Ajker Patrika

দাঁড়িপাল্লাসহ নিবন্ধন ফেরত পেল জামায়াত, প্রজ্ঞাপন জারি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ জুন ২০২৫, ২০: ৪৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ নিবন্ধন ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আজ মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এক রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এদিকে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ‘দাঁড়িপাল্লা’ ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহৃত হবে এবং কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও দলের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।

ওই সিদ্ধান্ত ইসি সচিবালয়ে পাঠানোর পর নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ২০০৮-এর বিধি ৯-এর উপবিধি (১)-এর ৩২ নম্বর ক্রমিক থেকে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক বাতিল করার প্রস্তাব কমিশন সভায় অনুমোদিত হয়। তারপর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে জামায়াতের জন্য বরাদ্দ মার্কা দাঁড়িপাল্লা নির্বাচনী প্রতীকের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ২০১৭ সালের ৮ মার্চ গেজেট জারি করে ইসি।

এ ছাড়া হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর তৎকালীন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। শুনানিতে জামায়াতের মূল আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চ ওই আপিল খারিজ করে দেন।

এরপর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ‘ডামি’খ্যাত নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। এরপর ১ আগস্ট সরকার সহযোগী সংগঠনসহ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের আবেদন বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ২৮ আগস্ট সরকার আগের নিষিদ্ধের আদেশ বাতিল করে। এরপর আপিল বিভাগে নিবন্ধন মামলাটি পুনরায় শুনানির জন্য আবেদন করে জামায়াত।

১ জুন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের হাইকোর্টের রায় বাতিল ও এ-সংক্রান্ত আপিল নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন।

কোর্টের রায়ের পর ৪ জুন দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লাসহ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফেরত দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। সেদিন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রতিনিধিদলের মাধ্যমে আমাদের কাছে একটি আবেদন করেছে যে, তারা চায় তাদের দাঁড়িপাল্লা যে দলীয় প্রতীকটি ছিল, সেই প্রতীকটিও যেন অন্তর্ভুক্ত হয়। এটা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছি। যে বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে আছে—স্ট্যাটাসকো এনটে বলতে কী বোঝায়, অর্থাৎ ২০১৩ সালে জামায়াতের দলীয় নিবন্ধনের সঙ্গে প্রতীক ছিল, সেটি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালের ৫ নভেম্বর জামায়াত ইসলামীর নিবন্ধন প্রজ্ঞাপনে নিবন্ধনের সঙ্গে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশ্লিষ্ট ধারাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ২০১৬ সালে আদালতের একটি ফুল কোর্ট সভার সিদ্ধান্তের আলোকে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক বাতিল করা হয়। এটি ছিল প্রশাসনিক পত্র, রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে তদানীন্তন ইসি এটি পেয়েছিল। সেটার আলোকে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী ইসির কাছে যে আবেদন দিয়েছে, তার সঙ্গে একটি রিট পিটিশন ও তার আদেশও ইসির সামনে এসেছে। দাঁড়িপাল্লা যাতে কোনো প্রতীক হতে না পারে, যেহেতু এটা ন্যায়বিচারের প্রতীক, এই মর্মে একটি আপিল করা হয়েছিল। সে আপিল সে সময় আদালত খারিজ করে দেন এবং বলেছেন, এটি নির্বাচনে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করার কারণে কোনোভাবেই আদালতের মান ক্ষুণ্ন করবে না। ইসির জানামতে এই রায় এখনো বহাল আছে। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে জামায়াতে ইসলামীর দাঁড়িপাল্লা যে দলীয় প্রতীক ছিল, সেটা ফেরত দেওয়া হবে। অর্থাৎ তারা তাদের দলীয় নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক দুটি ফেরত পাবে। অতিসত্তর জামায়াতে ইসলামী তাদের নিবন্ধন ফেরত পাবে। সেই ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করছি।’

প্রতীকটি বিধিমালায় যুক্ত করতে সময় লাগতে পারে জানিয়ে সেদিন তিনি বলেছিলেন, বর্তমানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৬৯টি প্রতীক তফসিলভুক্ত আছে। এটিকে বাড়িয়ে ১০০টি প্রতীক করা হবে বলেও সেদিন জানান তিনি।

জামায়াত সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ অংশগ্রহণ করে। এতে ৩০০ আসনের মধ্যে দুটি আসন লাভ করে দলটি। আদালতে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হওয়ায় জামায়াত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়নি। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনেও দলীয়ভাবে অংশ নিতে পারেননি জামায়াত নেতারা।

অবশেষে আজ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক ফেরত পেল দলটি। আগামীকাল বুধবার বেলা ১১টায় জামায়াতের একটি প্রতিনিধিদলের নির্বাচন কমিশনে আসার কথা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত