রজত কান্তি রায়, ঢাকা
আপনারা যারা নিয়মিত ইউটিউব দেখেন কিংবা খাবার দাবার নিয়ে ন্যূনতম খোঁজখবর রাখেন, তাঁরা এই খাবারটির নাম জানেন। এর নাম গোয়ালন্দ চিকেন কারি। তবে মনে রাখতে হবে যে, ‘গোয়ালন্দ চিকেন কারি’ নামটি কিন্তু যারা রান্না করতেন, তাঁরা দেন নাই। কারা রান্না করতেন এই খাবার?
এইখানে একটা গল্প আছে। সেটাই বলি। এই খাবারটির ইতিহাস ঘেঁটেঘুঁটে যা পেয়েছি, সেটা আপনারাও জানেন, এটা মাঝিদের খাবার। সৈয়দ মুজতবা আলী কিংবা ধীরাজ ভট্টাটার্যের মতো লেখকেরা তাঁদের লেখায় এই খাবারটির সুখ্যাতি করেছেন বলে এটি জাতে উঠে গেছে। সেটা ভালোই হয়েছে। এই নামটি কিন্তু লেখকদেরই দেওয়া। মাঝিদের খাবার বিষয়টা আসলে কী? বিষয়টা হলো, মাঝিরা নৌকায় মাছ ধরার সময় যে খাবার রান্না করে ও খায়, সেটাই। এই সরল বিষয়টিতে বেশ কয়েকটি বিষয় লুকিয়ে আছে। সেগুলোর মধ্যে একটি হলো, নৌকার হেঁশেল আর ডাঙার রান্নাঘরের পার্থক্য আছে বিস্তর। ডাঙায় হেঁশেলের যেকোনো উপকরণ বাড়ন্ত হলে অন্য কারো বাড়ি থেকে নিয়ে আসা যায় সহজে। জলে বা নৌকায় সে উপায় খুবই সীমিত। ফলে সেখানে যা রান্না হয় তার এপ্রোচ থাকে একেবারে বেসিক। অর্থাৎ স্বাদের বাহুল্যের দরকার নাই বাবা, বেঁচে বর্তে থাক; ডাঙায় উঠে দেখা যাবে।
অন্য বিষয়টি হলো, এটি পুরুষদের রান্না করা খাবার। মাঝি শব্দটি নিত্যপুরুষ বাচক। ‘পাটনী’ শব্দে দীর্ঘ ই কার আছে বলেই মনে করার কোনো কারনে নেই যে সেটি স্ত্রী বাচক শব্দ। ‘পাটনী’ অর্থ হলো খেয়াঘাটের মাঝি বা পারঘাটায় নৌকা চালানো ব্যক্তি। সেই ব্যক্তিটি সাধারণত পুরুষ হয়ে থাকেন। ফলে মাঝিদের রান্না আসলে পুরুষের রান্না। এখানে বলে রাখা ভালো যে, পুরুষের রান্নার বৈশিষ্ট্য নারীদের রান্না থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে থাকে।
গোয়ালন্দ চিকেন কারির উপকরণ বেশ অন্যরকম। দেশি মুরগির সঙ্গে এ খাবারের মূল চরিত্র কুঁচো চিংড়ি। ইদানীং দেখছি অনেক রেসিপি লেখক লিখছেন, এর মূল উপাদান চিংড়ির শুঁটকী! বিষয়টি খানিক হাস্যকর আরকি। এ খাবারটি যে অঞ্চলের, অর্থাৎ গোয়ালন্দ মানে রাজবাড়ি জেলা, সেসব অঞ্চলের খাবার খুঁজে দেখলেই বোঝা যাবে শুঁটকীর বিষয়টি ভুল। ওই অঞ্চলের মানুষ সাধারণত মাংসের সঙ্গে শুঁটকী খায় না। ফলে তাজা কুঁচো চিংড়ি হওয়াই সহজ। এতে ব্যবহার করা সব উপকরণ খুবই সরল প্রকৃতির। এই সরিসার তেল, কুচিকুচি করে কাটা কাঁচা মরিচ, রসুন, পেঁয়াজ ও শুকনো মরিচ। আর কুঁচো চিংড়ি বাটা। এর সঙ্গে ছোট টুকরো করে কাটা দেশি মুরগির মাংস।
একসময়ের জনপ্রিয় এই খাবার বিস্মৃতির গহ্বরে তলিয়ে গিয়েছিল সম্ভবত নদীবন্দর হিসেবে গোয়ালন্দ তার গুরুত্ব হারানোর সঙ্গে সঙ্গে। সম্প্রতি নেটে ছড়িয়ে পড়ে এই খাবারের বিভিন্ন রেসিপি। কিন্তু একাধিক রেসিপি সংগ্রহ করে দেখা গেছে, সেগুলোর সঙ্গে আমাদের সুপরিচিত দেশি মুরগির ঝোলের তেমন পার্থক্য নেই। সেসব তাই পত্রপাঠ বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় নামে এক লেখকের সংগ্রহ করা রেসিপিটি বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে আমাদের কাছে। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় নিজেও লিখেছিলেন যে, এই রেসিপিটি তাঁর কাছে ‘আদি’র কাছাকাছি মনে হয়েছে।
ইতিহাস-ভূগোল থেকে বেড়িয়ে চলুন এবার রান্নাটা করেই ফেলি। বেলা তো বয়ে গেল!
উপকরণ: দেশি মুরগি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, কাঁচা ও শুকনো মরিচ, হলুদ, লবণ, সরিষার তেল, কুঁচো চিংড়ি মাছ। সব উপকরণ পরিমাণমতো নিতে হবে।
প্রণালি: পেঁয়াজ কুচি কুচি করে কাটুন। আদা-রসুন-কাঁচা ও শুকনো মরিচও কুচি করে কেটে নিন। এবার মুরগি ভালো করে ধুয়ে একটা পাত্রে রাখুন। কেটে রাখা মুরগিতে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ, হলুদ আর লবণ দিন। পরিমাণমতো সরিষার তেল দিন। এরপর খুব ভালো করে মেখে নিন। এবারে দুই ঘণ্টা রেখে দিন ঢাকনা দিয়ে। মাথা, খোলা ও পা বাদ দিয়ে কুচো চিংড়ি ভালো করে ধুয়ে খুব মিহি করে বেটে নিন। একটা ছোট ডেকচি বা কড়াইয়ে অল্প সরিষার তেল দিন। চিংড়িবাটা মুরগিমাখায় মিশিয়ে দিন। তেল গরম হয়ে গেলে মুরগিমাখা কড়াইয়ে ছাড়ুন। আঁচ কমিয়ে রাখুন। ৩ থেকে ৪ মিনিট নাড়ুন। তারপর আঁচ একেবারে কমিয়ে দিয়ে ঢেকে দিন ভালোভাবে, যেন খুব বেশি বাষ্প বেরিয়ে যেতে না পারে। আধাঘণ্টা পর ঢাকনা খুলে আধাকাপ পানি দিন। এরপর আবার ঢাকনা চাপা দিয়ে ১০ মিনিট খুব কম আঁচে রান্না করুন। এবার উনুন বন্ধ করে দিন। কিন্তু কড়াইয়ের ঢাকনা খুলুন আরও ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর। ব্যস, হয়ে গেছে আপনার গোয়ালন্দ চিকেন কারি।
আপনারা যারা নিয়মিত ইউটিউব দেখেন কিংবা খাবার দাবার নিয়ে ন্যূনতম খোঁজখবর রাখেন, তাঁরা এই খাবারটির নাম জানেন। এর নাম গোয়ালন্দ চিকেন কারি। তবে মনে রাখতে হবে যে, ‘গোয়ালন্দ চিকেন কারি’ নামটি কিন্তু যারা রান্না করতেন, তাঁরা দেন নাই। কারা রান্না করতেন এই খাবার?
এইখানে একটা গল্প আছে। সেটাই বলি। এই খাবারটির ইতিহাস ঘেঁটেঘুঁটে যা পেয়েছি, সেটা আপনারাও জানেন, এটা মাঝিদের খাবার। সৈয়দ মুজতবা আলী কিংবা ধীরাজ ভট্টাটার্যের মতো লেখকেরা তাঁদের লেখায় এই খাবারটির সুখ্যাতি করেছেন বলে এটি জাতে উঠে গেছে। সেটা ভালোই হয়েছে। এই নামটি কিন্তু লেখকদেরই দেওয়া। মাঝিদের খাবার বিষয়টা আসলে কী? বিষয়টা হলো, মাঝিরা নৌকায় মাছ ধরার সময় যে খাবার রান্না করে ও খায়, সেটাই। এই সরল বিষয়টিতে বেশ কয়েকটি বিষয় লুকিয়ে আছে। সেগুলোর মধ্যে একটি হলো, নৌকার হেঁশেল আর ডাঙার রান্নাঘরের পার্থক্য আছে বিস্তর। ডাঙায় হেঁশেলের যেকোনো উপকরণ বাড়ন্ত হলে অন্য কারো বাড়ি থেকে নিয়ে আসা যায় সহজে। জলে বা নৌকায় সে উপায় খুবই সীমিত। ফলে সেখানে যা রান্না হয় তার এপ্রোচ থাকে একেবারে বেসিক। অর্থাৎ স্বাদের বাহুল্যের দরকার নাই বাবা, বেঁচে বর্তে থাক; ডাঙায় উঠে দেখা যাবে।
অন্য বিষয়টি হলো, এটি পুরুষদের রান্না করা খাবার। মাঝি শব্দটি নিত্যপুরুষ বাচক। ‘পাটনী’ শব্দে দীর্ঘ ই কার আছে বলেই মনে করার কোনো কারনে নেই যে সেটি স্ত্রী বাচক শব্দ। ‘পাটনী’ অর্থ হলো খেয়াঘাটের মাঝি বা পারঘাটায় নৌকা চালানো ব্যক্তি। সেই ব্যক্তিটি সাধারণত পুরুষ হয়ে থাকেন। ফলে মাঝিদের রান্না আসলে পুরুষের রান্না। এখানে বলে রাখা ভালো যে, পুরুষের রান্নার বৈশিষ্ট্য নারীদের রান্না থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে থাকে।
গোয়ালন্দ চিকেন কারির উপকরণ বেশ অন্যরকম। দেশি মুরগির সঙ্গে এ খাবারের মূল চরিত্র কুঁচো চিংড়ি। ইদানীং দেখছি অনেক রেসিপি লেখক লিখছেন, এর মূল উপাদান চিংড়ির শুঁটকী! বিষয়টি খানিক হাস্যকর আরকি। এ খাবারটি যে অঞ্চলের, অর্থাৎ গোয়ালন্দ মানে রাজবাড়ি জেলা, সেসব অঞ্চলের খাবার খুঁজে দেখলেই বোঝা যাবে শুঁটকীর বিষয়টি ভুল। ওই অঞ্চলের মানুষ সাধারণত মাংসের সঙ্গে শুঁটকী খায় না। ফলে তাজা কুঁচো চিংড়ি হওয়াই সহজ। এতে ব্যবহার করা সব উপকরণ খুবই সরল প্রকৃতির। এই সরিসার তেল, কুচিকুচি করে কাটা কাঁচা মরিচ, রসুন, পেঁয়াজ ও শুকনো মরিচ। আর কুঁচো চিংড়ি বাটা। এর সঙ্গে ছোট টুকরো করে কাটা দেশি মুরগির মাংস।
একসময়ের জনপ্রিয় এই খাবার বিস্মৃতির গহ্বরে তলিয়ে গিয়েছিল সম্ভবত নদীবন্দর হিসেবে গোয়ালন্দ তার গুরুত্ব হারানোর সঙ্গে সঙ্গে। সম্প্রতি নেটে ছড়িয়ে পড়ে এই খাবারের বিভিন্ন রেসিপি। কিন্তু একাধিক রেসিপি সংগ্রহ করে দেখা গেছে, সেগুলোর সঙ্গে আমাদের সুপরিচিত দেশি মুরগির ঝোলের তেমন পার্থক্য নেই। সেসব তাই পত্রপাঠ বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় নামে এক লেখকের সংগ্রহ করা রেসিপিটি বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে আমাদের কাছে। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় নিজেও লিখেছিলেন যে, এই রেসিপিটি তাঁর কাছে ‘আদি’র কাছাকাছি মনে হয়েছে।
ইতিহাস-ভূগোল থেকে বেড়িয়ে চলুন এবার রান্নাটা করেই ফেলি। বেলা তো বয়ে গেল!
উপকরণ: দেশি মুরগি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, কাঁচা ও শুকনো মরিচ, হলুদ, লবণ, সরিষার তেল, কুঁচো চিংড়ি মাছ। সব উপকরণ পরিমাণমতো নিতে হবে।
প্রণালি: পেঁয়াজ কুচি কুচি করে কাটুন। আদা-রসুন-কাঁচা ও শুকনো মরিচও কুচি করে কেটে নিন। এবার মুরগি ভালো করে ধুয়ে একটা পাত্রে রাখুন। কেটে রাখা মুরগিতে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ, হলুদ আর লবণ দিন। পরিমাণমতো সরিষার তেল দিন। এরপর খুব ভালো করে মেখে নিন। এবারে দুই ঘণ্টা রেখে দিন ঢাকনা দিয়ে। মাথা, খোলা ও পা বাদ দিয়ে কুচো চিংড়ি ভালো করে ধুয়ে খুব মিহি করে বেটে নিন। একটা ছোট ডেকচি বা কড়াইয়ে অল্প সরিষার তেল দিন। চিংড়িবাটা মুরগিমাখায় মিশিয়ে দিন। তেল গরম হয়ে গেলে মুরগিমাখা কড়াইয়ে ছাড়ুন। আঁচ কমিয়ে রাখুন। ৩ থেকে ৪ মিনিট নাড়ুন। তারপর আঁচ একেবারে কমিয়ে দিয়ে ঢেকে দিন ভালোভাবে, যেন খুব বেশি বাষ্প বেরিয়ে যেতে না পারে। আধাঘণ্টা পর ঢাকনা খুলে আধাকাপ পানি দিন। এরপর আবার ঢাকনা চাপা দিয়ে ১০ মিনিট খুব কম আঁচে রান্না করুন। এবার উনুন বন্ধ করে দিন। কিন্তু কড়াইয়ের ঢাকনা খুলুন আরও ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর। ব্যস, হয়ে গেছে আপনার গোয়ালন্দ চিকেন কারি।
বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে টানা আট বছর ধরে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে ইউরোপের উত্তরের দেশ ফিনল্যান্ড। শুধু সুখের জন্য নয়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যও দেশটির খ্যাতি বিশ্বজোড়া। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে শুরু করে চোখধাঁধানো নর্দার্ন লাইটস, ফিনল্যান্ড শুধু কর্মজীবীদের জন্যই নয়, বরং...
১২ ঘণ্টা আগেস্থাপত্যের জগতে এখন সম্ভবত জাপান যুগ চলছে। কিংগো কুমা, টাডাও আন্দো, শিগেরু বানসহ আধুনিক স্থাপত্যের গুরুদের সাতটি অনন্য সৃষ্টি যেন সে কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বিশ্ববাসীকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য ও আধুনিক প্রযুক্তি একসঙ্গে মিলে অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা তৈরি করছে জাপানিজ আধুনিক স্থাপত্যকলায়।
১৩ ঘণ্টা আগেভিয়েতনামের শহর থেকে গ্রাম, সমুদ্র থেকে পাহাড়—সব জায়গায় মোটরবাইক চালিয়ে ঘুরে দেখা এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। নিজের গতিতে ভিয়েতনাম ঘুরে দেখতে চাইলে মোটরবাইক হতে পারে আপনার সেরা সঙ্গী। তবে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় ভ্রমণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম ও প্রস্তুতি জানা জরুরি।
১৪ ঘণ্টা আগেপ্রতিদিনের ছোট ছোট ভুল অভ্যাস আমাদের দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। আমরা অনেক সময় বুঝতে পারি না, নিয়মিত খাওয়ার সময়ে কত রকম অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে উঠেছে। সেই সাধারণ ভুলগুলো জানা থাকলে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করুন। আর জানা না থাকলে জেনে নিয়ে তারপর বাদ দিন।
১ দিন আগে