Ajker Patrika

সামাজিক সুরক্ষা বাজেটের খুব কমই পায় দরিদ্ররা, আলোচনা সভায় বক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৪: ৫১
Thumbnail image
শনিবার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে অংশীদারিত্ব উদ্‌যাপন এবং প্রকাশনা উৎসব’। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরকারি পর্যায়ে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের বরাদ্দ করা বাজেটের খুব কমই পায় দরিদ্ররা। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী, বয়স্ক ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী, চা-শ্রমিক, হিজড়া, বেদে ও ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মানুষ যে নগদ অর্থ পায়, তার পরিমাণ খুবই সামান্য। দেখা গেছে, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের বাজেটের অর্ধেক বা তারও বেশি সুবিধাভোগীই আসলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী নয়।

আজ শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে অংশীদারিত্ব উদ্‌যাপন এবং প্রকাশনা উৎসব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তাদের আলোচনায় এ তথ্য জানানো হয়।

ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টার (বিআরসি), সোসাইটি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সোসাইটি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (সেড) পরিচালক ফিলিপ গাইন। তিনি জানান, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের বাজেট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা, যা জাতীয় বাজেটের ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং জিডিপির ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে এই বাজেটের বড় অংশ দরিদ্র নয় এমন সুবিধাভোগীদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে পেনশনভোগী, সঞ্চয়পত্র ক্রেতা ও মুক্তিযোদ্ধারা উল্লেখযোগ্য।

ফিলিপ গাইন উল্লেখ করেন, বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা নারী, বয়স্ক ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী, চা-শ্রমিক, হিজড়া, বেদে এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য নগদ সাহায্যের পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য। উদাহরণস্বরূপ:

-বিধবা বা স্বামী নিগৃহীতার মাসিক ভাতা: ৫৫০ টাকা

-বয়স্ক ব্যক্তির মাসিক ভাতা: ৬০০ টাকা

-প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা: ৮৫০ টাকা

-হিজড়াদের মাসিক ভাতা: ৬০০ টাকা

-বেদে জনগোষ্ঠীর মাসিক ভাতা: ৫০০ টাকা

-চা শ্রমিকদের বছরে প্রায় ৫ হাজার টাকা

এই নগদ সাহায্য তাঁদের জীবনে সামান্যই প্রভাব ফেলে। এর ওপর রাজনৈতিক বিবেচনা, দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির কারণে অনেক যোগ্য ব্যক্তি এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, চা-শ্রমিক ও হরিজনদের মতো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভূমির ওপর কোনো অধিকার নেই। চা-শ্রমিকেরা ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাগানের লেবার লাইনে বাস করলেও, তাঁদের ভূমির মালিকানা দেওয়া হয়নি। একইভাবে, হরিজনরা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জমিতে কয়েক শ বছর ধরে বাস করলেও তাঁরা ভূমিহীন।

এ সমস্যা সমাধানে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা উঠে এসেছে আলোচনায়।

এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও বনজীবী জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রের বনভূমিতে তাঁদের প্রথাগত অধিকার হারিয়েছেন। ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকে শুরু হওয়া এই সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমি কমিশনের প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন আলোচকেরা।

হাইকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ভূমিহীনদের জন্য খাসজমি বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ হলে কোনো নাগরিক ভূমিহীন থাকতে পারে না।

তিনি হিজড়া জনগোষ্ঠীকে সামাজিক মর্যাদা দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ ছাড়া বম জনগোষ্ঠীর ১১৮ জনকে ব্যাংক ডাকাতির অভিযোগে বিনা বিচারে আটক রাখার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

অধ্যাপক রওনক জাহান প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর তুলে আনার গুরুত্বের কথা বলেন। অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, চা-শ্রমিকদের সমস্যাগুলো স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই একই রকম রয়েছে। বৈষম্য ও সামাজিক অন্যায় দূরীকরণের জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি।

পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সামাজিক মর্যাদা না পাওয়াও একধরনের দারিদ্র্য। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যায়সংগত মর্যাদা নিশ্চিত করতে সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত