Ajker Patrika

অর্থ পাচার মামলায় ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮: ৫৩
Thumbnail image

২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে করা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রে ড. ইউনূসসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।

ঢাকার আদালতে দুদকের প্রসিকিউশন কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলা হয়।

আসামিদের বিরুদ্ধে তহবিল থেকে ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে গত সোমবার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান। মামলায় এজাহারভুক্ত ১৩ আসামির সঙ্গে তদন্তে পাওয়া নতুন আরও একজনের নাম যুক্ত করা হয়েছে।

গত বছরের ৩০ মে দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন। ড. ইউনূস ছাড়াও মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন—গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম, এস এম হুজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম ও দপ্তর সম্পাদক মো. কামরুল হাসান।

অনুমোদিত চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলামসহ বোর্ডের সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে অনুষ্ঠিত ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় হিসাব খোলা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন ও গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট চুক্তি হয় ওই বছরের ২৭ এপ্রিল। গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সভার হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত ৯ মে হলেও খোলা হয় এক দিন আগে ৮ মে। সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টেও ৮ মে ব্যাংক হিসাব দেখানো আছে, যা বাস্তবে অসম্ভব। এ রকম ভুয়া সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টের শর্ত অনুযায়ী ও ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২২ সালের ১০ মে গ্রামীণ টেলিকমের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তর করা হয়। 

পরবর্তী সময়ে ২২ জুন অনুষ্ঠিত ১০৯তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অ্যাডভোকেট ফি হিসাবে অতিরিক্ত ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়। 

অন্যদিকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাব থেকে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের নামে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের লোকাল অফিসের হিসাব থেকে তিন দফায় মোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের আগেই প্রাপ্য অর্থ তাঁদের না জানিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে ২০২২ সালের মে ও জুন মাসের বিভিন্ন সময়ে সিবিএ নেতা মো. কামরুজ্জামানের ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার হিসাবে মোট তিন কোটি টাকা, সিবিএ নেতা মাইনুল ইসলামের হিসাবে তিন কোটি ও সিবিএ নেতা ফিরোজ মাহমুদ হাসানের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক মিরপুর শাখার হিসাবে তিন কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়। একইভাবে অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলীর কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ধানমন্ডি শাখার হিসাবে চার কোটি টাকা, সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে পাঁচ কোটি টাকা ও আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ ও মো. ইউসুফ আলীর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের গুলশান নর্থ শাখায় যৌথ হিসাবে ছয় কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে, যা তাঁদের প্রাপ্য ছিল না।

গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সভায় ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্তের এক দিন আগেই ব্যাংক হিসাব খোলা হয় এবং সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট এপ্রিলে হলেও অ্যাগ্রিমেন্টে ৮ মে খোলা ব্যাংক হিসাব দেখানো হয়, যা অসম্ভব।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে কল্যাণ তহবিলের টাকা আত্মসাৎসহ অন্যান্য ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

এজন্য আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। 

ড. ইউনুসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন
তদন্ত কর্মকর্তা ড. ইউনুসসহ ১৩ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন। মামলার আসামি দুদকের পরিচালক পারভীন মাহমুদ জামিনে থাকায় তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়নি। 

ঢাকার আদালতের দুদকের প্রসিকিউশন কার্যালয়ের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা সহকারী পরিদর্শক আক্কাস আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ড. ইউনুসসহ ১৩ জনকে মামলায় পলাতক দেখানো হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আগামী ৩ মার্চ এই মামলার ধার্য তারিখ রয়েছে। উক্ত তারিখে অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হবে কি না সে বিষয়ে আদেশ দেবেন আদালত। একইসঙ্গে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি সংক্রান্ত আদেশ দেবেন। 

জানা গেছে, গত ১ জানুয়ারি ড. ইউনুসসহ গ্রামীণ টেলিকমের ৪ কর্মকর্তাকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের এক মামলায় ঢাকার শ্রম আদালত-৩ ছয় মাসের কারাদন্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে আসামিদের শ্রম ও আপিল ট্রাইবুনাল আগামী ৩ মার্চ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত