Ajker Patrika

কাঁঠালের মতো দেখতে ডুরিয়ানই কি সবচেয়ে তীব্র গন্ধের ফল

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ৩১
কাঁঠালের মতো দেখতে ডুরিয়ানই কি সবচেয়ে তীব্র গন্ধের ফল

গত বছরের আগস্টে মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম। তার আগে থেকেই অবশ্য ডুরিয়ান নামের ফলটার গল্প শুনেছিলাম। কী শুনেছিলাম? মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাওয়া যাওয়া ফলটা নাকি ভারি সুস্বাদু। মালয়েশিয়া ভ্রমণের আগে আমার এক সহকর্মী তো আবদারই করে বসলেন তাঁর জন্য গোটা কয়েক ডুরিয়ান নিয়ে আসতে। তবে তখন আমি কেবল ডুরিয়ানের স্বাদের ব্যাপারেই শুনেছিলাম, গন্ধের ব্যাপারে নয়। 

তো মালয়েশিয়ায় গিয়ে সেখানে বসবাস করা শালী ডোনা ও ভায়রা সেলিমের সঙ্গে বেড়াতে বের হয়ে প্রথম ডুরিয়ান দেখলাম, গ্যানটিং হাইল্যান্ডে যাওয়ার পথে। রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে, দুজন লোক বিক্রি করছিলেন। আমাদের গাড়িটা সমস্যা করছিল, তাই থামাতে হয়েছিল সেখানে। পাশেই উঁচু গাছের সারি। সেখানে বানরের হট্টগোল ছিল অনেক। আমার মনোযোগ ছিল তাই শুরুতে সেদিকেই। তারপরই সেলিম বলল, ভাই ডুরিয়ান খাবেন? ডোনাও বলে উঠল অনেক মজা, চলেন খাই। 

গাড়িটার দিকে দৃষ্টি দিলাম। দেখলাম মোটামুটি নির্জন জায়গা হলেও এর সামনে বেশ ভিড় জমে গেছে, ডুরিয়ান কিনতে। মালয়েশিয়ার পুলিশদের একটি গাড়িও দাঁড়িয়ে গেছে সেখানে। পুলিশ সদস্যরাও ডুরিয়ান কিনে মহানন্দে খেতে শুরু করলেন। দাম জিজ্ঞেস করলাম। দোকানি জানাল, কেজি ষাট রিংগিত, মানে আমাদের দেশের টাকায় ১৪০০ টাকা। ভাবলাম এতো দাম! তা ছাড়া ডুরিয়ানদের কাঁটাময় শরীর দেখে আমার কাঁঠালের কথা মনে পড়ে গেল, যদিও ডুরিয়ানরা আকারে অনেক ছোট। 

সমস্যা হলো, কাঁঠাল পুনমের খুব প্রিয় কিন্তু আমার ফল হিসেবে অপছন্দের তালিকায় ওপরের দিকেই থাকে। তাই সব মিলিয়ে ডোনাদের চাপাচাপির পরও খেতে চাইলাম না। এর মধ্যে আমাদের গাড়ির সমস্যা মিটে গেছে। তাই ডুরিয়ানের গাড়ি পেছনে ফেলে রওনা দিলাম গ্যানটিং হাইল্যান্ডের দিকে। 

আর আগে বাড়ার আগে বরং ডুরিয়ান নিয়ে কয়েকটি তথ্য জেনে নেওয়া যাক। এগুলো অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে সংগ্রহ করা। ডুরিয়ান ফলটির উৎপত্তি যদ্দুর জানা যায় বোর্নিও ও সুমাত্রা দ্বীপে। বোর্নিও মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া দুই দেশেই পড়েছে, আর সুমাত্রার মালিক কেবল ইন্দোনেশিয়া। এখন অবশ্য থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশেই পাবেন ফলটি। 

ডুরিয়ানের ৩০টি জাতের খবর মিলেছে এখন পর্যন্ত। এর মধ্যে খাওয়ার যোগ্য ১০-১১ টি। তবে দুনিয়াজুড়ে এখন ৫০০ ভ্যারাইটি বা ধরনের ডুরিয়ান ফল পাবেন। মালয়েশিয়া আর ইন্দোনেশিয়ায় আছে ১০০ ধরনের ডুরিয়ান। আর সবচেয়ে বেশি ডুরিয়ান রপ্তানি করা দেশ থাইল্যান্ডে ডুরিয়ানের শ তিনেক ধরন পাবেন। আকারে সাধারণ ছয় থেকে আট ইঞ্চি লম্বা। চওড়ায় অর্ধেক। তবে এক ফুটি ডুরিয়ানও আছে। ওজন মোটামুটি আধ কেজি থেকে তিন কেজি। 

এমনিকে ডুরিয়ান তার কাঁটার জন্য মশহুর হলেও কাঁটাছাড়া জাতও আছে এদের। ডুরিয়ানের বীজও খেতে পারবেন, তবে রান্না করে। মুছাং কিং আর ব্ল্যাক থর্ন হলো মালয়েশিয়ায় পাওয়া ডুরিয়ানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দামি। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়ার রেকর্ড কানিয়ায়ো ডুরিয়ানের, থাইল্যান্ডের এ ধরনটি সেখানকার কিং অব ডুরিয়ান উৎসবে নিলামে বিক্রি হয় আমাদের টাকায় ৫০ লাখে। আর ডুরিয়ান গাছ দেড় শ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, বাঁচতে পারে ১৫০ বছর পর্যন্ত। ডুরিয়ান নামটি এসেছে মালয় শব্দ ‘ডুরি’ থেকে। যার অর্থ কাঁটা। সম্ভবত ষোলো শতকের শেষ দিকে শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়। 

অনেক তথ্য দেওয়া হয়ে গেছে, এবার বরং মালয়েশিয়ায় ডুরিয়ান দেখার গল্পে ফেরা যাক। গাছে প্রথম ডুরিয়ান দেখলাম পরদিন ক্যামেরন হাইল্যান্ডে যাওয়ার পথে। গাড়ি ছুটছিল পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে। এক পাশে পাহাড়, অপর পাশে খাদ। একটা জায়গায় এসে গাড়ি দাঁড় করাল সেলিম। এখানে দাঁড়িয়ে বেশ কতকটা সময় পাহাড় দেখলাম, তার গায়ে লেগে থাকা মেঘেদের দেখলাম, রাস্তা দিয়ে তুমুল বেগে ছুটে চলা গাড়িদের দেখলাম। আর তখনই নজর কাড়ল আমাদের ঠিক সামনেই কয়েকটা গাছে ঝুলে থাকা ডুরিয়ানেরা। এর মধ্যে একটা গাছের ডালগুলোতে এতো এতো ডুরিয়ান ঝুলে আছে যে চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। এমনকি ডুরিয়ান দেখে অভ্যস্ত সেলিম আর ডোনাও বলল এক গাছে এতো ডুরিয়ান ওরা আগে আর দেখেনি। 
 
পথেঘাটে এরপর মালয়েশিয়ায় আরও অনেক বার ডুরিয়ান পেলেও চেখে দেখা হচ্ছিল না। এর মধ্যে পেনাংয়ে এক হোটেলে ওঠে দেখলাম, সেখানে লেখা ডুরিয়ান নিয়ে হোটেলে প্রবেশ নিষিদ্ধ। সেলিম বলল ডুরিয়ানের তীব্র গন্ধ অনেকের সহ্য হয় না। পরে ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখি পৃথিবীর অনেক এয়ারলাইনসই ডুরিয়ান নিয়ে উড়োজাহাজে ওঠা নিষিদ্ধ করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অনেক হোটেলেই ডুরিয়ান নেওয়া মানা। এর কারণ হিসেবে সব জায়গায় ডুরিয়ানের অদ্ভুত, তীব্র গন্ধর কথাই বলা হয়েছে। কিছু লোক এমনকি এর গন্ধকে পচা পেঁয়াজ, বাসি মোজার গন্ধের সঙ্গেও তুলনা করেছেন। 

কিন্তু ডুরিয়ানের এমন তীব্র গন্ধের কারণ কী? একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা ডুরিয়ানের তীব্র গন্ধের জন্য ৪৪টি ভিন্ন গন্ধ-উৎপাদক রাসায়নিক যৌগকে দায়ী করেছে। প্রতিবেদনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় তথ্যগুলির মধ্যে একটি হলো, ৪৪টির মধ্যে তিনটি যৌগকে এই প্রথমবারের মতো প্রথম প্রাকৃতিক কোনো পণ্য বা খাবারে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তাই ডুরিয়ানের গন্ধ এত অনন্য, এর মতো আর কিছুই নেই! 

অর্থাৎ এটি কোনো একটি যৌগ নয় যার ফলে ডুরিয়ান এমন ভয়ানক গন্ধ পাওয়া যায়, এটি তাদের সবার সংমিশ্রণ। গবেষকেরা ডুরিয়ানে শনাক্ত করা প্রতিটি গন্ধ উৎপাদক যৌগের বর্ণনা করেছেন। এগুলো পাবেন আমাদের পরিচিত যেসব জিনিসের সেগুলোর মধ্যে আছে মধু, ভাজা পেঁয়াজ, সালফার, ক্যারামেল, পচা ডিম, পচা বাঁধাকপি ইত্যাদি। 

তবে ডুরিয়ানের এতো-সব কিছু তখনো আমি জানি না। কিন্তু হোটেলের এই লেখা আর সেলিমের মুখে ফলটির তীব্র গন্ধের কথা শুনে ডুরিয়ানের প্রতি আগ্রহটা আরও কমল। তবে শেষ পর্যন্ত ডুরিয়ান খাওয়া থেকে নিস্তার পেলাম না। 

কুয়ালালামপুর থকে গিয়েছিলাম পোর্ট ডিকসনে। সেখানে রাস্তার পাশে এক লোক বিক্রি করছিলেন ডুরিয়ান। আমরা সেখানে গাড়ি থেকে নামতেই তাঁর মুখোমুখি। এবার সেলিম-ডোনা আমাদের ডুরিয়ান খাওয়াবেই। সেলিম মনের খুশিতে ৮ কেজি কিনে ফেলল। নিজেদেরও পছন্দ, আবার অতিথিদেরও আচ্ছাসে খাওয়াবে, এটাই মনের সাধ। 

তবে খেতে গিয়েই আমি বুঝতে পারলাম, হোটেলের ওই সাবধানবানীর মর্মার্থ। প্রচণ্ড গন্ধে আমার মাথা ঘুরছে বো বো করে। ওদের খুশি করতে খুব কষ্ট করে ২-৩ কোষ গিললাম। কাঁঠালপ্রেমী পুনমও ডুরিয়ান খেয়ে ধরা! ওয়াফিকাসহ বাংলাদেশ থেকে আমাদের সঙ্গে যাওয়া শাশুড়ি-খালা শাশুড়ির একই অবস্থা। কিন্তু সেলিম-ডোনা খেয়ে যাচ্ছে অবলীলায়। তবে আশ্চর্য ব্যাপার হলো এর গন্ধকে নির্দিষ্ট কোনো কিছুর সঙ্গে একে আমি মেলাতে পারছিলাম না। এটাকে মোটেই দুর্গন্ধও মনে হয়নি, শুধু মনে হয়েছে সর্বগ্রাসী এক গন্ধ, যেটা সহ্য করা মুশকিল। 
 
পরের ইতিহাস আরও করুণ। তবে তা বলার আগে ডুরিয়ানের ভালো কিছু দিক তুলে ধরা যাক। এর তীব্র গন্ধের জন্য যতই অপছন্দ করেন না কেন গবেষকেরা এর মধ্যে উপকারী অনেক কিছুই খুঁজে পেয়েছেন। ভিটামিনের বি ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এটি। তেমনি পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজের উপস্থিতির কারণে ফলটি খেলে যে উপকৃত হবেন সন্দেহ নেই। এ ছাড়াও, ডুরিয়ানে পাওয়া যায় অ্যান্থোসিনানিন, ক্যারোটেনোয়ড, পরিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়ডের মতো উপাদান। এগুলোর কোনো কোনোটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। 

মূল গল্পে ফিরে আসি। খাওয়ার পর থেকে যাওয়া ডুরিয়ানগুলো তোলা হলো সেলিমের গাড়িতে। পরের দুই দিন গাড়িতে যেখানেই গিয়েছি সঙ্গী ছিল ডুরিয়ানের প্রবল গন্ধ, এমনকি ডুরিয়ান গাড়ি থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরও। আর আমার মাথা ঘুরেছে বো বো করে! আমি এখনো ভাবি এমন সর্বগ্রাসী গন্ধ কী আর কোনো ফলের আছে? আর বুঝতেই পারছেন আমার সেই সহকর্মী যে কিনা ডুরিয়ান নিয়ে আসতে বলেছিলেন তাঁর কাছে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড় আর কিছুই করার ছিল না। 
 
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট, হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য স্মার্ট লোকাল মালয়েশিয়া, হ্যালথলাইন ডট কম, দ্য সান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডিজনির খরচ বাঁচানোর নতুন কৌশল

ফিচার ডেস্ক
ডিজনি রিসোর্টে প্রতিটি ভ্রমণে খরচ বেড়েই চলেছে। ছবি: পেক্সেলস
ডিজনি রিসোর্টে প্রতিটি ভ্রমণে খরচ বেড়েই চলেছে। ছবি: পেক্সেলস

পার্কের টিকিট থেকে শুরু করে হোটেলে থাকা, খাবার ও উপহারের দোকানে কেনাকাটা—ডিজনি রিসোর্টে প্রতিটি ভ্রমণে খরচ বেড়েই চলেছে। পরিবারের সঙ্গে ডিজনির ছুটি কাটানো এখন এতটাই ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ডিজনির ভক্তরা তাঁদের মজা বা অভিজ্ঞতাকে কোনোভাবে আপস না করে দু-এক টাকা সাশ্রয়ের জন্য সৃজনশীল উপায় খুঁজছেন। এতে পিছিয়েও নেই ডিজনি ভক্তরা। তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন একটি উপায়, যার মাধ্যমে একে অপরকে অর্থ সাশ্রয়ে সাহায্য করতে পারেন। ডিজনি ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকেরা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় একত্র হচ্ছেন। যেখানে তাঁরা তাঁদের অবশিষ্ট বা অব্যবহৃত জিনিসপত্র ভাগ করে নিচ্ছেন। তাঁরা সেসব জিনিস আদান-প্রদান করছেন, যা ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হতো।

এর মাধ্যমে মিতব্যয়িতা ও দয়ার ওপর ভিত্তি করে একটি সম্প্রদায় তৈরি হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
এর মাধ্যমে মিতব্যয়িতা ও দয়ার ওপর ভিত্তি করে একটি সম্প্রদায় তৈরি হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুক গ্রুপ

নির্দিষ্ট ডিজনির হোটেলগুলোর জন্য ফেসবুক গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এই গ্রুপগুলোর ভেতরে ছুটি কাটাতে যাওয়া লোকেরা অন্যদের শুরুর দিকের ভ্রমণের জন্য খাবার, ডিসকাউন্টেড রিফিল পাওয়া পপকর্ন বাকেটও অফার করছেন। অবশ্য অনেকে এটিকে কোম্পানির ব্র্যান্ডিং অনুযায়ী ‘ডিজনি ম্যাজিক’ ছড়িয়ে দেওয়ার একটি পদ্ধতি হিসেবে দেখছেন। এর মাধ্যমে মিতব্যয়িতা ও দয়ার ওপর ভিত্তি করে একটি সম্প্রদায় তৈরি হচ্ছে। কেউ কেউ তাঁদের প্রি-পেইড অপশন ব্যবহার করে অন্যদের জন্য খাবারও কিনে দিচ্ছেন। একজন দর্শনার্থী পপ সেঞ্চুরি হোটেলে থাকার সময় তাঁর হোটেলের দরজায় মিকি মাউসের কান ও অন্যান্য স্যুভেনিয়ার ঝুলিয়ে রেখেছিলেন, যাতে অন্যরা সেগুলো নিতে পারেন। পরে তিনি বলেন, যেকোনো উপায়ে কাউকে টাকা বাঁচাতে সাহায্য করাটা দারুণ ব্যাপার। তিনি আরও জানান যে, থাকার শেষে যে জিনিসগুলো তিনি বাড়ি নিয়ে যেতে পারেননি, সেগুলোর একটি ব্যাগ তিনি রুমের বাইরে রেখে দেন এবং ফেসবুকে এ বিষয়ে অন্যদের জানানোর জন্য পোস্ট করেন। নিজের ডাইনিং প্ল্যানের কিছু খাবারও তিনি অন্য একটি পরিবারকে দুপুরের খাবার কিনে দিতে ব্যবহার করেছিলেন।

প্রয়োজনী জিনিস ভাগাভাগি

পারিবারিক ভ্রমণের জন্য পুশচেয়ার (স্ট্রলার) একটি অপরিহার্য জিনিস। ডিজনির ভক্তরা এগুলোও ভাগাভাগি করার উপায় খুঁজে পেয়েছেন। রোজি গার্সিয়া নামের এক মা একটি বড় পারিবারিক ভ্রমণের সময় এই সুবিধা নিয়েছিলেন। তাঁর ছয় বছরের ছেলের গোড়ালিতে আঘাত লাগলে তাঁরা অনলাইনে যোগাযোগ করে ছুটির জন্য একটি পুশচেয়ার ধার করতে সক্ষম হন। ফেবারিট গ্র্যাম্পি ট্রাভেলসের পরিচালক কার্স্টেন আন্দ্রেড ব্যাখ্যা করেন যে, কিছু গ্রুপ অতিথিদের মধ্যে জিনিসপত্র হস্তান্তরের ব্যবস্থা করার জন্য ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে। তিনি এটিকে ‘একধরনের গোপন ক্লাব, যার অংশ হতে আপনি অবশ্যই চাইবেন’ বলে মন্তব্য করেন এবং বলেন, এটি তখন ভাগ করে নেওয়া এবং ম্যাজিক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সংস্কৃতিতে পরিণত হয়।

অনেকে ব্যবহার করা জিনিস রেখে যাচ্ছেন হোটেল রুমে এবং সেই ছবি দিচ্ছেন ফেসবুক পোস্টে। ছবি: সংগৃহীত
অনেকে ব্যবহার করা জিনিস রেখে যাচ্ছেন হোটেল রুমে এবং সেই ছবি দিচ্ছেন ফেসবুক পোস্টে। ছবি: সংগৃহীত

টিকিটের মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও উদ্যোগ

এই উদ্যোগগুলো এমন এক সময়ে আসছে, যখন ডিজনি সম্প্রতি আমেরিকার তাদের দুটি বড় থিম পার্কের টিকিটমূল্য বাড়িয়েছে। অরল্যান্ডোর ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ড রিসোর্ট ও অ্যানাহেইমের ডিজনিল্যান্ড রিসোর্টের এক দিনের টিকিটের দাম বেড়েছে। পিক আওয়ারে একটি টিকিট এখন ১৯৯ ডলারের বেশি। ক্রিসমাস ও নতুন বছরের সময়ের জন্য অরল্যান্ডোর পার্কের টিকিট ২০৯ ডলার করা হয়েছে, যা বেড়েছে ৫ শতাংশ। একই সময়ে ডিজনিল্যান্ডের টিকিটের দাম ২২৪ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা ৮ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।

এই মূল্যবৃদ্ধি এমন এক সময়ে এল, যখন ডিজনি ১৯৯৮ সালে অ্যানিমেল কিংডম খোলার পর প্রথম নতুন পার্ক যুক্ত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে ডিজনির এক কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেন যে, কোম্পানি এখনো ‘জাদুকরি অভিজ্ঞতা তৈরি করার’ প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তাদের টিকিট, হোটেল ও ডাইনিং বিকল্পগুলো সব বাজেটের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই ফ্যান-টু-ফ্যান আদান-প্রদানগুলো প্রমাণ করে যে, খরচ যতই বাড়ুক না কেন, ডিজনির আসল জাদু হলো কমিউনিটি এবং একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা।

সূত্র: ডেইলি মেইল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ২০
আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

মেষ

আপনার গ্রহশাসক মঙ্গল আজ একটু অলস মোডে আছে। তাই সারা দিন ধরে ‘গুরুত্বপূর্ণ কাজ’ বলে যা ভাবছিলেন, তা আসলে সোফায় বসে পুরোনো দিনের সিরিয়াল দেখতে দেখতেই কেটে যেতে পারে। সহকর্মী বা জীবনসঙ্গীর কোনো বিরক্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হলে মাথা গরম না করে হাসিমুখে শুনুন। আপনার রসবোধ আজ একটি ছোটখাটো পারিবারিক অশান্তি এড়াতে সাহায্য করবে। দুপুরে অতিরিক্ত বিরিয়ানি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। নইলে সন্ধ্যায় হাঁটার পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে।

বৃষ

আর্থিক দিক থেকে দিনটি বেশ শুভ। হঠাৎ করে পকেটে বা পুরোনো জ্যাকেটের পকেটে কিছু অপ্রত্যাশিত খুচরা পয়সা খুঁজে পেতে পারেন। এই অর্থ দিয়ে লটারির টিকিট কাটার আগে দুবার ভাবুন। আজ আপনাকে খুব মিষ্টি করে কেউ কিছু বললেও সেই প্রস্তাবের ফাঁদে পা দেবেন না। প্রেমের ক্ষেত্রে বেশি প্রতিশ্রুতি দেওয়া বা নেওয়ার দিন এটি নয়। ‘ঠিক আছে, কাল দেখা যাক!’ —এই বাক্যটি আজ আপনার জন্য রক্ষাকবচ। বিকেল বেলা হালকা হলুদ পোশাক পরে ছাদে এক কাপ চা খেতে বসলে মন ভালো থাকবে।

মিথুন

আপনার দ্বৈত সত্তা আজ দ্বিগুণ সক্রিয়। এক মন বলছে ঘর গুছিয়ে ফেলুন, আরেক মন বলছে গোটা বিশ্বের আবর্জনা আপনার ঘরেই জমা থাকুক! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনি আজ একজন দার্শনিক, কিন্তু বাস্তবে আপনার কফি মগটি কোথায়, তা খুঁজে পাওয়াই চ্যালেঞ্জ। আজ কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলাবেন না। আপনার দেওয়া উপদেশ বুমেরাং হয়ে নিজের দিকেই ফিরে আসতে পারে। দিনের শেষে নিজের কাজ গুছিয়ে রাখলে শান্তি পাবেন। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে কমপক্ষে ১০ মিনিট প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকুন।

কর্কট

আজ আপনার মন চাইবে অতীতচারণা করতে। পুরোনো প্রেমপত্র বা ফেলে আসা ছবির অ্যালবাম ঘাঁটতে ঘাঁটতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারেন। আপনার বাড়িতে কোনো নতুন সদস্যের আগমন হতে পারে, হতে পারে এটি আপনার বাড়িতে আসা ডেলিভারি পার্সেল বা একটি নতুন গাছ। রান্নাঘরে অতিরিক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন না। বিশেষ করে যদি নতুন কোনো রেসিপি ট্রাই করেন, তবে ফায়ার এক্সটিংগুইশার হাতের কাছে রাখুন। আপনার যত্নশীলতা আজ আপনাকে সামাজিক মহলে প্রশংসা এনে দেবে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আজ সন্ধ্যায় একটি মজার গেম খেলুন।

সিংহ

কর্মক্ষেত্রে আপনি আজ লাইমলাইটে থাকতে পারেন, যেমনটি আপনি চান! তবে আপনার নেতৃত্ব দেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আজ কারও কাছে ‘অতিরিক্ত নাটকীয়তা’ মনে হতে পারে। তাই নিজেকে একটু নিয়ন্ত্রণে রাখুন। সব আলোচনায় নিজেকে সেরা প্রমাণ করার চেষ্টা না করে শুধু শুনুন। কেউ একজন আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাতে পারে, যা আপনার ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে। তবে ভুলেও আজ কাউকে অযথা ধার দেবেন না! আপনার পোষা প্রাণী বা ছোট ভাই-বোনকে সময় দিন।

কন্যা

পারফেকশনিস্ট কন্যা রাশি আজ সবকিছু নিখুঁত করতে গিয়ে সময়ের দিকে নজর না-ও দিতে পারে। সব কাজ বারবার চেক করতে গিয়ে দেখবেন, শেষ পর্যন্ত ট্রেন মিস হয়ে গেছে। আপনার সমালোচনা করার স্বভাব আজ আপনাকে একটু সমস্যায় ফেলতে পারে। কোনো কিছু নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা না করে, যা আছে তা মেনে নিন। আজ যদি বাইরে যান, তবে বায়ুর মান অস্বাস্থ্যকর থাকায় মাস্ক ব্যবহার করুন। স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ যত্ন নিন। কাজে ছোট ছোট ব্রেক নিন। একটি বড় কাজকে পাঁচটি ছোট ভাগে ভাগ করুন।

তুলা

শুক্রের প্রভাবে আজ আপনি ভারসাম্যের সন্ধানে অস্থির থাকতে পারেন। হয় আপনি একপাশে অতিরিক্ত ঘুমাবেন, না হয় অতিরিক্ত কাজ করবেন। মাঝে থাকার কোনো মধ্যম পথ খুঁজে পাবেন না। বন্ধুদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়বেন না। আপনার যুক্তি আজ যতই ক্ষুরধার হোক না কেন, অন্যেরা তা না-ও বুঝতে পারে। বরং নিজের পছন্দের কিছু সৃজনশীল কাজ করে মন শান্ত রাখুন। অপ্রত্যাশিত কোনো স্থান থেকে উপহার পেতে পারেন। সন্ধ্যায় রোমান্টিক ডিনারের পরিকল্পনা করুন।

বৃশ্চিক

প্লুটো আপনার মধ্যে রহস্যময় শক্তি এনেছে। আজ আপনি এমন কিছু গোপন তথ্য জানতে পারেন, যা আপনাকে হাসাবে বা ভাবাবে। তবে এ তথ্যটি যেন গোপনই থাকে। আজকের আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় আবেগের বহিঃপ্রকাশও কিছুটা শুষ্ক হতে পারে। পুরোনো কোনো অপ্রীতিকর স্মৃতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে পাত্তা দেবেন না। অতীতকে তার জায়গায় বিশ্রাম নিতে দিন। নতুন কোনো বিনিয়োগের আগে অবশ্যই সব দিক বিবেচনা করে নিন। আজ একটু মেডিটেশন করলে মানসিক শান্তি পাবেন।

ধনু

অ্যাডভেঞ্চারের নেশা আজ আপনাকে হয়তো বিছানা থেকে উঠতেই দেবে না! মনের মধ্যে বিশ্ব ভ্রমণের ইচ্ছা থাকলেও বাস্তবে ফ্রিজ পর্যন্ত যাওয়াই কঠিন। বন্ধুদের সঙ্গে মজা করার জন্য এটি দারুণ দিন। আপনার অতিরিক্ত আশাবাদ আজ আপনাকে কোনো কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারে। তাই স্বপ্ন দেখতে দেখতেও মাটিতে পা রাখুন। দিনের শুরুতে সামান্য হাঁটা বা ব্যায়াম আপনাকে সতেজ রাখবে। নিজের পছন্দের খাবার রান্না করে অন্যকে খাওয়ান।

মকর

শনিদেব আজ আপনাকে অতিরিক্ত দায়িত্বের বোঝা দিতে পারেন। মনে হবে, আপনার কাঁধে পৃথিবীর সব অফিসের কাজ আর পরিবারের গুরুদায়িত্ব চেপে বসেছে। তবে কঠোর পরিশ্রমের জন্য আপনি প্রশংসা পাবেন। আপনার কাজের চাপ যতই বাড়ুক, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা করবেন না। বিশেষ করে রাতের ঘুমকে অগ্রাধিকার দিন। কাউকে ঋণ দেওয়ার আগে ভালো করে যাচাই করে নিন। বিকেল ৫টা থেকে ৭টার মধ্যে একটি অপ্রয়োজনীয় জিনিস ফেলে দিন। এটি আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।

কুম্ভ

আজ আপনার উদ্ভাবনী মস্তিষ্ক নতুন নতুন ধারণায় পূর্ণ থাকবে। এমন কিছু নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আসতে পারেন যা কেউ ভাবেনি। তবে এই আইডিয়াগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব যেন অন্য কারও কাঁধে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। আবেগের বশে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না। প্রেমের ক্ষেত্রে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিন। আপনার মানবিক দিকটি আজ বিশেষভাবে প্রশংসিত হবে। কোনো সমাজসেবামূলক কাজে সামান্য হলেও যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করুন।

মীন

আপনার কল্পনা আজ আকাশ ছুঁতে পারে। আপনি হয়তো দিনের আলোতেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করবেন, যা আপনার দৈনন্দিন কাজকে বিঘ্নিত করতে পারে। আশপাশে যা ঘটছে, তার প্রতি আপনার সংবেদনশীলতা আজ চরমে থাকবে। আজ কারও কাছ থেকে অপ্রয়োজনীয় সমালোচনা শুনলে তাকে এড়িয়ে চলুন। নিজের মনকে শান্ত রাখতে আপনার পছন্দের শিল্প বা সংগীতের শরণাপন্ন হন। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দিনটি অনুকূল নয়। সন্ধ্যায় হালকা উষ্ণ পানীয় পান করুন এবং মিষ্টি গান শুনুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্লাইট বদলের অপেক্ষাকে উপভোগ্য করে তুলুন

ফিচার ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভ্রমণের সময় ‘লেওভার’ বা ফ্লাইট বদলের জন্য অপেক্ষা করার সময়টা অনেকের কাছেই সবচেয়ে ক্লান্তিকর ও বিরক্তিকর লাগে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে বসে থাকা, ঘুম-খাবার-চার্জের ঝামেলা। সব মিলিয়ে এ সময়টাকে অনেকেই অপচয় মনে করেন। কিন্তু একটু পরিকল্পনা এবং কিছু কৌশল জানলে এ সময়টাও ভ্রমণে বাড়তি আনন্দ যোগ করতে পারে।

আপনারও যদি সামনে কোনো দীর্ঘ লেওভার থাকে, আর ভাবছেন কীভাবে সেই সময়টুকু পার করবেন, তাহলে নিচের কয়েকটি টিপস কাজে লাগতে পারে। বিরতি এক ঘণ্টার হোক বা ১৮ ঘণ্টার।

আলাদা ব্যাগ রাখুন

লেওভারকে আরামদায়ক করার প্রথম ধাপ হলো আলাদা ব্যাগ রাখা। একটি ছোট ব্যাগে ভ্রমণের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস সঙ্গে রাখুন।

এই ব্যাগে রাখুন:

–ফেসওয়াশ

–টুথব্রাশ ও টুথপেস্ট

–ওয়েট টিস্যু বা ফেস ওয়াইপ

–ফোন ও ল্যাপটপ চার্জার

–প্লাগ কনভার্টার

–হালকা খাবার

–এক জোড়া অতিরিক্ত পোশাক

–বই এবং হেডফোন

এই ব্যাগটি থাকলে বিমানবন্দরে বা বিমানে যেকোনো সময় প্রয়োজনীয় জিনিস বের করা সহজ। আর বারবার ব্যাগ খোঁজার ঝামেলা থাকে না।

ফ্লাইট বিরতির সময় কম হলে দু-তিন ঘণ্টার ফ্লাইট বিরতি সাধারণ বিষয়। এ সময়ে আপনি চাইলে নিজেকে একদম সতেজ করে তুলতে পারেন। শুরুতে মুখ ধুয়ে দাঁত ব্রাশ করুন, এরপর একটা বড় বোতল পানি কিনে নিন। দীর্ঘ ভ্রমণে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়, তাই এটি খুবই দরকারি। পরবর্তী সময়ে টার্মিনালের ভেতর একটু হাঁটাহাঁটি করুন। এতে পায়ের পেশি শিথিল হয়, ক্লান্তিও কমে। অনেক এয়ারপোর্টে এখন বিনা মূল্যে যোগ বা স্ট্রেচিং রুম আছে। যেমন—সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বা ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি বিমানবন্দর। চাইলে একটু সময় কাটাতে পারেন সেখানে। এ ছাড়া দোকানগুলো ঘুরে দেখুন, স্থানীয় স্ন্যাকস বা ছোট স্মারকও কিনে নিতে পারেন।

মাঝারি ফ্লাইট বিরতি

চার থেকে ছয় ঘণ্টার বিরতি অনেকের কাছেই বিরক্তিকর। বাইরে যাওয়ার মতো সময়ও না, আবার শুধু বসে থাকাও কষ্টকর। এই সময়টা সবচেয়ে ভালো কাটে এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে। সেখানে আরাম করে বসা যায়, থাকে বিনা মূল্যে খাবার, ওয়াইফাই, এমনকি কিছু লাউঞ্জে ঘুমানোর জায়গাও থাকে।

যদি আপনার কাছে প্রিমিয়াম ক্রেডিট কার্ড থাকে তাহলে অনেক সময় ফ্রি বা কম খরচে লাউঞ্জে ঢোকা যায়। যাঁদের কার্ড নেই, তাঁরা অনলাইনে ডে পাস কিনে নিতে পারেন। দাম সাধারণত ৩০ থেকে ৭০ ডলারের মধ্যে হয়, বিমানবন্দরভেদে।

সময় যদি একটু বেশি থাকে (৫-৬ ঘণ্টা), তাহলে এয়ারপোর্টের কাছাকাছি কোনো বিখ্যাত রেস্টুরেন্টে ঘুরে আসতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ভিসার বিষয়টি আগে থেকে নিশ্চিত করতে হবে। আপনি রওনা দেওয়ার আগে যেখানে বিরতি দেবে, সেখানকার ট্রানজিট ভিসা নিয়ে নিতে পারেন।

দীর্ঘ বিরতি

৮ ঘণ্টা বা তার বেশি বিরতি হলে সেটাকে ঝটিকা সফরের সুযোগ হিসেবে নিন। যদি শহরটা এয়ারপোর্ট থেকে খুব দূরে না হয়, তাহলে একটু ঘুরে আসুন। বেশির ভাগ এয়ারপোর্টেই লাগেজ স্টোরেজ সার্ভিস থাকে। অল্প কিছু টাকায় ব্যাগ রেখে নির্ভারভাবে শহরে বের হতে পারেন।

অনেক এয়ারপোর্ট বা ট্রাভেল ওয়েবসাইটে শহরের কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান, ট্রানজিট ট্যুর বা ভ্রমণ প্যাকেজের তথ্যও দেওয়া থাকে।

অন্যদিকে, যদি বাইরে যেতে না চান, তাহলে নিতে পারেন হোটেল ডে পাস। অনেক হোটেলেই এমন পাস থাকে যেখানে আপনি কয়েক ঘণ্টার জন্য রুম, পুল, রেস্টুরেন্টসহ হোটেলের সব সুবিধা ব্যবহার করতে পারেন। রিসোর্ট পাস ওয়েবসাইটে বিভিন্ন দেশের হোটেল পাস বুক করা যায়। দাম সাধারণত ২৫ থেকে ৩০০ ডলারের মধ্যে।

ফ্লাইট বিরতি বিরক্তিকর মনে করবেন না। একটু প্রস্তুতি আর সঠিক পরিকল্পনা থাকলে এই সময়টাও আপনার ভ্রমণকে আরও উপভোগ্য ও স্মরণীয় করে তুলবে। এ ছাড়া সঙ্গে যদি বাচ্চা থাকে তাহলে তার জন্যও আলাদা প্রস্তুতি রাখুন।

সূত্র: লোনলি প্ল্যানেট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২০২৫ সালে ইউরোপের সেরা গন্তব্য পর্তুগাল

ফিচার ডেস্ক
এ বছর পর্তুগাল মোট ১২টি ইউরোপীয় অঞ্চলের মনোনীতদের পরাজিত করেছে। ছবি: পেক্সেলস
এ বছর পর্তুগাল মোট ১২টি ইউরোপীয় অঞ্চলের মনোনীতদের পরাজিত করেছে। ছবি: পেক্সেলস

ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যাওয়ার্ডের ইউরোপের সেরা গন্তব্যের শিরোপা জিতেছে পর্তুগাল। গত বছর এই তালিকায় সেরা দেশ হিসেবে গ্রিস সম্মাননা পেলেও আবার আবারও শিরোপা এসেছে পর্তুগালের কাছে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারটি পর্তুগাল মোট ছয়বার জিতেছে। এটি ছিল পুরস্কারের ৩২তম সংস্করণ। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি ইতালির সার্ডিনিয়াতে অনুষ্ঠিত হয়।

এ বছর পর্তুগাল মোট ১২টি ইউরোপীয় অঞ্চলের মনোনীতদের পরাজিত করেছে। যার মধ্যে ছিল অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও তুরস্ক। পর্যটন, বাণিজ্য ও পরিষেবা বিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি পেড্রো মাচাদো এই সম্মানকে ‘পর্যটনকে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভে পরিণত করা সব পেশাদারি কাজ, উৎসর্গ এবং গুণমানের প্রতিফলন’ বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে, ট্যুরিজম দে পর্তুগালের সভাপতি কার্লোস আবাদ মন্তব্য করেন, এই পুরস্কার প্রমাণ করে যে ‘ইউরোপের সেরা পর্যটন গন্তব্যগুলোর মধ্যে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পর্তুগালের দুর্দান্ত ক্ষমতা রয়েছে’। এটি দেশের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফসল।

পর্তুগালের আইকনিক গন্তব্য

পুরো দেশের পাশাপাশি পর্তুগালের একাধিক অঞ্চলও ২০২৫ সালের বিশ্ব ভ্রমণ পুরস্কারে স্বীকৃতি লাভ করেছে, যা দেশটির পর্যটন মানকে আরও দৃঢ় করেছে। যেমন—ইউরোপের সেরা দ্বীপ গন্তব্য হয়েছে মাদেইরা। মহাদেশের সেরা শহুরে গন্তব্য পোর্তো। শহর বিরতির জন্য সেরা স্থান হয়েছে লিসবন।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতি:

হিউস্কা লা ম্যাজিয়া (স্পেন): অ্যাডভেঞ্চার পর্যটনের জন্য সেরা গন্তব্য হিসেবে আজোরসকে পেছনে ফেলেছে।

কোস্টা কারোনারিনো (গ্রিস: মহাদেশের বিচ হলিডেজের জন্য সেরা স্থান হিসেবে মনোনীত হয়।

বাতুমি (জর্জিয়া): বছরের ‘সব ঋতুর জন্য সেরা গন্তব্য’ হিসেবে বিবেচিত হয়।

ডুব্রোভনিক (ক্রোয়েশিয়া): টানা তৃতীয়বারের মতো ‘শীর্ষস্থানীয় ক্রুজ গন্তব্য’ হিসেবে নাম কুড়িয়েছে।

সেরা দ্বীপ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে মাদেইরা দ্বীপ। ছবি: পেক্সেলস
সেরা দ্বীপ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে মাদেইরা দ্বীপ। ছবি: পেক্সেলস

পর্তুগালের পর্যটন শক্তির মূল দিকগুলো

২০২৫ সালের এই স্বীকৃতি পর্তুগালের পর্যটন শিল্পের অবিচল প্রচেষ্টা এবং পেশাদারির সাক্ষ্য বহন করে। দেশটি ঐতিহ্য ও উদ্ভাবনের এক চমৎকার মিশ্রণ ঘটিয়েছে, যা পর্যটকদের কাছে এটিকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে। পর্তুগালে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটগুলোর প্রাচুর্য রয়েছে। যেমন—লিসবনের বেলেম টাওয়ার এবং ঐতিহাসিক পোর্তো শহর; যা ইতিহাসপ্রেমীদের আকর্ষণ করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকেও এগিয়ে আছে দেশটি। আলগারভের সমুদ্রসৈকত থেকে শুরু করে উত্তরের ডুরো ভ্যালি পর্যন্ত, পর্তুগাল বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক দৃশ্য প্রদান করে। মাদেইরার মতো দ্বীপগুলো অ্যাডভেঞ্চার এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য স্বর্গরাজ্য। পর্তুগিজ খাবার বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে। বিশেষত, বাখালহাও (শুকনো লবণযুক্ত কডফিশ) এবং পাস্তেইস দে নাতা (কাস্টার্ড টার্ট) খাদ্যরসিকদের আকৃষ্ট করে।

সেরা শহুরে গন্তব্য পোর্তো। ছবি: পেক্সেলস
সেরা শহুরে গন্তব্য পোর্তো। ছবি: পেক্সেলস

লিসবন, পোর্তো ও মাদেইরার বিশেষত্ব

মাদেইরা: সেরা দ্বীপ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে দ্বিপটি। তার সুন্দর পর্বতমালা, উষ্ণ জলবায়ু এবং বিদেশি বাগানগুলোর জন্য বিখ্যাত। এটি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য সারা বছরের গন্তব্য।

পোর্তো: এটি সেরা শহুরে গন্তব্য। যা ঐতিহাসিক রিবেইরা জেলা, বিখ্যাত ওয়াইন সেলার এবং ডুরো ভ্যালির নৈকট্যের কারণে পোর্তো উত্তর পর্তুগালের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

লিসবন: ঐতিহাসিক ট্রাম, আলফামার মতো প্রাণবন্ত পাড়া এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধার মিশ্রণে লিসবন শহরের বিরতির জন্য একটি গতিশীল ও খাঁটি অভিজ্ঞতা দেয়।

ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি: টেকসই পর্যটন

পর্তুগালের এই সাফল্য টেকসই পর্যটনের প্রতি দেশটির অঙ্গীকারকেও তুলে ধরে। দেশটি পরিবেশগতভাবে দায়িত্বশীল ভ্রমণ বিকল্পগুলোতে মনোনিবেশ করছে, যাতে পর্যটন বৃদ্ধি হলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংরক্ষিত থাকে। পর্তুগালের এই ধারাবাহিক সাফল্য প্রমাণ করে যে সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং আধুনিকতাকে সঠিকভাবে মিশিয়ে কীভাবে একটি গন্তব্য বিশ্বমানের আকর্ষণ তৈরি করতে পারে।

সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর ওয়ার্ল্ড

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত