Ajker Patrika

নজরুলের স্মৃতিধন্য তেওতা

সুমন্ত গুপ্ত 
আপডেট : ৩০ মে ২০২৪, ০৮: ১৮
Thumbnail image

সকাল ৮টা। আমাদের গড়ি ছুটে চলেছে নতুন গন্তব্যে। শুক্রবার, তাই রাস্তায় যানজট কম। আমাদের গন্তব্য বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত তেওতা জমিদারবাড়ি। দেশের পুরাকীর্তি স্থাপনার মধ্যে মানিকগঞ্জের তেওতা জমিদারবাড়ি উল্লেখযোগ্য।

রাস্তার পাশের কলকারখানা, গার্মেন্টস পেরিয়ে দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীর কূলঘেঁষা সবুজ শ্যামল গাছপালায় ঢাকা তেওতা গ্রাম। একে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে দিয়েছে জমিদার শ্যাম শংকর রায়ের প্রতিষ্ঠিত নবরত্ন মঠটি। একসময় জমিদারবাড়ির আঙিনার এই মঠ ঘিরে দোলপূজা আর দুর্গোৎসব পালিত হতো। জমিদারি আর জমিদার ছাপিয়ে এই তেওতা গ্রাম বিশিষ্ট হয়ে উঠেছে কবি নজরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী প্রমীলা দেবীর জন্য।

তেওতা গ্রামের বসন্ত কুমার সেন ও গিরিবালা সেন দম্পতির মেয়ে আশালতা সেন বা প্রমীলা নজরুল। তাঁর ডাকনাম দুলি। ছন্নছাড়া, ভবঘুরে নজরুল কয়েক দফায় এসেছিলেন এই গ্রামে। তবে জনশ্রুতি আছে, ১৯২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নজরুলের লেখা ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতাটি ধূমকেতু পত্রিকায় প্রকাশিত হলে ব্রিটিশ সরকার তাঁর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে। সে সময় প্রমীলাকে নিয়ে তেওতা গ্রামে আত্মগোপন করেন নজরুল।

এর আগে জমিদার কিরণ শংকর রায়ের আমন্ত্রণে অতিথি হয়ে এই গ্রামে এসেছিলেন নজরুল। সে সময়ই দেখা হয়েছিল প্রমীলার সঙ্গে। জমিদারবাড়ির পাশের বাড়ি বসন্ত কুমারের মেয়ে দুলি ছিলেন জমিদারের স্নেহধন্য। সে সময় জমিদারবাড়িতে যে গানের আসর বসত, তার একমাত্র গায়ক ছিলেন নজরুল। তার পরের ইতিহাস আমরা জানি। বিয়ের পর জমিদার কিরণ শংকর রায়ের আমন্ত্রণে নববধূকে নিয়ে আবারও তেওতায় এসেছিলেন নজরুল।

জমিদারবাড়ির ভেতরের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীততেওতা, প্রমীলা, নজরুল, কিরণ শংকর রায়ের বিস্তর ইতিহাস জেনে আমরা জমিদারবাড়ি দেখতে গেলাম। বাড়িটি এখনো তার কাঠামোয় দাঁড়িয়ে আছে। যদিও ক্ষয়ে গেছে ইটের দেয়াল। বাড়ির সামনে বিশাল পুকুরের জলে পুরো বাড়ির প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। বাড়ির সামনে বহুতল মন্দির। কারুকাজ করা মন্দিরটি বিলীন হওয়ার পথে। এখনো যেটুকু সৌন্দর্য অবশিষ্ট রয়েছে, তার আকর্ষণও কম নয়। ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়ল দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। সেটি বেয়ে ওপরে উঠে গেলাম। ছাদ থেকে পুরো বাড়ি দেখা যায়। বাড়ির সামনে মাঠ, তার কোনায় একটি কুয়া। মাঠে থাকা টিনের তৈরি কাছারিবাড়িটির এখানে-সেখানে ভেঙে গেছে। দেখে মন খারাপ হয়।

তেওতা রাজবাড়ি দেখে আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখতে গেলাম। তারপর সোজা আরিচা ঘাট। নদীর পাড়ে শেষ বিকেল কাটিয়ে আবার সেই জাদুর শহরে।

জমিদারবাড়ির একাংশ। ছবি: সংগৃহীতকীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে আরিচার দূরত্ব ৯০ কিলোমিটারের মতো। লোকাল বাসে তিন ঘণ্টার মতো সময় লাগবে যেতে। গাবতলী থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস পাওয়া যায় আরিচা পর্যন্ত। সেখান থেকে রিকশায় ৩০ টাকা ভাড়ায় যাওয়া যাবে তেওতা জমিদারবাড়ি। এ ছাড়া যমুনা নদী ধরে দেশের যেকোনো পয়েন্ট থেকে তেওতা জমিদারবাড়িতে আসা যাবে।দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে গাড়িতে মানিকগঞ্জে গিয়ে সেখান থেকে তেওতা যাওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত