Ajker Patrika

এক স্থানের জনপ্রতিনিধি কীভাবে গোটা জাতির আইন প্রণয়ন করেন: সলিমুল্লাহ খান

 উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩: ০২
আজ মঙ্গলবার রাতে জাতীয় নাগরিক কমিটির ঢাকা মহানগর উত্তরের থানা প্রতিনিধি সভায় বক্তব্য দেন লেখক ও চিন্তাবিদ অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ মঙ্গলবার রাতে জাতীয় নাগরিক কমিটির ঢাকা মহানগর উত্তরের থানা প্রতিনিধি সভায় বক্তব্য দেন লেখক ও চিন্তাবিদ অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। ছবি: আজকের পত্রিকা

লেখক ও চিন্তাবিদ অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, ‘আমাদের সংবিধান বাস্তবায়ন কমিটি যখন গঠন হল, তখন তারা সবাই গিয়ে ড. কামাল হোসেন সাহেবের সঙ্গে গিয়ে দেখা করতে গেলেন। ড. কামাল হোসেন সংবিধানের কি বোঝেন? বাংলাদেশে সংবিধানে লেখা হয়েছিল, সার্বভৌমত্ব হচ্ছে সংসদে। এটা হল সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। সার্বভৌমত্ব হচ্ছে মালিকানা। সমস্ত ক্ষমতার উৎস হচ্ছে জনগণ। জনগণই ক্ষমতার কেন্দ্র। উৎস বলতে বোঝায়, আপনি (জনগণ) ক্ষমতা দিলেন, আরেকজন চালাবার জন্য। আপনি (জনগণ) মালিকানা দেন না, ম্যানেজারি করার ক্ষমতা দেন।’

রাজধানীর গুলশানের একটি কনভেনশন হলে আজ মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে জাতীয় নাগরিক কমিটির ঢাকা মহানগর উত্তরের থানা প্রতিনিধি সভায় অতিথি আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের এই অধ্যাপক বলেন, ‘রাষ্ট্রে যারা সংসদে নির্বাচিত হন, তাঁরা হচ্ছেন বড়জোর ম্যানেজার। মালিকেরা তাঁদের নিয়োগ দেন। তাঁরা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করেন, মালিকের অধিকার আছে, তাঁকে চাকরিচ্যুত করার, বরখাস্ত করার। বাংলাদেশের সংবিধানের নিয়ম হচ্ছে পাঁচ বছর। যদি সে পাঁচ বছরের মধ্যেই দায়িত্ব থেকে অবহেলা করে, বেইমানি করে তাঁকে বসিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা জনগণ রাখে। এটাই হচ্ছে সার্বভৌমত্ব।’

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘সার্বভৌমত্ব হচ্ছে অবিভক্ত অখণ্ড। বাংলাদেশের ১৮ কোটি লোক মিলে সার্বভৌমত্ব। একজনের ওপর, দুজনের ওপর সার্বভৌমত্ব হয় না। কিন্তু আমরা কার্যত এক ব্যক্তির হাতে, এক পরিবারের হাতে ন্যস্ত করেছিলাম। এটা হচ্ছে আমাদের ঐতিহাসিক ভুল অথবা ব্যর্থতা। সার্বভৌমত্ব জিনিসটা যেমন বিক্রয় করা যায় না, কারও হাতে তুলেও দেওয়া যায় না। সেই জন্যে সংসদ নির্বাচন করা হয় বিশেষ কিছু কাজ দেওয়ার জন্য, মালিক হওয়ার জন্য নয়। যেটা দেওয়া হয়, নির্দিষ্টকালীন শাসনের ভার।’

গণ বুদ্ধিজীবি সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘যেটা না হলে বাংলাদেশ গঠিত হয় না। ঘটনাটা ঘটে গিয়েছিল ১৯৭১ সালে। সংবিধান লিখে মুক্তিযুদ্ধ করিনি। মুক্তিযুদ্ধের পর সংবিধান লেখার দায়িত্ব বা ক্ষমতা এসেছিল। সেটার আমরা অপব্যবহার করেছি। উদাহরণ দিয়ে বলতে গেলে, ১৯৭২ সালে যে সংবিধান লেখা হয়েছিল, বর্তমানে তা অজ্ঞান অবস্থায় আছে। ওই সংবিধানের মূল সমস্যা হল তিন ভাগ। জনগণের অধিকার (প্রস্তাবনা আকারে আছে), রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতি ও মৌলিক অধিকার। সংবিধানের বাকি পাঁচ ভাগের প্রথমেই আছে আমলাতন্ত্রের শাসন। যেটার প্রথমে আছে নির্বাহী বিভাগ। প্রধান আমলা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি। সংবিধানের গোড়াতেই আছে, আমলাতন্ত্রের অপ্রতিহত ক্ষমতা। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতা তারপরে দেওয়া হয়েছে। যার নাম হচ্ছে সংসদ বা আইন আইনসভা। তৃতীয় ভাগে রয়েছে বিচার বিভাগ। বাকিগুলো সংবিধানে না থাকলেও চলতো, অন্য আইনে হলেও হতো।’

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচিত সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাব হচ্ছে, বিচার বিভাগকে স্বাধীন হতে হবে। কিন্তু তার আগে তো আইনসভাকে কর্তৃত্ব দিতে হবে। তাঁর প্রতিনিধি স্থাপন করতে হবে সরকার, শাসন বিভাগ ও আমলাতন্ত্রকে। কিন্তু যদি বলেন, সার্বক্ষণিক কাউন্সিল তৈরি করবেন, সেটা হচ্ছে মূল সমস্যা বুঝতে না পারার ক্ষমতা। আপনি বুঝতে পারছেন না, সেটাই ক্ষমতা আকারে প্রকাশ করছেন। যা সরকার না থাকলেও রাষ্ট্রকে সার্বক্ষণিক পাহারা দেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে জনগণ সার্বভৌমত্বের মালিক, তাঁরা যদি সর্বক্ষণ ক্ষমতায় থাকে, তাহলে তাঁদের ভোটেই যারা নির্বাচিত হবেন, তাঁরা হচ্ছেন আইনসভা। রাষ্ট্র হচ্ছে সকলের। আর সরকার হচ্ছে নির্দিষ্ট মেয়াদে জনগণ কর্তৃক নিয়োজিত। ঢাকা-১, ঢাকা-২, কুষ্টিয়া-১, কুষ্টিয়া-২ আসন এভাবে করেন কেন? একটি নির্দিষ্ট এলাকার ভৌগোলিক লোকেরা একজন প্রতিনিধি নির্বাচন করেন, সারা দেশে যদি ৩০০ হয়, তাঁরা মিলে সংসদ গঠন করেন। তাহলে এক স্থানের জনপ্রতিনিধি কীভাবে গোটা জাতির আইন প্রণয়ন করেন?’

লেখক ও চিন্তাবিদ সলিমুল্লাহ বলেন, ‘এদিকে যারা একবার পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসেন, তাঁরা সেটাকে বাড়িয়ে দশ বছর করেন, দশ বছরকে বাড়িয়ে পঞ্চাশ বছর করে, পঞ্চাশ বছরকে বাড়ানোর চেষ্টায় তাঁদের হঠাৎ পতন হয়। টানতে টানতে একসময় ছিঁড়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘সার্বভৌমত্ব যত দিন আছে, তত দিন তাঁর মালিক জনগণ। আমরা মাঝে মাঝে সরকার নিয়োগ করব। সরকার যদি আইন ভঙ্গ করে অথবা অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তাঁকে আমরা সরিয়ে ফেলব। সংবিধান প্রণয়ন করা হচ্ছে জনগণের প্রতিনিধিদের কাজ। প্রধান সমস্যা হচ্ছে জনগণের ইচ্ছে অনুযায়ী সংবিধান হবে কি-না? ছাত্র-জনতা যেভাবে চাইবে সেটাই বাস্তবায়ন করতে হবে।’

অধ্যাপক বলেন, ‘একটি দেশ যদি রাজনীতির ওপরে চলে, তাহলে রাজনৈতিক দল অপরিহার্য। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র রাজনৈতিক দল ছাড়া চলে না। এখন যেগুলো বিদ্যমান রাজনৈতিক দল আছে, তাঁদের মধ্যে একটু সংশয় দেখা দিয়েছে, যে তরুণ ছাত্ররা যদি তাদের নীতিতে দল গঠন করে, তাহলে আমাদের কি অবস্থা হবে?’

তিনি বলেন, ‘আমি তাদের উদ্দেশেই বলতে চাই, যদি সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতে চাই, তাহলে অনেক রাজনৈতিক দল লাগবে। একটি রাজনৈতিক দল ঠিকমতো দেশ চালাচ্ছে কি না, সেটি পাহারা দেওয়ার জন্যও আরেকটি রাজনৈতিক দল দরকার। যারাই ক্ষমতায় আসেন, তাঁরা যদি জনগণের কাছে জবাবদিহির বাধ্য না হোন, তাহলে তারা বিপথগামী হবে, যেটা প্রায় ৯০ ভাগ নিশ্চিত করে বলা যায়। কারণ ইতিহাস সাক্ষী আছে। আমরা কোনো ধরনের রাষ্ট্র গঠন করব, আমাদের রাজনৈতিক দলকে সেই রকম হতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের মাঝে মানুষের কোনো বৈষম্য থাকবে না, অপমান, শোষণ ও নির্যাতন করা হয়েছিল, সেটার অবসান হবে। সেই কারণেই বাংলাদেশ স্বাধীন করা হয়েছিল। কিন্তু যে অঙ্গীকার ছিল, সেটা আমরা গত ৫৩-৫৪ বছরে পালন করতে পারি নাই। সমাজে যখন ন্যায়বিচারের অভাব দেখা দেয়, তখন গণতন্ত্র-সাম্য অবরুদ্ধ হয়, আর বৈষম্য প্রতিষ্ঠিত হয়।’

সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আমরা সকলেই জানি, বাংলাদেশের বৈষম্য বেড়েছে, মানবিক মর্যাদার জায়গায় অপমান, নির্যাতন, ঘুম এবং অপহরণ, নরহত্যা সবই পর্যায়ক্রমে ঘটেছে। মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো আমরা ৫৩ বছরে পাই নাই। এবার একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ২০২৪ সালের জুলাই আগস্টের আন্দোলনে। সেই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব কিনা, তার পরীক্ষার মুখে আমরা।’

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মাইনুল আহসান খান বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীদের কথায় যদি যুদ্ধ হতো, তাহলে দেশ স্বাধীন হতো না। আবার বুদ্ধিজীবীদের কথায় যদি আন্দোলন হতো তাহলে বিপ্লব হতো না। আইন হচ্ছে যত অন্যায় অবিচার রয়েছে, তা প্রতিহতের জন্য। আর আমাদের দেশের আইন হলো, যত অন্যায়-অবিচার রয়েছে তা রক্ষা করার জন্য। লক্ষ্য করবেন, যাদের কোনো উপায় নেই, আইন সব সময় তাদেরই নিপীড়ন করে, শোষণ করে।’

অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে বসছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে বসছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

সন্ন জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি, সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অভিযান পরিচালনা এবং সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে বৈঠকে বসছে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।

আজ রোববার সকাল ১১টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৫তম বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই বৈঠকের আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—

১. দেশব্যাপী চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সংঘবদ্ধ দুষ্কৃতিকারীদের কর্মকাণ্ড রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ।

২. জুলাই হত্যাকাণ্ডের শহীদদের মামলার রেকর্ড, তদন্ত ও অগ্রগতি বিষয়ক আলোচনা, দেশে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী উসকানিমূলক সাইবার প্রচারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।

৩. নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনগত ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

৪. মাদকের অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কিত আলোচনা।

৫. শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন পরবর্তী সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও প্রতিরোধ, নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনসমূহের অপতৎপরতা রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ।

৬. গার্মেন্টস বা শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিশ্চিত করা।

৭. গার্মেন্টস কারখানা, ঔষধ শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির তৎপরতা বিষয়ে আলোচনা।

৮. অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা সংক্রান্ত আলোচনা।

৯. সীমান্ত ও পার্বত্যাঞ্চল পরিস্থিতি বিষয়ক আলোচনা।

১০. রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইন-শৃঙ্খলাসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ক আলোচনা।

১১. মা ইলিশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আলোচনা।

জানা গেছে, বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিল্প-ও গৃহায়ণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, খাদ্য ও ভূমি বিষয়ক উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্ট আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কমিশন-বিশেষজ্ঞ বৈঠক: বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা নিয়ে জট কাটেনি

  • বৈঠকে সময়সীমা নিশ্চিত করার উপায় মেলেনি
  • কয়েকটি মত এলেও বাস্তবসম্মত মনে করেননি কেউ
  • ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনাসহ নানা প্রশ্নের জবাব নেই
  • আজ সকালে আবার বসছে কমিশন
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৭: ৪৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৃহস্পতিবারের পর ঐকমত্য কমিশন গতকালও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করলেও কোনো সমাধান মেলেনি। এমন প্রেক্ষাপটে আজ রোববার কমিশন আবার নিজেরা বৈঠক করবে এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবার বসবে।

ঐকমত্য কমিশনের জাতীয় সংসদ ভবনের কার্যালয়ে গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকটি বেলা দেড়টার পর শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টার পরে শেষ হয়। প্রায় চার ঘণ্টার বৈঠকেও সংবিধান নিয়ে সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করার উপায় বের হয়নি।

সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কমিশনের সিদ্ধান্ত হলো, গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে প্রথমে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করা হবে। তার অধীনে জারি হবে গণভোট-বিষয়ক একটি অধ্যাদেশ। এর ভিত্তিতেই হবে গণভোট। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (২৭০ দিন বা প্রথম ৯ মাস) আগামী সংসদ কাজ করবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে। এ সময়ের মধ্যেই সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংসদে অনুমোদন করা হবে। প্রসঙ্গত, একই সময় এ পরিষদ নিয়মিত সংসদ হিসেবেও কাজ করবে। সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায়ই সংবিধান সংস্কার হবে।

গতকালের আলোচনা বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা ২৭০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন না করলে সনদে থাকা বিষয়গুলো কী হবে—সেখানেই আটকে যাচ্ছে আলোচনা। কারণ আমরা তেমন সমাধান দিতে পারছি না। দেশে অতীতে এ-সংক্রান্ত কোনো উদাহরণ নেই। দেশের বাইরেও এ ধরনের উদাহরণ পাইনি।’

কোনো দল আগামী নির্বাচনে সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সংবিধান সংস্কার কীভাবে হবে, এ প্রশ্নও আছে। বিষয়টি তখন মূলত নির্ভর করবে বেশি আসন পাওয়া কয়েকটি দলের সদিচ্ছার ওপর। কিন্তু কমিশন চাইছে এ অনিশ্চয়তার অবকাশ না রেখে এমন কোনো বিধান করা, যা সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দেবে।

গতকালের বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা একাধিক মত দিয়ে বলেছেন, সেগুলো আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না তাঁ। একটি মত হলো,নির্ধারিত সময়ে সংস্কার বাস্তবায়ন করা না হলে সংসদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটি আইনগতভাবে ঠিক হলেও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। সংসদ এভাবে বিলুপ্ত হলে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা।

আরও যে কয়েকটি মত গতকাল এসেছে তার মধ্যে রয়েছে, প্রথমত, পরিষদে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সনদের বিষয়গুলো বাস্তবায়ন না হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাওয়া এবং দ্বিতীয়ত, আগে সংবিধান সংস্কার পরিষদ বৈঠকে বসে সনদের সংযুক্তি বাস্তবায়ন করবে এবং তারপর সংসদ বসবে। কিন্তু এগুলোও কার্যকর বা বাস্তবসম্মত মনে করেননি বিশেষজ্ঞদের সবাই।

একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, সময়সীমার মধ্যে না সম্পন্ন করলে আপনা থেকেই সংবিধানে বিষয়গুলো যুক্ত হওয়ার ধারণা বাস্তবসম্মত না। কারণ বিলগুলোর খসড়া তৈরি করা নেই। এটা করা বিশেষজ্ঞদের কাজ না। সংসদে আলোচনা করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই এ সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরও বলেন, সনদের একটি বিধান হচ্ছে, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ করা হবে। কিন্তু কোন মৌলিক অধিকারটি সম্প্রসারণ করা হবে, তা বলা নেই। সংসদ সদস্যদের আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এসব কারণে আমরা সিদ্ধান্ত দিতে পারিনি। কমিশন জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বৈঠক করবেন, প্রয়োজনে আমাদের সহযোগিতা নেবেন।’

গতকালের বৈঠকে আগে সংবিধান সংস্কার পরিষদ বসে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার যে প্রস্তাব আসে তার পক্ষে বলা হয়, এতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দ্রুত সনদ বাস্তবায়নে কাজ করবেন। কারণ তাঁরা বিলম্ব না করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে চাইবেন। একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা হলেও বেশির ভাগের মত, এটিও বাস্তবসম্মত নয়। কারণ জনপ্রতিনিধিদের শপথের মাধ্যমে সংসদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্বে থেকে যেতে হবে। এটা প্রধান উপদেষ্টাই মানবেন না।

এ অবস্থায় সমাধান কী হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমরা আদৌ কোনো বাধ্যবাধকতা তৈরি করে দিতে পারব কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ এমন আইনি ও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্য সমাধান পাইনি। তাই বিষয়টি আমাদের সুপারিশে না-ও থাকতে পারে।’

সনদ-বিষয়ক আদেশের খুঁটিনাটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। গণভোটের দিনক্ষণ সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

কমিশন সূত্র জানায়, আজ সকালে নিজেরা বৈঠক করার পর প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আবার বৈঠক করা হবে। ৩১ অক্টোবরের মেয়াদের মধ্যেই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন।

এনসিপির সঙ্গে বৈঠক

গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসার আগে কমিশনের সদস্যরা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক করেন। ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হলেও দলটি সই করেনি। এনসিপি বলেছিল, বাস্তবায়নের আদেশের চূড়ান্ত খসড়া না দেখে তারা স্বাক্ষর করবে না।

কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, গতকালের বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধিরা ‘স্পষ্টভাবে’ জানিয়েছেন যে তাঁরা স্বাক্ষর করতে চান। তাঁরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন, যা কমিশন আইনি বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠিয়েছে। এনসিপির প্রস্তাবে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই দিকই আছে। সেই বিষয়গুলো বিবেচনা করে কমিশন এগোচ্ছে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে, যেন সবাই স্বাক্ষরের দিকে আসে।

বিশেষজ্ঞ হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক ও ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন।

আলোচনায় কমিশনের পক্ষে অংশ নেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সংশোধিত আরপিও নিয়ে বিতর্ক, এল যেসব পরিবর্তন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আরপিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যুক্ত করা হয়েছে নতুন বিধান, আবার কিছু কিছু বিধান আরপিও থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—ইভিএম ব্যবহার বাতিল, ‘না ভোট’ পুনর্বহাল, প্রার্থীদের দেশি-বিদেশি আয় ও সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশের বাধ্যবাধকতা এবং পলাতক আসামিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা।

সংশোধিত আরপিওর গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ তুলে ধরা হলো:

আদালত কর্তৃক ফেরারি বা পলাতক আসামি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে তাঁকে না ভোটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। নির্বাচনে না ভোট বেশি হলে সেখানে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন হবে। তবে দ্বিতীয়বারও একক প্রার্থী হলে সেই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে তাঁকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।

ভোট গণনার সময় সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকার বিধানটিও যুক্ত করা হয়েছে। তবে ভোট গণনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেখানে থাকতে হবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী তথা প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জেলাভিত্তিক নির্বাচন অফিসগুলোতে দায়িত্ব পালন করবেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। প্রার্থীদের দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে আয় ও সম্পত্তির বিবরণ হলফনামায় দিতে হবে, যা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করা হবে।

আগে দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে জোটের যেকোনো দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারত। সেটি সংশোধন করা হয়েছে। জোটভুক্ত হলেও প্রার্থীকে নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। ভোটের সময় অনেকে জোটভুক্ত হলে জনপ্রিয় বা বড় দলের মার্কায় ভোট করতেন। এখন আর সে সুযোগ থাকছে না।

প্রবাসী বাংলাদেশি, নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিধানটি আরপিওতে যুক্ত করা হয়েছে। এবার আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং চালু করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের পাশাপাশি আইনি হেফাজতে থাকা, সরকারি কর্মকর্তা, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা ভোট দিতে পারবেন।

প্রার্থীর জামানত বাড়ানো হয়েছে। আগে ২০ হাজার টাকা ছিল, তা বাড়িয়ে ৫০ হাজার করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো রাজনৈতিক দলকে ৫০ হাজার টাকার বেশি অনুদান দিতে চাইলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। যিনি অনুদান দেবেন, তাঁর ট্যাক্স রিটার্নও দিতে হবে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন পুরো আসনের ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা কমিয়েছিল। সংশোধিত আরপিওতে শুধু ভোটকেন্দ্র নয়, অনিয়ম হলে ইসি পুরো আসনের ভোট বন্ধ করতে পারবে, সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রার্থীর হলফনামায় আগে শুধু দেশের সম্পদের হিসাব দেওয়া হতো। সংশোধিত আরপিওতে শুধু দেশের নয়, বিদেশের আয়ের উৎস, সম্পত্তির বিবরণ দিতে হবে।

এ ছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-সংক্রান্ত বিধানটি সংশোধিত আরপিও থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গুম প্রতিরোধে শুধু আইনগত নয়, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও দরকার: আসিফ নজরুল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ৪৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গুম হত্যার চেয়েও নিকৃষ্টতম অপরাধ। গুম প্রতিরোধে শুধু আইনগত সংস্কার নয়, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও।

আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল আমারিতে অনুষ্ঠিত ‘Ensuring Justice: The Role of the Judiciary in Addressing Enforced Disappearances’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গুম-সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির উদ্যোগে এবং ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

কর্মশালায় আসিফ নজরুল বলেন, ‘অনেক প্রাণ ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ একটি পরিবর্তিত পরিবেশে অবস্থান করছি। এই পরিবর্তন স্থায়ী করতে হলে গুমের বিচার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।’

বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গুমের বিচার বাস্তবায়নে বিচারকদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রায় লেখা একটি সৃজনশীল শিল্প। তাই বিচারকেরা হলেন সৃজনশীল শিল্পী। তাঁদের শিল্পকর্মই তাঁদের রায়।

তিনি বলেন, গুম প্রতিরোধে বিচার বিভাগ, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও মানবাধিকার কাঠামোর মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতা অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও তদন্ত সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি গুমের বিচার নিশ্চিতের মূল চাবিকাঠি।

কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী বলেন, গুম-সংক্রান্ত মামলাগুলোর কার্যকর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এখন সময়ের দাবি। কমিশন এরই মধ্যে বিদ্যমান আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে গুম-সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি, সাক্ষী সুরক্ষা ও ভুক্তভোগী পরিবারের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের প্রস্তাব প্রস্তুত করছে।

কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা এবং ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার-বিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত