Ajker Patrika

সড়ক-মহাসড়ক: ছয় বছরেও চালু হয়নি ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র

  • প্রকল্প কাটছাঁট, কেন্দ্রের সংখ্যা ২৮ থেকে কমে ২৫
  • অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ, যন্ত্রপাতির টেন্ডার বাতিল
  • ব্যয় কমেছে ২১ কোটি, মেয়াদ বাড়ল জুন ২০২৬ পর্যন্ত
  • ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটেই সবচেয়ে বেশি ওভারলোড

তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
সড়ক-মহাসড়ক: ছয় বছরেও চালু হয়নি ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র

মহাসড়কে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন ঠেকাতে এক্সেল লোড বা ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ২০১৯ সালে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের ২৮টি স্থানে ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বসানোর কথা থাকলেও গত ছয় বছরে কোনো সড়কে তা চালু হয়নি। এই অবস্থায় সড়কের ধারণক্ষমতার বেশি ওজনের যানবাহন চলাচল করছে। ফলে দ্রুত নষ্ট হচ্ছে মহাসড়ক। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বাড়তি সময়েও কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

জানতে চাইলে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রগুলো চালু করতে না পারার কারণে সড়কগুলো দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে। সরকার নীতিমালা করেছে, অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে, প্রকল্প হাতে নিয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়নে গাফিলতি হচ্ছে। ফলে জনগণের টাকা নষ্ট হচ্ছে এবং মহাসড়কের স্থায়িত্বও কমে যাচ্ছে। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে আরও বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হবে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার প্রকল্পটি কিছুটা কাটছাঁট করে ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ২৮টি থেকে কমিয়ে ২৫টি করার অনুমতি দিয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্প ব্যয়ও ২১ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, যা কমিয়ে ১ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা করা হয়েছে। শুরুতে ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬৪ হেক্টর। বর্তমানে তা কমিয়ে ৪৩.৮৭ হেক্টর করা হয়েছে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের কাজ দুটি ধাপে শেষ করার কথা ছিল। প্রথম ধাপে কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করা এবং দ্বিতীয় ধাপে এটি পরিচালনার জন্য যন্ত্রপাতি বসানো। কিন্তু এখনো অনেক জায়গায় সিভিল ওয়ার্ক (মূল নির্মাণকাজ) শেষ হয়নি। এরই মধ্যে আগের সরকারের সময়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আনার টেন্ডার (দরপত্র) প্রক্রিয়া অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করেছে এবং নতুন করে দরপত্র নথি তৈরি করতে বলেছে। নতুন করে আবার টেন্ডার করতে সময় লাগবে। ফলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার ওপর তা প্রভাব ফেলবে।

প্রকল্প সূত্র আরও জানিয়েছে, ২৮টি ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের মধ্যে দিনাজপুরের হিলি, মাদারীপুর ও গাজীপুরের কেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে। বাকি ২৫টি কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে। এগুলোর মধ্যে ১০টির নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে, ৭টির কাজ চলমান এবং ৮টির কাজ জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় স্থানীয় লোকজন করতে দিচ্ছে না। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মহাসড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণে অনেক সময় লেগেছে। যেখানে আমরা জমি চেয়েছিলাম, সেখানে না পাওয়ায় সাইজ (আকার) পরিবর্তন হয়েছে। ফলে ডিজাইনেও (নকশা) পরিবর্তন করতে হয়েছে। এর কারণে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে কিছু অংশে সিভিল ওয়ার্কের কাজ এগিয়েছে। যন্ত্রপাতি বসানোর জন্য টেন্ডার হয়েছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়েছে। এ মাসের শেষে আবারও টেন্ডার করা হবে।’

ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা চ্যালেঞ্জ হবে। যন্ত্রপাতি কেনা ও অপারেশনের কাজের জন্য টেন্ডার বাতিল করে নতুন করে করতে হচ্ছে। এতে আরও সময় লাগবে। এ ছাড়া স্থানীয় লোকজনের বাধা এবং জমি অধিগ্রহণ জটিলতা প্রকল্পের গতি কমিয়ে দিচ্ছে।

সরকার ২০১২ সালে অতিরিক্ত পণ্যবাহী যান চলাচল ঠেকাতে এক্সেল লোড নীতিমালা প্রণয়ন করে। কিন্তু গত ১৩ বছরেও ওই নীতিমালা অনুযায়ী জরিমানা আদায় করা যায়নি বলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে।

এক্সেল লোড নিয়ে সওজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পথের যানবাহনগুলোর অনুমোদিত পরিমাপের চেয়ে অতিরিক্ত ওজন বহন করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। অতিরিক্ত ওজন বহনের কারণে সড়ক-মহাসড়ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সওজকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতে প্রতিবছর বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়। এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সড়কগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় প্রায় ২০ শতাংশ কমানো সম্ভব।

সওজের তথ্য বলছে, চলতি বছরে ১০টি সড়ক বিভাগের নতুন করে প্রায় ১ হাজার ৪৭৮ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্থাৎ সড়কে খানাখন্দ বা পিচ ও পাথর উঠে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক সংস্কারে প্রায় ২ হাজার ৯০৭ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয় হবে।

বিদ্যমান এক্সেল লোড নীতিমালা অনুযায়ী, মহাসড়কে চলাচল করা ৬ চাকাবিশিষ্ট মোটরযানের সর্বোচ্চ ওজন সীমা (যানবাহন, মালামালসহ) ২২ টন, ১০ চাকাবিশিষ্ট যানবাহনের সর্বোচ্চ সীমা ৩০ টন এবং ১৪ চাকাবিশিষ্ট মোটরযানের সর্বোচ্চ সীমা ৪০ টন নির্ধারণ করা হয়েছে। নীতিমালা না মানলে ২ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষায় নতুন ৩ ব্যাটালিয়ন, দুই হাজার ২৫৮ পদ সৃষ্টি

কাপের অবশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় নারীকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

নারায়ণগঞ্জে ইট দিয়ে থেঁতলে যুবককে হত্যার ভিডিও ভাইরাল, গ্রেপ্তার ৩

সোনার বড় দরপতন, একলাফে ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমল ভরিতে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ