Ajker Patrika

বিরতির পর ফিটনেস রুটিনে ফিরতে

এলিজা চৌধুরী
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৩: ১৫
বিরতির পর ফিটনেস রুটিনে ফিরতে

দীর্ঘ এক মাসের রোজা আর ঈদের ছুটি শেষে জীবন আবার চিরাচরিত নিয়মে ফিরছে। রোজা আর ঈদ মিলিয়ে নিয়মিত ফিটনেস রুটিন গিয়েছিল বদলে। ফলে যারা যোগব্যায়াম করতেন, দীর্ঘ বিরতির পর তাদের সময় এসেছে কিছু নিয়ম মেনে আবার যোগ ব্যায়াম শুরু করার।

নতুন করে ফেরা
দীর্ঘ বিরতি থেকে ফিরে সরাসরি কঠিন বা অ্যাডভান্স যোগাসনের অনুশীলন না করাই ভালো। প্রতিদিন যোগাসন অনুশীলন শুরুর আগে ওয়ার্ম-আপ করে শরীরের প্রতিটি সংযোগস্থল ও পেশি সচল করে নিতে হবে। তারপর নিয়মিত আসন করতে হবে। সহজ আসন থেকে ধীরে ধীরে কঠিন আসনগুলোর অনুশীলন করতে হবে। নয়তো হঠাৎ বেশি চাপ পড়ার কারণে মাথা ব্যথা, হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথাসহ শরীরে বিভিন্ন পেশি ও জায়গায় ব্যথা শুরু হতে পারে।

খাবারে লাগাম দিন
ঈদে প্রচুর খাওয়া দাওয়া হয়েছে। তাই এক সপ্তাহে হুট করে ওজন কমানোর আশা করবেন না। যদি স্বাস্থ্য রক্ষা করতে চান তাহলে এখন খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করুন। যেসব খাবারে পরিশোধিত চিনি ব্যবহার করা হয় সেগুলো এড়িয়ে চলুন। আর মাছ মাংস জাতীয় ভারী খাবার যতটা সম্ভব অল্প খান। সবুজ শাক-সবজি ও ফলমূল পরিমাণ মতো খেতে থাকুন। খাওয়ার পাঁচ মিনিট আগে চেষ্টা করবেন এক থেকে দুই গ্লাস পানি খেয়ে নিতে। যে বেলায় খাবার বেশি হবে সে বেলায় খাবারের পর বজ্রাসনে বসুন। শুধু হাঁটু ভেঙে বজ্রাসনে বসলেই হবে না। বজ্রাসনে বসে হাত মুঠি পাকিয়ে থাই থেকে হাঁটু পর্যন্ত মৃদু পাঞ্চ দিতে থাকুন। পাঞ্চ করতে করতে একবার হাত সামনে হাঁটুর দিকে নিন। আবার পাঞ্চ করতে করতে হাত পেছনে থাইয়ের দিকে আনুন। এভাবে  দুই থেকে পাঁচ মিনিট করুন। এটি খাবার দ্রুত হজমে সহায়তা করবে।

বাড়তি ওজন কমাতে
আমাদের দেশে রমজান মাসে বেশি খাওয়া হয়। ফলে ওজন বেড়ে যায়। এ অবস্থায় ওজন কমানোর জন্য হটযোগ, থেরাপিউটিক যোগ বা বিন্যাস ফ্লো বেশি ফলপ্রসূ হবে। এর মাঝে কিছু আসন আছে যা নিয়মিত বেশি সময় নিয়ে চর্চা করলে ওজন কমবে দ্রুত। যেমন, সূর্য নমস্কার প্রতিদিন ৫০ রাউন্ড করতে পারলে ওজন কমানো সহজ হবে। এ ছাড়া জানুশিরাসন, পশ্চিমোত্তানাসন, সর্পাসন, পর্বতাসন, দণ্ডাসন, নৌকাসনের মতো আসনগুলো নিয়মিত চর্চা করলে দ্রুত ওজন কমবে।

সানস্যালুটেশন আসন
সাধারণত ১ থেকে ১২টি আলাদা আলাদা আসন নিয়ে সানস্যালুটেশনের ১টি সার্কেল বা ১ রাউন্ড ধরা হয়। এটি একেক জন একেক ভাবে করে থাকেন। যেমন, ১-৬, ১-১০, ১-১২, ১-১৬, ১-১৮টি আসনের মধ্যে করে থাকেন। তবে সহজ হিসেবে ধরা হয় ১-১২ এর যে রাউন্ড সেটকে। ১-১২ এর আসনগুলো হলে, অঞ্জলিমুদ্রা, হস্থউত্থানাসন, পদহস্তাসন, অর্শ্বসঞ্চালনাসন, পর্বতাসন, অষ্টাঅঙ্গা নমস্কার, ভুজঙ্গাসন, পর্বতাসন, অর্শ্বসঞ্চালনাসন, পদহস্তাসন, ব্যাক বেন্ডিং ও অঞ্জলিমুদ্রা। এই ১২টি আসন একটানা শেষ করলে ১ রাউন্ড হয়।

করার নিয়ম
ইয়োগা ম্যাটে দাঁড়ান। দুই পায়ের পাতা এক সঙ্গে রেখে দুই হাতের তালু কোমরের দুই পাশে সমানভাবে রাখুন। স্বাভাবিক শ্বাস নিন। দুই হাতের তালু এক সঙ্গে করে নমস্কার মুদ্রা করুন। এবার শ্বাস নিতে নিতে ব্যাক বেন্ডিং করুন। আবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পদহস্তাসনে যান। শ্বাস নিতে নিতে অর্শ্বসঞ্চালনাসন করুন। এবার পর্বতাসনে যান এবং শ্বাস আটকে রাখুন। এবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে অষ্টাঅঙ্গা নমস্কারে চলে যান। শ্বাস নিতে নিতে ভুজুঙ্গাসন করুন। আবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পর্বতাসনে চলে যান এবং অপেক্ষা না করে শ্বাস নিতে নিতে অর্শ্বসঞ্চালনাসনে চলে যান। আবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পদহস্তাসনে যান। এবার শ্বাস নিতে নিতে ব্যাক বেন্ডিং করুন। তারপর শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে নমস্কার মুদ্রা করুন ও শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করুন।

একই নিয়মে ৩ থেকে শুরু করে ৩০ বা তারও বেশি যতবার পারবেন করুন। প্রতি ৩ বা ৪ রাউন্ড পর পর দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ আরাম করুন। তারপর আবার সানস্যালুটেশন শুরু করুন। সম্পূর্ণ শেষ হলে শবাসনে বিশ্রাম করুন।

উপকারিতা ও সতর্কতা
সানস্যালুটেশন বা সূর্যনমষ্কারকে বলা হয় যোগব্যায়ামের রাজা। এই আসন ৩ রাউন্ড করলে যতটা উপকার পাওয়া যায় অন্য কোনো আসন তার বেশি সময় করলেও ততটা উপকার পাওয়া যায় না। এটি রক্তসঞ্চালণ বাড়ায়, শরীরের টক্সিন দূর করে, স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, ফুসফুস ভালো রাখে, যৌবন ধরে রাখে, শরীরে দুর্গন্ধ হতে দেয় না, পেটের চর্বি ও ওজন কমাতে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, দেহের নমনীয়তা বাড়ায়, থাইরয়েড, গলা, ফুসফুস ও পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে, স্বাভাবিক প্রসবে সাহায্য করে, উচ্চতা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, গর্ভকাল চলছে, মাইগ্রেন ও আলসার রয়েছে তাঁরা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া এই আসন করবেন না।

লেখক: এলিজা চৌধুরী,প্রশিক্ষক ও স্বত্বাধিকারী এলিজা’স ইয়োগার্ট–ইয়োগা ও ওয়েলবিং সেন্টার 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

পুরো সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বিএনপি বিরোধিতা করেছে: নাহিদ

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

১২ দেশ নিয়ে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা

ফিচার ডেস্ক
১২ দেশ  নিয়ে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা

‘১৩তম বিমান বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার ২০২৫’ শুরু হচ্ছে ৩০ অক্টোবর থেকে। বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করছে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)। এতে অংশ নিচ্ছে পাকিস্তান, নেপাল, ভুটানসহ ১২টি দেশের পর্যটনসংশ্লিষ্ট সংস্থা, ট্যুর অপারেটর ও ট্রাভেল এজেন্টরা।

টোয়াবের পরিচালক (বাণিজ্য ও মেলা) মো. তাসলিম আমিন শোভন বলেন, এবারের মেলা আগের বছরের তুলনায় অনেক আকর্ষণীয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেলায় পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটানের জাতীয় পর্যটন সংস্থা এবং ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশন অংশ নিচ্ছে। এ ছাড়া থাকছে পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও তুরস্কের ট্যুর অপারেটর এবং ট্রাভেল এজেন্টরা।

এবারের মেলায় ৪টি হলে ২০টি প্যাভিলিয়নসহ ২২০টি স্টল থাকবে। থাকবে সাইড লাইন ইভেন্ট হিসেবে বিটুবি সেশন, সেমিনার ও কান্ট্রি প্রেজেন্টেশন। এ ছাড়া মেলায় আসা দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন সাংস্কৃতিক আয়োজন এবং দেশের পর্যটন গন্তব্যের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে।

টোয়াবের সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন হলো টোয়াব। ২০০৭ সাল টোয়াব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় পর্যটন মেলা বিমান বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার আয়োজন করে আসছে। পর্যটন সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং এর টেকসই উন্নয়ন এই মেলার প্রধান উদ্দেশ্য।’

রাফেউজ্জামান আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এবারের পর্যটন মেলা ব্যবসায়ী, দেশি-বিদেশি পর্যটক এবং পর্যটনশিল্পসংশ্লিষ্ট সবার মাঝে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে। এই মেলা বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের প্রসার ঘটাবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মেলায় প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা। তবে শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধা ও জুলাই যোদ্ধারা বিনা মূল্যে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

পুরো সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বিএনপি বিরোধিতা করেছে: নাহিদ

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শ্রীলঙ্কায় নারীদের একক ভ্রমণ কি নিরাপদ

ফিচার ডেস্ক
শ্রীলঙ্কায় নারীদের একক ভ্রমণ কি নিরাপদ

সবুজ চা-বাগান, পুরোনো মন্দির আর শান্ত সমুদ্রসৈকতের দেশ দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। ভ্রমণের জন্য যথেষ্ট আয়োজন থাকলেও দেশটি কি নারীদের একক ভ্রমণে নিরাপদ?

নিরাপত্তার বাস্তব চিত্র

জাপান বা সিঙ্গাপুরের মতো ‘কম ঝুঁকির’ দেশ নয় শ্রীলঙ্কা। সেখানকার পরিবহনব্যবস্থা কখনো জটিল মনে হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, অসুবিধা ও বিপদ—এই দুই পার্থক্য বোঝা।

দৃষ্টি ও মনোযোগ

শ্রীলঙ্কায় ‘তাকিয়ে থাকা’ বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক, বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকদের দিকে। কেউ চায়ের দোকানে বসে তাকিয়ে থাকবে, কেউ ট্রেনে উঠে কৌতূহলীভাবে দেখবে। এটা অভদ্রতার প্রকাশ নয়, তাদের সামাজিক অভ্যাস।

চুরি বা পকেটমারের ঝুঁকি

অন্য অনেক দেশের তুলনায় শ্রীলঙ্কায় ছোটখাটো চুরি বা পকেটমারের ঘটনা কম। তবু বড় শহর বা জনাকীর্ণ জায়গায় সতর্ক থাকা জরুরি। দামি ক্যামেরা বা নতুন ফোন সামলে রাখা ভালো। ব্যাগ বা পাসপোর্ট সব সময় নিরাপদে রাখুন। রাতে অচেনা রাস্তায় একা বের না হওয়াই ভালো।

স্থানীয়দের সঙ্গে আচরণ

শ্রীলঙ্কানরা অতিথিপরায়ণ। সে দেশে কেউ জানতে চাইবে, আপনি কোথা থেকে এসেছেন। কেউ বলে দেবে, কোথায় যেতে কোন ট্রেন ধরতে হবে।

ভ্রমণের টিপস

  • মন্দিরে প্রবেশের সময় কাঁধ ও হাঁটু ঢেকে রাখুন।
  • রাতে অচেনা এলাকায় একা ঘোরাঘুরি করবেন না।
  • গণপরিবহনের চেয়ে প্রাইভেট বা রাইড শেয়ার সার্ভিস নিরাপদ।
  • স্থানীয় নারীরা যেসব গেস্টহাউস কিংবা হোস্টেল থাকে, থাকার জন্য সেগুলো বেছে নিন।

সূত্র: দ্য এজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

পুরো সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বিএনপি বিরোধিতা করেছে: নাহিদ

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এক বাজারেই পুরোনো মোটরসাইকেলের ৫০ শোরুম, জমজমাট বেচাকেনা

 রিমন রহমান, রাজশাহী
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার মহেন্দ্র বাজারের একটি পুরোনো মোটরসাইকেল শোরুমে ক্রেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার মহেন্দ্র বাজারের একটি পুরোনো মোটরসাইকেল শোরুমে ক্রেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাজারটির নাম মাহেন্দ্রা। এখাতে বিভিন্ন পণ্যের দোকান কমছে দিন দিন। সেগুলোতে চালু হচ্ছে পুরোনো মোটরসাইকেলের শোরুম। ছোট্ট বাজারটিতে এখন এমন শোরুমের সংখ্যা ইতিমধ্যে হয়ে গেছে অন্তত ৫০টি। রাজশাহী শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরের এই বাজার পড়েছে পুঠিয়া উপজেলায়। সব ধরনের পুরোনো মোটরসাইকেলের এই মোকাম এখন জমজমাট।

শুধু রাজশাহী শহরই নয়, আশপাশের সব উপজেলা থেকে মানুষ এখানে পুরোনো মোটরসাইকেল কিনতে কিংবা বিক্রি করতে আসে। আশপাশের জেলা থেকেও ক্রেতারা আসেন পছন্দের মোটরসাইকেলটি খুঁজে নিতে। এখানে শোরুম বেশি, তাই ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও বেশি। তাই এখানে তুলনামূলক কম দামে মোটরসাইকেল পাওয়া যায়।

গত সোমবার সকালে মাহেন্দ্রা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কোনো শোরুমে ক্রেতাদের সঙ্গে চলছে দরদাম, কোনো কোনোটিতে কর্মচারীরা মোটরসাইকেল পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত। পুরোনো মোটরসাইকেলও তাই দেখাচ্ছে নতুনের মতো। শোরুমগুলোতে আশির দশকের হোন্ডা সিজি-১২৫, হোন্ডা সি-৯০, সুজুকি এ-৮০, ইয়ামাহা এএক্স-১০০-এর মতো পুরোনো মডেলের পাশাপাশি হালের জনপ্রিয় মোটরসাইকেলগুলোও আছে।

মোটরসাইকেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে এখানে প্রথম পুরোনো মোটরসাইকেল কেনাবেচা শুরু হয়েছিল ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি শোরুমে। ফয়সাল আহমেদের পরে পলান, আরিফ ও জাহাঙ্গীর শোরুম দেন এখানে। বেচাকেনার অবস্থা ভালো দেখে গত চার বছরে আরও অন্তত ৪৫টি শোরুম গড়ে উঠেছে এখানে। সবার ব্যবসা চলছে। এখান থেকে কেউ একটি মডেলের মোটরসাইকেল কেনার পর চাইলে সেটি আবার ফেরত দিয়ে অন্য মডেলের মোটরসাইকেলও নিতে পারেন।

পুঠিয়ার মহেন্দ্র বাজারের শোরুমগুলোতে চুরি যাওয়া কোনো মোটরসাইকেল বিক্রি হয় না। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুঠিয়ার মহেন্দ্র বাজারের শোরুমগুলোতে চুরি যাওয়া কোনো মোটরসাইকেল বিক্রি হয় না। ছবি: আজকের পত্রিকা

কথা হয় অরণ্য-অপূর্ব এন্টারপ্রাইজের মালিক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পুরোনো মোটরসাইকেলের জন্য এই জায়গা এখন বিখ্যাত হয়ে গেছে। ৫০-৫২টা শোরুম। কাস্টমার এলে ঘুরে যায় না। শোরুম ঘুরে ঘুরে একটা না একটা মোটরসাইকেল দামে-দরে মিলে যায়। এখানে দাম কম নয়, আবার বেশিও নয়। সবার মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা আছে। তাই যেটা সঠিক দাম, সেভাবেই বিক্রি হয়। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা দুপক্ষই খুশি থাকে।’

রফিকুল ইসলাম জানান, তাঁর শোরুমটি আগে মাছের খাবারের দোকান ছিল। সেই দোকান তুলে পুরোনো মোটরসাইকেলের শোরুম করেছেন। এভাবেই আগের বিভিন্ন জিনিসপত্রের দোকানগুলো শোরুম হয়ে যাচ্ছে। এখানে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০টি মোটরসাইকেল কেনাবেচা হয়।

মেসার্স আবতার এন্টার প্রাইজের কর্মচারী শাহাদ আলী জানান, এ জায়গার নাম সবখানে ছড়িয়ে গেছে। রাজশাহী শহর ও আশপাশের সব উপজেলা থেকে এখানে মানুষ মোটরসাইকেল বিক্রি করতে আসে। একইভাবে অনেক মানুষ গাড়ি কিনতেও আসে। রাজশাহীর পাশাপাশি নওগাঁ, নাটোর ও বগুড়া থেকে ক্রেতারা এখানে মোটরসাইকেল কিনতে আসে।

শাহেদ বলেন, ‘এখানে কেউ গাড়ি (মোটরসাইকেল) বিক্রি করতে এসে ফিরে যায় না। এতগুলো শোরুম, কোথাও না কোথাও দামে-দরে মিলে যায়। তারা গাড়ি বিক্রি করে। এমনও হয় যে নতুন গাড়ি কেনার ১৫ দিনও হয়নি। কেনার পর পছন্দ হচ্ছে না বলে মালিক বিক্রি করতে এসেছেন। গাড়ির যেমন অবস্থা থাকে, সে অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা হয়। কেউই যাতে না ঠকে।’

রাজশাহীর বাগমারা থেকে মোটরসাইকেল কিনতে এসেছিলেন ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখানে খুব ভালো ভালো গাড়ি পাওয়া যায়। এমন কোনো গাড়ি নেই যে সেটা পাওয়া যায় না। তাই দেখেশুনে শোরুমে ঘুরে ঘুরে দাম করে গাড়ি কেনা যায়। বিষয়টা জেনেই এসেছি।’

রাজশাহীর নওহাটা থেকে মোটরসাইকেল বিক্রি করতে গিয়েছিলেন শাহাদত হোসেন। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ টাকার দরকার। তাই গাড়িটা বেচতে এসেছি। কয়েকটা শোরুমে দেখিয়ে দাম জানলাম। আরও কয়েকটা দেখব। যেখানে দাম বেশি পাব, সেখানে দিয়ে চলে যাব।’

কথা হয় মোহাম্মদ মোটরস নামের একটি শোরুমের মালিক মো. শাহীনের সঙ্গে। শাহীন জানান, আগে তিনি ট্রাক চালাতেন। সড়কে দুর্ঘটনা বেশি। তাই বিকল্প কিছু করার কথা ভাবছিলেন। খেয়াল করেন, বাজারে পুরোনো মোটরসাইকেলের ব্যবসা জমজমাট। তাই ৩ মাস আগে তিনিও শোরুম দিয়েছেন। বেচাকেনা বেশ ভালো হচ্ছে বলেও জানান শাহীন।

তিনি জানান, তাঁরা চুরি করে আনা কোনো মোটরসাইকেল কেনেন না। তাই এ বাজার থেকে মোটরসাইকেল কিনলে কোনো ঝুঁকি নেই। শাহীন বলেন, ‘আমরা কেনার সময় প্রথমেই গাড়ির কাগজপত্র দেখি। বিআরটিএর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। গাড়ির নম্বর দিয়ে বিআরটিএর কাছে জানতে চাই, কোনো সমস্যা আছে কি না। তারা অনলাইনে সার্চ করে দেখে মালিকের নাম নিশ্চিত করে। কোনো সমস্যা আছে কি না জানিয়ে দেয়। সব ঠিক থাকলে কিনি। কাগজপত্র ছাড়া গাড়ি কোনো শোরুমেই কেনা হয় না। এমন গাড়ি ফেরত যায়।’

যাঁরা পুরোনো মোটরসাইকেল কিনবেন, তাঁদের জন্য কিছু পরামর্শও আছে শাহীনের। জানালেন, এখন প্রায় সব মোটরসাইকেলের ফুয়েল ট্যাংকে মরিচা পড়ার সমস্যা আছে। তাই আগেই সেটা দেখতে হবে। মোটরসাইকেল কত কিলোমিটার চলেছে, তা মিটার দেখে কেনা যাবে না। মিটারের কিলোমিটারের হিসাব পরিবর্তন করা যায়। মোটরসাইকেল কিনতে হবে সাল, মডেল ও ইঞ্জিনের অবস্থা দেখে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

পুরো সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বিএনপি বিরোধিতা করেছে: নাহিদ

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভ্রমণ থেকে বাড়ি ফিরুন ছারপোকামুক্ত লাগেজ নিয়ে

ফিচার ডেস্ক
ভ্রমণ থেকে বাড়ি ফিরুন ছারপোকামুক্ত লাগেজ নিয়ে

ভ্রমণ মানেই শান্তি। কিন্তু শান্তির খোঁজে গিয়ে যদি পোকামাকড়ের উৎপাত সহ্য করতে হয়, তাহলে বিরক্তির শেষ থাকে না। ঘুরতে গিয়ে হোটেল রুমের নিরাপত্তা যেমন জরুরি, তেমনই ছারপোকামুক্ত একটি বিছানাও জরুরি। ‘পেস্ট ক্লিনিক’-এর তথ্য অনুসারে, হোটেল রুমের বিছানাগুলোতে ছারপোকার উৎপাত সাধারণ সমস্যা। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ঘর যতই ঝকঝকে দেখাক না কেন, সে ঘরেও বেড বাগ থাকতে পারে। কারণ এই পোকাগুলো ময়লার দিকে আকৃষ্ট হয় না; বরং তারা আকৃষ্ট হয় কার্বনডাই-অক্সাইড, রক্ত ও উষ্ণতার দিকে। আর এ জিনিসগুলো যেকোনো ঘুমন্ত মানুষের কাছে পাওয়া তাদের জন্য খুবই সহজ। রুমে ঢোকার পর বিছানা, তোশক, সোফার কোনা এবং ড্রয়ারগুলো সাবধানে পরীক্ষা করে নিন।

ছারপোকা ব্যাগে করে বাড়ি নিয়ে না আসতে চাইলে

ভ্রমণ শেষে আপনার লাগেজ বা কাপড়ে করে বেড বাগ বা ছারপোকা কেউই বাড়িতে নিয়ে আসতে চায় না। কিন্তু তার উপায় জানে না বেশির ভাগ মানুষ। এটি মোকাবিলার একটি সহজ উপায় বাতলে দিয়েছেন ‘ডায়মন্ড এক্সটারমিনেটর্স’-এর মালিক জেরি ইয়েসন। তিনি জানান, ভ্রমণ ব্যাগের ফার্স্ট এইড কিটে থাকা রাবিং অ্যালকোহল দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে লাগেজের ভেতর লুকিয়ে থাকা বেড বাগ মেরে ফেলতে হবে। ইয়েসনের মতে, রাবিং অ্যালকোহল পোকার বাইরের খোলস দ্রবীভূত করে দেয়, যা ভেতরের দিক থেকে সেটিকে পানিশূন্য করে ফেলে। সে কারণে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে এরা মারা যায়। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এটি ডিম বা গভীরভাবে লুকিয়ে থাকা পোকা দূর করে না।’ অর্থাৎ আপনাকে এরপরও কিছু অতিরিক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।

পেস্ট কন্ট্রোল বিশেষজ্ঞ জর্জিয়োস লিয়াকোপুলোস বলেন, ‘৭০ শতাংশ ঘনত্বের অ্যালকোহল সবচেয়ে ভালো। কারণ এতে থাকা পানির উপাদান পোকার খোলের গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করে।’

বিজ্ঞানের চোখে সতর্কতা ও বিপদ

বিশেষজ্ঞদের দাবিগুলো বিজ্ঞান গবেষণায় আংশিকভাবে সমর্থনযোগ্য। ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্ক পোকার ওপর অ্যালকোহল প্রয়োগে ফলাফলের হার বেশ কম। তবে লার্ভা মারতে উচ্চমাত্রার অ্যালকোহল সরাসরি স্প্রে করা কার্যকর। গবেষক অলিম্পিয়া ফার্গুসন উল্লেখ করেছেন, এ গবেষণায় ব্যবহৃত স্যাম্পলের পরিমাণ বেশি ছিল এবং তা ব্যবহারিক বা নিরাপদ নাও হতে পারে। রাবিং অ্যালকোহল সাবধানে এবং অল্প পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত। কারণ এটি অত্যন্ত দাহ্য। অ্যালকোহলের ভুল ব্যবহার অনিরাপদ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

সেরা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

পোকার উপদ্রব এড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো প্রতিরোধ। এ ব্যবস্থা ভ্রমণের একেবারে শুরু থেকে করা উচিত। যুক্তরাজ্যভিত্তিক হলিডে হোম প্ল্যাটফর্ম পার্ক লিংকের পরিচালক ও ভ্রমণ বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল ক্লার্ক। তিনি জানিয়েছেন, লাগেজ রাখার জন্য আদর্শ জায়গা হলো বাথটাব। কারণ এটি সহজে পরিষ্কার করা যায় এবং এটি ঘরের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন জায়গাগুলোর মধ্যে একটি। বাথটাব ঘন ঘন পরিষ্কার করা হয়। যদি বাথটাব না থাকে, তবে ঝরনার জায়গার আশপাশে লাগেজ রাখতে পারেন। ঝরনা ব্যবহারের আগে সেগুলো সরিয়ে রাখবেন অবশ্যই।

বাড়িতে পোকা চলে এলে কী করবেন

যদি আপনি ভুল করেও বেড বাগ বাড়িতে নিয়ে আসেন, তবে সেগুলো দূর করতে রাটগার্স ইউনিভার্সিটির দেওয়া কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করার চেষ্টা করুন।

তাপ বা বাষ্প পদ্ধতি: উচ্চ তাপমাত্রার বাষ্প বা তাপ পোকা ও ডিম মারতে অত্যন্ত কার্যকর।

ফ্রিজিং পদ্ধতি: জিনিসপত্র নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খুব ঠান্ডা তাপমাত্রায় রাখলে পোকা মারা যায়।

ভ্যাকুয়াম পদ্ধতি: যতটা সম্ভব সবকিছু ভালো করে ভ্যাকুয়াম করুন।

লাগেজ ছারপোকামুক্ত রাখতে যা করবেন

ছারপোকামুক্ত থাকতে ভ্রমণের আগে ও পরে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। যেহেতু বিছানার পোকা সাধারণত ভ্রমণের সময় হোটেল বা অন্যান্য জায়গা থেকে লাগেজে বাসা বাঁধতে পারে, তাই নিচের পরামর্শগুলো অনুসরণ করতে পারেন।

ভ্রমণে যাওয়ার আগে: শক্ত বা হার্ড-শেল লাগেজ ব্যবহার করুন। কাপড়ের ব্যাগের তুলনায় শক্ত খোলসযুক্ত লাগেজ পোকাদের লুকিয়ে থাকার সুযোগ কমিয়ে দেয়। সেগুলো পরিষ্কার করা সহজ।

অপ্রয়োজনীয় জিনিস এড়িয়ে চলুন: লাগেজ যতটা সম্ভব হালকা রেখে প্রয়োজনীয় জিনিস নিন। কম জিনিস মানে পোকা লুকিয়ে থাকার জায়গা কম।

সূত্র: ট্রাভেল+লিজার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

পুরো সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বিএনপি বিরোধিতা করেছে: নাহিদ

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত