Ajker Patrika

১০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে: আলী রীয়াজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি। ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি। ছবি: সংগৃহীত

আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানোর বিষয়ে তাগিদ দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘যেটা আমাদের বাধ্যবাধকতা বলে মনে করি, সেখানে পৌঁছাতে হলে আজকেসহ আগামী ১০ দিনের মধ্যে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। দু-একটি বিষয়ে এখনো আলোচনা বাকি আছে। সে জন্য এক-দুদিন বরাদ্দ করা যাবে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যতিরেকে অগ্রসর হওয়া যাবে না।’

আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৬ তম দিনের সূচনা বক্তব্যে আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন। আজকের আলোচ্য বিষয়—প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি।

আলোচিত বিষয়গুলোতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাগিদ দিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আপনাদের বলতে হবে যে, এই জায়গায় একমত হচ্ছি অথবা হচ্ছি না। আমরা যেহেতু প্রথম থেকেই নোট অব ডিসেন্টের ব্যবস্থা রেখেছি, কেউ কেউ যদি দ্বিমত পোষণ করেন, সেটা পারবেন। সেটা জাতীয় সনদে উল্লেখ থাকবে যে, এ বিষয়ে আপনাদের দ্বিমত আছে, সেটির কারণও ইতিমধ্যে ব্যাখ্যা করেছেন। যদি প্রয়োজন হয় সংক্ষেপে আপনাদের অবস্থান বলুন, কিন্তু দীর্ঘ আলোচনায় যাওয়া যাবে না।’

সংলাপে বিভিন্ন বিষয়ে একাধিকবার আলোচনা হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেগুলোর ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্তের পর্যায়ে উপনীত হয়েছি। যে কোন প্রক্রিয়ার মধ্য থেকে আমাদের এগুলো এক ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।’

উচ্চকক্ষের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট হবে কি, হবে না সেটা আপনাদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন বিবেচনা করছে। আমরা আশা করছি কাল-পরশুর মধ্যে আমরা এক জায়গায় আসতে চাই।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সংশোধিত সমন্বিত প্রস্তাবে অধিকাংশ দল একমত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু বিষয়ে হয়তো খুঁটিনাটি বিষয়ে আপনাদের কিছু কিছু পরামর্শ থাকতে পারে। আমরা সে জন্য অনুরোধ করেছি আজকের মধ্যে আপনারা পরামর্শগুলো সংগঠিত করে আমাদের দিলে আগামীকাল সেটা উত্থাপন করে সিদ্ধান্তের উপনীত হওয়ার চেষ্টা হবে কিংবা আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

কমিশনের হাতে ১০ দিন সময় আছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন,‘ আমাদের এখন যে প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হতে হবে, বিভিন্ন বিষয় আমরা আলোচনা করেছি, দুই-একটি বিষয়ে আলোচনার বাইরে থেকেছে, সেগুলো আলোচনা করব।’

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের কথা উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আপনারা প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক বিষয়ে আপনাদের একমত, দ্বিমত আছে। রাষ্ট্র কাঠামোর ক্ষেত্রে এবং শাসন ব্যবস্থার অর্থে, গভর্নেন্সের অর্থে, যেগুলোকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেছি সেগুলো পুনর্বার আলোচনার জন্য উপস্থাপিত হয়েছে। তার মধ্যে আটটি বিষয়ে একমত হয়েছি, তার মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্টের বিষয় থেকেছে।’

গত ৫৩ বছরে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি একটি গণতান্ত্রিক জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। সেই সংগ্রাম অব্যাহত আছে। তারই একপর্যায়ে আমরা একটা ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী শাসনের মধ্যে নিপতিত হয়েছিলাম। সেখান থেকে সমস্ত রকম ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে সকলে মিলে, সব রকম মতপার্থক্যকে ভুলে একটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা এই জায়গায় এসেছি।

৫৩ বছরের সংগ্রাম, গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, গত বছরের রক্তপাত এবং প্রাণনাশ আপনারা মনে রাখুন। সেটাকে বিবেচনা রেখে আমাদের অগ্রসর হতে হবে। সেখান থেকে পেছানোর কোন উপায় নেই, সেগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। সেই বিবেচনায় আগামী ১০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে, যেখানে আমরা একমত হতে পারলে একমত হব, ভিন্নমত থাকলে থাকবে, যদি অধিকাংশ দল মিলে সিদ্ধান্ত বিবেচনায় রাখতে পারব না, সেটা বাদ দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান নেই।

তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় আমরা উপস্থাপন করেছি, কিন্তু আমরা জোর করে চাপিয়ে দিতে চাইনি, চাইব না। কিন্তু আমাদের একটা অবস্থান তো অবশ্যই থাকে রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় মনে করেছি অন্যথা এগুলো উপস্থাপন করার প্রয়োজন হতো না। সেগুলো বিবেচনায় করে ১০ দিনের মত এক জায়গায় উপনীত হব, জাতীয় সনদ তৈরি করব। আপনাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে পারলে এক জায়গায় উপনীত হতে পারব।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সভাপতিত্বে সংলাপে উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. আইয়ুব মিয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত