাজার জেলেকে দেওয়া হতো। এই সরকার যখন আসল, প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় ১০ থেকে ৪০ কেজিতে উন্নীত হয়েছে। আমি মনে করি, এটাও জেলেদের জন্য শেখ হাসিনার সানুগ্রহ সহায়তা। এখন সাত লাখ জেলে সরাসরি ইলিশ আহরণের সঙ্গে জড়িত। ইলিশের উৎপাদন কমছে না। ধরার মানুষ বেড়ে গেছে। আগে যেখানে একজন মানুষ ১০টা ইলিশ পেত, এখন যদি সেখানে ১০ জন মানুষ যায়, কয়টা ইলিশ পাবে? এক নদীতে। আপনাদের বুঝতে হবে।’
ইলিশসহ অন্য মাছ রক্ষায় সরকারে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান মমি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে সংলাপে অংশ নেন উপকূলীয় দুই জেলার সংসদ সদস্য। পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা বলেন, ‘ইলিশ এখন কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার বিষয় হয়ে গেছে। তরমুজের চাষ বাড়ার কারণে ইলিশ কমে যাচ্ছে।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘তরমুজ খেতে নানা ধরনের সার ও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। সেসব আবার নদীতে গিয়ে পড়ছে। তাই ইলিশ তাদের আবাসস্থল আরও গভীরে নিয়ে যাওয়ায় জেলেরা হয়তো মাছ পাচ্ছেন না। কিন্তু সামগ্রিকভাবে সরকারের নানা পদক্ষেপে সব ধরনের মাছ উৎপাদনই বেড়েছে।’
খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘ছোটবেলায় আমরা ইলিশ কিনতাম আধা কেজির আশপাশের আকারের। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে ভোলা থেকে মাছ এনেছি। একেকটির ওজন সর্বনিম্ন ২ কেজি, সর্বোচ্চ ২ কেজি ৮০০ গ্রাম। বন্ধুবান্ধব, রাজনৈতিক সহকর্মী অনেকেই তা দিয়েছি। গতকাল (মঙ্গলবার) ঢাকায় আসার আগে খেয়ে এসেছি। সত্যি কথা বলি, ১৫ মিনিট পরে হাত ও মুখ থেকে গন্ধ (ইলিশের) আসছে। পরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে, দাঁত ব্রাশ করেছি। ৬৫ দিন বন্ধ রাখার কারণে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।’
আখতারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘পলি বাড়ায় নদীর উপকূলে ইলিশের দেখা মিলছে না। নদী খননে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টা রয়েছে। আমাদের গবেষণা দরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেকটি কথা, ধৈর্য সহকারে শোনেন এবং সমাধানের চেষ্টা করেন। আমরা কাছ থেকে দেখেছি, দেশের প্রতি তাঁর যে মমত্ব-মায়া, এটি আমাদের অনেকের ভেতরে থাকলেও তাঁর ভেতরে যেটি আছে, এটি অনন্য। আমরা আজকে যা ভাবছি, উনি অনেক আগে ভেবে রাখেন। এই হচ্ছেন জননেত্রী।’
জেলে কার্ড বেহাত হওয়ার বিষয়ে মৎস্যজীবীদের অভিযোগের বিষয়ে এমপি বাবু বলেন, ‘জেলেদের কার্ড সাহেবদের নামে আপনি-আমিই কিন্তু দিয়েছি। আমার পাশে যে কয়টা বাটপার থাকে, তাদের নাম না দিলে ওরা আবার ফেসবুকে লিখে। আমরা কিন্তু ঠিক না। অন্যের দোষ দিয়ে যাই। মৎস্য কর্মকর্তা, জেলে কর্মকর্তা কী করবেন? ওনার তো দিতেই হবে ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান সুপারিশ করেছেন। তাঁদের দোষ না। দোষী আমরা সবাই।
‘আজকে আড়াই-তিন কেজি ইলিশ পাওয়া যায়। ভোলায়, আমাকে যদি কেউ এখন বলেন আমি কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এনে দিতে পারি। ভোলায় একজন লোক পাঠাব আপনাকে আড়াই কেজি, তিন কেজি ইলিশ এনে দেব। দুই কেজি তো অহরহ। কিছুদিন আগে ছিল না। আমরা যা-ই বলি, নাই নাই নাই। লোক কিন্তু বাড়তেছে। …’
সভাপতির বক্তব্যের শুরুতেই সুলতানা কামাল, দেশের প্রচলিত নিয়ম মেনে সবাইকে মৎস্য আহরণের অনুরোধ করেন।
মৎস্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান মাসুদ আরা মমির উদ্দেশে সুলতানা বলেন, ‘তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আপনার যা বলছেন, তার সুফলটা জেলেদের কাছ থেকে শুনি না কেন? যারা মাছ ধরছেন, তাঁরা শোনেন না কেন? আগে আমরা যারা ভোক্তা প্রতিদিন ইলিশ খেয়েছি, এখন কেন খেতে পারি না। যদি ইলিশের উৎপাদন এতই বেড়ে থাকে, বাবু ভাইয়ের (আখতারুজ্জামান বাবু) যে অবস্থান আছে উনি ইচ্ছে করলে ২৪ ঘণ্টাই ইলিশ খেতে পারেন, কিন্তু আমি সুলতানা কামাল, সাধারণ নাগরিক আমি কিন্তু পারি না। সম্ভব না। আমাকে কেউ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুই কেজির ইলিশ সাপ্লাই (সরবরাহ) দেবে না। আমাকে কিনতে হলে কয়েক হাজার টাকা হাতে নিয়ে বাজারে যেত হবে। তা-ও যদি পাই। এই যে একটা তফাত রয়ে গেছে। এটাই আইনপ্রণেতাদের বলতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নাই। তিনি সব সময় দেশের মানুষের ভালো চান। তাঁর আন্তরিকতা নিয়ে কেউ আমরা প্রশ্ন তুলি না। কিন্তু সেই কাজগুলো হয় না কেন?’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘সেদিন এক মন্ত্রী বলেছেন দেশের মানুষ এখন ডাল-ভাতের জন্য কাঁদে না, মাছ-ভাতের জন্য কাঁদে। বাবু ভাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০০টা ইলিশ মাছ পান, কিন্তু ওই মানুষটা মাছের জন্য কাঁদে কেন? মানবাধিকার কর্মী হিসেবে এটাই আমার প্রশ্ন? আপনি (আখতারুজ্জামান বাবু) বাক্সভরে মানুষকে ইলিশ দিতে পারবেন, আরেকটা মানুষ কেন মাছ-ভাতের জন্য কাঁদবে? তা নিশ্চিতের দায়িত্ব আপনাদের। আপনি পারেন আমি পারি না। এই যে আপনার পারা এবং আমার না পারার মধ্যে এত পার্থক্য হবে কেন?’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু সেই সুফল সবাই পাচ্ছে না। … মমি হিসেবে না, আপনারা রাষ্ট্র, বুঝতে হবে কেন বলছেন ওনারা (জেলেরা) দেশকে ভালোবাসে না তাই এসব কথা বলছে? ওরা কি দেশের শত্রু? শুধু আমি একাই দেশকে ভালোবাসি। এই ঔদ্ধত্য আমি দেখাতে পারি? একমাত্র আমি দেশকে ভালোবাসি, আর কেউ না। এই ঔদ্ধত্য থাকা উচিত না। চিন্তা করতে হবে, কেন জেলেরা বলছেন তাঁরা মাছ পাচ্ছেন না।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই সংসদ সদস্যের উদ্দেশে সুলতানা কামাল বলেন, ‘আপনারা অবকাঠামোগত উন্নয়নে যতটা নজর দিয়েছেন। সাংস্কৃতিক উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে মনোযোগী হন নাই। এটা আমার অভিযোগ। এ কারণেই জেলেদের ধরতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার বিষয়গুলো হচ্ছে। একটা ডিসকানেক্ট (বিচ্ছিন্নতা) রয়ে গেছে। কানেকশনটা (সংযোগ) হয় নাই।’
মমিকে (মাসুদ আরা মমি) আরেকটা কথা বলব, ‘আপনারা সরকারি চাকরি করছেন। বাবু, শাহজাদা ভাইয়েরা কোনো একটা কারণে আইনপ্রণেতার জায়গায় গেছেন। আপনারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহে। কেন সানুগ্রহ হবে? আমার করের পয়সায় এই টাকা আসছে, করের পয়সা প্রধানমন্ত্রী কাস্টডিয়ান (দেখভাল করেন)। তিনি একা না, সরকার কাস্টডিয়ান। সেই টাকা হয়তো, জেলে ভাইদের কাছে আসছে। এটা সানুগ্রহের কী আছে? আপনারা কি কখনো চিন্তা করেন একটা মানুষের পাঁচজনের সংসারে ৪০ কেজি চালে মাস চলে কি না। তারপর কারেন্ট জাল নিয়ে মাছ ধরতে যায়, আর বলেন আইন ভাঙছে। কোন বিবেকে বলেন?’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘দুর্নীতির কথা ধরলামই না। আপনি খুব সৎভাবে ১০টা কার্ড (জেলে) দিতে চান। কোন দশজনকে দেবেন? এখানে পরিকল্পনার ব্যাপার আছে। খালি সানুগ্রহ বললে হবে না। আমরা দয়ার পাত্র হব কেন কারও? আমরা এ দেশের নাগরিক, সম্মানিত নাগরিক। আমি কর দিই। আমি আমার নাগরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করতে চাই। আমি কারও অনুগ্রহ চাই না। দয়া করে আপনারা অনুগ্রহের কথা বলবেন না আমাদের। আমার খুব মনঃকষ্ট হয়।’
সুলতানা কামাল আরও বলেন, ‘আমি বারবার বলছি, প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা এক শ বার বিশ্বাস করি। আপনাদের চেয়ে বেশি দিন ধরে তাঁকে চিনি। জানি তিনি চান বাংলাদেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু অনুগ্রহ করে আমাদের অনুগ্রহের কথা বলবেন না। কেউ বাংলাদেশে এমন নাই যে নাগরিকদের অনুগ্রহ করতে পারে। তিনি (শেখ হাসিনা) তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন। সদিচ্ছার সঙ্গে করছেন, প্রশংসার সঙ্গে করছেন—এটা বলতে পারি। নিশ্চয়ই তাঁকে ধন্যবাদ জানাব। কিন্তু আমাকে কেউ অনুগ্রহ করে, সেটা গ্রহণে রাজি নই।’

‘উপকূলের ইলিশ ও জেলে’বিষয়ক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অগণিত দুই কেজির ইলিশ ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিলেন এক সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। তিনি নিজে সাম্প্রতিক সময়ে তিন কেজির ইলিশও খেয়েছেন বলেও জানান। যদিও সংলাপে উপস্থিত জেলেরা জানান, তাঁরা মাছ পাচ্ছেন না। ধারদেনায় জর্জরিত সংসার। সেই এমপিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের প্রশ্ন, ‘আপনি বাক্সভরে মানুষকে ইলিশ দিতে পারবেন, আরেকটা মানুষ কেন মাছ-ভাতের জন্য কাঁদবে?’
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই সংলাপের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ।
দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় জেলা থেকে সংলাপে অংশ নেন মৎস্যজীবী ও পরিবেশবাদী সংগঠকেরা। মোংলা, পটুয়াখালী, খুলনার বিভিন্ন নদী ও সাগরে ইলিশ আহরণকারী মানুষ জানান তাঁদের অবস্থার কথা। নদীতে ইলিশ না থাকায় জীবিকায় টান পড়েছে তাঁদের বেশির ভাগেরই। পাশাপাশি অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার, প্রশাসনের নানা বিষয় তুলে ধরেন জেলেরা। প্রজনন মৌসুমে সরকারের দেওয়া অপ্রতুল সহায়তা এবং তা বণ্টন নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতির বিষয়গুলোও আসে সংগঠক এবং গবেষকদের আলোচনায়।
মৎস্য অধিদপ্তরের (ইলিশ ব্যবস্থাপনা) উপপ্রধান মাসুদ আরা মমি বলেন, মৎস্য অধিদপ্তর পদক্ষেপ না নিলে বইপুস্তকে চলে যেত ইলিশ। বিএনপি সরকারের আমলে ইলিশের উৎপাদন একেবারেই শূন্যের কোঠায় নেমে আসে জানিয়ে বর্তমান সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।
মমি বলেন, ‘ইলিশ নাই কথাটা ঠিক না। এখন উৎপাদন ৫ লাখ ৬৭ হাজার টন। ২০০৯ সালে জাটকা নিধন, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং গবেষণা প্রকল্প চালু হয়। ইলিশের যে উন্নয়ন সেটা—এই সরকারের সময়ে হয়েছে। বেসরকারি সংস্থাও গবেষণায় সহায়তা করেছে। ২০১৫ সালে তা শেষ হওয়ার পর মাছ উৎপাদন বেড়েছে, কিন্তু ইলিশের কন্ট্রিবিউশন হয়তো কম। বর্তমানে দেশের ২৯ জেলার ১৩৬টি উপজেলায় ২৪৬ কোটি টাকার ইলিশ উৎপাদন, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’
মাছ ধরা বন্ধের মৌসুমে মাসে ৪০ কেজি ভিজিএফ চাল দেওয়ার বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান বলেন, ‘২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১ লাখ ৪৬ হাজার জেলেকে দেওয়া হতো। এই সরকার যখন আসল, প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় ১০ থেকে ৪০ কেজিতে উন্নীত হয়েছে। আমি মনে করি, এটাও জেলেদের জন্য শেখ হাসিনার সানুগ্রহ সহায়তা। এখন সাত লাখ জেলে সরাসরি ইলিশ আহরণের সঙ্গে জড়িত। ইলিশের উৎপাদন কমছে না। ধরার মানুষ বেড়ে গেছে। আগে যেখানে একজন মানুষ ১০টা ইলিশ পেত, এখন যদি সেখানে ১০ জন মানুষ যায়, কয়টা ইলিশ পাবে? এক নদীতে। আপনাদের বুঝতে হবে।’
ইলিশসহ অন্য মাছ রক্ষায় সরকারে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান মমি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে সংলাপে অংশ নেন উপকূলীয় দুই জেলার সংসদ সদস্য। পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা বলেন, ‘ইলিশ এখন কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার বিষয় হয়ে গেছে। তরমুজের চাষ বাড়ার কারণে ইলিশ কমে যাচ্ছে।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘তরমুজ খেতে নানা ধরনের সার ও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। সেসব আবার নদীতে গিয়ে পড়ছে। তাই ইলিশ তাদের আবাসস্থল আরও গভীরে নিয়ে যাওয়ায় জেলেরা হয়তো মাছ পাচ্ছেন না। কিন্তু সামগ্রিকভাবে সরকারের নানা পদক্ষেপে সব ধরনের মাছ উৎপাদনই বেড়েছে।’
খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘ছোটবেলায় আমরা ইলিশ কিনতাম আধা কেজির আশপাশের আকারের। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে ভোলা থেকে মাছ এনেছি। একেকটির ওজন সর্বনিম্ন ২ কেজি, সর্বোচ্চ ২ কেজি ৮০০ গ্রাম। বন্ধুবান্ধব, রাজনৈতিক সহকর্মী অনেকেই তা দিয়েছি। গতকাল (মঙ্গলবার) ঢাকায় আসার আগে খেয়ে এসেছি। সত্যি কথা বলি, ১৫ মিনিট পরে হাত ও মুখ থেকে গন্ধ (ইলিশের) আসছে। পরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে, দাঁত ব্রাশ করেছি। ৬৫ দিন বন্ধ রাখার কারণে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।’
আখতারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘পলি বাড়ায় নদীর উপকূলে ইলিশের দেখা মিলছে না। নদী খননে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টা রয়েছে। আমাদের গবেষণা দরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেকটি কথা, ধৈর্য সহকারে শোনেন এবং সমাধানের চেষ্টা করেন। আমরা কাছ থেকে দেখেছি, দেশের প্রতি তাঁর যে মমত্ব-মায়া, এটি আমাদের অনেকের ভেতরে থাকলেও তাঁর ভেতরে যেটি আছে, এটি অনন্য। আমরা আজকে যা ভাবছি, উনি অনেক আগে ভেবে রাখেন। এই হচ্ছেন জননেত্রী।’
জেলে কার্ড বেহাত হওয়ার বিষয়ে মৎস্যজীবীদের অভিযোগের বিষয়ে এমপি বাবু বলেন, ‘জেলেদের কার্ড সাহেবদের নামে আপনি-আমিই কিন্তু দিয়েছি। আমার পাশে যে কয়টা বাটপার থাকে, তাদের নাম না দিলে ওরা আবার ফেসবুকে লিখে। আমরা কিন্তু ঠিক না। অন্যের দোষ দিয়ে যাই। মৎস্য কর্মকর্তা, জেলে কর্মকর্তা কী করবেন? ওনার তো দিতেই হবে ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান সুপারিশ করেছেন। তাঁদের দোষ না। দোষী আমরা সবাই।
‘আজকে আড়াই-তিন কেজি ইলিশ পাওয়া যায়। ভোলায়, আমাকে যদি কেউ এখন বলেন আমি কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এনে দিতে পারি। ভোলায় একজন লোক পাঠাব আপনাকে আড়াই কেজি, তিন কেজি ইলিশ এনে দেব। দুই কেজি তো অহরহ। কিছুদিন আগে ছিল না। আমরা যা-ই বলি, নাই নাই নাই। লোক কিন্তু বাড়তেছে। …’
সভাপতির বক্তব্যের শুরুতেই সুলতানা কামাল, দেশের প্রচলিত নিয়ম মেনে সবাইকে মৎস্য আহরণের অনুরোধ করেন।
মৎস্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান মাসুদ আরা মমির উদ্দেশে সুলতানা বলেন, ‘তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আপনার যা বলছেন, তার সুফলটা জেলেদের কাছ থেকে শুনি না কেন? যারা মাছ ধরছেন, তাঁরা শোনেন না কেন? আগে আমরা যারা ভোক্তা প্রতিদিন ইলিশ খেয়েছি, এখন কেন খেতে পারি না। যদি ইলিশের উৎপাদন এতই বেড়ে থাকে, বাবু ভাইয়ের (আখতারুজ্জামান বাবু) যে অবস্থান আছে উনি ইচ্ছে করলে ২৪ ঘণ্টাই ইলিশ খেতে পারেন, কিন্তু আমি সুলতানা কামাল, সাধারণ নাগরিক আমি কিন্তু পারি না। সম্ভব না। আমাকে কেউ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুই কেজির ইলিশ সাপ্লাই (সরবরাহ) দেবে না। আমাকে কিনতে হলে কয়েক হাজার টাকা হাতে নিয়ে বাজারে যেত হবে। তা-ও যদি পাই। এই যে একটা তফাত রয়ে গেছে। এটাই আইনপ্রণেতাদের বলতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নাই। তিনি সব সময় দেশের মানুষের ভালো চান। তাঁর আন্তরিকতা নিয়ে কেউ আমরা প্রশ্ন তুলি না। কিন্তু সেই কাজগুলো হয় না কেন?’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘সেদিন এক মন্ত্রী বলেছেন দেশের মানুষ এখন ডাল-ভাতের জন্য কাঁদে না, মাছ-ভাতের জন্য কাঁদে। বাবু ভাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০০টা ইলিশ মাছ পান, কিন্তু ওই মানুষটা মাছের জন্য কাঁদে কেন? মানবাধিকার কর্মী হিসেবে এটাই আমার প্রশ্ন? আপনি (আখতারুজ্জামান বাবু) বাক্সভরে মানুষকে ইলিশ দিতে পারবেন, আরেকটা মানুষ কেন মাছ-ভাতের জন্য কাঁদবে? তা নিশ্চিতের দায়িত্ব আপনাদের। আপনি পারেন আমি পারি না। এই যে আপনার পারা এবং আমার না পারার মধ্যে এত পার্থক্য হবে কেন?’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু সেই সুফল সবাই পাচ্ছে না। … মমি হিসেবে না, আপনারা রাষ্ট্র, বুঝতে হবে কেন বলছেন ওনারা (জেলেরা) দেশকে ভালোবাসে না তাই এসব কথা বলছে? ওরা কি দেশের শত্রু? শুধু আমি একাই দেশকে ভালোবাসি। এই ঔদ্ধত্য আমি দেখাতে পারি? একমাত্র আমি দেশকে ভালোবাসি, আর কেউ না। এই ঔদ্ধত্য থাকা উচিত না। চিন্তা করতে হবে, কেন জেলেরা বলছেন তাঁরা মাছ পাচ্ছেন না।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই সংসদ সদস্যের উদ্দেশে সুলতানা কামাল বলেন, ‘আপনারা অবকাঠামোগত উন্নয়নে যতটা নজর দিয়েছেন। সাংস্কৃতিক উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে মনোযোগী হন নাই। এটা আমার অভিযোগ। এ কারণেই জেলেদের ধরতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার বিষয়গুলো হচ্ছে। একটা ডিসকানেক্ট (বিচ্ছিন্নতা) রয়ে গেছে। কানেকশনটা (সংযোগ) হয় নাই।’
মমিকে (মাসুদ আরা মমি) আরেকটা কথা বলব, ‘আপনারা সরকারি চাকরি করছেন। বাবু, শাহজাদা ভাইয়েরা কোনো একটা কারণে আইনপ্রণেতার জায়গায় গেছেন। আপনারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহে। কেন সানুগ্রহ হবে? আমার করের পয়সায় এই টাকা আসছে, করের পয়সা প্রধানমন্ত্রী কাস্টডিয়ান (দেখভাল করেন)। তিনি একা না, সরকার কাস্টডিয়ান। সেই টাকা হয়তো, জেলে ভাইদের কাছে আসছে। এটা সানুগ্রহের কী আছে? আপনারা কি কখনো চিন্তা করেন একটা মানুষের পাঁচজনের সংসারে ৪০ কেজি চালে মাস চলে কি না। তারপর কারেন্ট জাল নিয়ে মাছ ধরতে যায়, আর বলেন আইন ভাঙছে। কোন বিবেকে বলেন?’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘দুর্নীতির কথা ধরলামই না। আপনি খুব সৎভাবে ১০টা কার্ড (জেলে) দিতে চান। কোন দশজনকে দেবেন? এখানে পরিকল্পনার ব্যাপার আছে। খালি সানুগ্রহ বললে হবে না। আমরা দয়ার পাত্র হব কেন কারও? আমরা এ দেশের নাগরিক, সম্মানিত নাগরিক। আমি কর দিই। আমি আমার নাগরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করতে চাই। আমি কারও অনুগ্রহ চাই না। দয়া করে আপনারা অনুগ্রহের কথা বলবেন না আমাদের। আমার খুব মনঃকষ্ট হয়।’
সুলতানা কামাল আরও বলেন, ‘আমি বারবার বলছি, প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা এক শ বার বিশ্বাস করি। আপনাদের চেয়ে বেশি দিন ধরে তাঁকে চিনি। জানি তিনি চান বাংলাদেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু অনুগ্রহ করে আমাদের অনুগ্রহের কথা বলবেন না। কেউ বাংলাদেশে এমন নাই যে নাগরিকদের অনুগ্রহ করতে পারে। তিনি (শেখ হাসিনা) তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন। সদিচ্ছার সঙ্গে করছেন, প্রশংসার সঙ্গে করছেন—এটা বলতে পারি। নিশ্চয়ই তাঁকে ধন্যবাদ জানাব। কিন্তু আমাকে কেউ অনুগ্রহ করে, সেটা গ্রহণে রাজি নই।’

‘উপকূলের ইলিশ ও জেলে’বিষয়ক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অগণিত দুই কেজির ইলিশ ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিলেন এক সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। তিনি নিজে সাম্প্রতিক সময়ে তিন কেজির ইলিশও খেয়েছেন বলেও জানান। যদিও সংলাপে উপস্থিত জেলেরা জানান, তাঁরা মাছ পাচ্ছেন না। ধারদেনায় জর্জরিত সংসার। সেই এমপিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের প্রশ্ন, ‘আপনি বাক্সভরে মানুষকে ইলিশ দিতে পারবেন, আরেকটা মানুষ কেন মাছ-ভাতের জন্য কাঁদবে?’
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই সংলাপের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ।
দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় জেলা থেকে সংলাপে অংশ নেন মৎস্যজীবী ও পরিবেশবাদী সংগঠকেরা। মোংলা, পটুয়াখালী, খুলনার বিভিন্ন নদী ও সাগরে ইলিশ আহরণকারী মানুষ জানান তাঁদের অবস্থার কথা। নদীতে ইলিশ না থাকায় জীবিকায় টান পড়েছে তাঁদের বেশির ভাগেরই। পাশাপাশি অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার, প্রশাসনের নানা বিষয় তুলে ধরেন জেলেরা। প্রজনন মৌসুমে সরকারের দেওয়া অপ্রতুল সহায়তা এবং তা বণ্টন নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতির বিষয়গুলোও আসে সংগঠক এবং গবেষকদের আলোচনায়।
মৎস্য অধিদপ্তরের (ইলিশ ব্যবস্থাপনা) উপপ্রধান মাসুদ আরা মমি বলেন, মৎস্য অধিদপ্তর পদক্ষেপ না নিলে বইপুস্তকে চলে যেত ইলিশ। বিএনপি সরকারের আমলে ইলিশের উৎপাদন একেবারেই শূন্যের কোঠায় নেমে আসে জানিয়ে বর্তমান সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।
মমি বলেন, ‘ইলিশ নাই কথাটা ঠিক না। এখন উৎপাদন ৫ লাখ ৬৭ হাজার টন। ২০০৯ সালে জাটকা নিধন, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং গবেষণা প্রকল্প চালু হয়। ইলিশের যে উন্নয়ন সেটা—এই সরকারের সময়ে হয়েছে। বেসরকারি সংস্থাও গবেষণায় সহায়তা করেছে। ২০১৫ সালে তা শেষ হওয়ার পর মাছ উৎপাদন বেড়েছে, কিন্তু ইলিশের কন্ট্রিবিউশন হয়তো কম। বর্তমানে দেশের ২৯ জেলার ১৩৬টি উপজেলায় ২৪৬ কোটি টাকার ইলিশ উৎপাদন, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’
মাছ ধরা বন্ধের মৌসুমে মাসে ৪০ কেজি ভিজিএফ চাল দেওয়ার বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান বলেন, ‘২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১ লাখ ৪৬ হাজার জেলেকে দেওয়া হতো। এই সরকার যখন আসল, প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় ১০ থেকে ৪০ কেজিতে উন্নীত হয়েছে। আমি মনে করি, এটাও জেলেদের জন্য শেখ হাসিনার সানুগ্রহ সহায়তা। এখন সাত লাখ জেলে সরাসরি ইলিশ আহরণের সঙ্গে জড়িত। ইলিশের উৎপাদন কমছে না। ধরার মানুষ বেড়ে গেছে। আগে যেখানে একজন মানুষ ১০টা ইলিশ পেত, এখন যদি সেখানে ১০ জন মানুষ যায়, কয়টা ইলিশ পাবে? এক নদীতে। আপনাদের বুঝতে হবে।’
ইলিশসহ অন্য মাছ রক্ষায় সরকারে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান মমি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে সংলাপে অংশ নেন উপকূলীয় দুই জেলার সংসদ সদস্য। পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা বলেন, ‘ইলিশ এখন কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার বিষয় হয়ে গেছে। তরমুজের চাষ বাড়ার কারণে ইলিশ কমে যাচ্ছে।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘তরমুজ খেতে নানা ধরনের সার ও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। সেসব আবার নদীতে গিয়ে পড়ছে। তাই ইলিশ তাদের আবাসস্থল আরও গভীরে নিয়ে যাওয়ায় জেলেরা হয়তো মাছ পাচ্ছেন না। কিন্তু সামগ্রিকভাবে সরকারের নানা পদক্ষেপে সব ধরনের মাছ উৎপাদনই বেড়েছে।’
খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘ছোটবেলায় আমরা ইলিশ কিনতাম আধা কেজির আশপাশের আকারের। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে ভোলা থেকে মাছ এনেছি। একেকটির ওজন সর্বনিম্ন ২ কেজি, সর্বোচ্চ ২ কেজি ৮০০ গ্রাম। বন্ধুবান্ধব, রাজনৈতিক সহকর্মী অনেকেই তা দিয়েছি। গতকাল (মঙ্গলবার) ঢাকায় আসার আগে খেয়ে এসেছি। সত্যি কথা বলি, ১৫ মিনিট পরে হাত ও মুখ থেকে গন্ধ (ইলিশের) আসছে। পরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে, দাঁত ব্রাশ করেছি। ৬৫ দিন বন্ধ রাখার কারণে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।’
আখতারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘পলি বাড়ায় নদীর উপকূলে ইলিশের দেখা মিলছে না। নদী খননে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টা রয়েছে। আমাদের গবেষণা দরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেকটি কথা, ধৈর্য সহকারে শোনেন এবং সমাধানের চেষ্টা করেন। আমরা কাছ থেকে দেখেছি, দেশের প্রতি তাঁর যে মমত্ব-মায়া, এটি আমাদের অনেকের ভেতরে থাকলেও তাঁর ভেতরে যেটি আছে, এটি অনন্য। আমরা আজকে যা ভাবছি, উনি অনেক আগে ভেবে রাখেন। এই হচ্ছেন জননেত্রী।’
জেলে কার্ড বেহাত হওয়ার বিষয়ে মৎস্যজীবীদের অভিযোগের বিষয়ে এমপি বাবু বলেন, ‘জেলেদের কার্ড সাহেবদের নামে আপনি-আমিই কিন্তু দিয়েছি। আমার পাশে যে কয়টা বাটপার থাকে, তাদের নাম না দিলে ওরা আবার ফেসবুকে লিখে। আমরা কিন্তু ঠিক না। অন্যের দোষ দিয়ে যাই। মৎস্য কর্মকর্তা, জেলে কর্মকর্তা কী করবেন? ওনার তো দিতেই হবে ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান সুপারিশ করেছেন। তাঁদের দোষ না। দোষী আমরা সবাই।
‘আজকে আড়াই-তিন কেজি ইলিশ পাওয়া যায়। ভোলায়, আমাকে যদি কেউ এখন বলেন আমি কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এনে দিতে পারি। ভোলায় একজন লোক পাঠাব আপনাকে আড়াই কেজি, তিন কেজি ইলিশ এনে দেব। দুই কেজি তো অহরহ। কিছুদিন আগে ছিল না। আমরা যা-ই বলি, নাই নাই নাই। লোক কিন্তু বাড়তেছে। …’
সভাপতির বক্তব্যের শুরুতেই সুলতানা কামাল, দেশের প্রচলিত নিয়ম মেনে সবাইকে মৎস্য আহরণের অনুরোধ করেন।
মৎস্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান মাসুদ আরা মমির উদ্দেশে সুলতানা বলেন, ‘তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আপনার যা বলছেন, তার সুফলটা জেলেদের কাছ থেকে শুনি না কেন? যারা মাছ ধরছেন, তাঁরা শোনেন না কেন? আগে আমরা যারা ভোক্তা প্রতিদিন ইলিশ খেয়েছি, এখন কেন খেতে পারি না। যদি ইলিশের উৎপাদন এতই বেড়ে থাকে, বাবু ভাইয়ের (আখতারুজ্জামান বাবু) যে অবস্থান আছে উনি ইচ্ছে করলে ২৪ ঘণ্টাই ইলিশ খেতে পারেন, কিন্তু আমি সুলতানা কামাল, সাধারণ নাগরিক আমি কিন্তু পারি না। সম্ভব না। আমাকে কেউ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুই কেজির ইলিশ সাপ্লাই (সরবরাহ) দেবে না। আমাকে কিনতে হলে কয়েক হাজার টাকা হাতে নিয়ে বাজারে যেত হবে। তা-ও যদি পাই। এই যে একটা তফাত রয়ে গেছে। এটাই আইনপ্রণেতাদের বলতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নাই। তিনি সব সময় দেশের মানুষের ভালো চান। তাঁর আন্তরিকতা নিয়ে কেউ আমরা প্রশ্ন তুলি না। কিন্তু সেই কাজগুলো হয় না কেন?’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘সেদিন এক মন্ত্রী বলেছেন দেশের মানুষ এখন ডাল-ভাতের জন্য কাঁদে না, মাছ-ভাতের জন্য কাঁদে। বাবু ভাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০০টা ইলিশ মাছ পান, কিন্তু ওই মানুষটা মাছের জন্য কাঁদে কেন? মানবাধিকার কর্মী হিসেবে এটাই আমার প্রশ্ন? আপনি (আখতারুজ্জামান বাবু) বাক্সভরে মানুষকে ইলিশ দিতে পারবেন, আরেকটা মানুষ কেন মাছ-ভাতের জন্য কাঁদবে? তা নিশ্চিতের দায়িত্ব আপনাদের। আপনি পারেন আমি পারি না। এই যে আপনার পারা এবং আমার না পারার মধ্যে এত পার্থক্য হবে কেন?’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু সেই সুফল সবাই পাচ্ছে না। … মমি হিসেবে না, আপনারা রাষ্ট্র, বুঝতে হবে কেন বলছেন ওনারা (জেলেরা) দেশকে ভালোবাসে না তাই এসব কথা বলছে? ওরা কি দেশের শত্রু? শুধু আমি একাই দেশকে ভালোবাসি। এই ঔদ্ধত্য আমি দেখাতে পারি? একমাত্র আমি দেশকে ভালোবাসি, আর কেউ না। এই ঔদ্ধত্য থাকা উচিত না। চিন্তা করতে হবে, কেন জেলেরা বলছেন তাঁরা মাছ পাচ্ছেন না।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই সংসদ সদস্যের উদ্দেশে সুলতানা কামাল বলেন, ‘আপনারা অবকাঠামোগত উন্নয়নে যতটা নজর দিয়েছেন। সাংস্কৃতিক উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে মনোযোগী হন নাই। এটা আমার অভিযোগ। এ কারণেই জেলেদের ধরতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার বিষয়গুলো হচ্ছে। একটা ডিসকানেক্ট (বিচ্ছিন্নতা) রয়ে গেছে। কানেকশনটা (সংযোগ) হয় নাই।’
মমিকে (মাসুদ আরা মমি) আরেকটা কথা বলব, ‘আপনারা সরকারি চাকরি করছেন। বাবু, শাহজাদা ভাইয়েরা কোনো একটা কারণে আইনপ্রণেতার জায়গায় গেছেন। আপনারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহে। কেন সানুগ্রহ হবে? আমার করের পয়সায় এই টাকা আসছে, করের পয়সা প্রধানমন্ত্রী কাস্টডিয়ান (দেখভাল করেন)। তিনি একা না, সরকার কাস্টডিয়ান। সেই টাকা হয়তো, জেলে ভাইদের কাছে আসছে। এটা সানুগ্রহের কী আছে? আপনারা কি কখনো চিন্তা করেন একটা মানুষের পাঁচজনের সংসারে ৪০ কেজি চালে মাস চলে কি না। তারপর কারেন্ট জাল নিয়ে মাছ ধরতে যায়, আর বলেন আইন ভাঙছে। কোন বিবেকে বলেন?’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘দুর্নীতির কথা ধরলামই না। আপনি খুব সৎভাবে ১০টা কার্ড (জেলে) দিতে চান। কোন দশজনকে দেবেন? এখানে পরিকল্পনার ব্যাপার আছে। খালি সানুগ্রহ বললে হবে না। আমরা দয়ার পাত্র হব কেন কারও? আমরা এ দেশের নাগরিক, সম্মানিত নাগরিক। আমি কর দিই। আমি আমার নাগরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করতে চাই। আমি কারও অনুগ্রহ চাই না। দয়া করে আপনারা অনুগ্রহের কথা বলবেন না আমাদের। আমার খুব মনঃকষ্ট হয়।’
সুলতানা কামাল আরও বলেন, ‘আমি বারবার বলছি, প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা এক শ বার বিশ্বাস করি। আপনাদের চেয়ে বেশি দিন ধরে তাঁকে চিনি। জানি তিনি চান বাংলাদেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু অনুগ্রহ করে আমাদের অনুগ্রহের কথা বলবেন না। কেউ বাংলাদেশে এমন নাই যে নাগরিকদের অনুগ্রহ করতে পারে। তিনি (শেখ হাসিনা) তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন। সদিচ্ছার সঙ্গে করছেন, প্রশংসার সঙ্গে করছেন—এটা বলতে পারি। নিশ্চয়ই তাঁকে ধন্যবাদ জানাব। কিন্তু আমাকে কেউ অনুগ্রহ করে, সেটা গ্রহণে রাজি নই।’

‘উপকূলের ইলিশ ও জেলে’বিষয়ক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অগণিত দুই কেজির ইলিশ ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিলেন এক সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। তিনি নিজে সাম্প্রতিক সময়ে তিন কেজির ইলিশও খেয়েছেন বলেও জানান। যদিও সংলাপে উপস্থিত জেলেরা জানান, তাঁরা মাছ পাচ্ছেন না। ধারদেনায় জর্জরিত সংসার। সেই এমপিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের প্রশ্ন, ‘আপনি বাক্সভরে মানুষকে ইলিশ দিতে পারবেন, আরেকটা মানুষ কেন মাছ-ভাতের জন্য কাঁদবে?’
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই সংলাপের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ।
দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় জেলা থেকে সংলাপে অংশ নেন মৎস্যজীবী ও পরিবেশবাদী সংগঠকেরা। মোংলা, পটুয়াখালী, খুলনার বিভিন্ন নদী ও সাগরে ইলিশ আহরণকারী মানুষ জানান তাঁদের অবস্থার কথা। নদীতে ইলিশ না থাকায় জীবিকায় টান পড়েছে তাঁদের বেশির ভাগেরই। পাশাপাশি অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার, প্রশাসনের নানা বিষয় তুলে ধরেন জেলেরা। প্রজনন মৌসুমে সরকারের দেওয়া অপ্রতুল সহায়তা এবং তা বণ্টন নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতির বিষয়গুলোও আসে সংগঠক এবং গবেষকদের আলোচনায়।
মৎস্য অধিদপ্তরের (ইলিশ ব্যবস্থাপনা) উপপ্রধান মাসুদ আরা মমি বলেন, মৎস্য অধিদপ্তর পদক্ষেপ না নিলে বইপুস্তকে চলে যেত ইলিশ। বিএনপি সরকারের আমলে ইলিশের উৎপাদন একেবারেই শূন্যের কোঠায় নেমে আসে জানিয়ে বর্তমান সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।
মমি বলেন, ‘ইলিশ নাই কথাটা ঠিক না। এখন উৎপাদন ৫ লাখ ৬৭ হাজার টন। ২০০৯ সালে জাটকা নিধন, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং গবেষণা প্রকল্প চালু হয়। ইলিশের যে উন্নয়ন সেটা—এই সরকারের সময়ে হয়েছে। বেসরকারি সংস্থাও গবেষণায় সহায়তা করেছে। ২০১৫ সালে তা শেষ হওয়ার পর মাছ উৎপাদন বেড়েছে, কিন্তু ইলিশের কন্ট্রিবিউশন হয়তো কম। বর্তমানে দেশের ২৯ জেলার ১৩৬টি উপজেলায় ২৪৬ কোটি টাকার ইলিশ উৎপাদন, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’
মাছ ধরা বন্ধের মৌসুমে মাসে ৪০ কেজি ভিজিএফ চাল দেওয়ার বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান বলেন, ‘২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১ লাখ ৪৬ হাজার জেলেকে দেওয়া হতো। এই সরকার যখন আসল, প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় ১০ থেকে ৪০ কেজিতে উন্নীত হয়েছে। আমি মনে করি, এটাও জেলেদের জন্য শেখ হাসিনার সানুগ্রহ সহায়তা। এখন সাত লাখ জেলে সরাসরি ইলিশ আহরণের সঙ্গে জড়িত। ইলিশের উৎপাদন কমছে না। ধরার মানুষ বেড়ে গেছে। আগে যেখানে একজন মানুষ ১০টা ইলিশ পেত, এখন যদি সেখানে ১০ জন মানুষ যায়, কয়টা ইলিশ পাবে? এক নদীতে। আপনাদের বুঝতে হবে।’
ইলিশসহ অন্য মাছ রক্ষায় সরকারে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান মমি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে সংলাপে অংশ নেন উপকূলীয় দুই জেলার সংসদ সদস্য। পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা বলেন, ‘ইলিশ এখন কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার বিষয় হয়ে গেছে। তরমুজের চাষ বাড়ার কারণে ইলিশ কমে যাচ্ছে।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘তরমুজ খেতে নানা ধরনের সার ও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। সেসব আবার নদীতে গিয়ে পড়ছে। তাই ইলিশ তাদের আবাসস্থল আরও গভীরে নিয়ে যাওয়ায় জেলেরা হয়তো মাছ পাচ্ছেন না। কিন্তু সামগ্রিকভাবে সরকারের নানা পদক্ষেপে সব ধরনের মাছ উৎপাদনই বেড়েছে।’
খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘ছোটবেলায় আমরা ইলিশ কিনতাম আধা কেজির আশপাশের আকারের। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে ভোলা থেকে মাছ এনেছি। একেকটির ওজন সর্বনিম্ন ২ কেজি, সর্বোচ্চ ২ কেজি ৮০০ গ্রাম। বন্ধুবান্ধব, রাজনৈতিক সহকর্মী অনেকেই তা দিয়েছি। গতকাল (মঙ্গলবার) ঢাকায় আসার আগে খেয়ে এসেছি। সত্যি কথা বলি, ১৫ মিনিট পরে হাত ও মুখ থেকে গন্ধ (ইলিশের) আসছে। পরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে, দাঁত ব্রাশ করেছি। ৬৫ দিন বন্ধ রাখার কারণে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।’
আখতারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘পলি বাড়ায় নদীর উপকূলে ইলিশের দেখা মিলছে না। নদী খননে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টা রয়েছে। আমাদের গবেষণা দরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেকটি কথা, ধৈর্য সহকারে শোনেন এবং সমাধানের চেষ্টা করেন। আমরা কাছ থেকে দেখেছি, দেশের প্রতি তাঁর যে মমত্ব-মায়া, এটি আমাদের অনেকের ভেতরে থাকলেও তাঁর ভেতরে যেটি আছে, এটি অনন্য। আমরা আজকে যা ভাবছি, উনি অনেক আগে ভেবে রাখেন। এই হচ্ছেন জননেত্রী।’
জেলে কার্ড বেহাত হওয়ার বিষয়ে মৎস্যজীবীদের অভিযোগের বিষয়ে এমপি বাবু বলেন, ‘জেলেদের কার্ড সাহেবদের নামে আপনি-আমিই কিন্তু দিয়েছি। আমার পাশে যে কয়টা বাটপার থাকে, তাদের নাম না দিলে ওরা আবার ফেসবুকে লিখে। আমরা কিন্তু ঠিক না। অন্যের দোষ দিয়ে যাই। মৎস্য কর্মকর্তা, জেলে কর্মকর্তা কী করবেন? ওনার তো দিতেই হবে ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান সুপারিশ করেছেন। তাঁদের দোষ না। দোষী আমরা সবাই।
‘আজকে আড়াই-তিন কেজি ইলিশ পাওয়া যায়। ভোলায়, আমাকে যদি কেউ এখন বলেন আমি কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এনে দিতে পারি। ভোলায় একজন লোক পাঠাব আপনাকে আড়াই কেজি, তিন কেজি ইলিশ এনে দেব। দুই কেজি তো অহরহ। কিছুদিন আগে ছিল না। আমরা যা-ই বলি, নাই নাই নাই। লোক কিন্তু বাড়তেছে। …’
সভাপতির বক্তব্যের শুরুতেই সুলতানা কামাল, দেশের প্রচলিত নিয়ম মেনে সবাইকে মৎস্য আহরণের অনুরোধ করেন।
মৎস্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান মাসুদ আরা মমির উদ্দেশে সুলতানা বলেন, ‘তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আপনার যা বলছেন, তার সুফলটা জেলেদের কাছ থেকে শুনি না কেন? যারা মাছ ধরছেন, তাঁরা শোনেন না কেন? আগে আমরা যারা ভোক্তা প্রতিদিন ইলিশ খেয়েছি, এখন কেন খেতে পারি না। যদি ইলিশের উৎপাদন এতই বেড়ে থাকে, বাবু ভাইয়ের (আখতারুজ্জামান বাবু) যে অবস্থান আছে উনি ইচ্ছে করলে ২৪ ঘণ্টাই ইলিশ খেতে পারেন, কিন্তু আমি সুলতানা কামাল, সাধারণ নাগরিক আমি কিন্তু পারি না। সম্ভব না। আমাকে কেউ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুই কেজির ইলিশ সাপ্লাই (সরবরাহ) দেবে না। আমাকে কিনতে হলে কয়েক হাজার টাকা হাতে নিয়ে বাজারে যেত হবে। তা-ও যদি পাই। এই যে একটা তফাত রয়ে গেছে। এটাই আইনপ্রণেতাদের বলতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নাই। তিনি সব সময় দেশের মানুষের ভালো চান। তাঁর আন্তরিকতা নিয়ে কেউ আমরা প্রশ্ন তুলি না। কিন্তু সেই কাজগুলো হয় না কেন?’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘সেদিন এক মন্ত্রী বলেছেন দেশের মানুষ এখন ডাল-ভাতের জন্য কাঁদে না, মাছ-ভাতের জন্য কাঁদে। বাবু ভাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০০টা ইলিশ মাছ পান, কিন্তু ওই মানুষটা মাছের জন্য কাঁদে কেন? মানবাধিকার কর্মী হিসেবে এটাই আমার প্রশ্ন? আপনি (আখতারুজ্জামান বাবু) বাক্সভরে মানুষকে ইলিশ দিতে পারবেন, আরেকটা মানুষ কেন মাছ-ভাতের জন্য কাঁদবে? তা নিশ্চিতের দায়িত্ব আপনাদের। আপনি পারেন আমি পারি না। এই যে আপনার পারা এবং আমার না পারার মধ্যে এত পার্থক্য হবে কেন?’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু সেই সুফল সবাই পাচ্ছে না। … মমি হিসেবে না, আপনারা রাষ্ট্র, বুঝতে হবে কেন বলছেন ওনারা (জেলেরা) দেশকে ভালোবাসে না তাই এসব কথা বলছে? ওরা কি দেশের শত্রু? শুধু আমি একাই দেশকে ভালোবাসি। এই ঔদ্ধত্য আমি দেখাতে পারি? একমাত্র আমি দেশকে ভালোবাসি, আর কেউ না। এই ঔদ্ধত্য থাকা উচিত না। চিন্তা করতে হবে, কেন জেলেরা বলছেন তাঁরা মাছ পাচ্ছেন না।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই সংসদ সদস্যের উদ্দেশে সুলতানা কামাল বলেন, ‘আপনারা অবকাঠামোগত উন্নয়নে যতটা নজর দিয়েছেন। সাংস্কৃতিক উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে মনোযোগী হন নাই। এটা আমার অভিযোগ। এ কারণেই জেলেদের ধরতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার বিষয়গুলো হচ্ছে। একটা ডিসকানেক্ট (বিচ্ছিন্নতা) রয়ে গেছে। কানেকশনটা (সংযোগ) হয় নাই।’
মমিকে (মাসুদ আরা মমি) আরেকটা কথা বলব, ‘আপনারা সরকারি চাকরি করছেন। বাবু, শাহজাদা ভাইয়েরা কোনো একটা কারণে আইনপ্রণেতার জায়গায় গেছেন। আপনারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহে। কেন সানুগ্রহ হবে? আমার করের পয়সায় এই টাকা আসছে, করের পয়সা প্রধানমন্ত্রী কাস্টডিয়ান (দেখভাল করেন)। তিনি একা না, সরকার কাস্টডিয়ান। সেই টাকা হয়তো, জেলে ভাইদের কাছে আসছে। এটা সানুগ্রহের কী আছে? আপনারা কি কখনো চিন্তা করেন একটা মানুষের পাঁচজনের সংসারে ৪০ কেজি চালে মাস চলে কি না। তারপর কারেন্ট জাল নিয়ে মাছ ধরতে যায়, আর বলেন আইন ভাঙছে। কোন বিবেকে বলেন?’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘দুর্নীতির কথা ধরলামই না। আপনি খুব সৎভাবে ১০টা কার্ড (জেলে) দিতে চান। কোন দশজনকে দেবেন? এখানে পরিকল্পনার ব্যাপার আছে। খালি সানুগ্রহ বললে হবে না। আমরা দয়ার পাত্র হব কেন কারও? আমরা এ দেশের নাগরিক, সম্মানিত নাগরিক। আমি কর দিই। আমি আমার নাগরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করতে চাই। আমি কারও অনুগ্রহ চাই না। দয়া করে আপনারা অনুগ্রহের কথা বলবেন না আমাদের। আমার খুব মনঃকষ্ট হয়।’
সুলতানা কামাল আরও বলেন, ‘আমি বারবার বলছি, প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা এক শ বার বিশ্বাস করি। আপনাদের চেয়ে বেশি দিন ধরে তাঁকে চিনি। জানি তিনি চান বাংলাদেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু অনুগ্রহ করে আমাদের অনুগ্রহের কথা বলবেন না। কেউ বাংলাদেশে এমন নাই যে নাগরিকদের অনুগ্রহ করতে পারে। তিনি (শেখ হাসিনা) তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন। সদিচ্ছার সঙ্গে করছেন, প্রশংসার সঙ্গে করছেন—এটা বলতে পারি। নিশ্চয়ই তাঁকে ধন্যবাদ জানাব। কিন্তু আমাকে কেউ অনুগ্রহ করে, সেটা গ্রহণে রাজি নই।’

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মৈত্রী, বন্ধন এবং মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন গত ১৫ মাস বন্ধ রয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতে মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। ট্রেন তিনটি পুনরায় চালানোর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের তরফ থেকে এ পর্যন্ত দুই দফা ভারতকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো উত্তর মেলেনি।
৯ ঘণ্টা আগে
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রশ্নে সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা এর আগে যেকোনো দিন গণভোট করতে পারবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সুপারিশে এই প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল মঙ্গলবার এই সুপারিশমালা জমা দিয়েছে...
৯ ঘণ্টা আগে
তিন বিচারপতিকে কোনো শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়নি। প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবল মামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এটি আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়। তাই আদালতসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের আগে সত্যতা যাচাই করতে গণমাধ্যমের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন সুপ্রি
১৩ ঘণ্টা আগে
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য থাকতে পারেন, যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভোটের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে এবং অন্যরা ভোটের এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন।
১৩ ঘণ্টা আগেতৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মৈত্রী, বন্ধন এবং মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন গত ১৫ মাস বন্ধ রয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতে মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। ট্রেন তিনটি পুনরায় চালানোর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের তরফ থেকে এ পর্যন্ত দুই দফা ভারতকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো উত্তর মেলেনি। এ অবস্থায় আবারও চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
ঢাকা-নিউ জলপাইগুঁড়ি পথে মিতালী এক্সপ্রেস, ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং খুলনা-কলকাতা পথে বন্ধন এক্সপ্রেস চলাচল করত। রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই থেকে এসব ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাসংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ৩৮তম আন্তসরকার রেলওয়ে সভার (আইজিআরএম) প্রস্তুতিমূলক সভায় ভারতকে পুনরায় চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেল মন্ত্রণালয়ে ৬ অক্টোবর ওই সভা হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে চিঠি প্রস্তুত করে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে সেই চিঠি পাঠানো হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এ মন্ত্রণালয় চিঠিটি ভারতকে পাঠাবে বলে রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ড প্রতিবছর আইজিআরএম করে। ৩৮তম আইজিআরএম ২০২৬ সালের মার্চে ঢাকায় হওয়ার কথা। তবে সেটি হবে কি না এখনো চূড়ান্ত নয়।
জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম মঙ্গলবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এর আগেও কয়েকবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি দেওয়া হয়েছে ভারতকে। আন্তদেশীয় ট্রেন চালু করতে, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতকে আবারও চিঠি লিখব। আমাদের দিক থেকে আগ্রহের যে কমতি নেই, সেটা আমরা প্রমাণ করতে চাই। এ ছাড়া আরও অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আইজিআরএমের প্রস্তুতিমূলক সভায়।’
প্রস্তুতিমূলক সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, এ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে আন্তদেশীয় যাত্রীবাহী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন পদ্মা সেতু দিয়ে পরিচালনার বিষয়ে দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে ভারতীয় রেলওয়েকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠাবে। এ প্রস্তাবে রাতের বেলা ট্রেন পরিচালনার বিষয়টিও উল্লেখ করা হবে। এ ছাড়া আন্তদেশীয় যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীদের অতিরিক্ত মালামাল পরিবহনের জন্য লাগেজ ভ্যান সংযুক্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে ভারতীয় রেলওয়েকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ওই সভায়।
একসঙ্গে রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন পরিচালনার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনের জন্য একটি প্রস্তাব বাংলাদেশ রেলওয়েকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে প্রস্তুতিমূলক আইজিআরএম সভা থেকে।
বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের এন্ড টু এন্ড কাস্টম ও ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষ করার জন্য খুলনা স্টেশনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণসহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া রেলপথে যাতায়াতের জন্য আলাদা ভিসা দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারত সরকারকে চিঠি পাঠাবে রেল মন্ত্রণালয়।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, উভয় দেশের পণ্য পরিবহনে রেলপথ ব্যবহারে ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ এবং পণ্যবাহী ট্রেন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। দর্শনা-গেদে, পেট্রাপোল-বেনাপোল এবং রোহনপুর-সিঙ্গাবাদ সীমান্ত দিয়ে ২৪ ঘণ্টা পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আইজিআরএমের প্রস্তুতিমূলক সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা যায়, সভায় প্রায় ২৯টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল, আন্তসীমান্ত যোগাযোগ এবং যৌথ প্রকল্পসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
রেলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তদেশীয় ট্রেন চালানোর জন্য এর আগেও ভারতকে দুই দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে ভারত সেভাবে আগ্রহ দেখায়নি। এমনকি চিঠির উত্তর পর্যন্ত দেয়নি। নিরাপত্তাসংক্রান্ত ইস্যুতে ট্রেন চালাতে চায় না তারা। বর্তমানে পণ্যবাহী ট্রেন চলছে। তবে তা আগের তুলনায় কম। ভারতের পর্যটন ভিসা বন্ধ রয়েছে। ফলে এ সরকারের আমলে পুনরায় এসব ট্রেন চালু হবে কি না, সেটা অনিশ্চিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিকিৎসা বা অন্য জরুরি ভিসা দেওয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে দিল্লি।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে উভয় দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে বাংলাদেশ ট্রেন চলাচলের প্রস্তাব দিলে ভারতের সেটা বিবেচনায় নিয়ে চালানো উচিত। ভূরাজনীতির বাইরেও বাংলাদেশ-ভারত প্রতিবেশী দেশ। মানুষের এই ট্রেনগুলো প্রয়োজন। ফলে যাত্রীবাহী আন্তদেশীয় ট্রেনগুলো চালু হলে উভয় দেশের জনগণের জন্য ভালো হবে। এটা যত দ্রুত সম্ভব চালু করা উচিত।’

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মৈত্রী, বন্ধন এবং মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন গত ১৫ মাস বন্ধ রয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতে মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। ট্রেন তিনটি পুনরায় চালানোর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের তরফ থেকে এ পর্যন্ত দুই দফা ভারতকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো উত্তর মেলেনি। এ অবস্থায় আবারও চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
ঢাকা-নিউ জলপাইগুঁড়ি পথে মিতালী এক্সপ্রেস, ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং খুলনা-কলকাতা পথে বন্ধন এক্সপ্রেস চলাচল করত। রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই থেকে এসব ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাসংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ৩৮তম আন্তসরকার রেলওয়ে সভার (আইজিআরএম) প্রস্তুতিমূলক সভায় ভারতকে পুনরায় চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেল মন্ত্রণালয়ে ৬ অক্টোবর ওই সভা হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে চিঠি প্রস্তুত করে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে সেই চিঠি পাঠানো হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এ মন্ত্রণালয় চিঠিটি ভারতকে পাঠাবে বলে রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ড প্রতিবছর আইজিআরএম করে। ৩৮তম আইজিআরএম ২০২৬ সালের মার্চে ঢাকায় হওয়ার কথা। তবে সেটি হবে কি না এখনো চূড়ান্ত নয়।
জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম মঙ্গলবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এর আগেও কয়েকবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি দেওয়া হয়েছে ভারতকে। আন্তদেশীয় ট্রেন চালু করতে, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতকে আবারও চিঠি লিখব। আমাদের দিক থেকে আগ্রহের যে কমতি নেই, সেটা আমরা প্রমাণ করতে চাই। এ ছাড়া আরও অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আইজিআরএমের প্রস্তুতিমূলক সভায়।’
প্রস্তুতিমূলক সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, এ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে আন্তদেশীয় যাত্রীবাহী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন পদ্মা সেতু দিয়ে পরিচালনার বিষয়ে দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে ভারতীয় রেলওয়েকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠাবে। এ প্রস্তাবে রাতের বেলা ট্রেন পরিচালনার বিষয়টিও উল্লেখ করা হবে। এ ছাড়া আন্তদেশীয় যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীদের অতিরিক্ত মালামাল পরিবহনের জন্য লাগেজ ভ্যান সংযুক্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে ভারতীয় রেলওয়েকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ওই সভায়।
একসঙ্গে রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন পরিচালনার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনের জন্য একটি প্রস্তাব বাংলাদেশ রেলওয়েকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে প্রস্তুতিমূলক আইজিআরএম সভা থেকে।
বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের এন্ড টু এন্ড কাস্টম ও ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষ করার জন্য খুলনা স্টেশনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণসহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া রেলপথে যাতায়াতের জন্য আলাদা ভিসা দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারত সরকারকে চিঠি পাঠাবে রেল মন্ত্রণালয়।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, উভয় দেশের পণ্য পরিবহনে রেলপথ ব্যবহারে ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ এবং পণ্যবাহী ট্রেন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। দর্শনা-গেদে, পেট্রাপোল-বেনাপোল এবং রোহনপুর-সিঙ্গাবাদ সীমান্ত দিয়ে ২৪ ঘণ্টা পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আইজিআরএমের প্রস্তুতিমূলক সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা যায়, সভায় প্রায় ২৯টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল, আন্তসীমান্ত যোগাযোগ এবং যৌথ প্রকল্পসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
রেলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তদেশীয় ট্রেন চালানোর জন্য এর আগেও ভারতকে দুই দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে ভারত সেভাবে আগ্রহ দেখায়নি। এমনকি চিঠির উত্তর পর্যন্ত দেয়নি। নিরাপত্তাসংক্রান্ত ইস্যুতে ট্রেন চালাতে চায় না তারা। বর্তমানে পণ্যবাহী ট্রেন চলছে। তবে তা আগের তুলনায় কম। ভারতের পর্যটন ভিসা বন্ধ রয়েছে। ফলে এ সরকারের আমলে পুনরায় এসব ট্রেন চালু হবে কি না, সেটা অনিশ্চিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিকিৎসা বা অন্য জরুরি ভিসা দেওয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে দিল্লি।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে উভয় দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে বাংলাদেশ ট্রেন চলাচলের প্রস্তাব দিলে ভারতের সেটা বিবেচনায় নিয়ে চালানো উচিত। ভূরাজনীতির বাইরেও বাংলাদেশ-ভারত প্রতিবেশী দেশ। মানুষের এই ট্রেনগুলো প্রয়োজন। ফলে যাত্রীবাহী আন্তদেশীয় ট্রেনগুলো চালু হলে উভয় দেশের জনগণের জন্য ভালো হবে। এটা যত দ্রুত সম্ভব চালু করা উচিত।’

‘উপকূলের ইলিশ ও জেলে’বিষয়ক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অগণিত দুই কেজির ইলিশ ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিলেন এক সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। তিনি নিজে সাম্প্রতিক সময়ে তিন কেজির ইলিশও খেয়েছেন বলেও জানান। যদিও সংলাপে উপস্থিত জেলেরা জানান, তাঁরা মাছ পাচ্ছেন না।
১৭ মে ২০২৩
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রশ্নে সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা এর আগে যেকোনো দিন গণভোট করতে পারবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সুপারিশে এই প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল মঙ্গলবার এই সুপারিশমালা জমা দিয়েছে...
৯ ঘণ্টা আগে
তিন বিচারপতিকে কোনো শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়নি। প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবল মামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এটি আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়। তাই আদালতসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের আগে সত্যতা যাচাই করতে গণমাধ্যমের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন সুপ্রি
১৩ ঘণ্টা আগে
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য থাকতে পারেন, যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভোটের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে এবং অন্যরা ভোটের এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন।
১৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রশ্নে সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা এর আগে যেকোনো দিন গণভোট করতে পারবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সুপারিশে এই প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল মঙ্গলবার এই সুপারিশমালা জমা দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন।
দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই সুপারিশমালা হস্তান্তর করা হয়। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
সুপারিশে প্রথমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পরে আদেশের প্রশ্নে গণভোট এবং সর্বশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারকে আদেশ জারি করার পরামর্শ দিয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপের সংলাপের ভিত্তিতে রাষ্ট্রকাঠামোর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৮৫টি সংস্কার প্রস্তাব তিন ভাগে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে সুপারিশে। এগুলোর মধ্যে ৯টি নির্বাহী আদেশ এবং ২৮টি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সংবিধান-সম্পর্কিত বাকি ৪৮টি বাস্তবায়নের জন্য দুটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। দুটির বেশির ভাগ বিষয় এক হলেও একটির গণভোটের বিষয়ে ভিন্নতা রয়েছে।
বিকল্প দুটি প্রস্তাবে গণভোটের দিনক্ষণ ঠিক করা সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারির পর থেকে জাতীয় নির্বাচনের দিন পর্যন্ত যেকোনো দিন গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। এ বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আদেশ জারির পর থেকে যেকোনো দিন বা জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট করতে পারবে। তবে কবে করবে, সেই সিদ্ধান্ত সরকার নেবে। সরকারকে বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য। তিনি মনে করেন, জনগণ গণভোটে সনদ প্রত্যাখ্যান করবে না।
রমজান মাসের আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি ভোটের দিন গণভোট চেয়েছে।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী আসছে নভেম্বরে ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ভোটের আগে গণভোট দাবি করেছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির ভিত্তি হিসেবে দুটি প্রস্তাবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা ও অভিপ্রায়ের কথা বলা হয়েছে। জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণের অনুমোদন প্রয়োজন। যার জন্য গণভোট, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন ও পরিষদ কর্তৃক সংবিধান সংস্কার অপরিহার্য।
বিকল্প প্রস্তাব-১-এ বলা হয়েছে, গণভোটের আগে জনগণকে জানাতে এবং সাংবিধানিক পরিষদের দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে জাতীয় সনদের অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবের ভিত্তিতে সরকারের প্রস্তুত করা খসড়া বিল গণভোটে দেওয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে ৪৮ প্রস্তাব বিল আকারে করতে হবে। সেখানে গণভোটের প্রশ্ন হবে ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং এতে সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার-সম্পর্কিত খসড়া বিলের প্রস্তাবসমূহ সমর্থন করছেন?’ গণভোট করতে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় আইন তৈরি করতে বলা হয়েছে।
গণভোটের ফল ইতিবাচক হলে আগামী জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দ্বৈত ভূমিকা পালন করবেন। তাঁরা নিয়মিত সংসদ সদস্যের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদের দায়িত্ব পালন করবেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা একই অনুষ্ঠানে প্রথমে এমপি এবং পরে সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন। প্রথম অধিবেশন থেকে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হলে সংবিধান সংস্কার বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে গৃহীত হয়ে যাবে এবং সংবিধান সংস্কার আইনরূপে কার্যকর হবে। স্পিকারই পরিষদের সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। সংবিধান সংস্কার কার্যকরের ৪৫ দিনের মধ্যে আগামী সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে।
বিকল্প প্রস্তাব-২-এ আদেশ খসড়া বিলের কথা বলা নেই। সে ক্ষেত্রে গণভোটের প্রশ্ন থাকবে, ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং তাতে সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবসমূহের প্রতি সমর্থন করেন?’ এ ক্ষেত্রে সংবিধান সংস্কার পরিষদকে গাঠনিক ক্ষমতা দেওয়া হলেও প্রথম অধিবেশন শুরুর ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কার শেষ করবে এবং এরপর পরিষদের কার্যক্রম শেষ হবে। বাকি ধারাগুলো একই আছে।
সংস্কার পরিষদের ক্ষমতা সম্পর্কে কমিশনের সহসভাপতি বলেন, সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্যরা জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত এবং গণভোটে যদি জনগণের সম্মতি পাওয়া যায়, সেই বিষয়গুলো সংবিধানে সংযুক্ত করার জন্য প্রয়োজন সব রকম বিধিবিধান প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন করবেন। আদেশ জারির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার আদেশ দেবে বলেছি। সরকার আইনি এবং বিভিন্ন বিষয়ে বিবেচনা করেই নিশ্চয় একটি সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এটা সরকারের হাতে রেখেছি।’
জুলাই জাতীয় সনদে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আপত্তির (নোট অব ডিসেন্ট) কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবায়নের সুপারিশে সেটি রাখা হয়নি। দলগুলোর দেওয়া আপত্তি নিয়ে কী হবে জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, তাঁরা সরকারকে বলেছেন এগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে। জনগণের রায় পাওয়ার পর রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত নেবে। কমিশন ৪৮ বিষয়ে জনগণের সম্মতি-অসম্মতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
সংবিধান-সম্পর্কিত ৪৮টি প্রস্তাবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো—সংবিধান সংশোধন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদ, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ, ন্যায়পাল নিয়োগ, সরকারি কর্ম কমিশন নিয়োগ, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক নিয়োগ, দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগ।
অধ্যাদেশে জারির জন্য ২৮টি প্রস্তাবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, বিচারক ও সাবেক বিচারকদের জন্য পালনীয় আচরণবিধি, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, স্বাধীন ও স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন, তিনটি সরকারি কর্ম কমিশন গঠন, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন, বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতা দানের চর্চা বন্ধ করা, জনপ্রতিনিধিদের সম্পদ ও আয়-ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ, দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলসমূহের করণীয়, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর সংশোধন।
নির্বাহী আদেশে জুলাই সনদের ৯টি প্রস্তাব বর্তমান সরকার বাস্তবায়ন করতে পারবে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ, আদালত ব্যবস্থাপনা সংস্কার ও ডিজিটাইজ করা, আইনজীবীদের আচরণবিধি, গণহত্যা এবং ভোট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠন।
রাজনৈতিক দল এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন উপায়ের সুপারিশ কমিশন তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, বিশেষজ্ঞদের মতামত, আমাদের কমিশনের সম্মানিত সদস্যদের অভিজ্ঞতা এবং আন্তরিকতার প্রেক্ষাপটে আমরা সুপারিশগুলো তৈরি করেছি। এই সুপারিশের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ যেন একটি আইনি ভিত্তি পায়। ভবিষ্যতের পথরেখা হিসেবে যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো যেন বাস্তবায়িত হয়।’
সব দলের জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, যারা স্বাক্ষর করেনি, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। এনসিপির সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে, হচ্ছে। তাঁর আশা, এনসিপি স্বাক্ষর করবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রশ্নে সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা এর আগে যেকোনো দিন গণভোট করতে পারবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সুপারিশে এই প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল মঙ্গলবার এই সুপারিশমালা জমা দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন।
দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই সুপারিশমালা হস্তান্তর করা হয়। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
সুপারিশে প্রথমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পরে আদেশের প্রশ্নে গণভোট এবং সর্বশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারকে আদেশ জারি করার পরামর্শ দিয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপের সংলাপের ভিত্তিতে রাষ্ট্রকাঠামোর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৮৫টি সংস্কার প্রস্তাব তিন ভাগে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে সুপারিশে। এগুলোর মধ্যে ৯টি নির্বাহী আদেশ এবং ২৮টি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সংবিধান-সম্পর্কিত বাকি ৪৮টি বাস্তবায়নের জন্য দুটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। দুটির বেশির ভাগ বিষয় এক হলেও একটির গণভোটের বিষয়ে ভিন্নতা রয়েছে।
বিকল্প দুটি প্রস্তাবে গণভোটের দিনক্ষণ ঠিক করা সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারির পর থেকে জাতীয় নির্বাচনের দিন পর্যন্ত যেকোনো দিন গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। এ বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আদেশ জারির পর থেকে যেকোনো দিন বা জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট করতে পারবে। তবে কবে করবে, সেই সিদ্ধান্ত সরকার নেবে। সরকারকে বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য। তিনি মনে করেন, জনগণ গণভোটে সনদ প্রত্যাখ্যান করবে না।
রমজান মাসের আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি ভোটের দিন গণভোট চেয়েছে।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী আসছে নভেম্বরে ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ভোটের আগে গণভোট দাবি করেছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির ভিত্তি হিসেবে দুটি প্রস্তাবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা ও অভিপ্রায়ের কথা বলা হয়েছে। জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণের অনুমোদন প্রয়োজন। যার জন্য গণভোট, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন ও পরিষদ কর্তৃক সংবিধান সংস্কার অপরিহার্য।
বিকল্প প্রস্তাব-১-এ বলা হয়েছে, গণভোটের আগে জনগণকে জানাতে এবং সাংবিধানিক পরিষদের দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে জাতীয় সনদের অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবের ভিত্তিতে সরকারের প্রস্তুত করা খসড়া বিল গণভোটে দেওয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে ৪৮ প্রস্তাব বিল আকারে করতে হবে। সেখানে গণভোটের প্রশ্ন হবে ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং এতে সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার-সম্পর্কিত খসড়া বিলের প্রস্তাবসমূহ সমর্থন করছেন?’ গণভোট করতে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় আইন তৈরি করতে বলা হয়েছে।
গণভোটের ফল ইতিবাচক হলে আগামী জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দ্বৈত ভূমিকা পালন করবেন। তাঁরা নিয়মিত সংসদ সদস্যের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদের দায়িত্ব পালন করবেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা একই অনুষ্ঠানে প্রথমে এমপি এবং পরে সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন। প্রথম অধিবেশন থেকে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হলে সংবিধান সংস্কার বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে গৃহীত হয়ে যাবে এবং সংবিধান সংস্কার আইনরূপে কার্যকর হবে। স্পিকারই পরিষদের সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। সংবিধান সংস্কার কার্যকরের ৪৫ দিনের মধ্যে আগামী সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে।
বিকল্প প্রস্তাব-২-এ আদেশ খসড়া বিলের কথা বলা নেই। সে ক্ষেত্রে গণভোটের প্রশ্ন থাকবে, ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং তাতে সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবসমূহের প্রতি সমর্থন করেন?’ এ ক্ষেত্রে সংবিধান সংস্কার পরিষদকে গাঠনিক ক্ষমতা দেওয়া হলেও প্রথম অধিবেশন শুরুর ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কার শেষ করবে এবং এরপর পরিষদের কার্যক্রম শেষ হবে। বাকি ধারাগুলো একই আছে।
সংস্কার পরিষদের ক্ষমতা সম্পর্কে কমিশনের সহসভাপতি বলেন, সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্যরা জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত এবং গণভোটে যদি জনগণের সম্মতি পাওয়া যায়, সেই বিষয়গুলো সংবিধানে সংযুক্ত করার জন্য প্রয়োজন সব রকম বিধিবিধান প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন করবেন। আদেশ জারির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার আদেশ দেবে বলেছি। সরকার আইনি এবং বিভিন্ন বিষয়ে বিবেচনা করেই নিশ্চয় একটি সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এটা সরকারের হাতে রেখেছি।’
জুলাই জাতীয় সনদে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আপত্তির (নোট অব ডিসেন্ট) কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবায়নের সুপারিশে সেটি রাখা হয়নি। দলগুলোর দেওয়া আপত্তি নিয়ে কী হবে জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, তাঁরা সরকারকে বলেছেন এগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে। জনগণের রায় পাওয়ার পর রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত নেবে। কমিশন ৪৮ বিষয়ে জনগণের সম্মতি-অসম্মতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
সংবিধান-সম্পর্কিত ৪৮টি প্রস্তাবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো—সংবিধান সংশোধন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদ, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ, ন্যায়পাল নিয়োগ, সরকারি কর্ম কমিশন নিয়োগ, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক নিয়োগ, দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগ।
অধ্যাদেশে জারির জন্য ২৮টি প্রস্তাবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, বিচারক ও সাবেক বিচারকদের জন্য পালনীয় আচরণবিধি, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, স্বাধীন ও স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন, তিনটি সরকারি কর্ম কমিশন গঠন, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন, বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতা দানের চর্চা বন্ধ করা, জনপ্রতিনিধিদের সম্পদ ও আয়-ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ, দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলসমূহের করণীয়, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর সংশোধন।
নির্বাহী আদেশে জুলাই সনদের ৯টি প্রস্তাব বর্তমান সরকার বাস্তবায়ন করতে পারবে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ, আদালত ব্যবস্থাপনা সংস্কার ও ডিজিটাইজ করা, আইনজীবীদের আচরণবিধি, গণহত্যা এবং ভোট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠন।
রাজনৈতিক দল এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন উপায়ের সুপারিশ কমিশন তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, বিশেষজ্ঞদের মতামত, আমাদের কমিশনের সম্মানিত সদস্যদের অভিজ্ঞতা এবং আন্তরিকতার প্রেক্ষাপটে আমরা সুপারিশগুলো তৈরি করেছি। এই সুপারিশের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ যেন একটি আইনি ভিত্তি পায়। ভবিষ্যতের পথরেখা হিসেবে যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো যেন বাস্তবায়িত হয়।’
সব দলের জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, যারা স্বাক্ষর করেনি, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। এনসিপির সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে, হচ্ছে। তাঁর আশা, এনসিপি স্বাক্ষর করবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

‘উপকূলের ইলিশ ও জেলে’বিষয়ক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অগণিত দুই কেজির ইলিশ ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিলেন এক সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। তিনি নিজে সাম্প্রতিক সময়ে তিন কেজির ইলিশও খেয়েছেন বলেও জানান। যদিও সংলাপে উপস্থিত জেলেরা জানান, তাঁরা মাছ পাচ্ছেন না।
১৭ মে ২০২৩
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মৈত্রী, বন্ধন এবং মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন গত ১৫ মাস বন্ধ রয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতে মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। ট্রেন তিনটি পুনরায় চালানোর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের তরফ থেকে এ পর্যন্ত দুই দফা ভারতকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো উত্তর মেলেনি।
৯ ঘণ্টা আগে
তিন বিচারপতিকে কোনো শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়নি। প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবল মামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এটি আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়। তাই আদালতসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের আগে সত্যতা যাচাই করতে গণমাধ্যমের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন সুপ্রি
১৩ ঘণ্টা আগে
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য থাকতে পারেন, যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভোটের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে এবং অন্যরা ভোটের এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন।
১৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

তিন বিচারপতিকে কোনো শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়নি। প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবল মামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এটি আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়। তাই আদালতসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের আগে সত্যতা যাচাই করতে গণমাধ্যমের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিপুলসংখ্যক জামিন দেওয়ায় হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতিকে শোকজ করে তাঁদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্পেশাল অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোছাইন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এবং ফোন করে তিনজন বিচারপতি, যথা বিচারপতি আবু তাহের সাইফুর রহমান, বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি জাকির হোসেনকে ওই নোটিশ সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাস্তবে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ উল্লিখিত তিনজন বিচারপতিকে কোনো শোকজ বা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেননি, বরং প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবল মামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন, যা আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার একটি নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়।
তথ্য চাওয়ার বিষয়টি আদালতের বিশেষ একটি যোগাযোগব্যবস্থা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নানা সংবাদে ব্যবহৃত তথ্যে মূল বিষয়টি বিকৃত ও ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে তা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের প্রতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা হচ্ছে, প্রতিটি গণমাধ্যম আদালতসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের আগে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সংবাদ প্রচার করবে, যাতে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন থাকে এবং জনগণ বিভ্রান্ত না হয়।
কয়েক দিন আগে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উচ্চ আদালতের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা ওঠার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যেমন ধরেন, আপনারা জানেন সাম্প্রতিককালে আপনারা কেউ এটা ইনভেস্টিগেট (অনুসন্ধান) করেননি। আপনাদের অনুরোধ করব, ইনভেস্টিগেট করেন যে, একটা উচ্চ আদালতের একটা বেঞ্চ এক দিনে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় প্রায় ৮০০ মামলায় জামিন দিয়েছেন। জামিন তিনি দিতেই পারেন, কিন্তু চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় ৮০০ মামলা কি শোনা সম্ভব?’

তিন বিচারপতিকে কোনো শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়নি। প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবল মামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এটি আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়। তাই আদালতসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের আগে সত্যতা যাচাই করতে গণমাধ্যমের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিপুলসংখ্যক জামিন দেওয়ায় হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতিকে শোকজ করে তাঁদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্পেশাল অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোছাইন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এবং ফোন করে তিনজন বিচারপতি, যথা বিচারপতি আবু তাহের সাইফুর রহমান, বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি জাকির হোসেনকে ওই নোটিশ সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাস্তবে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ উল্লিখিত তিনজন বিচারপতিকে কোনো শোকজ বা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেননি, বরং প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবল মামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন, যা আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার একটি নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়।
তথ্য চাওয়ার বিষয়টি আদালতের বিশেষ একটি যোগাযোগব্যবস্থা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নানা সংবাদে ব্যবহৃত তথ্যে মূল বিষয়টি বিকৃত ও ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে তা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের প্রতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা হচ্ছে, প্রতিটি গণমাধ্যম আদালতসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের আগে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সংবাদ প্রচার করবে, যাতে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন থাকে এবং জনগণ বিভ্রান্ত না হয়।
কয়েক দিন আগে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উচ্চ আদালতের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা ওঠার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যেমন ধরেন, আপনারা জানেন সাম্প্রতিককালে আপনারা কেউ এটা ইনভেস্টিগেট (অনুসন্ধান) করেননি। আপনাদের অনুরোধ করব, ইনভেস্টিগেট করেন যে, একটা উচ্চ আদালতের একটা বেঞ্চ এক দিনে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় প্রায় ৮০০ মামলায় জামিন দিয়েছেন। জামিন তিনি দিতেই পারেন, কিন্তু চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় ৮০০ মামলা কি শোনা সম্ভব?’

‘উপকূলের ইলিশ ও জেলে’বিষয়ক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অগণিত দুই কেজির ইলিশ ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিলেন এক সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। তিনি নিজে সাম্প্রতিক সময়ে তিন কেজির ইলিশও খেয়েছেন বলেও জানান। যদিও সংলাপে উপস্থিত জেলেরা জানান, তাঁরা মাছ পাচ্ছেন না।
১৭ মে ২০২৩
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মৈত্রী, বন্ধন এবং মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন গত ১৫ মাস বন্ধ রয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতে মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। ট্রেন তিনটি পুনরায় চালানোর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের তরফ থেকে এ পর্যন্ত দুই দফা ভারতকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো উত্তর মেলেনি।
৯ ঘণ্টা আগে
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রশ্নে সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা এর আগে যেকোনো দিন গণভোট করতে পারবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সুপারিশে এই প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল মঙ্গলবার এই সুপারিশমালা জমা দিয়েছে...
৯ ঘণ্টা আগে
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য থাকতে পারেন, যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভোটের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে এবং অন্যরা ভোটের এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন।
১৩ ঘণ্টা আগেবাসস, ঢাকা

বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য একটি বৃহৎ প্রতিনিধিদল পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)। ২০০৮ সালের পর এটিই হবে ইইউর প্রথম পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন।
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এ তথ্য জানান।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য থাকতে পারেন, যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভোটের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে ও অন্যরা ভোটের এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন।
মিলার জানান, ২০০৮ সালের পর এই প্রথম ইইউ বাংলাদেশে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত আরও জানান, ভোটের সময় স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিয়োগেও সহায়তা করবে ইইউ।
প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে উভয় পক্ষ সাংবিধানিক সংস্কার, নির্বাচন প্রস্তুতি, বিচার বিভাগ ও শ্রম খাতের সংস্কার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক এবং দেশের সার্বিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন।
রাষ্ট্রদূত মিলার জুলাই জাতীয় সনদকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এটি গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে মসৃণ করতে সহায়ক হবে।
সম্প্রতি অনুমোদিত শ্রম আইন সংস্কার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা জোরদারের পদক্ষেপগুলোকে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।
‘এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’—উল্লেখ করে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশনকে ইইউর অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
মিলার আসন্ন নির্বাচনকে ‘দেশের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের সুযোগ’ বলে মন্তব্য করেন।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ইইউ বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়াকে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বৈঠকে উভয় পক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে।
এর মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির সম্ভাবনা এবং বিমান ও নৌপরিবহন খাতে নতুন সুযোগ অনুসন্ধানের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ ছাড়া মানব পাচার ও অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার বিষয়ে তাঁরা একমত হন।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া টার্মিনালের উন্নয়ন ও পরিচালনায় বৈশ্বিক শিপিং কোম্পানি এ পি মোলারমায়ার্সকের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ডেনমার্কের এই প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে লালদিয়াকে এই অঞ্চলের অন্যতম আধুনিক টার্মিনালে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে।
বৈঠকে নির্বাচনী পরিবেশ, প্রার্থীদের যোগ্যতা ও মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়েও আলোচনা হয়।

বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য একটি বৃহৎ প্রতিনিধিদল পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)। ২০০৮ সালের পর এটিই হবে ইইউর প্রথম পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন।
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এ তথ্য জানান।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য থাকতে পারেন, যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভোটের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে ও অন্যরা ভোটের এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন।
মিলার জানান, ২০০৮ সালের পর এই প্রথম ইইউ বাংলাদেশে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত আরও জানান, ভোটের সময় স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিয়োগেও সহায়তা করবে ইইউ।
প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে উভয় পক্ষ সাংবিধানিক সংস্কার, নির্বাচন প্রস্তুতি, বিচার বিভাগ ও শ্রম খাতের সংস্কার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক এবং দেশের সার্বিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন।
রাষ্ট্রদূত মিলার জুলাই জাতীয় সনদকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এটি গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে মসৃণ করতে সহায়ক হবে।
সম্প্রতি অনুমোদিত শ্রম আইন সংস্কার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা জোরদারের পদক্ষেপগুলোকে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।
‘এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’—উল্লেখ করে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশনকে ইইউর অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
মিলার আসন্ন নির্বাচনকে ‘দেশের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের সুযোগ’ বলে মন্তব্য করেন।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ইইউ বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়াকে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বৈঠকে উভয় পক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে।
এর মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির সম্ভাবনা এবং বিমান ও নৌপরিবহন খাতে নতুন সুযোগ অনুসন্ধানের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ ছাড়া মানব পাচার ও অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার বিষয়ে তাঁরা একমত হন।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া টার্মিনালের উন্নয়ন ও পরিচালনায় বৈশ্বিক শিপিং কোম্পানি এ পি মোলারমায়ার্সকের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ডেনমার্কের এই প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে লালদিয়াকে এই অঞ্চলের অন্যতম আধুনিক টার্মিনালে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে।
বৈঠকে নির্বাচনী পরিবেশ, প্রার্থীদের যোগ্যতা ও মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়েও আলোচনা হয়।

‘উপকূলের ইলিশ ও জেলে’বিষয়ক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অগণিত দুই কেজির ইলিশ ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিলেন এক সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। তিনি নিজে সাম্প্রতিক সময়ে তিন কেজির ইলিশও খেয়েছেন বলেও জানান। যদিও সংলাপে উপস্থিত জেলেরা জানান, তাঁরা মাছ পাচ্ছেন না।
১৭ মে ২০২৩
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মৈত্রী, বন্ধন এবং মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন গত ১৫ মাস বন্ধ রয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতে মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। ট্রেন তিনটি পুনরায় চালানোর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের তরফ থেকে এ পর্যন্ত দুই দফা ভারতকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো উত্তর মেলেনি।
৯ ঘণ্টা আগে
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রশ্নে সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা এর আগে যেকোনো দিন গণভোট করতে পারবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সুপারিশে এই প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল মঙ্গলবার এই সুপারিশমালা জমা দিয়েছে...
৯ ঘণ্টা আগে
তিন বিচারপতিকে কোনো শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়নি। প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবল মামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এটি আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়। তাই আদালতসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের আগে সত্যতা যাচাই করতে গণমাধ্যমের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন সুপ্রি
১৩ ঘণ্টা আগে