Ajker Patrika

৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

বাসস, ঢাকা
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ২৫
Thumbnail image

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কসংলগ্ন এলাকায় আন্ডারপাসসহ চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করেন। 

প্রকল্পগুলো হচ্ছে—‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন আন্ডারপাস’, ‘সিলেট শহর বাইপাস-গ্যারিসন লিংক ৪ লেন মহাসড়ক’, ‘বালুখালী (কক্সবাজার)-ঘুমধুম (বান্দরবান) সীমান্ত সংযোগ সড়ক’ এবং ‘রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচরে চেংগী নদীর ওপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ সেতু’। 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ও ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড এই নির্মাণের সার্বিক তত্ত্বাবধান করে। 

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণভবন প্রান্তে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রকল্প প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই চার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনের মাধ্যমে আমরা তৃণমূল জনগণের কাছে দেওয়া বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছি, যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন, কল্পনা করতেন।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার ১৩ বছরে যে আর্থসামাজিক উন্নতি আমরা করতে পেরেছি, সেটা আমাদের দেশের তৃণমূল মানুষের প্রতি যে প্রতিশ্রুতি ছিল সেটারই বাস্তবায়ন। 

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং চিফ মেজর জেনারেল ইবনে ফজল সায়েখুজ্জামান স্বাগত বক্তৃতা করেন। গণভবন প্রান্তে মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রকল্পের সার্বিক দিক তুলে ধরেন। 

চার প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য: 
 
১. শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন পথচারী আন্ডারপাস প্রকল্প: 

‘শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন দৃষ্টিনন্দন পথচারী আন্ডারপাসটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৫৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত এ ধরনের আন্ডারপাস দেশে এটিই প্রথম। এটির দৈর্ঘ্য ১৩৫ মিটার এবং প্রস্থ ৫ মিটার। এর অভ্যন্তরে ত্রিকোনাকৃতি দৃষ্টিনন্দন সুরসপ্তক ডোম, ৩২০ মিটার র‍্যাম্প, ৬৭৮ মিটার ফুটপাত, ৭৬৩ মিটার বাউন্ডারি ওয়াল এবং প্রতিবন্ধী ও বয়োবৃদ্ধদের চলাচলের জন্য বিশেষ সুবিধাদি রয়েছে। এতে দুটি লিফট ও চলন্ত সিঁড়ি রয়েছে। 

এটি নির্মাণে আধুনিক বক্স পুসিং টেকনোলজি ব্যবহারের ফলে নির্মাণাধীন সময়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে। 
২০১৯ সালের ২৯ জুলাই বিমানবন্দর মহাসড়কে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে যায় শিক্ষার্থী আব্দুল করিম রাজিব ও দিয়া খানম মিমের প্রাণ। এর পরই প্রধানমন্ত্রী এ এলাকার জনগণের পারাপারের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে এই আন্ডারপাস নির্মাণের নির্দেশ দেন। 

২. সিলেট শহর বাইপাস-গ্যারিসন লিংক ৪ লেন মহাসড়ক প্রকল্প: 

৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সিলেট গ্যারিসন লিংক রোড প্রকল্পটি নির্মাণের ফলে সিলেট বাইপাস থেকে কানাইঘাট এবং শাহ পরান সেতু ঘাট থেকে সিলেট শহর বাইপাস পর্যন্ত যোগাযোগব্যবস্থা অত্যন্ত দ্রুত ও সহজতর হয়েছে। ২৭৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবগঠিত ১৭ পদাতিক ডিভিশনে একটি ‘এডুকেশন ভিলেজ’ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে একটি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনেস্ট্রেশন, ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সমাজের প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ‘ঢাকা প্রয়াস’ স্কুলের আদলে ‘সিলেট প্রয়াস’ স্কুল নির্মাণ করা হয়েছে। নবনির্মিত এই সড়ক স্থানীয় স্কুল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াত আরও সহজতর ও নিরাপদ করবে। এ ছাড়া স্থানীয় জনসাধারণের বাণিজ্যিক ও আর্থসামাজিক উন্নয়নেও এই প্রকল্প ব্যাপক অবদান রাখবে। 

৩. বালুখালী (কক্সবাজার)-ঘুমধুম (বান্দরবান) সীমান্ত সংযোগ সড়ক প্রকল্প: 

৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ২ কিলোমিটার। প্রস্থ প্রায় ৫৯ ফুট। এই মহাসড়ক নির্মাণে ৭ দশমিক ৫৮ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। পাঁচটি কালভার্ট, সাইড ড্রেন এবং ক্রস ড্রেনের কাজও এতে রয়েছে। 
 
এই সড়ক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপন করবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে। ফলে স্থানীয় জনসাধারণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধিতে এই সড়ক অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। সড়কটি সীমান্ত সড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। 

৪. রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচরে চেংগী নদীর ওপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ সেতু প্রকল্প: 

রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদবেষ্টিত একটি জেলা। বর্ষাকালে যখন কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর বৃদ্ধি পায়, তখন অতিমাত্রার ঢেউয়ের কারণে দেশীয় ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকে। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় এসব নৌযান চলাচলে বাধার সম্মুখীন হয়। এই পরিস্থিতিতে জেলা সদরের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থা না থাকায় এই অঞ্চলের মানুষের রাঙামাটি জেলা সদর কিংবা বিভাগীয় সদর চট্টগ্রামে গমনাগমন বাধাগ্রস্ত হতো। বছরের বেশির ভাগ সময় এই জনপদের মানুষ যোগাযোগব্যবস্থার চরম বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে পার করত। 

পার্বত্য অঞ্চলের সর্ববৃহৎ ৫০০ মিটার দীর্ঘ নানিয়ারচর সেতুটি নির্মাণের মাধ্যমে রাঙামাটি জেলা সদরের সঙ্গে নানিয়ারচর উপজেলার নিরবচ্ছিন্ন সড়কযোগাযোগ স্থাপিত হলো, যা ভবিষ্যতে লংগদু উপজেলা হয়ে মারিষ্যা পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করবে। এর ফলে পার্বত্য জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হলো। এই সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের পথেও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত