Ajker Patrika

অচেনা পথে টাঙ্গাইল

মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম
আপডেট : ১৬ মে ২০২৪, ০৮: ০২
অচেনা পথে টাঙ্গাইল

বাইক চলছে। উয়ারশী পার হয়ে মির্জাপুরের মহাসড়কে। যেতে যেতে পথের ধারে মন টানার মতো কোনো দৃশ্য দেখলেই থেমে যাই। ছবি তুলে স্মৃতি করে রেখেছি। বিকেলে পৌঁছাই গোপালপুর উপজেলার ঝিনাই নদের তীরঘেঁষা দক্ষিণ পাথালিয়া জামে মসজিদ কমপ্লেক্সে। মসজিদটি ২০১ গম্বুজবিশিষ্ট। এর মধ্যে একটি গম্বুজ ৮১ ফুট উঁচু। সুমধুর সুরে আসরের আজান হলো। আমরা নামাজ আদায় করে নিই। নামাজ শেষে চোখ আটকাল দেয়ালে খচিত দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যে। তাকালাম এবার ছাদের দিকে। এরপর সরু সিঁড়ি বেয়ে চলে যাই ছাদের ওপর। সারি সারি নয়নাভিরাম সোনালি গম্বুজ।

মিনার থেকে যত দূর চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ। সুউচ্চ মিনারটির নাম রাখা হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্মরণে। মসজিদটির নাম দক্ষিণ পাথালিয়া জামে মসজিদ কমপ্লেক্স। ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সম্ভবত পুরো বিশ্বে এটিই একমাত্র ২০১ গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ এবং মিনারের উচ্চতার দিক থেকেও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন মসজিদটি মোট ৯টি মিনারে সজ্জিত। প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন মসজিদটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ১৪৪ ফুট। মূল মিনারের উচ্চতা ৪৫১ ফুট। পাশাপাশি অন্যান্য মিনারের উচ্চতা যথাক্রমে ১০১ ও ৮১ ফুট। ১৫ বিঘা জমির ওপর মসজিদ কমপ্লেক্সটি নির্মাণের পর থেকে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে অখ্যাত দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামটি এখন ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। মসজিদ কমপ্লেক্সটি ঝিনাই নদের একেবারে তীরে। ১৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদে একসময় নাকি প্রচুর শামুক-ঝিনুক ছিল। সে জন্যই নাম হয়েছিল ঝিনাই। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা গেল না।

এবার চমচম খেতে যাওয়ার পালা। আবার বাইক ছুটল। ঘাটাইল এসে জানা গেল, পোড়াবাড়ির চমচম যেখানে তৈরি হয়, তা এখনো বহুদূর। এখন গেলে পাওয়া না-ও যেতে পারে। তার ওপর ফিরতে হবে ঢাকা। ফলে চমচম খাওয়ার বাসনা বাদ দিয়ে ভরা পূর্ণিমায় রাস্তার ধারে পার্ক করা রিকশা ভ্যানে শুয়ে কিছুক্ষণ চাঁদের রূপে মজে যাই।

ফিরতি পথে সাগরদিঘি গ্রামের শাল, গজারির বন ঘেরা সরু পিচ ঢালা পথে গিয়ে উঠি। আশপাশে জনমানবের চিহ্ন নেই। রাত প্রায় ১০টা। তাতেই মনে হয় কত গভীর রাত। পূর্ণিমার চাঁদ আমাদের সঙ্গী। বৈদ্যুতিক আলো ছাড়া বনজঙ্গলে জোছনার ভরা যৌবন উপভোগ করার মোক্ষম সময়। গাছগুলো দেখে মনে হলো বনটা অনেক পুরোনো। কোনো দিঘির দেখা না পেলেও নামটার সঙ্গে জায়গাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিলেমিশে একাকার। এমন পথে বাইক চালানোর আনন্দ অন্য রকম। চলতে চলতে ভরাডুবা পৌঁছে ছোট্ট টি ব্রেক দিয়ে সোজা গাজীপুর মহাসড়ক ধরে ঢাকার পথে।

যাবেন কীভাবে
ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে সারা দিন টাঙ্গাইলের পথে বাস চলাচল করে। মসজিদ কমপ্লেক্সটির অবস্থান গোপালপুর উপজেলার দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে।

সতর্কতা
মোটরবাইক চালানোর সময় অবশ্যই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখবেন এবং বডি সেফটি গিয়ার ব্যবহার করতে ভুলবেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে নিরাপদ থাকবে যে দেশগুলো

ফিচার ডেস্ক
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে পারমাণবিক যুদ্ধের ভয় তৈরি হয়েছে ব্যাপকভাবে। ছবি: পেক্সেলস
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে পারমাণবিক যুদ্ধের ভয় তৈরি হয়েছে ব্যাপকভাবে। ছবি: পেক্সেলস

আমরা সবাই জানি যে একটি পারমাণবিক যুদ্ধ ঠিক কতটা ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। প্রায় ১৩ হাজার পারমাণবিক ওয়ারহেডের বৈশ্বিক মজুতের কারণে এর বিধ্বস্ততা হবে আরও ভয়াবহ। কাজ না থাকা অলস দুপুরে ঘরে বসে এ বিষয়ে ভাবতে নিশ্চয়ই ভালো লাগবে না। তবে হ্যাঁ পারমাণবিক মহাপ্রলয় এলে বেঁচে থাকার জন্য কোন দেশগুলো সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকবে—এ সম্পর্কে জেনে রাখাই যায়। রিস্ক এনালাইসিস নামক একটি জার্নাল সম্প্রতি জানিয়েছে একটি গবেষণার ফলাফল। তারা সেখানে কিছু দ্বীপ দেশকে চিহ্নিত করেছে—যা পারমাণবিক যুদ্ধ, সুপার আগ্নেয়গিরি বা গ্রহাণুর আঘাতের মতো ‘সূর্যালোক হঠাৎ হ্রাসকারী বিপর্যয়’-এর পরেও তাদের জনসংখ্যাকে খাওয়ানোর জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন চালিয়ে যেতে সক্ষম।

একটি পূর্ণ-মাত্রার পারমাণবিক যুদ্ধের পরে পাঁচ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ মারা যাবে। ছবি: পেক্সেলস
একটি পূর্ণ-মাত্রার পারমাণবিক যুদ্ধের পরে পাঁচ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ মারা যাবে। ছবি: পেক্সেলস

পারমাণবিক যুদ্ধের উদ্বেগ ও ভয়াবহ পরিণতি

২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু এবং পরবর্তী ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার পর থেকে পারমাণবিক যুদ্ধের ভয় তৈরি হয়েছে ব্যাপকভাবে। অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, একটি পারমাণবিক সংঘাত মানবতা এবং গ্রহের জন্য কী পরিণতি নিয়ে আসবে।

বিপর্যয়কর পরিণতি: একটি পারমাণবিক সংঘাতের সরাসরি বিস্ফোরণে প্রাথমিক মৃত্যু থেকে শুরু করে বিকিরণের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পর্যন্ত ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে।

ব্যাপক প্রযুক্তিগত পতন: এমনকি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হয়, এমন স্থানগুলোতেও প্রযুক্তির পতন ঘটবে। এটি সহযোগিতা, সমন্বয় এবং স্থিতিস্থাপক খাদ্য উৎপাদনে মারাত্মকভাবে বাধা দেবে।

দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ ফল: ৬৩ শতাংশ জনসংখ্যা দুর্ভিক্ষে মারা যাবে। রাটগার্স ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা অনুসারে, একটি পূর্ণমাত্রার পারমাণবিক যুদ্ধের পরে পাঁচ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ মারা যাবে। যা বিশ্বের বর্তমান জনসংখ্যার প্রায় ৬৩ শতাংশ।

খাদ্য উৎপাদন হ্রাস: পারমাণবিক যুদ্ধে চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য উৎপাদন ৯৭ শতাংশ হ্রাস হবে।

বেঁচে থাকা মানুষ: সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও বিশ্বজুড়ে বেঁচে যাওয়া মানুষ থাকবে বলে মনে করা হয়।

বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে স্থিতিস্থাপক দেশ

'রিস্ক অ্যানালাইসিস'-এ প্রকাশিত গবেষণাটি ৩৮টি দ্বীপ দেশকে ১৩টি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তুলনা করেছে। এই দেশগুলো একটি মহাপ্রলয়ের পরের বেঁচে থাকার রাজ্যের সাফল্যের পূর্বাভাস দিতে পারে। এই গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে খাদ্য উৎপাদন, শক্তির স্বয়ংসম্পূর্ণতা, উৎপাদন এবং জলবায়ুর ওপর বিপর্যয়ের প্রভাব। সূর্যালোক হঠাৎ হ্রাসকারী বিপর্যয়ের পরেও এই দেশগুলো তাদের জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হবে।

নিরাপদ দেশের তালিকায় প্রথমেই আছে অস্ট্রেলিয়া। ছবি: পেক্সেলস
নিরাপদ দেশের তালিকায় প্রথমেই আছে অস্ট্রেলিয়া। ছবি: পেক্সেলস

বেঁচে থাকার সম্ভাবনার ভিত্তিতে দেশের তালিকা

অস্ট্রেলিয়া: এই তালিকায় প্রথমেই আছে অস্ট্রেলিয়া। খাদ্য সরবরাহের বিশাল বাফার এই দেশটি। এখানে আছে কোটি কোটি অতিরিক্ত মানুষকে খাওয়ানোর সম্ভাবনা। ভালো অবকাঠামো, বিশাল শক্তির উদ্বৃত্ত, উচ্চ স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং প্রতিরক্ষা বাজেট দেশটিকে সম্ভাবনাময় করে তোলে। তবে কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক এই দেশটিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পারমাণবিক যুদ্ধের লক্ষ্যবস্তু হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

ফসলের ৬১ শতাংশ হ্রাস হলেও নিউজিল্যান্ডে পর্যাপ্ত খাদ্য থাকবে। ছবি: পেক্সেলস
ফসলের ৬১ শতাংশ হ্রাস হলেও নিউজিল্যান্ডে পর্যাপ্ত খাদ্য থাকবে। ছবি: পেক্সেলস

নিউজিল্যান্ড: তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে নিউজিল্যান্ড। পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তু থেকে দূরত্ব এবং দীর্ঘস্থায়ী পারমাণবিক-মুক্ত মর্যাদা এ দেশটিকে সুরক্ষিত রাখবে। একে চরম তাপমাত্রা থেকে রক্ষা করে সমুদ্রের নৈকট্য। কার্যকর খাদ্য রপ্তানি অর্থনীতি তাদের জনসংখ্যাকে একাধিকবার খাওয়াতে পারে। এমনকি ফসলের ৬১ শতাংশ হ্রাস হলেও সেখানে পর্যাপ্ত খাদ্য থাকবে।

এই তালিকায় স্থান পাওয়া উত্তর গোলার্ধের একমাত্র দেশ আইসল্যান্ড। ছবি: পেক্সেলস
এই তালিকায় স্থান পাওয়া উত্তর গোলার্ধের একমাত্র দেশ আইসল্যান্ড। ছবি: পেক্সেলস

আইসল্যান্ড: এই তালিকায় স্থান পাওয়া উত্তর গোলার্ধের একমাত্র দেশ আইসল্যান্ড। দেশটির দূরত্বের কারণে সবচেয়ে পারমাণবিক যুদ্ধ অঞ্চলের মধ্যে একটি নিরাপদ দেশ। তবে ছোট অর্থনীতির কারণে এটি আমদানিকৃত পণ্য এবং অবকাঠামো পতনে ভুগতে পারে।

সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও ভানুয়াতু: তালিকায় চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে আছে যথাক্রমে সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও ভানুয়াতু। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ভূগোল এবং সাধারণ সময়ে প্রচুর খাদ্য উৎপাদন দেশটিকে সুরক্ষিত রাখে। উচ্চপ্রযুক্তিগত উৎপাদন ও জ্ঞান অর্থনীতির অভাব দেশগুলোর পুনরুদ্ধার কঠিন করে তুলবে। তবে, প্রতিবেশী বেঁচে থাকা দেশগুলোর সঙ্গে তারা বাণিজ্যে অংশ নিতে পারে।

অন্যান্য দেশ: এরপরেই আছে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও মরিশাস। পারমাণবিক যুদ্ধের পরে তাদের জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের মধ্যে আঞ্চলিক বাণিজ্যের সম্ভাবনা। দুর্নীতি এবং সামাজিক অস্থিতিশীলতার ইতিহাস তাদের স্থিতিস্থাপকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, রিস্ক অ্যানালাইসিস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যয়বহুল পণ্য়ে ভরসা নেই, ত্বকের যত্নে প্রাজক্তা কোলির প্রিয় প্রাকৃতিক ৪ উপকরণ

ফিচার ডেস্ক
ছবি: ইনস্টাগ্রাম
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

প্রাজক্তা কোলিকে এ প্রজন্মের তরুণীদের চিনতে না পারার কিছু নেই। ভারতীয় ইউটিউবার ও অভিনেত্রী প্রাজক্তা কোলি। তিনি আরও পরিচিত নেটফ্লিক্সের ‘মিসম্যাচড’ সিরিজের জন্য। প্রাজক্তা কোলি তাঁর ত্বকের সমস্যা সমাধানের জন্য রান্নাঘর থেকে উপকরণ নিয়ে ব্যবহার করতেই বেশি পছন্দ করেন। তাঁর ভাষ্য, এই উজ্জ্বল ত্বকের রহস্য ঘরোয়া উপাদানে তৈরি এক্সফলিয়েটিং স্ক্র‍্যাব ও প্যাক।

যদিও বাজারে হালের প্রচুর স্কিনকেয়ার পণ্য পাওয়া যায়, তবুও প্রকৃতি প্রদত্ত উপাদানই তাঁর ভরসা বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রাজক্তা কোলির স্কিনকেয়ার সিক্রেট

গাল্ফ নিউজের সঙ্গে একটি পুরোনো সাক্ষাৎকারে, প্রাজক্তা কোলি কী করে ঘরোয়া উপাদানে ত্বকের যত্ন নেন—সে কথাই বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ত্বকের জন্য জাদুকরের মতো কাজ করে এমন একটি প্যাক হচ্ছে বেসন, হলুদ, দই ও মধু।’ এসব উপকরণে তৈরি পেস্ট মুখে লাগান তিনি। কখনো বেসনের পরিবর্তে চালের গুঁড়োও ব্যবহার করেন। এটিও নাকি জাদুর মতো কাজ করে। প্রাজক্তার ভাষায়, এটিই তাঁর জীবনে ব্যবহৃত সেরা স্ক্র‍্যাব।

প্রাজক্তা ত্বকের যত্নে যেসব উপাদান ব্যবহার করেন, সেগুলোর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন এখানে—

বেসন

প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ বেসন ত্বকে পুষ্টি জোগায়। ওয়ার্ল্ড জার্নাল অব ফার্মাসিউটিক্যাল রিসার্চে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বেসন ব্রণ নিরাময়ে, ট্যান দূর করতে এবং মৃত ত্বককে এক্সফোলিয়েট করতে সাহায্য করতে পারে।

হলুদ

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ও প্রদাহনাশক হওয়ায় হলুদ ত্বকের জন্য বিশেষ উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, হলুদে থাকা কারকিউমিন নামক উপাদান ব্রণ, কালো দাগ এবং ত্বকের নিস্তেজভাব দূর করতে সাহায্য় করে। ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখতেও হলুদ খুব ভালো কাজ করে।

টকদই

ত্বককে আর্দ্র রাখতে, উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে, অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে, স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে, বার্ধক্যের লক্ষণ কমাতে এবং ব্রণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এই টকদই।

ছবি: ইনস্টাগ্রাম
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

মধু

মধু প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার। এ ছাড়া মধুতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে—যা ত্বককে হাইড্রেট করতে, ব্রণ দূর করতে এবং ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর করতে সহায়তা করে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ডার্মাটোলজির মতে, মধু যেকোনো ত্বকের যত্নের রুটিনে একটি দুর্দান্ত সংযোজন হতে পারে এবং এটি এটোপিক ডার্মাটাইটিস, সোরিয়াসিস ইত্যাদি ত্বকের সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে।

প্রাজক্তা কোলির মতো আপনারও কি এই প্যাক ব্যবহার করা উচিত?

যেহেতু এই প্যাকে ব্যবহৃত সব উপাদান ত্বকের জন্য ভালো। তাই এটি ত্বক পরিষ্কার, এক্সফোলিয়েট এবং উজ্জ্বল করার জন্য একটি কার্যকর মুখের প্যাক হয়ে উঠতে পারে।

যদিও এসব উপাদান একেবারেই প্রাকৃতিক। তবুও প্রথমবার ব্যবহার করার আগে ত্বকবিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে তারপর ব্যবহার করাই নিরাপদ।

সূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কীভাবে রান্না করলে শাকসবজির ভিটামিন সি নষ্ট হবে না

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি অপরিহার্য। তবে পুষ্টিবিদদের মতে, এই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনটি পানিতে দ্রবণীয় এবং তাপ-সংবেদনশীল হওয়ায় রান্নার সময় এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নষ্ট হয়ে যায়। রান্নার পদ্ধতির ওপর ভিটামিন সি-এর ক্ষতির পরিমাণ নির্ভর করে। ভিটামিন সি সংরক্ষণে কিছু কার্যকর পদ্ধতি এবং টিপস নিয়ে নিচের আলোচনাটি পড়া যেতে পারে।

কেন ভিটামিন সি দ্রুত নষ্ট হয়?

ভিটামিন সি মূলত দুটি প্রধান কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়:

তাপ: ভিটামিন সি তাপের সংস্পর্শে এলে দ্রুত ভেঙে যায় এবং এর গুণাগুণ হারায়। তাই রান্নার সময় যত বেশি তাপমাত্রা ব্যবহার করা হবে এবং রান্নার সময় যত দীর্ঘ হবে, ভিটামিন সি-এর ক্ষতি তত বেশি হবে।

পানি: যেহেতু এটি পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন, তাই রান্না করার সময় খাবার থেকে বেরিয়ে পানির সঙ্গে মিশে যায়। সেদ্ধ করার পর সেই পানি ফেলে দিলে খাবারের পুষ্টিগুণও অনেকাংশে কমে যায়।

কোন পদ্ধতিতে সংরক্ষণ বেশি?

রান্নার পদ্ধতিতে সামান্য পরিবর্তন এনেই ভিটামিন সি-এর ক্ষতি কমানো সম্ভব। কিছু পদ্ধতি অন্যগুলোর তুলনায় ভিটামিন সি সংরক্ষণে অনেক বেশি কার্যকর:

সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি

ভিটামিন সি সংরক্ষণের জন্য স্টিমিং (ভাপে রান্না), মাইক্রোওয়েভিং এবং স্টার-ফ্রাইংকে (বেশি আঁচে দ্রুত রান্না) সেরা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর প্রধান কারণ হলো—এই পদ্ধতিগুলোতে পানির ব্যবহার হয় খুবই কম অথবা হয়ই না। অন্যদিকে, তাপ প্রয়োগ করা হয় তুলনামূলকভাবে কম সময়ের জন্য। যেমন, ভাপে রান্না করলে সবজির পুষ্টি উপাদানগুলো সহজে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে না। একইভাবে, মাইক্রোওয়েভে দ্রুত রান্না হওয়ায় তাপের সংস্পর্শও কমে যায়, ফলে ভিটামিন সি অক্ষত থাকে। স্টার-ফ্রাইং বা অল্প তেলে ভেজে রান্না করার সময় উচ্চ তাপ দেওয়া হলেও রান্নার সময় সংক্ষিপ্ত হওয়ায় ক্ষতি কম হয়।

সবচেয়ে ভুল পদ্ধতি

ভিটামিন সি নষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে সেদ্ধ করা বা ফোটানো সবচেয়ে ক্ষতির কারণ হতে পারে। এর প্রধান কারণ, সেদ্ধ করার প্রক্রিয়ায় একই সঙ্গে উচ্চ তাপ এবং অতিরিক্ত পানির ব্যবহার হয়। পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন হওয়ায় এটি সহজেই সেদ্ধ করার পানিতে মিশে যায়, আর সেই পানি ফেলে দেওয়া হলে ভিটামিন সি-এর প্রায় অর্ধেক বা তারও বেশি অংশ নষ্ট হয়ে যায়।

পুনরায় গরম করা

বিশেষজ্ঞরা বলেন, রান্না করা খাবার বারবার গরম করলে ভিটামিন সি-এর সর্বোচ্চ ক্ষতি হয়। যতবার খাবার গরম করা হবে, ততবারই ভিটামিনটি তাপের সংস্পর্শে এসে ক্ষয় হতে থাকবে।

ভিটামিন সি সংরক্ষণে কার্যকর টিপস

পুষ্টিগুণ ধরে রাখতে বিশেষজ্ঞরা কিছু সহজ পদ্ধতি অবলম্বনের পরামর্শ দেন:

কম তাপ ও স্বল্প সময়: খাবার দ্রুত এবং মৃদু তাপে রান্না করুন। যত কম সময় ধরে রান্না করা হবে, তত বেশি ভিটামিন সি অক্ষত থাকবে।

পানির ব্যবহার কমানো: সেদ্ধ করার পরিবর্তে স্টিমিং, মাইক্রোওয়েভিং অথবা স্টার-ফ্রাইং পদ্ধতি বেছে নিন।

রান্নার পানি ব্যবহার: যদি সবজি সেদ্ধ করতেই হয় বা ঝোল রান্না করেন, তাহলে সেই পানি স্যুপ বা সসে ব্যবহার করুন। এতে পানিতে মিশে যাওয়া ভিটামিন সি পাওয়া সম্ভব হবে।

কাঁচা খান: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ অনেক ফল এবং সবজি (যেমন শসা, টমেটো, ক্যাপসিকাম) কাঁচা খাওয়া যায়। এটি ভিটামিন সি সম্পূর্ণরূপে অক্ষত রাখার সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর উপায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফনিক্স সাইকেলের দেশ চীনের বাইসাইকেল বিপ্লব

রজত কান্তি রায়, ঢাকা  
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আমরা যারা নব্বইয়ের দশকে বড় হয়েছি, তাদের কাছে ফনিক্স সাইকেল এক নস্টালজিয়ার নাম। তখন ভারতের হিরো সাইকেলও ছিল বাজারে। তার বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেছিলেন হার্টথ্রব নায়ক সঞ্জয় দত্ত, টেলিভিশনে দেখানো হতো। তারও ক্রেজ ছিল দুর্দান্ত। কিন্তু ফনিক্স সাইকেল? কোনো রকম বিজ্ঞাপন ছাড়াই তখন রাজা। তো, সেই ফনিক্স সাইকেল ছিল সে সময়ের কিশোর ও তরুণদের কাছে স্বপ্নের বিষয়—এখন যেমন তরুণদের আরাধ্য রেসিং বাইকের রেপ্লিকা।

ফনিক্স নামের সে বাইসাইকেল মানুষের কাছে পরিচিত ছিল চায়না ফনিক্স নামে। এক রড ও দুই রড, এ রকমভাবে ভাগ করা হতো সে সাইকেলকে। মানে কোনো সাইকেলের ওপরের সংযোগকারী রড থাকত একটি, কোনোটির দুটি। তখনো ২৬ বা ৩২ ইঞ্চির মাপের বিষয়টা আমাদের মাথায় ঢুকত না। আমাদের চাহিদা ছিল এক রডের সাইকেল। তাতে ‘হাফ প্যাডেল’-এ চালানোর সুবিধা ছিল।

আমরা যখন সাইকেলে হাফ প্যাডেলের দুনিয়ায় মশগুল, তখন দেখতাম বিয়ের কথা উঠলেই ছেলের বাড়ির লোকদের কাছে জানতে চাওয়া হতো, হিরো না ফনিক্স সাইকেল? কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই ফনিক্স সাইকেল জয়ী হতো। তারপর বিয়ের সপ্তাহখানেক আগে খয়েরি কাগজ আর পলিথিনে মুড়ে চায়না ফনিক্স আসত মেয়ের বাড়িতে। কালো রং, চকচকে রুপালি রঙের ক্যারিয়ার, কালো সিট। সামনে হ্যান্ডেলের নিচে সোনালি রঙের ছোট্ট ধাতব পাতে লাল রঙের লোগো ছিল। তাতে খোদাই করা ছিল এক অদ্ভুত জীব। অনেক পরে জেনেছি, সেটা ছিল ড্রাগন। সেই লোগো ছিল আমাদের কিশোর মনের ভীষণ আগ্রহের জায়গা। হাত বোলাতাম তাতে। মনে মনে ভাবতাম, দেখিস, একদিন আমারও একখানা ফনিক্স সাইকেল থাকবে, বাবা কিনে দেবে! কোনো দিন অবশ্য তার মালিক হওয়া হয়নি, বলাবাহুল্য।

খানিক বড় হলে, মানে যখন আমরা সিটে বসে সাইকেল চালানো শিখলাম, দুনিয়াটা গেল বদলে। বুঝতে পারলাম, আমাদের বাবারা ফনিক্স সাইকেল কিনে দিতে পারবেন না। আশা দূরে যেতে লাগল। ধীরে ধীরে সাইকেলের প্রচলন কমতে থাকল। যারা একসময় ফনিক্স সাইকেল কিনত, তারা মোটরসাইকেল কিনতে শুরু করল। গতি বাড়ল, ভালোবাসা থেকে গেল মনে। জীবনও বদলে গেল।

এসপিবি১০। পুরুষদের সিঙ্গেল টপ টিউব সাইকেল। ছবি: সংগৃহীত
এসপিবি১০। পুরুষদের সিঙ্গেল টপ টিউব সাইকেল। ছবি: সংগৃহীত

অনেক পরে, যখন আমাদের অবসর বিনোদনে যোগ হলো উইকিপিডিয়া, রাজ্যের তথ্য আসল আমাদের হাতে, জানলাম, ফনিক্স সাইকেলের নাম আসলে ফিনিক্স সাইকেল। ফিনিক্স পাখির নাম জানলেও ফিনিক্স সাইকেলকে কেন ফনিক্স নামে ডাকা হতো, তা এখনো বোধগম্য নয়। অবশ্য যে দেশে আনানাস হয়ে যায় আনারস আর হসপিটাল হয়ে যায় হাসপাতাল, সে দেশে ফিনিক্স বাইসাইকেলের নাম ফনিক্স হয়ে যাওয়াটা খুব উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা নয়। যা হোক, এই ফিনিক্স বা ফনিক্স বাইসাইকেল ছিল মেড ইন চায়না। চীনের সাংহাই ফিনিক্স বাইসাইকেল কোম্পানি এটি তৈরি করত। এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৮ সালে, সাংহাই থার্ড বাইসাইকেল ফ্যাক্টরি হিসেবে। এর পরে প্রতিষ্ঠাটি আরও বড় হয়ে ওঠে। তার ইতিহাস উইকিপিডিয়ার এই যুগে দুর্লভ নয়। ফিনিক্স ব্র্যান্ডের এই বাইসাইকেল ৫০টিরও বেশি দেশে সাইকেল রপ্তানি হয় বলে জানা যায়। তবে ফিনিক্স ট্রেডমার্কটি নাকি চীন দেশের প্রথম দশটি সুপরিচিত ট্রেডমার্কের মধ্যে একটি। আর এটি নিবন্ধিত হয়েছে ১০৪টি দেশে!

শোনা যায়, ফিনিক্স বাইসাইকেল চীনা জাতির বিশেষ গর্বের জিনিস। এক সময় বিদেশি নেতারা চীন সফরে গেলে তাঁদের উপহার হিসেবে একটি করে ফিনিক্স বাইসাইকেল দেওয়া হতো।

এই সাংহাই ফিনিক্স বাইসাইকেল কোম্পানির ফিনিক্স সাইকেলের জন্যই কি না, তা জানা না গেলেও, চীন নামের দেশটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ বাইসাইকেল ব্যবহারকারী মানুষের দেশ হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, চীনে একসময় বাইসাইকেল ছিল পরিবহনের প্রধান মাধ্যম। ১৯৮০-৯০-এর দশকে চীনের শহরগুলোতে লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন বাইসাইকেল ব্যবহার করত। বেইজিংয়ের মতো শহরে সকালবেলা নামত সাইকেলের ঢল! সে জন্যই হয়তো চীন দেশেই শুরু হয়েছিল সাইকেল নিয়ে যাবতীয় ভবিষ্যৎমুখী কাজ।

সেই নব্বইয়ের দশকে বেইজিং শহরে সাইকেলের জ্যাম নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা তৈরি করা হয়। আর একুশ শতকের প্রথম দশকের মাঝামাঝিতে সে দেশেই তৈরি হয় সাইকেল শেয়ারিং বিপ্লব। ২০১৬-২০১৭ সালে মোবাইক বা ওফো-এর মতো প্রতিষ্ঠান তৈরি হয় সেখানে, সাইকেল শেয়ারিংয়ের ব্যবসা করার জন্য। ২০১৭ সালের মধ্যে চীনে ১৬০টিরও বেশি শেয়ার্ড বাইসাইকেল কোম্পানি চালু হয়েছিল। সেসব প্রতিষ্ঠানের মোট বাইসাইকেলের সংখ্যা ছিল ২ কোটিরও বেশি! ইউরোপের দেশগুলোতে এখন এ ব্যবসা বেশ জমজমাট বলে জানা যায়।

এসপিবি১৫। পুরুষদের ডাবল টিউব সাইকেল। ছবি: সংগৃহীত
এসপিবি১৫। পুরুষদের ডাবল টিউব সাইকেল। ছবি: সংগৃহীত

বাইসাইকেলের জনপ্রিয়তা থেকেই চীনে শুরু হয়েছিল ইলেকট্রিক বাইকের ধারণা। খেয়াল করলে দেখবেন, সেগুলো সাইকেলের চেয়ে খানিক বেশি গতির। কিন্তু মোটরবাইকের মতো নয়। চায়না অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের একটি গবেষণা অনুসারে, ২০২৩ সালে চীনে ই-বাইকের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৩৫ কোটি!

এবার বাইসাইকেল নিয়ে চীনদেশের কিছু চিত্তাকর্ষক তথ্য দেওয়া যাক।

চীনের জিয়াংসু প্রদেশের কুনশান শহরে আছে একটি বিশালাকার বাইসাইকেলের ভাস্কর্য। স্থানীয় মানুষ এ ভাস্কর্যে এসে সাইকেলশিল্পের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। কারণ, ষাটের দশক থেকে চীনের জাতীয় জীবনে বাইসাইকেল এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে ছিল। সে সময় দেশটিতে তৈরি হয়েছে বাইসাইকেল সংস্কৃতি। সে সংস্কৃতি শুধু চীনকেই নয়, প্রভাবিত করেছিল প্রায় পুরো বিশ্বকে।

বেইজিং থেকে গুয়াংঝো, চীনের বাইসাইকেল সংস্কৃতির রূপান্তরের গল্পটা বেশ চিত্তাকর্ষক। চীনের রাস্তায় বাইসাইকেলের যে অগণিত চাকা ঘুরছে, তা কেবল একটি বাহন নয়, বরং দেশটির সামাজিক-অর্থনৈতিক বিবর্তনের জীবন্ত দলিল। একসময়ের ‘সাইকেল রাজ্য’ থেকে আজকের ‘ই-বাইক সাম্রাজ্যে’ রূপান্তরের এই গল্পে মিশে আছে নস্টালজিয়া আর উদ্ভাবনের মেলবন্ধন।

১৯৯৫ সালের একটি পরিসংখ্যান অনুসারে, শুধু বেইজিং শহরে ছিল ৮৩ লাখেরও বেশি রেজিস্টার্ড বাইসাইকেল। সকাল-সন্ধ্যা রাস্তায় আক্ষরিক অর্থে নামত বাইসাইকেলের স্রোত! সেই সময় ফোরএভার ও ফ্লাইং পিজিয়ন নামের আরও দুটি ব্র্যান্ডের বাইসাইকেল ছিল সামাজিক মর্যাদার প্রতীক। অনেক পরিবারে বিয়ের সময় সে দুই ব্র্যান্ডের বাইসাইকেল অপরিহার্য যৌতুক হিসেবে বিবেচিত হতো। কী, আমাদের দেশের যৌতুকের কথা মনে পড়ে? একসময় বিয়েতে দেওয়া হতো বাইসাইকেল ও টেলিভিশন! একই গল্প ছিল চীনেও।

মজার বিষয় হলো, ১৯৯০-এর দশকে বেইজিং ও শেনইয়াং-এর মতো শহরগুলোতে শুধু গাড়ি জ্যামই নয়, নিত্যনৈমিত্তিকভাবে হতো সাইকেল জ্যাম। শহরগুলোতে নির্মিত হয়েছিল বিশাল সাইকেল লেন নেটওয়ার্ক, কিছু শহরে বাইসাইকেলের জন্য আলাদা ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছিল। সেগুলো অবশ্য কমতে শুরু করে ২০০০ সালের পর, নগরায়ণ ও মোটরগাড়ির বিস্তারের কারণে।

চীনের বাইসাইকেল সংস্কৃতির এই বিবর্তন শুধু পরিবহন পদ্ধতির পরিবর্তন নয়, বরং এটি দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনের জীবন্ত প্রতিফলন। এটি শুধু যে চীনকে প্রভাবিত করেছিল তা নয়। প্রভাবিত করেছিল বাংলাদেশের মতো বিশ্বের আরও বহু দেশকে, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে।

তথ্যসূত্র

উইকিপিডিয়া

‘বাৎসরিক বাইসাইকেল পরিসংখ্যান রিপোর্ট’ (১৯৯৫), চায়না বাইসাইকেল অ্যাসোসিয়েশন

‘দ্য সোশ্যাল হিস্টরি অব বাইসাইকেল ইন চায়না’ (২০১৮), ওয়েই ঝাং, পিকিং ইউনিভার্সিটি

‘বাইসাইকেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইন আরবান চায়না’, পিপলস ডেইলি (১৯৯৮)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত