Ajker Patrika

বাংলাদেশ আশার বাতিঘর হতে চায়

বাসস, দোহা (কাতার)
আর্থনা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কাতারের রাজধানী দোহায় ম্যান্ডারিন ওরিয়েন্টাল হোটেলে। ছবি: পিআইডি
আর্থনা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কাতারের রাজধানী দোহায় ম্যান্ডারিন ওরিয়েন্টাল হোটেলে। ছবি: পিআইডি

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ববাসীর উদ্দেশে বলেছেন, বাংলাদেশ এখন এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে, যেখানে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি করার সুযোগ এসেছে। এটি এমন এক চুক্তি, যেখানে রাষ্ট্র ও জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা, ঐতিহ্য, ন্যায়বিচার, মর্যাদা এবং সুযোগের ভিত্তিতে একটি ভবিষ্যৎ একত্রে গড়ে তুলবে।

কাতারের দোহায় গতকাল মঙ্গলবার ‘আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। এর আগে সম্মেলনস্থলে পৌঁছালে তাঁকে স্বাগত জানান কাতারের মন্ত্রী এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তার আগে প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি গত সোমবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৪০ মিনিটে হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাঁকে স্বাগত জানান কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম।

আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা পৃথিবীর জন্য আশার এক বাতিঘর হিসেবে দাঁড়াতে চাই এবং আমাদের বন্ধু ও অংশীদারদের আহ্বান জানাই, অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক চুক্তি পুনর্লিখনের জন্য, পাশাপাশি সামাজিক ব্যবসা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং মাইক্রোফাইন্যান্সের ভূমিকা অন্বেষণ করতে, যা প্রান্তিক জনগণের জন্য টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়ক।’

ড. ইউনূস বলেন, এটি এমন এক সামাজিক চুক্তি, যেখানে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও প্রান্তিক জনগণের ক্ষমতায়ন মৌলিক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে।

প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে একটি সহনশীল, সমৃদ্ধ এবং টেকসই ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তবে এখন এমন নানা হুমকি রয়েছে, যা আমাদের উন্নয়নকে বিপথে ঠেলে দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একসময় পার করছি, যেখানে বহুপাক্ষিকতা হুমকির মুখে, জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুততর হচ্ছে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে এবং মানবিক সংকট গভীরতর হচ্ছে। নতুন নতুন নীতিমালা, প্রযুক্তি এবং শাসনপদ্ধতি আমাদের পৃথিবীকে দ্রুত রূপান্তরিত করছে, যা অতীতের অনেক অনুমানকে অচল করে দিচ্ছে।’ এমন প্রেক্ষাপটে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার পুনরুজ্জীবনের প্রয়োজন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, কাতার যেভাবে আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছে, তা দেখাচ্ছে কীভাবে একটি দেশ উদ্ভাবন, ঐতিহ্য ও অংশীদারত্বের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট, সামাজিক বৈষম্য এবং কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ মোকাবিলা করতে পারে। তিনি তাঁর মূল বক্তব্যে সামাজিক ব্যবসা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং মাইক্রোফাইন্যান্সের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি কাতার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন শেখ মোজা বিনতে নাসের এবং ভাইস চেয়ারপারসন ও সিইও শেখ হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানিকে সময়োপযোগী ও চমৎকার এই শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান।

কাতারের দেনা পরিশোধ করছে সরকার

পরে ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কাতার থেকে এলএনজি আমদানি ব্যয়ের শত শত মিলিয়ন মার্কিন ডলার দীর্ঘদিন পরিশোধ করেনি। অন্তর্বর্তী সরকার সেই দেনা পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে এবং দু-এক দিনের মধ্যে সব দেনা পরিশোধ করা হবে।

উল্লেখ্য, কাতার থেকে এলএনজি আমদানির ৩৭ মিলিয়ন ডলার এখনো পরিশোধ করা হয়নি, যা আগামী দু-এক দিনের মধ্যে পরিশোধ করবে সরকার।

এদিকে আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বাংলাদেশের চার নারী ক্রীড়াবিদকে উপস্থিত ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই চার নারী ক্রীড়াবিদ হলেন ফুটবলার আফিদা খন্দকার ও শাহেদা আক্তার রিপা, ক্রিকেটার সুমাইয়া আক্তার ও শারমিন সুলতানা। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব এসব তথ্য জানিয়েছেন।

কাতার বাংলাদেশ থেকে ৭২৫ সেনাসদস্য নেবে

কাতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে ৭২৫ জন সেনাসদস্য নেবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। তিনি বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এই সেনাসদস্য নেওয়া শুরু হবে। কুয়েতে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সেনাসদস্যরা কর্মরত। একইভাবে কাতারও বাংলাদেশ থেকে নিয়মিতভাবে সেনাসদস্য নিতে চায়। প্রতি তিন বছর পরপর ৭২৫ জন করে সেনাসদস্য নেওয়া হবে, তবে এ সংখ্যাটা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।

কাতারের আমিরের মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ

কাতারের আমিরের মা এবং কাতার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন শেখ মোজা বিনতে নাসেরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল দোহায় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে তাঁরা এ বৈঠক করেন।

শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা কাতার ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের চেয়ারপারসন শেখ থানি বিন হামাদ বিন খলিফা আল-থানির সঙ্গেও এক বৈঠকে যোগ দেন। এ ছাড়া তিনি কাতার চ্যারিটির আন্তর্জাতিক অপারেশনস সেক্টরের সহকারী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নওয়াফ আবদুল্লাহ আল হাম্মাদির সঙ্গে বৈঠক করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত