Ajker Patrika

এলজিইডির পদোন্নতি নিয়ে মুখোমুখি দুই পক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
এলজিইডির পদোন্নতি নিয়ে মুখোমুখি দুই পক্ষ

দেশের স্থানীয় পর্যায়ে গ্রামীণ, পানিসম্পদ ও নগর অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি এসব অবকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে বিভিন্ন বিষয়ে কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সড়ক, সেতু, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার অবকাঠামো থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ, স্যানিটেশনসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের উন্নয়নে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সংস্থাটি। কিন্তু প্রকৌশলীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সেখানে আটকে আছে পদোন্নতি। কর্মকর্তাদের রেষারেষির প্রভাব পড়ছে গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নে।

অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলী—সব স্তরেই পদোন্নতি আটকে আছে। ফলে মাঠপর্যায়ে দুই শতাধিক উপজেলা প্রকৌশলী অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। সদর দপ্তরে একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে ২-৩টি দপ্তরের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। এতে প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়নে গতি কমে আসছে।

জানা গেছে, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর কর্মকাণ্ড চলছে রুটিন দায়িত্বে। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন প্রধান প্রকৌশলীর রুটিন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গ্রামীণ সেতু সহায়তা কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক। ১৩টি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদের বিপরীতে এখন কর্মরত আছেন মাত্র চারজন। বছর শেষে সংখ্যা নেমে আসবে একজনের কোটায়।

এর মধ্যে সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী হতে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি বা চলতি দায়িত্ব নিয়ে এলজিইডির কর্মকর্তারা একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে নিয়োগ পাওয়া প্রকৌশলীদের বিরোধিতার মুখে ২২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতিসংক্রান্ত বৈঠকে কোনো ফল আসেনি। এতে করে প্রকল্পে নিয়োগের পর সুপ্রিম কোর্টের আদেশে চাকরিতে স্থায়ী হওয়া প্রকৌশলীরা হতাশ। তাঁদের দাবি, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে চাকরি স্থায়ী হলেও নানান অজুহাতে পদোন্নতি বা চলতি দায়িত্ব আটকে রাখা হচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে গ্রামীণ পর্যায়ের উন্নয়নে। পিএসসির অধীনে নিয়োগ পাওয়া প্রকৌশলীদের দাবি, চাকরির গ্রেডেশন তৈরি করে পদোন্নতি দিতে হবে।

এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী (রুটিন দায়িত্ব) মো. আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, পদোন্নতি নিয়ে ঝামেলার কোনো বিষয় নয়। এটা তো রুটিন ওয়ার্ক। পদোন্নতি তো আইনকানুন মেনে মন্ত্রণালয় দেবে। সব জিনিস আমাদের ওপর নির্ভর করে না। আর ২৫৭ জনের বিষয়টি অনেক পুরোনো ইস্যু। আমাদের এখানে নিয়োগের ক্ষেত্রে পিএসসি, নন-ক্যাডার এবং প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে নিয়মিত করা হয়েছে। নিয়োগপ্রক্রিয়ার মধ্যে গ্রেডেশন লিস্টে কার অবস্থান কোথায় হবে, সেটা নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে। এখন মন্ত্রণালয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। আমরা আইন অনুযায়ী যার অবস্থান যে জায়গায় হয়, সে অনুযায়ী করতে চাই। আইনের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এলজিইডিতে প্রকৌশলীদের মধ্যে একাধিক গ্রুপ রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২৫৭ কর্মকর্তা বিভিন্ন প্রকল্পে চুক্তিতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এদের মধ্যে ২০০ জন এখনো কর্মরত। হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের রায়ের ভিত্তিতে তাঁদের চাকরি স্থায়ী হয়। ২০১৯ সালে সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী পদে তাঁদের পদোন্নতি হয়। নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পাওয়ার কথা থাকলেও মামলা জটিলতায় তা আটকে আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী বলেন, ‘২০০১ সালে এলজিইডিতে প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে ২০১১ সালে রাজস্ব খাতে পদায়ন এবং ২০১৯ সালে সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী পদে উন্নীত হই। তবে বারবার মামলার কারণে ন্যায্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। বর্তমানে ১৮৫টি নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ শূন্য থাকলেও সে পদে পদোন্নতি বা চলতি দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না। প্রায় ২৫ বছরের চাকরি শেষে কি আমি একটু সম্মান আশা করতে পারি না?’

কক্সবাজার এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী এবং আইইবি কক্সবাজার কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দুই বছর আগে আমাদের চলতি দায়িত্ব দেওয়ার যোগ্য হয়েছি। আমাদের বিভাগে অনেক পদ খালি আছে। কিন্তু আওয়ামী অপতৎপরতার কারণে মূল্যায়ন করা হয়নি। এখনো তাদের কারণে বঞ্চিত করা হচ্ছে। পদগুলো শূন্য হওয়ায় বিভিন্ন উন্নয়নকাজ স্থবির হয়ে যাচ্ছে।’

এলজিইডিতে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ৮টি ব্যাচের কর্মকর্তা রয়েছেন। যাঁরা প্রতিষ্ঠানটিতে প্রভাব বিস্তার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ গ্রুপ এলজিইডিতে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য স্থায়ী গ্রেডেশন তৈরির দাবি জানাচ্ছে। গ্রেডেশন ছাড়া পদোন্নতিতে বিশৃঙ্খলা তৈরির আশঙ্কা তাঁদের।

গাজীপুর এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘এখানে অনেক ব্যাচ আছে। সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে পদোন্নতির জন্য গ্রেডেশন। আমাদের নৈতিক অবস্থান হচ্ছে একটি গ্রেডেশন হবে এবং সেটি অনুযায়ী পদোন্নতি হবে। এ ছাড়া আর কিছুই না। এ জন্য পিএসসি থেকে আসা আমাদের প্রতিটি ব্যাচের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে গ্রেডেশন করার জন্য। এটা অনুমোদন হলে প্রক্রিয়া অনুযায়ী যে কেউ পদোন্নতি পেতে পারে। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তালিকা না করে পদোন্নতি দিলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। এটা আমরা চাই না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত