Ajker Patrika

যেখানে প্রবেশ নিষেধ

ফাতিমা জাহান
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১৩: ৪০
যেখানে প্রবেশ নিষেধ

মুক্তেশ্বর নামটা আমার কী যে ভালো লেগেছে! মনে হয় মুক্তাদের ঈশ্বর। সমুদ্রের সব মুক্তা জড়ো করে রাজ্যপাট বসিয়েছে এক রাজাধিরাজ। কোন মুক্তা কার কণ্ঠহার হবে বা কার কানে ঝুমকো হয়ে দুলবে তা এখনই ঠিক হয়ে যাবে। সাগরের গভীরে সাঁতরাতে সাঁতরাতে ভাবতে থাকে খোলসের বাইরেও এক জীবন আছে, চলে যাবে কারও সৌন্দর্যের মাঝে সাঁতরাতে তখন।

ক্র‍্যা ক্র‍্যা ক্র‍্যা শব্দে সংবিৎ ফিরে পেলাম। শব্দটা ছিল টিয়া পাখির ডাকের। আর আমি বসে আছি মুক্তেশ্বর মন্দিরের চাতালে। নামটা শুনে এতই মোহিত হয়ে গিয়েছি যে মন্দিরের সামনে বসে কল্পনার রাজ্যে চলে গিয়েছিলাম। মনে হলো, সাগরের দু-এক ফোঁটা জলও গায়ে ঝাপটা দিয়ে গেল। আসলে এখন টিপটিপ মুক্তার মতো বৃষ্টি পড়ছে ভারতের ভুবনেশ্বর শহরে। তাই সাগর, মুক্তা, মন্দির সব তালগোল পাকিয়ে এক করে ফেলেছি।

ভুবনেশ্বরকে বলা হয় মন্দিরের শহর। হাজার, বারো শ বছরের পুরোনো মন্দির এখানে বিরাজ করছে। মুক্তেশ্বর মূলত শিব ঠাকুরের মন্দির। এত সুন্দর যার নাম, সে দেখতে তবে কেমন? ধরণির বুকে যে এত সুন্দর কারুকার্যময় মন্দির থাকতে পারে তা ভুবনেশ্বরে না এলে অজানা থাকত ষোলো আনা।

মন্দিরের বহিরঙ্গের কোথাও কোনো জায়গা খালি নেই। কোথাও নাগ-নাগিণীর দেবতা; গঙ্গা, যমুনা, পার্বতীর রূপে দেবী দুর্গা, কোথাও দশভুজা দুর্গাপ্রতিমা। বাংলার মতো ওডিশারও প্রধান উৎসব দুর্গাপূজামূল মন্দির কেমন আমি এখনো দেখিনি। নাম শুনে আর বৃষ্টি পড়ছে দেখে প্রবেশপথেই বসে পড়েছি। প্রবেশদ্বার বলে কিছু নেই, আছে এক আশ্চর্য তোরণ, পুরোটা কারুকাজ করা। কোথাও ফুলের তোড়া, কোথাও মুক্তার মালা, ময়ূর, কোথাও বা আধশোয়া অবস্থায় অপ্সরীরা আভরণে, বিনা আবরণে নিজেদের আরও সুন্দর করে তুলছে। এত সুন্দর তোরণের কারুকাজ আগে দেখিনি। দূর থেকে দেখলে মনে হয় পোড়ামাটির শিল্পকর্ম, আসলে বেলেপাথরের ওপর খোদাই করা।

তোরণের পর মূল মন্দির। আনুমানিক দশম শতকের মধ্যভাগে নির্মিত এই মন্দিরটিকে কলিঙ্গ শিল্পকর্মের পথনির্দেশক হিসেবে ধরা হয়। মূল মন্দিরে প্রবেশের আগে একবার মন্দির প্রদক্ষিণ করার ইচ্ছে হলো। মন্দিরের অঙ্গে অঙ্গে মাধুরী। এত সালংকারা, এত রাজকীয়, এত ঐশ্বর্যে ভরপুর যে দেখলে সারাক্ষণ তাদের উপস্থিতিতে বিভোর হয়ে থাকতে হয়। যেমন ভিন্ন ভিন্ন ফুল, নকশা, তেমনি ভিন্ন ভিন্ন অবতারে দেবীরা কখনো নৃত্যগীতে ব্যস্ত। কোথাও স্বয়ং শিব ঠাকুর মন্দিরের বহিরঙ্গের ভূষণ, কোথাও মহাভারতের একটা ক্ষণ খোদাই করা দেয়ালে। এই খোদাই এতই সূক্ষ্ম যে খুব কাছে থেকে না দেখলে এর মোহনীয়তা, এর বিবৃতি বোঝা দায়। এই কারুকার্যের মাঝে কখনো ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে অসামান্য সুন্দরী নারী যোদ্ধা, কখনো সজ্জাকরণে ব্যস্ত দেবী, কখনো বা হাতির বহরের সারি সারি পথ চলা। এক ধাপ ফুল লতাপাতার নকশা, আরেক ধাপ মহাভারতের কাহিনি দেয়ালে খোদাই করা। এমন ছোট আকারের মন্দিরে যে এত মণিমুক্তা লুকিয়ে আছে, কে জানত!

ওডিশার প্রতিটি মন্দিরে আছে দৃষ্টিনন্দন টেরাকোটা

মুক্তেশ্বর শব্দের অর্থ স্বাধীনতার দেবতা। এমন স্বাধীন শিল্পকর্ম দুহাত ভরে আসলেই কোনো মন্দিরকে বোধ হয় দেওয়া হয়নি। মূল মন্দিরের আগে ছোট একটি মন্দির, আকারে আমাদের দেশের কুঁড়েঘরের মতো। এই মন্দিরকে বলা হয় জগমোহন। যেন জগৎকে মোহন রূপ দেওয়াই তার একমাত্র কাজ। বসনে, ভূষণে রাজকীয় ভাব, অঙ্গে তার নান্দনিক কারুকাজ, ভেতরে শিবলিঙ্গ। পরবর্তী মন্দিরটি মূল মন্দির, নাম ভিমানা বা বিমান। ভেতরে গর্ভগৃহ। মূল মন্দিরটি দেখতে আমাদের ঢাকেশ্বরী মন্দির বা কলকাতার দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের মতো—পুরো শরীরে তার অনবদ্য কারুকাজ। ভেতরের ছাদের মাঝখানে চাঁদ হয়ে আছে ফুলেল নকশা, চারপাশে তার আরও ফুল, এদের ঘিরে রয়েছে নৃত্যরত অপ্সরী। এখানে বিভোর থাকতে হয়।

পূজারি ধুতি পরে গামছা গায়ে পূজার আয়োজন করছেন। দেখে মনে হচ্ছে আমাদের বাংলার কোনো এক মন্দিরে পূজা আড়ম্বরে চারদিকে ভেসে বেড়াচ্ছে। এসব অজানা রাজ্যে ঘুরে বাইরে এসে দেখি রোদেরা মন্দিরের গায়ে খেলা করছে, জৌলুশ বাড়াচ্ছে। মুক্তেশ্বরের পাশে এক টুকরো পুকুর। ঠিকঠাক মানিয়ে গেছে মন্দিরের পাশে। যেন মন চাইলেই মুক্তোরা পুকুরের জল থেকে বেরিয়ে মন্দিরের অঙ্গে জুড়ে যেতে পারে।

মুক্তেশ্বর থেকে বের হয়ে আমি ট্যাক্সি নিয়ে চললাম ভুবনেশ্বরের সবচেয়ে পুরোনো পরশুরামেশ্বর মন্দিরের দিকে। এই মন্দিরের নির্মাণকাল অষ্টম শতকের দিকে। দূর থেকে দেখে মুক্তেশ্বর মন্দিরের আদলেই গড়া বলে মনে হলো। আসলে ভুবনেশ্বরের সব মন্দিরেই কলিঙ্গ স্থাপত্যশিল্প অনুসরণ করা হয়েছে। বেলেপাথরে তৈরি ক্ষুদ্রাকৃতির ভগবান বিষ্ণুর এ মন্দিরটি বাইরে থেকে খুবই সাধারণ বলে মনে হলো। চারচালা কুঁড়েঘর আকারের জগমোহনের কাছে গিয়ে বিস্ময় আমার কাটে না! মন্দিরের অঙ্গে অঙ্গে তরঙ্গের মতো সূক্ষ্ম খোদাইয়ের কাজ। মুক্তেশ্বর মন্দিরের চেয়েও সূক্ষ্ম সেই অলংকরণ! জগমোহনের ওপরের দিকের কারুকাজ এতই নিখুঁত, ভরাট আর সূক্ষ্ম যে নিচ থেকে খালি চোখে এর মাধুর্য দেখে বোঝা যায় না। বহিরঙ্গের কোথাও কোনো জায়গা খালি নেই। কোথাও হাতি-ঘোড়া নিয়ে রাজ্যজয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা, কোথাও ফুল-লতাপাতার মাঝে শৃঙ্গারে ব্যস্ত দেবী, কোথাও নাগ-নাগিণীর দেবতা; গঙ্গা, যমুনা, পার্বতীর রূপে দেবী দুর্গা, কোথাও দশভুজা দুর্গাপ্রতিমা যেন এই উৎসবের মৌসুমে নেমে আসছেন ধরণিতে। বাংলার মতো ওডিশারও প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা।

মুক্তেশ্বর মন্দিরদেয়ালের কোথাও ভগবান বিষ্ণুর অবতারে স্বয়ং শিব ঠাকুর। এত রূপ, এত সাধারণ মন্দিরের মাঝে লুকিয়ে থাকা রত্নভান্ডার এই মন্দিরকে অনন্যসাধারণ করেছে। মন্দিরের অন্দরমহল খুব সাধারণ, ওডিশার মানুষের মন-মানসিকতার মতো। দেয়াল ও ছাদ সাধারণ। শিবলিঙ্গের পুজো হয় সকাল-বিকেল। মন্দিরের ভেতরে খালি গায়ে ধুতি পরে নবীন পূজারি ফুলের সাজি থেকে ফুল নিয়ে মালা গাঁথছেন। চারদিক শান্ত, নির্জন। কোনো ভক্ত বা দর্শনার্থী আপাতত নেই।

ভিমানা বা বিমান স্থাপনাটির অঙ্গেও নানান কারুকাজ। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলে দিন পার হয়ে যাবে। এমন আভরণের মাঝে বসে একটা জীবন পার করে দেওয়া যায়। দূর থেকে দেখে সাধারণ মন্দির বলে ভ্রম হলেও এ রকম ঐশ্বর্য ও মাধুর্যমণ্ডিত মন্দির আমি ভারতের অন্য শহরে আর দেখিনি। সাধারণ এবং অসাধারণের মিশেলে এই মন্দির হয়ে উঠেছে এক দেব-দেবী নগর।

স্বর্গ দেখার আনন্দ নিয়ে মন্দির থেকে বের হয়ে আমার ভেতরকার মনুষ্য ঈপ্সা মাথাচাড়া দিয়ে জেগে উঠল—ক্ষুধা পেয়েছে। ওডিশায় আছি আর এখানকার বিখ্যাত পোখলা খাব না, তা কী করে হয়। ট্যাক্সি ভাড়া করেছি সারা দিনের জন্য। ট্যাক্সি ছুটল রেস্তোরাঁয়।

ভুবনেশ্বরের একটি মন্দিরের সামনে লেখকপোখলা বা পখলা পরিবেশন করা হয় সাধারণত কাঁসার বড় বাটিতে। ভাতের সঙ্গে সামান্য জল আর অনেকটা টক দই মিশিয়ে তৈরি হয় পখলা। আমি এই দই-ভাত খুব আনন্দ নিয়ে খাই। দক্ষিণ ভারতে বসবাস করি, টক দই সেখানকার খাবারের প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য উপকরণ। টক দই দিয়ে ঠান্ডা ভাত গরমকালে শরীরের জন্য উপকারী। পখলার সঙ্গে পরিবেশন করা হয় আলুভাজা, বেগুনভাজা, টমেটোর চাটনি, শাক, পাঁপড় ও সালাদ। ওডিশার আবহাওয়া আমাদের দেশের মতোই। তাই এই শরৎকালের গরমে পখলার চেয়ে উপাদেয় খাবার আর নেই। শেষ পাতে পায়েস। একটি পরিপূর্ণ তৃপ্তিদায়ক মধ্যাহ্নভোজ। ওডিশার অন্যান্য খাবার বা তরকারির স্বাদ আমাদের মতোই। তবে তরকারিতে ঝাল কম দেওয়া হয়। পিঠা, পায়েস বা অন্যান্য মিষ্টান্নের স্বাদ একই। পেটপূজা শেষ করে আমি এগোলাম পরবর্তী মন্দিরে পূজা দেখার জন্য। তার নাম লিঙ্গরাজ মন্দির। ভুবনেশ্বরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্দির এটি।

মন্দিরের প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মন্দিরে প্রবেশের শর্তাবলি পড়ছিলাম। প্রথমত, ছবি তোলা যাবে না ভেতরে। যাহ, এত শখ করে এত দূর থেকে এলাম আর ছবিই তোলা যাবে না! দ্বিতীয় ও তৃতীয় শর্ত পড়ার আগেই পূজারিগোছের একজন আমায় টেনে ভেতরে নিয়ে গেল। স্কুল কামাই করা শিশুকে যেমন মাস্টারমশাই কান ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে যান, তেমন আরকি। ভেতরের মন্দিরগুলো বিশাল আকারের এবং অসংখ্য। মন্দির প্রাঙ্গণটিও বেশ বড় কিন্তু এসব আমাকে সেই পূজারি দেখার সময় দিল না। টেনে টেনে এক মন্দির থেকে অন্য মন্দিরে নিয়ে গেল দর্শন করাতে। পথিমধ্যে অবশ্য পড়া ফাঁকি দেওয়া দুষ্টু ছাত্রের মতো আঙিনায় দাঁড়িয়ে থাকা মন্দিরগুলো দেখে নিচ্ছিলাম। এত পূজনীয়, এত উল্লেখযোগ্য মন্দিরের বহিরঙ্গের দেয়াল থেকে অনেকখানি কারুকাজের খোদাই খসে পড়েছে। সংস্কারের অভাবে মন্দিরের গায়ে জমেছে শেওলা। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের পর লিঙ্গরাজ মন্দির ওডিশায় প্রভাবশালী। এগারো শতকে নির্মিত এ মন্দির প্রাঙ্গণে মোট মন্দিরের সংখ্যা ১০৮টি। জগমোহন এবং বিমান ভবন দেখে চিনতে পারলাম, আগের মন্দিরগুলোতে দেখেছি। বাকি উল্লেখযোগ্য ভবন হলো নাটমন্দির ও ভোগমণ্ডপ। বিমান হলো মূল মন্দির, যা এই মন্দির প্রাঙ্গণের সবচেয়ে উঁচু। দেখতে আমাদের ঢাকেশ্বরী মন্দিরের আকারের। বাকি ছোট ছোট মন্দিরও বিমান মন্দির আকারের।

মুক্তেশ্বর মন্দিরের টেরাকোটাভোগমণ্ডপ হলো উৎসর্গ মিলনায়তন, যেখানে বিভিন্ন নৈবেদ্য নিয়ে ভক্তরা পূজা দেন। একসময় লিঙ্গরাজ মন্দিরে দেবদাসীরা সেবা দিত। নেচে-গেয়ে দেবতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল নাটমন্দির। জগমোহন হলো সাধারণ মিলনায়তন এবং বিমান মূল মন্দির। এই ভবনগুলো ক্রমান্বয়ে নিচু থেকে উঁচু এবং পর পর অবস্থিত। আবারও পূজারি আমাকে একটি ভবনও ঠিকমতো দেখতে না দিয়ে টেনে নিয়ে গেল সোজা ভোগমন্দিরে। যেন বিশাল অপরাধ করেছি এবং এক্ষুনি আমাকে সাজা দেওয়া হবে।

আমাকে একদল পূজারির সামনে দাঁড় করিয়ে নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম বলতে বলা হলো। আমি একে একে বললাম। পূজারিরা পূজার জন্য রাখা জ্বলন্ত আগুনে কাঠের গুঁড়া, ধূপের গুঁড়া ছুড়ে ফেলতে ফেলতে মন্ত্র পড়তে লাগল, সঙ্গে আমাকেও মন্ত্র পড়তে বলল। চারদিকে আগুন আর ধূপ-ধুনোর ধোঁয়ায় মন্দিরের ভেতরের কিছুই দেখা যাচ্ছে না পূজারিদের সাদা চকচকে ধুতি ছাড়া। আমি ভাবছি, মন্দিরের দুয়ার থেকে এখান পর্যন্ত যাত্রা ঠিক ছিল। এ কোন ধরনের শাস্তি রে বাবা! আমি তো জানিও না কী অপরাধ করলাম। ধর্মকর্মে আমার কোনোকালেই মন ছিল না। সৈয়দ মুজতবা আলীকে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে তিনি টিকি, খড়ম, ধুতি পরে ঢুকেছিলেন। আমি তো এখানে ঢুকে এখন দেখছি এরা খড়ম, ধুতি পরিয়ে পূজারি বানিয়ে বসিয়ে দেবে।

পরশুরামেশ্বর মন্দিরের টেরাকোটাকিছুক্ষণ পর পুজো শেষ হলো। ততক্ষণে আমার কপাল পূজারি দ্বারা ক্রমাগত আবিরের ফোঁটায় লাল হয়ে গেছে। কপাল কি এভাবে খোলে নাকি! পূজা তো আমিও বন্ধুদের সঙ্গে তাদের বাড়িতে বা মন্দিরে বহু বার দিয়েছি। একবারও কপাল নামক বস্তুটি খোলেনি। সেই পান্ডা বা পূজারি এখন আমায় বলল, পূজা শেষ, পয়সা বের কর। আমার তো আক্কেল গুড়ুম। কোথায় আমি নিশ্চিন্তে স্থাপত্যকলা দেখে আনন্দে বাড়ি ফিরব বা ফ্রিতে পূজা দিয়ে কপাল ফেরাব, তা না, আমাকে জোর করে ধরে ধরে মন্দিরে মন্দিরে গরুর মতো চড়িয়েছে। আমিও দমবার পাত্র নই। আরও চড়া গলায় বললাম, ‘আমি তো বলিনি যে পুজো দেব, তুমি আমাকে জোর করে কিছু বুঝবার আগেই ধরেবেঁধে পূজা করতে বসিয়েছ। আর ইনস্ট্যান্ট তো ভাগ্যও খুলল না। তুমি মামদোবাজি পেয়েছ! পয়সা তুমি দেবে।’ বলে আমি হনহন করে বেরিয়ে গেলাম পেছনে না ফিরে। পেছন থেকে পূজারিরা আমায় শাপশাপান্ত করছে নিশ্চয়ই।

বাইরে আমার সামনে এখন বিমান দাঁড়িয়ে, প্রবেশদ্বারের ওপর সিংহের মূর্তি। মন্দিরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে পাথর দিয়ে, বেশির ভাগই এক প্রস্তর, গায়ে সিঁড়ির মতো ধাপ কাটা। বহিরঙ্গে শিব ঠাকুর আর পার্বতীর বিভিন্ন অবতার খোদাই করা। কিছু অবিকৃত আছে, কিছু ক্ষয় হয়ে গেছে। তবে আগে দেখা দুই মন্দিরের মতো এত ঘন শিল্পকর্ম খোদাই করা নেই, মন্দিরের খাঁজের ফাঁকে ফাঁকে অল্প অল্প খোদাই চোখে পড়ে। অন্যান্য মন্দিরও একইভাবে অলংকৃত। ভুবনেশ্বরের অন্য মন্দিরগুলোতে যেমন কোনো ভক্ত বা দর্শনার্থী দেখিনি, এখানে এই শিব ঠাকুরের মন্দিরে বেশ কিছু ভক্তের দেখা মিলল। এই প্রাঙ্গণের বেশির ভাগ মন্দিরে শিব ঠাকুরের পূজা হয়, অল্প কয়েকটায় দেবী দুর্গা বা পার্বতীর পূজা হয়।

আমি আরও কিছুক্ষণ আঙিনায় ঘুরে বেরিয়ে পড়লাম। বেরোতে বেরোতে সেই পান্ডাকে আবার দেখলাম। বলতে চাচ্ছিলাম, ধরেবেঁধে কখনো ভক্তি আনয়ন করা যায় না হে বৎস। থাক, নাই-বা বলি।  নিশ্চয়ই নতুন খদ্দের ধরার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি উদাস চোখে তাকিয়ে বেরিয়ে গেলাম।

মূলদ্বার দিয়ে বেরিয়ে মনে হলো, মন্দিরে প্রবেশের শর্তাবলি তো পড়া হয়নি। সেসব পড়ার আগে দেখি দ্বারের ডানপাশে বড় বড় করে লেখা আছে, ‘এই মন্দিরে যারা হিন্দু নয়, তাদের প্রবেশ নিষেধ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওষুধ ছাড়াই উচ্চ রক্তচাপ রাখুন নিয়ন্ত্রণে

ফিচার ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন এনে ওষুধ ছাড়াই এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। মায়ো ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, জীবনযাত্রার এই পরিবর্তনগুলো আপনার রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম মূসা বলেন, সময়মতো উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয় ও চিকিৎসা না হলে হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এতে ভুগলেও তা জানেন না। বিশ্বব্যাপী প্রতি তিনজনে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। কিন্তু কোনো লক্ষণ থাকে না বলে তাঁরা তা জানেন না।

ওজন নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত ব্যায়াম

ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপ বাড়ে। প্রতি ১ কিলোগ্রাম বা প্রায় ২ দশমিক ২ পাউন্ড ওজন কমালে রক্তচাপ প্রায় ১ মিলিমিটার পারদ চাপ কমতে পারে। কোমরের মাপও গুরুত্বপূর্ণ: পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪০ ইঞ্চি (১০২ সেমি) এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৩৫ ইঞ্চির (৮৯ সেমি) বেশি হলে ঝুঁকি বাড়ে। তবে মনে রাখবেন, এই মাপ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। নিয়মিত অ্যারোবিক ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাঁতার ও সাইক্লিং রক্তচাপকে ৫ থেকে ৮ মিলিমিটার পারদ চাপ কমাতে পারে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট মাঝারি ধরনের শারীরিক কার্যকলাপের লক্ষ্য রাখুন। সপ্তাহে অন্তত দুদিন শক্তি প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করুন। এ বিষয়ে এ কে এম মূসা জানান, চিকিৎসকের পরামর্শে প্রতিদিন কিছু ব্যায়াম করতে হবে। যেমন ৩০ মিনিট জোরে হাঁটা, সাঁতার কাটা ইত্যাদি।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

ফল, সবজি, শস্যদানা ও কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্যে সমৃদ্ধ একটি খাদ্যাভ্যাস রক্তচাপ ১১ মিলিমিটার পারদ চাপ পর্যন্ত কমাতে পারে। খাদ্যে পটাশিয়াম অন্তর্ভুক্ত করা লবণের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। দিনে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার মিলিগ্রাম পটাশিয়াম গ্রহণের লক্ষ্য রাখুন; যা রক্তচাপ ৪ থেকে ৫ মিলিমিটার পারদ চাপ কমাতে পারে। এ বিষয়ে এ কে এম মূসা লাল মাংস ও চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন করার পরামর্শ দেন।

লবণ বা সোডিয়াম কমানো

খাদ্যে সামান্য সোডিয়াম কমালে হৃদ্‌যন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। বেশির ভাগ প্রাপ্তবয়স্কের জন্য দিনে ১ হাজার ৫০০ মিলিমিটারের কম সোডিয়াম গ্রহণ করা আদর্শ, যা রক্তচাপ ৫ থেকে ৬ মিলিমিটার পারদ চাপ কমাতে পারে। প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন এবং রান্নায় লবণের বদলে মসলা ব্যবহার করুন। খাদ্যে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দিন এবং অত্যধিক লবণাক্ত খাবার বাদ দিন।

ধূমপান ত্যাগ করা

ধূমপান রক্তচাপ বাড়ায়। এটি ত্যাগ করলে রক্তচাপ কমে আসে এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি ও সার্বিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়।

পর্যাপ্ত ঘুম ও চাপ কম নিন

প্রতি রাতে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। ঘুমের অভাব, যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া বা অনিদ্রা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। ঘুমের একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি তৈরি করুন এবং শোওয়ার ঘর শান্ত, অন্ধকার ও শীতল রাখুন। এ কে এম মূসা পরামর্শ দেন, প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস করুন। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ উচ্চ রক্তচাপের একটি কারণ হতে পারে। নিজের চাপের উৎসগুলো চিহ্নিত করুন এবং সেগুলোর মোকাবিলা করার উপায় খুঁজুন। প্রতিদিন শান্তভাবে বসে গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া বা পছন্দের কাজ করার জন্য সময় বের করুন।

কোলেস্টেরল ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ

উচ্চ কোলেস্টেরল ও রক্তে উচ্চ শর্করা হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো, যেমন স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়াম, ওজন কমানো এবং ধূমপান ত্যাগ অনুসরণ করছেন, সেগুলোই কোলেস্টেরল ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। এ পরিবর্তনগুলো দীর্ঘমেয়াদি, তাই প্রয়োজন হলে পরিবার বা বন্ধুদের সহযোগিতা নিতে দ্বিধা করবেন না।

চিকিৎসকের পরামর্শে করণীয়

অধ্যাপক এ কে এম মূসা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার বিষয়ে কিছু পরামর্শ দেন।

চিকিৎসকের চেম্বার ও বাসায় পরপর কয়েক দিন রক্তচাপ মেপে যদি ১৪০/৯০-এর বেশি পাওয়া যায়, তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

ইউরিন আর/ই, সেরাম ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন ও সুগার প্রোফাইল টেস্ট করতে হবে।

চিকিৎসক নির্দেশিত ওষুধ নিয়মিত সেবন করুন।

কমপক্ষে সপ্তাহে এক দিন রক্তচাপ মেপে লিখে রাখুন। মানসিক চাপ কমিয়ে ফেলুন এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিন।

হাই কোলেস্টেরল থাকলে খাবার নিয়ন্ত্রণ করুন এবং ওষুধ সেবন করুন।

ডায়াবেটিস থাকলে খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও ওষুধের মাধ্যমে কন্ট্রোল রাখুন।

সূত্র: মায়ো ক্লিনিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: সহকর্মীকে জ্ঞান দিতে যাবেন না, প্রাপ্তিযোগে বাল্যকালের প্রেমপত্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৪
আজকের রাশিফল: সহকর্মীকে জ্ঞান দিতে যাবেন না, প্রাপ্তিযোগে বাল্যকালের প্রেমপত্র

মেষ

আজ আপনার এনার্জি লেভেল দেখলে মনে হবে ভুল করে চায়ের বদলে ডাবল এসপ্রেসো খেয়ে ফেলেছেন। দিনের শুরুটা দুর্দান্ত! কিন্তু উত্তেজনা এত বেশি থাকবে যে অফিসে যাওয়ার পথে চারবার হোঁচট খাবেন। আপনার স্বাস্থ্য বলছে: ‘শান্ত হও, ওহে মেষ!’ অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাউকে জ্ঞান দিতে যাবেন না। কারণ, তিনি পাল্টা এমন তথ্য দেবেন, যা গুগলেও পাবেন না। সন্ধ্যায় প্রিয়জনের কাছ থেকে একটি অপ্রত্যাশিত চমক পাবেন। যদিও সেটা হয়তো হবে গত জন্মদিনের উপহারের র‍্যাপার।

বৃষ

বৃষ রাশি, গ্রহ-নক্ষত্র আজ আপনাকে বলছে—বিতর্ক এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে সেই আড্ডার জায়গাগুলো, যেখানে কেউ একজন ‘আপনার সম্মান নিয়ে’ প্রশ্ন তুলতে পারে। অর্থাৎ আজ আপনি অফিসের ক্যানটিন, বন্ধুর বাড়ি এবং শ্বশুরবাড়ি—সব জায়গায় ‘সিক্রেট এজেন্ট অব অকোয়ার্ডনেস’-এর ভূমিকা পালন করবেন। আর্থিক দিক থেকে আজ স্থিতিশীল। তবে অনলাইনে কিছু কেনার আগে দুবার ভাবুন। দরকার নেই, শুধু ‘অন্য লোকেরা কী কিনছে’ দেখতে গিয়ে আপনি হয়তো একটা স্পেচুলা কিনতে গিয়ে ফ্রিজ কিনে ফেলতে পারেন।

মিথুন

আপনার বুদ্ধিমত্তা আজ দারুণ কাজ করবে, তবে মন এত দ্রুত চলবে যে মুখটা মাঝেমধ্যে পিছিয়ে পড়বে। ফলস্বরূপ আপনি এক কথা বলতে গিয়ে অন্য কথা বলে ফেলবেন, আর লোকে ভাববে—আপনি বোধ হয় কবিতা বলছেন! কর্মস্থলে পদোন্নতির ইঙ্গিত আছে, যদি না সহকর্মীর কফির মগে ভুল করে লবণ দিয়ে দেন। বিকেলের দিকে প্রাপ্তিযোগের সম্ভাবনা, যা হয়তো একটা পুরোনো লটারির টিকিট বা ছোটবেলার একটি বাতিল হওয়া প্রেমপত্র। নিষ্ঠা ও ভদ্রতা বজায় রাখুন, বিশেষ করে চিপস খাওয়ার সময়।

কর্কট

আজকের দিনটি আপনার জন্য ঠিক মাঝামাঝি—না ভালো, না খারাপ। গ্রহরা আপনাকে এক অদ্ভুত মিশ্র ফল দিয়েছে। মনে হবে আপনি যেন একটি পুরোনো সাদাকালো সিনেমার শেষ ১০ মিনিট দেখছেন—কী হবে, তা জানা আছে, তবু মন অস্থির। দিনের বেলা সামান্য বিষয়ে গভীর চিন্তা করার প্রবণতা বাড়বে; যেমন ‘পাউরুটি কেন স্লাইস করা হয়?’ এই ধরনের প্রশ্ন নিয়ে সারা দিন মাথা ঘামাবেন। রাতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। এতে চিন্তাগুলো হয়তো পাউরুটি থেকে সরে এসে অন্তত ডিম-পরোটার দিকে যাবে।

সিংহ

সিংহ মশাই, আজ আপনি রাজকীয় মেজাজে থাকবেন। নিজেকে জাহির করার একটা প্রবল ইচ্ছা জাগতে পারে। পারিবারিক চাপ থাকবে, তবে সেটা এমন ছোটখাটো হবে যেন একটা মশার কামড়। সেটাকে গর্জন দিয়ে উড়িয়ে দিতে সক্ষম হবেন। পরিবারের সদস্যদের প্রতি যত্ন নিন—আর যত্ন নেওয়ার মানে এই নয় যে জোর করে তাদের ডায়েট চার্ট বানিয়ে দেবেন। কাজের ক্ষেত্রে আপনার নেতৃত্ব প্রশংসিত হবে। তবে মনে রাখবেন, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস আপনাকে কোনো গর্তে ফেলে দিতে পারে। তাই ‘আমি সব জানি’ বলার আগে একবার উইকিপিডিয়া চেক করে নেবেন।

কন্যা

আজ কাঁধে নতুন কাজের দায়িত্ব আসতে পারে। সেই দায়িত্ব হয়তো হবে অফিসে ফালতু ফাইলগুলো গুছিয়ে রাখার। কিন্তু তাতেও নিখুঁতভাবে বিশ্বের সেরা ‘ফাইল অর্গানাইজার’ হওয়ার চেষ্টা করবেন। পরিবারে আজ সংযত থাকুন। বিশেষ করে যদি পার্টনারের আলমারি বা ঘর গোছানোর ইচ্ছা আপনার মনে জাগে। নিয়ন্ত্রণ করার স্বভাবটি আজ মধুর সম্পর্ককে তিক্ত করে দিতে পারে। দিনের শেষে সবকিছু পারফেক্ট না হলেও চলবে—এ সত্যটি মেনে নেওয়াই আজকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মোবাইল স্ক্রিন পরিষ্কার রাখুন।

তুলা

আপনার ভাগ্যে আজ আনন্দের জোয়ার। বস আপনার ওপর এতটা খুশি হবেন যে পদোন্নতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। চার্ম আজ তুঙ্গে থাকবে। কিন্তু গ্রহরা একটি অদ্ভুত সতর্কবার্তা দিয়েছে: ‘নারী বন্ধুদের থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখুন।’ কেন? কেউ জানে না! সম্ভবত তারা আপনাকে এত পার্টি দিতে বলবে যে ব্যাংক ব্যালেন্সের বারোটা বাজবে। বকেয়া টাকা হাতে আসতে পারে, যা দেখে আনন্দে লাফালাফি করতে পারেন। কিন্তু সাবধান, লাফানোর সময় যেন পুরোনো কোনো আসবাবে ধাক্কা না লাগে। স্ত্রীর কাছ থেকে সারপ্রাইজ পাবেন।

বৃশ্চিক

বৃশ্চিক, আজ আপনার হৃদয়ে গভীর চিন্তাভাবনার খেলা চলবে। সামান্য কারণে আজ একটু বেশিই ইন্টেন্স হয়ে উঠবেন। কেউ হয়তো বলবে, ‘আরে, চা-টা ঠান্ডা হয়ে গেল!’ আর আপনি ভাববেন, ‘এর পেছনে কি কোনো গভীর ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে?’ আত্মবিশ্বাস আজ আপনার শক্তি। তবে এটা যেন অহংকারে পরিণত না হয়। মনে রাখবেন, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আজ আপনাকে অনেক বড় সমস্যা থেকে বাঁচাবে। কিন্তু যদি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তবে অন্তত একটি মজার অজুহাত তৈরি রাখুন।

ধনু

ধনু রাশি, আজ আর্থিক সাফল্য আপনার কদম চুম্বন করবে। টাকা আসবে, তবে তার মানে এই নয় যে আপনি আজই একটি রকেট কিনে চাঁদে চলে যাবেন। পেশা সম্পর্কিত ভ্রমণের ইঙ্গিত আছে। কিন্তু এটি সম্ভবত কোনো দূরবর্তী, অপরিচিত ব্রাঞ্চে হবে, যেখানে আপনাকে ‘অসহযোগিতার প্রতীক’ পুরস্কার দেওয়া হতে পারে। আপনার উৎসাহ আজ অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে। তবে কথা বলার সময় একটু সংযত থাকুন, নইলে আপনার অতি উৎসাহ অন্যদের কাছে ‘বকবক’ বলে মনে হতে পারে। সন্ধ্যায় সেই টাকা দিয়ে কিছু একটা করুন, যা মনকে শান্তি দেবে; যেমন কাউকে পেট ভরে ফুচকা খাইয়ে দিন।

মকর

গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আজ। মন আর মস্তিষ্ক, দুটোকেই কাজে লাগান। কিন্তু মনে রাখবেন, হয়তো ভাবছেন জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, কিন্তু আদতে আপনি শুধু ঠিক করছেন কোন রঙের জামা পরে অফিস যাবেন। অর্থের ক্ষেত্রে আজ কিছুটা স্বস্তি পাবেন। মানসিক ক্লান্তি দূর করতে ধ্যান করুন বা শান্ত সংগীত শুনুন। অথবা সবচেয়ে ভালো হয়, যদি সব কাজ অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারেন এবং নিজে চুপচাপ ঘুমাতে পারেন! মনে রাখবেন, শৃঙ্খলা বজায় রাখা ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত শৃঙ্খলা মানুষকে বিরক্ত করে। আজ অন্তত কাজের বাইরে একবার হাসুন।

কুম্ভ

কুম্ভ, আজ আপনার আর্থিক বিষয়গুলো ধীরে ধীরে ভালো হবে। পুরোনো জিনসের পকেটে কিছু টাকা খুঁজে পেলে সেটাকেই আজকের ‘আর্থিক সাফল্য’ বলে ধরে নিতে হবে। দ্রুত ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করুন, তবে সেই পরিবর্তনটা হয়তো হবে ফ্রিজের আলো ঠিক হয়ে যাওয়া। প্রিয়জনের সঙ্গে আজ স্মরণীয় মুহূর্ত কাটাবেন। আর সেই স্মরণীয় মুহূর্তটি হতে পারে দুজনের মধ্যে হওয়া একটি নীরব প্রতিযোগিতা—কে কার আগে ঘুমিয়ে পড়তে পারে। সহকর্মীদের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রাখুন। কারণ, তারা না থাকলে আপনার কাজের চাপ বেড়ে যাবে। সব কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরুন।

মীন

মীন রাশি, আজ আপনার মন ও মস্তিষ্ক দুটিই একে অপরের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করবে। আপনার ভেতরের জগতে চলছে চরম মারামারি, আর বাইরের জগতে হাসিমুখে সবার সঙ্গে কথা বলছেন—আপনার মতো ভালো অভিনেতা আর কেউ নেই! কিছু পুরোনো জিনিস মনকে বিরক্ত করতে পারে; যেমন ১০ বছর আগে কেন ওই লাল শার্টটা কিনেছিলেন? সন্ধ্যার মধ্যে অবশ্য সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কারণ, ক্ষুধা পেলে মানুষ সব ঝগড়া ভুলে যায়। পরীক্ষায় শুভ ফলের আশা করতে পারেন, যদি না আপনি উত্তর লেখার বদলে পরীক্ষার খাতায় কবিতা লিখে আসেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লিভার ভালো রাখার ১০ উপায়

ফিচার ডেস্ক
ছবি: ফ্রিপিক
ছবি: ফ্রিপিক

লিভার আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি দেহের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় সাহায্য করে। খাবার হজম, ভিটামিন ও মিনারেল শোষণ, বিপাক প্রক্রিয়া এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করতেও লিভার সাহায্য করে। সে জন্য লিভারের সমস্যা হলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও প্রভাব পড়ে। এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানতে পারলে সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা যায়। তাতে বড় ধরনের সমস্যা এড়ানো সহজ হয়।

ছুটির সময় অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়ার পর লিভারকে একটু বিশ্রাম ও যত্ন দেওয়া জরুরি। চিকিৎসকদের মতে, প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের একজনের ফ্যাটি লিভার সমস্যা আছে, যা অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও বসে থাকার জীবনধারার কারণে বাড়ছে। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে এটি লিভার ক্যানসার বা লিভার ফেইলিওরে রূপ নিতে পারে।

বিএসএমএমইউর রেসিডেন্ট চিকিৎসক বলেন, ‘লিভারের সমস্যা শুরু হলে শরীরে বেশ কিছু প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন—খাবার খাওয়ার পর বমি বা বমির ভাব হওয়া, অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা অবসন্নতা অনুভব করা, পেটের ডান দিকে হালকা বা তীব্র ব্যথা থাকা ইত্যাদি। অনেক সময় ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়, যা জন্ডিসের লক্ষণ। এ ছাড়া খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া বা ক্ষুধামান্দ্য দেখা দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে শরীরে পানি জমে পেট ফুলে ওঠে বা হাত-পায়ের নখে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায়—এসবই লিভারের সমস্যার আগাম সংকেত হতে পারে।’

লিভার ভালো রাখতে নিচের উপায়গুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেন—

কফি পান করুন

গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে তিন-চার কাপ কফি লিভারে দাগ বা ফাইব্রোসিসের ঝুঁকি কমায়। কফি লিভারের জন্য চায়ের চেয়ে বেশি উপকারী।

ব্রোকলি ও বাঁধাকপি খান

এই সবজি লিভারকে ফ্রি র‍েডিক্যাল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমায়। এগুলোতে ভিটামিন ‘সি’, ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে। সেদ্ধ করা খাবার লিভারের জন্য ভালো, ভাজাপোড়া নয়।

সাদা ভাত কম খান

অতিরিক্ত পরিশোধিত ভাত, চিনি, লাল মাংস ও ভাজা খাবার ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়। তার পরিবর্তে লাল চাল, ডাল ও মসলা, যেমন—রসুন, মরিচ, ধনিয়া ও কারিপাতা ব্যবহার করুন।

পর্যাপ্ত প্রোটিন নিন

লিভার দুর্বল হলে শরীরের পেশি ক্ষয় হতে পারে। তাই প্রতিদিন ডিম, মাছ, মুরগি, ডাল বা টোফু খান। যারা নিরামিষভোজী, তারা মসুর ডাল দিয়ে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে পারেন।

অযথা বারবার খাওয়া বন্ধ করুন

সারা দিন অল্প অল্প নাশতা খাওয়ার বদলে রাতে অন্তত ১৪ ঘণ্টা না খেয়ে থাকুন। এতে লিভার নিজেকে পরিষ্কার ও ঠিক করতে সময় পায়, যাকে বলে অটোফ্যাজি।

ভিটামিন ‘সি’ খাওয়া বাড়ান

লিভার তার কাজে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ ব্যবহার করে। তাই কমলা, লেবু ইত্যাদি নিয়মিত খান। ফলের রস না করে পুরো ফল খেলে ফাইবারও পাওয়া যায়, যা বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে বের করতে সাহায্য করে।

খাবারের পরিমাণ ১০ শতাংশ কমান

অতিরিক্ত ক্যালরি ওজন বাড়ায়, অতিরিক্ত ওজন ফ্যাটি লিভারের মূল কারণ। দিনে দুই হাজার ক্যালরির বেশি না খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।

অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়ান

লিভারের সঙ্গে অন্ত্রের গভীর সম্পর্ক আছে। রসুন, পেঁয়াজ, পুরো শস্য ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে লিভারকে সুস্থ রাখে।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, সাইক্লিং বা সাঁতার কাটুন। এতে শরীরের চর্বি কমে, রক্ত চলাচল বাড়ে এবং লিভার আরও কার্যকরভাবে কাজ করে।

অ্যালকোহল কমান

বিয়ার বা ওয়াইন যেকোনো পানীয়তেই ক্ষতিকর উপাদান হলো অ্যালকোহল। তাই অল্প পান করুন এবং পরিমাণ জেনে নিন।

লিভার আমাদের শরীরকে প্রতিদিন বিষাক্ত পদার্থ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু একে সুস্থ রাখতে সঠিক খাবার, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, নিয়মিত ব্যায়াম এবং অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। এখনই যত্ন নিন, যাতে লিভারও আপনাকে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখে।

সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্রেকআপের পর ছুটি চাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে জেন-জিদের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

‘সম্প্রতি আমার ব্রেকআপ হয়েছে। কাজে মনোযোগ দিতে পারছি না। সামান্য বিরতি দরকার। আজ বাসা থেকে কাজ করব।’

গুরগাঁওভিত্তিক জীবনসঙ্গী খোঁজার অ্যাপ ‘নট ডেটিং’-এর এক কর্মীর পাঠানো এই ছোট ই-মেইল এখন ভারতজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। করপোরেট ভাষার আড়ালে ঢাকা নয়, ই-মেইলটি ছিল খুবই সরল ও অকপট। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো—প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মুহূর্তের মধ্যেই তাঁর ওই কর্মীর ছুটি মঞ্জুর করেন এবং সেই ই-মেইল অনলাইনে শেয়ার করেন। তিনি লেখেন, ‘এটাই আমার দেখা সবচেয়ে সৎ ছুটির আবেদন।’

এরপরই বিষয়টি ভাইরাল হয় লিংকডইন, এক্স ও ইনস্টাগ্রামে। এক কর্মীর ‘সততা’ ঘিরে শুরু হয় জাতীয় পর্যায়ের বিতর্ক—অফিস কি এখন এমন এক জায়গা, যেখানে ব্রেকআপ বা সম্পর্ক ভাঙার পর ছুটি চাওয়ার মতো আবেগঘন বিষয়ও প্রাপ্য হতে পারে?

এ ভাইরাল ঘটনার প্রতিক্রিয়া দুই মেরুতে বিভক্ত—কেউ সিইওর সিদ্ধান্তকে সহানুভূতিশীল নেতৃত্বের নিদর্শন বলেছেন, কেউ আবার একে পেশাগত সীমারেখা ভাঙা বলে সমালোচনা করেছেন।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে গভীর এক পরিবর্তন—কর্মক্ষেত্রে জেনারেশন জেড বা জেন-জিদের (১৯৯৭–২০১২ সালে জন্ম নেওয়া প্রজন্ম) মানসিকতা ও পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গির রূপান্তর।

জেন-জি প্রজন্ম মনে করে, কর্মক্ষেত্রে মানবিক হওয়া দুর্বলতা নয়, বরং তা জরুরি। তাদের কাছে কাজের দক্ষতার মতোই গুরুত্বপূর্ণ মানসিক স্থিতি ও আত্মিক স্বচ্ছতা।

যুক্তরাজ্যের লিগ্যাল অ্যান্ড জেনারেল গ্রুপ প্রোটেকশনের এক জরিপে দেখা গেছে, গত এক বছরে প্রতি তিনজন জেন-জি কর্মীর মধ্যে একজন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগেছেন—যা অন্য যেকোনো বয়সী কর্মীদের তুলনায় বেশি। তাঁরা আগের প্রজন্মের তুলনায় কর্মক্ষেত্রে মানসিক সহায়তা চাওয়াতেও বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

কিন্তু অফিসে কি আবেগের জায়গা থাকা উচিত? দীর্ঘদিন ধরে ‘পেশাদারত্ব’ মানে ছিল ব্যক্তিগত অনুভূতিকে আড়াল করা, অফিসে ব্যক্তিগত সমস্যা না আনা। কিন্তু কোভিড মহামারিপরবর্তী যুগে সেই ধারণা বদলে গেছে। হাইব্রিড ওয়ার্ক, অনলাইন সংযোগ ও ক্রমবর্ধমান বার্নআউটের কারণে কাজ ও ব্যক্তিজীবনের সীমারেখা এখন অনেকটাই মিশে গেছে।

২০২৪ সালে ফিউচার ফোরামের এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪২ শতাংশ কর্মী বার্নআউটে ভুগছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে এখন একটি ‘পেশাগত মানসিক অবস্থা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, বার্নআউট হলো দীর্ঘস্থায়ী ও অতিরিক্ত চাপ থেকে সৃষ্ট একটি মানসিক, শারীরিক ও আবেগিক অবসন্নতার অবস্থা। এটি সাধারণত কর্মক্ষেত্রের অতিরিক্ত চাপ থেকে আসে, কিন্তু জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেখা দিতে পারে। বার্নআউটের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে চরম ক্লান্তি, কাজ থেকে মানসিক দূরত্ব, উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া এবং হতাশা ও উদ্বেগের অনুভূতি।

এমন প্রেক্ষাপটে, ‘ব্রেকআপ’ বা সম্পর্ক ভাঙার পর ছুটি চাওয়া আসলে কোনো বিলাসিতা নয়, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের বাস্তব প্রতিক্রিয়া। যখন আবেগিক বিপর্যয় মনোযোগ নষ্ট করে, তখন অল্প কিছুদিনের বিরতি দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নয়, বরং আত্মনিয়ন্ত্রণের একটি রূপ হতে পারে।

কিন্তু সব প্রতিষ্ঠান কি এই ছুটি দেবে? সব প্রতিষ্ঠান অবশ্য এমন উদ্যোগে আগ্রহী নয়। অনেক এইচআর বিশেষজ্ঞ সতর্ক করছেন—আবেগঘন কারণকে ‘ছুটির বৈধ অজুহাত’ হিসেবে স্বীকৃতি দিলে নীতিগত জটিলতা ও এর অপব্যবহার হতে পারে।

অনেকে মনে করেন, অতিরিক্ত সহানুভূতি শৃঙ্খলাকে দুর্বল করতে পারে। অন্যদিকে, আধুনিক কর্মসংস্কৃতির সমর্থকেরা বলছেন—সহানুভূতি ও পেশাদারত্ব পরস্পরের বিপরীত নয়, বরং পেশাদারত্বের নতুন রূপ।

ডেলয়েটের ২০২৪ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, ৪০ শতাংশ জেন-জি ও মিলেনিয়ালদের ৩৫ শতাংশ কর্মী নিয়মিত মানসিক চাপ অনুভব করেন। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, পারিবারিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা—এই তিন বিষয় তাদের স্ট্রেসের প্রধান কারণ।

তবে ইতিবাচক দিক হলো, অনেক প্রতিষ্ঠান এখন কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন হতে শুরু করেছে, তবে পুরোদমে খোলামেলা আলোচনা ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে এখনো ঘাটতি রয়ে গেছে।

সম্পর্ক ভাঙা বা মন ভাঙা কেন কাজের ওপর প্রভাব ফেলে

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্পর্ক ভাঙার পর শারীরিক ও মানসিক প্রভাব অনেকটা শোকের মতো। ঘুমের ব্যাঘাত, মনোযোগ হারানো, উদ্যম কমে যাওয়া—সবকিছুই কর্মক্ষমতায় সরাসরি প্রভাব ফেলে।

তা ছাড়া যেসব কর্মী আগে থেকে কাজের চাপ ও মানসিক ক্লান্তিতে ভুগছেন, তাঁদের জন্য ব্রেকআপপরবর্তী পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। এ জন্য কিছুদিনের ছুটি অনেক সময় বার্নআউট প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—সহানুভূতি ও নীতির মধ্যে ভারসাম্য আনা। এ জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু বাস্তবসম্মত পদ্ধতি নিতে পারে। যেমন—আবেগ বা মানসিক কারণে ‘ব্যক্তিগত ছুটি’র সুযোগ রাখা, তবে বিস্তারিত ব্যাখ্যার বাধ্যবাধকতা ছাড়া। এমপ্লয়ি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামের (ইএপি) আওতায় গোপনভাবে মানসিক পরামর্শ সেবা। ব্যবস্থাপকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে তাঁরা কর্মীদের মানসিক সংকেত বুঝতে পারেন, কিন্তু অযথা ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করেন। ব্যক্তিগত বিপর্যয়ের পর ধাপে ধাপে কাজে ফেরার সুযোগ রাখা।

মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এ ধরনের কাঠামো একদিকে কর্মীর মর্যাদা রক্ষা করে, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতাও বজায় রাখে। এটি একটি মধ্যপন্থা, যেখানে মানবতা ও শৃঙ্খলা পাশাপাশি চলে।

ব্রেকআপের পর কর্মজীবনে টিকে থাকার উপায়

ব্রেকআপ বা সম্পর্ক ভাঙার পর অফিসের চাপ সামলানো সহজ নয়। বিশেষ করে, জেন-জি প্রজন্মের জন্য, যারা একই সঙ্গে বাস্তবতা, স্বচ্ছতা ও দ্রুতগতির কর্মজীবনের ভার বহন করে। বিশেষজ্ঞরা এমন পরিস্থিতিতে কিছু অবশ্যকরণীয় পরামর্শ দিয়েছেন—

-আবেগের বিষয়টি মেনে নিন—মনোযোগ কমে যাওয়া স্বাভাবিক, তা অস্বীকার নয়, মেনে নিন।

-কাজ ও জীবনের সীমা টানুন—অতিরিক্ত কাজ করে দুঃখ ঢাকার চেষ্টা না করে বিশ্রাম নিন।

-সহায়তা নিন—বিশ্বাসযোগ্য সহকর্মী, বন্ধু বা কাউন্সেলরের সঙ্গে কথা বলুন।

-ফ্লেক্সিবল বিকল্প ব্যবহার করুন—প্রয়োজনে বাসা থেকে কাজ বা স্বল্পমেয়াদি ছুটি নিন।

-রুটিন মেনে চলুন—ঘুম, ব্যায়াম ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন।

-সৃজনশীলভাবে আবেগ প্রকাশ করুন—লেখা, শিল্পচর্চা বা থেরাপির মাধ্যমে মনোভাব প্রকাশ করুন।

-পেশাদারত্ব বজায় রাখুন—অফিসে পারফরম্যান্সে সাময়িক প্রভাব পড়লে খোলামেলা জানিয়ে দিন।

মনোবিজ্ঞানী বলেন, জেন-জি প্রজন্মের কাছে কর্মক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা মানে আবেগ লুকানো নয়, বরং আবেগের মধ্যেই দৃঢ় হয়ে ওঠা, যাতে ব্যক্তিগত কষ্ট পেশাদার জীবনের বাধা না হয়ে উন্নতির শক্তি হয়ে ওঠে। তাই ব্রেকআপের পর ছুটি চাওয়ার বিষয়টি জেন-জিদের জন্য লজ্জার নয়, বরং এটা কর্মক্ষেত্রে তাদের স্বচ্ছতা ও সততার প্রকাশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত