Ajker Patrika

‘ইউনূসের সরকার, ৫ বছর দরকার’: ফেসবুক পেজের এনগেজমেন্ট বাড়াতে বিজ্ঞাপন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ মে ২০২৫, ২০: ৫৫
এপ্রিলের শুরু থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অন্তত ৪৭টি ফেসবুক পেজ ৫৫টি পেইড বিজ্ঞাপনে এই স্লোগান ব্যবহার করা হয়েছে। ছবি: ডিসমিসল্যাবের সৌজন্যে
এপ্রিলের শুরু থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অন্তত ৪৭টি ফেসবুক পেজ ৫৫টি পেইড বিজ্ঞাপনে এই স্লোগান ব্যবহার করা হয়েছে। ছবি: ডিসমিসল্যাবের সৌজন্যে

বাংলাদেশে একাধিক ফেসবুক পেজ রাজনৈতিক স্লোগান ব্যবহার করে তাদের পেজে লাইক ও এনগেজমেন্ট বাড়াচ্ছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি এক অনুসন্ধানে এ তথ্য জানিয়েছে ডিসমিসল্যাব নামে বাংলাদেশের একটি অনলাইন ভেরিফিকেশন ও মিডিয়া গবেষণা প্ল্যাটফর্ম। ডিসমিসল্যাব জানিয়েছে, ‘আমরা ড. ইউনূসকে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় চাই’—এই রাজনৈতিক স্লোগান ব্যবহার করে এসব পেজ মূলত তাদের ব্যবসায়িক কনটেন্ট প্রচার করছে, যার সঙ্গে বাস্তবে রাজনীতির কোনো সম্পর্কই নেই।

গতকাল মঙ্গলবার (২৭ মে) প্রকাশিত ‘‘They want Dr Yunus for five years, but only to farm ’likes’ for their pages’’ শীর্ষক ডিসমিসল্যাবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিলের শুরু থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অন্তত ৪৭টি ফেসবুক পেজ ৫৫টি পেইড বিজ্ঞাপনে এই স্লোগান ব্যবহার করেছে।

ডিসমিসল্যাব জানায়, এসব পেজ মূলত খাবার, কসমেটিকস, পোশাক ও ব্লগ-সম্পর্কিত কনটেন্ট পোস্ট করে থাকে। রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বিজ্ঞাপনগুলোতে ড. ইউনূসের নাম ও ছবি ব্যবহার করে দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় এবং ‘পেজ লাইক করুন’ বা ‘ফলো করুন’, এ ধরনের আহ্বান জানানো হয়।

ডিসমিসল্যাবের গবেষকেরা মেটার অ্যাড লাইব্রেরি ব্যবহার করে বাংলা কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিজ্ঞাপনগুলো শনাক্ত করেন। এরপর তাঁরা প্রতিটি পেজের সর্বশেষ ২০টি পোস্ট বিশ্লেষণ করে দেখতে পান, প্রায় ৯০ শতাংশ পেজের আগের কোনো পোস্টে রাজনীতি বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না।

উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় ‘The Tasty Apron’ নামের ঢাকাভিত্তিক একটি রেস্টুরেন্টের পেজের বিজ্ঞাপন। তাদের বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল, ‘যারা চান ডঃ ইউনূস ৫ বছর ক্ষমতায় থাকুক, ডান পাশে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।’ অথচ এই পেজের অন্য কোনো পোস্টে রাজনৈতিক বার্তা নেই।

মেটার নীতিমতে, রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুভিত্তিক বিজ্ঞাপনে স্পষ্টভাবে বিজ্ঞাপনদাতার নাম ও রাজনৈতিক কনটেন্ট-সংক্রান্ত সতর্কবার্তা থাকা উচিত। কিন্তু ডিসমিসল্যাব বলছে, এসব পেজের কোনো বিজ্ঞাপনেই এই ধরনের ডিসক্লেইমার ছিল না।

‘The Tasty Apron’ নামের একটি রেস্টুরেন্টের বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল, ‘যারা চান ডঃ ইউনূস ৫ বছর ক্ষমতায় থাকুক, ডান পাশে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন’। অথচ এই পেজের অন্য কোনো পোস্টে রাজনৈতিক কোনো বার্তা নেই। ছবি: ছবি: ডিসমিসল্যাবের সৌজন্যে
‘The Tasty Apron’ নামের একটি রেস্টুরেন্টের বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল, ‘যারা চান ডঃ ইউনূস ৫ বছর ক্ষমতায় থাকুক, ডান পাশে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন’। অথচ এই পেজের অন্য কোনো পোস্টে রাজনৈতিক কোনো বার্তা নেই। ছবি: ছবি: ডিসমিসল্যাবের সৌজন্যে

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু বিজ্ঞাপন পরে মেটা সরিয়ে ফেললেও অধিকাংশই তদন্ত চলাকালীন পর্যন্ত সক্রিয় ছিল এবং এগুলো মেটার শনাক্তকরণ ব্যবস্থা এড়িয়ে যেতে পেরেছে।

এই স্লোগান প্রথম আলোচনায় আসে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, যখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা সারজিস আলম এটি ফেসবুকে ব্যবহার করেন। যদিও তা শুরুতে রাজনৈতিক মতামত হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছিল, পরে এটি অসংখ্য অরাজনৈতিক পেজের বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। ফলে এটি একটি ‘ক্লিকবেইট’ স্লোগানে রূপ নেয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকে এই স্লোগানকে ‘অগণতান্ত্রিক ও অবাস্তব’ বলে আখ্যা দিলেও ডিসমিসল্যাবের অনুসন্ধান বলছে, এটি এখন আরও গভীর সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে। রাজনৈতিক স্লোগানকে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের মতপ্রকাশের পরিবেশকে প্রভাবিত করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্লোগানটি অরাজনৈতিক পেজে দেখা গেলেও এর রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা অস্বীকার করা যায় না, বিশেষত বাংলাদেশের বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ ও রূপান্তরকালীন রাজনৈতিক পরিবেশে।

ডিসমিসল্যাবের বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক মতকে ক্লিকবেইট বানিয়ে ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করলে সেটি গণতান্ত্রিক চর্চায় বিভ্রান্তি ও অবিশ্বাসের সৃষ্টি করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওষুধ ছাড়াই উচ্চ রক্তচাপ রাখুন নিয়ন্ত্রণে

ফিচার ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন এনে ওষুধ ছাড়াই এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। মায়ো ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, জীবনযাত্রার এই পরিবর্তনগুলো আপনার রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম মূসা বলেন, সময়মতো উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয় ও চিকিৎসা না হলে হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এতে ভুগলেও তা জানেন না। বিশ্বব্যাপী প্রতি তিনজনে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। কিন্তু কোনো লক্ষণ থাকে না বলে তাঁরা তা জানেন না।

ওজন নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত ব্যায়াম

ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপ বাড়ে। প্রতি ১ কিলোগ্রাম বা প্রায় ২ দশমিক ২ পাউন্ড ওজন কমালে রক্তচাপ প্রায় ১ মিলিমিটার পারদ চাপ কমতে পারে। কোমরের মাপও গুরুত্বপূর্ণ: পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪০ ইঞ্চি (১০২ সেমি) এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৩৫ ইঞ্চির (৮৯ সেমি) বেশি হলে ঝুঁকি বাড়ে। তবে মনে রাখবেন, এই মাপ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। নিয়মিত অ্যারোবিক ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাঁতার ও সাইক্লিং রক্তচাপকে ৫ থেকে ৮ মিলিমিটার পারদ চাপ কমাতে পারে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট মাঝারি ধরনের শারীরিক কার্যকলাপের লক্ষ্য রাখুন। সপ্তাহে অন্তত দুদিন শক্তি প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করুন। এ বিষয়ে এ কে এম মূসা জানান, চিকিৎসকের পরামর্শে প্রতিদিন কিছু ব্যায়াম করতে হবে। যেমন ৩০ মিনিট জোরে হাঁটা, সাঁতার কাটা ইত্যাদি।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

ফল, সবজি, শস্যদানা ও কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্যে সমৃদ্ধ একটি খাদ্যাভ্যাস রক্তচাপ ১১ মিলিমিটার পারদ চাপ পর্যন্ত কমাতে পারে। খাদ্যে পটাশিয়াম অন্তর্ভুক্ত করা লবণের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। দিনে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার মিলিগ্রাম পটাশিয়াম গ্রহণের লক্ষ্য রাখুন; যা রক্তচাপ ৪ থেকে ৫ মিলিমিটার পারদ চাপ কমাতে পারে। এ বিষয়ে এ কে এম মূসা লাল মাংস ও চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন করার পরামর্শ দেন।

লবণ বা সোডিয়াম কমানো

খাদ্যে সামান্য সোডিয়াম কমালে হৃদ্‌যন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। বেশির ভাগ প্রাপ্তবয়স্কের জন্য দিনে ১ হাজার ৫০০ মিলিমিটারের কম সোডিয়াম গ্রহণ করা আদর্শ, যা রক্তচাপ ৫ থেকে ৬ মিলিমিটার পারদ চাপ কমাতে পারে। প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন এবং রান্নায় লবণের বদলে মসলা ব্যবহার করুন। খাদ্যে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দিন এবং অত্যধিক লবণাক্ত খাবার বাদ দিন।

ধূমপান ত্যাগ করা

ধূমপান রক্তচাপ বাড়ায়। এটি ত্যাগ করলে রক্তচাপ কমে আসে এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি ও সার্বিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়।

পর্যাপ্ত ঘুম ও চাপ কম নিন

প্রতি রাতে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। ঘুমের অভাব, যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া বা অনিদ্রা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। ঘুমের একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি তৈরি করুন এবং শোওয়ার ঘর শান্ত, অন্ধকার ও শীতল রাখুন। এ কে এম মূসা পরামর্শ দেন, প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস করুন। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ উচ্চ রক্তচাপের একটি কারণ হতে পারে। নিজের চাপের উৎসগুলো চিহ্নিত করুন এবং সেগুলোর মোকাবিলা করার উপায় খুঁজুন। প্রতিদিন শান্তভাবে বসে গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া বা পছন্দের কাজ করার জন্য সময় বের করুন।

কোলেস্টেরল ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ

উচ্চ কোলেস্টেরল ও রক্তে উচ্চ শর্করা হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো, যেমন স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়াম, ওজন কমানো এবং ধূমপান ত্যাগ অনুসরণ করছেন, সেগুলোই কোলেস্টেরল ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। এ পরিবর্তনগুলো দীর্ঘমেয়াদি, তাই প্রয়োজন হলে পরিবার বা বন্ধুদের সহযোগিতা নিতে দ্বিধা করবেন না।

চিকিৎসকের পরামর্শে করণীয়

অধ্যাপক এ কে এম মূসা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার বিষয়ে কিছু পরামর্শ দেন।

চিকিৎসকের চেম্বার ও বাসায় পরপর কয়েক দিন রক্তচাপ মেপে যদি ১৪০/৯০-এর বেশি পাওয়া যায়, তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

ইউরিন আর/ই, সেরাম ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন ও সুগার প্রোফাইল টেস্ট করতে হবে।

চিকিৎসক নির্দেশিত ওষুধ নিয়মিত সেবন করুন।

কমপক্ষে সপ্তাহে এক দিন রক্তচাপ মেপে লিখে রাখুন। মানসিক চাপ কমিয়ে ফেলুন এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিন।

হাই কোলেস্টেরল থাকলে খাবার নিয়ন্ত্রণ করুন এবং ওষুধ সেবন করুন।

ডায়াবেটিস থাকলে খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও ওষুধের মাধ্যমে কন্ট্রোল রাখুন।

সূত্র: মায়ো ক্লিনিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: সহকর্মীকে জ্ঞান দিতে যাবেন না, প্রাপ্তিযোগে বাল্যকালের প্রেমপত্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৪
আজকের রাশিফল: সহকর্মীকে জ্ঞান দিতে যাবেন না, প্রাপ্তিযোগে বাল্যকালের প্রেমপত্র

মেষ

আজ আপনার এনার্জি লেভেল দেখলে মনে হবে ভুল করে চায়ের বদলে ডাবল এসপ্রেসো খেয়ে ফেলেছেন। দিনের শুরুটা দুর্দান্ত! কিন্তু উত্তেজনা এত বেশি থাকবে যে অফিসে যাওয়ার পথে চারবার হোঁচট খাবেন। আপনার স্বাস্থ্য বলছে: ‘শান্ত হও, ওহে মেষ!’ অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাউকে জ্ঞান দিতে যাবেন না। কারণ, তিনি পাল্টা এমন তথ্য দেবেন, যা গুগলেও পাবেন না। সন্ধ্যায় প্রিয়জনের কাছ থেকে একটি অপ্রত্যাশিত চমক পাবেন। যদিও সেটা হয়তো হবে গত জন্মদিনের উপহারের র‍্যাপার।

বৃষ

বৃষ রাশি, গ্রহ-নক্ষত্র আজ আপনাকে বলছে—বিতর্ক এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে সেই আড্ডার জায়গাগুলো, যেখানে কেউ একজন ‘আপনার সম্মান নিয়ে’ প্রশ্ন তুলতে পারে। অর্থাৎ আজ আপনি অফিসের ক্যানটিন, বন্ধুর বাড়ি এবং শ্বশুরবাড়ি—সব জায়গায় ‘সিক্রেট এজেন্ট অব অকোয়ার্ডনেস’-এর ভূমিকা পালন করবেন। আর্থিক দিক থেকে আজ স্থিতিশীল। তবে অনলাইনে কিছু কেনার আগে দুবার ভাবুন। দরকার নেই, শুধু ‘অন্য লোকেরা কী কিনছে’ দেখতে গিয়ে আপনি হয়তো একটা স্পেচুলা কিনতে গিয়ে ফ্রিজ কিনে ফেলতে পারেন।

মিথুন

আপনার বুদ্ধিমত্তা আজ দারুণ কাজ করবে, তবে মন এত দ্রুত চলবে যে মুখটা মাঝেমধ্যে পিছিয়ে পড়বে। ফলস্বরূপ আপনি এক কথা বলতে গিয়ে অন্য কথা বলে ফেলবেন, আর লোকে ভাববে—আপনি বোধ হয় কবিতা বলছেন! কর্মস্থলে পদোন্নতির ইঙ্গিত আছে, যদি না সহকর্মীর কফির মগে ভুল করে লবণ দিয়ে দেন। বিকেলের দিকে প্রাপ্তিযোগের সম্ভাবনা, যা হয়তো একটা পুরোনো লটারির টিকিট বা ছোটবেলার একটি বাতিল হওয়া প্রেমপত্র। নিষ্ঠা ও ভদ্রতা বজায় রাখুন, বিশেষ করে চিপস খাওয়ার সময়।

কর্কট

আজকের দিনটি আপনার জন্য ঠিক মাঝামাঝি—না ভালো, না খারাপ। গ্রহরা আপনাকে এক অদ্ভুত মিশ্র ফল দিয়েছে। মনে হবে আপনি যেন একটি পুরোনো সাদাকালো সিনেমার শেষ ১০ মিনিট দেখছেন—কী হবে, তা জানা আছে, তবু মন অস্থির। দিনের বেলা সামান্য বিষয়ে গভীর চিন্তা করার প্রবণতা বাড়বে; যেমন ‘পাউরুটি কেন স্লাইস করা হয়?’ এই ধরনের প্রশ্ন নিয়ে সারা দিন মাথা ঘামাবেন। রাতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। এতে চিন্তাগুলো হয়তো পাউরুটি থেকে সরে এসে অন্তত ডিম-পরোটার দিকে যাবে।

সিংহ

সিংহ মশাই, আজ আপনি রাজকীয় মেজাজে থাকবেন। নিজেকে জাহির করার একটা প্রবল ইচ্ছা জাগতে পারে। পারিবারিক চাপ থাকবে, তবে সেটা এমন ছোটখাটো হবে যেন একটা মশার কামড়। সেটাকে গর্জন দিয়ে উড়িয়ে দিতে সক্ষম হবেন। পরিবারের সদস্যদের প্রতি যত্ন নিন—আর যত্ন নেওয়ার মানে এই নয় যে জোর করে তাদের ডায়েট চার্ট বানিয়ে দেবেন। কাজের ক্ষেত্রে আপনার নেতৃত্ব প্রশংসিত হবে। তবে মনে রাখবেন, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস আপনাকে কোনো গর্তে ফেলে দিতে পারে। তাই ‘আমি সব জানি’ বলার আগে একবার উইকিপিডিয়া চেক করে নেবেন।

কন্যা

আজ কাঁধে নতুন কাজের দায়িত্ব আসতে পারে। সেই দায়িত্ব হয়তো হবে অফিসে ফালতু ফাইলগুলো গুছিয়ে রাখার। কিন্তু তাতেও নিখুঁতভাবে বিশ্বের সেরা ‘ফাইল অর্গানাইজার’ হওয়ার চেষ্টা করবেন। পরিবারে আজ সংযত থাকুন। বিশেষ করে যদি পার্টনারের আলমারি বা ঘর গোছানোর ইচ্ছা আপনার মনে জাগে। নিয়ন্ত্রণ করার স্বভাবটি আজ মধুর সম্পর্ককে তিক্ত করে দিতে পারে। দিনের শেষে সবকিছু পারফেক্ট না হলেও চলবে—এ সত্যটি মেনে নেওয়াই আজকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মোবাইল স্ক্রিন পরিষ্কার রাখুন।

তুলা

আপনার ভাগ্যে আজ আনন্দের জোয়ার। বস আপনার ওপর এতটা খুশি হবেন যে পদোন্নতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। চার্ম আজ তুঙ্গে থাকবে। কিন্তু গ্রহরা একটি অদ্ভুত সতর্কবার্তা দিয়েছে: ‘নারী বন্ধুদের থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখুন।’ কেন? কেউ জানে না! সম্ভবত তারা আপনাকে এত পার্টি দিতে বলবে যে ব্যাংক ব্যালেন্সের বারোটা বাজবে। বকেয়া টাকা হাতে আসতে পারে, যা দেখে আনন্দে লাফালাফি করতে পারেন। কিন্তু সাবধান, লাফানোর সময় যেন পুরোনো কোনো আসবাবে ধাক্কা না লাগে। স্ত্রীর কাছ থেকে সারপ্রাইজ পাবেন।

বৃশ্চিক

বৃশ্চিক, আজ আপনার হৃদয়ে গভীর চিন্তাভাবনার খেলা চলবে। সামান্য কারণে আজ একটু বেশিই ইন্টেন্স হয়ে উঠবেন। কেউ হয়তো বলবে, ‘আরে, চা-টা ঠান্ডা হয়ে গেল!’ আর আপনি ভাববেন, ‘এর পেছনে কি কোনো গভীর ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে?’ আত্মবিশ্বাস আজ আপনার শক্তি। তবে এটা যেন অহংকারে পরিণত না হয়। মনে রাখবেন, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আজ আপনাকে অনেক বড় সমস্যা থেকে বাঁচাবে। কিন্তু যদি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তবে অন্তত একটি মজার অজুহাত তৈরি রাখুন।

ধনু

ধনু রাশি, আজ আর্থিক সাফল্য আপনার কদম চুম্বন করবে। টাকা আসবে, তবে তার মানে এই নয় যে আপনি আজই একটি রকেট কিনে চাঁদে চলে যাবেন। পেশা সম্পর্কিত ভ্রমণের ইঙ্গিত আছে। কিন্তু এটি সম্ভবত কোনো দূরবর্তী, অপরিচিত ব্রাঞ্চে হবে, যেখানে আপনাকে ‘অসহযোগিতার প্রতীক’ পুরস্কার দেওয়া হতে পারে। আপনার উৎসাহ আজ অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে। তবে কথা বলার সময় একটু সংযত থাকুন, নইলে আপনার অতি উৎসাহ অন্যদের কাছে ‘বকবক’ বলে মনে হতে পারে। সন্ধ্যায় সেই টাকা দিয়ে কিছু একটা করুন, যা মনকে শান্তি দেবে; যেমন কাউকে পেট ভরে ফুচকা খাইয়ে দিন।

মকর

গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আজ। মন আর মস্তিষ্ক, দুটোকেই কাজে লাগান। কিন্তু মনে রাখবেন, হয়তো ভাবছেন জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, কিন্তু আদতে আপনি শুধু ঠিক করছেন কোন রঙের জামা পরে অফিস যাবেন। অর্থের ক্ষেত্রে আজ কিছুটা স্বস্তি পাবেন। মানসিক ক্লান্তি দূর করতে ধ্যান করুন বা শান্ত সংগীত শুনুন। অথবা সবচেয়ে ভালো হয়, যদি সব কাজ অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারেন এবং নিজে চুপচাপ ঘুমাতে পারেন! মনে রাখবেন, শৃঙ্খলা বজায় রাখা ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত শৃঙ্খলা মানুষকে বিরক্ত করে। আজ অন্তত কাজের বাইরে একবার হাসুন।

কুম্ভ

কুম্ভ, আজ আপনার আর্থিক বিষয়গুলো ধীরে ধীরে ভালো হবে। পুরোনো জিনসের পকেটে কিছু টাকা খুঁজে পেলে সেটাকেই আজকের ‘আর্থিক সাফল্য’ বলে ধরে নিতে হবে। দ্রুত ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করুন, তবে সেই পরিবর্তনটা হয়তো হবে ফ্রিজের আলো ঠিক হয়ে যাওয়া। প্রিয়জনের সঙ্গে আজ স্মরণীয় মুহূর্ত কাটাবেন। আর সেই স্মরণীয় মুহূর্তটি হতে পারে দুজনের মধ্যে হওয়া একটি নীরব প্রতিযোগিতা—কে কার আগে ঘুমিয়ে পড়তে পারে। সহকর্মীদের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রাখুন। কারণ, তারা না থাকলে আপনার কাজের চাপ বেড়ে যাবে। সব কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরুন।

মীন

মীন রাশি, আজ আপনার মন ও মস্তিষ্ক দুটিই একে অপরের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করবে। আপনার ভেতরের জগতে চলছে চরম মারামারি, আর বাইরের জগতে হাসিমুখে সবার সঙ্গে কথা বলছেন—আপনার মতো ভালো অভিনেতা আর কেউ নেই! কিছু পুরোনো জিনিস মনকে বিরক্ত করতে পারে; যেমন ১০ বছর আগে কেন ওই লাল শার্টটা কিনেছিলেন? সন্ধ্যার মধ্যে অবশ্য সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কারণ, ক্ষুধা পেলে মানুষ সব ঝগড়া ভুলে যায়। পরীক্ষায় শুভ ফলের আশা করতে পারেন, যদি না আপনি উত্তর লেখার বদলে পরীক্ষার খাতায় কবিতা লিখে আসেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লিভার ভালো রাখার ১০ উপায়

ফিচার ডেস্ক
ছবি: ফ্রিপিক
ছবি: ফ্রিপিক

লিভার আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি দেহের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় সাহায্য করে। খাবার হজম, ভিটামিন ও মিনারেল শোষণ, বিপাক প্রক্রিয়া এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করতেও লিভার সাহায্য করে। সে জন্য লিভারের সমস্যা হলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও প্রভাব পড়ে। এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানতে পারলে সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা যায়। তাতে বড় ধরনের সমস্যা এড়ানো সহজ হয়।

ছুটির সময় অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়ার পর লিভারকে একটু বিশ্রাম ও যত্ন দেওয়া জরুরি। চিকিৎসকদের মতে, প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের একজনের ফ্যাটি লিভার সমস্যা আছে, যা অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও বসে থাকার জীবনধারার কারণে বাড়ছে। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে এটি লিভার ক্যানসার বা লিভার ফেইলিওরে রূপ নিতে পারে।

বিএসএমএমইউর রেসিডেন্ট চিকিৎসক বলেন, ‘লিভারের সমস্যা শুরু হলে শরীরে বেশ কিছু প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন—খাবার খাওয়ার পর বমি বা বমির ভাব হওয়া, অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা অবসন্নতা অনুভব করা, পেটের ডান দিকে হালকা বা তীব্র ব্যথা থাকা ইত্যাদি। অনেক সময় ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়, যা জন্ডিসের লক্ষণ। এ ছাড়া খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া বা ক্ষুধামান্দ্য দেখা দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে শরীরে পানি জমে পেট ফুলে ওঠে বা হাত-পায়ের নখে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায়—এসবই লিভারের সমস্যার আগাম সংকেত হতে পারে।’

লিভার ভালো রাখতে নিচের উপায়গুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেন—

কফি পান করুন

গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে তিন-চার কাপ কফি লিভারে দাগ বা ফাইব্রোসিসের ঝুঁকি কমায়। কফি লিভারের জন্য চায়ের চেয়ে বেশি উপকারী।

ব্রোকলি ও বাঁধাকপি খান

এই সবজি লিভারকে ফ্রি র‍েডিক্যাল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমায়। এগুলোতে ভিটামিন ‘সি’, ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে। সেদ্ধ করা খাবার লিভারের জন্য ভালো, ভাজাপোড়া নয়।

সাদা ভাত কম খান

অতিরিক্ত পরিশোধিত ভাত, চিনি, লাল মাংস ও ভাজা খাবার ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়। তার পরিবর্তে লাল চাল, ডাল ও মসলা, যেমন—রসুন, মরিচ, ধনিয়া ও কারিপাতা ব্যবহার করুন।

পর্যাপ্ত প্রোটিন নিন

লিভার দুর্বল হলে শরীরের পেশি ক্ষয় হতে পারে। তাই প্রতিদিন ডিম, মাছ, মুরগি, ডাল বা টোফু খান। যারা নিরামিষভোজী, তারা মসুর ডাল দিয়ে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে পারেন।

অযথা বারবার খাওয়া বন্ধ করুন

সারা দিন অল্প অল্প নাশতা খাওয়ার বদলে রাতে অন্তত ১৪ ঘণ্টা না খেয়ে থাকুন। এতে লিভার নিজেকে পরিষ্কার ও ঠিক করতে সময় পায়, যাকে বলে অটোফ্যাজি।

ভিটামিন ‘সি’ খাওয়া বাড়ান

লিভার তার কাজে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ ব্যবহার করে। তাই কমলা, লেবু ইত্যাদি নিয়মিত খান। ফলের রস না করে পুরো ফল খেলে ফাইবারও পাওয়া যায়, যা বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে বের করতে সাহায্য করে।

খাবারের পরিমাণ ১০ শতাংশ কমান

অতিরিক্ত ক্যালরি ওজন বাড়ায়, অতিরিক্ত ওজন ফ্যাটি লিভারের মূল কারণ। দিনে দুই হাজার ক্যালরির বেশি না খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।

অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়ান

লিভারের সঙ্গে অন্ত্রের গভীর সম্পর্ক আছে। রসুন, পেঁয়াজ, পুরো শস্য ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে লিভারকে সুস্থ রাখে।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, সাইক্লিং বা সাঁতার কাটুন। এতে শরীরের চর্বি কমে, রক্ত চলাচল বাড়ে এবং লিভার আরও কার্যকরভাবে কাজ করে।

অ্যালকোহল কমান

বিয়ার বা ওয়াইন যেকোনো পানীয়তেই ক্ষতিকর উপাদান হলো অ্যালকোহল। তাই অল্প পান করুন এবং পরিমাণ জেনে নিন।

লিভার আমাদের শরীরকে প্রতিদিন বিষাক্ত পদার্থ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু একে সুস্থ রাখতে সঠিক খাবার, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, নিয়মিত ব্যায়াম এবং অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। এখনই যত্ন নিন, যাতে লিভারও আপনাকে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখে।

সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্রেকআপের পর ছুটি চাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে জেন-জিদের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

‘সম্প্রতি আমার ব্রেকআপ হয়েছে। কাজে মনোযোগ দিতে পারছি না। সামান্য বিরতি দরকার। আজ বাসা থেকে কাজ করব।’

গুরগাঁওভিত্তিক জীবনসঙ্গী খোঁজার অ্যাপ ‘নট ডেটিং’-এর এক কর্মীর পাঠানো এই ছোট ই-মেইল এখন ভারতজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। করপোরেট ভাষার আড়ালে ঢাকা নয়, ই-মেইলটি ছিল খুবই সরল ও অকপট। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো—প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মুহূর্তের মধ্যেই তাঁর ওই কর্মীর ছুটি মঞ্জুর করেন এবং সেই ই-মেইল অনলাইনে শেয়ার করেন। তিনি লেখেন, ‘এটাই আমার দেখা সবচেয়ে সৎ ছুটির আবেদন।’

এরপরই বিষয়টি ভাইরাল হয় লিংকডইন, এক্স ও ইনস্টাগ্রামে। এক কর্মীর ‘সততা’ ঘিরে শুরু হয় জাতীয় পর্যায়ের বিতর্ক—অফিস কি এখন এমন এক জায়গা, যেখানে ব্রেকআপ বা সম্পর্ক ভাঙার পর ছুটি চাওয়ার মতো আবেগঘন বিষয়ও প্রাপ্য হতে পারে?

এ ভাইরাল ঘটনার প্রতিক্রিয়া দুই মেরুতে বিভক্ত—কেউ সিইওর সিদ্ধান্তকে সহানুভূতিশীল নেতৃত্বের নিদর্শন বলেছেন, কেউ আবার একে পেশাগত সীমারেখা ভাঙা বলে সমালোচনা করেছেন।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে গভীর এক পরিবর্তন—কর্মক্ষেত্রে জেনারেশন জেড বা জেন-জিদের (১৯৯৭–২০১২ সালে জন্ম নেওয়া প্রজন্ম) মানসিকতা ও পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গির রূপান্তর।

জেন-জি প্রজন্ম মনে করে, কর্মক্ষেত্রে মানবিক হওয়া দুর্বলতা নয়, বরং তা জরুরি। তাদের কাছে কাজের দক্ষতার মতোই গুরুত্বপূর্ণ মানসিক স্থিতি ও আত্মিক স্বচ্ছতা।

যুক্তরাজ্যের লিগ্যাল অ্যান্ড জেনারেল গ্রুপ প্রোটেকশনের এক জরিপে দেখা গেছে, গত এক বছরে প্রতি তিনজন জেন-জি কর্মীর মধ্যে একজন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগেছেন—যা অন্য যেকোনো বয়সী কর্মীদের তুলনায় বেশি। তাঁরা আগের প্রজন্মের তুলনায় কর্মক্ষেত্রে মানসিক সহায়তা চাওয়াতেও বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

কিন্তু অফিসে কি আবেগের জায়গা থাকা উচিত? দীর্ঘদিন ধরে ‘পেশাদারত্ব’ মানে ছিল ব্যক্তিগত অনুভূতিকে আড়াল করা, অফিসে ব্যক্তিগত সমস্যা না আনা। কিন্তু কোভিড মহামারিপরবর্তী যুগে সেই ধারণা বদলে গেছে। হাইব্রিড ওয়ার্ক, অনলাইন সংযোগ ও ক্রমবর্ধমান বার্নআউটের কারণে কাজ ও ব্যক্তিজীবনের সীমারেখা এখন অনেকটাই মিশে গেছে।

২০২৪ সালে ফিউচার ফোরামের এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪২ শতাংশ কর্মী বার্নআউটে ভুগছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে এখন একটি ‘পেশাগত মানসিক অবস্থা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, বার্নআউট হলো দীর্ঘস্থায়ী ও অতিরিক্ত চাপ থেকে সৃষ্ট একটি মানসিক, শারীরিক ও আবেগিক অবসন্নতার অবস্থা। এটি সাধারণত কর্মক্ষেত্রের অতিরিক্ত চাপ থেকে আসে, কিন্তু জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেখা দিতে পারে। বার্নআউটের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে চরম ক্লান্তি, কাজ থেকে মানসিক দূরত্ব, উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া এবং হতাশা ও উদ্বেগের অনুভূতি।

এমন প্রেক্ষাপটে, ‘ব্রেকআপ’ বা সম্পর্ক ভাঙার পর ছুটি চাওয়া আসলে কোনো বিলাসিতা নয়, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের বাস্তব প্রতিক্রিয়া। যখন আবেগিক বিপর্যয় মনোযোগ নষ্ট করে, তখন অল্প কিছুদিনের বিরতি দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নয়, বরং আত্মনিয়ন্ত্রণের একটি রূপ হতে পারে।

কিন্তু সব প্রতিষ্ঠান কি এই ছুটি দেবে? সব প্রতিষ্ঠান অবশ্য এমন উদ্যোগে আগ্রহী নয়। অনেক এইচআর বিশেষজ্ঞ সতর্ক করছেন—আবেগঘন কারণকে ‘ছুটির বৈধ অজুহাত’ হিসেবে স্বীকৃতি দিলে নীতিগত জটিলতা ও এর অপব্যবহার হতে পারে।

অনেকে মনে করেন, অতিরিক্ত সহানুভূতি শৃঙ্খলাকে দুর্বল করতে পারে। অন্যদিকে, আধুনিক কর্মসংস্কৃতির সমর্থকেরা বলছেন—সহানুভূতি ও পেশাদারত্ব পরস্পরের বিপরীত নয়, বরং পেশাদারত্বের নতুন রূপ।

ডেলয়েটের ২০২৪ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, ৪০ শতাংশ জেন-জি ও মিলেনিয়ালদের ৩৫ শতাংশ কর্মী নিয়মিত মানসিক চাপ অনুভব করেন। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, পারিবারিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা—এই তিন বিষয় তাদের স্ট্রেসের প্রধান কারণ।

তবে ইতিবাচক দিক হলো, অনেক প্রতিষ্ঠান এখন কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন হতে শুরু করেছে, তবে পুরোদমে খোলামেলা আলোচনা ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে এখনো ঘাটতি রয়ে গেছে।

সম্পর্ক ভাঙা বা মন ভাঙা কেন কাজের ওপর প্রভাব ফেলে

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্পর্ক ভাঙার পর শারীরিক ও মানসিক প্রভাব অনেকটা শোকের মতো। ঘুমের ব্যাঘাত, মনোযোগ হারানো, উদ্যম কমে যাওয়া—সবকিছুই কর্মক্ষমতায় সরাসরি প্রভাব ফেলে।

তা ছাড়া যেসব কর্মী আগে থেকে কাজের চাপ ও মানসিক ক্লান্তিতে ভুগছেন, তাঁদের জন্য ব্রেকআপপরবর্তী পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। এ জন্য কিছুদিনের ছুটি অনেক সময় বার্নআউট প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—সহানুভূতি ও নীতির মধ্যে ভারসাম্য আনা। এ জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু বাস্তবসম্মত পদ্ধতি নিতে পারে। যেমন—আবেগ বা মানসিক কারণে ‘ব্যক্তিগত ছুটি’র সুযোগ রাখা, তবে বিস্তারিত ব্যাখ্যার বাধ্যবাধকতা ছাড়া। এমপ্লয়ি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামের (ইএপি) আওতায় গোপনভাবে মানসিক পরামর্শ সেবা। ব্যবস্থাপকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে তাঁরা কর্মীদের মানসিক সংকেত বুঝতে পারেন, কিন্তু অযথা ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করেন। ব্যক্তিগত বিপর্যয়ের পর ধাপে ধাপে কাজে ফেরার সুযোগ রাখা।

মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এ ধরনের কাঠামো একদিকে কর্মীর মর্যাদা রক্ষা করে, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতাও বজায় রাখে। এটি একটি মধ্যপন্থা, যেখানে মানবতা ও শৃঙ্খলা পাশাপাশি চলে।

ব্রেকআপের পর কর্মজীবনে টিকে থাকার উপায়

ব্রেকআপ বা সম্পর্ক ভাঙার পর অফিসের চাপ সামলানো সহজ নয়। বিশেষ করে, জেন-জি প্রজন্মের জন্য, যারা একই সঙ্গে বাস্তবতা, স্বচ্ছতা ও দ্রুতগতির কর্মজীবনের ভার বহন করে। বিশেষজ্ঞরা এমন পরিস্থিতিতে কিছু অবশ্যকরণীয় পরামর্শ দিয়েছেন—

-আবেগের বিষয়টি মেনে নিন—মনোযোগ কমে যাওয়া স্বাভাবিক, তা অস্বীকার নয়, মেনে নিন।

-কাজ ও জীবনের সীমা টানুন—অতিরিক্ত কাজ করে দুঃখ ঢাকার চেষ্টা না করে বিশ্রাম নিন।

-সহায়তা নিন—বিশ্বাসযোগ্য সহকর্মী, বন্ধু বা কাউন্সেলরের সঙ্গে কথা বলুন।

-ফ্লেক্সিবল বিকল্প ব্যবহার করুন—প্রয়োজনে বাসা থেকে কাজ বা স্বল্পমেয়াদি ছুটি নিন।

-রুটিন মেনে চলুন—ঘুম, ব্যায়াম ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন।

-সৃজনশীলভাবে আবেগ প্রকাশ করুন—লেখা, শিল্পচর্চা বা থেরাপির মাধ্যমে মনোভাব প্রকাশ করুন।

-পেশাদারত্ব বজায় রাখুন—অফিসে পারফরম্যান্সে সাময়িক প্রভাব পড়লে খোলামেলা জানিয়ে দিন।

মনোবিজ্ঞানী বলেন, জেন-জি প্রজন্মের কাছে কর্মক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা মানে আবেগ লুকানো নয়, বরং আবেগের মধ্যেই দৃঢ় হয়ে ওঠা, যাতে ব্যক্তিগত কষ্ট পেশাদার জীবনের বাধা না হয়ে উন্নতির শক্তি হয়ে ওঠে। তাই ব্রেকআপের পর ছুটি চাওয়ার বিষয়টি জেন-জিদের জন্য লজ্জার নয়, বরং এটা কর্মক্ষেত্রে তাদের স্বচ্ছতা ও সততার প্রকাশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত