ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের নিবন্ধ

প্রতিবছর যখন বাংলাদেশের বিজয় দিবস আসে, তখন অনেকের অবদানই লেখা হয়, স্মরণ করা হয়। কিন্তু এখনো এমন অনেক ইতিহাস আছে যা অজানা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এমনই এক অজানা অধ্যায় হলো—তিব্বতি স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে গঠিত স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স বা এসএফএফ।
এসএফএফ হয়তো এমন নিয়তি বরণই করে নিয়েছিল যে,১৯৭১ সালে তাদের যে কার্যক্রম তা কোনো দিনই আলোর মুখ দেখবে না। এই বাহিনীর সদস্যরা কোনো বীরত্ব পদক পাননি, তাদের কেবলই নগদ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। এমনকি তিব্বতিদের নিয়ে এসএফএফ গঠন করা ও নেতৃত্ব দেওয়া ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল সুজান সিং উবানও তাঁর বই ‘ফ্যান্টমস অব চিটাগাং—দ্য ফিফথ আর্মি ইন বাংলাদেশ’—এ এসএফএফ—এর সৈন্যদের তিব্বতি হিসেবে উল্লেখ করেননি। তিনি কেবল পরোক্ষভাবে এসব সেনা কোথা থেকে এসেছিলেন তার উৎসের কথা করেছেন।
সুজান সিং উবান বলেছেন, এসএফএফ গঠন করা হয়েছিল ‘অভিযোজনযোগ্য উত্তরের পাহাড়ি উপজাতি’ সদস্যদের নিয়ে। এই বাহিনী মূলত ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর গঠন করা হয়েছিল এবং তাদের ফুসফুসের অস্বাভাবিক ক্ষমতার উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই অসাধারণ ক্ষমতা হাই অলটিট্যুড বা ব্যাপক উচ্চতার এলাকা যুদ্ধের ক্ষেত্রে তাদের একটি বিশাল সুবিধা দিয়েছিল। এমন গোপনীয়তার কারণে, তিব্বতি যোদ্ধারা চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন তা এখনো অধিকাংশ সাধারণ ভারতীয়ের কাছে অজানা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ শুরু হওয়ার পরপরই ‘টিবেটানস অব এস্টাব্লিশমেন্ট-২২’—এর সদস্যদের (যেটি প্রাথমিকভাবে এসএফএফ হিসেবে পরিচিত ছিল) ডাকা হয় যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য। তাঁরা আগে থেকেই বেশ ভালোভাবেই প্রশিক্ষিত ছিলেন। তারা পার্বত্য ও জঙ্গলে যুদ্ধ পরিচালনায় এবং মর্টার থেকে রকেট লঞ্চার পর্যন্ত সব ধরনের অস্ত্র পরিচালনায় বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি অনেকেই প্যারাট্রুপার হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করেছিল। চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সুযোগের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর, তাদের সামনে নিজেদের আরও একবার প্রমাণের নতুন সুযোগ হাজির হয়েছিল। একই সঙ্গে ভারতের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা ও বিশ্বস্ততা প্রদর্শন করারও সুযোগ ছিল এটি। কারণ, ভারত তাদের তিব্বত থেকে তুলে এনে আশ্রয় এবং আয়ের সুযোগ দিয়েছিল।
এসএফএফ—এর সদস্যদের ওই সময়কার অনুভূতিগুলো ‘তিব্বতি গেরিলার ইন এক্সাইল—ইন্ডিয়ার সিক্রেট আর্মি’—একটি প্রামাণ্যচিত্রে প্রতিফলিত হয়েছে। লোমা ফিল্মস নির্মিত এই প্রামাণ্যচিত্রে বাংলাদেশে যুদ্ধ করা লামা কুংচক নামের এক এসএফএফ বলেন, তিনি তিব্বতের স্বাধীনতার জন্য চীনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চান এবং ‘শত্রুর চোখে ধুলো দিতে চান।’ কিন্তু তাঁর সেই ইচ্ছা যেহেতু পূর্ণ হয়নি, তাই তিনি ভারতের হয়ে যুদ্ধ করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন।
সুজান সিং উবান এই একই ধরনের অনুভূতি আর সব এসএফএফ সদস্যদের মধ্যে পেয়েছিলেন। তিনি জানতেন, এসএফএফ সদস্যদের বিশেষ দক্ষতা—গেরিলা যুদ্ধ, পর্বত ও জঙ্গলে যুদ্ধ—কোথায় সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আর তাই উবান তাদের চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে যুদ্ধ করার জন্য বেছে নেন।
পাকিস্তানের অনিয়মিত বাহিনী এবং মিজো বিদ্রোহীরা এরই মধ্যেই চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে অপারেশন শুরু করেছিল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতীয় বাহিনীকে লক্ষ্য করে আক্রমণ পরিচালনা করছিল। সুজান সিং উবান জানতেন, যদি এসএফএফ এই পাহাড়ি অঞ্চলের কঠোর ভূমিকে সফলভাবে আয়ত্ত করতে পারে তবে এটি কেবল বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হওয়া ভারতীয় বাহিনীর জন্য একটি দুর্বল গ্যাপকেই পূরণ করবে না একই সঙ্গে এটি আরাকানের সঙ্গে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেবে। ভারতীয় সমরকুশলীদের আশঙ্কা ছিল, পাকিস্তানি সেনারা মিয়ানমারে পালিয়ে যাওয়ার জন্য এই সড়ক ব্যবহার করতে পারে।
জেনারেল উবান এই পরিকল্পনাগুলো ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল স্যাম মানেকশয়ের সঙ্গে আলোচনা করেন। স্যাম মানেকশ এসএফএফকে এই অপ্রথাগত ভূমিকা পালন করার জন্য ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। তারপরও উবান এসএফএফ সৈন্যদের লিখিতভাবে অনুরোধ করতে বলেন যে, তাঁরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরবর্তী যেকোনো অভিযানে অংশগ্রহণের অনুমতি চায়। আর এভাবেই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে এসএফএফ—এর ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের মঞ্চ তৈরি হয়।
চট্টগ্রাম একটি ঘন অভেদ্য জঙ্গলে পূর্ণ পাহাড়ি অঞ্চল। এ ছাড়া নদী-নালার উপস্থিতিও আছে। এই অঞ্চলে সুনির্দিষ্ট তেমন কোনো পথই নেই। এই বিপজ্জনক ভূখণ্ডে কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য যে শারীরিক সক্ষমতা প্রয়োজন তা এসএফএফের তিব্বতিদের ছিল। এই অঞ্চলে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়া ছিল ব্যাপক কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। এমন অঞ্চলে অভিযান পরিচালনার জন্য আগেভাবেই ভালোভাবে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। এসব সমস্যা ছাড়াও আবহাওয়া ছিল এক বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ঘন ঘন তীব্র হতো, যা সামরিক সরঞ্জামগুলোকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং ভূখণ্ড যুদ্ধ কার্যক্রম পরিচালনা করা আরও কঠিন করে তুলতে পারে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে এসএফএফের তিনটি কলাম নিযুক্ত ছিল। একটি কলাম ছিল আরাকান সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম ঘেরাও করার জন্য, দ্বিতীয়টি কাপ্তাই বাঁধ-চট্টগ্রাম সড়ক দিয়েও একই কাজ করছিল এবং তৃতীয়টি রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম ঘেরাওয়ে কাজে নিযুক্ত ছিল।
কাপ্তাই বাঁধ ছিল এসএফএফের একটি প্রধান লক্ষ্য। মেজর জেনারেল উবান এবং তাঁর দল এই স্থাপনার বিষয়ে পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি এই বিষয়ে জেনারেল মানেকশর সঙ্গে আলোচনা করেন। স্যাম চেয়েছিলেন এই বাঁধটি ধ্বংস করতে। কারণ এটি পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্যুৎ শক্তির একটি প্রধান উৎস ছিল। এই ভেঙে ফেললে জঙ্গলে বন্যা দেখা দিত এবং তা পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য এই অঞ্চলে কার্যকর অভিযান পরিচালনা কঠিন তোলে।
একইভাবে আরাকান সড়ক বিচ্ছিন্ন করাও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি অনুমান করা হচ্ছিল যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরাজয় নিশ্চিত মনে করলে এই সড়ক দিয়ে বার্মায় পালিয়ে যেতে পারে। আরাকান সড়ক ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার এবং বার্মা পর্যন্ত যায়।
তবে জেনারেল উবান যখন সেনা সদর দপ্তর থেকে এসএফএফের জন্য নির্ধারিত কাজগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত নির্দেশনা পান, তখন তিনি খুব একটা খুশি হননি। তিনি মনে করেছিলেন, তাঁর বাহিনীর জন্য খুব কম অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর কাছে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, এসএফএফকে কাপ্তাই বাঁধ এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেতু উড়িয়ে দিতে হবে, যা সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর বাহিনীকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানগুলোতে ‘হয়রানি’ করতে এবং তাদের ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যকরী আঘাত প্রতিরোধ করতে বলা হয়েছিল।
উবান মনে করেছিলেন, এই নির্দেশে এসএফএফ বাহিনীর পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করা হবে না। তাই উবান তার সেনাদের জন্য আরও কিছু লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য আবেদন করেছিলেন। যার মধ্যে ছিল—চট্টগ্রাম বন্দরের দখল। এটি ছিল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং যেখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য সব সমুদ্রপথের সরবরাহ আসত।
তবে সেনা সদর দপ্তর মনে করেছিল যে, যেহেতু এসএফএফের কাছে সরাসরি কামান এবং বিমান সহায়তা নেই—তাই একমাত্র গেরিলা কার্যক্রমের মাধ্যমে চট্টগ্রাম দখল সম্ভব নয়। বন্দরের চারপাশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীর উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। যার ফলে আক্রমণ করতে হলে বিমান এবং কামান দিয়ে তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান লক্ষ্য করে আঘাত হানতে হতো। উবান চেয়েছিলেন, তিনি এসএফএফের ১ হাজার সেনা চট্টগ্রামে প্রবেশ করাবেন এবং শহরে থাকা ২ হাজার মুজিব বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবী এসএফএফকে সমর্থন কবে। তবে এই বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। মূল নির্দেশনা তখনো বলবৎ থাকে।
‘অপারেশন ইগলের’—চূড়ান্ত অনুমতি পাওয়ার পর জেনারেল উবান এসএফএফকে পার্বত্য চট্টগ্রামের কাছাকাছি মিজোরাম সীমান্তে স্থানান্তর শুরু করেন। তাদের আকাশ ও স্থল পথে সেখানে নেওয়া হয়। এই অপারেশনের জন্য উবান সদর দপ্তর হিসেবে ডেমাগিরিকে নির্বাচন করেছিলেন এবং মারপাড়া, বর্ণপানসুড়ি এবং জারুলছড়িতে এসএফএফের তিনটি কলামের মূল ঘাঁটি স্থাপন করেছিলেন।
এসএফএফ ভারতের মূল বাহিনী থেকে আলাদাভাবেই কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এবং তারা নিজেরাই স্থানীয়ভাবে নিজেদের খাবার সংগ্রহ করেছে। অনেককে দিনের পর দিন কেবল নদীর মাছ ধরে বাঁচতে হয়। কারণ, হেলিকপ্টারে খাদ্য সরবরাহ যথাসময়ে আসতে পারত না এবং তাদের খাবার প্রায়ই শেষ হয়ে যেত। এমনও ঘটনা ঘটেছে যে, এসএফএফ বাহিনী আধপেটা অবস্থায় পাকিস্তানি অবস্থানগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে সেগুলি দখল করে নিয়েছে। এই বিষয়টি কেবল ভারতীয় কমান্ডারদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করতে সহায়তা করেনি বরং দখলকৃত পাকিস্তানি অবস্থানগুলো এসএফএফকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় রেশনও প্রদান করেছিল। এসএফএফের সাফল্যের ফলেই সুজান সিং উবান একসময় রাঙামাটি শহর ঘেরাও করতে সক্ষম হন। এই শহর পাকিস্তান সেনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ ছিল। অবশেষে উবানের বাহিনী শহরে প্রবেশ করে ব্যাপক নাগরিক অভ্যর্থনা পায়। পাকিস্তানি সৈন্যরা শহর ত্যাগ করার সময় প্রচুর জ্বালানি, অস্ত্র ও গোলাবারুদ রেখে যায়।
এসএফএফ যখন দোহাজারী ব্রিজ ধ্বংস করে এবং সাংগু নদী নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর আর পাকিস্তানি বাহিনীর বার্মায় আরাকান সড়ক দিয়ে পালানোর সম্ভব ছিল না। মেজর জেনারেল উবানের মতে, এটি ছিল একটি প্রধান কারণ—যা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডে প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীকে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছিল।
যুদ্ধ শেষে অপারেশন ইগলে অংশ নেওয়া এসএফএফ কর্মকর্তাদের ২৯টি পদক দেওয়া হয়। ভারতীয় সেনার যেসব এসএফএফের সঙ্গে অপারেশনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে ছয়জনকে বীরচক্র, পাঁচ জনক ‘বিশিষ্ট সেবা’, পাঁচজনকে ‘সেনা’ পদক, একজনকে ‘পরম বিশিষ্ট সেবা’ পদক এবং একজনকে ‘অতি বিশিষ্ট সেবা’ পদক দেওয়া হয়। আর ১১ জনের নাম অংশগ্রহণকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এসএফএফের তিব্বতি জওয়ানরা গোপন বাহিনী হিসেবে পরিচিত থাকায় কোনো বীরত্বসূচক পদক পাননি। এক হিসাব অনুসারে, অপারেশন ইগলে ৫৬ জন তিব্বতি নিহত হয়েছিলেন এবং প্রায় ১৫০ জন আহত হয়েছিলেন। ৫ শতাধিক তিব্বতি সেনা কেবল নগদ পুরস্কার পেয়ে ছিলেন যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য। ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের চক্রাতায় এক স্মৃতিস্তম্ভে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারানো সবার নাম খোদাই করা রয়েছে।
লেখক: মান আমান সিং ছিনা। তিনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সহকারী সম্পাদক। তিনি প্রতিরক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করেন। মান আমান সিং ছিনা সামরিক ইতিহাস এবং পাঞ্জাব রাজনীতির সম্পর্কিত বিষয়েও লেখেন। তিনি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যুদ্ধ নিয়ে ‘সেভেন হিরোজ অব ১৯৭১’—নামে একটি বই লিখেছেন।
অনুবাদ: আব্দুর রহমান

প্রতিবছর যখন বাংলাদেশের বিজয় দিবস আসে, তখন অনেকের অবদানই লেখা হয়, স্মরণ করা হয়। কিন্তু এখনো এমন অনেক ইতিহাস আছে যা অজানা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এমনই এক অজানা অধ্যায় হলো—তিব্বতি স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে গঠিত স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স বা এসএফএফ।
এসএফএফ হয়তো এমন নিয়তি বরণই করে নিয়েছিল যে,১৯৭১ সালে তাদের যে কার্যক্রম তা কোনো দিনই আলোর মুখ দেখবে না। এই বাহিনীর সদস্যরা কোনো বীরত্ব পদক পাননি, তাদের কেবলই নগদ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। এমনকি তিব্বতিদের নিয়ে এসএফএফ গঠন করা ও নেতৃত্ব দেওয়া ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল সুজান সিং উবানও তাঁর বই ‘ফ্যান্টমস অব চিটাগাং—দ্য ফিফথ আর্মি ইন বাংলাদেশ’—এ এসএফএফ—এর সৈন্যদের তিব্বতি হিসেবে উল্লেখ করেননি। তিনি কেবল পরোক্ষভাবে এসব সেনা কোথা থেকে এসেছিলেন তার উৎসের কথা করেছেন।
সুজান সিং উবান বলেছেন, এসএফএফ গঠন করা হয়েছিল ‘অভিযোজনযোগ্য উত্তরের পাহাড়ি উপজাতি’ সদস্যদের নিয়ে। এই বাহিনী মূলত ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর গঠন করা হয়েছিল এবং তাদের ফুসফুসের অস্বাভাবিক ক্ষমতার উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই অসাধারণ ক্ষমতা হাই অলটিট্যুড বা ব্যাপক উচ্চতার এলাকা যুদ্ধের ক্ষেত্রে তাদের একটি বিশাল সুবিধা দিয়েছিল। এমন গোপনীয়তার কারণে, তিব্বতি যোদ্ধারা চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন তা এখনো অধিকাংশ সাধারণ ভারতীয়ের কাছে অজানা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ শুরু হওয়ার পরপরই ‘টিবেটানস অব এস্টাব্লিশমেন্ট-২২’—এর সদস্যদের (যেটি প্রাথমিকভাবে এসএফএফ হিসেবে পরিচিত ছিল) ডাকা হয় যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য। তাঁরা আগে থেকেই বেশ ভালোভাবেই প্রশিক্ষিত ছিলেন। তারা পার্বত্য ও জঙ্গলে যুদ্ধ পরিচালনায় এবং মর্টার থেকে রকেট লঞ্চার পর্যন্ত সব ধরনের অস্ত্র পরিচালনায় বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি অনেকেই প্যারাট্রুপার হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করেছিল। চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সুযোগের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর, তাদের সামনে নিজেদের আরও একবার প্রমাণের নতুন সুযোগ হাজির হয়েছিল। একই সঙ্গে ভারতের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা ও বিশ্বস্ততা প্রদর্শন করারও সুযোগ ছিল এটি। কারণ, ভারত তাদের তিব্বত থেকে তুলে এনে আশ্রয় এবং আয়ের সুযোগ দিয়েছিল।
এসএফএফ—এর সদস্যদের ওই সময়কার অনুভূতিগুলো ‘তিব্বতি গেরিলার ইন এক্সাইল—ইন্ডিয়ার সিক্রেট আর্মি’—একটি প্রামাণ্যচিত্রে প্রতিফলিত হয়েছে। লোমা ফিল্মস নির্মিত এই প্রামাণ্যচিত্রে বাংলাদেশে যুদ্ধ করা লামা কুংচক নামের এক এসএফএফ বলেন, তিনি তিব্বতের স্বাধীনতার জন্য চীনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চান এবং ‘শত্রুর চোখে ধুলো দিতে চান।’ কিন্তু তাঁর সেই ইচ্ছা যেহেতু পূর্ণ হয়নি, তাই তিনি ভারতের হয়ে যুদ্ধ করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন।
সুজান সিং উবান এই একই ধরনের অনুভূতি আর সব এসএফএফ সদস্যদের মধ্যে পেয়েছিলেন। তিনি জানতেন, এসএফএফ সদস্যদের বিশেষ দক্ষতা—গেরিলা যুদ্ধ, পর্বত ও জঙ্গলে যুদ্ধ—কোথায় সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আর তাই উবান তাদের চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে যুদ্ধ করার জন্য বেছে নেন।
পাকিস্তানের অনিয়মিত বাহিনী এবং মিজো বিদ্রোহীরা এরই মধ্যেই চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে অপারেশন শুরু করেছিল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতীয় বাহিনীকে লক্ষ্য করে আক্রমণ পরিচালনা করছিল। সুজান সিং উবান জানতেন, যদি এসএফএফ এই পাহাড়ি অঞ্চলের কঠোর ভূমিকে সফলভাবে আয়ত্ত করতে পারে তবে এটি কেবল বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হওয়া ভারতীয় বাহিনীর জন্য একটি দুর্বল গ্যাপকেই পূরণ করবে না একই সঙ্গে এটি আরাকানের সঙ্গে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেবে। ভারতীয় সমরকুশলীদের আশঙ্কা ছিল, পাকিস্তানি সেনারা মিয়ানমারে পালিয়ে যাওয়ার জন্য এই সড়ক ব্যবহার করতে পারে।
জেনারেল উবান এই পরিকল্পনাগুলো ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল স্যাম মানেকশয়ের সঙ্গে আলোচনা করেন। স্যাম মানেকশ এসএফএফকে এই অপ্রথাগত ভূমিকা পালন করার জন্য ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। তারপরও উবান এসএফএফ সৈন্যদের লিখিতভাবে অনুরোধ করতে বলেন যে, তাঁরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরবর্তী যেকোনো অভিযানে অংশগ্রহণের অনুমতি চায়। আর এভাবেই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে এসএফএফ—এর ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের মঞ্চ তৈরি হয়।
চট্টগ্রাম একটি ঘন অভেদ্য জঙ্গলে পূর্ণ পাহাড়ি অঞ্চল। এ ছাড়া নদী-নালার উপস্থিতিও আছে। এই অঞ্চলে সুনির্দিষ্ট তেমন কোনো পথই নেই। এই বিপজ্জনক ভূখণ্ডে কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য যে শারীরিক সক্ষমতা প্রয়োজন তা এসএফএফের তিব্বতিদের ছিল। এই অঞ্চলে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়া ছিল ব্যাপক কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। এমন অঞ্চলে অভিযান পরিচালনার জন্য আগেভাবেই ভালোভাবে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। এসব সমস্যা ছাড়াও আবহাওয়া ছিল এক বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ঘন ঘন তীব্র হতো, যা সামরিক সরঞ্জামগুলোকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং ভূখণ্ড যুদ্ধ কার্যক্রম পরিচালনা করা আরও কঠিন করে তুলতে পারে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে এসএফএফের তিনটি কলাম নিযুক্ত ছিল। একটি কলাম ছিল আরাকান সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম ঘেরাও করার জন্য, দ্বিতীয়টি কাপ্তাই বাঁধ-চট্টগ্রাম সড়ক দিয়েও একই কাজ করছিল এবং তৃতীয়টি রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম ঘেরাওয়ে কাজে নিযুক্ত ছিল।
কাপ্তাই বাঁধ ছিল এসএফএফের একটি প্রধান লক্ষ্য। মেজর জেনারেল উবান এবং তাঁর দল এই স্থাপনার বিষয়ে পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি এই বিষয়ে জেনারেল মানেকশর সঙ্গে আলোচনা করেন। স্যাম চেয়েছিলেন এই বাঁধটি ধ্বংস করতে। কারণ এটি পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্যুৎ শক্তির একটি প্রধান উৎস ছিল। এই ভেঙে ফেললে জঙ্গলে বন্যা দেখা দিত এবং তা পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য এই অঞ্চলে কার্যকর অভিযান পরিচালনা কঠিন তোলে।
একইভাবে আরাকান সড়ক বিচ্ছিন্ন করাও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি অনুমান করা হচ্ছিল যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরাজয় নিশ্চিত মনে করলে এই সড়ক দিয়ে বার্মায় পালিয়ে যেতে পারে। আরাকান সড়ক ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার এবং বার্মা পর্যন্ত যায়।
তবে জেনারেল উবান যখন সেনা সদর দপ্তর থেকে এসএফএফের জন্য নির্ধারিত কাজগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত নির্দেশনা পান, তখন তিনি খুব একটা খুশি হননি। তিনি মনে করেছিলেন, তাঁর বাহিনীর জন্য খুব কম অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর কাছে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, এসএফএফকে কাপ্তাই বাঁধ এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেতু উড়িয়ে দিতে হবে, যা সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর বাহিনীকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানগুলোতে ‘হয়রানি’ করতে এবং তাদের ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যকরী আঘাত প্রতিরোধ করতে বলা হয়েছিল।
উবান মনে করেছিলেন, এই নির্দেশে এসএফএফ বাহিনীর পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করা হবে না। তাই উবান তার সেনাদের জন্য আরও কিছু লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য আবেদন করেছিলেন। যার মধ্যে ছিল—চট্টগ্রাম বন্দরের দখল। এটি ছিল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং যেখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য সব সমুদ্রপথের সরবরাহ আসত।
তবে সেনা সদর দপ্তর মনে করেছিল যে, যেহেতু এসএফএফের কাছে সরাসরি কামান এবং বিমান সহায়তা নেই—তাই একমাত্র গেরিলা কার্যক্রমের মাধ্যমে চট্টগ্রাম দখল সম্ভব নয়। বন্দরের চারপাশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীর উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। যার ফলে আক্রমণ করতে হলে বিমান এবং কামান দিয়ে তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান লক্ষ্য করে আঘাত হানতে হতো। উবান চেয়েছিলেন, তিনি এসএফএফের ১ হাজার সেনা চট্টগ্রামে প্রবেশ করাবেন এবং শহরে থাকা ২ হাজার মুজিব বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবী এসএফএফকে সমর্থন কবে। তবে এই বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। মূল নির্দেশনা তখনো বলবৎ থাকে।
‘অপারেশন ইগলের’—চূড়ান্ত অনুমতি পাওয়ার পর জেনারেল উবান এসএফএফকে পার্বত্য চট্টগ্রামের কাছাকাছি মিজোরাম সীমান্তে স্থানান্তর শুরু করেন। তাদের আকাশ ও স্থল পথে সেখানে নেওয়া হয়। এই অপারেশনের জন্য উবান সদর দপ্তর হিসেবে ডেমাগিরিকে নির্বাচন করেছিলেন এবং মারপাড়া, বর্ণপানসুড়ি এবং জারুলছড়িতে এসএফএফের তিনটি কলামের মূল ঘাঁটি স্থাপন করেছিলেন।
এসএফএফ ভারতের মূল বাহিনী থেকে আলাদাভাবেই কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এবং তারা নিজেরাই স্থানীয়ভাবে নিজেদের খাবার সংগ্রহ করেছে। অনেককে দিনের পর দিন কেবল নদীর মাছ ধরে বাঁচতে হয়। কারণ, হেলিকপ্টারে খাদ্য সরবরাহ যথাসময়ে আসতে পারত না এবং তাদের খাবার প্রায়ই শেষ হয়ে যেত। এমনও ঘটনা ঘটেছে যে, এসএফএফ বাহিনী আধপেটা অবস্থায় পাকিস্তানি অবস্থানগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে সেগুলি দখল করে নিয়েছে। এই বিষয়টি কেবল ভারতীয় কমান্ডারদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করতে সহায়তা করেনি বরং দখলকৃত পাকিস্তানি অবস্থানগুলো এসএফএফকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় রেশনও প্রদান করেছিল। এসএফএফের সাফল্যের ফলেই সুজান সিং উবান একসময় রাঙামাটি শহর ঘেরাও করতে সক্ষম হন। এই শহর পাকিস্তান সেনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ ছিল। অবশেষে উবানের বাহিনী শহরে প্রবেশ করে ব্যাপক নাগরিক অভ্যর্থনা পায়। পাকিস্তানি সৈন্যরা শহর ত্যাগ করার সময় প্রচুর জ্বালানি, অস্ত্র ও গোলাবারুদ রেখে যায়।
এসএফএফ যখন দোহাজারী ব্রিজ ধ্বংস করে এবং সাংগু নদী নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর আর পাকিস্তানি বাহিনীর বার্মায় আরাকান সড়ক দিয়ে পালানোর সম্ভব ছিল না। মেজর জেনারেল উবানের মতে, এটি ছিল একটি প্রধান কারণ—যা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডে প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীকে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছিল।
যুদ্ধ শেষে অপারেশন ইগলে অংশ নেওয়া এসএফএফ কর্মকর্তাদের ২৯টি পদক দেওয়া হয়। ভারতীয় সেনার যেসব এসএফএফের সঙ্গে অপারেশনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে ছয়জনকে বীরচক্র, পাঁচ জনক ‘বিশিষ্ট সেবা’, পাঁচজনকে ‘সেনা’ পদক, একজনকে ‘পরম বিশিষ্ট সেবা’ পদক এবং একজনকে ‘অতি বিশিষ্ট সেবা’ পদক দেওয়া হয়। আর ১১ জনের নাম অংশগ্রহণকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এসএফএফের তিব্বতি জওয়ানরা গোপন বাহিনী হিসেবে পরিচিত থাকায় কোনো বীরত্বসূচক পদক পাননি। এক হিসাব অনুসারে, অপারেশন ইগলে ৫৬ জন তিব্বতি নিহত হয়েছিলেন এবং প্রায় ১৫০ জন আহত হয়েছিলেন। ৫ শতাধিক তিব্বতি সেনা কেবল নগদ পুরস্কার পেয়ে ছিলেন যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য। ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের চক্রাতায় এক স্মৃতিস্তম্ভে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারানো সবার নাম খোদাই করা রয়েছে।
লেখক: মান আমান সিং ছিনা। তিনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সহকারী সম্পাদক। তিনি প্রতিরক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করেন। মান আমান সিং ছিনা সামরিক ইতিহাস এবং পাঞ্জাব রাজনীতির সম্পর্কিত বিষয়েও লেখেন। তিনি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যুদ্ধ নিয়ে ‘সেভেন হিরোজ অব ১৯৭১’—নামে একটি বই লিখেছেন।
অনুবাদ: আব্দুর রহমান
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের নিবন্ধ

প্রতিবছর যখন বাংলাদেশের বিজয় দিবস আসে, তখন অনেকের অবদানই লেখা হয়, স্মরণ করা হয়। কিন্তু এখনো এমন অনেক ইতিহাস আছে যা অজানা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এমনই এক অজানা অধ্যায় হলো—তিব্বতি স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে গঠিত স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স বা এসএফএফ।
এসএফএফ হয়তো এমন নিয়তি বরণই করে নিয়েছিল যে,১৯৭১ সালে তাদের যে কার্যক্রম তা কোনো দিনই আলোর মুখ দেখবে না। এই বাহিনীর সদস্যরা কোনো বীরত্ব পদক পাননি, তাদের কেবলই নগদ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। এমনকি তিব্বতিদের নিয়ে এসএফএফ গঠন করা ও নেতৃত্ব দেওয়া ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল সুজান সিং উবানও তাঁর বই ‘ফ্যান্টমস অব চিটাগাং—দ্য ফিফথ আর্মি ইন বাংলাদেশ’—এ এসএফএফ—এর সৈন্যদের তিব্বতি হিসেবে উল্লেখ করেননি। তিনি কেবল পরোক্ষভাবে এসব সেনা কোথা থেকে এসেছিলেন তার উৎসের কথা করেছেন।
সুজান সিং উবান বলেছেন, এসএফএফ গঠন করা হয়েছিল ‘অভিযোজনযোগ্য উত্তরের পাহাড়ি উপজাতি’ সদস্যদের নিয়ে। এই বাহিনী মূলত ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর গঠন করা হয়েছিল এবং তাদের ফুসফুসের অস্বাভাবিক ক্ষমতার উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই অসাধারণ ক্ষমতা হাই অলটিট্যুড বা ব্যাপক উচ্চতার এলাকা যুদ্ধের ক্ষেত্রে তাদের একটি বিশাল সুবিধা দিয়েছিল। এমন গোপনীয়তার কারণে, তিব্বতি যোদ্ধারা চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন তা এখনো অধিকাংশ সাধারণ ভারতীয়ের কাছে অজানা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ শুরু হওয়ার পরপরই ‘টিবেটানস অব এস্টাব্লিশমেন্ট-২২’—এর সদস্যদের (যেটি প্রাথমিকভাবে এসএফএফ হিসেবে পরিচিত ছিল) ডাকা হয় যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য। তাঁরা আগে থেকেই বেশ ভালোভাবেই প্রশিক্ষিত ছিলেন। তারা পার্বত্য ও জঙ্গলে যুদ্ধ পরিচালনায় এবং মর্টার থেকে রকেট লঞ্চার পর্যন্ত সব ধরনের অস্ত্র পরিচালনায় বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি অনেকেই প্যারাট্রুপার হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করেছিল। চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সুযোগের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর, তাদের সামনে নিজেদের আরও একবার প্রমাণের নতুন সুযোগ হাজির হয়েছিল। একই সঙ্গে ভারতের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা ও বিশ্বস্ততা প্রদর্শন করারও সুযোগ ছিল এটি। কারণ, ভারত তাদের তিব্বত থেকে তুলে এনে আশ্রয় এবং আয়ের সুযোগ দিয়েছিল।
এসএফএফ—এর সদস্যদের ওই সময়কার অনুভূতিগুলো ‘তিব্বতি গেরিলার ইন এক্সাইল—ইন্ডিয়ার সিক্রেট আর্মি’—একটি প্রামাণ্যচিত্রে প্রতিফলিত হয়েছে। লোমা ফিল্মস নির্মিত এই প্রামাণ্যচিত্রে বাংলাদেশে যুদ্ধ করা লামা কুংচক নামের এক এসএফএফ বলেন, তিনি তিব্বতের স্বাধীনতার জন্য চীনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চান এবং ‘শত্রুর চোখে ধুলো দিতে চান।’ কিন্তু তাঁর সেই ইচ্ছা যেহেতু পূর্ণ হয়নি, তাই তিনি ভারতের হয়ে যুদ্ধ করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন।
সুজান সিং উবান এই একই ধরনের অনুভূতি আর সব এসএফএফ সদস্যদের মধ্যে পেয়েছিলেন। তিনি জানতেন, এসএফএফ সদস্যদের বিশেষ দক্ষতা—গেরিলা যুদ্ধ, পর্বত ও জঙ্গলে যুদ্ধ—কোথায় সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আর তাই উবান তাদের চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে যুদ্ধ করার জন্য বেছে নেন।
পাকিস্তানের অনিয়মিত বাহিনী এবং মিজো বিদ্রোহীরা এরই মধ্যেই চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে অপারেশন শুরু করেছিল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতীয় বাহিনীকে লক্ষ্য করে আক্রমণ পরিচালনা করছিল। সুজান সিং উবান জানতেন, যদি এসএফএফ এই পাহাড়ি অঞ্চলের কঠোর ভূমিকে সফলভাবে আয়ত্ত করতে পারে তবে এটি কেবল বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হওয়া ভারতীয় বাহিনীর জন্য একটি দুর্বল গ্যাপকেই পূরণ করবে না একই সঙ্গে এটি আরাকানের সঙ্গে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেবে। ভারতীয় সমরকুশলীদের আশঙ্কা ছিল, পাকিস্তানি সেনারা মিয়ানমারে পালিয়ে যাওয়ার জন্য এই সড়ক ব্যবহার করতে পারে।
জেনারেল উবান এই পরিকল্পনাগুলো ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল স্যাম মানেকশয়ের সঙ্গে আলোচনা করেন। স্যাম মানেকশ এসএফএফকে এই অপ্রথাগত ভূমিকা পালন করার জন্য ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। তারপরও উবান এসএফএফ সৈন্যদের লিখিতভাবে অনুরোধ করতে বলেন যে, তাঁরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরবর্তী যেকোনো অভিযানে অংশগ্রহণের অনুমতি চায়। আর এভাবেই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে এসএফএফ—এর ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের মঞ্চ তৈরি হয়।
চট্টগ্রাম একটি ঘন অভেদ্য জঙ্গলে পূর্ণ পাহাড়ি অঞ্চল। এ ছাড়া নদী-নালার উপস্থিতিও আছে। এই অঞ্চলে সুনির্দিষ্ট তেমন কোনো পথই নেই। এই বিপজ্জনক ভূখণ্ডে কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য যে শারীরিক সক্ষমতা প্রয়োজন তা এসএফএফের তিব্বতিদের ছিল। এই অঞ্চলে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়া ছিল ব্যাপক কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। এমন অঞ্চলে অভিযান পরিচালনার জন্য আগেভাবেই ভালোভাবে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। এসব সমস্যা ছাড়াও আবহাওয়া ছিল এক বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ঘন ঘন তীব্র হতো, যা সামরিক সরঞ্জামগুলোকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং ভূখণ্ড যুদ্ধ কার্যক্রম পরিচালনা করা আরও কঠিন করে তুলতে পারে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে এসএফএফের তিনটি কলাম নিযুক্ত ছিল। একটি কলাম ছিল আরাকান সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম ঘেরাও করার জন্য, দ্বিতীয়টি কাপ্তাই বাঁধ-চট্টগ্রাম সড়ক দিয়েও একই কাজ করছিল এবং তৃতীয়টি রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম ঘেরাওয়ে কাজে নিযুক্ত ছিল।
কাপ্তাই বাঁধ ছিল এসএফএফের একটি প্রধান লক্ষ্য। মেজর জেনারেল উবান এবং তাঁর দল এই স্থাপনার বিষয়ে পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি এই বিষয়ে জেনারেল মানেকশর সঙ্গে আলোচনা করেন। স্যাম চেয়েছিলেন এই বাঁধটি ধ্বংস করতে। কারণ এটি পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্যুৎ শক্তির একটি প্রধান উৎস ছিল। এই ভেঙে ফেললে জঙ্গলে বন্যা দেখা দিত এবং তা পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য এই অঞ্চলে কার্যকর অভিযান পরিচালনা কঠিন তোলে।
একইভাবে আরাকান সড়ক বিচ্ছিন্ন করাও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি অনুমান করা হচ্ছিল যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরাজয় নিশ্চিত মনে করলে এই সড়ক দিয়ে বার্মায় পালিয়ে যেতে পারে। আরাকান সড়ক ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার এবং বার্মা পর্যন্ত যায়।
তবে জেনারেল উবান যখন সেনা সদর দপ্তর থেকে এসএফএফের জন্য নির্ধারিত কাজগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত নির্দেশনা পান, তখন তিনি খুব একটা খুশি হননি। তিনি মনে করেছিলেন, তাঁর বাহিনীর জন্য খুব কম অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর কাছে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, এসএফএফকে কাপ্তাই বাঁধ এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেতু উড়িয়ে দিতে হবে, যা সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর বাহিনীকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানগুলোতে ‘হয়রানি’ করতে এবং তাদের ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যকরী আঘাত প্রতিরোধ করতে বলা হয়েছিল।
উবান মনে করেছিলেন, এই নির্দেশে এসএফএফ বাহিনীর পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করা হবে না। তাই উবান তার সেনাদের জন্য আরও কিছু লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য আবেদন করেছিলেন। যার মধ্যে ছিল—চট্টগ্রাম বন্দরের দখল। এটি ছিল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং যেখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য সব সমুদ্রপথের সরবরাহ আসত।
তবে সেনা সদর দপ্তর মনে করেছিল যে, যেহেতু এসএফএফের কাছে সরাসরি কামান এবং বিমান সহায়তা নেই—তাই একমাত্র গেরিলা কার্যক্রমের মাধ্যমে চট্টগ্রাম দখল সম্ভব নয়। বন্দরের চারপাশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীর উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। যার ফলে আক্রমণ করতে হলে বিমান এবং কামান দিয়ে তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান লক্ষ্য করে আঘাত হানতে হতো। উবান চেয়েছিলেন, তিনি এসএফএফের ১ হাজার সেনা চট্টগ্রামে প্রবেশ করাবেন এবং শহরে থাকা ২ হাজার মুজিব বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবী এসএফএফকে সমর্থন কবে। তবে এই বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। মূল নির্দেশনা তখনো বলবৎ থাকে।
‘অপারেশন ইগলের’—চূড়ান্ত অনুমতি পাওয়ার পর জেনারেল উবান এসএফএফকে পার্বত্য চট্টগ্রামের কাছাকাছি মিজোরাম সীমান্তে স্থানান্তর শুরু করেন। তাদের আকাশ ও স্থল পথে সেখানে নেওয়া হয়। এই অপারেশনের জন্য উবান সদর দপ্তর হিসেবে ডেমাগিরিকে নির্বাচন করেছিলেন এবং মারপাড়া, বর্ণপানসুড়ি এবং জারুলছড়িতে এসএফএফের তিনটি কলামের মূল ঘাঁটি স্থাপন করেছিলেন।
এসএফএফ ভারতের মূল বাহিনী থেকে আলাদাভাবেই কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এবং তারা নিজেরাই স্থানীয়ভাবে নিজেদের খাবার সংগ্রহ করেছে। অনেককে দিনের পর দিন কেবল নদীর মাছ ধরে বাঁচতে হয়। কারণ, হেলিকপ্টারে খাদ্য সরবরাহ যথাসময়ে আসতে পারত না এবং তাদের খাবার প্রায়ই শেষ হয়ে যেত। এমনও ঘটনা ঘটেছে যে, এসএফএফ বাহিনী আধপেটা অবস্থায় পাকিস্তানি অবস্থানগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে সেগুলি দখল করে নিয়েছে। এই বিষয়টি কেবল ভারতীয় কমান্ডারদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করতে সহায়তা করেনি বরং দখলকৃত পাকিস্তানি অবস্থানগুলো এসএফএফকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় রেশনও প্রদান করেছিল। এসএফএফের সাফল্যের ফলেই সুজান সিং উবান একসময় রাঙামাটি শহর ঘেরাও করতে সক্ষম হন। এই শহর পাকিস্তান সেনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ ছিল। অবশেষে উবানের বাহিনী শহরে প্রবেশ করে ব্যাপক নাগরিক অভ্যর্থনা পায়। পাকিস্তানি সৈন্যরা শহর ত্যাগ করার সময় প্রচুর জ্বালানি, অস্ত্র ও গোলাবারুদ রেখে যায়।
এসএফএফ যখন দোহাজারী ব্রিজ ধ্বংস করে এবং সাংগু নদী নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর আর পাকিস্তানি বাহিনীর বার্মায় আরাকান সড়ক দিয়ে পালানোর সম্ভব ছিল না। মেজর জেনারেল উবানের মতে, এটি ছিল একটি প্রধান কারণ—যা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডে প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীকে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছিল।
যুদ্ধ শেষে অপারেশন ইগলে অংশ নেওয়া এসএফএফ কর্মকর্তাদের ২৯টি পদক দেওয়া হয়। ভারতীয় সেনার যেসব এসএফএফের সঙ্গে অপারেশনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে ছয়জনকে বীরচক্র, পাঁচ জনক ‘বিশিষ্ট সেবা’, পাঁচজনকে ‘সেনা’ পদক, একজনকে ‘পরম বিশিষ্ট সেবা’ পদক এবং একজনকে ‘অতি বিশিষ্ট সেবা’ পদক দেওয়া হয়। আর ১১ জনের নাম অংশগ্রহণকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এসএফএফের তিব্বতি জওয়ানরা গোপন বাহিনী হিসেবে পরিচিত থাকায় কোনো বীরত্বসূচক পদক পাননি। এক হিসাব অনুসারে, অপারেশন ইগলে ৫৬ জন তিব্বতি নিহত হয়েছিলেন এবং প্রায় ১৫০ জন আহত হয়েছিলেন। ৫ শতাধিক তিব্বতি সেনা কেবল নগদ পুরস্কার পেয়ে ছিলেন যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য। ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের চক্রাতায় এক স্মৃতিস্তম্ভে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারানো সবার নাম খোদাই করা রয়েছে।
লেখক: মান আমান সিং ছিনা। তিনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সহকারী সম্পাদক। তিনি প্রতিরক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করেন। মান আমান সিং ছিনা সামরিক ইতিহাস এবং পাঞ্জাব রাজনীতির সম্পর্কিত বিষয়েও লেখেন। তিনি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যুদ্ধ নিয়ে ‘সেভেন হিরোজ অব ১৯৭১’—নামে একটি বই লিখেছেন।
অনুবাদ: আব্দুর রহমান

প্রতিবছর যখন বাংলাদেশের বিজয় দিবস আসে, তখন অনেকের অবদানই লেখা হয়, স্মরণ করা হয়। কিন্তু এখনো এমন অনেক ইতিহাস আছে যা অজানা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এমনই এক অজানা অধ্যায় হলো—তিব্বতি স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে গঠিত স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স বা এসএফএফ।
এসএফএফ হয়তো এমন নিয়তি বরণই করে নিয়েছিল যে,১৯৭১ সালে তাদের যে কার্যক্রম তা কোনো দিনই আলোর মুখ দেখবে না। এই বাহিনীর সদস্যরা কোনো বীরত্ব পদক পাননি, তাদের কেবলই নগদ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। এমনকি তিব্বতিদের নিয়ে এসএফএফ গঠন করা ও নেতৃত্ব দেওয়া ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল সুজান সিং উবানও তাঁর বই ‘ফ্যান্টমস অব চিটাগাং—দ্য ফিফথ আর্মি ইন বাংলাদেশ’—এ এসএফএফ—এর সৈন্যদের তিব্বতি হিসেবে উল্লেখ করেননি। তিনি কেবল পরোক্ষভাবে এসব সেনা কোথা থেকে এসেছিলেন তার উৎসের কথা করেছেন।
সুজান সিং উবান বলেছেন, এসএফএফ গঠন করা হয়েছিল ‘অভিযোজনযোগ্য উত্তরের পাহাড়ি উপজাতি’ সদস্যদের নিয়ে। এই বাহিনী মূলত ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর গঠন করা হয়েছিল এবং তাদের ফুসফুসের অস্বাভাবিক ক্ষমতার উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই অসাধারণ ক্ষমতা হাই অলটিট্যুড বা ব্যাপক উচ্চতার এলাকা যুদ্ধের ক্ষেত্রে তাদের একটি বিশাল সুবিধা দিয়েছিল। এমন গোপনীয়তার কারণে, তিব্বতি যোদ্ধারা চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন তা এখনো অধিকাংশ সাধারণ ভারতীয়ের কাছে অজানা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ শুরু হওয়ার পরপরই ‘টিবেটানস অব এস্টাব্লিশমেন্ট-২২’—এর সদস্যদের (যেটি প্রাথমিকভাবে এসএফএফ হিসেবে পরিচিত ছিল) ডাকা হয় যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য। তাঁরা আগে থেকেই বেশ ভালোভাবেই প্রশিক্ষিত ছিলেন। তারা পার্বত্য ও জঙ্গলে যুদ্ধ পরিচালনায় এবং মর্টার থেকে রকেট লঞ্চার পর্যন্ত সব ধরনের অস্ত্র পরিচালনায় বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি অনেকেই প্যারাট্রুপার হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করেছিল। চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সুযোগের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর, তাদের সামনে নিজেদের আরও একবার প্রমাণের নতুন সুযোগ হাজির হয়েছিল। একই সঙ্গে ভারতের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা ও বিশ্বস্ততা প্রদর্শন করারও সুযোগ ছিল এটি। কারণ, ভারত তাদের তিব্বত থেকে তুলে এনে আশ্রয় এবং আয়ের সুযোগ দিয়েছিল।
এসএফএফ—এর সদস্যদের ওই সময়কার অনুভূতিগুলো ‘তিব্বতি গেরিলার ইন এক্সাইল—ইন্ডিয়ার সিক্রেট আর্মি’—একটি প্রামাণ্যচিত্রে প্রতিফলিত হয়েছে। লোমা ফিল্মস নির্মিত এই প্রামাণ্যচিত্রে বাংলাদেশে যুদ্ধ করা লামা কুংচক নামের এক এসএফএফ বলেন, তিনি তিব্বতের স্বাধীনতার জন্য চীনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চান এবং ‘শত্রুর চোখে ধুলো দিতে চান।’ কিন্তু তাঁর সেই ইচ্ছা যেহেতু পূর্ণ হয়নি, তাই তিনি ভারতের হয়ে যুদ্ধ করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন।
সুজান সিং উবান এই একই ধরনের অনুভূতি আর সব এসএফএফ সদস্যদের মধ্যে পেয়েছিলেন। তিনি জানতেন, এসএফএফ সদস্যদের বিশেষ দক্ষতা—গেরিলা যুদ্ধ, পর্বত ও জঙ্গলে যুদ্ধ—কোথায় সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আর তাই উবান তাদের চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে যুদ্ধ করার জন্য বেছে নেন।
পাকিস্তানের অনিয়মিত বাহিনী এবং মিজো বিদ্রোহীরা এরই মধ্যেই চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে অপারেশন শুরু করেছিল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতীয় বাহিনীকে লক্ষ্য করে আক্রমণ পরিচালনা করছিল। সুজান সিং উবান জানতেন, যদি এসএফএফ এই পাহাড়ি অঞ্চলের কঠোর ভূমিকে সফলভাবে আয়ত্ত করতে পারে তবে এটি কেবল বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হওয়া ভারতীয় বাহিনীর জন্য একটি দুর্বল গ্যাপকেই পূরণ করবে না একই সঙ্গে এটি আরাকানের সঙ্গে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেবে। ভারতীয় সমরকুশলীদের আশঙ্কা ছিল, পাকিস্তানি সেনারা মিয়ানমারে পালিয়ে যাওয়ার জন্য এই সড়ক ব্যবহার করতে পারে।
জেনারেল উবান এই পরিকল্পনাগুলো ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল স্যাম মানেকশয়ের সঙ্গে আলোচনা করেন। স্যাম মানেকশ এসএফএফকে এই অপ্রথাগত ভূমিকা পালন করার জন্য ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। তারপরও উবান এসএফএফ সৈন্যদের লিখিতভাবে অনুরোধ করতে বলেন যে, তাঁরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরবর্তী যেকোনো অভিযানে অংশগ্রহণের অনুমতি চায়। আর এভাবেই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে এসএফএফ—এর ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের মঞ্চ তৈরি হয়।
চট্টগ্রাম একটি ঘন অভেদ্য জঙ্গলে পূর্ণ পাহাড়ি অঞ্চল। এ ছাড়া নদী-নালার উপস্থিতিও আছে। এই অঞ্চলে সুনির্দিষ্ট তেমন কোনো পথই নেই। এই বিপজ্জনক ভূখণ্ডে কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য যে শারীরিক সক্ষমতা প্রয়োজন তা এসএফএফের তিব্বতিদের ছিল। এই অঞ্চলে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়া ছিল ব্যাপক কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। এমন অঞ্চলে অভিযান পরিচালনার জন্য আগেভাবেই ভালোভাবে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। এসব সমস্যা ছাড়াও আবহাওয়া ছিল এক বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ঘন ঘন তীব্র হতো, যা সামরিক সরঞ্জামগুলোকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং ভূখণ্ড যুদ্ধ কার্যক্রম পরিচালনা করা আরও কঠিন করে তুলতে পারে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে এসএফএফের তিনটি কলাম নিযুক্ত ছিল। একটি কলাম ছিল আরাকান সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম ঘেরাও করার জন্য, দ্বিতীয়টি কাপ্তাই বাঁধ-চট্টগ্রাম সড়ক দিয়েও একই কাজ করছিল এবং তৃতীয়টি রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম ঘেরাওয়ে কাজে নিযুক্ত ছিল।
কাপ্তাই বাঁধ ছিল এসএফএফের একটি প্রধান লক্ষ্য। মেজর জেনারেল উবান এবং তাঁর দল এই স্থাপনার বিষয়ে পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি এই বিষয়ে জেনারেল মানেকশর সঙ্গে আলোচনা করেন। স্যাম চেয়েছিলেন এই বাঁধটি ধ্বংস করতে। কারণ এটি পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্যুৎ শক্তির একটি প্রধান উৎস ছিল। এই ভেঙে ফেললে জঙ্গলে বন্যা দেখা দিত এবং তা পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য এই অঞ্চলে কার্যকর অভিযান পরিচালনা কঠিন তোলে।
একইভাবে আরাকান সড়ক বিচ্ছিন্ন করাও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি অনুমান করা হচ্ছিল যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরাজয় নিশ্চিত মনে করলে এই সড়ক দিয়ে বার্মায় পালিয়ে যেতে পারে। আরাকান সড়ক ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার এবং বার্মা পর্যন্ত যায়।
তবে জেনারেল উবান যখন সেনা সদর দপ্তর থেকে এসএফএফের জন্য নির্ধারিত কাজগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত নির্দেশনা পান, তখন তিনি খুব একটা খুশি হননি। তিনি মনে করেছিলেন, তাঁর বাহিনীর জন্য খুব কম অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর কাছে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, এসএফএফকে কাপ্তাই বাঁধ এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেতু উড়িয়ে দিতে হবে, যা সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর বাহিনীকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানগুলোতে ‘হয়রানি’ করতে এবং তাদের ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যকরী আঘাত প্রতিরোধ করতে বলা হয়েছিল।
উবান মনে করেছিলেন, এই নির্দেশে এসএফএফ বাহিনীর পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করা হবে না। তাই উবান তার সেনাদের জন্য আরও কিছু লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য আবেদন করেছিলেন। যার মধ্যে ছিল—চট্টগ্রাম বন্দরের দখল। এটি ছিল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং যেখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য সব সমুদ্রপথের সরবরাহ আসত।
তবে সেনা সদর দপ্তর মনে করেছিল যে, যেহেতু এসএফএফের কাছে সরাসরি কামান এবং বিমান সহায়তা নেই—তাই একমাত্র গেরিলা কার্যক্রমের মাধ্যমে চট্টগ্রাম দখল সম্ভব নয়। বন্দরের চারপাশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীর উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। যার ফলে আক্রমণ করতে হলে বিমান এবং কামান দিয়ে তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান লক্ষ্য করে আঘাত হানতে হতো। উবান চেয়েছিলেন, তিনি এসএফএফের ১ হাজার সেনা চট্টগ্রামে প্রবেশ করাবেন এবং শহরে থাকা ২ হাজার মুজিব বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবী এসএফএফকে সমর্থন কবে। তবে এই বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। মূল নির্দেশনা তখনো বলবৎ থাকে।
‘অপারেশন ইগলের’—চূড়ান্ত অনুমতি পাওয়ার পর জেনারেল উবান এসএফএফকে পার্বত্য চট্টগ্রামের কাছাকাছি মিজোরাম সীমান্তে স্থানান্তর শুরু করেন। তাদের আকাশ ও স্থল পথে সেখানে নেওয়া হয়। এই অপারেশনের জন্য উবান সদর দপ্তর হিসেবে ডেমাগিরিকে নির্বাচন করেছিলেন এবং মারপাড়া, বর্ণপানসুড়ি এবং জারুলছড়িতে এসএফএফের তিনটি কলামের মূল ঘাঁটি স্থাপন করেছিলেন।
এসএফএফ ভারতের মূল বাহিনী থেকে আলাদাভাবেই কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এবং তারা নিজেরাই স্থানীয়ভাবে নিজেদের খাবার সংগ্রহ করেছে। অনেককে দিনের পর দিন কেবল নদীর মাছ ধরে বাঁচতে হয়। কারণ, হেলিকপ্টারে খাদ্য সরবরাহ যথাসময়ে আসতে পারত না এবং তাদের খাবার প্রায়ই শেষ হয়ে যেত। এমনও ঘটনা ঘটেছে যে, এসএফএফ বাহিনী আধপেটা অবস্থায় পাকিস্তানি অবস্থানগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে সেগুলি দখল করে নিয়েছে। এই বিষয়টি কেবল ভারতীয় কমান্ডারদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করতে সহায়তা করেনি বরং দখলকৃত পাকিস্তানি অবস্থানগুলো এসএফএফকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় রেশনও প্রদান করেছিল। এসএফএফের সাফল্যের ফলেই সুজান সিং উবান একসময় রাঙামাটি শহর ঘেরাও করতে সক্ষম হন। এই শহর পাকিস্তান সেনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ ছিল। অবশেষে উবানের বাহিনী শহরে প্রবেশ করে ব্যাপক নাগরিক অভ্যর্থনা পায়। পাকিস্তানি সৈন্যরা শহর ত্যাগ করার সময় প্রচুর জ্বালানি, অস্ত্র ও গোলাবারুদ রেখে যায়।
এসএফএফ যখন দোহাজারী ব্রিজ ধ্বংস করে এবং সাংগু নদী নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর আর পাকিস্তানি বাহিনীর বার্মায় আরাকান সড়ক দিয়ে পালানোর সম্ভব ছিল না। মেজর জেনারেল উবানের মতে, এটি ছিল একটি প্রধান কারণ—যা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডে প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীকে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছিল।
যুদ্ধ শেষে অপারেশন ইগলে অংশ নেওয়া এসএফএফ কর্মকর্তাদের ২৯টি পদক দেওয়া হয়। ভারতীয় সেনার যেসব এসএফএফের সঙ্গে অপারেশনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে ছয়জনকে বীরচক্র, পাঁচ জনক ‘বিশিষ্ট সেবা’, পাঁচজনকে ‘সেনা’ পদক, একজনকে ‘পরম বিশিষ্ট সেবা’ পদক এবং একজনকে ‘অতি বিশিষ্ট সেবা’ পদক দেওয়া হয়। আর ১১ জনের নাম অংশগ্রহণকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এসএফএফের তিব্বতি জওয়ানরা গোপন বাহিনী হিসেবে পরিচিত থাকায় কোনো বীরত্বসূচক পদক পাননি। এক হিসাব অনুসারে, অপারেশন ইগলে ৫৬ জন তিব্বতি নিহত হয়েছিলেন এবং প্রায় ১৫০ জন আহত হয়েছিলেন। ৫ শতাধিক তিব্বতি সেনা কেবল নগদ পুরস্কার পেয়ে ছিলেন যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য। ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের চক্রাতায় এক স্মৃতিস্তম্ভে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারানো সবার নাম খোদাই করা রয়েছে।
লেখক: মান আমান সিং ছিনা। তিনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সহকারী সম্পাদক। তিনি প্রতিরক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করেন। মান আমান সিং ছিনা সামরিক ইতিহাস এবং পাঞ্জাব রাজনীতির সম্পর্কিত বিষয়েও লেখেন। তিনি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যুদ্ধ নিয়ে ‘সেভেন হিরোজ অব ১৯৭১’—নামে একটি বই লিখেছেন।
অনুবাদ: আব্দুর রহমান

আসন্ন জাতীয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এক ব্যক্তির নামে অনুমোদিত সিমকার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। আজ রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
৪৪ মিনিট আগে
সন্ন জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি, সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অভিযান পরিচালনা এবং সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে বৈঠকে বসছে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
৪ ঘণ্টা আগে
আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি...
১১ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আরপিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়।
১৪ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আসন্ন জাতীয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এক ব্যক্তির নামে অনুমোদিত সিমকার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। আজ রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘একজনের সিমকার্ড ব্যবহার করে অন্যজন অপরাধ করে। এতে করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তি অনেক সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। এ জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে রেজিস্ট্রেশন করা সিমকার্ড কমিয়ে আনা হবে। কোনো ঘটনা ঘটার পর দেখা যায় সিমটি সেই ব্যক্তির নয়। নির্বাচনের আগে সিমকার্ড কমিয়ে আনা হবে। আমরা চেষ্টা করছি জাতীয় নির্বাচনের আগে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ সাতটি সিমকার্ড নিজের এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।’
ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী ও মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।
গত মে মাসে বিটিআরসি জানায়, একজন গ্রাহক এখন থেকে নিজের নামে সর্বোচ্চ ১০টি সিম নিতে পারবেন। এর আগে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন সনদ ও পাসপোর্ট দিয়ে সব অপারেটর মিলিয়ে ১৫টি সিম নেওয়া যেত।
২০১৭ সালে বিটিআরসি একজন গ্রাহকের নামে সর্বোচ্চ ১৫টি সিম নিবন্ধন করা যাবে বলে নির্দেশনা দেয়। এরপর ২০২২ সালের অক্টোবরে বিটিআরসি আরেক নির্দেশনায় জানিয়েছিল, একজন গ্রাহক জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন সনদ ও পাসপোর্ট দিয়ে সর্বোচ্চ ১৫টি সিম নিবন্ধন করতে পারবেন।

আসন্ন জাতীয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এক ব্যক্তির নামে অনুমোদিত সিমকার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। আজ রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘একজনের সিমকার্ড ব্যবহার করে অন্যজন অপরাধ করে। এতে করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তি অনেক সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। এ জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে রেজিস্ট্রেশন করা সিমকার্ড কমিয়ে আনা হবে। কোনো ঘটনা ঘটার পর দেখা যায় সিমটি সেই ব্যক্তির নয়। নির্বাচনের আগে সিমকার্ড কমিয়ে আনা হবে। আমরা চেষ্টা করছি জাতীয় নির্বাচনের আগে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ সাতটি সিমকার্ড নিজের এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।’
ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী ও মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।
গত মে মাসে বিটিআরসি জানায়, একজন গ্রাহক এখন থেকে নিজের নামে সর্বোচ্চ ১০টি সিম নিতে পারবেন। এর আগে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন সনদ ও পাসপোর্ট দিয়ে সব অপারেটর মিলিয়ে ১৫টি সিম নেওয়া যেত।
২০১৭ সালে বিটিআরসি একজন গ্রাহকের নামে সর্বোচ্চ ১৫টি সিম নিবন্ধন করা যাবে বলে নির্দেশনা দেয়। এরপর ২০২২ সালের অক্টোবরে বিটিআরসি আরেক নির্দেশনায় জানিয়েছিল, একজন গ্রাহক জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন সনদ ও পাসপোর্ট দিয়ে সর্বোচ্চ ১৫টি সিম নিবন্ধন করতে পারবেন।

এসএফএফ হয়তো এমন নিয়তি বরণই করে নিয়েছিল যে,১৯৭১ সালে তাদের যে কার্যক্রম তা কোনো দিনই আলোর মুখ দেখবে না। এই বাহিনীর সদস্যরা কোনো বীরত্ব পদক পাননি, তাদের কেবলই নগদ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। এমনকি তিব্বতিদের নিয়ে এসএফএফ গঠন করা ও নেতৃত্ব দেওয়া ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল সুজান সিং উবানও তাঁর বই ‘ফ্য
১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
সন্ন জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি, সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অভিযান পরিচালনা এবং সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে বৈঠকে বসছে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
৪ ঘণ্টা আগে
আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি...
১১ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আরপিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়।
১৪ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সন্ন জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি, সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অভিযান পরিচালনা এবং সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে বৈঠকে বসছে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
আজ রোববার সকাল ১১টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৫তম বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই বৈঠকের আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—
১. দেশব্যাপী চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সংঘবদ্ধ দুষ্কৃতিকারীদের কর্মকাণ্ড রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ।
২. জুলাই হত্যাকাণ্ডের শহীদদের মামলার রেকর্ড, তদন্ত ও অগ্রগতি বিষয়ক আলোচনা, দেশে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী উসকানিমূলক সাইবার প্রচারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।
৩. নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনগত ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
৪. মাদকের অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কিত আলোচনা।
৫. শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন পরবর্তী সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও প্রতিরোধ, নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনসমূহের অপতৎপরতা রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ।
৬. গার্মেন্টস বা শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিশ্চিত করা।
৭. গার্মেন্টস কারখানা, ঔষধ শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির তৎপরতা বিষয়ে আলোচনা।
৮. অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা সংক্রান্ত আলোচনা।
৯. সীমান্ত ও পার্বত্যাঞ্চল পরিস্থিতি বিষয়ক আলোচনা।
১০. রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইন-শৃঙ্খলাসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ক আলোচনা।
১১. মা ইলিশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আলোচনা।
জানা গেছে, বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিল্প-ও গৃহায়ণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, খাদ্য ও ভূমি বিষয়ক উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্ট আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা।

সন্ন জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি, সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অভিযান পরিচালনা এবং সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে বৈঠকে বসছে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
আজ রোববার সকাল ১১টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৫তম বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই বৈঠকের আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—
১. দেশব্যাপী চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সংঘবদ্ধ দুষ্কৃতিকারীদের কর্মকাণ্ড রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ।
২. জুলাই হত্যাকাণ্ডের শহীদদের মামলার রেকর্ড, তদন্ত ও অগ্রগতি বিষয়ক আলোচনা, দেশে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী উসকানিমূলক সাইবার প্রচারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।
৩. নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনগত ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
৪. মাদকের অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কিত আলোচনা।
৫. শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন পরবর্তী সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও প্রতিরোধ, নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনসমূহের অপতৎপরতা রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ।
৬. গার্মেন্টস বা শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিশ্চিত করা।
৭. গার্মেন্টস কারখানা, ঔষধ শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির তৎপরতা বিষয়ে আলোচনা।
৮. অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা সংক্রান্ত আলোচনা।
৯. সীমান্ত ও পার্বত্যাঞ্চল পরিস্থিতি বিষয়ক আলোচনা।
১০. রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইন-শৃঙ্খলাসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ক আলোচনা।
১১. মা ইলিশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আলোচনা।
জানা গেছে, বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিল্প-ও গৃহায়ণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, খাদ্য ও ভূমি বিষয়ক উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্ট আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা।

এসএফএফ হয়তো এমন নিয়তি বরণই করে নিয়েছিল যে,১৯৭১ সালে তাদের যে কার্যক্রম তা কোনো দিনই আলোর মুখ দেখবে না। এই বাহিনীর সদস্যরা কোনো বীরত্ব পদক পাননি, তাদের কেবলই নগদ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। এমনকি তিব্বতিদের নিয়ে এসএফএফ গঠন করা ও নেতৃত্ব দেওয়া ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল সুজান সিং উবানও তাঁর বই ‘ফ্য
১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
আসন্ন জাতীয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এক ব্যক্তির নামে অনুমোদিত সিমকার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। আজ রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
৪৪ মিনিট আগে
আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি...
১১ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আরপিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়।
১৪ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৃহস্পতিবারের পর ঐকমত্য কমিশন গতকালও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করলেও কোনো সমাধান মেলেনি। এমন প্রেক্ষাপটে আজ রোববার কমিশন আবার নিজেরা বৈঠক করবে এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবার বসবে।
ঐকমত্য কমিশনের জাতীয় সংসদ ভবনের কার্যালয়ে গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকটি বেলা দেড়টার পর শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টার পরে শেষ হয়। প্রায় চার ঘণ্টার বৈঠকেও সংবিধান নিয়ে সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করার উপায় বের হয়নি।
সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কমিশনের সিদ্ধান্ত হলো, গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে প্রথমে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করা হবে। তার অধীনে জারি হবে গণভোট-বিষয়ক একটি অধ্যাদেশ। এর ভিত্তিতেই হবে গণভোট। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (২৭০ দিন বা প্রথম ৯ মাস) আগামী সংসদ কাজ করবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে। এ সময়ের মধ্যেই সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংসদে অনুমোদন করা হবে। প্রসঙ্গত, একই সময় এ পরিষদ নিয়মিত সংসদ হিসেবেও কাজ করবে। সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায়ই সংবিধান সংস্কার হবে।
গতকালের আলোচনা বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা ২৭০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন না করলে সনদে থাকা বিষয়গুলো কী হবে—সেখানেই আটকে যাচ্ছে আলোচনা। কারণ আমরা তেমন সমাধান দিতে পারছি না। দেশে অতীতে এ-সংক্রান্ত কোনো উদাহরণ নেই। দেশের বাইরেও এ ধরনের উদাহরণ পাইনি।’
কোনো দল আগামী নির্বাচনে সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সংবিধান সংস্কার কীভাবে হবে, এ প্রশ্নও আছে। বিষয়টি তখন মূলত নির্ভর করবে বেশি আসন পাওয়া কয়েকটি দলের সদিচ্ছার ওপর। কিন্তু কমিশন চাইছে এ অনিশ্চয়তার অবকাশ না রেখে এমন কোনো বিধান করা, যা সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দেবে।
গতকালের বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা একাধিক মত দিয়ে বলেছেন, সেগুলো আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না তাঁ। একটি মত হলো,নির্ধারিত সময়ে সংস্কার বাস্তবায়ন করা না হলে সংসদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটি আইনগতভাবে ঠিক হলেও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। সংসদ এভাবে বিলুপ্ত হলে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা।
আরও যে কয়েকটি মত গতকাল এসেছে তার মধ্যে রয়েছে, প্রথমত, পরিষদে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সনদের বিষয়গুলো বাস্তবায়ন না হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাওয়া এবং দ্বিতীয়ত, আগে সংবিধান সংস্কার পরিষদ বৈঠকে বসে সনদের সংযুক্তি বাস্তবায়ন করবে এবং তারপর সংসদ বসবে। কিন্তু এগুলোও কার্যকর বা বাস্তবসম্মত মনে করেননি বিশেষজ্ঞদের সবাই।
একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, সময়সীমার মধ্যে না সম্পন্ন করলে আপনা থেকেই সংবিধানে বিষয়গুলো যুক্ত হওয়ার ধারণা বাস্তবসম্মত না। কারণ বিলগুলোর খসড়া তৈরি করা নেই। এটা করা বিশেষজ্ঞদের কাজ না। সংসদে আলোচনা করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই এ সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরও বলেন, সনদের একটি বিধান হচ্ছে, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ করা হবে। কিন্তু কোন মৌলিক অধিকারটি সম্প্রসারণ করা হবে, তা বলা নেই। সংসদ সদস্যদের আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এসব কারণে আমরা সিদ্ধান্ত দিতে পারিনি। কমিশন জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বৈঠক করবেন, প্রয়োজনে আমাদের সহযোগিতা নেবেন।’
গতকালের বৈঠকে আগে সংবিধান সংস্কার পরিষদ বসে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার যে প্রস্তাব আসে তার পক্ষে বলা হয়, এতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দ্রুত সনদ বাস্তবায়নে কাজ করবেন। কারণ তাঁরা বিলম্ব না করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে চাইবেন। একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা হলেও বেশির ভাগের মত, এটিও বাস্তবসম্মত নয়। কারণ জনপ্রতিনিধিদের শপথের মাধ্যমে সংসদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্বে থেকে যেতে হবে। এটা প্রধান উপদেষ্টাই মানবেন না।
এ অবস্থায় সমাধান কী হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমরা আদৌ কোনো বাধ্যবাধকতা তৈরি করে দিতে পারব কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ এমন আইনি ও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্য সমাধান পাইনি। তাই বিষয়টি আমাদের সুপারিশে না-ও থাকতে পারে।’
সনদ-বিষয়ক আদেশের খুঁটিনাটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। গণভোটের দিনক্ষণ সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কমিশন সূত্র জানায়, আজ সকালে নিজেরা বৈঠক করার পর প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আবার বৈঠক করা হবে। ৩১ অক্টোবরের মেয়াদের মধ্যেই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন।
এনসিপির সঙ্গে বৈঠক
গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসার আগে কমিশনের সদস্যরা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক করেন। ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হলেও দলটি সই করেনি। এনসিপি বলেছিল, বাস্তবায়নের আদেশের চূড়ান্ত খসড়া না দেখে তারা স্বাক্ষর করবে না।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, গতকালের বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধিরা ‘স্পষ্টভাবে’ জানিয়েছেন যে তাঁরা স্বাক্ষর করতে চান। তাঁরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন, যা কমিশন আইনি বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠিয়েছে। এনসিপির প্রস্তাবে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই দিকই আছে। সেই বিষয়গুলো বিবেচনা করে কমিশন এগোচ্ছে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে, যেন সবাই স্বাক্ষরের দিকে আসে।
বিশেষজ্ঞ হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক ও ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন।
আলোচনায় কমিশনের পক্ষে অংশ নেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৃহস্পতিবারের পর ঐকমত্য কমিশন গতকালও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করলেও কোনো সমাধান মেলেনি। এমন প্রেক্ষাপটে আজ রোববার কমিশন আবার নিজেরা বৈঠক করবে এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবার বসবে।
ঐকমত্য কমিশনের জাতীয় সংসদ ভবনের কার্যালয়ে গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকটি বেলা দেড়টার পর শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টার পরে শেষ হয়। প্রায় চার ঘণ্টার বৈঠকেও সংবিধান নিয়ে সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করার উপায় বের হয়নি।
সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কমিশনের সিদ্ধান্ত হলো, গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে প্রথমে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করা হবে। তার অধীনে জারি হবে গণভোট-বিষয়ক একটি অধ্যাদেশ। এর ভিত্তিতেই হবে গণভোট। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (২৭০ দিন বা প্রথম ৯ মাস) আগামী সংসদ কাজ করবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে। এ সময়ের মধ্যেই সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংসদে অনুমোদন করা হবে। প্রসঙ্গত, একই সময় এ পরিষদ নিয়মিত সংসদ হিসেবেও কাজ করবে। সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায়ই সংবিধান সংস্কার হবে।
গতকালের আলোচনা বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা ২৭০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন না করলে সনদে থাকা বিষয়গুলো কী হবে—সেখানেই আটকে যাচ্ছে আলোচনা। কারণ আমরা তেমন সমাধান দিতে পারছি না। দেশে অতীতে এ-সংক্রান্ত কোনো উদাহরণ নেই। দেশের বাইরেও এ ধরনের উদাহরণ পাইনি।’
কোনো দল আগামী নির্বাচনে সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সংবিধান সংস্কার কীভাবে হবে, এ প্রশ্নও আছে। বিষয়টি তখন মূলত নির্ভর করবে বেশি আসন পাওয়া কয়েকটি দলের সদিচ্ছার ওপর। কিন্তু কমিশন চাইছে এ অনিশ্চয়তার অবকাশ না রেখে এমন কোনো বিধান করা, যা সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দেবে।
গতকালের বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা একাধিক মত দিয়ে বলেছেন, সেগুলো আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না তাঁ। একটি মত হলো,নির্ধারিত সময়ে সংস্কার বাস্তবায়ন করা না হলে সংসদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটি আইনগতভাবে ঠিক হলেও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। সংসদ এভাবে বিলুপ্ত হলে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা।
আরও যে কয়েকটি মত গতকাল এসেছে তার মধ্যে রয়েছে, প্রথমত, পরিষদে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সনদের বিষয়গুলো বাস্তবায়ন না হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাওয়া এবং দ্বিতীয়ত, আগে সংবিধান সংস্কার পরিষদ বৈঠকে বসে সনদের সংযুক্তি বাস্তবায়ন করবে এবং তারপর সংসদ বসবে। কিন্তু এগুলোও কার্যকর বা বাস্তবসম্মত মনে করেননি বিশেষজ্ঞদের সবাই।
একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, সময়সীমার মধ্যে না সম্পন্ন করলে আপনা থেকেই সংবিধানে বিষয়গুলো যুক্ত হওয়ার ধারণা বাস্তবসম্মত না। কারণ বিলগুলোর খসড়া তৈরি করা নেই। এটা করা বিশেষজ্ঞদের কাজ না। সংসদে আলোচনা করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই এ সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরও বলেন, সনদের একটি বিধান হচ্ছে, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ করা হবে। কিন্তু কোন মৌলিক অধিকারটি সম্প্রসারণ করা হবে, তা বলা নেই। সংসদ সদস্যদের আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এসব কারণে আমরা সিদ্ধান্ত দিতে পারিনি। কমিশন জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বৈঠক করবেন, প্রয়োজনে আমাদের সহযোগিতা নেবেন।’
গতকালের বৈঠকে আগে সংবিধান সংস্কার পরিষদ বসে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার যে প্রস্তাব আসে তার পক্ষে বলা হয়, এতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দ্রুত সনদ বাস্তবায়নে কাজ করবেন। কারণ তাঁরা বিলম্ব না করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে চাইবেন। একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা হলেও বেশির ভাগের মত, এটিও বাস্তবসম্মত নয়। কারণ জনপ্রতিনিধিদের শপথের মাধ্যমে সংসদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্বে থেকে যেতে হবে। এটা প্রধান উপদেষ্টাই মানবেন না।
এ অবস্থায় সমাধান কী হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমরা আদৌ কোনো বাধ্যবাধকতা তৈরি করে দিতে পারব কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ এমন আইনি ও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্য সমাধান পাইনি। তাই বিষয়টি আমাদের সুপারিশে না-ও থাকতে পারে।’
সনদ-বিষয়ক আদেশের খুঁটিনাটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। গণভোটের দিনক্ষণ সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কমিশন সূত্র জানায়, আজ সকালে নিজেরা বৈঠক করার পর প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আবার বৈঠক করা হবে। ৩১ অক্টোবরের মেয়াদের মধ্যেই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন।
এনসিপির সঙ্গে বৈঠক
গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসার আগে কমিশনের সদস্যরা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক করেন। ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হলেও দলটি সই করেনি। এনসিপি বলেছিল, বাস্তবায়নের আদেশের চূড়ান্ত খসড়া না দেখে তারা স্বাক্ষর করবে না।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, গতকালের বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধিরা ‘স্পষ্টভাবে’ জানিয়েছেন যে তাঁরা স্বাক্ষর করতে চান। তাঁরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন, যা কমিশন আইনি বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠিয়েছে। এনসিপির প্রস্তাবে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই দিকই আছে। সেই বিষয়গুলো বিবেচনা করে কমিশন এগোচ্ছে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে, যেন সবাই স্বাক্ষরের দিকে আসে।
বিশেষজ্ঞ হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক ও ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন।
আলোচনায় কমিশনের পক্ষে অংশ নেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এসএফএফ হয়তো এমন নিয়তি বরণই করে নিয়েছিল যে,১৯৭১ সালে তাদের যে কার্যক্রম তা কোনো দিনই আলোর মুখ দেখবে না। এই বাহিনীর সদস্যরা কোনো বীরত্ব পদক পাননি, তাদের কেবলই নগদ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। এমনকি তিব্বতিদের নিয়ে এসএফএফ গঠন করা ও নেতৃত্ব দেওয়া ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল সুজান সিং উবানও তাঁর বই ‘ফ্য
১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
আসন্ন জাতীয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এক ব্যক্তির নামে অনুমোদিত সিমকার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। আজ রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
৪৪ মিনিট আগে
সন্ন জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি, সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অভিযান পরিচালনা এবং সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে বৈঠকে বসছে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
৪ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আরপিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়।
১৪ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আরপিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যুক্ত করা হয়েছে নতুন বিধান, আবার কিছু কিছু বিধান আরপিও থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—ইভিএম ব্যবহার বাতিল, ‘না ভোট’ পুনর্বহাল, প্রার্থীদের দেশি-বিদেশি আয় ও সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশের বাধ্যবাধকতা এবং পলাতক আসামিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা।
সংশোধিত আরপিওর গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ তুলে ধরা হলো:
আদালত কর্তৃক ফেরারি বা পলাতক আসামি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে তাঁকে না ভোটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। নির্বাচনে না ভোট বেশি হলে সেখানে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন হবে। তবে দ্বিতীয়বারও একক প্রার্থী হলে সেই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে তাঁকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
ভোট গণনার সময় সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকার বিধানটিও যুক্ত করা হয়েছে। তবে ভোট গণনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেখানে থাকতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী তথা প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জেলাভিত্তিক নির্বাচন অফিসগুলোতে দায়িত্ব পালন করবেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। প্রার্থীদের দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে আয় ও সম্পত্তির বিবরণ হলফনামায় দিতে হবে, যা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করা হবে।
আগে দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে জোটের যেকোনো দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারত। সেটি সংশোধন করা হয়েছে। জোটভুক্ত হলেও প্রার্থীকে নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। ভোটের সময় অনেকে জোটভুক্ত হলে জনপ্রিয় বা বড় দলের মার্কায় ভোট করতেন। এখন আর সে সুযোগ থাকছে না।
প্রবাসী বাংলাদেশি, নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিধানটি আরপিওতে যুক্ত করা হয়েছে। এবার আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং চালু করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের পাশাপাশি আইনি হেফাজতে থাকা, সরকারি কর্মকর্তা, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা ভোট দিতে পারবেন।
প্রার্থীর জামানত বাড়ানো হয়েছে। আগে ২০ হাজার টাকা ছিল, তা বাড়িয়ে ৫০ হাজার করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো রাজনৈতিক দলকে ৫০ হাজার টাকার বেশি অনুদান দিতে চাইলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। যিনি অনুদান দেবেন, তাঁর ট্যাক্স রিটার্নও দিতে হবে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন পুরো আসনের ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা কমিয়েছিল। সংশোধিত আরপিওতে শুধু ভোটকেন্দ্র নয়, অনিয়ম হলে ইসি পুরো আসনের ভোট বন্ধ করতে পারবে, সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রার্থীর হলফনামায় আগে শুধু দেশের সম্পদের হিসাব দেওয়া হতো। সংশোধিত আরপিওতে শুধু দেশের নয়, বিদেশের আয়ের উৎস, সম্পত্তির বিবরণ দিতে হবে।
এ ছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-সংক্রান্ত বিধানটি সংশোধিত আরপিও থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আরপিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যুক্ত করা হয়েছে নতুন বিধান, আবার কিছু কিছু বিধান আরপিও থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—ইভিএম ব্যবহার বাতিল, ‘না ভোট’ পুনর্বহাল, প্রার্থীদের দেশি-বিদেশি আয় ও সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশের বাধ্যবাধকতা এবং পলাতক আসামিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা।
সংশোধিত আরপিওর গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ তুলে ধরা হলো:
আদালত কর্তৃক ফেরারি বা পলাতক আসামি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে তাঁকে না ভোটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। নির্বাচনে না ভোট বেশি হলে সেখানে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন হবে। তবে দ্বিতীয়বারও একক প্রার্থী হলে সেই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে তাঁকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
ভোট গণনার সময় সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকার বিধানটিও যুক্ত করা হয়েছে। তবে ভোট গণনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেখানে থাকতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী তথা প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জেলাভিত্তিক নির্বাচন অফিসগুলোতে দায়িত্ব পালন করবেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। প্রার্থীদের দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে আয় ও সম্পত্তির বিবরণ হলফনামায় দিতে হবে, যা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করা হবে।
আগে দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে জোটের যেকোনো দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারত। সেটি সংশোধন করা হয়েছে। জোটভুক্ত হলেও প্রার্থীকে নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। ভোটের সময় অনেকে জোটভুক্ত হলে জনপ্রিয় বা বড় দলের মার্কায় ভোট করতেন। এখন আর সে সুযোগ থাকছে না।
প্রবাসী বাংলাদেশি, নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিধানটি আরপিওতে যুক্ত করা হয়েছে। এবার আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং চালু করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের পাশাপাশি আইনি হেফাজতে থাকা, সরকারি কর্মকর্তা, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা ভোট দিতে পারবেন।
প্রার্থীর জামানত বাড়ানো হয়েছে। আগে ২০ হাজার টাকা ছিল, তা বাড়িয়ে ৫০ হাজার করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো রাজনৈতিক দলকে ৫০ হাজার টাকার বেশি অনুদান দিতে চাইলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। যিনি অনুদান দেবেন, তাঁর ট্যাক্স রিটার্নও দিতে হবে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন পুরো আসনের ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা কমিয়েছিল। সংশোধিত আরপিওতে শুধু ভোটকেন্দ্র নয়, অনিয়ম হলে ইসি পুরো আসনের ভোট বন্ধ করতে পারবে, সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রার্থীর হলফনামায় আগে শুধু দেশের সম্পদের হিসাব দেওয়া হতো। সংশোধিত আরপিওতে শুধু দেশের নয়, বিদেশের আয়ের উৎস, সম্পত্তির বিবরণ দিতে হবে।
এ ছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-সংক্রান্ত বিধানটি সংশোধিত আরপিও থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

এসএফএফ হয়তো এমন নিয়তি বরণই করে নিয়েছিল যে,১৯৭১ সালে তাদের যে কার্যক্রম তা কোনো দিনই আলোর মুখ দেখবে না। এই বাহিনীর সদস্যরা কোনো বীরত্ব পদক পাননি, তাদের কেবলই নগদ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। এমনকি তিব্বতিদের নিয়ে এসএফএফ গঠন করা ও নেতৃত্ব দেওয়া ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল সুজান সিং উবানও তাঁর বই ‘ফ্য
১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
আসন্ন জাতীয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এক ব্যক্তির নামে অনুমোদিত সিমকার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। আজ রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
৪৪ মিনিট আগে
সন্ন জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি, সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অভিযান পরিচালনা এবং সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে বৈঠকে বসছে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
৪ ঘণ্টা আগে
আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি...
১১ ঘণ্টা আগে