Ajker Patrika

‘৫৪ বছর আগের একটি সংবিধান আমাদের ভাবনাকে থামিয়ে দিবে—এটা মানতে রাজি না’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ১৫
Thumbnail image
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ফাইল ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘এত ছাত্র জীবন দিয়েছে, এত মানুষ পঙ্গু হয়েছে, এত মানুষ রাস্তায় নেমেছে—আমরা যদি কিছুই করতে না পারি, সংবিধানে এই আছে, এর আগে এই হয়েছে, তাহলে আমাদের তো কিছু করার নেই। আমরা যদি সংবিধান সংবিধান করে বসে থাকি—সংবিধানকে গঠনমূলকভাবে ইন্টারপ্রিটেশন (ব্যাখ্যা) তো করা যায়। সংবিধান বা আইন এটাকে বুদ্ধিমত্তার সহিত ইন্টারপ্রিটেশন (ব্যাখ্যা) করার জন্যই তো ল এক্সপার্ট (আইন বিশেষজ্ঞ)। ৫৪ বছর আগের একটি সংবিধান আমাদের সমস্ত ভাবনাকে থামিয়ে দিবে—এটা মানতে রাজি না। আমরা এটা করব। কতটা সংবিধান সম্মত করা যায়, সেটা আমরা দেখব।’

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভার আয়োজন করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মতবিনিময় সভায় অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, আইনজীবী, বিচারক ও শিক্ষাবিদেরা।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, উচ্চ আদালতে ভালো বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, নাগরিকদের সব মৌলিক অধিকারের মামলা উচ্চ আদালতের বিচারকেরা শোনেন। তাঁরা চূড়ান্ত আপিল আদালত হিসেবে কাজ করেন। সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অনেক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান যদি নষ্ট করা যায়, তাহলে যেকোনো সরকার এসে সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি অবাধ সুযোগ পেয়ে যাবে এবং এই কাজটাই গত ১৫ বছর করা হয়েছে।

আসিফ নজরুল বলেন, উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের নামে কী হয়েছে তার বহু উদাহরণ আছে। উচ্চ আদালতে এমন বিচারক নিয়োগ পেয়েছেন, যিনি নিম্ন আদালতের পরীক্ষায় ফেল করেছেন; এমন ব্যক্তি বিচারক হয়েছেন, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন। ভয়াবহ সব ঘটনা ঘটে গেছে। তিনি বলেন, অতীতে দক্ষতার জন্য নয়, রাজনৈতিক কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে। দুই বছর (স্থায়ী হওয়ার আগ পর্যন্ত) একধরনের দাসত্ব করতে হয়।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন কোনো কোনো বিচারকের দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে আইন উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

ব্যারিস্টার সারা হোসেন বিচারপতি হতে আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানান। তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও জেলা জজ থেকে সমানসংখ্যক বিচারক নিয়োগের দাবি জানান।

সিনিয়র আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরী প্রস্তাবিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিলে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতিকে না রাখার পক্ষে মত দেন। বিচারপতি হওয়ার জন্য ৪৫ বছর সময়সীমার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন তিনি।

প্রস্তাবিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিলে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং কোনো অধ্যাপককে না রাখার পক্ষে মত দেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। জেলা জজ থেকে এক-তৃতীয়াংশ নিয়োগের এবং বিচারপতি নিয়োগের বয়সসীমা ৪৫ বছরের পরিবর্তে ৪০ রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

সাবেক জেলা ও দায়রা জজ শাহজাহান সাজু অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে দুই বছরের মেয়াদের বিষয়টি বাদ দিতে বলেন। তিনি জেলা আদালত থেকে ৬০ শতাংশকে উচ্চ আদালতে নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দেন।

জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে পেশাজীবী পরিষদ বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা দরকার।

জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বিচারপতি নিয়োগের বয়স ৫০ করার এবং শিক্ষাজীবনে কোনো তৃতীয় বিভাগ না রাখার প্রস্তাব করেন।

সভায় মতামত দেন হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শামীম হাসনাইন, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত