Ajker Patrika

অঙ্ক কষে ছবি আঁকেন মিথুন দে

রিপন চন্দ্র রায়, রাবি
Thumbnail image

কখনো শুনেছেন গাণিতিক সমীকরণ ব্যবহার করে ছবি আঁকার কথা? না শোনারই কথা। কারণ ছবি আঁকা হয় রংতুলি দিয়ে। বিভিন্ন রং ব্যবহার করে তুলির সাহায্যে ক্যানভাস বা আর্ট পেপারে ছবি আঁকেন শিল্পীরা। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, অঙ্ক কষেও ছবি আঁকা যায়! আর এই অবিশ্বাস্য কাজটি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিথুন দে। তিনি পরিসংখ্যান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

দুঃসাধ্য এ কাজটি পুরো পৃথিবীতে করতে পারেন হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ। বাংলাদেশে তাঁদের সংখ্যা দুই থেকে তিনজন। অনেক পরিশ্রম আর ধৈর্যের কাজ এটি। মিথুন দে অত্যন্ত সুচারুভাবে নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নিপুণ হাতে কাজটি করতে পারেন।

ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকির প্রতি ঝোঁক ছিল মিথুনের। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের প্রথম থেকে আঁকতেন স্কেচ। তবে এখন গাণিতিক সমীকরণের মাধ্যমে যেকোনো স্কেচ আঁকতে পারেন তিনি। পারদর্শিতা রয়েছে ডিজিটাল আর্টেও। বাজাতে পারেন বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র।

২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। সেই অবসর সময়কে কাজে লাগান তিনি। মিথুন এখন ম্যাথমেটিক্যাল ইকুয়েশনকে কাজে লাগিয়ে আঁকতে পারেন যেকোনো স্কেচ। করোনাকালে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর সময় কাটত ফেসবুকে। মিথুনও ব্যতিক্রম ছিলেন না। ফেসবুকের টাইমলাইন স্ক্রল করতে করতে একদিন চোখে পড়ে গাণিতিক সমীকরণ ব্যবহার করে আঁকা একটি স্কেচ। বিষয়টি মনে দাগ কাটে তাঁর। আগ্রহ জাগে এ রকম স্কেচ আঁকার। যেই ভাবা সেই কাজ।

FB_IMG_1673152827042শুরু করেন ঘাঁটাঘাঁটি। কিন্তু  ঘাঁটাঘাঁটি করে সফল হননি মিথুন। সে জন্য কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। এর জন্য মিথুনকে স্বীকার করতে হয় অনেক ত্যাগ। সারা দিন ডুবে থাকতে হয় এর পেছনে। মিথুন জানিয়েছেন, করোনাকালে বাসায় অলস সময় কাটত। একদিন ফেসবুকেই প্রথম এ ধরনের আর্ট দেখেন মিথুন। পরে ইন্টারনেটে ব্যাপক ঘাঁটাঘাঁটি করেও তেমন কিছু উদ্ধার করতে পারেননি তিনি। পরে জানতে পারেন, ডেমস অ্যাপ ব্যবহার করে এগুলো করা হয়। মিথুন বলেন, ‘অনেক সাধনার পর আমি এই আর্টে সফল হয়েছি।’

মিথুন জানিয়েছেন, এটি একটি ব্যতিক্রমী শিল্প। তাই এ ধরনের আর্ট খুব কম মানুষ করে। ফলে ইউটিউবে তেমন কোনো টিউটোরিয়াল পাইনি। অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে ছয় মাস ধরে ডেসমস অ্যাপটির ব্যবহার শেখেন তিনি। পরে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর শুধু একটি সরলরেখা ব্যবহার করে স্কেচ আঁকেন! পরে ওই আর্টটি ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেই স্কেচটি ব্যাপক সাড়া ফেলে তাঁর ফেসবুক বন্ধুদের মধ্যে। তাঁরাই উৎসাহ জোগান মিথুনকে। তখন থেকেই সব ধরনের ইকুয়েশন ব্যবহার করে ছবি আঁকা শুরু করেন তিনি। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে একটি সফটওয়্যার তৈরির পরিকল্পনা আছে বলে জানিয়েছেন মিথুন।

মিথুনের এই ব্যতিক্রমী দক্ষতায় খুশি নিজ বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিসংখ্যান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. গোলাম হোসাইন বলেন, ‘আমি তাঁর স্কেচগুলো দেখে অভিভূত হয়েছি। অ্যাথলেটিকের ইকুয়েডর কাজে লাগিয়ে যেকোনো স্কেচ আঁকা সত্যিই দুরূহ একটি কাজ। মিথুনের যে ট্যালেন্ট, আর এত দিনে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা থেকে যদি একটি সফটওয়্যার ডেভেলপ করতে পারে তাহলে এ বিষয়ে মানুষের আগ্রহ বাড়বে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত