Ajker Patrika

পূজায় হোক হেরিটেজ ভ্রমণ

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৭: ৫১
পূজায় হোক হেরিটেজ ভ্রমণ

বোধন পেরিয়ে দুর্গাপূজার মূল পর্ব শুরু হয়ে গেছে। ঢাকের শব্দ আর ধূপের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। আজ মহাসপ্তমী। মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরাঘুরিরও শুরু। 
দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় আচার-প্রথার প্রদর্শন নয়; এর সঙ্গে যেমন জড়িয়ে আছে ধর্ম, তেমনি যুক্ত আছে এ অঞ্চলের সংস্কৃতির এক বিশাল অংশ। প্রতিমা তৈরি নিজেই একটি সুপ্রাচীন শিল্প। এর সঙ্গে রয়েছে সাজসজ্জা ও খাদ্যের অনুষঙ্গ। ধর্মীয় কারণে এর সময়সূচি ও প্রার্থনাপদ্ধতি শাস্ত্রবদ্ধ হলেও বিভিন্ন অঞ্চলের নিজস্ব সংস্কৃতির ছাপ আছে পূজার বিভিন্ন পর্বে।

পুরো দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রাচীন কিছু পূজা হয়। সেগুলোর কোনো কোনোটির বয়স পেরিয়ে গেছে শত বছর। ফলে সেগুলো নিজেরাই হয়ে উঠেছে ঐতিহ্য আর ইতিহাসের অংশ। আর কোনো কোনো মণ্ডপে ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমকালীন প্রভাব। এই পূজায় ঘুরতে পারেন মন্দিরের প্রাচীনত্ব, প্রতিমার বিশেষত্ব কিংবা সংস্কৃতির বৈচিত্র্য দেখতে। আর অবশ্যই মেলা দেখতে। না দেখলে বোঝা যায় না বর্ণিল মেলাগুলো আমাদের বর্ণাঢ্য সংস্কৃতির কতটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

রাজশাহীর প্রাচীন পূজা
আমাদের দেশের প্রাচীনতম জনপদগুলোর মধ্যে রাজশাহী অন্যতম। এই প্রাচীন অঞ্চলে দুর্গাপূজার ইতিহাসও তাই প্রাচীন। ইতিহাস জানাচ্ছে, ষোলো শতকের প্রথম দিকে রাজা কংসনারায়ণ রাজশাহীর তাহেরপুরে পাশাপাশি চারটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে জায়গাটি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে। এই মন্দিরেই প্রথম শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রচলন করেন রাজা কংসনারায়ণ। প্রায় ৬০ বছর সে মন্দিরে দুর্গাপূজা বন্ধ ছিল। ২০১২ সালে মন্দিরটি সংস্কারের পর আবার সেখানে দুর্গাপূজার উৎসব শুরু হয়। এই ঐতিহাসিক মন্দিরে এবারও দুর্গাপূজা হচ্ছে। ঘুরে আসতে পারেন।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমতলা গ্রামের মণ্ডপে দুর্গাপূজা হয় ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে। এখানে পূজা দেখতে যেতে পারেন যে কেউ। এখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে আছে নরোত্তম ঠাকুরের প্রেমতলী খেতুরী ধাম। এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র ও ঐতিহাসিক জায়গা। দেশের এই একমাত্র ধামে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আসেন। এসব ঐতিহাসিক মন্দির ও জায়গা ছাড়াও প্রতিবছর শারদীয়া দুর্গোৎসব করে রাজশাহীর টাইগার সংঘ। শহরের রানীবাজারে এই মণ্ডপে প্রতিবছর সমসাময়িক বিষয় ও হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে বানানো হয় পূজার থিম।

সিলেটের প্রাচীন ঐতিহ্য
রাজশাহীর দুর্গাপূজার প্রাচীন ঐতিহ্য আছে সিলেটের। জানা যায়, সেখানে দুর্গাপূজার প্রচলন হয় ১৮১১ সালের দিকে জগৎ গুপ্ত ও তাঁর ভাই জগন্নাথ গুপ্তর হাত ধরে; নাজিরবাজারের বাগরখলা গ্রামে। সে পূজা এখন আর নেই। ১৮৪০ থেকে ১৮৫৩ সালের মধ্যে এখানে আরও কিছু দুর্গাপূজা শুরু হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। এই সমৃদ্ধ ইতিহাসের ওপর দাঁড়িয়ে পুরো সিলেটে এখন দুর্গাপূজা হয়। সেগুলোও বেশ সমৃদ্ধ এবং জাঁকজমকপূর্ণ। নগরীর নাইওরপুলের রামকৃষ্ণ মিশন মণ্ডপ, বলরাম জিউ আখড়া, মাছুদিঘিরপারের ত্রিনয়নী, মণিপুরি রাজবাড়ি, লামাবাজার তিন মন্দির, মাছিমপুর মণিপুরিপাড়া, মাছিমপুর কুরিপাড়া, দুর্গাবাড়ি, বালুচর, দাড়িয়াপাড়ার চৈতালি সংঘ, সনাতন যুব ফোরাম, জিন্দাবাজার, জল্লারপাড়ের সত্যম শিবম সুন্দরম, আম্বরখানা, শিববাড়িসহ বিভিন্ন মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে।

প্রাচীনতায় যশোর
যশোরে ১০১ বছর ধরে হয়ে আসছে মশিয়াহাটির দুর্গাপূজা। এখানে দুর্গা প্রতিমার বাইরে রামায়ণ-মহাভারতের বিভিন্ন চরিত্রও তৈরি করা হয়। তবে এবার ভবদহ অঞ্চলজুড়ে জলাবদ্ধতা থাকায় এখানে আয়োজন করা হয়েছে অনাড়ম্বরভাবে।

যশোর শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে চাঁচড়া গ্রাম। এ গ্রামে শিবমন্দিরের বয়স প্রায় সাড়ে ৩৫০ বছর। এ মন্দিরের পাশে প্যান্ডেল বানিয়ে জাঁকজমকের সঙ্গে শারদীয় দুর্গোৎসব হয়। দর্শনার্থীদের প্রতিমার নান্দনিকতার পাশাপাশি আকর্ষণ থাকে প্রাচীন আটচালা স্থাপনার শিবমন্দিরটির দিকে।

যশোর সদরের রামনগর মুড়লীতে যশোর-খুলনা মহাসড়কের উত্তরে আছে জোড়া শিবমন্দির। মনে করা হয়, এটির বয়স ৮৫০ বছর। ঐতিহাসিক এই মন্দিরে ২০১২ সাল থেকে জাঁকজমকের সঙ্গে শারদীয় দুর্গোৎসব হয়ে আসছে। প্রতিমা দর্শনের পাশাপাশি এ মন্দির দেখতেও যশোরে যেতে পারেন যে কেউ।

Taherpur-Photoঢাকার আকর্ষণ কোথায়
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির। এটি দেশের প্রাচীন মন্দিরও বটে। পলাশীর মোড়ের পাশে ঢাকেশ্বরী রোডে মন্দিরটির অবস্থান। এই প্রাচীন মন্দিরে বরাবরই আড়ম্বরপূর্ণ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকায় এটি অবশ্যদ্রষ্টব্য মন্দির।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে রমনা কালীমন্দিরের অবস্থান। এটিও দেশের অন্যতম প্রাচীন মন্দির। মেট্রোরেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে নামলেই কালীমন্দির গেট।টিকাটুলীতে রামকৃষ্ণ মিশন। দেশের হাতে গোনা যে কটি মন্দিরে কুমারীপূজা হয়, এটি তার অন্যতম। মহাষ্টমীতে কুমারীপূজা হয়। এ মন্দিরও ঐতিহ্যবাহী। আলোকসজ্জা, প্রতিমার সৌন্দর্য, প্রবেশদ্বার, অভ্যন্তরীণ কাঠামোশৈলী এবং প্যান্ডেলের কারণে বিখ্যাত খামারবাড়ি পূজামণ্ডপ। এ ছাড়া পুরান ঢাকায় অসংখ্য মণ্ডপে পূজা হয়। এখানকার লক্ষ্মীবাজার, শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার ইত্যাদি এলাকার সরু গলির ভেতরেই আয়োজিত হয় দুর্গাপূজা। এ সময় জমজমাট থাকে পুরো এলাকা। হেঁটে হেঁটেই এসব মণ্ডপ ঘুরতে হয়। পুরান ঢাকায় পূজা দেখার অন্যতম আকর্ষণ এখানকার বিভিন্ন খাবার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলেও দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। ঢাকায় এটিও প্রসিদ্ধ আয়োজন। এ ছাড়া উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ইত্যাদি জায়গায়ও জাঁকজমকের সঙ্গে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

জাপা ও আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না: জি এম কাদের

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: তরকারিতে লবণ বেশি হলেই তুলকালাম বাধাবেন না

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৩৪
আজকের রাশিফল: তরকারিতে লবণ বেশি হলেই তুলকালাম বাধাবেন না

মেষ

আজ আপনার রাগের তেজ এতটা বাড়বে যে আপনি ভুল করে নিজের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলটাই ডিলিট করে দিতে পারেন। শুধু তা-ই নয়, রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে পড়লে মনে হবে যেন পৃথিবীর সব গাড়ি একজোট হয়ে শুধু আপনার কাজেই বাগড়া দিতে এসেছে। আবেগের বশে আজ ভুলেও অনলাইনে কিছু অর্ডার করবেন না। কারণ, আপনি এমন কিছু কিনে ফেলবেন, যা আসলে আপনার দরকার নেই। প্রেমের ক্ষেত্রেও ‘আমিই ঠিক’ এই মনোভাব ত্যাগ করুন, নইলে আজকের সন্ধ্যাটা সাইলেন্ট ট্রিটমেন্টে কাটবে। আজ আপনার রাগ নয়, আপনার মাউস এবং গাড়ির হর্ন কন্ট্রোল করুন।

বৃষ

আজ সারা দিন আপনার ডায়েট প্ল্যান আপনাকে ৫০ বার ফোন করবে, কিন্তু আপনি প্রতিবারই ফোন কেটে দিয়ে ফ্রিজের দিকে দৌড়াবেন। কাজকর্মে গতি খুবই কম থাকবে। ছুটির দিনেও আজ অফিস থাকলে আপনার বস মনে করবেন আপনি বুঝি ধ্যানে বসেছেন, কিন্তু আসলে আপনি ভাবছেন লাঞ্চে কী খাবেন। বিকেলে টাকাপয়সার একটা ভালো সুযোগ আসতে পারে, তবে সেটা এত ধীরে আসবে যে আপনি সেটাকে উপেক্ষা করে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। শুভ রং: আলুর চিপসের প্যাকেটের রং! আর হ্যাঁ, আজ কারও ধার শোধ করবেন না। কারণ, টাকাটা পকেটে কিছুক্ষণ রেখে নির্ভার অনুভব করাও জরুরি!

মিথুন

আপনার মস্তিষ্ক আজ দুটো চরম বুদ্ধি দেবে: এক, একটি পডকাস্ট শুরু করা; আর দুই, পুরো দিনটি ঘুমিয়ে কাটানো। দুঃখের খবর হলো, দুটোই আপনি করতে পারবেন না। সারা দিন শুধু ‘কী করব, কী করব না’ করে কাটিয়ে দেবেন। কোনো একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনি কমপক্ষে তিনজন বন্ধুকে ফোন করে বিভ্রান্ত হবেন এবং শেষে গিয়ে প্রথম যে আইডিয়া এসেছিল, সেটাই করবেন। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা জমার সম্ভাবনা আছে, কিন্তু কোন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতেই রাত কাবার হয়ে যাবে।

কর্কট

আজ আপনার ওভার থিংকিং ক্ষমতা তুঙ্গে! আপনি এক ঘণ্টা ধরে চিন্তা করবেন যে আপনার ঘরের মানিপ্ল্যান্টটা কেন বিষণ্ন দেখাচ্ছে, কিংবা পাঁচ বছর আগে বলা একটা কথার আসল মানে কী ছিল। কর্মক্ষেত্রে কেউ একটু কড়া কথা বললেই আপনি মনে করবেন, পৃথিবীর সবথেকে খারাপ লোক আপনিই! আবেগের এমন বাড়াবাড়ি হবে যে, আপনি হয়তো দুপুরের খাবারে সামান্য লবণ কম থাকার কারণে কেঁদেও ফেলতে পারেন। সমাধান একটাই: বালিশ জড়িয়ে ধরুন অথবা পছন্দের খাবার খান। পৃথিবীর সব দুঃখ আপনার একার নয়, আর রান্নাতেও সামান্য ভুল হতেই পারে।

সিংহ

আজকে স্পটলাইট আপনার দিকেই। যদি কেউ আপনার নতুন পোশাকটা লক্ষ না করে, তাহলে নাটকীয় ভঙ্গিতে একবার হোঁচট খান বা টেবিলের ওপর উঠে নাচতে শুরু করুন। নিশ্চিত থাকুন, মনোযোগ আপনার দিকে আসবেই! কর্মক্ষেত্রে আপনার ধারণাগুলো খুবই ভালো, কিন্তু সেগুলোকে এমন ভাবে পরিবেশন করবেন যেন আপনি কোনো হলিউড ব্লকবাস্টারের স্ক্রিপ্ট বলছেন। প্রেমের ক্ষেত্রেও আজ সামান্য সমস্যাকে ‘টাইটানিক ডুবছে’ এমন রূপ দেবেন। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত আলো মাঝে মাঝে চোখ ধাঁধিয়ে দেয়!

কন্যা

আপনি আজ রাস্তায় একটি টাইপো খুঁজে পাবেন এবং স্থানীয় পৌরসভার সঙ্গে সারা দিন সেটার বানান সংশোধন নিয়ে ঝগড়া করবেন। শান্ত হোন, মহাবিশ্বও আপনার ওয়ারড্রবের মতোই অগোছালো। আজকের দিনে আপনার স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত উদ্বেগ একটু বাড়বে। সামান্য কাশি হলেই গুগল করে ক্যানসারর বা দুর্লভ রোগের লক্ষণ খুঁজবেন। আর্থিক দিক দিয়ে আপনি খুব হিসাবি, কিন্তু সেই হিসাবের খাতা মেলাতে গিয়ে এত মানসিক চাপ হবে যে, এক প্যাকেট রসগোল্লা কিনে সেই স্ট্রেস কমাতে হবে।

তুলা

চা না কফি, এ নিয়েই ৪৫ মিনিট ধরে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবেন। এই তীব্র দ্বিধার ফলস্বরূপ যে তৃষ্ণা পাবে, সেটাই হবে আপনার আজকের দিনের আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা। কেউ ঝগড়া করলে মধ্যস্থতা করতে যাবেন, কিন্তু এমন নিরপেক্ষ হতে চাইবেন যে দুই পক্ষই আপনাকে ভুল বুঝবে। তাই অন্যের সমস্যা সমাধান নয়, বরং নিজের জীবনে সৌন্দর্য খুঁজুন। ধরুন, একটা নতুন পর্দা কিনবেন। ব্যস, নীল না সবুজ, এই ভাবতে ভাবতেই আপনার দিন শেষ! ভারসাম্য খুঁজুন, পানীয় বা রং নয়!

বৃশ্চিক

কেউ আপনার নামে আজ বাজে কথা বলার চেষ্টা করবে। কিন্তু তারা জানে না, আপনার প্রতিশোধ নেওয়ার দরকার নেই। গ্রহ-নক্ষত্ররাই সেই কাজটা আপনার হয়ে গুছিয়ে দেবে। আপনি সারা দিন এমন এক গভীর চাহনি নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন যে সবাই আপনাকে দেখে ভাববে, আপনি হয় কোনো গুপ্তচর বা কোনো গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। বসের ওপর রাগ হলে মুখে কিছু বলবেন না, শুধু ডায়েরিতে তার নামটা লিখে লাল কালিতে ক্রস চিহ্ন দিয়ে রাখুন। রহস্যময় থাকুন, চুপ থাকুন, আর মজা দেখুন। প্রেমিকার প্রশ্নের উত্তর দেবেন একটি রহস্যময় হাসি দিয়ে, তাহলেই কেল্লা ফতে!

ধনু

আজ আপনার মধ্যে উগান্ডাতে ফ্লাইট বুক করার এক নিয়ন্ত্রণহীন তাগিদ জন্মাবে! মানিব্যাগ হাতে নিয়ে একবার আকাশের দিকে তাকান—সে আপনাকে থামতে বলছে। আজ আপনার মন থাকবে চরম বোহেমিয়ান। হয় আপনি বিশ্বের সবথেকে অনুপ্রেরণামূলক দার্শনিক হয়ে উঠবেন, নয়তো গভীর রাতে পাড়ার মোড়ে ফুচকা খেতে যাবেন। সাবধান: বসের কাছে একদম সত্যি কথা বলতে যাবেন না। আপনার ‘সৎ’ মন্তব্য আজ বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে।

মকর

আরে বাবা, কাজপাগল মানুষ! একটা দিন বিশ্রাম নিন। আপনার বস আপনাকে আজ এই ছুটির দিনেও ই-মেইল করবে। আপনি রোববার উত্তর দিন। আজকের দিনটির একমাত্র চ্যালেঞ্জ—কাজ না করে বসে থাকা। যদি আপনি আজ কোনো পার্টির আমন্ত্রণ পান, আপনি সেখানেও নেটওয়ার্কিংয়ের চেষ্টা করবেন। আপনার মস্তিষ্ক ছুটি চায় না, সে শুধু প্রমোশনের কথা ভাবে। প্রেমিকার দেওয়া উপহারের দাম হিসাব করা বন্ধ করুন। মনে রাখবেন, শুধু টাকা দিয়ে নয়, জীবনটা মাঝেমধ্যে একটু ‘ফালতু’ কাজ করেও উপভোগ করা যায়।

কুম্ভ

আপনার আজকের বিপ্লবী আইডিয়া হলো, পুরোনো মোজাগুলোকে থালা ধোয়ার কাজে লাগানো! এই ধরনের উদ্ভাবন আপাতত স্থগিত রাখুন। দয়া করে পরিষ্কার করার জন্য প্রচলিত জিনিস ব্যবহার করুন। আজ আপনার বন্ধুরা আপনাকে ‘এলিয়েন’ বলে ডাকলে অবাক হবেন না। কারণ, আপনার আইডিয়াগুলো আজকের দিনের তুলনায় ১০০ বছর এগিয়ে থাকবে! কারও সঙ্গে তর্ক হলে যুক্তি দিয়ে নয়, বরং আপনার উদ্ভট তত্ত্ব দিয়ে তাকে চুপ করিয়ে দেবেন। এটাই আপনার স্পেশালিটি!

মীন

আজ আপনি স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তব গুলিয়ে ফেলবেন। স্বপ্নে পাওয়া জাদুর আলু-পটোল দিয়ে মুদি দোকানের বিল মেটানোর চেষ্টা করবেন না। দিনের বেলায় দিবাস্বপ্ন দেখার জন্য আপনি নোবেল পুরস্কার পেলে পেতেও পারেন! আপনার মন আজ কল্পনার জগতে এমনভাবে ডুবে থাকবে যে আপনি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের সময়ও হয়তো রংধনু দেখতে পাবেন। জরুরি ফোনকলের উত্তর দিন, কিন্তু ‘এই মুহূর্তে উড়ন্ত গালিচায় করে যাচ্ছিলাম’—দয়া করে এমন উদ্ভট কথা বলবেন না। বাস্তব জগতে ফিরে আসুন—আজকে কিছু বিল মেটাতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

জাপা ও আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না: জি এম কাদের

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তুক-অ-দামতুয়া ঝরনায় রহস্যময় সময়

মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম 
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৫৩
তুক-অ-দামতুয়া ঝরনায় রহস্যময় সময়

তুক-অ-দামতুয়া নামটির মাঝেই রয়েছে অদ্ভুত এক রহস্য। তার ওপর এটি একটি ঝরনার নাম। এমনিতেই পাহাড়প্রেমীদের ছোট-বড় যেকোনো ঝরনার প্রতি রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা। সেটা যদি হয় দৈত্যাকার, তাহলে তো কথাই নেই।

বান্দরবানের গহিনে থাকা তুক-অ-দামতুয়া ইদানীং সাধারণ পর্যটকদের ভ্রমণ তালিকায় উঠে এসেছে। সে কারণেই একদিন বন্ধুরা মিলে হাঁড়ি-পাতিল আর বোঁচকা নিয়ে রাতের গাড়িতে উঠে খুব ভোরে গিয়ে নামলাম চকরিয়া। তারপর চান্দের গাড়িতে আলীকদম উপজেলার সতেরো কিলো নামক জায়গায়। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে নাজেম নামের চালকটি হেলিকপ্টারের গতিতেই নিয়ে গেলেন আমাদের! আড়াই ঘণ্টার পথ চলতে কখনো কখনো মনে হয়েছে, এই বুঝি চান্দের গাড়ি উড়াল দিল আকাশে।

দশ কিলো থ্যিঙ্কু পাড়া এসে কষে ব্রেক করে দাঁড়াল আমাদের গাড়ি। আর্মি চেকপোস্ট। নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ করে অনুমতি নেওয়া হলো। তারপর আবার ছুট। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম সতেরো কিলো। গাইড আগেই উপস্থিত ছিলেন সেখানে। পরিচয় পর্ব শেষে তাঁর পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করলাম আমরা। যাচ্ছি আদু পাড়ার দিকে। পাড়ায় গিয়ে তাঁর ঘরে বাড়তি মালপত্র রেখে, পাহাড়ের পরম বন্ধু নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের বাঁশ নিয়ে সবাই ছুটলাম দামতুয়ার দিকে।

কথা সেই একটিই, দেখতে হলে হাঁটতে হবে। রীতিমতো মন ও দেহের সঙ্গে লড়াই করে হাঁটতে হচ্ছে। মাথার ওপর প্রখর রোদ। চোখের সামনে শুধুই উঁচু উঁচু পাহাড়। হাঁটছি, উঠছি, নামছি! মাঝেমধ্যে ঝিরির পানি চোখে-মুখে ছিটিয়ে জিরিয়ে নিচ্ছি।

দূর পাহাড়ের নয়ন জুড়ানো সৌন্দর্য মনের শক্তি বাড়িয়েছিল বহুগুণ। প্রায় তিন ঘণ্টা ট্রেকিং করার পর কানে ভেসে এল ঝরনার পানির শব্দ! কিন্তু চোখের সামনে বাঁশবন আর নানান গাছে ঘেরা খাড়া পিচ্ছিল পথ। নামতে হবে নিচের দিকে। একটু এদিক-সেদিক হলেই সুচালো বাঁশ দেহের কোথায় গিয়ে গেঁথে যাবে, কেউ জানে না। তবু পেতে হবে দামতুয়ার কোমল পরশ।

বহু কষ্টে নিচে নেমে চক্ষু একেবারে ছানাবড়া! বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম বিশালা ঝরনার দিকে, একেবারে হাঁ করে। দুপাশ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। একেবারে বুনো পরিবেশে দামতুয়া চোখের সামনে! নির্বাক হয়ে যাওয়ার আগে এর উচ্চতা মাপি মনে মনে।

নব্বই থেকে এক শ ফুট উঁচু না হয়েই যায় না দামতুয়া।

বর্ষা শেষে শরৎ পেরিয়ে হেমন্ত।

তুক-অ-দামতুয়ার উচ্ছলতা এখনো কমেনি। গাইড জানালেন, সারা বছর এ ঝরনায় পানির প্রবাহ থাকে। বেশ উচ্চতা আর অনেকখানি জায়গাজুড়ে প্রচণ্ড বেগে পানি নেমে আসে এখানে।

এই কারণে ঝরনার সামনে বিশাল জলাশয় তৈরি হয়েছে। সেই প্রাকৃতিক সুইমিংপুলে সাঁতার না কাটলে চলে! বান্দরবানের অন্যান্য ঝরনার চেয়ে দামতুয়ার ভৌগোলিক আকৃতি ভিন্ন রকম। অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয়েছে। মুরং ভাষা থেকে আসা ‘তুক-অ-দামতুয়া’ শব্দের অর্থটাও বেশ চমৎকার। তুক অর্থ ব্যাঙ, অ অর্থ ঝিরি আর দামতুয়া মানে খাড়া। অর্থাৎ এই খাড়া ঝিরির উজান ঠেলে ব্যাঙ বা মাছ ওপরের দিকে উঠতে পারে না বলে এই ঝরনার এমন নাম। আমাদের গাইড ছিলের মুরং সম্প্রদায়ের মানুষ। তিনিই জানালেন এসব।

ঝরনার উৎস দেখার পালা এবার। চরাই-উতরাই পেরিয়ে দেখা গেল এক সবুজে ঘেরা ঝিরি। বড় বড় কিছু পাথর পেরিয়ে একেবারে তার কাছে চলে গেলাম। বেশ চমৎকার একটা জায়গা। এই ঝিরির পানি দামতুয়া হয়ে ঝরে পড়ে নিচের প্রাকৃতিক সুইমিংপুলে।

এই ঝিরির নাম ব্যাঙ ঝিরি। সাধারণত ঝিরির নাম অনুসারে ঝরনাগুলোর নামকরণ হয়।

ব্যাঙ ঝিরির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সময়জ্ঞান প্রায় ভুলতে বসেছিলাম সবাই। গাইডের ডাকে আবার শুরু হলো ট্রেকিং। এই পাহাড়-জঙ্গলের গহিনে গাইডই তখন ক্যাপ্টেন। তাঁর নির্দেশ অমান্য করার উপায় নেই। আমরা আদুপাড়ার পথ ধরি। গাইড জানালেন, আবারও প্রায় নয় মাইল চড়াই-উতরাই পেরোতে হবে!

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। এমনিতেই পাহাড়ে সন্ধ্যা আসে ঝুপ করে। দুপুরে শুকনো দুই-চার পিস বিস্কুট ছাড়া তেমন কিছুই পড়েনি পেটে। তাই খিচুড়ির এন্তেজাম হবে রাতে। হাঁটছি ধীরে ধীরে, একেবারে উদ্দেশ্যপূর্ণ কারণে। আজ পূর্ণিমা। পাহাড়ের নির্জনতায় ভরা জোছনার আলো সঙ্গী করে হাঁটব। পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই আমি মনে মনে কিছুটা উদ্দীপিত। এ রকম সুযোগ সব সময় মেলে না।

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। আকাশছোঁয়া পাহাড় টপকে গোলাকার চাঁদ উঁকি দিল আকাশে। নিঝুম অন্ধকার পাহাড়ের চারপাশ আলোকিত হয়ে পড়ল। গাছের পাতাগুলো সবুজের মাঝে সোনালি বর্ণ ধারণ করল। অসাধারণ এক অনুভূতি। সবার মনে বিস্ময়ের দোলা। এখন আর কারও ফেরার তাড়া নেই। তবু ফিরতে হচ্ছে এই অলৌকিক রাতে।

যাবেন যেভাবে

ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবানের আলীকদমে বাস যায়। সেখান থেকে মোটরবাইক কিংবা চান্দের গাড়িতে যেতে হবে সতেরো কিলো এলাকায়। সেখানকার চা-দোকানিদের সহায়তা নিয়ে পেয়ে যাবেন গাইড। তাঁকে ছাড়া পাহাড়ে যাওয়া ঠিক হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

জাপা ও আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না: জি এম কাদের

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাত মিনিটে চুরি হলো সাত রাজার ধন

মইনুল হাসান, ফ্রান্স
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ০০
তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রী সম্রাজ্ঞী ইউজেনির মুকুট। এতে ছিল ২ হাজার হীরা। এর মধ্যে সব থেকে বড় হীরা ১৪০ ক্যারেটের।  ছবি: লুভর জাদুঘর
তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রী সম্রাজ্ঞী ইউজেনির মুকুট। এতে ছিল ২ হাজার হীরা। এর মধ্যে সব থেকে বড় হীরা ১৪০ ক্যারেটের। ছবি: লুভর জাদুঘর

গত রোববার ১৯ অক্টোবর, সকাল ৯টা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। অফিস পাড়ায় ভিড় নেই। রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। সকালের ঠান্ডা এ সময়ে তীব্র নয়। পুব আকাশে তখনো সূর্য অনেকটাই রক্তিম। নগরজীবনের প্রাণচাঞ্চল্য প্রকৃতির উষ্ণতায় আচ্ছাদিত। চারদিকে সুনসান। সবেমাত্র ঐতিহাসিক লুভর জাদুঘরের প্রধান ফটক দর্শনার্থীর জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে কৌতূহলী দর্শনার্থীরা অতীত ইতিহাসের বর্ণাঢ্য জগতে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে নানান ভাষাভাষী দর্শনার্থীর ভিড় জমতে শুরু করেছে কাচ আর ইস্পাতে ঘেরা অনুপম পিরামিডের চৌদিকে, নেপোলিয়ন চত্বরে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ক্যামেরার চোখ সর্বত্র। নিরাপত্তাপ্রহরীরা ইগল দৃষ্টিতে চারদিকে খেয়াল রাখছেন, পাহারা দিচ্ছেন। বহু স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা সর্বত্র।

বিশ্বের এক নম্বর জাদুঘর প্যারিসের এই লুভর। বলা যায় জাদুঘরের এক উজ্জ্বল আইকন। অনেক কিংবদন্তি আছে এই বিস্ময়কর রহস্যময় স্থাপত্য সৌকর্যের অনুপম দৃষ্টান্ত এই রাজপ্রাসাদ নিয়ে। ১৫৪৬ সালে ফরাসি রাজা প্রথম ফ্রঁসোয়া এই ভবন ফরাসি রাজাদের মূল বাসভবনে রূপান্তর করেন। এরপর বহুবার ভবনটি সম্প্রসারণ করা হলে বর্তমান রূপ পায়। ১৬৮২ সালে ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুই তাঁর বাসভবন ভার্সাই প্রাসাদে স্থানান্তর করেন। তখন এই প্রাসাদ রাজকীয় সংগ্রহশালার চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্যের প্রদর্শনী কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

লুভর জাদুঘর। ছবি: লেখক
লুভর জাদুঘর। ছবি: লেখক

ফরাসি বিপ্লবের চার বছর পর, ১৭৯৩ সালে ৫৩৭টি শিল্পকর্ম নিয়ে লুভর প্রাসাদটি ‘কেন্দ্রীয় শিল্পকলা জাদুঘর’ নামে উদ্বোধন করা হয়। সেই থেকে বর্তমান জাদুঘরের যাত্রা শুরু। এখানে রক্ষিত আছে মোট ৪ লাখ ৬০ হাজার বস্তু-প্রদর্শনী। এর মধ্যে হাজার পঁয়ত্রিশেক বস্তু দর্শনার্থীর প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে। একনাগাড়ে এর প্রতিটি বস্তু দেখতে ১০ সেকেন্ড করে ব্যয় করলেও শেষ করতে সময় লাগবে তিন থেকে চার দিন। লুভর প্রাসাদে কক্ষ আছে ৪০৩টি, মেঝের আয়তন ২৬ লাখ বর্গফুটের বেশি। সব কটি করিডর ঘুরে এলে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ হাঁটা হবে। সিঁড়িতে আছে ১০ হাজার ধাপ এবং ৭০টির মতো লিফট। এই জাদুঘর পরিচালনায় আছেন প্রায় ২ হাজার কর্মচারী। তাঁদের মধ্যে শুধু নিরাপত্তাপ্রহরীর সংখ্যাই হচ্ছে ১ হাজার ৩৬৬ জন। এটি বর্তমান সময়ে বিশ্বের বৃহত্তম জাদুঘর হিসেবে বিখ্যাত। গত বছর প্রায় ৯০ লাখ দর্শনার্থী প্রবেশ করেছিল এই জাদুর জাদুঘরে।

তবে ১৯ অক্টোবর এই জাদুঘরে ঢুকেছিলেন দুজন বিশেষ ব্যক্তি। তাঁরা দর্শনার্থী ছিলেন না, ছিলেন না কোনো সাধারণ চোর। অনেকে বলেন, রাজরত্ন চুরি করতে সবার চোখে ধুলো দিয়ে প্রাসাদে প্রবেশ করেছিলেন ‘চোরের রাজা’ কিংবা ‘জাদুকর চোর’। ঘড়ির কাঁটা যখন সকাল ৯টার ঘরে, তখন সেন নদীর ডান তীরের রাস্তা ধরে ধীরে ধীরে বিশ্বের সেরা জাদুঘর লুভর প্রাসাদের দিকে এগিয়েছেন দুটি টিম্যাক্স ইয়ামাহা মোটরবাইকে করে দুজন চালক। আর তাঁদের পেছনে ধাতব মইবাহী একটি লরি। তাতে সাধারণ শ্রমিকের পোশাকে আরও দুজন ব্যক্তি। মই বহনকারী লরিটি রাস্তার পাশে, লুভর জাদুঘরের এক কোণ ঘেঁষে থামল। লরি থেকে মুখ ঢাকা দুজন ব্যক্তি নেমে এলেন। একজনের পরনে উজ্জ্বল হলুদ এবং অন্যজন গায়ে চড়িয়েছেন উজ্জ্বল কমলা রঙের পোশাক। নগরীর বিভিন্ন স্থানে এমন পোশাক পরা, কাজে ব্যস্ত শ্রমিকদের দেখতে সবাই অভ্যস্ত। তাই তাঁদের দেখে কেউ তেমন সন্দেহ করেনি। তখন ঠিক ৯টা ৩০ মিনিট।

চুরি করতে ব্যবহৃত মইবাহী লরি ও ধাতব মই। ছবি: লু পারিজিয়ান
চুরি করতে ব্যবহৃত মইবাহী লরি ও ধাতব মই। ছবি: লু পারিজিয়ান

দুজন তস্কর কাচ ও ইস্পাত কাটার যন্ত্র হাতে, মই দিয়ে তরতর করে উঠে গেলেন প্রথম তলায়। একটি জানালার কাচ আর গ্রিল কেটে ঢুকে গেলেন অ্যাপোলো গ্যালারিতে। সে সময়ে গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন জনা দশেক দর্শনার্থী। তখন ৯টা ৩৪ মিনিট। প্রচণ্ড ক্ষিপ্রতায় দুটি কাচের প্রদর্শনী বাক্স কেটে হাতিয়ে নেওয়া হলো ফরাসি রাজপরিবারের বহু পুরোনো বহুরত্নখচিত ৮টি অমূল্য অলংকার—নীলকান্তমণি, পান্না আর হীরার বহুপ্রাচীন সব গয়না। মোট ৮ হাজার হীরা ছিল তাতে! রানি মেরি-অ্যামেলির নেকলেসে ছিল ৮টি নীলকান্তমণি আর ৬৩১টি হীরা। তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রী সম্রাজ্ঞী ইউজেনির মুকুটে খচিত ছিল ২ হাজার হীরা। এর মধ্যে সব থেকে বড় হীরা ১৪০ ক্যারেটের।

ইতিমধ্যে, জাদুঘরের বাইরে অপেক্ষমাণ ডিউটি টিম্যাক্স ইয়ামাহা মোটরবাইকের দুই স্মার্ট চালক অস্থির হয়ে উঠলেন। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই, রাজরত্ন চুরি করে অতি নিপুণ, দুর্ধর্ষ চারজন তস্কর মোটরবাইকে করে লাপাত্তা হয়ে গেলেন। তীব্র শব্দে বেজে উঠল সতর্কসংকেত। সেই সংকেত সরাসরি পৌঁছে গেল ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। নগরীর শান্ত প্রভাতের নীরবতায় ছেদ ঘটিয়ে চারদিকে পুলিশের সাইরেন। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তখন সকাল ৯টা ৩৭ মিনিট। মাত্র সাত মিনিটে ঘটল শতাব্দীর সেরা চুরি!

রানি মেরি-অ্যামেলির নেকলেস। তাতে ছিল ৮টি নীলকান্তমণি আর ৬৩১টি হীরা। সূত্র: লুভর জাদুঘর
রানি মেরি-অ্যামেলির নেকলেস। তাতে ছিল ৮টি নীলকান্তমণি আর ৬৩১টি হীরা। সূত্র: লুভর জাদুঘর

ফরাসি জাতির ইতিহাসের অংশ অমূল্য ধন, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির এমন চুরির খবর আলোর গতিতে ছড়িয়ে পড়ল পৃথিবীর সব প্রান্তে। চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলো সংবাদমাধ্যমে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরব হলো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভিরমি খেলেন। রোববারে একটু আলস্য করবেন বলে ঠিক করেছিলেন সদা ব্যস্ত সংস্কৃতিমন্ত্রী। তা না করে ছুটে গেলেন ক্ষয়ক্ষতি সরেজমিনে দেখতে। বাঘা বাঘা বিশেষজ্ঞ চুরি যাওয়া রত্ন ও অলংকারের অর্থমূল্য নির্ধারণ না করতে পেরে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ‘অমূল্য’—অর্থ দিয়ে কেনা যায় না ইতিহাস। সাংবাদিকদের প্রশ্নের বিষমাখা তির বিদ্ধ হয়ে কাতরাতে কাতরাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশেষে স্বীকার করলেন, ‘সুবিশাল এই প্রাসাদের ৮ হাজার দরজা, জানালা পাহারা দেওয়া সত্যিই কঠিন কাজ’। তিনি আরও জানিয়েছেন, এর আগে যে চুরির ঘটনাটি ঘটেছিল, তা সেই ১৯৯৮ সালে, আজ থেকে ২৭ বছর আগে। ক্যামিল কোরোতের একটি তেলচিত্র চুরি হয়েছিল। আজও তা উদ্ধার হয়নি।

দুর্ধর্ষ এই চুরির ঘটনা দেশটির রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বিরোধীরা এই ঘটনাকে ‘জাতির মুখে কালিমা লেপন’ বলে অভিহিত করে বর্তমান সরকারের পরনের কাপড় নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশটির প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, অচিরেই তাঁর দক্ষ গোয়েন্দারা তস্করদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবে এবং জড়িত সবাইকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ছাড়বেন। সরকার মোট ৬০ জন বাছাই করা তদন্তকারী গোয়েন্দাকে দায়িত্ব দিল চোরাই মালপত্রসহ চোরদের পাকড়াও করার। এসব গোয়েন্দার আছে সারমেয় নাসিকা আর তাঁদের হাতে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ইতিমধ্যে তাঁদের হাতে অনেক আলামত জমা হয়েছে।

রানি মেরি-অ্যামেলির কানের দুল। সূত্র: লুভর জাদুঘর
রানি মেরি-অ্যামেলির কানের দুল। সূত্র: লুভর জাদুঘর

যাঁরা অপরাধজগতের খবর রাখেন, তাঁরা এমন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ উচ্চারণে আস্থা রাখতে পারছেন না। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যাঁরা চুরি করেছেন, তাঁরা কোনো সাধারণ চোর বা ডাকাত নন। অত্যন্ত ঝানু এবং বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তস্কর। অঢেল সম্পদশালী কোনো সংগ্রাহক মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তাঁদের ঐতিহাসিক অলংকার চুরি করার কাজে লাগিয়েছে। কিংবা বিদেশি কোনো রাষ্ট্র তাদের দিয়ে এই কাজ করিয়েছে। হতে পারে, অলংকার থেকে হীরা, জহরত আলাদা করে, খুচরা বিক্রির জন্য চুরি করা হয়েছে। তাই যতই সময় গড়াবে, ততই এই রাষ্ট্রীয় সম্পদ উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসবে।

এদিকে এমন দুর্ধর্ষ চুরির কাহিনি নিয়ে বলিউড চলচিত্র নির্মাণ শুরু করলে, তাতে বিস্মিত হওয়ার কোনো কারণ থাকবে না। সে ছায়াছবির শিরোনাম হতে পারে, ‘সাত মিনিটে চুরি হলো সাত রাজার ধন’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

জাপা ও আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না: জি এম কাদের

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪৮ বছর পর বাড়তে পারে জাপানের ভিসা ফি

ফিচার ডেস্ক
৪৮ বছর পর বাড়তে পারে জাপানের ভিসা ফি

জাপান শিগগির বিদেশি পর্যটকদের জন্য ব্যয়বহুল গন্তব্যে পরিণত হতে পারে। কারণ, প্রায় ৪৮ বছর পর দেশটির সরকার ভিসা ফি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়া জানিয়েছেন, বিস্তারিত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ভিসা ফি বাড়ালে পর্যটনে কী প্রভাব পড়তে পারে, কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখছে। অন্যান্য দেশের ভিসা ফি এবং বর্তমান পরিস্থিতিও তাঁরা বিবেচনায় রাখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে জাপানের ভিসা ফি অনেক কম।

এখন জাপানের একক এন্ট্রি ভিসার

ফি বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ১ হাজার ৭০০ টাকা। মাল্টিপল ভিসা ফি প্রায় ৩ হাজার ৫০০ টাকা। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অধিকাংশ দেশের ভিসা ফির তুলনায় অনেক কম। জি-সেভেন এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার গড় ভিসা চার্জের তুলনায় জাপানের ফি এখনো অনেক নিচে।

চলতি সময়ে জাপানে পর্যটকের ভিড় বেড়েছে ব্যাপক। এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৩১ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন বিদেশি পর্যটক জাপান ভ্রমণ করেছে। এটি ২০২৪ সালের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, এ বছরের শেষ নাগাদ দেশটিতে পর্যটকের সংখ্যা ৪০ মিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছাবে।

ভিসা ফি বাড়ানোর পাশাপাশি জাপান ‘ডিপারচার ট্যাক্স’ বা আন্তর্জাতিক পর্যটক

ফি বাড়ানোর বিষয় নিয়েও ভাবছে। বর্তমানে এর পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮০৫ টাকা। জাপানি নাগরিক ও বিদেশি পর্যটক উভয়কেই এই ফি দিতে হয়। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে জাপানে ভ্রমণ তুলনামূলক ব্যয়বহুল হতে পারে। কারণ, প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে বিদেশি পর্যটকদের জাপানে প্রবেশ করতে এখনকার চেয়ে বেশি ব্যয় করতে হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিবর্তন দেশের পর্যটনশিল্পকে দুর্বল করবে না। জাপানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, ইতিহাস ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধার কারণে পর্যটকেরা সব সময় দেশটি ভ্রমণে আগ্রহী থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জাপানের বিশ্বমানের পর্যটন অভিজ্ঞতা ও নিরাপদ পরিবেশের কারণে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়বে। এর পাশাপাশি, পর্যটন থেকে পাওয়া রাজস্বও বাড়বে, যা দেশটির জাতীয় অর্থনীতি ও পরিষেবা খাতকে আরও বড় করবে। ফলে জাপান অন্য অনেক দেশের মতো ব্যয়বহুল হলেও পর্যটকদের ভ্রমণ আনন্দে ঘাটতি পড়বে না।

সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

জাপা ও আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না: জি এম কাদের

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত