Ajker Patrika

ফুকেটের আকর্ষণীয় ১০টি পর্যটন গন্তব্য

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫: ০৯
ফুকেটের আকর্ষণীয় ১০টি পর্যটন গন্তব্য

আন্দামান সাগরের স্বচ্ছ জল, আকর্ষণীয় সব সৈকত, অরণ্যে ঢাকা পর্বত, ছোট ছোট দ্বীপ—একজন পর্যটককে আকৃষ্ট করার মতো মোটামুটি সবকিছুই পাবেন ফুকেটে। তারপর আছে সাগরতীরের দুর্দান্ত সব রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ আর স্পা। মোটের ওপর বেড়াবার জন্য এর চেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা আর মিলবে কমই। ফুকেটে দেখার মতো এত এত জায়গা আছে যে নির্দিষ্ট কয়েকটিকে বেছে নেওয়া মুশকিল। তাও আমরা আজ সেখানকার দশটি ভ্রমণ গন্তব্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। বিশেষ করে অল্প সময় হাতে নিয়ে যাঁরা বেড়াতে যাবেন তাঁদের এই তালিকাটি কাজে লাগবে বলে আশা করি। 

১. পাতং সৈকত 
ফুকেট শহরের প্রাণকেন্দ্র বলতে পারেন পাতং সৈকতকে। সোনালি বালুর সৈকতটির এখানে-সেখানে ও আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রেস্তোরাঁগুলো একে বর্ণিল করে তুলেছে। সৈকত ঘিরে থাকা পর্বত আর সাগরের স্বচ্ছ জল এর আকর্ষণ আরও বাড়িয়েছে। এখানে শান্ত কোনো জায়গা পাওয়াটা মুশকিল, কিন্তু পানির নানা ধরনের স্পোর্ট বা খেলার অভাব নেই। 

জেট স্কি, ফ্লাই বোর্ড, প্যাডলবোর্ডিং, প্যারাসেইলিংসহ আরও নানা কিছুর ব্যবস্থা আছে। চাইলে ব্যানানা বোট নামের কলার আদলে বানানো নৌকায়ও ভ্রমণ করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে খরচটা একটু চড়া। দরাদরিও চলে এখানে। সৈকতের আশপাশে পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু রিসোর্টও আছে।

ফুকেটে গেলে কোহ পানে নামের গ্রামটির জন্য কিছুটা সময় বরাদ্দ না রাখলে ভুল করবেন২. কোহ পানে
ফুকেটের ঐতিহ্যকে আরও বেশি করে বুঝতে চাইলে দ্বীপের পূর্ব উপকূলের কোহ পানে নামের গ্রামটিতে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন। ফাং নগা বের বুক এর অবস্থান। ‘সাগরের জিপসি’ নামে পরিচিত মোকেন গোত্রের মানুষদের আশ্চর্য জীবন দেখার সুযোগ মিলবে এখানে। 

নিজস্ব বিশ্বাস ও রীতিনীতি টিকিয়ে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মোকেনরা। কিছু মোকেন সমুদ্রের ধারে বাস করেন। অনেকে আবার ডাঙায় আধা-যাযাবর জীবন বেছে নেয়। গ্রামের পুরুষের বেশির ভাগ পেশায় জেলে এবং কখনো কখনো সমুদ্র ভ্রমণে গাইড হিসেবে কাজ করেন। 

চাইলে রাওয়াই নামের অন্য একটি গ্রামেও যেতে পারেন। রাওয়াইয়ের নিজস্ব একটি ছোট পোতাশ্রয় আছে। পাম ও ওক গাছে ঘেরা চমৎকার একটি সমুদ্রসৈকতও গ্রামটির সম্পত্তি। আপনি সমুদ্রতীরবর্তী বিভিন্ন দ্বীপে যাওয়ার জন্য এখান থেকে নৌকা ভাড়া করতে পারবেন। গ্রামটি সি ফুডের জন্যও বিখ্যাত। 

৩. কারন ভিউ পয়েন্ট
নাই হার্ন এবং কাতা কোই সৈকতের মোটামুটি মাঝখানে জায়গাটির অবস্থান। এখান থেকে কাতা নোই, কাতা ইয়াই এবং কারন সৈকতও আপনার চোখে ধরা দেবে মোহনীয় সৌন্দর্য নিয়ে। পর্যটক ও আলোকচিত্রীতে ভরপুর থাকে জায়গাটি। গনগনে সূর্যের আঁচ থেকে শরীরটা বাঁচানোর জন্য এখানে কয়েকটি চালাঘরের মতো আছে। সেখানে চা-কফি পানের পাশাপাশি হালকা নাশতাও সেরে নিতে পারবেন। 

জেমস বন্ড আইল্যান্ড চুনাপাথরের অসাধারণ সব প্রাকৃতিক কাঠামোর জন্য বিখ্যাত৪. জেমস বন্ড আইল্যান্ড
ফাং নগা জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত জেমস বন্ড আইল্যান্ড চুনাপাথরের অসাধারণ সব প্রাকৃতিক কাঠামোর জন্য বিখ্যাত। এগুলোর মধ্যে আছে আশ্চর্য সব আকৃতির স্ট্যালাকলাইট (গুহার ছাদ থেকে ঝুলন্ত চুনাপাথরের স্তম্ভ) ও স্ট্যালাগমাইট (গুহার তল থেকে ওঠে যাওয়া চুনাপাথরের স্তম্ভ)। দ্বীপটি আগে পরিচিত ছিল ভাও ফিং কান নামে। ১৯৭৪ সালে জেমস বন্ডের দ্য মেন উইথ দ্য গোল্ডেন গান চলচ্চিত্রটির কিছু দৃশ্য দ্বীপটিতে চিত্রায়িত হওয়ার পর জেমস বন্ড আইল্যান্ড নামে পরিচিতি পেয়ে যায় এটি। বলা চলে তারপর থেকেই পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছে যায় এটি। 

৫. কাতা সৈকত
পাম ও ঝাও গাছে ভরা সোনালি বালুর কাতা সৈকত মুগ্ধ করবে আপনাকে। এখানকার বাঁকানো উপসাগরটি ও সাগরতীরে ঢালের মতো দাঁড়িয়ে থাকা পর্বতও নজর কাড়বে। পাতং সৈকতের তুলনায় এখানে ভিড়-বাট্টা ও হকারদের উৎপাত কম। কাছেই ছোট্ট একটা দ্বীপ আছে। স্নরকেলিং অর্থাৎ চোখে গগলস, স্নরকেল বা শ্বাস নেওয়ার নল ও সাঁতরানোর ফিন ব্যবহার করে সাঁতার কাটতে কাটতে জলের রাজ্যের প্রাণীদের দেখার জন্যও জায়গাটি আদর্শ। 

আপনি যদি ক্ষুধার্ত হন, সমুদ্রসৈকতের ধারের কোনো ছাউনি থেকে পেঁপের জুস কিংবা হালকা খাবার খেতে পারেন। বড় রেস্তোরাঁগুলোও পাবেন হাঁটা দূরত্বে। 

ফুকেটের অন্যতম সেরা আকর্ষণ হিসেবে একে বিবেচনা করা হয় ফি ফি দ্বীপকে৬. ফি ফি আইল্যান্ড
আন্দামান সাগর ধরে মোটামুটি এক ঘণ্টা নৌভ্রমণ করলে ফি ফি আইল্যান্ড নামের আশ্চর্য সুন্দর এই দ্বীপটিতে পৌঁছে যাবেন। ফুকেটের অন্যতম সেরা আকর্ষণ হিসেবে একে বিবেচনা করা হয়। চারপাশের সৈকতের সৌন্দর্য মন্ত্রমুগ্ধকর, নীলাভ-সবুজ জল, নানান পাথুরে কাঠামো মুগ্ধ করবে আপনাকে। ফি ফি আইল্যান্ডে আনন্দময় একটা রাত কাটাতে পারবেন যেমন, তেমনি চাইলে ফুকেট থেকে ডে ট্যুরেও আসতে পারবেন। 

 বসে থাকা অবস্থায় থাকা বুদ্ধ মূর্তিটির উচ্চতা ৪৫ মিটার৭. বিগ বুদ্ধ
কাতা সৈকত ও চালং-এর মোটামুটি মাঝখানে নাকারড পাহাড়ে ফুকেট বিগ বুদ্ধের অবস্থান। বুদ্ধ মূর্তিটি বসে থাকা অবস্থায় আছে। পাহাড়ের চূড়ায় যেখানে ৪৫ মিটার দীর্ঘ বুদ্ধ মূর্তিটির দেখা পাবেন, সেখান থেকে চারপাশের এলাকার ৩৬০ ডিগ্রি ভিও পাওয়া যায়। কংক্রিট এবং সাদা মর্মর পাথর দিয়ে তৈরি বুদ্ধমূর্তিটি ২০০৪ সালে বানানো হয়। আপনি একটি ট্যাক্সি বা টুক-টুক নিয়ে আঁকাবাঁকা ছয় কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে পারেন। তবে মূর্তিটির সামনে পৌঁছার জন্য বেশ কতগুলো সিঁড়ি টপকাতে হবে। 

৮. গ্রিন এলিফ্যান্ট স্যাংচুয়ারি পার্ক
বন্য প্রাণী ও হাতি যাঁরা ভালোবাসেন তাঁদের জন্য একটি চমৎকার ভ্রমণগন্তব্য হতে পারে এটি। সুরিন সৈকতের কাছে জঙ্গলের মাঝখানে গড়ে তোলা হয়েছে গ্রিন এলিফ্যান্ট স্যাংচুয়ারি পার্ক। প্রাকৃতিক পরিবেশে বিশালদেহী পোষা ঐরাবতদের একটি নিরাপদ আবাসস্থল বলতে পারেন একে। 

হাতিপ্রেমীরা হাতিদের গোসল করানো, শরীর পরিষ্কার করা, খাওয়ানোসহ নানা কাজে অংশ নিতে পারেন। তবে এগুলো করতে হয় এখানে উপস্থিত প্রশিক্ষকদের পরামর্শ ও নজরদারিতে। হ্রদের জলে হাতিদের খেলা করার দৃশ্যও আপনাদের আনন্দ দেবে। চাইলে তাদের পাশে একটি ডুব দিতে পারেন। হাতি শিশুদের নানা কাণ্ডকীর্তিও মুগ্ধ করবে। 

সকালে ও বিকেলে এই পার্কে আধা দিনের ট্যুর পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে হোটেল পিকআপ, হাতিদের খাওয়ানো, হাতি সম্পর্কে একটি শিক্ষামূলক উপস্থাপনা, হাতিদের ধোয়ানো এবং থাই ম্যানুর চমৎকার একটা বুফে। পার্ক রেঞ্জাররা হাতিদের সঙ্গে আপনার চমৎকার মুহূর্তগুলো ক্যামেরায় বন্দী করবেন। যেন স্মারক হিসেবে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন। 

হাতিদের গোসল করানো, শরীর পরিষ্কার করায় ভারি মজা৯. পুরোনো ফুকেট শহর
ফুকেটে যাবেন আর এখানকার পুরোনো শহরটি দেখবেন না তা কি হয়! চীনা ও পর্তুগিজ নকশায় নির্মিত বাড়ি, রঙিন দেয়াল, সরু রাস্তা, নানান সাজের ক্যাফে, বেকারি এবং ছোট ছোট খাবারের দোকানগুলো পুরোনো এক জনপদের কথাই মনে করিয়ে দেবে আপনাকে। 

১০. র‍্যাং হিল
ফুকেটের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত র‍্যাং হিল ভিও পয়েন্ট হিসেবে দুর্দান্ত। এখান থেকে গোটা ফুকেট ও আশপাশের দ্বীপ, পাহাড়ের চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়। পাশাপাশি সাগরের সবুজে-নীল পানি এবং বিগ বুদ্ধমূর্তিটিও এই পাহাড়চূড়া থেকে পরিষ্কার দেখা যায়। র‍্যাং হিলে চমৎকার একটি সু-সজ্জিত পার্ক আছে। সেখানে বাচ্চাদের খেলার জায়গা, রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে শরীরচর্চাকেন্দ্র পর্যন্ত পাবেন। সূর্যাস্তের পরে ঝলমলে শহরটিও অন্য এক চেহারায় দেখা দেয় এখানকার ভিও পয়েন্ট থেকে। 

সূত্র: ট্রাভেল ট্রায়াঙ্গল, প্ল্যানেট ওয়্যার ডট কম, উইকিপিডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

‘মবের হাত থেকে বাঁচাতে’ পলকের বাড়ি হয়ে গেল অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন এম এ জি ওসমানীসহ ৮ জন

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত