Ajker Patrika

‘কণিকা’ একটি রক্তদাতা সংগঠন

সিয়াম মুনতাসির
Thumbnail image

ভিন্ন তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন বন্ধু মিলে গড়ে তুলেছেন রক্তদাতাদের সংগঠন ‘কণিকা’। এই তিনজনের মধ্যে সাইফুল্লাহ মনির ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বাকি দুজন হলেন সাঈদ আহমাদ নাসিফ চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কুরআনিক সায়েন্স বিভাগ এবং মহসিন রনি হলেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী।  

গড়ার গল্প
এক যুগ আগের কথা। স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংখ্যা তখন ছিল হাতে গোনা। রোগীর স্বজনেরাও ভয় পেতেন রক্তদানে। মোদ্দা কথা, ছিল সচেতনতার অভাব। সেই সুযোগে পেশাদার কিছু রক্তদাতার দেখা মিলত হাসপাতালগুলোতে, যাদের বেশির ভাগ মাদকাসক্ত। মাদকের খরচ জোটাতেই মূলত তাদের রক্তদান ব্যবসায় নামা। সেসব রক্তদাতার থেকে রক্ত নিয়ে রোগীর লাভ তো হতোই না, উল্টো বেড়ে যেত অসুস্থতা। সামাজিক দায়বদ্ধতার এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে, অসহায় রোগীদের জীবন হুমকির মুখ থেকে বাঁচাতে একটি রক্তদাতা সংগঠনের ভাবনা জাগে সাইফুল্লাহ মনিরের মাথায়। ১৪ জুলাই ২০১২  সালে ফেসবুকে একটি পেজ চালুর মধ্য দিয়ে দুই বন্ধুর সঙ্গে কাজে নেমে পড়েন মনির। সংগঠনের নাম দেন ‘কণিকা’ আর স্লোগান ‘সৃষ্টির জন্য ভালোবাসা’। সংগঠনটির উদ্দেশ্য ছিল স্বেচ্ছায় রক্তদাতা খুঁজে দেওয়ার পাশাপাশি রক্তদান বিষয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ভয় কাটিয়ে সচেতনতা তৈরি করা।

কণিকা নামের সেই পেজে রক্তদান বিষয়ে নানান সচেতনতামূলক পোস্টার, ছবি, লেখা ও ভিডিও পোস্টের মাধ্যমে কাজ এগোতে শুরু করে। তবে ঠিক মন ভরছিল না তিন সংগঠকের। বছরে অন্তত ১০ লাখ ইউনিট রক্ত জোগাড় করে দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেন তাঁরা। এর জন্য বছর পেরোতেই পরিসর বাড়িয়ে অফলাইন কাজের তোড়জোড় শুরু হয় সংগঠনটির। প্রথম কর্মসূচি নেওয়া হয় একুশে ফেব্রুয়ারি, ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগের সম্মানে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিনা খরচে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের মধ্য দিয়ে। ক্যাম্পেইন উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন। সব মিলিয়ে সাড়া মিলেছিল বেশ। বিনা খরচে ৫৮৬ জনের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে দেওয়া হয় ক্যাম্পেইনে, আর স্বেচ্ছায় রক্তদাতা তালিকায় নাম ওঠে ১৬৯ জন সদস্যের। সেই থেকে নিরবচ্ছিন্ন পথচলা শুরু হয় এই সংগঠনের।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে রক্তদান কর্মসূচিসংগঠনের সমৃদ্ধি
এক দশক পেরিয়েছে কণিকার। দেশজুড়ে রক্তদান ও রক্তদাতা খোঁজার পাশাপাশি বিনা খরচে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, মেডিকেল ক্যাম্প, রক্তদান বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন সেমিনার ও ক্যাম্পেইন পরিচালনা, জাতীয় এবং বিশ্ব রক্তদাতা দিবসে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সম্মাননা দেওয়াসহ নানামুখী কাজের মধ্য দিয়ে সংগঠনটি আজ বেশ সমৃদ্ধ।

সংগঠনটির নিয়মিত কর্মতৎপরতায় চট্টগ্রামের সরকারি- বেসরকারি ২০টির মতো কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে হাজারখানেক শিক্ষার্থী যুক্ত রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। থ্যালাসেমিয়া ও ডায়ালাইসিস রোগীদের নিয়মিত রক্তের প্রয়োজন হয়। সে তথ্য বিবেচনায় রেখে থ্যালাসেমিয়া সাপোর্ট সেন্টার ও ডায়ালাইসিস সেবা দান নামে বিশেষভাবে চালু করা হয়েছে ভিন্ন দুই সাপোর্ট সেন্টার; যার আওতায় সেবা নেয় ২৬ জন রোগী। করোনা মহামারিতেও থেমে ছিল না সংগঠনটির কার্যক্রম। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের ১৭ জনকে প্লাজমা জোগাড় করে দিয়েছিলেন তাঁরা। রক্তদান কর্মসূচি ছাড়াও গত ৪ বছরে রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও সুনামগঞ্জে বন্যায় প্লাবিত এলাকাগুলোয় প্রায় ৬০০ পরিবারকে অর্থ এবং ৫০টি পরিবারের পুনর্বাসন সহায়তা দিয়েছে সংগঠনটি। বছরে প্রায় এক হাজার অসহায় মানুষের মাঝে খাবার, শীতবস্ত্রসহ দুর্যোগ মোকাবিলায় ত্রাণ বিতরণের মতো মানবিক কাজেও যুক্ত আছে সংগঠনটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত