Ajker Patrika

চল্লিশোর্ধ্ব বয়সী পুরুষেরা সুস্থ থাকতে মেনে চলুন ১০টি নিয়ম

জিন্নাত আরা ঋতু, ঢাকা
আপডেট : ১৬ জুন ২০২৫, ১৯: ৫৯
কোলাজ: আজকের পত্রিকা
কোলাজ: আজকের পত্রিকা

পুরুষদের বয়স যত বাড়তে থাকে, নিজেদের প্রতি খেয়াল নেওয়া যেন তত কমতে থাকে। অথচ বয়স ৪০ বছর পার করার পর পুরুষদের জন্য শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই বয়সে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, মাঝেমধ্যেই ব্যায়াম, উৎকণ্ঠা নিয়ন্ত্রণসহ কিছু ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি, যা শরীর ও মস্তিষ্ক—দুটোই সুস্থ রাখে।

বিশেষজ্ঞরা ৪০ বছরের পর পুরুষদের জন্য ১০টি বিজ্ঞানসম্মত অভ্যাস অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন, যা হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, স্মরণশক্তি কমানোসহ বিভিন্ন জটিলতা প্রতিরোধে সাহায্য করবে। পাশাপাশি আপনার জীবনযাত্রাকে করে তুলবে আরও প্রাণবন্ত। সাম্প্রতিক গবেষণার ভিত্তিতে এমন ১০টি অভ্যাস তুলে ধরা হলো—

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা। ছবি: ফ্রিপিক
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা। ছবি: ফ্রিপিক

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

৪০ বছর পার করার পর প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। রক্তচাপ, প্রোস্টেট ও অন্যান্য ক্যানসার, কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিসের স্ক্রিনিং বা পরীক্ষা সময়মতো করালে রোগ শুরুর আগেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়, যা তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা শুরু করে সুস্থতার সম্ভাবনা অনেক বাড়িয়ে দেয়।

পরামর্শ: প্রতিবছর নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা এবং বয়স অনুযায়ী প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য স্ক্রিনিং করানো উচিত।

প্রতিদিন হাঁটা বা মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম। ছবি: ফ্রিপিক
প্রতিদিন হাঁটা বা মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম। ছবি: ফ্রিপিক

প্রতিদিন হাঁটা বা মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম

প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়, মন ভালো রাখে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এমনকি প্রতিদিন মাত্র ৫ মিনিট ব্যায়াম স্মরণশক্তি লোপ ঠেকাতে পারে—এমন প্রমাণও পাওয়া গেছে। আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাময়িকী জেএএমএ নেটওয়ার্ক ওপেনের তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহে এক বা দুদিন ৮ হাজার ধাপ করে হাঁটার অভ্যাস সব ধরনের মৃত্যুঝুঁকি প্রায় ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে।

ঘুমকে অগ্রাধিকার দিন

ঘুম একধরনের নীরব শক্তি। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। কম ঘুম স্মৃতিশক্তি হ্রাস, ওজন বৃদ্ধি ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কিত। ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে মোবাইল বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।

নেচার এজিং ২০২২-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৩৮ থেকে ৭৩ বছর বয়সীদের জন্য দৈনিক ৭ ঘণ্টা ঘুম মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।

সুষম খাদ্যাভ্যাস জরুরি

খাবারের তালিকায় রাখুন শাকসবজি, চর্বিহীন প্রোটিন, সম্পূর্ণ শস্য ও স্বাস্থ্যকর চর্বি। কমিয়ে দিন প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট ও চিনি। সঙ্গে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট, চিপস, মিষ্টিজাতীয় স্ন্যাকস এবং সফট ড্রিংকস এড়িয়ে চলুন। খাবারের তালিকায় রাখুন আঁশযুক্ত খাবার, মাছ, অলিভ অয়েল, বাদাম এবং বেরিজাতীয় ফল।

দৌড়। ছবি: ফ্রিপিক
দৌড়। ছবি: ফ্রিপিক

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ

দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ হৃদ্‌রোগ, ঘুমের সমস্যা এবং টেস্টোস্টেরনের মাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। চাপ কমাতে মননশীলতা (মাইন্ডফুলনেস), শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা নিয়মিত ডায়েরি লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।

আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ২০১৮ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মানসিক চাপ শরীরের পেশি ও হাড়, শ্বাসপ্রশ্বাস, হৃদ্‌রোগ, হরমোন, হজম, স্নায়ু ও প্রজননব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা

পেটের চর্বি হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস ও হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ঝুঁকি বাড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে এক গবেষণায় জানিয়েছে, মাঝারি থেকে তীব্র মাত্রার ব্যায়াম তাৎক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। নিয়মিত শরীরচর্চা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং বহু দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ধূমপান ত্যাগ। ছবি: পেক্সেলস
ধূমপান ত্যাগ। ছবি: পেক্সেলস

ধূমপান ত্যাগ

ধূমপান দ্রুত বার্ধক্য আনে; ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় এবং হৃৎপিণ্ডের মারাত্মক ক্ষতি করে। এ জন্য সব ধরনের ধূমপানের বিরুদ্ধে সতর্ক করেন চিকিৎসকেরা। এর মধ্যে রয়েছে প্রচলিত পাইপ, মিডওয়াখ বা সিসার মতো ধূমপানও। ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ই-সিগারেট (ভ্যাপিং) তুলনামূলকভাবে নতুন হলেও এটি শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যার কিছু ‘উদ্বেগজনক লক্ষণ’ দেখাচ্ছে। হুঁকা বা সিসা পানও সিগারেটের মতোই ক্ষতিকর। কারণ, এতে দীর্ঘ সময় ধরে বিষাক্ত পদার্থ শরীরে প্রবেশ করে।

ধূমপান ও ভ্যাপিং—দুটিরই আলাদা ও সুস্পষ্ট ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। এমনকি যেসব উপাদান (যেমন নিকোটিন বা গাঁজা) গ্রহণের জন্য এগুলো ব্যবহার করা হয়। এর বাইরেও ধূমপান বা ভ্যাপিংয়ের মাধ্যমে শরীরের এন্ডোথেলিয়াল কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে মস্তিষ্ক, ফুসফুস, ক্ষুদ্র রক্তনালির ওপরও প্রভাব পড়ে।

সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখা। ছবি: পেক্সেলস
সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখা। ছবি: পেক্সেলস

সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখা

একাকিত্ব হতাশা তৈরি করে এবং মানসিক দক্ষতা কমার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই পরিবার, বন্ধু ও সমাজের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা জরুরি।

পরামর্শ: মুখোমুখি সাক্ষাৎ সবচেয়ে ভালো। তবে এমন বন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত কথা বলা দরকার, যিনি প্রয়োজনে ভালো অভ্যাস বজায় রাখতে মনে করিয়ে দেন। এটি অনেক উপকারে আসে।

পেশির নমনীয়তা বাড়ানোর ব্যায়াম

পেশিশক্তি, জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির স্বাস্থ্য এবং শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে ও পেশির নমনীয়তার জন্য ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ। শুধু শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়ামই বয়সজনিত পেশি দুর্বল (সারকোপেনিয়া) হওয়া কমাতে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

পরামর্শ: প্রতি সপ্তাহে ২-৩ বার ভারসহ ব্যায়াম সারকোপেনিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে— এই তথ্য ২০২৩ সালে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউটি সাউথওয়েস্টার্ন মেডিকেল সেন্টার) এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখুন

পড়াশোনার পাশাপাশি নতুন দক্ষতা অর্জন করুন, কৌশলনির্ভর খেলা খেলুন কিংবা কোনো ক্লাসে অংশ নিন। এই ধরনের মানসিক চর্চা মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখে। এ ছাড়া স্মরণশক্তি লোপ পাওয়া এবং মানসিক ক্ষমতা হ্রাস প্রতিরোধে সহায়ক। ধাঁধা সমাধানের চেষ্টা করুন। ইংরেজি, আরবি, ল্যাটিন, ইতালিয়ান ও ফরাসি—যেকোনো ভিন্ন ভাষা শিখুন। বিশ্বজুড়ে ৬০ থেকে ৭৫ শতাংশ মানুষ অন্তত দুটি ভাষায় কথা বলে। তা ছাড়া যেকোনো বাদ্যযন্ত্র বাজানোও মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখে।

সূত্র: গালফ নিউজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত