Ajker Patrika

সাইকেলে ভারতের ১০ রাজ্য ভ্রমণ কাপ্তাইয়ের বীর কুমার তনচংগ্যার 

ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৪, ২৩: ০৮
Thumbnail image

রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের বীর কুমার তনচংগ্যা সাইকেলে ভ্রমণ করেছেন ভারতের ১০ রাজ্য। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এ ভ্রমণ শেষ হয় তাঁর। তিনি সাইকেলে মোট অতিক্রম করেন ৫ হাজার ৭০০ কিলোমিটার। মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করতে, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সচেতন করতে এবং মাদক গ্রহণের কুফল তুলে ধরা এই ভ্রমণের উদ্দেশ্য বলে জানান বীর কুমার তনচংগ্যা।

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৫ নম্বর ওয়াগ্গা ইউনিয়নের কুক্যাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা বীর কুমার তনচংগ্যা। ২০২১ সালে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক করেন। ২০২৩ সালের ৮ জুন হতে ১৮ জুলাই পর্যন্ত মোট ৪০ দিনে তিনি সাইকেলে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেন। নিয়মিত রক্তদাতা বীর কুমার তনচংগ্যা ২০১৮ সালে স্বেচ্ছায় রক্তদান সংগঠন ‘কাপ্তাই ব্লাড ব্যাংক’ গঠন করেছিলেন। তাঁর সংগঠনের রক্তদাতারা মুমূর্ষু রোগীর পাশে দাঁড়ায় স্বেচ্ছায় বিনা মূল্যে রক্ত দিয়ে। তাই ভ্রমণের পাশাপাশি স্বেচ্ছায় রক্তদানে, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ, মাদক দ্রব্য বিরোধী প্রচারণা চালান তিনি। 

এরই ধারাবাহিকতায় এবার সাইকেলে করে ভারতের ১০টি রাজ্য ভ্রমণ করেন। ২০২৩ সালে ১৭ ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ দিয়ে প্রবেশ করে ১৯ ডিসেম্বর কলকাতা থেকে সাইকেলে ভারত ভ্রমণ শুরু করেন। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭২ দিনে তিনি ৫ হাজার ৭ শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড, ওডিশা, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, কেরালা এবং গোয়া রাজ্য ভ্রমণ করে। বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেবার জন্য গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ট্রেনে করে রওনা দিয়ে ২ মার্চ কলকাতায় পৌঁছান। 

বীর কুমার তনচংগ্যা ৭২ দিনে তিনি ৫ হাজার ৭ শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেনগতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় বীর কুমার তনচংগ্যার। তিনি বলেন, ‘মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করতে, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সচেতন করতে এবং মাদকগ্রহনের কুফল তুলে ধরতে সাইকেল নিয়ে এই ক্যাম্পেইন। তাই ভারতের বিভিন্ন স্কুলে, সামাজিক সংগঠনের কাছে গিয়ে, চলার পথে পথে, চায়ের দোকানে, শপিং মলের সামনে যেখানে পারা যায় জনসচেতনতার বার্তা দিয়েছি।’ 

তিনি বলেন, ‘সাইকেল স্পনসর করে পানাম সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সাহায্য করেছে। পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং স্যার, রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ স্যার এবং বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সহায়তায় আমি ভারতের ১০টি রাজ্যে সাইকেল নিয়ে ভ্রমণ করেছি। ৭৩ দিনে ৫ হাজার ৭০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছি। এই ভ্রমণে চলার পথে অনেকের ভালোবাসা, সহায়তা এবং উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছি। বিপদ সংকুল পথ পাড়ি দিয়েও আমি বিভিন্ন অঙ্গ রাজ্যে পৌঁছেছি।’ 

তিনি জানান, সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এবং কষ্টের বিষয় ছিল নিরাপদ থাকার ব্যবস্থা। মাঝে মাঝে অনেক খোঁজার পর বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাসস্টেশন, পেট্রল পাম্প এবং কমিউনিটি সেন্টারে থাকার অনুমতি পান। আর এক রাতে পেট্রল পাম্পে অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনা ঘটে অতিরিক্ত মদ পান করা এক লোকের সঙ্গে। পুলিশের সহায়তা নিতে থানা পর্যন্ত যেতে হয়েছিল। 

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৫ নম্বর ওয়াগ্গা ইউনিয়নের কুক্যাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা বীর কুমার তনচংগ্যাবীর কুমার তনচংগ্যা বলেন, ভারতের কলকাতাসহ বিভিন্ন রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষী লোকজন যেখানে দেখেছে সাহায্য করেছে। সঙ্গে ভারতীয় লোকজনের সহায়তাও পেয়েছি। আবার কেউ কেউ আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। বিশেষ করে কর্ণাটক রাজ্যের মহাবোধি সোসাইটি বৌদ্ধ বিহারের পক্ষ থেকে ভান্তেরা সংবর্ধনা দিয়েছে, ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রাচির এমপি নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। সামাজিক সংগঠন, স্কুল ও বিভিন্ন রাজ্যের সাইকেল গ্রুপের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। এগুলো ভোলার নয়। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় এখন বাংলাদেশে চলে আসার অপেক্ষায় বর্তমানে কলকাতায় অবস্থান করছি। পরবর্তীতে আবারও ভিসা নিয়ে বাকি রাজ্য ভ্রমণ করব। এ ক্যাম্পেইনে যারা বিভিন্ন সহায়তা করে পাশে ছিলেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত