Ajker Patrika

লোকবলের সংকট, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চলছে ঢিমেতালে

আয়নাল হোসেন, ঢাকা 
আপডেট : ২৫ মে ২০২৫, ১১: ১৭
লোকবলের সংকট, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চলছে ঢিমেতালে

দক্ষ ও পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে স্বরাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ মন্ত্রণালয়ে প্রথম থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত দুটি বিভাগে ১৬৫টি পদ শূন্য আছে। এ ছাড়া জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধিদপ্তরগুলোতে প্রায় ৬ হাজার পদ শূন্য পড়ে আছে। পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। অতিরিক্ত কাজের চাপে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী মানসিকভাবে বিরক্ত হয়ে পড়ছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে অনুমোদিত পদ রয়েছে ২১৬টি। আর এই বিভাগে শূন্য রয়েছে ৫৯টি পদ। সুরক্ষা সেবা বিভাগে অনুমোদিত পদ রয়েছে ৩০২টি, এর মধ্যে শূন্য রয়েছে ৮৭টি পদ। দুটি বিভাগে সর্বমোট অনুমোদিত পদ রয়েছে ৫১৮টি আর শূন্য রয়েছে ১৪৬টি পদ।

সুরক্ষা সেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কারা অধিদপ্তরে অনুমোদিত পদ রয়েছে ১২ হাজার ৭৬০টি। এগুলোর মধ্যে শূন্য আছে ১ হাজার ৭৮১টি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে ১৪ হাজার ৫৭০টি পদের বিপরীতে খালি আছে ৯২৯টি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ৩ হাজার ৫৯টির মধ্যে খালি আছে ৮৮৪টি এবং বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে ১ হাজার ৪৮০টির মধ্যে খালি আছে ২৯৭টি পদ। গত ২১ মে সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভার কার্যবিবরণীতে শূন্য পদের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

জননিরাপত্তা বিভাগ ও এর অধীনে থাকা পুলিশ অধিদপ্তর, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড অধিদপ্তরে নবম গ্রেডের ৯৯টি, ১০ গ্রেডের ১ হাজার ৭২২টি, ১১তম গ্রেডে ৪১টি ও ১২তম গ্রেডে ১৭টিসহ সর্বমোট ১ হাজার ৮৭৯টি পদ শূন্য পড়ে আছে।

জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ অধিদপ্তরের নবম গ্রেডের ১০৮টি পদের মধ্যে শূন্য আছে ৭৯টি, ১০ম গ্রেডের ২২ হাজার ৫৩টির মধ্যে ১ হাজার ৪২৩টি, ১১তম গ্রেডে ৫৬টির মধ্যে ৩৭টি এবং ১২তম গ্রেডে চারটির মধ্যে তিনটি পদ শূন্য পড়ে আছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবিতে ১০ম গ্রেডের ৫৭টি পদের মধ্যে শূন্য আছে ২৬টি, ১২তম গ্রেডের ৫০টির মধ্যে ১৪টি শূন্য আছে। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ১০ম গ্রেডের ৫৭৫টি পদের মধ্যে শূন্য আছে ২৫৫টি এবং বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ১০ম গ্রেডে সাতটির মধ্যে চারটি শূন্য আছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জননিরাপত্তা বিভাগে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের পদ রয়েছে ৮৭টি, এর মধ্যে শূন্য রয়েছে ১৩টি পদ। ১০ম থেকে ১২ গ্রেড পদ আছে ৫৮টি, শূন্য আছে ১৩টি। ১৩-১৬তম গ্রেডে পদ আছে ৪৫টি, শূন্য আছে ১৮টি এবং ১৭-২০তম গ্রেডে পদ আছে ৪৮টি, শূন্য আছে ১৩টি।

জননিরাপত্তা বিভাগের মেডিকেল-১ শাখা, রাজনৈতিক ৪ শাখা, রাজনৈতিক ৬, এমটিএমসি শাখা, র‍্যাব-২, এনটিএমসি ১ ও ২, পুলিশ ৫, পরিকল্পনা ২ শাখায় উপসচিবেরা একাধিক শাখার দায়িত্ব পালন করছেন। শৃঙ্খলা অধিশাখায় যুগ্ম সচিবের পদ খালি রয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত সচিব আনসার ও সীমান্ত অধিশাখা, আইন ও শৃঙ্খলা অধিশাখা এবং অর্থ ও প্রশাসনসহ তিনটি অধিশাখায় একজন অতিরিক্ত সচিব দায়িত্ব পালন করছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের পদ খালি আছে ৪০০টি, ১০ম গ্রেড ৫১৯টি, ১১-১৬তম গ্রেড ১ হাজার ৬২৭টি এবং ১৭-২০তম গ্রেডে পদ খালি আছে ১ হাজার ৩৪৫টি।

সুরক্ষা সেবা বিভাগে প্রথম-নবম গ্রেডে অনুমোদিত পদ রয়েছে ৮৩টি। শূন্য আছে ৩৪টি, ১০-১২তম গ্রেডে পদ রয়েছে ৬৭টি, শূন্য আছে ৫টি, ১৩-১৬তম গ্রেডে পদ আছে ১০৪টি, শূন্য আছে ১৬টি এবং ১৭-২০তম গ্রেডে ৪৮টি পদের মধ্যে শূন্য আছে ২৩টি।

দেশের পাসপোর্ট অফিসে পর্যাপ্ত পরিমাণে দক্ষ লোকবলের অভাব রয়েছে। দিনাজপুর, কুমিল্লা, ফেনী ও সিলেট জেলার পাসপোর্ট অফিসে উপসহকারী পরিচালক ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর দিয়ে চলছে অফিস।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পাসপোর্ট সেবা সহজীকরণ করতে সরকার পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দিয়েছে, কিন্তু দেশের অনেক জেলা অফিসে লোকবলের পর্যাপ্ত সংকট রয়েছে। এসব অফিসে পদের সংখ্যা পাঁচ গুণ বাড়ানো দরকার বলে তাঁরা মনে করছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, দক্ষ লোকবলের অভাবে দিনে ১০টি চিঠি ড্রাফট করার পরিবর্তে ৩০-৪০টি করতে হচ্ছে। এতে কাজের মান খারাপ হচ্ছে। অন্যদিকে তাঁদের মেজাজ খারাপ হচ্ছে, যার প্রভাব পরিবারের ওপর গিয়েও পড়ছে।

মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মচারী বলেন, তাঁদের বিভাগে দক্ষ কর্মকর্তার অভাব রয়েছে। অদক্ষ কর্মকর্তাদের কারণে তাঁদের নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত তিন-চার ঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে। বাড়তি কাজের জন্য তাঁরা কোনো অতিরিক্ত বেতন পাচ্ছেন না।

মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরগুলোর লোকবলের সংকটের কথা স্বীকার করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ম অনুসরণ করে করতে হয়। অধিকাংশ নিয়োগ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) মাধ্যমে পূরণ করা হয়। কোনো অধিদপ্তরে যখন লোকবলের সংকট হয়, সেটি পিএসসির মাধ্যমে পূরণের জন্য লিখিত চাহিদা দেওয়া হয়। সেখান থেকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পূরণ হয়ে থাকে। এসব লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো পূরণে তাঁরা চেষ্টা চালাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত