রজত কান্তি রায়, ঢাকা

লোকে তারে কয় মহানদী। হামরা তারে কই মহর্ষি, ব্রহ্মপুত্র। এবং আশ্চর্যের বিষয়, কুড়িগ্রাম থেকে সোজা ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী বন্দরের দিকে গাড়ি হাঁকানোর সময় যে বিলটি পার হতে হয়, তার নাম নিধুয়া পাথার। সেই পাথারের এপার-ওপার দেখা যেত না একসময়। এখন তার বুক চিরে পিচের রাস্তা। সেই রাস্তায় চলে গাড়ি। সেই গাড়িতে বসে সোজা গিয়ে নামা যায় রমনা ঘাটে, যেখানে এখন মহানদী ব্রহ্মপুত্রের অধিষ্ঠান। সৈয়দ শামসুল হক যাকে বলেছেন ‘লৌহিত্য নদ’। ডেকেছেন ‘বাংলার জ্যেষ্ঠ সন্তান’ বলে। বলেছেন মহৎ, বলেছেন স্মৃতিধর, দয়াবান, প্রভাষক; আরও অনেক কিছু। আলোচকেরা তাকে বলেন ‘প্রাচীন বাংলার নদীপথের কেন্দ্রস্থল।’
এই যে এইখানে এসে এখন দাঁড়ায় মানুষ, যাকে ডাকা হয় রমনা ঘাট, সেখান থেকে ব্রহ্মপুত্রের অন্য পাড়ের দূরত্ব প্রায় পনেরো কিলোমিটার। পাহাড় ছেড়ে ব্রহ্মপুত্র যেখানে পলিমাটিতে পড়েছে, সেখানে তার প্রস্থ পঁচিশ থেকে ত্রিশ কিলোমিটার। এই বিশাল বপুর যে নদ, তাকে মহানদ ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় কি? এই বিশাল নদীর বুকে সেই ষোলো শতকে মধু সাধুখাঁ বজরা নিয়ে ভেসে বেড়াতেন বাণিজ্যের আশায়। শুধু মধু সাধুখাঁই নন। বৃহৎ বঙ্গের প্রায় তামাম বাণিজ্য হতো ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে থাকা চিলমারী বন্দর দিয়ে।
এই যে এইখানে নদীর বুক চিরে জেগে উঠেছে চর, সেই চরের ওপরে বসে হাট, সেই হাটের হাজারো মানুষের একজন হয়ে আমি গল্প শুনি এক কিংবদন্তির চিলমারীর। এখন সেখানে মধু সাধুখাঁ নেই। আছেন মেম্বার রফিকুল ইসলাম, মঞ্জু মিয়া, মোকছেদ আলী, রোকেয়া খাতুন কিংবা ছোট্ট ইব্রাহিম— চোখেমুখে যাদের অপার কৌতূহল, শরীর ও মননে যারা শোনে ব্রহ্মপুত্রের ডাক। তাদের গল্প শুনি। একেবারেই ভিন্ন, এই সময়ের গল্প।
চিলমারী এখন কুড়িগ্রাম জেলার একটি উপজেলা মাত্র। আর ‘চিলমারী’ নামের সেই বিখ্যাত বন্দর এখন ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিম তীর ছেড়ে ভাঙতে ভাঙতে চলে গেছে পূর্ব দিকে। প্রশাসনিক মাপকাঠিতে সেটি এখন একটি ইউনিয়ন মাত্র। মূলত চিলমারী সদর ইউনিয়ন আর অষ্টমীর চর, যা বারুণি স্নানের জন্য বিখ্যাত—এ দুটিই ছিল প্রাচীন চিলমারীর পশ্চিম প্রান্তের দুই সমৃদ্ধ জনপদ। ভাঙনের কারণে দুটি এলাকাই এখন ব্রহ্মপুত্রের পূর্ব দিকে চলে গেছে।
এই ভাঙনের কারণেই চিলমারী বন্দরকে ছয়বার স্থানান্তর করতে হয়েছে। বন্দরের সঙ্গে সরাতে হয়েছে প্রশাসনিক ভবনও। এখন যে রমনা রেলস্টেশন বা রমনা ঘাট বা যেখান থেকে রাজিবপুর-রৌমারীর নৌকা ছাড়ে, তার বয়স অর্ধশত বছরের কম। রমনা ঘাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের চর শাখাহাতিতে ছিল চিলমারী স্টেশন। সেটা নদীতে ভেঙে বিলীন হওয়ার পর ঘাট ও রেলস্টেশন আসে রমনায় বা এখনকার জায়গায়।
আমাদের জানা ইতিহাসমাত্রই মুঘল আমল থেকে। উজান কিংবা ভাটি, মুঘল আমলে যেখানেই যাওয়া হোক না কেন, যেতে হতো এই ব্রহ্মপুত্রের ওপর দিয়েই। আর তার প্রধান বন্দর ছিল চিলমারী। এখানে নৌযান থামত, বদল হতো দিক, যাত্রী উঠত কিংবা নামত। যদি নৌযান সোজাও চলত, চিলমারী ছিল অনিবার্য ‘বিরতিস্থল ও বাণিজ্যকেন্দ্র’। এখান থেকেই গন্তব্য নির্ধারিত হতো তিব্বত, ভুটান অথবা নেপালের পথে কিংবা বৃহৎ বঙ্গের বিস্তীর্ণ জনপদে। বাণিজ্য হতো কস্তুরি আর পোস্তদানার, যষ্টিমধু, এন্ডি সিল্ক আর ভোটকম্বলের। কখনো সন্তরা আর আমলকীরও। সন্তরা মানে কমলা। নেপাল বা আরও ওপরের দেশগুলো থেকে কমলা আসত চিলমারী দিয়েই। শুধু বাণিজ্যই নয়। নৌযুদ্ধেও চিলমারী ছিল প্রধানতম জলপথ। সে জন্যই সম্ভবত মুঘলদের জাহাজনির্মাণ শিল্প তৈরি হয়েছিল চিলমারীকে কেন্দ্র করে। সেই চিলমারীর বন্দর ঘন কুয়াশায় ঝাপসা এখন।
উপজেলা চিলমারীর আড়মোড়া ভাঙেনি তখনো। সকাল ৮টা। আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন রমনা খেয়াঘাটের মাঝি মমিনুল আর চর শাখাহাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাহিদ হাসান। ‘মনন রেখা’ নামের একটি ষাণ্মাসিক পত্রিকার সম্পাদক মিজানুর রহমান নাসিমসহ যখন রমনা ঘাটে পৌঁছলাম, তখন কুয়াশা কেটে গিয়ে অদ্ভুত এক ঝলমলে রোদ ব্রহ্মপুত্রের বুকে। সেই রোদে দেখা যায় রৌমারী ও রাজিবপুর থেকে দুটি খেয়া নৌকা এসে লেগেছে রমনা ঘাটে; আর দুটি ছেড়ে যাওয়ার জোগাড়যন্ত্র করছে। আমরা চলেছি চর শাখাহাতি।
রমনা ঘাট থেকে নৌকা ছাড়তেই মাদকতা মাখা ঠান্ডা বাতাসের পরশ ছুঁয়ে গেল আমাদের শরীর। পূর্বমুখী নৌকার হাল ধরে বসে আছেন মমিনুল; কিংবদন্তি থেকে উঠে আসা এক মাঝির মতো। কালচে পেশিবহুল শরীর। অভিজ্ঞ চোখ। কিন্তু মাঝ নদীতে দারুণ বিনয়ী। গুটগুট করে শ্যালো মেশিনের নৌকা চলছে। ছইয়ের ওপর আমরা তিনজন। নিচে আরও কয়েকজন। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। আমরা কথা বলে চলেছি। ওপরে মাঘের নির্মেঘ আকাশ আর নিচে টলটলে নীল জল। তার ওপর রাজহাঁসের মতো ঢেউ কেটে চলেছে শ্যালো নৌকা। গলুইয়ে হাল ধরে বসে আছেন একা এক নিঃসঙ্গ মাঝি মমিনুল। নাহিদ হাসান বললেন, ব্রহ্মপুত্র বিষয়ে মমিুনলের অনেক জ্ঞান। শুনে তিনি হাসলেন। আমি নিশ্চিত, শতসহস্র কুড়ার নদী ব্রহ্মপুত্রকে মনুষ্যজ্ঞানে যে ধরা যায় না, সেটা মমিনুল ভালোই জানেন। আর জানেন বলেই তিনি হাসছেন। নৌকার ছইয়ে বসে মমিনুলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, এক নিঃসঙ্গ মাঝি ব্রহ্মপুত্রের বুক চিরে চলেছেন গন্তব্যে। এই নদীর বুকে ভাগ্য বলে কিছু নেই, সেটা তিনি জানেন। এক নদী গবেষক বলেন, ‘এইখানে, এই মহানদীর কারণে মানুষের ভাগ্য ও ভূখণ্ড দুটোই ভাঙে।’
টলটলে নীল জলের ওপর দিয়ে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা গিয়ে থামল চরের খেয়াঘাটে। নৌকা থেকে নেমে হাঁটা শুরু। একটুখানি এগোতেই দেখা হলো এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার পদপ্রার্থী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। ষাটের কোঠায় বয়স তাঁর। নাহিদ হাসানের পরিচিত। মূলত পুরো চরটিই তাঁর পরিচিত। রফিুকল ইসলাম হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, ‘ওই যে ওই সরিষার খেত, ওইখানে আছিল রেল স্টেশন। এলা ভাঙি গেইছে।’ তাকিয়ে দেখলাম, নির্দিষ্ট জায়গাটিতে এখন হলুদ সরিষা মাঘের হাওয়ায় দুলছে। আমরা এগিয়ে গেলাম চর শাখাহাতির দিকে।
এখানে মানুষ গ্রাম সঙ্গে নিয়ে ঘোরে! শহরে থাকলে এসব জানা যায় না। তাই অবাক হতেই পারেন শুনে। নিজের ত্বক, দাঁত, চুলের মতোই এখানে নিজের অস্তিত্বের আরেক নাম গ্রাম। ফলে নদী গ্রাম ভাঙলে মানুষ নতুন বসতি তৈরি করে পুরোনো গ্রামের নামে। আমরা হাঁটতে থাকি। চারদিকে পলিজমা কৃষিজমি। সেই জমিতে জন্মে সুল্টি কলাই। মসুর ডালের মতো দেখতে মনে হলেও সেটা মসুর ডাল নয়। দেশের অন্য কোনো জায়গায় জন্মে না। এই অঞ্চলেই জন্মে। শুনলাম, সুল্টি কলাইয়ের ডাল বেশ সুস্বাদু।
খুব বড় চর নয় শাখাহাতি। বন্ধুর সেই চর পুরোটাই হেঁটে হেঁটে ঘুরলাম আমরা। ঠাকুরি কলাই, মাষকলাই, খেসারি কলাই, গাঞ্জিয়া ধান, ভুট্টা, সরষে আর চিনেবাদাম—এ সবই জন্মে এই চরে। বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর গাছ আছে চরে। এখানকার মানুষগুলো প্রাগৈতিহাসিক সরল, শহরের তুলনায়। বিনোদন বলতে তেমন কিছু নেই। একটিমাত্র ডিশ অ্যান্টেনা দেখা গেল পুরো চরে। আর আছে সাউন্ড বক্স। যখন-তখন বাজে—হিন্দি আর বাংলা গান। শিশুরা গানের তালে নাচে। বড়রা বিরক্ত হয় না।
হাঁটতে হাঁটতে সেই চরেরই আরেক প্রান্তে পৌঁছালাম আমরা চায়ের খোঁজে। সেই অংশের নাম বৈলমন্দিয়ার খাতা। পুরো চরে দু-তিনটি চায়ের দোকান; তার একটি এখানে। হাটবার বলে বন্ধ। ফিরে যাব, সে সময় ষাটোর্ধ্ব একজন কোত্থেকে উদয় হয়ে বললেন, ‘বসেন, দেখি কিছু পাই কি না।’ বলেই ডেকে আনলেন এক নারীকে। বোঝা গেল, তিনিই দোকানের মালকিন। চা নেই। অগত্যা চিনেবাদাম ভাজা আর পানি খাওয়া হলো। ষাটোর্ধ্ব সেই মানুষের নাম মো. মঞ্জু মিয়া। বয়স বললেন ৬৭। মঞ্জু মিয়া জানালেন, বয়সের কারণে এখন তিনি খেতে পারেন না খুব একটা। নইলে এক কেজি গাঞ্জিয়া চালের ভাত তাঁর কাছে কিছুই নয়। তবে তাঁরা গাঞ্জিয়া চালের ভাত খেতেন না, কিন্তু অনেক ধানের জাত হারিয়ে গেলে গাঞ্জিয়া ছাড়া উপায় নেই এখন। বেশ অনেকক্ষণ কথা হলো তাঁর সঙ্গে। তারপর উঠতে হলো। বেলা চড়ে যাচ্ছে।
এমন নিবিড় চরের ঘুঘুডাকা দুপুরে চোখে হেল্যুসিনেশন তৈরি হয়, রঙের। সবুজ খেত আর শীতের সোনালি রোদ একধরনের বিভ্রম তৈরি করে চোখে। সেই হেল্যুসিনেশনে দুলতে দুলতে পৌঁছালাম রোকেয়া খাতুনদের বাড়িতে। সেখানে দুপুরের খাবারের আয়োজন। গাঞ্জিয়া চালের ভাত, মাষকলাইয়ের ডাল, ঘাড়ভাঙা মাছের তরকারি বেগুন দিয়ে, বেগুনের পাট ভাজি আর খেসারির কচি পাতার ভাজি পেঁয়াজ-রসুন সাঁতলে। সঙ্গে প্রায় তিন শ মিলিলিটার মোষের দুধ। হ্যাঁ, এই চরে মোষেরা পাল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় আর দুধ দেয়। জমি চাষের দায়িত্ব ট্রাক্টরের। ফলে মোষের দুধ আর দই এখানে পাওয়া যায় প্রচুর। তবে শীতকালে দই ঠিক জমে না বলে কেউ এখন দই পাতে না। দুপুর নামলে আমরা বেরিয়ে পড়ি ফিরতি পথের নৌকা ধরতে।
খেয়াঘাটে নৌকা তখনো পৌঁছায়নি। সেখানে অপেক্ষারত মানুষের মধ্যে দেখা ও কথা হলো মোকছেদ আলীর সঙ্গে। তিনি উত্তর ডাটিয়ার চর প্রামাণিকপাড়ার মানুষ। মধ্য চল্লিশের এই মানুষটি একসময় নৌকা নিয়ে চলে যেতেন বরিশালে। এখন যান না। একসময় পাঁচ-সাত বছর চাকরি করেছিলেন গাজীপুরের কোনো একটি কাপড়ের কলে। ছেড়ে দিয়ে ফিরেছেন চরের গ্রামে। এখন খেতি করেন। গাজীপুরে প্রেসিডেন্ট এরশাদের সঙ্গে একবার হ্যান্ডশেক করেছিলেন মোকছেদ আলী। পরপর তিনবার হ্যান্ডশেক করার সুযোগ হয়েছিল তাঁর, একই দিনে। সেই স্মৃতি মোকছেদ আলী কোনো দিন ভুলবেন না। দেশের রাজার নরম কোমল হাত! আকার-আকৃতি হাত দিয়ে মেপে দেখালেন মোকছেদ আলী। এখন কী করেন? ‘খেতি।’ বিঘা চল্লিশ জমি লিজ নিয়ে চাষ করেন ধান, মরিচ, পেঁয়াজ, ভুট্টা। শ্রম আছে, চাপও আছে। কিন্তু আনন্দও আছে। পেঁয়াজ লাগিয়েছেন জমিতে। বিঘাপ্রতি প্রায় ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। উঠে আসবে বেশ খানিকটা লাভসহ, যদি বৃষ্টিতে নষ্ট না হয়। বৃষ্টি হলে সব শেষ। তার পরও চাষ করছেন? ‘কিষান বাচে আশায় কাকা।’ চন্দ্রবিন্দু বাদ দিয়ে স্পষ্ট করেই কথাটি বললেন মোকছেদ আলী।
নারী-পুরুষ মিলে জনা কুড়ি মানুষ উঠলাম আমরা শ্যালো ইঞ্জিনচালিত খেয়া নৌকায়। বেশির ভাগ মানুষের মুখেই মাস্ক নেই। করোনা নামের এক মহামারি যে পৃথিবী কাঁপিয়ে দিচ্ছে, চরের মানুষ সম্ভবত সেটা জানেই না। কেউ করোনা নিয়ে কোনো কথাই বলল না। এবারের গন্তব্য জোরগাছ হাট।
ব্রহ্মপুত্র বহি চলে নিরবধি। তার ওপর চর। তার ওপর বসে হাট। এই হাটের দুটি অংশ, নদীর তীরে একাংশ আর চরে একাংশ। চরের অংশের নাম জোরগাছ নামাহাট। দুই অংশই বসে রবি আর বুধবার। মোকছেদ আলীর মতো শত শত মানুষের গন্তব্য জোরগাছের নামাহাট। সপ্তাহের শুধু নয়, বহু প্রয়োজনীয় বিকিকিনি চলে সেইখানে। গরু, ঘোড়া, ছাগল, মাছ, চিনেবাদাম, সাবান-তেল-শ্যাম্পু, খাট-পালঙ্ক, ঘটিবাটি—সবকিছুর বিকিকিনি চলে সেখানে।
মোকছেদ আলীরা নেমে যান জোরগাছ হাটের চরের অংশে। আর আমরা চলি শহরের দিকে; শহুরে রুক্ষ ফুসফুসে ভরে ব্রহ্মপুত্রের তাজা বাতাস। কয়েক দিন তাজা রাখবে নিশ্চয়ই।
সূত্র: মননরেখা, চিলমারী সংখ্যা, সম্পাদক: মিজানুর রহমান নাসিম, ২০২১

লোকে তারে কয় মহানদী। হামরা তারে কই মহর্ষি, ব্রহ্মপুত্র। এবং আশ্চর্যের বিষয়, কুড়িগ্রাম থেকে সোজা ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী বন্দরের দিকে গাড়ি হাঁকানোর সময় যে বিলটি পার হতে হয়, তার নাম নিধুয়া পাথার। সেই পাথারের এপার-ওপার দেখা যেত না একসময়। এখন তার বুক চিরে পিচের রাস্তা। সেই রাস্তায় চলে গাড়ি। সেই গাড়িতে বসে সোজা গিয়ে নামা যায় রমনা ঘাটে, যেখানে এখন মহানদী ব্রহ্মপুত্রের অধিষ্ঠান। সৈয়দ শামসুল হক যাকে বলেছেন ‘লৌহিত্য নদ’। ডেকেছেন ‘বাংলার জ্যেষ্ঠ সন্তান’ বলে। বলেছেন মহৎ, বলেছেন স্মৃতিধর, দয়াবান, প্রভাষক; আরও অনেক কিছু। আলোচকেরা তাকে বলেন ‘প্রাচীন বাংলার নদীপথের কেন্দ্রস্থল।’
এই যে এইখানে এসে এখন দাঁড়ায় মানুষ, যাকে ডাকা হয় রমনা ঘাট, সেখান থেকে ব্রহ্মপুত্রের অন্য পাড়ের দূরত্ব প্রায় পনেরো কিলোমিটার। পাহাড় ছেড়ে ব্রহ্মপুত্র যেখানে পলিমাটিতে পড়েছে, সেখানে তার প্রস্থ পঁচিশ থেকে ত্রিশ কিলোমিটার। এই বিশাল বপুর যে নদ, তাকে মহানদ ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় কি? এই বিশাল নদীর বুকে সেই ষোলো শতকে মধু সাধুখাঁ বজরা নিয়ে ভেসে বেড়াতেন বাণিজ্যের আশায়। শুধু মধু সাধুখাঁই নন। বৃহৎ বঙ্গের প্রায় তামাম বাণিজ্য হতো ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে থাকা চিলমারী বন্দর দিয়ে।
এই যে এইখানে নদীর বুক চিরে জেগে উঠেছে চর, সেই চরের ওপরে বসে হাট, সেই হাটের হাজারো মানুষের একজন হয়ে আমি গল্প শুনি এক কিংবদন্তির চিলমারীর। এখন সেখানে মধু সাধুখাঁ নেই। আছেন মেম্বার রফিকুল ইসলাম, মঞ্জু মিয়া, মোকছেদ আলী, রোকেয়া খাতুন কিংবা ছোট্ট ইব্রাহিম— চোখেমুখে যাদের অপার কৌতূহল, শরীর ও মননে যারা শোনে ব্রহ্মপুত্রের ডাক। তাদের গল্প শুনি। একেবারেই ভিন্ন, এই সময়ের গল্প।
চিলমারী এখন কুড়িগ্রাম জেলার একটি উপজেলা মাত্র। আর ‘চিলমারী’ নামের সেই বিখ্যাত বন্দর এখন ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিম তীর ছেড়ে ভাঙতে ভাঙতে চলে গেছে পূর্ব দিকে। প্রশাসনিক মাপকাঠিতে সেটি এখন একটি ইউনিয়ন মাত্র। মূলত চিলমারী সদর ইউনিয়ন আর অষ্টমীর চর, যা বারুণি স্নানের জন্য বিখ্যাত—এ দুটিই ছিল প্রাচীন চিলমারীর পশ্চিম প্রান্তের দুই সমৃদ্ধ জনপদ। ভাঙনের কারণে দুটি এলাকাই এখন ব্রহ্মপুত্রের পূর্ব দিকে চলে গেছে।
এই ভাঙনের কারণেই চিলমারী বন্দরকে ছয়বার স্থানান্তর করতে হয়েছে। বন্দরের সঙ্গে সরাতে হয়েছে প্রশাসনিক ভবনও। এখন যে রমনা রেলস্টেশন বা রমনা ঘাট বা যেখান থেকে রাজিবপুর-রৌমারীর নৌকা ছাড়ে, তার বয়স অর্ধশত বছরের কম। রমনা ঘাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের চর শাখাহাতিতে ছিল চিলমারী স্টেশন। সেটা নদীতে ভেঙে বিলীন হওয়ার পর ঘাট ও রেলস্টেশন আসে রমনায় বা এখনকার জায়গায়।
আমাদের জানা ইতিহাসমাত্রই মুঘল আমল থেকে। উজান কিংবা ভাটি, মুঘল আমলে যেখানেই যাওয়া হোক না কেন, যেতে হতো এই ব্রহ্মপুত্রের ওপর দিয়েই। আর তার প্রধান বন্দর ছিল চিলমারী। এখানে নৌযান থামত, বদল হতো দিক, যাত্রী উঠত কিংবা নামত। যদি নৌযান সোজাও চলত, চিলমারী ছিল অনিবার্য ‘বিরতিস্থল ও বাণিজ্যকেন্দ্র’। এখান থেকেই গন্তব্য নির্ধারিত হতো তিব্বত, ভুটান অথবা নেপালের পথে কিংবা বৃহৎ বঙ্গের বিস্তীর্ণ জনপদে। বাণিজ্য হতো কস্তুরি আর পোস্তদানার, যষ্টিমধু, এন্ডি সিল্ক আর ভোটকম্বলের। কখনো সন্তরা আর আমলকীরও। সন্তরা মানে কমলা। নেপাল বা আরও ওপরের দেশগুলো থেকে কমলা আসত চিলমারী দিয়েই। শুধু বাণিজ্যই নয়। নৌযুদ্ধেও চিলমারী ছিল প্রধানতম জলপথ। সে জন্যই সম্ভবত মুঘলদের জাহাজনির্মাণ শিল্প তৈরি হয়েছিল চিলমারীকে কেন্দ্র করে। সেই চিলমারীর বন্দর ঘন কুয়াশায় ঝাপসা এখন।
উপজেলা চিলমারীর আড়মোড়া ভাঙেনি তখনো। সকাল ৮টা। আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন রমনা খেয়াঘাটের মাঝি মমিনুল আর চর শাখাহাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাহিদ হাসান। ‘মনন রেখা’ নামের একটি ষাণ্মাসিক পত্রিকার সম্পাদক মিজানুর রহমান নাসিমসহ যখন রমনা ঘাটে পৌঁছলাম, তখন কুয়াশা কেটে গিয়ে অদ্ভুত এক ঝলমলে রোদ ব্রহ্মপুত্রের বুকে। সেই রোদে দেখা যায় রৌমারী ও রাজিবপুর থেকে দুটি খেয়া নৌকা এসে লেগেছে রমনা ঘাটে; আর দুটি ছেড়ে যাওয়ার জোগাড়যন্ত্র করছে। আমরা চলেছি চর শাখাহাতি।
রমনা ঘাট থেকে নৌকা ছাড়তেই মাদকতা মাখা ঠান্ডা বাতাসের পরশ ছুঁয়ে গেল আমাদের শরীর। পূর্বমুখী নৌকার হাল ধরে বসে আছেন মমিনুল; কিংবদন্তি থেকে উঠে আসা এক মাঝির মতো। কালচে পেশিবহুল শরীর। অভিজ্ঞ চোখ। কিন্তু মাঝ নদীতে দারুণ বিনয়ী। গুটগুট করে শ্যালো মেশিনের নৌকা চলছে। ছইয়ের ওপর আমরা তিনজন। নিচে আরও কয়েকজন। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। আমরা কথা বলে চলেছি। ওপরে মাঘের নির্মেঘ আকাশ আর নিচে টলটলে নীল জল। তার ওপর রাজহাঁসের মতো ঢেউ কেটে চলেছে শ্যালো নৌকা। গলুইয়ে হাল ধরে বসে আছেন একা এক নিঃসঙ্গ মাঝি মমিনুল। নাহিদ হাসান বললেন, ব্রহ্মপুত্র বিষয়ে মমিুনলের অনেক জ্ঞান। শুনে তিনি হাসলেন। আমি নিশ্চিত, শতসহস্র কুড়ার নদী ব্রহ্মপুত্রকে মনুষ্যজ্ঞানে যে ধরা যায় না, সেটা মমিনুল ভালোই জানেন। আর জানেন বলেই তিনি হাসছেন। নৌকার ছইয়ে বসে মমিনুলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, এক নিঃসঙ্গ মাঝি ব্রহ্মপুত্রের বুক চিরে চলেছেন গন্তব্যে। এই নদীর বুকে ভাগ্য বলে কিছু নেই, সেটা তিনি জানেন। এক নদী গবেষক বলেন, ‘এইখানে, এই মহানদীর কারণে মানুষের ভাগ্য ও ভূখণ্ড দুটোই ভাঙে।’
টলটলে নীল জলের ওপর দিয়ে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা গিয়ে থামল চরের খেয়াঘাটে। নৌকা থেকে নেমে হাঁটা শুরু। একটুখানি এগোতেই দেখা হলো এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার পদপ্রার্থী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। ষাটের কোঠায় বয়স তাঁর। নাহিদ হাসানের পরিচিত। মূলত পুরো চরটিই তাঁর পরিচিত। রফিুকল ইসলাম হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, ‘ওই যে ওই সরিষার খেত, ওইখানে আছিল রেল স্টেশন। এলা ভাঙি গেইছে।’ তাকিয়ে দেখলাম, নির্দিষ্ট জায়গাটিতে এখন হলুদ সরিষা মাঘের হাওয়ায় দুলছে। আমরা এগিয়ে গেলাম চর শাখাহাতির দিকে।
এখানে মানুষ গ্রাম সঙ্গে নিয়ে ঘোরে! শহরে থাকলে এসব জানা যায় না। তাই অবাক হতেই পারেন শুনে। নিজের ত্বক, দাঁত, চুলের মতোই এখানে নিজের অস্তিত্বের আরেক নাম গ্রাম। ফলে নদী গ্রাম ভাঙলে মানুষ নতুন বসতি তৈরি করে পুরোনো গ্রামের নামে। আমরা হাঁটতে থাকি। চারদিকে পলিজমা কৃষিজমি। সেই জমিতে জন্মে সুল্টি কলাই। মসুর ডালের মতো দেখতে মনে হলেও সেটা মসুর ডাল নয়। দেশের অন্য কোনো জায়গায় জন্মে না। এই অঞ্চলেই জন্মে। শুনলাম, সুল্টি কলাইয়ের ডাল বেশ সুস্বাদু।
খুব বড় চর নয় শাখাহাতি। বন্ধুর সেই চর পুরোটাই হেঁটে হেঁটে ঘুরলাম আমরা। ঠাকুরি কলাই, মাষকলাই, খেসারি কলাই, গাঞ্জিয়া ধান, ভুট্টা, সরষে আর চিনেবাদাম—এ সবই জন্মে এই চরে। বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর গাছ আছে চরে। এখানকার মানুষগুলো প্রাগৈতিহাসিক সরল, শহরের তুলনায়। বিনোদন বলতে তেমন কিছু নেই। একটিমাত্র ডিশ অ্যান্টেনা দেখা গেল পুরো চরে। আর আছে সাউন্ড বক্স। যখন-তখন বাজে—হিন্দি আর বাংলা গান। শিশুরা গানের তালে নাচে। বড়রা বিরক্ত হয় না।
হাঁটতে হাঁটতে সেই চরেরই আরেক প্রান্তে পৌঁছালাম আমরা চায়ের খোঁজে। সেই অংশের নাম বৈলমন্দিয়ার খাতা। পুরো চরে দু-তিনটি চায়ের দোকান; তার একটি এখানে। হাটবার বলে বন্ধ। ফিরে যাব, সে সময় ষাটোর্ধ্ব একজন কোত্থেকে উদয় হয়ে বললেন, ‘বসেন, দেখি কিছু পাই কি না।’ বলেই ডেকে আনলেন এক নারীকে। বোঝা গেল, তিনিই দোকানের মালকিন। চা নেই। অগত্যা চিনেবাদাম ভাজা আর পানি খাওয়া হলো। ষাটোর্ধ্ব সেই মানুষের নাম মো. মঞ্জু মিয়া। বয়স বললেন ৬৭। মঞ্জু মিয়া জানালেন, বয়সের কারণে এখন তিনি খেতে পারেন না খুব একটা। নইলে এক কেজি গাঞ্জিয়া চালের ভাত তাঁর কাছে কিছুই নয়। তবে তাঁরা গাঞ্জিয়া চালের ভাত খেতেন না, কিন্তু অনেক ধানের জাত হারিয়ে গেলে গাঞ্জিয়া ছাড়া উপায় নেই এখন। বেশ অনেকক্ষণ কথা হলো তাঁর সঙ্গে। তারপর উঠতে হলো। বেলা চড়ে যাচ্ছে।
এমন নিবিড় চরের ঘুঘুডাকা দুপুরে চোখে হেল্যুসিনেশন তৈরি হয়, রঙের। সবুজ খেত আর শীতের সোনালি রোদ একধরনের বিভ্রম তৈরি করে চোখে। সেই হেল্যুসিনেশনে দুলতে দুলতে পৌঁছালাম রোকেয়া খাতুনদের বাড়িতে। সেখানে দুপুরের খাবারের আয়োজন। গাঞ্জিয়া চালের ভাত, মাষকলাইয়ের ডাল, ঘাড়ভাঙা মাছের তরকারি বেগুন দিয়ে, বেগুনের পাট ভাজি আর খেসারির কচি পাতার ভাজি পেঁয়াজ-রসুন সাঁতলে। সঙ্গে প্রায় তিন শ মিলিলিটার মোষের দুধ। হ্যাঁ, এই চরে মোষেরা পাল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় আর দুধ দেয়। জমি চাষের দায়িত্ব ট্রাক্টরের। ফলে মোষের দুধ আর দই এখানে পাওয়া যায় প্রচুর। তবে শীতকালে দই ঠিক জমে না বলে কেউ এখন দই পাতে না। দুপুর নামলে আমরা বেরিয়ে পড়ি ফিরতি পথের নৌকা ধরতে।
খেয়াঘাটে নৌকা তখনো পৌঁছায়নি। সেখানে অপেক্ষারত মানুষের মধ্যে দেখা ও কথা হলো মোকছেদ আলীর সঙ্গে। তিনি উত্তর ডাটিয়ার চর প্রামাণিকপাড়ার মানুষ। মধ্য চল্লিশের এই মানুষটি একসময় নৌকা নিয়ে চলে যেতেন বরিশালে। এখন যান না। একসময় পাঁচ-সাত বছর চাকরি করেছিলেন গাজীপুরের কোনো একটি কাপড়ের কলে। ছেড়ে দিয়ে ফিরেছেন চরের গ্রামে। এখন খেতি করেন। গাজীপুরে প্রেসিডেন্ট এরশাদের সঙ্গে একবার হ্যান্ডশেক করেছিলেন মোকছেদ আলী। পরপর তিনবার হ্যান্ডশেক করার সুযোগ হয়েছিল তাঁর, একই দিনে। সেই স্মৃতি মোকছেদ আলী কোনো দিন ভুলবেন না। দেশের রাজার নরম কোমল হাত! আকার-আকৃতি হাত দিয়ে মেপে দেখালেন মোকছেদ আলী। এখন কী করেন? ‘খেতি।’ বিঘা চল্লিশ জমি লিজ নিয়ে চাষ করেন ধান, মরিচ, পেঁয়াজ, ভুট্টা। শ্রম আছে, চাপও আছে। কিন্তু আনন্দও আছে। পেঁয়াজ লাগিয়েছেন জমিতে। বিঘাপ্রতি প্রায় ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। উঠে আসবে বেশ খানিকটা লাভসহ, যদি বৃষ্টিতে নষ্ট না হয়। বৃষ্টি হলে সব শেষ। তার পরও চাষ করছেন? ‘কিষান বাচে আশায় কাকা।’ চন্দ্রবিন্দু বাদ দিয়ে স্পষ্ট করেই কথাটি বললেন মোকছেদ আলী।
নারী-পুরুষ মিলে জনা কুড়ি মানুষ উঠলাম আমরা শ্যালো ইঞ্জিনচালিত খেয়া নৌকায়। বেশির ভাগ মানুষের মুখেই মাস্ক নেই। করোনা নামের এক মহামারি যে পৃথিবী কাঁপিয়ে দিচ্ছে, চরের মানুষ সম্ভবত সেটা জানেই না। কেউ করোনা নিয়ে কোনো কথাই বলল না। এবারের গন্তব্য জোরগাছ হাট।
ব্রহ্মপুত্র বহি চলে নিরবধি। তার ওপর চর। তার ওপর বসে হাট। এই হাটের দুটি অংশ, নদীর তীরে একাংশ আর চরে একাংশ। চরের অংশের নাম জোরগাছ নামাহাট। দুই অংশই বসে রবি আর বুধবার। মোকছেদ আলীর মতো শত শত মানুষের গন্তব্য জোরগাছের নামাহাট। সপ্তাহের শুধু নয়, বহু প্রয়োজনীয় বিকিকিনি চলে সেইখানে। গরু, ঘোড়া, ছাগল, মাছ, চিনেবাদাম, সাবান-তেল-শ্যাম্পু, খাট-পালঙ্ক, ঘটিবাটি—সবকিছুর বিকিকিনি চলে সেখানে।
মোকছেদ আলীরা নেমে যান জোরগাছ হাটের চরের অংশে। আর আমরা চলি শহরের দিকে; শহুরে রুক্ষ ফুসফুসে ভরে ব্রহ্মপুত্রের তাজা বাতাস। কয়েক দিন তাজা রাখবে নিশ্চয়ই।
সূত্র: মননরেখা, চিলমারী সংখ্যা, সম্পাদক: মিজানুর রহমান নাসিম, ২০২১
রজত কান্তি রায়, ঢাকা

লোকে তারে কয় মহানদী। হামরা তারে কই মহর্ষি, ব্রহ্মপুত্র। এবং আশ্চর্যের বিষয়, কুড়িগ্রাম থেকে সোজা ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী বন্দরের দিকে গাড়ি হাঁকানোর সময় যে বিলটি পার হতে হয়, তার নাম নিধুয়া পাথার। সেই পাথারের এপার-ওপার দেখা যেত না একসময়। এখন তার বুক চিরে পিচের রাস্তা। সেই রাস্তায় চলে গাড়ি। সেই গাড়িতে বসে সোজা গিয়ে নামা যায় রমনা ঘাটে, যেখানে এখন মহানদী ব্রহ্মপুত্রের অধিষ্ঠান। সৈয়দ শামসুল হক যাকে বলেছেন ‘লৌহিত্য নদ’। ডেকেছেন ‘বাংলার জ্যেষ্ঠ সন্তান’ বলে। বলেছেন মহৎ, বলেছেন স্মৃতিধর, দয়াবান, প্রভাষক; আরও অনেক কিছু। আলোচকেরা তাকে বলেন ‘প্রাচীন বাংলার নদীপথের কেন্দ্রস্থল।’
এই যে এইখানে এসে এখন দাঁড়ায় মানুষ, যাকে ডাকা হয় রমনা ঘাট, সেখান থেকে ব্রহ্মপুত্রের অন্য পাড়ের দূরত্ব প্রায় পনেরো কিলোমিটার। পাহাড় ছেড়ে ব্রহ্মপুত্র যেখানে পলিমাটিতে পড়েছে, সেখানে তার প্রস্থ পঁচিশ থেকে ত্রিশ কিলোমিটার। এই বিশাল বপুর যে নদ, তাকে মহানদ ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় কি? এই বিশাল নদীর বুকে সেই ষোলো শতকে মধু সাধুখাঁ বজরা নিয়ে ভেসে বেড়াতেন বাণিজ্যের আশায়। শুধু মধু সাধুখাঁই নন। বৃহৎ বঙ্গের প্রায় তামাম বাণিজ্য হতো ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে থাকা চিলমারী বন্দর দিয়ে।
এই যে এইখানে নদীর বুক চিরে জেগে উঠেছে চর, সেই চরের ওপরে বসে হাট, সেই হাটের হাজারো মানুষের একজন হয়ে আমি গল্প শুনি এক কিংবদন্তির চিলমারীর। এখন সেখানে মধু সাধুখাঁ নেই। আছেন মেম্বার রফিকুল ইসলাম, মঞ্জু মিয়া, মোকছেদ আলী, রোকেয়া খাতুন কিংবা ছোট্ট ইব্রাহিম— চোখেমুখে যাদের অপার কৌতূহল, শরীর ও মননে যারা শোনে ব্রহ্মপুত্রের ডাক। তাদের গল্প শুনি। একেবারেই ভিন্ন, এই সময়ের গল্প।
চিলমারী এখন কুড়িগ্রাম জেলার একটি উপজেলা মাত্র। আর ‘চিলমারী’ নামের সেই বিখ্যাত বন্দর এখন ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিম তীর ছেড়ে ভাঙতে ভাঙতে চলে গেছে পূর্ব দিকে। প্রশাসনিক মাপকাঠিতে সেটি এখন একটি ইউনিয়ন মাত্র। মূলত চিলমারী সদর ইউনিয়ন আর অষ্টমীর চর, যা বারুণি স্নানের জন্য বিখ্যাত—এ দুটিই ছিল প্রাচীন চিলমারীর পশ্চিম প্রান্তের দুই সমৃদ্ধ জনপদ। ভাঙনের কারণে দুটি এলাকাই এখন ব্রহ্মপুত্রের পূর্ব দিকে চলে গেছে।
এই ভাঙনের কারণেই চিলমারী বন্দরকে ছয়বার স্থানান্তর করতে হয়েছে। বন্দরের সঙ্গে সরাতে হয়েছে প্রশাসনিক ভবনও। এখন যে রমনা রেলস্টেশন বা রমনা ঘাট বা যেখান থেকে রাজিবপুর-রৌমারীর নৌকা ছাড়ে, তার বয়স অর্ধশত বছরের কম। রমনা ঘাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের চর শাখাহাতিতে ছিল চিলমারী স্টেশন। সেটা নদীতে ভেঙে বিলীন হওয়ার পর ঘাট ও রেলস্টেশন আসে রমনায় বা এখনকার জায়গায়।
আমাদের জানা ইতিহাসমাত্রই মুঘল আমল থেকে। উজান কিংবা ভাটি, মুঘল আমলে যেখানেই যাওয়া হোক না কেন, যেতে হতো এই ব্রহ্মপুত্রের ওপর দিয়েই। আর তার প্রধান বন্দর ছিল চিলমারী। এখানে নৌযান থামত, বদল হতো দিক, যাত্রী উঠত কিংবা নামত। যদি নৌযান সোজাও চলত, চিলমারী ছিল অনিবার্য ‘বিরতিস্থল ও বাণিজ্যকেন্দ্র’। এখান থেকেই গন্তব্য নির্ধারিত হতো তিব্বত, ভুটান অথবা নেপালের পথে কিংবা বৃহৎ বঙ্গের বিস্তীর্ণ জনপদে। বাণিজ্য হতো কস্তুরি আর পোস্তদানার, যষ্টিমধু, এন্ডি সিল্ক আর ভোটকম্বলের। কখনো সন্তরা আর আমলকীরও। সন্তরা মানে কমলা। নেপাল বা আরও ওপরের দেশগুলো থেকে কমলা আসত চিলমারী দিয়েই। শুধু বাণিজ্যই নয়। নৌযুদ্ধেও চিলমারী ছিল প্রধানতম জলপথ। সে জন্যই সম্ভবত মুঘলদের জাহাজনির্মাণ শিল্প তৈরি হয়েছিল চিলমারীকে কেন্দ্র করে। সেই চিলমারীর বন্দর ঘন কুয়াশায় ঝাপসা এখন।
উপজেলা চিলমারীর আড়মোড়া ভাঙেনি তখনো। সকাল ৮টা। আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন রমনা খেয়াঘাটের মাঝি মমিনুল আর চর শাখাহাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাহিদ হাসান। ‘মনন রেখা’ নামের একটি ষাণ্মাসিক পত্রিকার সম্পাদক মিজানুর রহমান নাসিমসহ যখন রমনা ঘাটে পৌঁছলাম, তখন কুয়াশা কেটে গিয়ে অদ্ভুত এক ঝলমলে রোদ ব্রহ্মপুত্রের বুকে। সেই রোদে দেখা যায় রৌমারী ও রাজিবপুর থেকে দুটি খেয়া নৌকা এসে লেগেছে রমনা ঘাটে; আর দুটি ছেড়ে যাওয়ার জোগাড়যন্ত্র করছে। আমরা চলেছি চর শাখাহাতি।
রমনা ঘাট থেকে নৌকা ছাড়তেই মাদকতা মাখা ঠান্ডা বাতাসের পরশ ছুঁয়ে গেল আমাদের শরীর। পূর্বমুখী নৌকার হাল ধরে বসে আছেন মমিনুল; কিংবদন্তি থেকে উঠে আসা এক মাঝির মতো। কালচে পেশিবহুল শরীর। অভিজ্ঞ চোখ। কিন্তু মাঝ নদীতে দারুণ বিনয়ী। গুটগুট করে শ্যালো মেশিনের নৌকা চলছে। ছইয়ের ওপর আমরা তিনজন। নিচে আরও কয়েকজন। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। আমরা কথা বলে চলেছি। ওপরে মাঘের নির্মেঘ আকাশ আর নিচে টলটলে নীল জল। তার ওপর রাজহাঁসের মতো ঢেউ কেটে চলেছে শ্যালো নৌকা। গলুইয়ে হাল ধরে বসে আছেন একা এক নিঃসঙ্গ মাঝি মমিনুল। নাহিদ হাসান বললেন, ব্রহ্মপুত্র বিষয়ে মমিুনলের অনেক জ্ঞান। শুনে তিনি হাসলেন। আমি নিশ্চিত, শতসহস্র কুড়ার নদী ব্রহ্মপুত্রকে মনুষ্যজ্ঞানে যে ধরা যায় না, সেটা মমিনুল ভালোই জানেন। আর জানেন বলেই তিনি হাসছেন। নৌকার ছইয়ে বসে মমিনুলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, এক নিঃসঙ্গ মাঝি ব্রহ্মপুত্রের বুক চিরে চলেছেন গন্তব্যে। এই নদীর বুকে ভাগ্য বলে কিছু নেই, সেটা তিনি জানেন। এক নদী গবেষক বলেন, ‘এইখানে, এই মহানদীর কারণে মানুষের ভাগ্য ও ভূখণ্ড দুটোই ভাঙে।’
টলটলে নীল জলের ওপর দিয়ে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা গিয়ে থামল চরের খেয়াঘাটে। নৌকা থেকে নেমে হাঁটা শুরু। একটুখানি এগোতেই দেখা হলো এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার পদপ্রার্থী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। ষাটের কোঠায় বয়স তাঁর। নাহিদ হাসানের পরিচিত। মূলত পুরো চরটিই তাঁর পরিচিত। রফিুকল ইসলাম হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, ‘ওই যে ওই সরিষার খেত, ওইখানে আছিল রেল স্টেশন। এলা ভাঙি গেইছে।’ তাকিয়ে দেখলাম, নির্দিষ্ট জায়গাটিতে এখন হলুদ সরিষা মাঘের হাওয়ায় দুলছে। আমরা এগিয়ে গেলাম চর শাখাহাতির দিকে।
এখানে মানুষ গ্রাম সঙ্গে নিয়ে ঘোরে! শহরে থাকলে এসব জানা যায় না। তাই অবাক হতেই পারেন শুনে। নিজের ত্বক, দাঁত, চুলের মতোই এখানে নিজের অস্তিত্বের আরেক নাম গ্রাম। ফলে নদী গ্রাম ভাঙলে মানুষ নতুন বসতি তৈরি করে পুরোনো গ্রামের নামে। আমরা হাঁটতে থাকি। চারদিকে পলিজমা কৃষিজমি। সেই জমিতে জন্মে সুল্টি কলাই। মসুর ডালের মতো দেখতে মনে হলেও সেটা মসুর ডাল নয়। দেশের অন্য কোনো জায়গায় জন্মে না। এই অঞ্চলেই জন্মে। শুনলাম, সুল্টি কলাইয়ের ডাল বেশ সুস্বাদু।
খুব বড় চর নয় শাখাহাতি। বন্ধুর সেই চর পুরোটাই হেঁটে হেঁটে ঘুরলাম আমরা। ঠাকুরি কলাই, মাষকলাই, খেসারি কলাই, গাঞ্জিয়া ধান, ভুট্টা, সরষে আর চিনেবাদাম—এ সবই জন্মে এই চরে। বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর গাছ আছে চরে। এখানকার মানুষগুলো প্রাগৈতিহাসিক সরল, শহরের তুলনায়। বিনোদন বলতে তেমন কিছু নেই। একটিমাত্র ডিশ অ্যান্টেনা দেখা গেল পুরো চরে। আর আছে সাউন্ড বক্স। যখন-তখন বাজে—হিন্দি আর বাংলা গান। শিশুরা গানের তালে নাচে। বড়রা বিরক্ত হয় না।
হাঁটতে হাঁটতে সেই চরেরই আরেক প্রান্তে পৌঁছালাম আমরা চায়ের খোঁজে। সেই অংশের নাম বৈলমন্দিয়ার খাতা। পুরো চরে দু-তিনটি চায়ের দোকান; তার একটি এখানে। হাটবার বলে বন্ধ। ফিরে যাব, সে সময় ষাটোর্ধ্ব একজন কোত্থেকে উদয় হয়ে বললেন, ‘বসেন, দেখি কিছু পাই কি না।’ বলেই ডেকে আনলেন এক নারীকে। বোঝা গেল, তিনিই দোকানের মালকিন। চা নেই। অগত্যা চিনেবাদাম ভাজা আর পানি খাওয়া হলো। ষাটোর্ধ্ব সেই মানুষের নাম মো. মঞ্জু মিয়া। বয়স বললেন ৬৭। মঞ্জু মিয়া জানালেন, বয়সের কারণে এখন তিনি খেতে পারেন না খুব একটা। নইলে এক কেজি গাঞ্জিয়া চালের ভাত তাঁর কাছে কিছুই নয়। তবে তাঁরা গাঞ্জিয়া চালের ভাত খেতেন না, কিন্তু অনেক ধানের জাত হারিয়ে গেলে গাঞ্জিয়া ছাড়া উপায় নেই এখন। বেশ অনেকক্ষণ কথা হলো তাঁর সঙ্গে। তারপর উঠতে হলো। বেলা চড়ে যাচ্ছে।
এমন নিবিড় চরের ঘুঘুডাকা দুপুরে চোখে হেল্যুসিনেশন তৈরি হয়, রঙের। সবুজ খেত আর শীতের সোনালি রোদ একধরনের বিভ্রম তৈরি করে চোখে। সেই হেল্যুসিনেশনে দুলতে দুলতে পৌঁছালাম রোকেয়া খাতুনদের বাড়িতে। সেখানে দুপুরের খাবারের আয়োজন। গাঞ্জিয়া চালের ভাত, মাষকলাইয়ের ডাল, ঘাড়ভাঙা মাছের তরকারি বেগুন দিয়ে, বেগুনের পাট ভাজি আর খেসারির কচি পাতার ভাজি পেঁয়াজ-রসুন সাঁতলে। সঙ্গে প্রায় তিন শ মিলিলিটার মোষের দুধ। হ্যাঁ, এই চরে মোষেরা পাল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় আর দুধ দেয়। জমি চাষের দায়িত্ব ট্রাক্টরের। ফলে মোষের দুধ আর দই এখানে পাওয়া যায় প্রচুর। তবে শীতকালে দই ঠিক জমে না বলে কেউ এখন দই পাতে না। দুপুর নামলে আমরা বেরিয়ে পড়ি ফিরতি পথের নৌকা ধরতে।
খেয়াঘাটে নৌকা তখনো পৌঁছায়নি। সেখানে অপেক্ষারত মানুষের মধ্যে দেখা ও কথা হলো মোকছেদ আলীর সঙ্গে। তিনি উত্তর ডাটিয়ার চর প্রামাণিকপাড়ার মানুষ। মধ্য চল্লিশের এই মানুষটি একসময় নৌকা নিয়ে চলে যেতেন বরিশালে। এখন যান না। একসময় পাঁচ-সাত বছর চাকরি করেছিলেন গাজীপুরের কোনো একটি কাপড়ের কলে। ছেড়ে দিয়ে ফিরেছেন চরের গ্রামে। এখন খেতি করেন। গাজীপুরে প্রেসিডেন্ট এরশাদের সঙ্গে একবার হ্যান্ডশেক করেছিলেন মোকছেদ আলী। পরপর তিনবার হ্যান্ডশেক করার সুযোগ হয়েছিল তাঁর, একই দিনে। সেই স্মৃতি মোকছেদ আলী কোনো দিন ভুলবেন না। দেশের রাজার নরম কোমল হাত! আকার-আকৃতি হাত দিয়ে মেপে দেখালেন মোকছেদ আলী। এখন কী করেন? ‘খেতি।’ বিঘা চল্লিশ জমি লিজ নিয়ে চাষ করেন ধান, মরিচ, পেঁয়াজ, ভুট্টা। শ্রম আছে, চাপও আছে। কিন্তু আনন্দও আছে। পেঁয়াজ লাগিয়েছেন জমিতে। বিঘাপ্রতি প্রায় ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। উঠে আসবে বেশ খানিকটা লাভসহ, যদি বৃষ্টিতে নষ্ট না হয়। বৃষ্টি হলে সব শেষ। তার পরও চাষ করছেন? ‘কিষান বাচে আশায় কাকা।’ চন্দ্রবিন্দু বাদ দিয়ে স্পষ্ট করেই কথাটি বললেন মোকছেদ আলী।
নারী-পুরুষ মিলে জনা কুড়ি মানুষ উঠলাম আমরা শ্যালো ইঞ্জিনচালিত খেয়া নৌকায়। বেশির ভাগ মানুষের মুখেই মাস্ক নেই। করোনা নামের এক মহামারি যে পৃথিবী কাঁপিয়ে দিচ্ছে, চরের মানুষ সম্ভবত সেটা জানেই না। কেউ করোনা নিয়ে কোনো কথাই বলল না। এবারের গন্তব্য জোরগাছ হাট।
ব্রহ্মপুত্র বহি চলে নিরবধি। তার ওপর চর। তার ওপর বসে হাট। এই হাটের দুটি অংশ, নদীর তীরে একাংশ আর চরে একাংশ। চরের অংশের নাম জোরগাছ নামাহাট। দুই অংশই বসে রবি আর বুধবার। মোকছেদ আলীর মতো শত শত মানুষের গন্তব্য জোরগাছের নামাহাট। সপ্তাহের শুধু নয়, বহু প্রয়োজনীয় বিকিকিনি চলে সেইখানে। গরু, ঘোড়া, ছাগল, মাছ, চিনেবাদাম, সাবান-তেল-শ্যাম্পু, খাট-পালঙ্ক, ঘটিবাটি—সবকিছুর বিকিকিনি চলে সেখানে।
মোকছেদ আলীরা নেমে যান জোরগাছ হাটের চরের অংশে। আর আমরা চলি শহরের দিকে; শহুরে রুক্ষ ফুসফুসে ভরে ব্রহ্মপুত্রের তাজা বাতাস। কয়েক দিন তাজা রাখবে নিশ্চয়ই।
সূত্র: মননরেখা, চিলমারী সংখ্যা, সম্পাদক: মিজানুর রহমান নাসিম, ২০২১

লোকে তারে কয় মহানদী। হামরা তারে কই মহর্ষি, ব্রহ্মপুত্র। এবং আশ্চর্যের বিষয়, কুড়িগ্রাম থেকে সোজা ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী বন্দরের দিকে গাড়ি হাঁকানোর সময় যে বিলটি পার হতে হয়, তার নাম নিধুয়া পাথার। সেই পাথারের এপার-ওপার দেখা যেত না একসময়। এখন তার বুক চিরে পিচের রাস্তা। সেই রাস্তায় চলে গাড়ি। সেই গাড়িতে বসে সোজা গিয়ে নামা যায় রমনা ঘাটে, যেখানে এখন মহানদী ব্রহ্মপুত্রের অধিষ্ঠান। সৈয়দ শামসুল হক যাকে বলেছেন ‘লৌহিত্য নদ’। ডেকেছেন ‘বাংলার জ্যেষ্ঠ সন্তান’ বলে। বলেছেন মহৎ, বলেছেন স্মৃতিধর, দয়াবান, প্রভাষক; আরও অনেক কিছু। আলোচকেরা তাকে বলেন ‘প্রাচীন বাংলার নদীপথের কেন্দ্রস্থল।’
এই যে এইখানে এসে এখন দাঁড়ায় মানুষ, যাকে ডাকা হয় রমনা ঘাট, সেখান থেকে ব্রহ্মপুত্রের অন্য পাড়ের দূরত্ব প্রায় পনেরো কিলোমিটার। পাহাড় ছেড়ে ব্রহ্মপুত্র যেখানে পলিমাটিতে পড়েছে, সেখানে তার প্রস্থ পঁচিশ থেকে ত্রিশ কিলোমিটার। এই বিশাল বপুর যে নদ, তাকে মহানদ ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় কি? এই বিশাল নদীর বুকে সেই ষোলো শতকে মধু সাধুখাঁ বজরা নিয়ে ভেসে বেড়াতেন বাণিজ্যের আশায়। শুধু মধু সাধুখাঁই নন। বৃহৎ বঙ্গের প্রায় তামাম বাণিজ্য হতো ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে থাকা চিলমারী বন্দর দিয়ে।
এই যে এইখানে নদীর বুক চিরে জেগে উঠেছে চর, সেই চরের ওপরে বসে হাট, সেই হাটের হাজারো মানুষের একজন হয়ে আমি গল্প শুনি এক কিংবদন্তির চিলমারীর। এখন সেখানে মধু সাধুখাঁ নেই। আছেন মেম্বার রফিকুল ইসলাম, মঞ্জু মিয়া, মোকছেদ আলী, রোকেয়া খাতুন কিংবা ছোট্ট ইব্রাহিম— চোখেমুখে যাদের অপার কৌতূহল, শরীর ও মননে যারা শোনে ব্রহ্মপুত্রের ডাক। তাদের গল্প শুনি। একেবারেই ভিন্ন, এই সময়ের গল্প।
চিলমারী এখন কুড়িগ্রাম জেলার একটি উপজেলা মাত্র। আর ‘চিলমারী’ নামের সেই বিখ্যাত বন্দর এখন ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিম তীর ছেড়ে ভাঙতে ভাঙতে চলে গেছে পূর্ব দিকে। প্রশাসনিক মাপকাঠিতে সেটি এখন একটি ইউনিয়ন মাত্র। মূলত চিলমারী সদর ইউনিয়ন আর অষ্টমীর চর, যা বারুণি স্নানের জন্য বিখ্যাত—এ দুটিই ছিল প্রাচীন চিলমারীর পশ্চিম প্রান্তের দুই সমৃদ্ধ জনপদ। ভাঙনের কারণে দুটি এলাকাই এখন ব্রহ্মপুত্রের পূর্ব দিকে চলে গেছে।
এই ভাঙনের কারণেই চিলমারী বন্দরকে ছয়বার স্থানান্তর করতে হয়েছে। বন্দরের সঙ্গে সরাতে হয়েছে প্রশাসনিক ভবনও। এখন যে রমনা রেলস্টেশন বা রমনা ঘাট বা যেখান থেকে রাজিবপুর-রৌমারীর নৌকা ছাড়ে, তার বয়স অর্ধশত বছরের কম। রমনা ঘাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের চর শাখাহাতিতে ছিল চিলমারী স্টেশন। সেটা নদীতে ভেঙে বিলীন হওয়ার পর ঘাট ও রেলস্টেশন আসে রমনায় বা এখনকার জায়গায়।
আমাদের জানা ইতিহাসমাত্রই মুঘল আমল থেকে। উজান কিংবা ভাটি, মুঘল আমলে যেখানেই যাওয়া হোক না কেন, যেতে হতো এই ব্রহ্মপুত্রের ওপর দিয়েই। আর তার প্রধান বন্দর ছিল চিলমারী। এখানে নৌযান থামত, বদল হতো দিক, যাত্রী উঠত কিংবা নামত। যদি নৌযান সোজাও চলত, চিলমারী ছিল অনিবার্য ‘বিরতিস্থল ও বাণিজ্যকেন্দ্র’। এখান থেকেই গন্তব্য নির্ধারিত হতো তিব্বত, ভুটান অথবা নেপালের পথে কিংবা বৃহৎ বঙ্গের বিস্তীর্ণ জনপদে। বাণিজ্য হতো কস্তুরি আর পোস্তদানার, যষ্টিমধু, এন্ডি সিল্ক আর ভোটকম্বলের। কখনো সন্তরা আর আমলকীরও। সন্তরা মানে কমলা। নেপাল বা আরও ওপরের দেশগুলো থেকে কমলা আসত চিলমারী দিয়েই। শুধু বাণিজ্যই নয়। নৌযুদ্ধেও চিলমারী ছিল প্রধানতম জলপথ। সে জন্যই সম্ভবত মুঘলদের জাহাজনির্মাণ শিল্প তৈরি হয়েছিল চিলমারীকে কেন্দ্র করে। সেই চিলমারীর বন্দর ঘন কুয়াশায় ঝাপসা এখন।
উপজেলা চিলমারীর আড়মোড়া ভাঙেনি তখনো। সকাল ৮টা। আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন রমনা খেয়াঘাটের মাঝি মমিনুল আর চর শাখাহাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাহিদ হাসান। ‘মনন রেখা’ নামের একটি ষাণ্মাসিক পত্রিকার সম্পাদক মিজানুর রহমান নাসিমসহ যখন রমনা ঘাটে পৌঁছলাম, তখন কুয়াশা কেটে গিয়ে অদ্ভুত এক ঝলমলে রোদ ব্রহ্মপুত্রের বুকে। সেই রোদে দেখা যায় রৌমারী ও রাজিবপুর থেকে দুটি খেয়া নৌকা এসে লেগেছে রমনা ঘাটে; আর দুটি ছেড়ে যাওয়ার জোগাড়যন্ত্র করছে। আমরা চলেছি চর শাখাহাতি।
রমনা ঘাট থেকে নৌকা ছাড়তেই মাদকতা মাখা ঠান্ডা বাতাসের পরশ ছুঁয়ে গেল আমাদের শরীর। পূর্বমুখী নৌকার হাল ধরে বসে আছেন মমিনুল; কিংবদন্তি থেকে উঠে আসা এক মাঝির মতো। কালচে পেশিবহুল শরীর। অভিজ্ঞ চোখ। কিন্তু মাঝ নদীতে দারুণ বিনয়ী। গুটগুট করে শ্যালো মেশিনের নৌকা চলছে। ছইয়ের ওপর আমরা তিনজন। নিচে আরও কয়েকজন। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। আমরা কথা বলে চলেছি। ওপরে মাঘের নির্মেঘ আকাশ আর নিচে টলটলে নীল জল। তার ওপর রাজহাঁসের মতো ঢেউ কেটে চলেছে শ্যালো নৌকা। গলুইয়ে হাল ধরে বসে আছেন একা এক নিঃসঙ্গ মাঝি মমিনুল। নাহিদ হাসান বললেন, ব্রহ্মপুত্র বিষয়ে মমিুনলের অনেক জ্ঞান। শুনে তিনি হাসলেন। আমি নিশ্চিত, শতসহস্র কুড়ার নদী ব্রহ্মপুত্রকে মনুষ্যজ্ঞানে যে ধরা যায় না, সেটা মমিনুল ভালোই জানেন। আর জানেন বলেই তিনি হাসছেন। নৌকার ছইয়ে বসে মমিনুলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, এক নিঃসঙ্গ মাঝি ব্রহ্মপুত্রের বুক চিরে চলেছেন গন্তব্যে। এই নদীর বুকে ভাগ্য বলে কিছু নেই, সেটা তিনি জানেন। এক নদী গবেষক বলেন, ‘এইখানে, এই মহানদীর কারণে মানুষের ভাগ্য ও ভূখণ্ড দুটোই ভাঙে।’
টলটলে নীল জলের ওপর দিয়ে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা গিয়ে থামল চরের খেয়াঘাটে। নৌকা থেকে নেমে হাঁটা শুরু। একটুখানি এগোতেই দেখা হলো এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার পদপ্রার্থী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। ষাটের কোঠায় বয়স তাঁর। নাহিদ হাসানের পরিচিত। মূলত পুরো চরটিই তাঁর পরিচিত। রফিুকল ইসলাম হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, ‘ওই যে ওই সরিষার খেত, ওইখানে আছিল রেল স্টেশন। এলা ভাঙি গেইছে।’ তাকিয়ে দেখলাম, নির্দিষ্ট জায়গাটিতে এখন হলুদ সরিষা মাঘের হাওয়ায় দুলছে। আমরা এগিয়ে গেলাম চর শাখাহাতির দিকে।
এখানে মানুষ গ্রাম সঙ্গে নিয়ে ঘোরে! শহরে থাকলে এসব জানা যায় না। তাই অবাক হতেই পারেন শুনে। নিজের ত্বক, দাঁত, চুলের মতোই এখানে নিজের অস্তিত্বের আরেক নাম গ্রাম। ফলে নদী গ্রাম ভাঙলে মানুষ নতুন বসতি তৈরি করে পুরোনো গ্রামের নামে। আমরা হাঁটতে থাকি। চারদিকে পলিজমা কৃষিজমি। সেই জমিতে জন্মে সুল্টি কলাই। মসুর ডালের মতো দেখতে মনে হলেও সেটা মসুর ডাল নয়। দেশের অন্য কোনো জায়গায় জন্মে না। এই অঞ্চলেই জন্মে। শুনলাম, সুল্টি কলাইয়ের ডাল বেশ সুস্বাদু।
খুব বড় চর নয় শাখাহাতি। বন্ধুর সেই চর পুরোটাই হেঁটে হেঁটে ঘুরলাম আমরা। ঠাকুরি কলাই, মাষকলাই, খেসারি কলাই, গাঞ্জিয়া ধান, ভুট্টা, সরষে আর চিনেবাদাম—এ সবই জন্মে এই চরে। বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর গাছ আছে চরে। এখানকার মানুষগুলো প্রাগৈতিহাসিক সরল, শহরের তুলনায়। বিনোদন বলতে তেমন কিছু নেই। একটিমাত্র ডিশ অ্যান্টেনা দেখা গেল পুরো চরে। আর আছে সাউন্ড বক্স। যখন-তখন বাজে—হিন্দি আর বাংলা গান। শিশুরা গানের তালে নাচে। বড়রা বিরক্ত হয় না।
হাঁটতে হাঁটতে সেই চরেরই আরেক প্রান্তে পৌঁছালাম আমরা চায়ের খোঁজে। সেই অংশের নাম বৈলমন্দিয়ার খাতা। পুরো চরে দু-তিনটি চায়ের দোকান; তার একটি এখানে। হাটবার বলে বন্ধ। ফিরে যাব, সে সময় ষাটোর্ধ্ব একজন কোত্থেকে উদয় হয়ে বললেন, ‘বসেন, দেখি কিছু পাই কি না।’ বলেই ডেকে আনলেন এক নারীকে। বোঝা গেল, তিনিই দোকানের মালকিন। চা নেই। অগত্যা চিনেবাদাম ভাজা আর পানি খাওয়া হলো। ষাটোর্ধ্ব সেই মানুষের নাম মো. মঞ্জু মিয়া। বয়স বললেন ৬৭। মঞ্জু মিয়া জানালেন, বয়সের কারণে এখন তিনি খেতে পারেন না খুব একটা। নইলে এক কেজি গাঞ্জিয়া চালের ভাত তাঁর কাছে কিছুই নয়। তবে তাঁরা গাঞ্জিয়া চালের ভাত খেতেন না, কিন্তু অনেক ধানের জাত হারিয়ে গেলে গাঞ্জিয়া ছাড়া উপায় নেই এখন। বেশ অনেকক্ষণ কথা হলো তাঁর সঙ্গে। তারপর উঠতে হলো। বেলা চড়ে যাচ্ছে।
এমন নিবিড় চরের ঘুঘুডাকা দুপুরে চোখে হেল্যুসিনেশন তৈরি হয়, রঙের। সবুজ খেত আর শীতের সোনালি রোদ একধরনের বিভ্রম তৈরি করে চোখে। সেই হেল্যুসিনেশনে দুলতে দুলতে পৌঁছালাম রোকেয়া খাতুনদের বাড়িতে। সেখানে দুপুরের খাবারের আয়োজন। গাঞ্জিয়া চালের ভাত, মাষকলাইয়ের ডাল, ঘাড়ভাঙা মাছের তরকারি বেগুন দিয়ে, বেগুনের পাট ভাজি আর খেসারির কচি পাতার ভাজি পেঁয়াজ-রসুন সাঁতলে। সঙ্গে প্রায় তিন শ মিলিলিটার মোষের দুধ। হ্যাঁ, এই চরে মোষেরা পাল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় আর দুধ দেয়। জমি চাষের দায়িত্ব ট্রাক্টরের। ফলে মোষের দুধ আর দই এখানে পাওয়া যায় প্রচুর। তবে শীতকালে দই ঠিক জমে না বলে কেউ এখন দই পাতে না। দুপুর নামলে আমরা বেরিয়ে পড়ি ফিরতি পথের নৌকা ধরতে।
খেয়াঘাটে নৌকা তখনো পৌঁছায়নি। সেখানে অপেক্ষারত মানুষের মধ্যে দেখা ও কথা হলো মোকছেদ আলীর সঙ্গে। তিনি উত্তর ডাটিয়ার চর প্রামাণিকপাড়ার মানুষ। মধ্য চল্লিশের এই মানুষটি একসময় নৌকা নিয়ে চলে যেতেন বরিশালে। এখন যান না। একসময় পাঁচ-সাত বছর চাকরি করেছিলেন গাজীপুরের কোনো একটি কাপড়ের কলে। ছেড়ে দিয়ে ফিরেছেন চরের গ্রামে। এখন খেতি করেন। গাজীপুরে প্রেসিডেন্ট এরশাদের সঙ্গে একবার হ্যান্ডশেক করেছিলেন মোকছেদ আলী। পরপর তিনবার হ্যান্ডশেক করার সুযোগ হয়েছিল তাঁর, একই দিনে। সেই স্মৃতি মোকছেদ আলী কোনো দিন ভুলবেন না। দেশের রাজার নরম কোমল হাত! আকার-আকৃতি হাত দিয়ে মেপে দেখালেন মোকছেদ আলী। এখন কী করেন? ‘খেতি।’ বিঘা চল্লিশ জমি লিজ নিয়ে চাষ করেন ধান, মরিচ, পেঁয়াজ, ভুট্টা। শ্রম আছে, চাপও আছে। কিন্তু আনন্দও আছে। পেঁয়াজ লাগিয়েছেন জমিতে। বিঘাপ্রতি প্রায় ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। উঠে আসবে বেশ খানিকটা লাভসহ, যদি বৃষ্টিতে নষ্ট না হয়। বৃষ্টি হলে সব শেষ। তার পরও চাষ করছেন? ‘কিষান বাচে আশায় কাকা।’ চন্দ্রবিন্দু বাদ দিয়ে স্পষ্ট করেই কথাটি বললেন মোকছেদ আলী।
নারী-পুরুষ মিলে জনা কুড়ি মানুষ উঠলাম আমরা শ্যালো ইঞ্জিনচালিত খেয়া নৌকায়। বেশির ভাগ মানুষের মুখেই মাস্ক নেই। করোনা নামের এক মহামারি যে পৃথিবী কাঁপিয়ে দিচ্ছে, চরের মানুষ সম্ভবত সেটা জানেই না। কেউ করোনা নিয়ে কোনো কথাই বলল না। এবারের গন্তব্য জোরগাছ হাট।
ব্রহ্মপুত্র বহি চলে নিরবধি। তার ওপর চর। তার ওপর বসে হাট। এই হাটের দুটি অংশ, নদীর তীরে একাংশ আর চরে একাংশ। চরের অংশের নাম জোরগাছ নামাহাট। দুই অংশই বসে রবি আর বুধবার। মোকছেদ আলীর মতো শত শত মানুষের গন্তব্য জোরগাছের নামাহাট। সপ্তাহের শুধু নয়, বহু প্রয়োজনীয় বিকিকিনি চলে সেইখানে। গরু, ঘোড়া, ছাগল, মাছ, চিনেবাদাম, সাবান-তেল-শ্যাম্পু, খাট-পালঙ্ক, ঘটিবাটি—সবকিছুর বিকিকিনি চলে সেখানে।
মোকছেদ আলীরা নেমে যান জোরগাছ হাটের চরের অংশে। আর আমরা চলি শহরের দিকে; শহুরে রুক্ষ ফুসফুসে ভরে ব্রহ্মপুত্রের তাজা বাতাস। কয়েক দিন তাজা রাখবে নিশ্চয়ই।
সূত্র: মননরেখা, চিলমারী সংখ্যা, সম্পাদক: মিজানুর রহমান নাসিম, ২০২১

মিস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া ২০২৫-এর মুকুট বিজয়ী মণিকা বিশ্বকর্মা ৭৪তম মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। কেবল মুকুট দিয়েই নয়, তিনি অনেকের মন কেড়েছেন উজ্জ্বল ত্বকের কারণেও। ত্বকের যত্নে রেটিনল থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী বেসন মাস্ক পর্যন্ত অনেক কিছুই ব্যবহার করেন তিনি।...
৯ ঘণ্টা আগে
শীত আসতে এখনো কিছুটা দেরি। তবে এই বৃষ্টি, এই রোদের কারণে আবহাওয়া এখন কিছুটা ঠান্ডা। বড়দের জন্য এই ধরনের আবহাওয়া তেমন একটা ক্ষতির কারণ না হলেও শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। ফলে এই মৌসুমে অনেক শিশু একাধিকবার জ্বর ও সর্দির কবলে পড়ছে। ত্বকেও নানা ধরনের সংক্রমণ ঘটছে। ফলে শিশুর নাজুক ত্বক...
১১ ঘণ্টা আগে
বাজারে জলপাই উঠেছে। আচার তো বানাবেনই, ডালেও নিশ্চয়ই জলপাই দিচ্ছেন। বাড়িতে পোয়া মাছ থাকলে এবার রাঁধুন জলপাই দিয়ে। কীভাবে রাঁধবেন? আপনাদের জন্য জলপাই দিয়ে পোয়া মাছের ঝোলের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
১২ ঘণ্টা আগে
পার্কের টিকিট থেকে শুরু করে হোটেলে থাকা, খাবার ও উপহারের দোকানে কেনাকাটা—ডিজনি রিসোর্টে প্রতিটি ভ্রমণে খরচ বেড়েই চলেছে। পরিবারের সঙ্গে ডিজনির ছুটি কাটানো এখন এতটাই ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ডিজনির ভক্তরা তাঁদের মজা বা অভিজ্ঞতাকে কোনোভাবে আপস না করে দু-এক টাকা সাশ্রয়ের জন্য সৃজনশীল উপায় খুঁজছেন।
১৫ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

বিশ্বসুন্দরীর আন্তর্জাতিক আসরগুলোতে যেতে হলে অনেক স্থানীয় প্রতিযোগিতায় পরীক্ষা দিয়ে তবেই মেলে ছাড়পত্র। আর তা-ও যে সবার জোটে না, সেটা বলাই বাহুল্য। ভারতের তেমনি একটি প্রতিযোগিতা হলো মিস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া। এটি গ্লামানন্দ গ্রুপ সংস্থার অধীনে একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা। এর শুরু হয় ২০২৪ সালে। এ সংস্থাটি এখন মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি নির্বাচন করে। গত বছরের বিজয়ী ছিলেন গুজরাটের ১৯ বছর বয়সী রিয়া সিংহ। এ বছরের বিজয়ী হলেন রাজস্থানের ২২ বছর বয়সী মণিকা বিশ্বকর্মা।
মিস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া ২০২৫-এর মুকুট বিজয়ী মণিকা বিশ্বকর্মা ৭৪তম মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। কেবল মুকুট দিয়েই নয়, তিনি অনেকের মন কেড়েছেন উজ্জ্বল ত্বকের কারণেও। ত্বকের যত্নে রেটিনল থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী বেসন মাস্ক পর্যন্ত অনেক কিছুই ব্যবহার করেন তিনি। ত্বক ভালো রাখতে তিনি আধুনিক প্রসাধনী যেমন ব্যবহার করেন, তেমনি প্রাচীন ঘরোয়া পদ্ধতিগুলোও ব্যবহার করতে ভোলেন না। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজের সঙ্গে একটি কথোপকথনে এই বিশ্বসুন্দরী তাঁর দৈনন্দিন সৌন্দর্য, রীতিনীতি ও উজ্জ্বল ত্বকের গোপন রহস্য প্রকাশ করেছেন।
কী রয়েছে মণিকার রূপ রুটিনে? জেনে নেওয়া যাক:

রেটিনল ও ময়েশ্চারাইজার
মণিকা জানান, তিনি তাঁর ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখার জন্য রেটিনল ও হাইড্রেটিং ময়েশ্চারাইজারের ওপর নির্ভর করেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে, মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করার পর রেটিনল সেরাম ব্যবহার করেন। এর পরপরই ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন। এতে তাঁর ত্বক রাতারাতি ক্ষয়ক্ষতি সারিয়ে ফেলতে পারে এবং পুনরুজ্জীবিত হয়। তবে মণিকা জানিয়েছেন, তিনি ত্বকের উপরিভাগের যত্ন নিয়েই থেমে থাকেন না। গভীর থেকে ত্বকের দেখভালের জন্য প্রতিদিন তাঁর খাদ্যতালিকায় থাকে শসা, বিটরুট এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান দিয়ে তৈরি তাজা রস।
মায়ের দেওয়া টোটকায় বিশ্বাস রাখেন
ত্বকের যত্নে বাজারে ব্র্যান্ডেড পণ্যের জোগান থাকা সত্ত্বেও, মণিকা এখনো প্রাকৃতিক ডিআইওয়াই প্যাকগুলোয় বিশ্বাস করেন। তিনি প্রায়ই বেসন ও হলুদের প্যাক ব্যবহার করেন বলে জানান। তাঁর ভাষ্য, এটি তাঁর মায়ের দেওয়া গোপন টিপস। এই প্রাচীন ভারতীয় সৌন্দর্য টিপস তাঁর ত্বক সতেজ, উজ্জ্বল ও দাগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। মণিকা মনে করেন, প্রাকৃতিক ত্বকের যত্ন কেবলই বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয় নয়, এটি নিজের শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার বিষয়ও।
ত্বক পরিষ্কার করতে নারকেল তেল ব্যবহার করেন
মেকআপ অপসারণের জন্য নামীদামি মেকআপ রিমুভারের পরিবর্তে মণিকা খাঁটি নারকেল তেল ব্যবহারের পক্ষপাতী। তিনি তাঁর মেকআপ ভালোভাবে গলে যাওয়ার জন্য খাঁটি নারকেল তেলের প্রলেপ দেন। তেল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করার পর তিনি হালকা ক্লিনজার ব্যবহার করেন এবং তাঁর পছন্দের ময়েশ্চারাইজার দিয়ে রূপ রুটিন শেষ করেন। এই রুটিন নিয়মমাফিক মেনে চলার কারণে তাঁর ত্বক নরম, পানিপূর্ণ ও ক্ষয়ক্ষতিমুক্ত থাকে বলে জানান তিনি।
সবচেয়ে সহজ কিন্তু শক্তিশালী রহস্য হাইড্রেশন
ত্বক সুন্দর রাখার সহজ মন্ত্রগুলোর মধ্যে একটি হলো ত্বকে পানির ভারসাম্য ঠিক রাখা। মণিকা সারা দিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করেন বলে জানান। তাঁর মতে, হাইড্রেশন শরীর ডিটক্সিফাই করে ও ত্বকে এমন একটি প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা যোগ করে, যা কোনো মেকআপ দিতে পারে না।
মণিকা বিশ্বকর্মার মতে, ত্বকের যত্ন মানেই কোনো জটিল সৌন্দর্যচর্চা নয়। দেশীয় উপকরণে তৈরি প্যাক ব্যবহার, অভ্যন্তরীণ যত্ন ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের সংমিশ্রণেই পাওয়া যায় জেল্লাদার ত্বক। বাজারে অনেক ধরনের নতুন পণ্য আসে এবং ভবিষ্যতেও আসবে। কিন্তু সেগুলোর ওপরই পুরোপুরি ভরসা করা ঠিক নয়। নিজের শিকড় থেকে পাওয়া ঘরোয়া টোটকাও অনেক সময় সেরা ফলাফল দেয়। আর এখানে বিশ্বাস রাখলেই অনেকটা কাজ এগিয়ে যায় বলে মনে করেন মণিকা বিশ্বকর্মা।
সূত্র: জি নিউজ
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

বিশ্বসুন্দরীর আন্তর্জাতিক আসরগুলোতে যেতে হলে অনেক স্থানীয় প্রতিযোগিতায় পরীক্ষা দিয়ে তবেই মেলে ছাড়পত্র। আর তা-ও যে সবার জোটে না, সেটা বলাই বাহুল্য। ভারতের তেমনি একটি প্রতিযোগিতা হলো মিস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া। এটি গ্লামানন্দ গ্রুপ সংস্থার অধীনে একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা। এর শুরু হয় ২০২৪ সালে। এ সংস্থাটি এখন মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি নির্বাচন করে। গত বছরের বিজয়ী ছিলেন গুজরাটের ১৯ বছর বয়সী রিয়া সিংহ। এ বছরের বিজয়ী হলেন রাজস্থানের ২২ বছর বয়সী মণিকা বিশ্বকর্মা।
মিস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া ২০২৫-এর মুকুট বিজয়ী মণিকা বিশ্বকর্মা ৭৪তম মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। কেবল মুকুট দিয়েই নয়, তিনি অনেকের মন কেড়েছেন উজ্জ্বল ত্বকের কারণেও। ত্বকের যত্নে রেটিনল থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী বেসন মাস্ক পর্যন্ত অনেক কিছুই ব্যবহার করেন তিনি। ত্বক ভালো রাখতে তিনি আধুনিক প্রসাধনী যেমন ব্যবহার করেন, তেমনি প্রাচীন ঘরোয়া পদ্ধতিগুলোও ব্যবহার করতে ভোলেন না। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজের সঙ্গে একটি কথোপকথনে এই বিশ্বসুন্দরী তাঁর দৈনন্দিন সৌন্দর্য, রীতিনীতি ও উজ্জ্বল ত্বকের গোপন রহস্য প্রকাশ করেছেন।
কী রয়েছে মণিকার রূপ রুটিনে? জেনে নেওয়া যাক:

রেটিনল ও ময়েশ্চারাইজার
মণিকা জানান, তিনি তাঁর ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখার জন্য রেটিনল ও হাইড্রেটিং ময়েশ্চারাইজারের ওপর নির্ভর করেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে, মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করার পর রেটিনল সেরাম ব্যবহার করেন। এর পরপরই ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন। এতে তাঁর ত্বক রাতারাতি ক্ষয়ক্ষতি সারিয়ে ফেলতে পারে এবং পুনরুজ্জীবিত হয়। তবে মণিকা জানিয়েছেন, তিনি ত্বকের উপরিভাগের যত্ন নিয়েই থেমে থাকেন না। গভীর থেকে ত্বকের দেখভালের জন্য প্রতিদিন তাঁর খাদ্যতালিকায় থাকে শসা, বিটরুট এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান দিয়ে তৈরি তাজা রস।
মায়ের দেওয়া টোটকায় বিশ্বাস রাখেন
ত্বকের যত্নে বাজারে ব্র্যান্ডেড পণ্যের জোগান থাকা সত্ত্বেও, মণিকা এখনো প্রাকৃতিক ডিআইওয়াই প্যাকগুলোয় বিশ্বাস করেন। তিনি প্রায়ই বেসন ও হলুদের প্যাক ব্যবহার করেন বলে জানান। তাঁর ভাষ্য, এটি তাঁর মায়ের দেওয়া গোপন টিপস। এই প্রাচীন ভারতীয় সৌন্দর্য টিপস তাঁর ত্বক সতেজ, উজ্জ্বল ও দাগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। মণিকা মনে করেন, প্রাকৃতিক ত্বকের যত্ন কেবলই বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয় নয়, এটি নিজের শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার বিষয়ও।
ত্বক পরিষ্কার করতে নারকেল তেল ব্যবহার করেন
মেকআপ অপসারণের জন্য নামীদামি মেকআপ রিমুভারের পরিবর্তে মণিকা খাঁটি নারকেল তেল ব্যবহারের পক্ষপাতী। তিনি তাঁর মেকআপ ভালোভাবে গলে যাওয়ার জন্য খাঁটি নারকেল তেলের প্রলেপ দেন। তেল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করার পর তিনি হালকা ক্লিনজার ব্যবহার করেন এবং তাঁর পছন্দের ময়েশ্চারাইজার দিয়ে রূপ রুটিন শেষ করেন। এই রুটিন নিয়মমাফিক মেনে চলার কারণে তাঁর ত্বক নরম, পানিপূর্ণ ও ক্ষয়ক্ষতিমুক্ত থাকে বলে জানান তিনি।
সবচেয়ে সহজ কিন্তু শক্তিশালী রহস্য হাইড্রেশন
ত্বক সুন্দর রাখার সহজ মন্ত্রগুলোর মধ্যে একটি হলো ত্বকে পানির ভারসাম্য ঠিক রাখা। মণিকা সারা দিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করেন বলে জানান। তাঁর মতে, হাইড্রেশন শরীর ডিটক্সিফাই করে ও ত্বকে এমন একটি প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা যোগ করে, যা কোনো মেকআপ দিতে পারে না।
মণিকা বিশ্বকর্মার মতে, ত্বকের যত্ন মানেই কোনো জটিল সৌন্দর্যচর্চা নয়। দেশীয় উপকরণে তৈরি প্যাক ব্যবহার, অভ্যন্তরীণ যত্ন ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের সংমিশ্রণেই পাওয়া যায় জেল্লাদার ত্বক। বাজারে অনেক ধরনের নতুন পণ্য আসে এবং ভবিষ্যতেও আসবে। কিন্তু সেগুলোর ওপরই পুরোপুরি ভরসা করা ঠিক নয়। নিজের শিকড় থেকে পাওয়া ঘরোয়া টোটকাও অনেক সময় সেরা ফলাফল দেয়। আর এখানে বিশ্বাস রাখলেই অনেকটা কাজ এগিয়ে যায় বলে মনে করেন মণিকা বিশ্বকর্মা।
সূত্র: জি নিউজ
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

লোকে তারে কয় মহানদী। সৈয়দ শামসুল হক বলেছেন ‘লৌহিত্য নদ’। ডেকেছেন ‘বাংলার জ্যেষ্ঠ সন্তান’ বলে। বলেছেন মহৎ, বলেছেন মহর্ষি আরও অনেক কিছু। আমরা তারে বলি ব্রহ্মপুত্র। মহানদী ব্রহ্মপুত্র। প্রাচীন বাংলার নদীপথের কেন্দ্রস্থল।
২৬ জানুয়ারি ২০২২
শীত আসতে এখনো কিছুটা দেরি। তবে এই বৃষ্টি, এই রোদের কারণে আবহাওয়া এখন কিছুটা ঠান্ডা। বড়দের জন্য এই ধরনের আবহাওয়া তেমন একটা ক্ষতির কারণ না হলেও শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। ফলে এই মৌসুমে অনেক শিশু একাধিকবার জ্বর ও সর্দির কবলে পড়ছে। ত্বকেও নানা ধরনের সংক্রমণ ঘটছে। ফলে শিশুর নাজুক ত্বক...
১১ ঘণ্টা আগে
বাজারে জলপাই উঠেছে। আচার তো বানাবেনই, ডালেও নিশ্চয়ই জলপাই দিচ্ছেন। বাড়িতে পোয়া মাছ থাকলে এবার রাঁধুন জলপাই দিয়ে। কীভাবে রাঁধবেন? আপনাদের জন্য জলপাই দিয়ে পোয়া মাছের ঝোলের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
১২ ঘণ্টা আগে
পার্কের টিকিট থেকে শুরু করে হোটেলে থাকা, খাবার ও উপহারের দোকানে কেনাকাটা—ডিজনি রিসোর্টে প্রতিটি ভ্রমণে খরচ বেড়েই চলেছে। পরিবারের সঙ্গে ডিজনির ছুটি কাটানো এখন এতটাই ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ডিজনির ভক্তরা তাঁদের মজা বা অভিজ্ঞতাকে কোনোভাবে আপস না করে দু-এক টাকা সাশ্রয়ের জন্য সৃজনশীল উপায় খুঁজছেন।
১৫ ঘণ্টা আগেডা. নূরজাহান বেগম

শীত আসতে এখনো কিছুটা দেরি। তবে এই বৃষ্টি, এই রোদের কারণে আবহাওয়া এখন কিছুটা ঠান্ডা। বড়দের জন্য এই ধরনের আবহাওয়া তেমন একটা ক্ষতির কারণ না হলেও শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। ফলে এই মৌসুমে অনেক শিশু একাধিকবার জ্বর ও সর্দির কবলে পড়ছে। ত্বকেও নানা ধরনের সংক্রমণ ঘটছে। ফলে শিশুর নাজুক ত্বক ও চুলের সুরক্ষায় বাড়তি সতর্কতার জন্য কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হবে।
ত্বকের যত্ন
এই মৌসুমে শিশুর গোসলের ব্যাপারে সাবধান হতে হবে। তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের অনেকে এক দিন পরপর গোসল করানোর কথা বলেন। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে শিশুর জন্মের ৭২ ঘণ্টা পর থেকে প্রতিদিন কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করানো যাবে। তবে সময়ের আগে হয়ে যাওয়া এবং কম ওজনের শিশুদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গোসল করানো যাবে না।
তবে দীর্ঘ সময় ধরে নবজাতক ও শিশুকে গোসল করানো যাবে না। উভয়ের ক্ষেত্রে গোসলের সময় কমিয়ে দিতে হবে। গোসলের জন্য কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা ভালো। বেশি গরম পানি ব্যবহার করলে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যায়। শিশুর গোসলে সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে। গোসলের পরপরই ভালো করে শরীর মুছিয়ে অলিভ অয়েল কিংবা লোশন ব্যবহার করা যাবে।
শুষ্ক ত্বকে চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী দিনে দু-তিনবার ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। অলিভ অয়েল ও নারকেল তেল শিশুর ত্বকে সাধারণত সমস্যা করে না। তবে সরিষার তেল ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। অনেকে নবজাতক বা শিশুদের নাকে ও কানে সরিষার তেল দিয়ে থাকেন, যেটা একদম উচিত নয়। এটি শিশুর ত্বকের জন্য ভালো নয়। সরিষার তেল ত্বকে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি, প্রদাহ এমনকি মাথার ত্বকে খুশকির প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। নবজাতক ও শিশুদের জন্য উপযোগী প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। তবে ব্যবহারের পর যদি অ্যালার্জি হয়, তাহলে সেই প্রসাধনী বাদ দিতে হবে।

চুলের যত্ন
দূষণের কারণে বড়দের মতো শিশুদের চুল ধুলাবালুর জন্য ময়লা হয়ে যায়। ফলে প্রায়ই খুশকির সমস্যায় ভুগতে হয়। তাই সপ্তাহে দু-তিন দিন শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল পরিষ্কার রাখতে হবে। গোসলের পর চুল ভালো করে শুকাতে হবে এবং নিয়মিত আঁচড়ে দিতে হবে। মাঝেমধ্যে শ্যাম্পু করার এক ঘণ্টা আগে মাথার ত্বক ও চুলে নারকেল তেল ম্যাসাজ করে দিতে পারেন। এতে শ্যাম্পু করার পর চুলগুলো ঝরঝরে থাকবে।
আরাম পরিধেয়
এ সময় শিশুকে সুতির পাতলা আরামদায়ক কাপড় পরাতে হবে। নবজাতক ও শিশুরা যেন ঘেমে না যায়, সে ব্যাপারে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, শরীরে ঘাম জমলেই নানা ধরনের চর্মরোগ হবে। মাথার ত্বকও যেন ঘামে ভেজা না থাকে, সেদিকে নজর দেওয়া চাই। প্রয়োজনে পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে শিশুর মাথা বারবার আলতো হাতে মুছে দিতে হবে।

শীত আসতে এখনো কিছুটা দেরি। তবে এই বৃষ্টি, এই রোদের কারণে আবহাওয়া এখন কিছুটা ঠান্ডা। বড়দের জন্য এই ধরনের আবহাওয়া তেমন একটা ক্ষতির কারণ না হলেও শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। ফলে এই মৌসুমে অনেক শিশু একাধিকবার জ্বর ও সর্দির কবলে পড়ছে। ত্বকেও নানা ধরনের সংক্রমণ ঘটছে। ফলে শিশুর নাজুক ত্বক ও চুলের সুরক্ষায় বাড়তি সতর্কতার জন্য কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হবে।
ত্বকের যত্ন
এই মৌসুমে শিশুর গোসলের ব্যাপারে সাবধান হতে হবে। তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের অনেকে এক দিন পরপর গোসল করানোর কথা বলেন। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে শিশুর জন্মের ৭২ ঘণ্টা পর থেকে প্রতিদিন কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করানো যাবে। তবে সময়ের আগে হয়ে যাওয়া এবং কম ওজনের শিশুদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গোসল করানো যাবে না।
তবে দীর্ঘ সময় ধরে নবজাতক ও শিশুকে গোসল করানো যাবে না। উভয়ের ক্ষেত্রে গোসলের সময় কমিয়ে দিতে হবে। গোসলের জন্য কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা ভালো। বেশি গরম পানি ব্যবহার করলে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যায়। শিশুর গোসলে সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে। গোসলের পরপরই ভালো করে শরীর মুছিয়ে অলিভ অয়েল কিংবা লোশন ব্যবহার করা যাবে।
শুষ্ক ত্বকে চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী দিনে দু-তিনবার ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। অলিভ অয়েল ও নারকেল তেল শিশুর ত্বকে সাধারণত সমস্যা করে না। তবে সরিষার তেল ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। অনেকে নবজাতক বা শিশুদের নাকে ও কানে সরিষার তেল দিয়ে থাকেন, যেটা একদম উচিত নয়। এটি শিশুর ত্বকের জন্য ভালো নয়। সরিষার তেল ত্বকে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি, প্রদাহ এমনকি মাথার ত্বকে খুশকির প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। নবজাতক ও শিশুদের জন্য উপযোগী প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। তবে ব্যবহারের পর যদি অ্যালার্জি হয়, তাহলে সেই প্রসাধনী বাদ দিতে হবে।

চুলের যত্ন
দূষণের কারণে বড়দের মতো শিশুদের চুল ধুলাবালুর জন্য ময়লা হয়ে যায়। ফলে প্রায়ই খুশকির সমস্যায় ভুগতে হয়। তাই সপ্তাহে দু-তিন দিন শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল পরিষ্কার রাখতে হবে। গোসলের পর চুল ভালো করে শুকাতে হবে এবং নিয়মিত আঁচড়ে দিতে হবে। মাঝেমধ্যে শ্যাম্পু করার এক ঘণ্টা আগে মাথার ত্বক ও চুলে নারকেল তেল ম্যাসাজ করে দিতে পারেন। এতে শ্যাম্পু করার পর চুলগুলো ঝরঝরে থাকবে।
আরাম পরিধেয়
এ সময় শিশুকে সুতির পাতলা আরামদায়ক কাপড় পরাতে হবে। নবজাতক ও শিশুরা যেন ঘেমে না যায়, সে ব্যাপারে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, শরীরে ঘাম জমলেই নানা ধরনের চর্মরোগ হবে। মাথার ত্বকও যেন ঘামে ভেজা না থাকে, সেদিকে নজর দেওয়া চাই। প্রয়োজনে পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে শিশুর মাথা বারবার আলতো হাতে মুছে দিতে হবে।

লোকে তারে কয় মহানদী। সৈয়দ শামসুল হক বলেছেন ‘লৌহিত্য নদ’। ডেকেছেন ‘বাংলার জ্যেষ্ঠ সন্তান’ বলে। বলেছেন মহৎ, বলেছেন মহর্ষি আরও অনেক কিছু। আমরা তারে বলি ব্রহ্মপুত্র। মহানদী ব্রহ্মপুত্র। প্রাচীন বাংলার নদীপথের কেন্দ্রস্থল।
২৬ জানুয়ারি ২০২২
মিস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া ২০২৫-এর মুকুট বিজয়ী মণিকা বিশ্বকর্মা ৭৪তম মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। কেবল মুকুট দিয়েই নয়, তিনি অনেকের মন কেড়েছেন উজ্জ্বল ত্বকের কারণেও। ত্বকের যত্নে রেটিনল থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী বেসন মাস্ক পর্যন্ত অনেক কিছুই ব্যবহার করেন তিনি।...
৯ ঘণ্টা আগে
বাজারে জলপাই উঠেছে। আচার তো বানাবেনই, ডালেও নিশ্চয়ই জলপাই দিচ্ছেন। বাড়িতে পোয়া মাছ থাকলে এবার রাঁধুন জলপাই দিয়ে। কীভাবে রাঁধবেন? আপনাদের জন্য জলপাই দিয়ে পোয়া মাছের ঝোলের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
১২ ঘণ্টা আগে
পার্কের টিকিট থেকে শুরু করে হোটেলে থাকা, খাবার ও উপহারের দোকানে কেনাকাটা—ডিজনি রিসোর্টে প্রতিটি ভ্রমণে খরচ বেড়েই চলেছে। পরিবারের সঙ্গে ডিজনির ছুটি কাটানো এখন এতটাই ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ডিজনির ভক্তরা তাঁদের মজা বা অভিজ্ঞতাকে কোনোভাবে আপস না করে দু-এক টাকা সাশ্রয়ের জন্য সৃজনশীল উপায় খুঁজছেন।
১৫ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

বাজারে জলপাই উঠেছে। আচার তো বানাবেনই, ডালেও নিশ্চয়ই জলপাই দিচ্ছেন। বাড়িতে পোয়া মাছ থাকলে এবার রাঁধুন জলপাই দিয়ে। কীভাবে রাঁধবেন? আপনাদের জন্য জলপাই দিয়ে পোয়া মাছের ঝোলের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
উপকরণ
ধুন্দল ৫০০ গ্রাম, আলু ২০০ গ্রাম, পোয়া মাছ ৬ পিস, পেঁয়াজকুচি ২ টেবিল চামচ, আদা ও রসুনবাটা এক চা-চামচ, হলুদগুঁড়া, মরিচগুঁড়া, ধনেগুঁড়া এক চা-চামচ করে, কাঁচা মরিচ ফালি ৫টা, ধনেপাতাকুচি ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, সয়াবিন তেল ৪ টেবিল চামচ, আস্ত জলপাই ২টা।
প্রণালি
আলু ও ধুন্দল খোঁসা ফেলে কেটে ধুয়ে রাখুন আলাদা করে। মাছ কেটে ধুয়ে লবণ মাখিয়ে রাখুন। কড়াইতে সয়াবিন তেল গরম হলে পেঁয়াজকুচি হালকা ভেজে আদা ও রসুনবাটা, হলুদগুঁড়া, মরিচগুঁড়া, ধনেগুঁড়া, লবণ অল্প পানি দিয়ে কষিয়ে নিন। আলু দিয়ে ৫ মিনিট কষিয়ে সামান্য পানি দিন। তারপর ধুন্দল দিয়ে ঢাকনাসহ রান্না করুন। এবার কাঁচা পোয়া মাছ, কাঁচা মরিচ ফালি, জলপাই দিয়ে ঢাকনাসহ রান্না করুন। সব সেদ্ধ হলে ধনেপাতাকুচি দিয়ে নেড়ে নামিয়ে নিন লবণ দেখে। তৈরি হয়ে গেল জলপাই দিয়ে মাছের ঝোল।

বাজারে জলপাই উঠেছে। আচার তো বানাবেনই, ডালেও নিশ্চয়ই জলপাই দিচ্ছেন। বাড়িতে পোয়া মাছ থাকলে এবার রাঁধুন জলপাই দিয়ে। কীভাবে রাঁধবেন? আপনাদের জন্য জলপাই দিয়ে পোয়া মাছের ঝোলের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
উপকরণ
ধুন্দল ৫০০ গ্রাম, আলু ২০০ গ্রাম, পোয়া মাছ ৬ পিস, পেঁয়াজকুচি ২ টেবিল চামচ, আদা ও রসুনবাটা এক চা-চামচ, হলুদগুঁড়া, মরিচগুঁড়া, ধনেগুঁড়া এক চা-চামচ করে, কাঁচা মরিচ ফালি ৫টা, ধনেপাতাকুচি ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, সয়াবিন তেল ৪ টেবিল চামচ, আস্ত জলপাই ২টা।
প্রণালি
আলু ও ধুন্দল খোঁসা ফেলে কেটে ধুয়ে রাখুন আলাদা করে। মাছ কেটে ধুয়ে লবণ মাখিয়ে রাখুন। কড়াইতে সয়াবিন তেল গরম হলে পেঁয়াজকুচি হালকা ভেজে আদা ও রসুনবাটা, হলুদগুঁড়া, মরিচগুঁড়া, ধনেগুঁড়া, লবণ অল্প পানি দিয়ে কষিয়ে নিন। আলু দিয়ে ৫ মিনিট কষিয়ে সামান্য পানি দিন। তারপর ধুন্দল দিয়ে ঢাকনাসহ রান্না করুন। এবার কাঁচা পোয়া মাছ, কাঁচা মরিচ ফালি, জলপাই দিয়ে ঢাকনাসহ রান্না করুন। সব সেদ্ধ হলে ধনেপাতাকুচি দিয়ে নেড়ে নামিয়ে নিন লবণ দেখে। তৈরি হয়ে গেল জলপাই দিয়ে মাছের ঝোল।

লোকে তারে কয় মহানদী। সৈয়দ শামসুল হক বলেছেন ‘লৌহিত্য নদ’। ডেকেছেন ‘বাংলার জ্যেষ্ঠ সন্তান’ বলে। বলেছেন মহৎ, বলেছেন মহর্ষি আরও অনেক কিছু। আমরা তারে বলি ব্রহ্মপুত্র। মহানদী ব্রহ্মপুত্র। প্রাচীন বাংলার নদীপথের কেন্দ্রস্থল।
২৬ জানুয়ারি ২০২২
মিস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া ২০২৫-এর মুকুট বিজয়ী মণিকা বিশ্বকর্মা ৭৪তম মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। কেবল মুকুট দিয়েই নয়, তিনি অনেকের মন কেড়েছেন উজ্জ্বল ত্বকের কারণেও। ত্বকের যত্নে রেটিনল থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী বেসন মাস্ক পর্যন্ত অনেক কিছুই ব্যবহার করেন তিনি।...
৯ ঘণ্টা আগে
শীত আসতে এখনো কিছুটা দেরি। তবে এই বৃষ্টি, এই রোদের কারণে আবহাওয়া এখন কিছুটা ঠান্ডা। বড়দের জন্য এই ধরনের আবহাওয়া তেমন একটা ক্ষতির কারণ না হলেও শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। ফলে এই মৌসুমে অনেক শিশু একাধিকবার জ্বর ও সর্দির কবলে পড়ছে। ত্বকেও নানা ধরনের সংক্রমণ ঘটছে। ফলে শিশুর নাজুক ত্বক...
১১ ঘণ্টা আগে
পার্কের টিকিট থেকে শুরু করে হোটেলে থাকা, খাবার ও উপহারের দোকানে কেনাকাটা—ডিজনি রিসোর্টে প্রতিটি ভ্রমণে খরচ বেড়েই চলেছে। পরিবারের সঙ্গে ডিজনির ছুটি কাটানো এখন এতটাই ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ডিজনির ভক্তরা তাঁদের মজা বা অভিজ্ঞতাকে কোনোভাবে আপস না করে দু-এক টাকা সাশ্রয়ের জন্য সৃজনশীল উপায় খুঁজছেন।
১৫ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

পার্কের টিকিট থেকে শুরু করে হোটেলে থাকা, খাবার ও উপহারের দোকানে কেনাকাটা—ডিজনি রিসোর্টে প্রতিটি ভ্রমণে খরচ বেড়েই চলেছে। পরিবারের সঙ্গে ডিজনির ছুটি কাটানো এখন এতটাই ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ডিজনির ভক্তরা তাঁদের মজা বা অভিজ্ঞতাকে কোনোভাবে আপস না করে দু-এক টাকা সাশ্রয়ের জন্য সৃজনশীল উপায় খুঁজছেন। এতে পিছিয়েও নেই ডিজনি ভক্তরা। তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন একটি উপায়, যার মাধ্যমে একে অপরকে অর্থ সাশ্রয়ে সাহায্য করতে পারেন। ডিজনি ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকেরা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় একত্র হচ্ছেন। যেখানে তাঁরা তাঁদের অবশিষ্ট বা অব্যবহৃত জিনিসপত্র ভাগ করে নিচ্ছেন। তাঁরা সেসব জিনিস আদান-প্রদান করছেন, যা ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হতো।

ফেসবুক গ্রুপ
নির্দিষ্ট ডিজনির হোটেলগুলোর জন্য ফেসবুক গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এই গ্রুপগুলোর ভেতরে ছুটি কাটাতে যাওয়া লোকেরা অন্যদের শুরুর দিকের ভ্রমণের জন্য খাবার, ডিসকাউন্টেড রিফিল পাওয়া পপকর্ন বাকেটও অফার করছেন। অবশ্য অনেকে এটিকে কোম্পানির ব্র্যান্ডিং অনুযায়ী ‘ডিজনি ম্যাজিক’ ছড়িয়ে দেওয়ার একটি পদ্ধতি হিসেবে দেখছেন। এর মাধ্যমে মিতব্যয়িতা ও দয়ার ওপর ভিত্তি করে একটি সম্প্রদায় তৈরি হচ্ছে। কেউ কেউ তাঁদের প্রি-পেইড অপশন ব্যবহার করে অন্যদের জন্য খাবারও কিনে দিচ্ছেন। একজন দর্শনার্থী পপ সেঞ্চুরি হোটেলে থাকার সময় তাঁর হোটেলের দরজায় মিকি মাউসের কান ও অন্যান্য স্যুভেনিয়ার ঝুলিয়ে রেখেছিলেন, যাতে অন্যরা সেগুলো নিতে পারেন। পরে তিনি বলেন, যেকোনো উপায়ে কাউকে টাকা বাঁচাতে সাহায্য করাটা দারুণ ব্যাপার। তিনি আরও জানান যে, থাকার শেষে যে জিনিসগুলো তিনি বাড়ি নিয়ে যেতে পারেননি, সেগুলোর একটি ব্যাগ তিনি রুমের বাইরে রেখে দেন এবং ফেসবুকে এ বিষয়ে অন্যদের জানানোর জন্য পোস্ট করেন। নিজের ডাইনিং প্ল্যানের কিছু খাবারও তিনি অন্য একটি পরিবারকে দুপুরের খাবার কিনে দিতে ব্যবহার করেছিলেন।
প্রয়োজনী জিনিস ভাগাভাগি
পারিবারিক ভ্রমণের জন্য পুশচেয়ার (স্ট্রলার) একটি অপরিহার্য জিনিস। ডিজনির ভক্তরা এগুলোও ভাগাভাগি করার উপায় খুঁজে পেয়েছেন। রোজি গার্সিয়া নামের এক মা একটি বড় পারিবারিক ভ্রমণের সময় এই সুবিধা নিয়েছিলেন। তাঁর ছয় বছরের ছেলের গোড়ালিতে আঘাত লাগলে তাঁরা অনলাইনে যোগাযোগ করে ছুটির জন্য একটি পুশচেয়ার ধার করতে সক্ষম হন। ফেবারিট গ্র্যাম্পি ট্রাভেলসের পরিচালক কার্স্টেন আন্দ্রেড ব্যাখ্যা করেন যে, কিছু গ্রুপ অতিথিদের মধ্যে জিনিসপত্র হস্তান্তরের ব্যবস্থা করার জন্য ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে। তিনি এটিকে ‘একধরনের গোপন ক্লাব, যার অংশ হতে আপনি অবশ্যই চাইবেন’ বলে মন্তব্য করেন এবং বলেন, এটি তখন ভাগ করে নেওয়া এবং ম্যাজিক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সংস্কৃতিতে পরিণত হয়।

টিকিটের মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও উদ্যোগ
এই উদ্যোগগুলো এমন এক সময়ে আসছে, যখন ডিজনি সম্প্রতি আমেরিকার তাদের দুটি বড় থিম পার্কের টিকিটমূল্য বাড়িয়েছে। অরল্যান্ডোর ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ড রিসোর্ট ও অ্যানাহেইমের ডিজনিল্যান্ড রিসোর্টের এক দিনের টিকিটের দাম বেড়েছে। পিক আওয়ারে একটি টিকিট এখন ১৯৯ ডলারের বেশি। ক্রিসমাস ও নতুন বছরের সময়ের জন্য অরল্যান্ডোর পার্কের টিকিট ২০৯ ডলার করা হয়েছে, যা বেড়েছে ৫ শতাংশ। একই সময়ে ডিজনিল্যান্ডের টিকিটের দাম ২২৪ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা ৮ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
এই মূল্যবৃদ্ধি এমন এক সময়ে এল, যখন ডিজনি ১৯৯৮ সালে অ্যানিমেল কিংডম খোলার পর প্রথম নতুন পার্ক যুক্ত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে ডিজনির এক কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেন যে, কোম্পানি এখনো ‘জাদুকরি অভিজ্ঞতা তৈরি করার’ প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তাদের টিকিট, হোটেল ও ডাইনিং বিকল্পগুলো সব বাজেটের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই ফ্যান-টু-ফ্যান আদান-প্রদানগুলো প্রমাণ করে যে, খরচ যতই বাড়ুক না কেন, ডিজনির আসল জাদু হলো কমিউনিটি এবং একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা।
সূত্র: ডেইলি মেইল

পার্কের টিকিট থেকে শুরু করে হোটেলে থাকা, খাবার ও উপহারের দোকানে কেনাকাটা—ডিজনি রিসোর্টে প্রতিটি ভ্রমণে খরচ বেড়েই চলেছে। পরিবারের সঙ্গে ডিজনির ছুটি কাটানো এখন এতটাই ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ডিজনির ভক্তরা তাঁদের মজা বা অভিজ্ঞতাকে কোনোভাবে আপস না করে দু-এক টাকা সাশ্রয়ের জন্য সৃজনশীল উপায় খুঁজছেন। এতে পিছিয়েও নেই ডিজনি ভক্তরা। তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন একটি উপায়, যার মাধ্যমে একে অপরকে অর্থ সাশ্রয়ে সাহায্য করতে পারেন। ডিজনি ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকেরা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় একত্র হচ্ছেন। যেখানে তাঁরা তাঁদের অবশিষ্ট বা অব্যবহৃত জিনিসপত্র ভাগ করে নিচ্ছেন। তাঁরা সেসব জিনিস আদান-প্রদান করছেন, যা ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হতো।

ফেসবুক গ্রুপ
নির্দিষ্ট ডিজনির হোটেলগুলোর জন্য ফেসবুক গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এই গ্রুপগুলোর ভেতরে ছুটি কাটাতে যাওয়া লোকেরা অন্যদের শুরুর দিকের ভ্রমণের জন্য খাবার, ডিসকাউন্টেড রিফিল পাওয়া পপকর্ন বাকেটও অফার করছেন। অবশ্য অনেকে এটিকে কোম্পানির ব্র্যান্ডিং অনুযায়ী ‘ডিজনি ম্যাজিক’ ছড়িয়ে দেওয়ার একটি পদ্ধতি হিসেবে দেখছেন। এর মাধ্যমে মিতব্যয়িতা ও দয়ার ওপর ভিত্তি করে একটি সম্প্রদায় তৈরি হচ্ছে। কেউ কেউ তাঁদের প্রি-পেইড অপশন ব্যবহার করে অন্যদের জন্য খাবারও কিনে দিচ্ছেন। একজন দর্শনার্থী পপ সেঞ্চুরি হোটেলে থাকার সময় তাঁর হোটেলের দরজায় মিকি মাউসের কান ও অন্যান্য স্যুভেনিয়ার ঝুলিয়ে রেখেছিলেন, যাতে অন্যরা সেগুলো নিতে পারেন। পরে তিনি বলেন, যেকোনো উপায়ে কাউকে টাকা বাঁচাতে সাহায্য করাটা দারুণ ব্যাপার। তিনি আরও জানান যে, থাকার শেষে যে জিনিসগুলো তিনি বাড়ি নিয়ে যেতে পারেননি, সেগুলোর একটি ব্যাগ তিনি রুমের বাইরে রেখে দেন এবং ফেসবুকে এ বিষয়ে অন্যদের জানানোর জন্য পোস্ট করেন। নিজের ডাইনিং প্ল্যানের কিছু খাবারও তিনি অন্য একটি পরিবারকে দুপুরের খাবার কিনে দিতে ব্যবহার করেছিলেন।
প্রয়োজনী জিনিস ভাগাভাগি
পারিবারিক ভ্রমণের জন্য পুশচেয়ার (স্ট্রলার) একটি অপরিহার্য জিনিস। ডিজনির ভক্তরা এগুলোও ভাগাভাগি করার উপায় খুঁজে পেয়েছেন। রোজি গার্সিয়া নামের এক মা একটি বড় পারিবারিক ভ্রমণের সময় এই সুবিধা নিয়েছিলেন। তাঁর ছয় বছরের ছেলের গোড়ালিতে আঘাত লাগলে তাঁরা অনলাইনে যোগাযোগ করে ছুটির জন্য একটি পুশচেয়ার ধার করতে সক্ষম হন। ফেবারিট গ্র্যাম্পি ট্রাভেলসের পরিচালক কার্স্টেন আন্দ্রেড ব্যাখ্যা করেন যে, কিছু গ্রুপ অতিথিদের মধ্যে জিনিসপত্র হস্তান্তরের ব্যবস্থা করার জন্য ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে। তিনি এটিকে ‘একধরনের গোপন ক্লাব, যার অংশ হতে আপনি অবশ্যই চাইবেন’ বলে মন্তব্য করেন এবং বলেন, এটি তখন ভাগ করে নেওয়া এবং ম্যাজিক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সংস্কৃতিতে পরিণত হয়।

টিকিটের মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও উদ্যোগ
এই উদ্যোগগুলো এমন এক সময়ে আসছে, যখন ডিজনি সম্প্রতি আমেরিকার তাদের দুটি বড় থিম পার্কের টিকিটমূল্য বাড়িয়েছে। অরল্যান্ডোর ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ড রিসোর্ট ও অ্যানাহেইমের ডিজনিল্যান্ড রিসোর্টের এক দিনের টিকিটের দাম বেড়েছে। পিক আওয়ারে একটি টিকিট এখন ১৯৯ ডলারের বেশি। ক্রিসমাস ও নতুন বছরের সময়ের জন্য অরল্যান্ডোর পার্কের টিকিট ২০৯ ডলার করা হয়েছে, যা বেড়েছে ৫ শতাংশ। একই সময়ে ডিজনিল্যান্ডের টিকিটের দাম ২২৪ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা ৮ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
এই মূল্যবৃদ্ধি এমন এক সময়ে এল, যখন ডিজনি ১৯৯৮ সালে অ্যানিমেল কিংডম খোলার পর প্রথম নতুন পার্ক যুক্ত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে ডিজনির এক কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেন যে, কোম্পানি এখনো ‘জাদুকরি অভিজ্ঞতা তৈরি করার’ প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তাদের টিকিট, হোটেল ও ডাইনিং বিকল্পগুলো সব বাজেটের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই ফ্যান-টু-ফ্যান আদান-প্রদানগুলো প্রমাণ করে যে, খরচ যতই বাড়ুক না কেন, ডিজনির আসল জাদু হলো কমিউনিটি এবং একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা।
সূত্র: ডেইলি মেইল

লোকে তারে কয় মহানদী। সৈয়দ শামসুল হক বলেছেন ‘লৌহিত্য নদ’। ডেকেছেন ‘বাংলার জ্যেষ্ঠ সন্তান’ বলে। বলেছেন মহৎ, বলেছেন মহর্ষি আরও অনেক কিছু। আমরা তারে বলি ব্রহ্মপুত্র। মহানদী ব্রহ্মপুত্র। প্রাচীন বাংলার নদীপথের কেন্দ্রস্থল।
২৬ জানুয়ারি ২০২২
মিস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া ২০২৫-এর মুকুট বিজয়ী মণিকা বিশ্বকর্মা ৭৪তম মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। কেবল মুকুট দিয়েই নয়, তিনি অনেকের মন কেড়েছেন উজ্জ্বল ত্বকের কারণেও। ত্বকের যত্নে রেটিনল থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী বেসন মাস্ক পর্যন্ত অনেক কিছুই ব্যবহার করেন তিনি।...
৯ ঘণ্টা আগে
শীত আসতে এখনো কিছুটা দেরি। তবে এই বৃষ্টি, এই রোদের কারণে আবহাওয়া এখন কিছুটা ঠান্ডা। বড়দের জন্য এই ধরনের আবহাওয়া তেমন একটা ক্ষতির কারণ না হলেও শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। ফলে এই মৌসুমে অনেক শিশু একাধিকবার জ্বর ও সর্দির কবলে পড়ছে। ত্বকেও নানা ধরনের সংক্রমণ ঘটছে। ফলে শিশুর নাজুক ত্বক...
১১ ঘণ্টা আগে
বাজারে জলপাই উঠেছে। আচার তো বানাবেনই, ডালেও নিশ্চয়ই জলপাই দিচ্ছেন। বাড়িতে পোয়া মাছ থাকলে এবার রাঁধুন জলপাই দিয়ে। কীভাবে রাঁধবেন? আপনাদের জন্য জলপাই দিয়ে পোয়া মাছের ঝোলের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
১২ ঘণ্টা আগে