Ajker Patrika

ভ্রমণ আমার কাছে প্রার্থনার মতো

ভ্রমণ আমার কাছে প্রার্থনার মতো

উত্তর ও দক্ষিণ মেরু ছাড়া পৃথিবীর সব মহাদেশের কোনো না কোনো দেশ তিনি ঘুরেছেন। এই ভ্রমণের বেশিরভাগ একাকী করেছেন তিনি। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন বই। ভ্রমণ ও বই নিয়ে পর্যটক ফাতিমা জাহানের সঙ্গে আলাপ করেছেন রজত কান্তি রায়

আজকের পত্রিকা: দীর্ঘদিন ব্যাঙ্গালোর শহরে বসবাস করছেন। শহর হিসেবে ব্যাঙ্গালোর কেমন?

ফাতিমা জাহান: আমি যেসময় ব্যাঙ্গালোরে গিয়েছি সেসময়কার ব্যাঙ্গালোর আর এখনকার ব্যাঙ্গালোরের মাঝে ফাঁরাক অনেক। বিশ থেকে বাইশ বছর আগে ব্যাঙ্গালোরে বিদেশের আউটসোর্সিং কম্পানিগুলো সবে অফিস খুলতে শুরু করেছে। তখন জনসংখ্যাও তেমন ছিলো না, ছিলো না সুউচ্চ ভবন। সাধারণত সেখানে স্থানীয় মানুষজন বসবাস করতেন তখন। তবে পড়ালেখা করার জন্য ভারতের অন্যান্য রাজ্য এবং আশেপাশের দেশ থেকে প্রচুর ছাত্র আসতেন। তখন ব্যাঙ্গালোরের শিল্প সংস্কৃতিতে ছিল শুধুই দক্ষিণ ভারতীয় প্রভাব। আইনশৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, সময়ানুবর্তিতা, সততা তখনও ছিল, এখনও আছে। এ শহরে অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে কেউ নাক গলায় না। সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। এখনকার ব্যাঙ্গালোর আগের চেয়ে বিস্তৃত হয়েছে চারিদিকে। আগের মতো সেই ছিমছাম, ছায়াঘেরা, শান্ত, স্থানীয় শহরটি নেই। এখন উঁচু দালান বেড়েছে, বেড়েছে জনসংখ্যা, রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিভিন্ন পেশায় কাজের আশায় আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ার কারণে এখন ব্যাঙ্গালোরকে ঠিক আর আগের মতো দক্ষিণী সংস্কৃতির শহর বলা যায় না। একটা বহুজাতিক সংস্কৃতির শহর হয়ে গিয়েছে এটি।

আজকের পত্রিকা: বসবাস করছেন ব্যাঙ্গালোর শহরে। কিন্তু লিখলেন ‘লখনউনামা’। কারণ কী?

ফাতিমা জাহান: আমি ব্যাঙ্গালোরে অস্থায়ীভাবে বহুবছর ধরে বসবাস করলেও মনে প্রাণে একজন বাঙালি। দক্ষিণ ভারতের ভাষা, সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলাদেশের ভাষা, সংস্কৃতির খুব একটা মিল নেই। বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ভাষা, সাহিত্যে কয়েক শ বছর ধরে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে উত্তর ভারতের ভাষা ও সংস্কৃতি। এক সময় ভারত উপমহাদেশের দরবারি ভাষা ছিল ফারসি। পারস্য থেকে আসা লখনউয়ের নবাবগণ সঙ্গে করে কবিতা, গজল, আদবকায়দা, পোশাক পরার ধরন, খাদ্য ইত্যাদি শুধু নিয়েই আসেননি, এ উপমহাদেশে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। খোদ বাংলা ভাষায় আট হাজারের বেশি ফারসি শব্দ আছে। বিরিয়ানি, কাবাব থেকে শুরু করে ঘুরি ওড়ানো, পশুপাখির লড়াইয়ের মতো সৌখিন খেলাধুলা বাংলায় পরিচিত করেছেন লখনউয়ের নবাবগণ। আমাদের এক জেনারেশন আগের মানুষজনও কিন্তু ফারসি পড়তে-লিখতে পারতেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমানো পর্যন্ত আমরা বহুভাবে লখনউয়ের রীতিনীতি পালন করি।

আমি বিজ্ঞানের ছাত্র হলেও ইতিহাস আমার প্রিয় বিষয়। নিজেদের সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ইতিহাস জানবার জন্যই আমি বারবার লখনউ গিয়ে খোঁজ করেছি সেই ইতিহাস।

ভিক্টরি গেটের সামনে ফাতিমা জাহান, ভিয়েনতিয়েন, লাওসআজকের পত্রিকা: আপনার তিনটি বইয়ের দুটি-ই ভ্রমণ বিষয়ক। একটি সম্ভবত কবিতার।

ফাতিমা জাহান: আমার লেখা প্রথম বই ছিল কবিতার। ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার কারণে এবং বাংলা ভাষা চর্চা থেকে দূরে থাকার কারণে আমি বাংলায় তেমন পরিণত ছিলাম না। ৬/৭ বছর আগে নিজ উদ্যোগে বাংলা শেখা ও লেখা শুরু করি। তখন ছোট ছোট কবিতা লিখে বাংলার চর্চা শুরু হয়েছিল। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার ভ্রমণের ছবি দেখে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকগণ আমার কাছে ভ্রমণ কাহিনি চাওয়া শুরু করেন। সাহস করে দুই একটা লিখে ফেলার পর আরও অনুরোধ আসতে থাকে। এভাবেই তৈরি হয়ে যায় আমার প্রথম ভ্রমণগ্রন্থ ‘মওলানা জালালউদ্দিন রুমির খোঁজে তুরস্কে’। তবে লেখক হিসেবে আমি খুবই অলস এবং বাংলা শিক্ষার্থী হিসেবে এখনও নবীন। সম্পাদক-প্রকাশকের তাড়া না থাকলে হয়তোবা দ্বিতীয় ভ্রমণগ্রন্থ ‘লখনউনামা’ গুছিয়ে মলাটবন্দী করতে পারতাম না।

আজকের পত্রিকা: আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতার তুলনায় বইয়ের সংখ্যা বেশ কম। কারণ কী?

ফাতিমা জাহান: বই প্রকাশের ইচ্ছা আমি কখনোই নিজ থেকে পোষণ করি না। আমি ভ্রমণ করি নিজের জন্য। ভ্রমণ আমার কাছে এক ধরনের প্রার্থনা। আমি ভ্রমণেই মগ্ন থাকি। অন্যান্যদের মতো আমি খুব সামাজিক নই। অন্যদের মতো আমারও বই প্রকাশ করতে হবে, এমন তাড়া আমি নিজ থেকে কখনোই অনুভব করি না। আরেকটি বিষয় হলো, লেখক হিসেবে আমি ভীষণ খুঁতখুঁতে। একটি বই মানে একটি ডকুমেন্ট। রিল, টিকটক, ইউটিউব এসবই ক্ষণস্থায়ী আনন্দদায়ক মাধ্যম। কিন্তু একটি বই সেভাবে লেখা হলে হাজার বছর পরেও কারো উপকারে আসতে পারে। বই লেখা সাধনার ব্যাপার। আমার ধারণা, আমি এখনও সেই সাধনার স্তরে পৌঁছাতে পারিনি।

আজকের পত্রিকা: ভ্রমণ আপনার প্রিয় বিষয়। সম্ভবত উত্তর ও দক্ষিণ মেরু বাদে আপনি সব মহাদেশের কোনো না কোনো দেশে গেছেন। ভ্রমণে উৎসাহিত হওয়ার কারণ কী?

ফাতিমা জাহান: ভ্রমণ আমার কাছে প্রার্থনার মতো। প্রার্থনায় মানুষ মনে শান্তি পায়। আমি পাই ভ্রমণে। এ ছাড়া নিজের দেশ, জাতি, সংস্কৃতির বাইরে এই বিশাল পৃথিবীতে কত কিছু যে জানার আছে, শেখার আছে, তা ভ্রমণ ছাড়া সম্ভব নয়। এমনও হয়েছে, কোনো একটি জায়গা সম্পর্কে আমি কিছু না জেনে চলে গিয়েছি আর ফিরে এসেছি ঝুলি ভর্তী জ্ঞান ও আনন্দ নিয়ে। এই অভিজ্ঞতাই হয়তো ভ্রমণে আমাকে আরও বেশি উৎসাহিত করেছে।

 আজকের পত্রিকা: আপনি একজন সলো ট্রাভেলার। একাকী ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন। এর বিশেষ কোনো কারণ আছে কি?  

ফাতিমা জাহান: সোলো ট্রাভেলার হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ, আমি আমার ভ্রমণের সময় ও সুযোগ মতো খুব কম সঙ্গী পেয়েছি যার রুচি আমার সঙ্গে মেলে। আরও একটি কারণ, যেকোনো জনপদে আমি দীর্ঘ সময় নিয়ে ভ্রমণ করি। সেখানকার ভাষা, সংস্কৃতি সম্পর্কে জানি। দীর্ঘ সময় নিয়ে ভ্রমণ করা যায়, ভারত উপমহাদেশে এখনও এই কনসেপ্টটি ঠিক মতো দানাবাঁধেনি। ভারতবর্ষের মানুষ এখনও ভিনদেশী সংস্কৃতি বা খাবারে রপ্ত হতে পারেনি। সব জায়গায় নিজেদের পছন্দ মতো খাবার বা আবাস পাওয়া যে যাবে, এমনও নয়। আমি বেশ কয়েক বছর মাউন্টেইন ক্লাইম্বিং করেছি। তাই থাকা খাওয়া নিয়ে আমার বায়াসনেস নেই। অনেক সময় প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভ্রমণের সময় নাগরিক সুযোগ সুবিধা একেবারেই মেলে না। এটিও শহুরে ভ্রামণিকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে। যত প্রতিকূলতা থাকুক না কেন, আমি তাই সঙ্গী না পেলে একাই বেরিয়ে পড়ি।

এমনও হয়, কোনো একটা জায়গা আমার পছন্দ হলো কিন্তু আমার সঙ্গীর হলো না বা ভাইসভার্সা। তখন ভ্রমণের আনন্দ মাটি হয়ে যায়।

 আজকের পত্রিকা: ভ্রমণে গিয়ে বিপদের মুখে পড়েছেন কোথায়?

ফাতিমা জাহান: ভ্রমণে গিয়ে আমি বিপদের মুখোমুখি হইনি। তবে বিপদ হতে পারে এমন জায়গায় ভ্রমণ করেছি। একবার কাশ্মীরে কারফিউ চলাকালীন সময়ে গিয়ে হাজির হয়েছিলাম। ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল সে যাত্রা। অ্যাডভেঞ্চার আমার রক্তে মিশে আছে। এটা এক ধরনের নেশা। রাজ্য জয় করার নেশার মতো।

আজকের পত্রিকা: ব্যাঙ্গালোরসহ দক্ষিণ ভারতের অনেক শহর এখন বাঙালিদের প্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন।  

ফাতিমা জাহান: এই বিষয়টিকে আমি খুব ইতিবাচক ভাবে দেখি। বেশির ভাগ বাঙ্গালীকে অনেকেই বলেন কুয়োর ব্যাঙ। বাঙ্গালী যে উত্তর দক্ষিণে ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছড়িয়ে পড়ছে, ব্যাপারটি খুবই আশাবাদী করে আমাকে। দক্ষিণ ভারতের ভাষা ভিন্ন, ভিন্ন এদের খাবার ও সংস্কৃতি। মানুষ যত ভ্রমণ করবে, তত জানবে, ততই অন্য জাতিকে শ্রদ্ধা করতে শিখবে।

 আজকের পত্রিকা: দক্ষিণ ভারত চিকিৎসা ভ্রমণের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বসবাসের অভিজ্ঞতায় কারণগুলো কী বলে মনে করেন?

ফাতিমা জাহান: সততা, দায়িত্বশীলতা, সময়ানুবর্তিতা ও নিয়মানুবর্তিতার জন্য দক্ষিণ ভারত নিজের জায়গা অনেক আগেই করে নিয়েছে। দক্ষিণ ভারতের সেবা খাত অভূতপূর্ব উদাহরণ হয়ে থাকতে পারে বাংলাদেশের জন্য। চিকিৎসাবিজ্ঞানে রোবোটিক টেকনোলজির ব্যবহার এক যুগের বেশি সময় আগে থেকে হয়ে আসছে, যার প্রয়োগ আমি দেশে হয় বলে এখনও শুনিনি। উন্নত দেশে যখন যে প্রযুক্তির ব্যবহার চালু হয় ভারতে তা সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে, বিশেষ করে ব্যাঙ্গালোরে। এ বিষয়ের সঙ্গে চিকিৎসা সেবায় জড়িত সকলকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।

একজন চিকিৎসক যে পরিমাণ সময় নেন একজন রোগী দেখতে বা কেইস হিস্ট্রি নিতে, তার নজির আমাদের দেশে খুব কম। এ ছাড়া সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা বহুলাংশে ভালো, জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলকভাবে কম, নিরাপদ নগর হওয়ার কারণে চুরি ছিনতাইয়ের ভয় নেই, নারীদের চলাফেরা বা পোশাকে নেই কোনো আরোপ। অকারণে হয়রানিমূলক আচরণের আশঙ্কা নেই। কাজ করে দেবার নাম করে টাকাপয়সা মেরে দিয়ে উধাও হয়ে যাবার উদাহরণও খুব বেশি পাওয়া যায় না। ব্যাঙ্গালোরের পুলিশ ও প্রশাসন এ ব্যাপারে শক্ত অবস্থানে আছে।

আজকের পত্রিকা: দেশের যে নারীরা সলো ট্রাভেল করতে চায় তাদের জন্য কী বলবেন?

ফাতিমা জাহান: নিজেকে জানার জন্য, নিজের মনের চাহিদা বোঝার জন্য, নিজের ব্যক্তিত্বকে উপলব্ধি করার জন্য প্রত্যেক মানুষের সোলো ট্রাভেলিং করা উচিৎ বলে আমি মনে করি। বেশিরভাগ মানুষ সমাজ যেভাবে শিখিয়ে দেয় সেভাবে পরিচালিত হয়, কিছুটা বাধ্য হয়ে কিছুটা নিজের বিবেক বুদ্ধি ব্যবহার না করে। আমাদের দেশের নারীরা সব ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। নারীদের অগ্রযাত্রাকে আমি সবসময়ই উৎসাহিত করি। বহু দেশে নারীর কাজ বা পুরুষের কাজ বলে আলাদা কিছু নেই।

যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সোলো ট্রাভেলিং করতে চান তাঁদের বলব, আর দেরি নয় বেরিয়ে পড়ুন। জগৎ বিশাল কিন্তু জীবন ছোট। এক জীবনে অনেক কিছু করার আছে, জানার আছে, শেখার আছে। আর এই সাহস, এই শিক্ষা ছড়িয়ে দিন সবার মাঝে। ভ্রমণ মানুষের হৃদয়ের পথ প্রশস্ত করে, একজন মানুষকে আলোকিত করে। এই আলোর মাঝেই যেন আমাদের বসবাস হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিশ্বসুন্দরী মণিকা বিশ্বকর্মার গ্লো-আপ সিক্রেট

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
মিস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া ২০২৫-এর মুকুট বিজয়ী মণিকা বিশ্বকর্মা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
মিস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া ২০২৫-এর মুকুট বিজয়ী মণিকা বিশ্বকর্মা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

বিশ্বসুন্দরীর আন্তর্জাতিক আসরগুলোতে যেতে হলে অনেক স্থানীয় প্রতিযোগিতায় পরীক্ষা দিয়ে তবেই মেলে ছাড়পত্র। আর তা-ও যে সবার জোটে না, সেটা বলাই বাহুল্য। ভারতের তেমনি একটি প্রতিযোগিতা হলো মিস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া। এটি গ্লামানন্দ গ্রুপ সংস্থার অধীনে একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা। এর শুরু হয় ২০২৪ সালে। এ সংস্থাটি এখন মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি নির্বাচন করে। গত বছরের বিজয়ী ছিলেন গুজরাটের ১৯ বছর বয়সী রিয়া সিংহ। এ বছরের বিজয়ী হলেন রাজস্থানের ২২ বছর বয়সী মণিকা বিশ্বকর্মা।

মিস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া ২০২৫-এর মুকুট বিজয়ী মণিকা বিশ্বকর্মা ৭৪তম মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। কেবল মুকুট দিয়েই নয়, তিনি অনেকের মন কেড়েছেন উজ্জ্বল ত্বকের কারণেও। ত্বকের যত্নে রেটিনল থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী বেসন মাস্ক পর্যন্ত অনেক কিছুই ব্যবহার করেন তিনি। ত্বক ভালো রাখতে তিনি আধুনিক প্রসাধনী যেমন ব্যবহার করেন, তেমনি প্রাচীন ঘরোয়া পদ্ধতিগুলোও ব্যবহার করতে ভোলেন না। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজের সঙ্গে একটি কথোপকথনে এই বিশ্বসুন্দরী তাঁর দৈনন্দিন সৌন্দর্য, রীতিনীতি ও উজ্জ্বল ত্বকের গোপন রহস্য প্রকাশ করেছেন।

কী রয়েছে মণিকার রূপ রুটিনে? জেনে নেওয়া যাক:

মণিকা মনে করেন, প্রাকৃতিক ত্বকের যত্ন কেবলই বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয় নয়, এটি নিজের শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার বিষয়ও। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
মণিকা মনে করেন, প্রাকৃতিক ত্বকের যত্ন কেবলই বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয় নয়, এটি নিজের শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার বিষয়ও। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

রেটিনল ও ময়েশ্চারাইজার

মণিকা জানান, তিনি তাঁর ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখার জন্য রেটিনল ও হাইড্রেটিং ময়েশ্চারাইজারের ওপর নির্ভর করেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে, মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করার পর রেটিনল সেরাম ব্যবহার করেন। এর পরপরই ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন। এতে তাঁর ত্বক রাতারাতি ক্ষয়ক্ষতি সারিয়ে ফেলতে পারে এবং পুনরুজ্জীবিত হয়। তবে মণিকা জানিয়েছেন, তিনি ত্বকের উপরিভাগের যত্ন নিয়েই থেমে থাকেন না। গভীর থেকে ত্বকের দেখভালের জন্য প্রতিদিন তাঁর খাদ্যতালিকায় থাকে শসা, বিটরুট এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান দিয়ে তৈরি তাজা রস।

মায়ের দেওয়া টোটকায় বিশ্বাস রাখেন

ত্বকের যত্নে বাজারে ব্র‍্যান্ডেড পণ্যের জোগান থাকা সত্ত্বেও, মণিকা এখনো প্রাকৃতিক ডিআইওয়াই প্যাকগুলোয় বিশ্বাস করেন। তিনি প্রায়ই বেসন ও হলুদের প্যাক ব্যবহার করেন বলে জানান। তাঁর ভাষ্য, এটি তাঁর মায়ের দেওয়া গোপন টিপস। এই প্রাচীন ভারতীয় সৌন্দর্য টিপস তাঁর ত্বক সতেজ, উজ্জ্বল ও দাগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। মণিকা মনে করেন, প্রাকৃতিক ত্বকের যত্ন কেবলই বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয় নয়, এটি নিজের শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার বিষয়ও।

ত্বক পরিষ্কার করতে নারকেল তেল ব্যবহার করেন

মেকআপ অপসারণের জন্য নামীদামি মেকআপ রিমুভারের পরিবর্তে মণিকা খাঁটি নারকেল তেল ব্যবহারের পক্ষপাতী। তিনি তাঁর মেকআপ ভালোভাবে গলে যাওয়ার জন্য খাঁটি নারকেল তেলের প্রলেপ দেন। তেল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করার পর তিনি হালকা ক্লিনজার ব্যবহার করেন এবং তাঁর পছন্দের ময়েশ্চারাইজার দিয়ে রূপ রুটিন শেষ করেন। এই রুটিন নিয়মমাফিক মেনে চলার কারণে তাঁর ত্বক নরম, পানিপূর্ণ ও ক্ষয়ক্ষতিমুক্ত থাকে বলে জানান তিনি।

সবচেয়ে সহজ কিন্তু শক্তিশালী রহস্য হাইড্রেশন

ত্বক সুন্দর রাখার সহজ মন্ত্রগুলোর মধ্যে একটি হলো ত্বকে পানির ভারসাম্য ঠিক রাখা। মণিকা সারা দিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করেন বলে জানান। তাঁর মতে, হাইড্রেশন শরীর ডিটক্সিফাই করে ও ত্বকে এমন একটি প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা যোগ করে, যা কোনো মেকআপ দিতে পারে না।

মণিকা বিশ্বকর্মার মতে, ত্বকের যত্ন মানেই কোনো জটিল সৌন্দর্যচর্চা নয়। দেশীয় উপকরণে তৈরি প্যাক ব্যবহার, অভ্যন্তরীণ যত্ন ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের সংমিশ্রণেই পাওয়া যায় জেল্লাদার ত্বক। বাজারে অনেক ধরনের নতুন পণ্য আসে এবং ভবিষ্যতেও আসবে। কিন্তু সেগুলোর ওপরই পুরোপুরি ভরসা করা ঠিক নয়। নিজের শিকড় থেকে পাওয়া ঘরোয়া টোটকাও অনেক সময় সেরা ফলাফল দেয়। আর এখানে বিশ্বাস রাখলেই অনেকটা কাজ এগিয়ে যায় বলে মনে করেন মণিকা বিশ্বকর্মা।

সূত্র: জি নিউজ

ছবি: ইনস্টাগ্রাম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাওয়া বদলের মৌসুমে শিশুর ত্বক ও চুলের যত্ন

ডা. নূরজাহান বেগম
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ৩৫
হাওয়া বদলের মৌসুমে শিশুর ত্বক ও চুলের যত্ন

শীত আসতে এখনো কিছুটা দেরি। তবে এই বৃষ্টি, এই রোদের কারণে আবহাওয়া এখন কিছুটা ঠান্ডা। বড়দের জন্য এই ধরনের আবহাওয়া তেমন একটা ক্ষতির কারণ না হলেও শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। ফলে এই মৌসুমে অনেক শিশু একাধিকবার জ্বর ও সর্দির কবলে পড়ছে। ত্বকেও নানা ধরনের সংক্রমণ ঘটছে। ফলে শিশুর নাজুক ত্বক ও চুলের সুরক্ষায় বাড়তি সতর্কতার জন্য কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হবে।

ত্বকের যত্ন

এই মৌসুমে শিশুর গোসলের ব্যাপারে সাবধান হতে হবে। তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের অনেকে এক দিন পরপর গোসল করানোর কথা বলেন। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে শিশুর জন্মের ৭২ ঘণ্টা পর থেকে প্রতিদিন কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করানো যাবে। তবে সময়ের আগে হয়ে যাওয়া এবং কম ওজনের শিশুদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গোসল করানো যাবে না।

তবে দীর্ঘ সময় ধরে নবজাতক ও শিশুকে গোসল করানো যাবে না। উভয়ের ক্ষেত্রে গোসলের সময় কমিয়ে দিতে হবে। গোসলের জন্য কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা ভালো। বেশি গরম পানি ব্যবহার করলে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যায়। শিশুর গোসলে সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে। গোসলের পরপরই ভালো করে শরীর মুছিয়ে অলিভ অয়েল কিংবা লোশন ব্যবহার করা যাবে।

শুষ্ক ত্বকে চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী দিনে দু-তিনবার ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। অলিভ অয়েল ও নারকেল তেল শিশুর ত্বকে সাধারণত সমস্যা করে না। তবে সরিষার তেল ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। অনেকে নবজাতক বা শিশুদের নাকে ও কানে সরিষার তেল দিয়ে থাকেন, যেটা একদম উচিত নয়। এটি শিশুর ত্বকের জন্য ভালো নয়। সরিষার তেল ত্বকে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি, প্রদাহ এমনকি মাথার ত্বকে খুশকির প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। নবজাতক ও শিশুদের জন্য উপযোগী প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। তবে ব্যবহারের পর যদি অ্যালার্জি হয়, তাহলে সেই প্রসাধনী বাদ দিতে হবে।

baby

চুলের যত্ন

দূষণের কারণে বড়দের মতো শিশুদের চুল ধুলাবালুর জন্য ময়লা হয়ে যায়। ফলে প্রায়ই খুশকির সমস্যায় ভুগতে হয়। তাই সপ্তাহে দু-তিন দিন শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল পরিষ্কার রাখতে হবে। গোসলের পর চুল ভালো করে শুকাতে হবে এবং নিয়মিত আঁচড়ে দিতে হবে। মাঝেমধ্যে শ্যাম্পু করার এক ঘণ্টা আগে মাথার ত্বক ও চুলে নারকেল তেল ম্যাসাজ করে দিতে পারেন। এতে শ্যাম্পু করার পর চুলগুলো ঝরঝরে থাকবে।

আরাম পরিধেয়

এ সময় শিশুকে সুতির পাতলা আরামদায়ক কাপড় পরাতে হবে। নবজাতক ও শিশুরা যেন ঘেমে না যায়, সে ব্যাপারে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, শরীরে ঘাম জমলেই নানা ধরনের চর্মরোগ হবে। মাথার ত্বকও যেন ঘামে ভেজা না থাকে, সেদিকে নজর দেওয়া চাই। প্রয়োজনে পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে শিশুর মাথা বারবার আলতো হাতে মুছে দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জলপাই দিয়ে পোয়া মাছের ঝোল

ফিচার ডেস্ক
ছবি: রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
ছবি: রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।

বাজারে জলপাই উঠেছে। আচার তো বানাবেনই, ডালেও নিশ্চয়ই জলপাই দিচ্ছেন। বাড়িতে পোয়া মাছ থাকলে এবার রাঁধুন জলপাই দিয়ে। কীভাবে রাঁধবেন? আপনাদের জন্য জলপাই দিয়ে পোয়া মাছের ঝোলের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।

উপকরণ

ধুন্দল ৫০০ গ্রাম, আলু ২০০ গ্রাম, পোয়া মাছ ৬ পিস, পেঁয়াজকুচি ২ টেবিল চামচ, আদা ও রসুনবাটা এক চা-চামচ, হলুদগুঁড়া, মরিচগুঁড়া, ধনেগুঁড়া এক চা-চামচ করে, কাঁচা মরিচ ফালি ৫টা, ধনেপাতাকুচি ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, সয়াবিন তেল ৪ টেবিল চামচ, আস্ত জলপাই ২টা।

প্রণালি

আলু ও ধুন্দল খোঁসা ফেলে কেটে ধুয়ে রাখুন আলাদা করে। মাছ কেটে ধুয়ে লবণ মাখিয়ে রাখুন। কড়াইতে সয়াবিন তেল গরম হলে পেঁয়াজকুচি হালকা ভেজে আদা ও রসুনবাটা, হলুদগুঁড়া, মরিচগুঁড়া, ধনেগুঁড়া, লবণ অল্প পানি দিয়ে কষিয়ে নিন। আলু দিয়ে ৫ মিনিট কষিয়ে সামান্য পানি দিন। তারপর ধুন্দল দিয়ে ঢাকনাসহ রান্না করুন। এবার কাঁচা পোয়া মাছ, কাঁচা মরিচ ফালি, জলপাই দিয়ে ঢাকনাসহ রান্না করুন। সব সেদ্ধ হলে ধনেপাতাকুচি দিয়ে নেড়ে নামিয়ে নিন লবণ দেখে। তৈরি হয়ে গেল জলপাই দিয়ে মাছের ঝোল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডিজনির খরচ বাঁচানোর নতুন কৌশল

ফিচার ডেস্ক
ডিজনি রিসোর্টে প্রতিটি ভ্রমণে খরচ বেড়েই চলেছে। ছবি: পেক্সেলস
ডিজনি রিসোর্টে প্রতিটি ভ্রমণে খরচ বেড়েই চলেছে। ছবি: পেক্সেলস

পার্কের টিকিট থেকে শুরু করে হোটেলে থাকা, খাবার ও উপহারের দোকানে কেনাকাটা—ডিজনি রিসোর্টে প্রতিটি ভ্রমণে খরচ বেড়েই চলেছে। পরিবারের সঙ্গে ডিজনির ছুটি কাটানো এখন এতটাই ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ডিজনির ভক্তরা তাঁদের মজা বা অভিজ্ঞতাকে কোনোভাবে আপস না করে দু-এক টাকা সাশ্রয়ের জন্য সৃজনশীল উপায় খুঁজছেন। এতে পিছিয়েও নেই ডিজনি ভক্তরা। তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন একটি উপায়, যার মাধ্যমে একে অপরকে অর্থ সাশ্রয়ে সাহায্য করতে পারেন। ডিজনি ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকেরা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় একত্র হচ্ছেন। যেখানে তাঁরা তাঁদের অবশিষ্ট বা অব্যবহৃত জিনিসপত্র ভাগ করে নিচ্ছেন। তাঁরা সেসব জিনিস আদান-প্রদান করছেন, যা ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হতো।

এর মাধ্যমে মিতব্যয়িতা ও দয়ার ওপর ভিত্তি করে একটি সম্প্রদায় তৈরি হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
এর মাধ্যমে মিতব্যয়িতা ও দয়ার ওপর ভিত্তি করে একটি সম্প্রদায় তৈরি হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুক গ্রুপ

নির্দিষ্ট ডিজনির হোটেলগুলোর জন্য ফেসবুক গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এই গ্রুপগুলোর ভেতরে ছুটি কাটাতে যাওয়া লোকেরা অন্যদের শুরুর দিকের ভ্রমণের জন্য খাবার, ডিসকাউন্টেড রিফিল পাওয়া পপকর্ন বাকেটও অফার করছেন। অবশ্য অনেকে এটিকে কোম্পানির ব্র্যান্ডিং অনুযায়ী ‘ডিজনি ম্যাজিক’ ছড়িয়ে দেওয়ার একটি পদ্ধতি হিসেবে দেখছেন। এর মাধ্যমে মিতব্যয়িতা ও দয়ার ওপর ভিত্তি করে একটি সম্প্রদায় তৈরি হচ্ছে। কেউ কেউ তাঁদের প্রি-পেইড অপশন ব্যবহার করে অন্যদের জন্য খাবারও কিনে দিচ্ছেন। একজন দর্শনার্থী পপ সেঞ্চুরি হোটেলে থাকার সময় তাঁর হোটেলের দরজায় মিকি মাউসের কান ও অন্যান্য স্যুভেনিয়ার ঝুলিয়ে রেখেছিলেন, যাতে অন্যরা সেগুলো নিতে পারেন। পরে তিনি বলেন, যেকোনো উপায়ে কাউকে টাকা বাঁচাতে সাহায্য করাটা দারুণ ব্যাপার। তিনি আরও জানান যে, থাকার শেষে যে জিনিসগুলো তিনি বাড়ি নিয়ে যেতে পারেননি, সেগুলোর একটি ব্যাগ তিনি রুমের বাইরে রেখে দেন এবং ফেসবুকে এ বিষয়ে অন্যদের জানানোর জন্য পোস্ট করেন। নিজের ডাইনিং প্ল্যানের কিছু খাবারও তিনি অন্য একটি পরিবারকে দুপুরের খাবার কিনে দিতে ব্যবহার করেছিলেন।

প্রয়োজনী জিনিস ভাগাভাগি

পারিবারিক ভ্রমণের জন্য পুশচেয়ার (স্ট্রলার) একটি অপরিহার্য জিনিস। ডিজনির ভক্তরা এগুলোও ভাগাভাগি করার উপায় খুঁজে পেয়েছেন। রোজি গার্সিয়া নামের এক মা একটি বড় পারিবারিক ভ্রমণের সময় এই সুবিধা নিয়েছিলেন। তাঁর ছয় বছরের ছেলের গোড়ালিতে আঘাত লাগলে তাঁরা অনলাইনে যোগাযোগ করে ছুটির জন্য একটি পুশচেয়ার ধার করতে সক্ষম হন। ফেবারিট গ্র্যাম্পি ট্রাভেলসের পরিচালক কার্স্টেন আন্দ্রেড ব্যাখ্যা করেন যে, কিছু গ্রুপ অতিথিদের মধ্যে জিনিসপত্র হস্তান্তরের ব্যবস্থা করার জন্য ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে। তিনি এটিকে ‘একধরনের গোপন ক্লাব, যার অংশ হতে আপনি অবশ্যই চাইবেন’ বলে মন্তব্য করেন এবং বলেন, এটি তখন ভাগ করে নেওয়া এবং ম্যাজিক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সংস্কৃতিতে পরিণত হয়।

অনেকে ব্যবহার করা জিনিস রেখে যাচ্ছেন হোটেল রুমে এবং সেই ছবি দিচ্ছেন ফেসবুক পোস্টে। ছবি: সংগৃহীত
অনেকে ব্যবহার করা জিনিস রেখে যাচ্ছেন হোটেল রুমে এবং সেই ছবি দিচ্ছেন ফেসবুক পোস্টে। ছবি: সংগৃহীত

টিকিটের মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও উদ্যোগ

এই উদ্যোগগুলো এমন এক সময়ে আসছে, যখন ডিজনি সম্প্রতি আমেরিকার তাদের দুটি বড় থিম পার্কের টিকিটমূল্য বাড়িয়েছে। অরল্যান্ডোর ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ড রিসোর্ট ও অ্যানাহেইমের ডিজনিল্যান্ড রিসোর্টের এক দিনের টিকিটের দাম বেড়েছে। পিক আওয়ারে একটি টিকিট এখন ১৯৯ ডলারের বেশি। ক্রিসমাস ও নতুন বছরের সময়ের জন্য অরল্যান্ডোর পার্কের টিকিট ২০৯ ডলার করা হয়েছে, যা বেড়েছে ৫ শতাংশ। একই সময়ে ডিজনিল্যান্ডের টিকিটের দাম ২২৪ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা ৮ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।

এই মূল্যবৃদ্ধি এমন এক সময়ে এল, যখন ডিজনি ১৯৯৮ সালে অ্যানিমেল কিংডম খোলার পর প্রথম নতুন পার্ক যুক্ত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে ডিজনির এক কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেন যে, কোম্পানি এখনো ‘জাদুকরি অভিজ্ঞতা তৈরি করার’ প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তাদের টিকিট, হোটেল ও ডাইনিং বিকল্পগুলো সব বাজেটের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই ফ্যান-টু-ফ্যান আদান-প্রদানগুলো প্রমাণ করে যে, খরচ যতই বাড়ুক না কেন, ডিজনির আসল জাদু হলো কমিউনিটি এবং একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা।

সূত্র: ডেইলি মেইল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত