Ajker Patrika

এখনো ২০ পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর, উত্তরে বন্যা পরিস্থিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২১ জুন ২০২২, ২১: ১৭
এখনো ২০ পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর, উত্তরে বন্যা পরিস্থিতি


উজানের ঢল ও অতিবর্ষণে আকস্মিক বন্যায় ভাসছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। সবচেয়ে বেশি ভুগছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ। তবে এরই মধ্যে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। এখনো নদ-নদীর পানি প্রায় সব পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও অব্যাহতভাবে পানির উচ্চতা কমছে। 

তবে আশঙ্কার কথা হলো, দেশের উত্তরাঞ্চলে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। 

ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় এখন নদ-নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। আজ মঙ্গলবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কতা কেন্দ্রের বৈকালিক বুলেটিনে তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার এবং তিস্তা নদীর পানি ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর গাইবান্ধায় ঘাঘট নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। এর মধ্যে তিস্তা নদীর পানি এক দিনে ২৪ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। 

নূন খাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার, হাতিয়াতে ১০৮ সেন্টিমিটার এবং চিলমারীতে ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর ফুলছড়িতে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

অপরদিকে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার, সারিয়াকান্দিতে ৬২ সেন্টিমিটার, কাজীপুরে ৫৮ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জে ৫০ সেন্টিমিটার এবং পোড়াবাড়িতে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

এর মধ্যে একমাত্র চিলমারী ছাড়া সব কটি পয়েন্টে এক দিনের ব্যবধানে পানির উচ্চতা বেড়েছে। 

সারিয়াকান্দি চালুয়াবাড়ী খাটেবাড়ী চর এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছেউজানের ঢলে জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীতে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্রতিদিন বাড়ছে প্লাবিত এলাকার পরিধি, বাড়ছে দুর্গত মানুষের সংখ্যা। প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, বন্যায় ৯ উপজেলার ৪৯ ইউনিয়নের ৩৫ হাজার ৪০৩ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হওয়ায় ২৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৩২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান স্থগিত রাখা হয়েছে। 

বিশেষ করে চিলমারীতে বন্যা পরিস্থিতির বেশি অবনতি ঘটেছে। এতে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত ব্যক্তিদের মাঝে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার ৭৭টি গ্রামের ১৪ হাজার ১৮০ পরিবারের ৫৬ হাজার ৭২০ জন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

এদিকে কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ এবং উজানের ঢলে কয়েক দিন ধরেই যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ১৭ জুন সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। আজ মঙ্গলবার পানি বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার এবং বাঙালি নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। 

সারিয়াকান্দিতে বন্যায় ১০ হাজার ২৫০টি টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় খাওয়ার পানির চরম সংকট তৈরি হয়েছে। ১১ হাজার গবাদিপশু পানিবন্দী। পশুখাদ্যের ভয়াবহ সংকট। পানিতে আংশিক নিমজ্জিত ৫৫০টি বাড়িঘর। ডুবে গেছে উপজেলার ৬৮টি কাঁচা রাস্তা,৩টি পাকা রাস্তা এবং ৯টি ব্রিজ। ৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আংশিক ডুবে গেছে। 

এ ছাড়া কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২ হাজার ৪৬৯ হেক্টর কৃষিজমির ফসল এখন পানিতে নিমজ্জিত। এর মধ্যে পাট ২ হাজার হেক্টর, আউশ ধান ৪৫০ হেক্টর, ভুট্টা ৪ হেক্টর এবং সবজি ১৫ হেক্টর। 

 বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বসত বাড়ি। নেত্রকোনার মদন উপজেলার মাঘান এলাকাঅপরদিকে সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এক দিনে পানি বেড়েছে ৩১ সেন্টিমিটার। আর কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার, সিলেটে ৩৭ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জে ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে ১৮৮ সেন্টিমিটার এবং শেওলা পয়েন্টে ৬৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমলশিদ পয়েন্টে এক দিনের ব্যবধানে পানি বেড়েছে ৪ সেন্টিমিটার। 

খালিয়াজুরীতে বাউলাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কলমাকান্দায় সুরেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

আশার কথা হচ্ছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একমাত্র আমলশিদ পয়েন্ট ছাড়া সবগুলো নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। 

সিলেট সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। উজান-ভাটি দুদিকের পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচংয়ে। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ পৌরসভা ও উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন এখন প্লাবিত। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। 

নেত্রকোনার উজানের পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে গত ১২ জুন থেকে বারহাট্টায় বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নই বন্যাকবলিত। কংস, ধনাইখালী, বিশনাই ও গুমাই নদীর প্রবল স্রোতে রায়পুর, সিংধা, সাহতা, বাউসি ও আসমা ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরই মধ্যেই উপজেলার ২ হাজার ৬৭২টি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়েছে। 

উপজেলা মৎস্য ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৬ হাজার ৫২৩টি পুকুরের মধ্যে ৩ হাজার ৬৮৭টি ভেসে গেছে। ২২ হেক্টর জমির আউশ ধান, ২৭ হেক্টর জমির সবজি ও ২৪ হেক্টর জমির পাটখেত বন্যাকবলিত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত