Ajker Patrika

সাগরমাঝের আশ্চর্য সুন্দর এক রাস্তা

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১: ১২
Thumbnail image

নরওয়ের আটলান্টিক ওশান রোডকে অনেকে বিবেচনা করেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সড়ক হিসেবে। সৌন্দর্যের পাশাপাশি এটি নাম কমিয়েছে চালকদের দক্ষতার পরীক্ষা নেওয়ার জন্যও। নরওয়েজিয়ান সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের মাঝখান দিয়ে কখনো কঠিন ঢাল পেরিয়ে, আবার কখনো কড়া বাঁক নিয়ে এগিয়েছে রাস্তাটি। ঝড়ের সময় সাগরের জল প্রচণ্ড বেগে এসে আঘাত হানে রাস্তার পাশে।

নরওয়ের ন্যাশনাল রোড ৬৪-এর অংশ এই সড়ক। এর রোলার কোস্টারের মতো উত্থান-পতন, বাঁকানো সেতু আর অসাধারণ দৃশ্য মিলিয়ে এটি পর্যটকদের প্রিয় এক ভ্রমণ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। গোটা রাস্তাটির দৈর্ঘ্য আট কিলোমিটারের কিছু বেশি। নরওয়ের দুই বড় শহর ক্রিস্টিয়াননান্ড আর মল্ডির থেকে খুব বেশি দূরে নয় সড়কটি । এটি ধরে যাওয়ার সময় পাওয়া যায় আটটি সেতু আর চারটি ভিউ পয়েন্ট বা সাগরের দৃশ্য দেখার জায়গা। 

এখানকার আবহাওয়া সম্পর্কে আগে থেকে কিছু বলা মুশকিল। হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়া, ঝোড়ো বাতাস বইতে থাকা কিংবা দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়া অতি সাধারণ ঘটনা। এ সময় সাহসী চালকদের গাড়ি চালাতে গিয়ে বুক কাঁপে। এর সঙ্গে যখন প্রবল বেগে সাগরের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে রাস্তার পাশে, আরও জটিল হয় পরিস্থিতি।

অনেকে একে বিবেচনা করেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সড়ক হিসেবেএখন যেখানে আটলান্টিক ওশান রোড, সেখানে রেললাইন বসানোর পরিকল্পনা ছিল বিংশ শতকের গোড়ার দিকে। তবে নানা কারণে সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। রাস্তার কাজ শুরু হয় ১৯৮৩ সালের আগস্টে। ছয় বছর লাগে গোটা কাজ শেষ হতে। ১৯৮৯ সালের ৭ জুলাই সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। নির্মাণের সময় ১২টি হারিকেন বা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলা করতে হয় রাস্তাটিকে। এটি তৈরিতে খরচ হয় ১২ কোটি ২০ লাখ নরওয়েজিয়ান ক্রোন (প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ ডলার)। একে অনেকেই বিবেচনা করেন নরওয়ের শতবর্ষের সেরা নির্মাণকাজ হিসেবে। রাস্তাটি খুলে দেওয়ার পর থেকেই বিশেষ করে গাড়ি আর মোটরসাইকেলচালকদের প্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। 

খাড়া ঢালের এক সেতুসড়কটিতে যাঁরা গাড়ি চালান, তাঁদের জন্য বড় সমস্যা এখানকার ঝোড়ো বাতাস। বিশেষ করে সেতুগুলো পেরোনোর সময় মোটামুটি ৩০ মাইল বেগে ধেয়ে আসা বাতাসের সঙ্গে যুঝতে হয় চালকদের। যখন ঝড় শুরু হয়, তখন সেতুগুলো পেরোনো রীতিমতো দুঃসাহসিক কাজ। কখনো কখনো চালকের মনে ভয় কাজ করে, সেতু দিয়ে চলতে চলতে আবার না নিজেকে গাড়িসমেত সাগরে আবিষ্কার করেন। এখানকার আটটি সেতুর মধ্যে পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি টানে স্টোরসেইসানডেট সেতু। কোনো কোনো কোণ থেকে একে দেখলে মনে হয় সরাসরি সাগরে নেমে গেছে। 

আশপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য মন ভরে উপভোগ করতে চাইলে যেটা করতে হয়, তা হলো কোনো একটি ভিউ পয়েন্টে গাড়ি দাঁড় করিয়ে নেমে পড়া। ব্যস আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীর দুয়ার আপনার সামনে মেলে যাবে। রোদ-ঝড়-বৃষ্টি সব সময়ই খোলা থাকে রাস্তা। কাজেই বুকে সাহস থাকলে অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়, অন্তত রোমাঞ্চপিয়াসী পর্যটকদের। 

নরওয়ের ন্যাশনাল রোড ৬৪-এর অংশ এই সড়কঅনেকেই বিবেচনা করেন একে পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা আনন্দদায়ক ও রোমাঞ্চকর সড়কযাত্রাগুলোর একটি হিসেবে। সাগরের কিনার ধরে এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া পথটি ধরে এক দ্বীপের সীমানা পেরিয়ে আরেক দ্বীপের সীমানায় পৌঁছে যাবেন আপনি। 

এখন আপনার মনে নিশ্চয় একটি প্রশ্ন খোঁচাচ্ছে—নামে আটলান্টিক ওশান রোড, কিন্তু চলে গেছে নরওয়েজিয়ান সাগরের পাশ দিয়ে। ঘটনাটা কী? আসলে নরওয়েজিয়ান সাগরকে বিবেচনা করা হয় উত্তর আটলান্টিক সাগরের একটি অংশ হিসেবে।

রাতে পাবেন আটলান্টিক ওশান রোডের অন্য সৌন্দর্যরাস্তাটি দিয়ে চলার আরও কিছু মজা আছে। নানা ধরনের পাখি চক্কর কাটবে আপনার মাথার ওপর, পাশে সাগরে দেখা মেলে সিল আর তিমিদের। এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখার মজারও কোনো তুলনা নেই। লেখার এই পর্যন্ত পড়ে যাঁরা ভাবছেন শুধু গাড়ি কিংবা বাইক নিয়েই এই পথে যাওয়া যায়, তবে ভুল করছেন। দুঃসাহসী সাইকেলচালকেরাও এই রাস্তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে নিজের দক্ষতার পরীক্ষা নেন। তেমনি অনেক পর্যটকের কাছে আবার হেঁটে পেরোনোতেই আনন্দ। মোটের ওপর আপনি যদি রোমাঞ্চপ্রেমী হন, আটলান্টিক সড়কে ভ্রমণ আপনার জন্য অবশ্যকর্তব্য।  

সূত্র: ডেনজারাস রোড.ওরগ, এমিউজিং প্লানেট, ফজরড নরওয়ে.কম, 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত