নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার।
গত ১ জুন এই তিনজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ওই দিন অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এর পরও হাজির না হলে তাঁদের পলাতক দেখিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তাঁদের জন্য আওয়ামীপন্থী আইনজীবী আমির হোসেনকে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল।
আজ আইনজীবী আমির হোসেনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ প্রসিকিউশন টিমের সদস্যরা।
আদালতে সাবেক আইজিপি মামুন বলেন, ‘আমি স্বেচ্ছায় মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত আমার জ্ঞানের মধ্যে থাকা সমস্ত পরিস্থিতির সত্য এবং বিস্তারিত প্রকাশ করতে ইচ্ছুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। জুলাই-আগস্টের আন্দোলন চলাকালে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিস্তারিত বিবরণ আমি আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।’
আইনজীবীরা বলেন, কোনো আসামি এ ধরনের স্বীকারোক্তি দিলে তাঁকে রাজসাক্ষী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই হিসেবে সাবেক আইজিপিকে এ মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে ধরা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগের বিচার আজ শুরু হয়েছে, তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
অভিযোগ-১: ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাঁদের অধীনস্থ ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক ব্যাপক মাত্রায়, পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ, নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ। হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন এবং অন্যান্য অমানবিক আচরণের অপরাধসমূহ সংঘটনের প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতা, অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদান না করা এবং ষড়যন্ত্র করার অপরাধ; যা আসামিদের জ্ঞাতসারে সংঘটিত।
অভিযোগ-২: শেখ হাসিনা কর্তৃক ছাত্র-জনতার ওপর হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন কর্তৃক শেখ হাসিনার উক্ত নির্দেশ বাস্তবায়নে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং অধীনস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দিয়ে কার্যকর করার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ প্রদান, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে; যা তাঁদের জ্ঞাতসারে কার্যকর করা হয়েছে।
অভিযোগ-৩: শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে স্বল্প দূরত্ব থেকে সরাসরি নিরীহ-নিরস্ত্র আন্দোলনকারী ছাত্র আবু সাঈদের বুক লক্ষ্য করে বিনা উসকানিতে একাধিক গুলি চালিয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা। আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাদের কর্তৃক অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন।
অভিযোগ-৪: শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকা মহানগরীর চাঁনখারপুল এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কর্তৃক নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে হত্যা। উল্লেখিত আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাদের কর্তৃক হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন।
অভিযোগ-৫: শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার সামনে এবং আশপাশ এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কর্তৃক নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃতদেহ এবং একজনকে জীবিত ও গুরুতর আহত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার অপরাধ; যা আসামিদের জ্ঞাতসারে সংঘটিত হয়েছে। উক্তরূপ হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম গত ১ জুন তাঁর সূচনা বক্তব্যে বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের নারকীয় বীভৎসতা বাংলাদেশ ও বিশ্ববিবেককে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার উগ্র বাসনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার করে ব্যাপকভিত্তিক ও পদ্ধতিগতভাবে আক্রমণের মাধ্যমে সংঘটিত নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ ও সহিংসতা বাংলাদেশকে পরিণত করেছিল ৫৬ হাজার বর্গমাইল বিস্তৃত একটি বধ্যভূমিতে।
‘আমরা এই বিচার শুরু করেছি জাতির ইতিহাসের সেই বেদনাদায়ক অধ্যায়ে সংঘটিত অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে, যেখানে নিরস্ত্র, নিরীহ সাধারণ নাগরিক, বিশেষ করে তরুণ ছাত্র-যুবক, নারী ও শিশু, যারা একটি ন্যায়ভিত্তিক ভবিষ্যতের জন্য বৈষম্য ও কোটা পদ্ধতি নামক কুপ্রথার অবসানের দাবিতে অহিংস ও ন্যায়সংগত আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রশাসনযন্ত্র পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, অন্যান্য বাহিনী, সরকারি দলের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং তাদের অধীনস্থ সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনে অংশগ্রহণ করে। তাই এই বিচার শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ই নয়, বরং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন”, “রোম স্ট্যাটিউট অব দি আইসিসি” এবং বাংলাদেশের ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আইন অনুসারেও বিচারযোগ্য। এই বিচার অতীতের প্রতিশোধ নয়; এটি ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা। আমরা প্রমাণ করতে চাই, একটি সভ্য সমাজ, যেখানে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন থাকবে, সেখানে গণহত্যা কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধ সহ্য করা হবে না। যে দেশে বিচার থাকবে, সেখানে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে না, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে না।’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘বিচারের জন্য যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হচ্ছে তা হলো–প্রত্যক্ষদর্শী ও জীবিত ভিকটিমদের সাক্ষ্য, অপরাধ সংঘটনের সময় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ, ড্রোন এবং সিসিটিভি ফুটেজ, আসামিদের মধ্যে টেলিফোন সংলাপের অডিও ক্লিপস, ডিজিটাল অ্যাভিডেন্সের ফরেনসিক রিপোর্ট, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত তথ্য-ছবি ও ভিডিও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অফিশিয়াল ডকুমেন্টস ইত্যাদি।’
আরও খবর পড়ুন:
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার।
গত ১ জুন এই তিনজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ওই দিন অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এর পরও হাজির না হলে তাঁদের পলাতক দেখিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তাঁদের জন্য আওয়ামীপন্থী আইনজীবী আমির হোসেনকে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল।
আজ আইনজীবী আমির হোসেনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ প্রসিকিউশন টিমের সদস্যরা।
আদালতে সাবেক আইজিপি মামুন বলেন, ‘আমি স্বেচ্ছায় মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত আমার জ্ঞানের মধ্যে থাকা সমস্ত পরিস্থিতির সত্য এবং বিস্তারিত প্রকাশ করতে ইচ্ছুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। জুলাই-আগস্টের আন্দোলন চলাকালে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিস্তারিত বিবরণ আমি আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।’
আইনজীবীরা বলেন, কোনো আসামি এ ধরনের স্বীকারোক্তি দিলে তাঁকে রাজসাক্ষী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই হিসেবে সাবেক আইজিপিকে এ মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে ধরা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগের বিচার আজ শুরু হয়েছে, তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
অভিযোগ-১: ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাঁদের অধীনস্থ ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক ব্যাপক মাত্রায়, পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ, নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ। হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন এবং অন্যান্য অমানবিক আচরণের অপরাধসমূহ সংঘটনের প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতা, অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদান না করা এবং ষড়যন্ত্র করার অপরাধ; যা আসামিদের জ্ঞাতসারে সংঘটিত।
অভিযোগ-২: শেখ হাসিনা কর্তৃক ছাত্র-জনতার ওপর হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন কর্তৃক শেখ হাসিনার উক্ত নির্দেশ বাস্তবায়নে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং অধীনস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দিয়ে কার্যকর করার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ প্রদান, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে; যা তাঁদের জ্ঞাতসারে কার্যকর করা হয়েছে।
অভিযোগ-৩: শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে স্বল্প দূরত্ব থেকে সরাসরি নিরীহ-নিরস্ত্র আন্দোলনকারী ছাত্র আবু সাঈদের বুক লক্ষ্য করে বিনা উসকানিতে একাধিক গুলি চালিয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা। আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাদের কর্তৃক অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন।
অভিযোগ-৪: শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকা মহানগরীর চাঁনখারপুল এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কর্তৃক নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে হত্যা। উল্লেখিত আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাদের কর্তৃক হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন।
অভিযোগ-৫: শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার সামনে এবং আশপাশ এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কর্তৃক নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃতদেহ এবং একজনকে জীবিত ও গুরুতর আহত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার অপরাধ; যা আসামিদের জ্ঞাতসারে সংঘটিত হয়েছে। উক্তরূপ হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম গত ১ জুন তাঁর সূচনা বক্তব্যে বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের নারকীয় বীভৎসতা বাংলাদেশ ও বিশ্ববিবেককে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার উগ্র বাসনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার করে ব্যাপকভিত্তিক ও পদ্ধতিগতভাবে আক্রমণের মাধ্যমে সংঘটিত নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ ও সহিংসতা বাংলাদেশকে পরিণত করেছিল ৫৬ হাজার বর্গমাইল বিস্তৃত একটি বধ্যভূমিতে।
‘আমরা এই বিচার শুরু করেছি জাতির ইতিহাসের সেই বেদনাদায়ক অধ্যায়ে সংঘটিত অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে, যেখানে নিরস্ত্র, নিরীহ সাধারণ নাগরিক, বিশেষ করে তরুণ ছাত্র-যুবক, নারী ও শিশু, যারা একটি ন্যায়ভিত্তিক ভবিষ্যতের জন্য বৈষম্য ও কোটা পদ্ধতি নামক কুপ্রথার অবসানের দাবিতে অহিংস ও ন্যায়সংগত আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রশাসনযন্ত্র পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, অন্যান্য বাহিনী, সরকারি দলের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং তাদের অধীনস্থ সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনে অংশগ্রহণ করে। তাই এই বিচার শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ই নয়, বরং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন”, “রোম স্ট্যাটিউট অব দি আইসিসি” এবং বাংলাদেশের ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আইন অনুসারেও বিচারযোগ্য। এই বিচার অতীতের প্রতিশোধ নয়; এটি ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা। আমরা প্রমাণ করতে চাই, একটি সভ্য সমাজ, যেখানে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন থাকবে, সেখানে গণহত্যা কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধ সহ্য করা হবে না। যে দেশে বিচার থাকবে, সেখানে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে না, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে না।’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘বিচারের জন্য যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হচ্ছে তা হলো–প্রত্যক্ষদর্শী ও জীবিত ভিকটিমদের সাক্ষ্য, অপরাধ সংঘটনের সময় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ, ড্রোন এবং সিসিটিভি ফুটেজ, আসামিদের মধ্যে টেলিফোন সংলাপের অডিও ক্লিপস, ডিজিটাল অ্যাভিডেন্সের ফরেনসিক রিপোর্ট, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত তথ্য-ছবি ও ভিডিও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অফিশিয়াল ডকুমেন্টস ইত্যাদি।’
আরও খবর পড়ুন:
অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দায়ের করা একটি মামলার ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে...
২৬ মিনিট আগেপ্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনের ওপরই নির্ভর করবে লন্ডনের যৌথ ঘোষণার বাস্তবায়ন। আর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের সংলাপের অগ্রগতি জানলে নির্বাচনের দিনক্ষণ বলবেন প্রধান উপদেষ্টা।
২ ঘণ্টা আগেত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনের অনিয়মের ক্ষেত্রে পুরো সংসদীয় আসনের নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা ফিরে পেতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ইসির অষ্টম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
৩ ঘণ্টা আগেসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৪৮ তম বিসিএস (বিশেষ) পরীক্ষা-২০২৫ স্থগিত হওয়ার খবরটি ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর বলে জানিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এ ধরনের অপপ্রচার বন্ধে সতর্কতা ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগে