ইশতিয়াক হাসান

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নিয়েছি। আজ কাজীদার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা, সেই সঙ্গে কাজী আনোয়ার হোসেন থেকে জানা তাঁর কিছু বিষয় ভাগাভাগি করছি পাঠকদের সঙ্গে।
বইয়ের জগতে প্রবেশ তাঁর কারণে
ক্লাস ফোরে-ফাইভে পড়ি। আব্বুর স্টিলের আলমারির নিচে গাদাগাদি করে রাখা ছিল অনেক বই। সেবা প্রকাশনী, ভারতীয় নানা লেখকের উপন্যাস আরও কত কী! আব্বুকে বললে চাবি দিয়ে খুলে দিতেন। তারপর নাওয়া-খাওয়া ভুলে হামলে পড়তাম বই নিয়ে। তবে আমাকে টানত সেবা প্রকাশনীর বইগুলোই। মাসুদ রানার বই থাকলেও তখন ওগুলো পড়া বারণ ছিল। তাতে কী! আরও কত্ত বই। ছয় রোমাঞ্চ, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, কুয়াশা সিরিজের বই, জঙ্গল, শিকার-১, শিকার-২, শিকার-৩, রুদ্র প্রয়াগের চিতা, জুলভার্নের নাইজারের বাঁকে, মরু শহর—এমনই সব বই বলা চলে নতুন এক পৃথিবীর সন্ধান দিয়ে দিল আমাকে। আজ এই আধবুড়ো বয়সেও বইয়ের প্রতি আগ্রহ কমেনি একটুও। আর বইয়ের প্রতি আমার এই ভালোবাসার জন্ম, বই পড়ে পাহাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর আগ্রহ সৃষ্টি—এই সবকিছু কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্যই। তিনি না থাকলে যে সেবা প্রকাশনী হতো না। আমারও বই পড়ে অন্য এক জগতে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ মিলত না।
রহস্যমানব
স্কুলে পড়ার সময় সেবার বই পড়ুয়া অনেক বন্ধুবান্ধবও জুটে যায়। আমাদের কাছে সেবার বিভিন্ন বইয়ের চরিত্রগুলোর মতো কাজী আনোয়ার হোসেনও তখন রহস্যঘেরা এক চরিত্র। আমাদের বই পড়ুয়াদের দলে এক বড় ভাই ছিলেন, নোমান ভাই। তিনি মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলতেন, আমরা পুরোপুরি বিশ্বাসও করতে পারতাম না, আবার অবিশ্বাস করতে পারতাম না। একবার যেমন বললেন, মাসুদ রানা সিরিজের বিসিআই (বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স) ঢাকায় সত্যি আছে। আর কাজী আনোয়ার হোসেন বড় একটা পদে আছেন। তবে এটা একেবারেই গোপনীয়! তাই কেউ জানে না। কাজী আনোয়ার হোসেন আমাদের কাছে এমনই এক রহস্যঘেরা মানুষ ছিলেন, আমরা তাঁর এ কথা বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। তখন একবারও মনে হয়নি, এত গোপনীয় বিষয়টি আমাদের চেয়ে কয়েক বছরের বড় নোমান ভাই জানলেন কীভাবে?
দুরু দুরু বুকে
২০০৫-০৬ সালের ঘটনা। রহস্য পত্রিকায় লিখছি নিয়মিত। তবে তখন পর্যন্ত কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা হয়নি। রহস্য পত্রিকার অফিস ২৪/৪ সেগুনবাগিচার দোতলায়। কাজী আনোয়ার হোসেন বসেন তৃতীয় তলায়। আমার দৌড় তখন পর্যন্ত ওই দোতলা পর্যন্ত। সেখানে গিয়ে লেখা জমা দিই। আর হাকিম আংকেল (শেখ আবদুল হাকিম) ও শাহনূর ভাইয়ের (কাজী শাহনূর হোসেন) সঙ্গে গল্প করি, নতুন নতুন লেখার পরিকল্পনা করি। একদিন শাহনূর ভাইকে সাহস করে বললাম, কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে চাই। পরদিন সকালেই ডাক পড়ল। আমার মনে হলো বিসিআই চিফ রাহাত খানের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।
দোতলা থেকে তৃতীয় তলা ওঠার পথে একটি তালা মারা দরজা। দালানের এই পাশ দিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায় যেতে হলে ওই দরজা খুলেই যেতে হয়। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে শেষ পর্যন্ত দুরু দুরু বুকে ঢুকলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায়। আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। বসতে বললেন। শুরুতে কেমন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কাজী আনোয়ার হোসেনের সামনে বসে আছি।
তারপর অনেকবারই গিয়েছি কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে। বেশির ভাগ সময় কোনো না কোনো কাজে। বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারও নিয়েছি তাঁর। তবে ওই প্রথম দিনের অনুভূতি আজও অটুট আমার মনে। এখনো মনে পড়লে কেমন ভয়-রোমাঞ্চের একটি শিহরণ খেলে যায় শরীরে।
সেই ক্যামেরা
পরের বছরের ঘটনা। তখন বনে, পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর নেশা প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে আমার ওপর। সেই সঙ্গে ছবি তোলার আগ্রহ পেয়ে বসেছে। সমস্যা হলো, ভালো ক্যামেরা নেই। একদিন কথায় কথায় শাহনূর ভাইকে বললাম, ক্যামেরা না থাকায় ভালো ছবি তুলতে পারছি না। একটা ক্যামেরা কিনতে হবে।
কয়েক দিন পরের কথা। সেবা প্রকাশনীতে গেলাম আবার। কোনো একটা লেখা নিয়ে কিংবা নিছক আড্ডা দিতে। কতক্ষণ গল্প করার পর চলে আসতে যাব, এমন সময় শাহনূর ভাই বললেন, ‘একটু দাঁড়াও।’ একটু পর ফিরে এলেন। হাতে একটা ব্যাগ। আমাকে চমকে দিয়ে ভেতর থেকে বের করলেন একটি নাইকন ক্যামেরা। বললেন, ‘আব্বাকে বলেছিলাম তোমার ছবি তোলার আগ্রহের কথা। তখন বললেন তাঁর এই ক্যামেরাটা পড়ে আছে। কী অবস্থা এটার জানেন না। চাইলে তুমি এটা নিতে পারো, যদি কোনো কাজে লাগে।’
আমার তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না, কাজীদা আমাকে তাঁর ব্যবহার করা ক্যামেরা দিয়েছেন! তাঁর মনে আমার জন্য আলাদা একটি জায়গা আছে ভেবে খুব ভালো লাগছিল।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই ক্যামেরাটা দিয়ে পরে আর ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। অনেক দিন পড়ে থেকে এটার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সযতনে ক্যামেরাটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। এখন আমার কাছে একটি মোটামুটি ভালো একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে, বাড়তি লেন্সসহ আমেরিকা থেকে আনিয়েছি আমার বোনকে দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে ওই ক্যামেরার থেকেও বেশি প্রিয় কাজীদার দেওয়া সেই পুরোনো ক্যামেরাটি।
পরে ক্যামেরা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে কাজীদার সঙ্গে। এক সাক্ষাৎকারে যেমন আমাকে বলেছিলেন, ‘বহু বছর ধরে ক্যামেরা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, যদিও শিল্প সৃষ্টির তাগিদে নয়। আমি মুহূর্তকে ধরতে চেয়েছি। যেই শাটারে চাপ দিলাম, থমকে দাঁড়িয়ে গেল একটা মুহূর্ত। স্থির হয়ে গেল একটা নাটকের ছোট্ট এক অংশ। যখন খুশি, যতবার খুশি দেখব আমি ওটা। স্মৃতি মলিন হয়ে যায়, কিন্তু ছবি বহু বছর পর্যন্ত জলজ্যান্ত থাকে। ফটোগ্রাফির এই গুণটাই আমাকে আকর্ষণ করেছিল সবচেয়ে বেশি। মাঝে মাঝে এক-আধটা ফটোগ্রাফ দারুণ হয়ে যায়। তখন খুব ভালো লাগে, নিজেকে বিরাট শিল্পী মনে হয়। ছবি তোলার মোটামুটি নিয়মগুলো শেখা থাকলে, দূরত্ব আর আলোছায়ার হিসাব ঠিক থাকলে, সেই সঙ্গে কম্পোজিশন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকলে মাঝারি মানের একটা ছবি নিশ্চিতভাবেই আশা করা যায়। তাই ফটোগ্রাফিকে আমি একান্ত বিশ্বস্ত ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম।
...কত্তো কষ্ট করেছি ফটোগ্রাফির জন্য! অথচ এখন? একদম সোজা। মোবাইল ফোনের কল্যাণে এখন টিপ দিলেই ছবি। অহরহ ইনস্ট্যান্ট ছবি তুলে নিজে দেখা যাচ্ছে, মানুষকে দেখানো যাচ্ছে, ফেসবুকে পোস্ট করা যাচ্ছে। এটা যে কত বিরাট অগ্রগতি, ভাবলে বিশ্বাস হতে চায় না। মনে হয় জাদুমন্ত্র! কোথা থেকে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে এসেছে আজ মানুষ!’
রানা গিয়েছে কত দেশে...কাজীদা?
কাজী আনোয়ার হোসেন তাঁর সৃষ্টি চরিত্রগুলোকে পৃথিবীর অনেক দেশ, দুর্গম সব জায়গায় ঘুরিয়ে এনেছেন। কিন্তু নিজে কি খুব বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন? জানতে চেয়েছিলাম এক সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়। কাজী আনোয়ার হোসেনের উত্তর, ‘না, ভাই। কোথাও না। আমি আর্মচেয়ার ট্রাভেলার। চৌদ্দ-পনেরো বছর বয়সে একবার শুধু বিহারের কয়লা শহর গিরিডিতে গিয়েছিলাম আমার আব্বুর সঙ্গে। স্মৃতি নেই কোনো। শুধু মনে আছে রাতে ঘুমোতে দেওয়া হয়েছিল দোতলার খোলা বারান্দায়; অসংখ্য উজ্জ্বল তারা ছিল আকাশে, আর বেশ দূরের শহর থেকে ভেসে আসছিল মোহাম্মাদ রফির গাওয়া সিনেমার গান: দিল্মে ছুপাকে পেয়ার কা তুফান লে চ্যলে/ হ্যম আজ আপনি মওতকা সামান লে চ্যলে...’
মাছ শিকারে কাজীদার গুরু জিম করবেট
কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কিংবা সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে অনেক মজার সব ঘটনাও জানতে পারতাম। কাজী আনোয়ার হোসেনের মাছ শিকারের বাতিক ছিল। একবার মাছ শিকারের একটা সাক্ষাৎকার নিই। সেখানে কাজীদা বলেন, মাছ ধরায় তাঁর গুরু বিখ্যাত শিকারি ও পরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ জিম করবেট।
‘১৯৭৭ কি ’৭৮ সাল। মশারির নিচে বন্দী হয়েছিলাম তিন সপ্তাহের জন্য। চিকেন পক্স। আমার প্রথম পুত্র স্কুল থেকে বয়ে এনে উপহার দিয়েছিল ওটা আমাকে। আমার সঙ্গেই ঘুমাত ও, নিজে দু-চারটে গোটার ওপর দিয়ে পার পেয়ে গেল, কিন্তু আমার শরীর ছেয়ে গেল পানিভরা ফোসকায়, আধ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা থাকল না কোথাও। লোকজন ভয়ে কাছে আসে না...অবশ্য, আমিই বারণ করেছি। শুয়ে শুয়ে একের পর এক বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে পেয়ে গেলাম জিম করবেটের লেখা সেই বইটা। নাম আজ আর মনে নেই। বাঘ শিকার করতে করতে একবার উত্তর ভারতের চমৎকার এক পাহাড়ি জলাশয় দেখে ছিপ-বড়শি নিয়ে বসে গিয়েছিলেন তিনি মাছ ধরতে। কী অপূর্ব বর্ণনা! কীভাবে ঠোকর দিল মাছ, তিনিও ছিপে মারলেন টান। কেমনভাবে বড়শিতে গাঁথল মাছ, ছুট দিলেন তিরবেগে, পাথরে বাঁধিয়ে সুতো ছেঁড়ার চেষ্টা করল, তিনিই বা কী কায়দায় তাকে মতলব হাসিল করতে না দিয়ে আস্তে আস্তে খেলিয়ে তীরে নিয়ে এসে নেট করলেন। এসবের জলজ্যান্ত, পুঙ্খানুপুঙ্খ, লোভনীয় বর্ণনা পড়ে আমার তো পাগল হবার দশা। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে তাঁকে ১০-১২ কেজি ওজনের কয়েকটা ‘মহাশের’ মাছ মারতে দেখে আমি মশারির নিচে শুয়ে ছটফট করতে থাকলাম...কবে সেরে উঠব!’
ওই সময় কিছু পুকুর বা দিঘিতে মাঝে মাঝে মাছ ধরার টিকিট দেওয়া হতো, কিন্তু ওসব জায়গায় সচরাচর তেমন সুবিধে হতো না। কাজীদার পছন্দ ছিল ধানমন্ডি লেক।
তাঁর মাছ শিকারের বন্ধুদের নিয়ে বলেছিলেন, ‘সে সময় ধানমন্ডি লেকে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, ছেলে-বুড়ো, ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী-পেশাজীবী সব মিলিয়ে আমরা মৎস্যশিকারি ছিলাম তিন শর ওপরে। স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা যে-যার মনপছন্দের মানুষ খুঁজে নিয়ে ছোট ছোট দল গড়ে এক-একটা এলাকা দখল করতাম। আমি গিয়ে জুটেছিলাম স্বর্ণহ্নদয় দুই শিকারি কালা ভাই (গোলাম রশিদ কালা, আচার প্রস্তুতকারক) ও রব ভাই (আবদুর রব, রঙের কনট্রাক্টর)—এঁদের গ্রুপে। এই গ্রুপে একে একে এসে জুটেছিলেন শামসু ভাই (জনকণ্ঠ পত্রিকার সিনিয়র সহকারী সম্পাদক এ টি এম শামসুদ্দীন), সোশোলজিতে মাস্টার্স লুডু খান (গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক), ইসহাক ভাই (মোজাইকের ঠিকাদার), মোসলেম ভাই (পিঁপড়ার ডিম ও মাছের চার বিক্রেতা), শফি সাহেব (ঠিকাদার), মোবারক ভাই (বাচ্চাদের রাবারের বল তৈরি করে পাইকারি বেচতেন চকবাজারে) ...এরকম আরও বেশ কয়েকজন। মাছ ধরার পাশাপাশি লেকের ধারে বসে চা-নাশতার ফাঁকে হাসি-তামাশা-গল্প চলত আমাদের হাজারো বিষয়ে। গল্পের টানে পুব পাড় থেকে প্রায়ই আমাদের পশ্চিমে চলে আসতেন একজন কোটিপতি মৎস্যশিকারি, তোপখানা রোডের ক্রিসেন্ট কোম্পানির মালিক খলিলুর রহমান। আমি নানাভাই বলতাম, তিনিও আমাকে তা-ই ডাকতেন; আমেরিকা থেকে আমার জন্য একটা মাল্টিপ্লাইং হুইল আর রিডিং ল্যাম্প এনে উপহার দিয়েছিলেন। আর আসতেন নিতাইদা, ঢাকা বেতারের ক্ল্যাসিক্যাল কণ্ঠশিল্পী নিতাই রায়, বড় সজ্জন ছিলেন ভদ্রলোক। রোজ এসে হাজির হতেন শিকারি নন এমন অনেকেও। তাঁদেরই একজন ছিলেন ঢাকা রাইফেল ক্লাবের এয়ার পিস্তল শুটার শারফুদ্দীন টিপু।’
‘আমাদের ছোট্ট গ্রুপের বাইরেও আরও কয়েকজনের কথা না বললেই নয়। তাদের একজন হচ্ছে শাহনেওয়াজ ভুঁইয়া দি গ্রেট, এত বড় মৎস্যশিকারি আমি আর দেখিনি। ওর মতো বড় মাপের শিকারি যেকোনো দেশেই দুর্লভ...নিত্যনতুন টেকনিক তার, সেই সঙ্গে ইমপ্রোভাইজেশন। কোথাও শিকারে গিয়ে কেউ যদি একটা মাছও না পায়, দেখা যাবে ও ধরে বসে আছে বড়সড় পাঁচ-ছয়টা রুই-কাতলা।
আমার হাতে বিদঘুটে আকৃতির স্পিনিং রিল দেখে যে সময় সবাই হাসাহাসি করত, ডিম বিক্রেতা আবদুল মিঞা বলত: ওই ইচার (চিংড়ি মাছের) ঠ্যাংডা হালান দি, আনুয়ার সাপ, বালা হুইল লন। সবাই যখন ছ্যা-ছ্যা করছে, তখন একদিন শাহনেওয়াজ এসে বলল: আনোয়ার ভাই, আপনার এই স্পিনিং হুইল দিয়ে কী করে বেইট থ্রো করতে হয় একটু দেখিয়ে দেবেন? আমি খুশি মনে শিখিয়ে দিলাম। বার কয়েক থ্রো করেই আয়ত্ত করে ফেলল ও কায়দাটা। আর ওরই হাত ধরে গোটা বাংলাদেশে আজ স্পিনিং হুইলের ছড়াছড়ি...মানুষ প্রায় ভুলেই গেছে সেদিনের সেই সিঙ্গেল অ্যাকশন হুইলের কথা...আর একজনের কথা বলব: মোস্তফা সাহেব। প্রথম দিন লেকে গিয়ে তাঁকেই ওস্তাদ ধরেছিলাম। তিনিই কিনিয়ে দিয়েছিলেন ছিপ, বড়শি, কয়েক শ গজ চৌদ্দ পাউন্ডের ভালো জাতের সুতো, আর আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কলকাতার উমাচরণ কর্মকারের তৈরি আদ্যিকালের একটা চার ইঞ্চি বেয়ারিং হুইল।’
কাজীদা বলেছিলেন, নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় মাছটিও শিকার করেছিলেন ধানমন্ডি লেকে। আধা মণের এক-আধ সের বেশি বা কম ছিল ওটা।
শিকারে যেতেন...
বন্যপ্রাণীর প্রতি আমার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। পুরোনো দিনের জঙ্গল আর বন্যপ্রাণীর অবস্থা জানতে শিকারের বই বড় ভরসা। তাই ছোটবেলা থেকেই জিম করবেট, কেনেথ এন্ডারসন কিংবা জন হান্টারের বইয়ের বড় পোকা আমি। তাই যখন শুনলাম মাছ ধরার পাশাপাশি কাজী আনোয়ার হোসেনের শিকারের নেশাও ছিল, তখন এক সাক্ষাৎকারে চেপে ধরলাম।
তখন বলেন, ‘শিকারের নেশা বলতে যা বোঝায়, তা কিন্তু কোনো দিনই পুরোপুরি ছিল না আমার। বাঘটাঘ টানেনি আমাকে। এমনকি রাজহাঁস বা চখা শিকারেও গিয়েছি মাত্র অল্প কয়েকবার। আমার মূল আকর্ষণ ছিল আউটিং। কয়েকজন বন্ধু মিলে শুক্রবারগুলোতে গাড়ি নিয়ে চলে যেতাম যেদিকে খুশি, একেকদিন একেক রাস্তায়। দলের বেশির ভাগই ছিলাম আমরা ধানমন্ডি লেকের মৎস্যশিকারি। আমাদের মধ্যে পাখি শিকারের পাগল ছিল আসলে লুডু খান। আমি ষাটের দশকেই পাখির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। আশির দশকে রব ভাই, কালা ভাই আর আমি ছিলাম জেনুইন মৎস্যশিকারি।...লুডু ভাইয়ের এক নিপাট ভদ্রলোক বন্ধু শারফুদ্দীন টিপুও জুটে গিয়েছিলেন আমাদের সঙ্গে। রব ভাই তো উৎসাহের আতিশয্যে বন্দুক-রাইফেল-পিস্তল কিনে রীতিমতো বন্দুকবাজই বনে গিয়েছিলেন। তবে, প্রতিটা ট্রিপে আমাদের সঙ্গে থাকলেও জীবনে একটি গুলিও ছোড়েননি আমাদের সবার প্রিয় গোলাম রসুল কালা ভাই। টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে যাওয়ার এবং শিকার শেষে সবার মধ্যে পাখি ভাগ করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর।’
কাজীদা বলেন, ‘চলতে চলতেই থেমে রাস্তার দুপাশের ডালে বসা ঘুঘু, হরিয়াল, কবুতর বা বক মারতাম আমরা পয়েন্ট টুটু রাইফেল দিয়ে। তার আগে অবশ্য থাকত একটা প্রস্তুতিপর্ব: ছুটির আগের দিন রাইফেল নিয়ে গুলশানের শুটিং রেঞ্জে গিয়ে নিখুঁতভাবে রাইফেলগুলো জিরো করে রাখা একটা বড় কাজ ছিল। একমাত্র তাহলেই নিশ্চিত হওয়া যেত যেদিকে তাক করেছি, গুলিটা সেই জায়গায় গিয়ে লাগবে। সবাই আমরা সিঙ্গাপুর থেকে দামি টেলিস্কোপ আনিয়ে ফিট করে নিয়েছিলাম যার যার পয়েন্ট টুটু রাইফেলে। সারাটা দিন রোদে রোদে টোটো করে ঘুরে, ত্রিশ থেকে পঞ্চাশটা পাখি মারতাম আমরা। দুপুরের খাওয়াটা কোনো গাছের নিচে সেরে নিয়ে ঘণ্টাখানেক চলত গল্পগুজব, বিশ্রাম। তারপর আরও কিছুক্ষণ পাখির পেছনে ঘুরে রাস্তার ধারের কোনো দোকানে বসে চা-নাশতা খেয়ে সন্ধের পর ফিরে আসতাম পাখি নিয়ে। এই ছিল আমাদের শিকার বা আউটিং।’
শেষ দেখা
আমার খুব আফসোস ছিল একটি বিষয়ে। টুকটাক কয়েকটা বই রূপান্তর করা হলেও কাজীদাকে কোনো বই উৎসর্গ করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁকে একটি বই উৎসর্গ করতে পারি। সেবা প্রকাশনী থেকেই শাহনূর ভাই জেমস হিলটনের ‘লস্ট হরাইজন’ বইটি রূপান্তর করেছিলেন। একটু সংক্ষিপ্তভাবে রূপান্তর করা তিব্বতের পটভূমিতে লেখা বইটি খুব টেনেছিল তখন। চার-পাঁচবার পড়া হয়ে গিয়েছিল। পরে ঐতিহ্য থেকে ২০২০ সালে পূর্ণাঙ্গ রূপান্তর করি বইটি। এটি উৎসর্গ (অনুবাদকের উৎসর্গ) করি কাজী আনোয়ার হোসেনকে। বইটি কাজীদাকে দিতে স্ত্রী-মেয়েসহ দেখা করেছিলাম তাঁর সঙ্গে। অনেক গল্পই হয়েছিল তখন। মেয়ে ওয়াফিকাকে কোলে নিয়ে বইটার একটু অংশ পড়েছিলেনও কাজীদা। তখন অবশ্য কল্পনাও করতে পারিনি তাঁর সঙ্গে এই আমার শেষ দেখা। আফসোস হয়... যদি সেদিন কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে আরেকটু সময় কাটাতে পারতাম।
সিভিতে নাম...
আমার সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে দিতে চাইলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। বললেন, কোনো সমস্যা নেই। আমার সিভিতে তারপর অনেকগুলো দিন রেফারেন্সের জায়গায় এক নম্বরে ছিল কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। তারপর ২০২২-এর ১৯ জানুয়ারি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন কাজীদা। তাঁর নামটা বাদ দিয়ে সিভিটা ঠিক করার সময় মনটা অনেক কেঁদেছিল। এখনো লেখাটা লিখতে গিয়ে বারবার মনে পড়ছে তাঁর কথা... কাজী আনোয়ার হোসেন আপনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মতো পাঠকদের মনে।

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নিয়েছি। আজ কাজীদার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা, সেই সঙ্গে কাজী আনোয়ার হোসেন থেকে জানা তাঁর কিছু বিষয় ভাগাভাগি করছি পাঠকদের সঙ্গে।
বইয়ের জগতে প্রবেশ তাঁর কারণে
ক্লাস ফোরে-ফাইভে পড়ি। আব্বুর স্টিলের আলমারির নিচে গাদাগাদি করে রাখা ছিল অনেক বই। সেবা প্রকাশনী, ভারতীয় নানা লেখকের উপন্যাস আরও কত কী! আব্বুকে বললে চাবি দিয়ে খুলে দিতেন। তারপর নাওয়া-খাওয়া ভুলে হামলে পড়তাম বই নিয়ে। তবে আমাকে টানত সেবা প্রকাশনীর বইগুলোই। মাসুদ রানার বই থাকলেও তখন ওগুলো পড়া বারণ ছিল। তাতে কী! আরও কত্ত বই। ছয় রোমাঞ্চ, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, কুয়াশা সিরিজের বই, জঙ্গল, শিকার-১, শিকার-২, শিকার-৩, রুদ্র প্রয়াগের চিতা, জুলভার্নের নাইজারের বাঁকে, মরু শহর—এমনই সব বই বলা চলে নতুন এক পৃথিবীর সন্ধান দিয়ে দিল আমাকে। আজ এই আধবুড়ো বয়সেও বইয়ের প্রতি আগ্রহ কমেনি একটুও। আর বইয়ের প্রতি আমার এই ভালোবাসার জন্ম, বই পড়ে পাহাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর আগ্রহ সৃষ্টি—এই সবকিছু কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্যই। তিনি না থাকলে যে সেবা প্রকাশনী হতো না। আমারও বই পড়ে অন্য এক জগতে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ মিলত না।
রহস্যমানব
স্কুলে পড়ার সময় সেবার বই পড়ুয়া অনেক বন্ধুবান্ধবও জুটে যায়। আমাদের কাছে সেবার বিভিন্ন বইয়ের চরিত্রগুলোর মতো কাজী আনোয়ার হোসেনও তখন রহস্যঘেরা এক চরিত্র। আমাদের বই পড়ুয়াদের দলে এক বড় ভাই ছিলেন, নোমান ভাই। তিনি মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলতেন, আমরা পুরোপুরি বিশ্বাসও করতে পারতাম না, আবার অবিশ্বাস করতে পারতাম না। একবার যেমন বললেন, মাসুদ রানা সিরিজের বিসিআই (বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স) ঢাকায় সত্যি আছে। আর কাজী আনোয়ার হোসেন বড় একটা পদে আছেন। তবে এটা একেবারেই গোপনীয়! তাই কেউ জানে না। কাজী আনোয়ার হোসেন আমাদের কাছে এমনই এক রহস্যঘেরা মানুষ ছিলেন, আমরা তাঁর এ কথা বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। তখন একবারও মনে হয়নি, এত গোপনীয় বিষয়টি আমাদের চেয়ে কয়েক বছরের বড় নোমান ভাই জানলেন কীভাবে?
দুরু দুরু বুকে
২০০৫-০৬ সালের ঘটনা। রহস্য পত্রিকায় লিখছি নিয়মিত। তবে তখন পর্যন্ত কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা হয়নি। রহস্য পত্রিকার অফিস ২৪/৪ সেগুনবাগিচার দোতলায়। কাজী আনোয়ার হোসেন বসেন তৃতীয় তলায়। আমার দৌড় তখন পর্যন্ত ওই দোতলা পর্যন্ত। সেখানে গিয়ে লেখা জমা দিই। আর হাকিম আংকেল (শেখ আবদুল হাকিম) ও শাহনূর ভাইয়ের (কাজী শাহনূর হোসেন) সঙ্গে গল্প করি, নতুন নতুন লেখার পরিকল্পনা করি। একদিন শাহনূর ভাইকে সাহস করে বললাম, কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে চাই। পরদিন সকালেই ডাক পড়ল। আমার মনে হলো বিসিআই চিফ রাহাত খানের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।
দোতলা থেকে তৃতীয় তলা ওঠার পথে একটি তালা মারা দরজা। দালানের এই পাশ দিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায় যেতে হলে ওই দরজা খুলেই যেতে হয়। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে শেষ পর্যন্ত দুরু দুরু বুকে ঢুকলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায়। আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। বসতে বললেন। শুরুতে কেমন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কাজী আনোয়ার হোসেনের সামনে বসে আছি।
তারপর অনেকবারই গিয়েছি কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে। বেশির ভাগ সময় কোনো না কোনো কাজে। বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারও নিয়েছি তাঁর। তবে ওই প্রথম দিনের অনুভূতি আজও অটুট আমার মনে। এখনো মনে পড়লে কেমন ভয়-রোমাঞ্চের একটি শিহরণ খেলে যায় শরীরে।
সেই ক্যামেরা
পরের বছরের ঘটনা। তখন বনে, পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর নেশা প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে আমার ওপর। সেই সঙ্গে ছবি তোলার আগ্রহ পেয়ে বসেছে। সমস্যা হলো, ভালো ক্যামেরা নেই। একদিন কথায় কথায় শাহনূর ভাইকে বললাম, ক্যামেরা না থাকায় ভালো ছবি তুলতে পারছি না। একটা ক্যামেরা কিনতে হবে।
কয়েক দিন পরের কথা। সেবা প্রকাশনীতে গেলাম আবার। কোনো একটা লেখা নিয়ে কিংবা নিছক আড্ডা দিতে। কতক্ষণ গল্প করার পর চলে আসতে যাব, এমন সময় শাহনূর ভাই বললেন, ‘একটু দাঁড়াও।’ একটু পর ফিরে এলেন। হাতে একটা ব্যাগ। আমাকে চমকে দিয়ে ভেতর থেকে বের করলেন একটি নাইকন ক্যামেরা। বললেন, ‘আব্বাকে বলেছিলাম তোমার ছবি তোলার আগ্রহের কথা। তখন বললেন তাঁর এই ক্যামেরাটা পড়ে আছে। কী অবস্থা এটার জানেন না। চাইলে তুমি এটা নিতে পারো, যদি কোনো কাজে লাগে।’
আমার তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না, কাজীদা আমাকে তাঁর ব্যবহার করা ক্যামেরা দিয়েছেন! তাঁর মনে আমার জন্য আলাদা একটি জায়গা আছে ভেবে খুব ভালো লাগছিল।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই ক্যামেরাটা দিয়ে পরে আর ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। অনেক দিন পড়ে থেকে এটার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সযতনে ক্যামেরাটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। এখন আমার কাছে একটি মোটামুটি ভালো একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে, বাড়তি লেন্সসহ আমেরিকা থেকে আনিয়েছি আমার বোনকে দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে ওই ক্যামেরার থেকেও বেশি প্রিয় কাজীদার দেওয়া সেই পুরোনো ক্যামেরাটি।
পরে ক্যামেরা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে কাজীদার সঙ্গে। এক সাক্ষাৎকারে যেমন আমাকে বলেছিলেন, ‘বহু বছর ধরে ক্যামেরা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, যদিও শিল্প সৃষ্টির তাগিদে নয়। আমি মুহূর্তকে ধরতে চেয়েছি। যেই শাটারে চাপ দিলাম, থমকে দাঁড়িয়ে গেল একটা মুহূর্ত। স্থির হয়ে গেল একটা নাটকের ছোট্ট এক অংশ। যখন খুশি, যতবার খুশি দেখব আমি ওটা। স্মৃতি মলিন হয়ে যায়, কিন্তু ছবি বহু বছর পর্যন্ত জলজ্যান্ত থাকে। ফটোগ্রাফির এই গুণটাই আমাকে আকর্ষণ করেছিল সবচেয়ে বেশি। মাঝে মাঝে এক-আধটা ফটোগ্রাফ দারুণ হয়ে যায়। তখন খুব ভালো লাগে, নিজেকে বিরাট শিল্পী মনে হয়। ছবি তোলার মোটামুটি নিয়মগুলো শেখা থাকলে, দূরত্ব আর আলোছায়ার হিসাব ঠিক থাকলে, সেই সঙ্গে কম্পোজিশন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকলে মাঝারি মানের একটা ছবি নিশ্চিতভাবেই আশা করা যায়। তাই ফটোগ্রাফিকে আমি একান্ত বিশ্বস্ত ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম।
...কত্তো কষ্ট করেছি ফটোগ্রাফির জন্য! অথচ এখন? একদম সোজা। মোবাইল ফোনের কল্যাণে এখন টিপ দিলেই ছবি। অহরহ ইনস্ট্যান্ট ছবি তুলে নিজে দেখা যাচ্ছে, মানুষকে দেখানো যাচ্ছে, ফেসবুকে পোস্ট করা যাচ্ছে। এটা যে কত বিরাট অগ্রগতি, ভাবলে বিশ্বাস হতে চায় না। মনে হয় জাদুমন্ত্র! কোথা থেকে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে এসেছে আজ মানুষ!’
রানা গিয়েছে কত দেশে...কাজীদা?
কাজী আনোয়ার হোসেন তাঁর সৃষ্টি চরিত্রগুলোকে পৃথিবীর অনেক দেশ, দুর্গম সব জায়গায় ঘুরিয়ে এনেছেন। কিন্তু নিজে কি খুব বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন? জানতে চেয়েছিলাম এক সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়। কাজী আনোয়ার হোসেনের উত্তর, ‘না, ভাই। কোথাও না। আমি আর্মচেয়ার ট্রাভেলার। চৌদ্দ-পনেরো বছর বয়সে একবার শুধু বিহারের কয়লা শহর গিরিডিতে গিয়েছিলাম আমার আব্বুর সঙ্গে। স্মৃতি নেই কোনো। শুধু মনে আছে রাতে ঘুমোতে দেওয়া হয়েছিল দোতলার খোলা বারান্দায়; অসংখ্য উজ্জ্বল তারা ছিল আকাশে, আর বেশ দূরের শহর থেকে ভেসে আসছিল মোহাম্মাদ রফির গাওয়া সিনেমার গান: দিল্মে ছুপাকে পেয়ার কা তুফান লে চ্যলে/ হ্যম আজ আপনি মওতকা সামান লে চ্যলে...’
মাছ শিকারে কাজীদার গুরু জিম করবেট
কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কিংবা সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে অনেক মজার সব ঘটনাও জানতে পারতাম। কাজী আনোয়ার হোসেনের মাছ শিকারের বাতিক ছিল। একবার মাছ শিকারের একটা সাক্ষাৎকার নিই। সেখানে কাজীদা বলেন, মাছ ধরায় তাঁর গুরু বিখ্যাত শিকারি ও পরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ জিম করবেট।
‘১৯৭৭ কি ’৭৮ সাল। মশারির নিচে বন্দী হয়েছিলাম তিন সপ্তাহের জন্য। চিকেন পক্স। আমার প্রথম পুত্র স্কুল থেকে বয়ে এনে উপহার দিয়েছিল ওটা আমাকে। আমার সঙ্গেই ঘুমাত ও, নিজে দু-চারটে গোটার ওপর দিয়ে পার পেয়ে গেল, কিন্তু আমার শরীর ছেয়ে গেল পানিভরা ফোসকায়, আধ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা থাকল না কোথাও। লোকজন ভয়ে কাছে আসে না...অবশ্য, আমিই বারণ করেছি। শুয়ে শুয়ে একের পর এক বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে পেয়ে গেলাম জিম করবেটের লেখা সেই বইটা। নাম আজ আর মনে নেই। বাঘ শিকার করতে করতে একবার উত্তর ভারতের চমৎকার এক পাহাড়ি জলাশয় দেখে ছিপ-বড়শি নিয়ে বসে গিয়েছিলেন তিনি মাছ ধরতে। কী অপূর্ব বর্ণনা! কীভাবে ঠোকর দিল মাছ, তিনিও ছিপে মারলেন টান। কেমনভাবে বড়শিতে গাঁথল মাছ, ছুট দিলেন তিরবেগে, পাথরে বাঁধিয়ে সুতো ছেঁড়ার চেষ্টা করল, তিনিই বা কী কায়দায় তাকে মতলব হাসিল করতে না দিয়ে আস্তে আস্তে খেলিয়ে তীরে নিয়ে এসে নেট করলেন। এসবের জলজ্যান্ত, পুঙ্খানুপুঙ্খ, লোভনীয় বর্ণনা পড়ে আমার তো পাগল হবার দশা। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে তাঁকে ১০-১২ কেজি ওজনের কয়েকটা ‘মহাশের’ মাছ মারতে দেখে আমি মশারির নিচে শুয়ে ছটফট করতে থাকলাম...কবে সেরে উঠব!’
ওই সময় কিছু পুকুর বা দিঘিতে মাঝে মাঝে মাছ ধরার টিকিট দেওয়া হতো, কিন্তু ওসব জায়গায় সচরাচর তেমন সুবিধে হতো না। কাজীদার পছন্দ ছিল ধানমন্ডি লেক।
তাঁর মাছ শিকারের বন্ধুদের নিয়ে বলেছিলেন, ‘সে সময় ধানমন্ডি লেকে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, ছেলে-বুড়ো, ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী-পেশাজীবী সব মিলিয়ে আমরা মৎস্যশিকারি ছিলাম তিন শর ওপরে। স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা যে-যার মনপছন্দের মানুষ খুঁজে নিয়ে ছোট ছোট দল গড়ে এক-একটা এলাকা দখল করতাম। আমি গিয়ে জুটেছিলাম স্বর্ণহ্নদয় দুই শিকারি কালা ভাই (গোলাম রশিদ কালা, আচার প্রস্তুতকারক) ও রব ভাই (আবদুর রব, রঙের কনট্রাক্টর)—এঁদের গ্রুপে। এই গ্রুপে একে একে এসে জুটেছিলেন শামসু ভাই (জনকণ্ঠ পত্রিকার সিনিয়র সহকারী সম্পাদক এ টি এম শামসুদ্দীন), সোশোলজিতে মাস্টার্স লুডু খান (গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক), ইসহাক ভাই (মোজাইকের ঠিকাদার), মোসলেম ভাই (পিঁপড়ার ডিম ও মাছের চার বিক্রেতা), শফি সাহেব (ঠিকাদার), মোবারক ভাই (বাচ্চাদের রাবারের বল তৈরি করে পাইকারি বেচতেন চকবাজারে) ...এরকম আরও বেশ কয়েকজন। মাছ ধরার পাশাপাশি লেকের ধারে বসে চা-নাশতার ফাঁকে হাসি-তামাশা-গল্প চলত আমাদের হাজারো বিষয়ে। গল্পের টানে পুব পাড় থেকে প্রায়ই আমাদের পশ্চিমে চলে আসতেন একজন কোটিপতি মৎস্যশিকারি, তোপখানা রোডের ক্রিসেন্ট কোম্পানির মালিক খলিলুর রহমান। আমি নানাভাই বলতাম, তিনিও আমাকে তা-ই ডাকতেন; আমেরিকা থেকে আমার জন্য একটা মাল্টিপ্লাইং হুইল আর রিডিং ল্যাম্প এনে উপহার দিয়েছিলেন। আর আসতেন নিতাইদা, ঢাকা বেতারের ক্ল্যাসিক্যাল কণ্ঠশিল্পী নিতাই রায়, বড় সজ্জন ছিলেন ভদ্রলোক। রোজ এসে হাজির হতেন শিকারি নন এমন অনেকেও। তাঁদেরই একজন ছিলেন ঢাকা রাইফেল ক্লাবের এয়ার পিস্তল শুটার শারফুদ্দীন টিপু।’
‘আমাদের ছোট্ট গ্রুপের বাইরেও আরও কয়েকজনের কথা না বললেই নয়। তাদের একজন হচ্ছে শাহনেওয়াজ ভুঁইয়া দি গ্রেট, এত বড় মৎস্যশিকারি আমি আর দেখিনি। ওর মতো বড় মাপের শিকারি যেকোনো দেশেই দুর্লভ...নিত্যনতুন টেকনিক তার, সেই সঙ্গে ইমপ্রোভাইজেশন। কোথাও শিকারে গিয়ে কেউ যদি একটা মাছও না পায়, দেখা যাবে ও ধরে বসে আছে বড়সড় পাঁচ-ছয়টা রুই-কাতলা।
আমার হাতে বিদঘুটে আকৃতির স্পিনিং রিল দেখে যে সময় সবাই হাসাহাসি করত, ডিম বিক্রেতা আবদুল মিঞা বলত: ওই ইচার (চিংড়ি মাছের) ঠ্যাংডা হালান দি, আনুয়ার সাপ, বালা হুইল লন। সবাই যখন ছ্যা-ছ্যা করছে, তখন একদিন শাহনেওয়াজ এসে বলল: আনোয়ার ভাই, আপনার এই স্পিনিং হুইল দিয়ে কী করে বেইট থ্রো করতে হয় একটু দেখিয়ে দেবেন? আমি খুশি মনে শিখিয়ে দিলাম। বার কয়েক থ্রো করেই আয়ত্ত করে ফেলল ও কায়দাটা। আর ওরই হাত ধরে গোটা বাংলাদেশে আজ স্পিনিং হুইলের ছড়াছড়ি...মানুষ প্রায় ভুলেই গেছে সেদিনের সেই সিঙ্গেল অ্যাকশন হুইলের কথা...আর একজনের কথা বলব: মোস্তফা সাহেব। প্রথম দিন লেকে গিয়ে তাঁকেই ওস্তাদ ধরেছিলাম। তিনিই কিনিয়ে দিয়েছিলেন ছিপ, বড়শি, কয়েক শ গজ চৌদ্দ পাউন্ডের ভালো জাতের সুতো, আর আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কলকাতার উমাচরণ কর্মকারের তৈরি আদ্যিকালের একটা চার ইঞ্চি বেয়ারিং হুইল।’
কাজীদা বলেছিলেন, নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় মাছটিও শিকার করেছিলেন ধানমন্ডি লেকে। আধা মণের এক-আধ সের বেশি বা কম ছিল ওটা।
শিকারে যেতেন...
বন্যপ্রাণীর প্রতি আমার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। পুরোনো দিনের জঙ্গল আর বন্যপ্রাণীর অবস্থা জানতে শিকারের বই বড় ভরসা। তাই ছোটবেলা থেকেই জিম করবেট, কেনেথ এন্ডারসন কিংবা জন হান্টারের বইয়ের বড় পোকা আমি। তাই যখন শুনলাম মাছ ধরার পাশাপাশি কাজী আনোয়ার হোসেনের শিকারের নেশাও ছিল, তখন এক সাক্ষাৎকারে চেপে ধরলাম।
তখন বলেন, ‘শিকারের নেশা বলতে যা বোঝায়, তা কিন্তু কোনো দিনই পুরোপুরি ছিল না আমার। বাঘটাঘ টানেনি আমাকে। এমনকি রাজহাঁস বা চখা শিকারেও গিয়েছি মাত্র অল্প কয়েকবার। আমার মূল আকর্ষণ ছিল আউটিং। কয়েকজন বন্ধু মিলে শুক্রবারগুলোতে গাড়ি নিয়ে চলে যেতাম যেদিকে খুশি, একেকদিন একেক রাস্তায়। দলের বেশির ভাগই ছিলাম আমরা ধানমন্ডি লেকের মৎস্যশিকারি। আমাদের মধ্যে পাখি শিকারের পাগল ছিল আসলে লুডু খান। আমি ষাটের দশকেই পাখির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। আশির দশকে রব ভাই, কালা ভাই আর আমি ছিলাম জেনুইন মৎস্যশিকারি।...লুডু ভাইয়ের এক নিপাট ভদ্রলোক বন্ধু শারফুদ্দীন টিপুও জুটে গিয়েছিলেন আমাদের সঙ্গে। রব ভাই তো উৎসাহের আতিশয্যে বন্দুক-রাইফেল-পিস্তল কিনে রীতিমতো বন্দুকবাজই বনে গিয়েছিলেন। তবে, প্রতিটা ট্রিপে আমাদের সঙ্গে থাকলেও জীবনে একটি গুলিও ছোড়েননি আমাদের সবার প্রিয় গোলাম রসুল কালা ভাই। টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে যাওয়ার এবং শিকার শেষে সবার মধ্যে পাখি ভাগ করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর।’
কাজীদা বলেন, ‘চলতে চলতেই থেমে রাস্তার দুপাশের ডালে বসা ঘুঘু, হরিয়াল, কবুতর বা বক মারতাম আমরা পয়েন্ট টুটু রাইফেল দিয়ে। তার আগে অবশ্য থাকত একটা প্রস্তুতিপর্ব: ছুটির আগের দিন রাইফেল নিয়ে গুলশানের শুটিং রেঞ্জে গিয়ে নিখুঁতভাবে রাইফেলগুলো জিরো করে রাখা একটা বড় কাজ ছিল। একমাত্র তাহলেই নিশ্চিত হওয়া যেত যেদিকে তাক করেছি, গুলিটা সেই জায়গায় গিয়ে লাগবে। সবাই আমরা সিঙ্গাপুর থেকে দামি টেলিস্কোপ আনিয়ে ফিট করে নিয়েছিলাম যার যার পয়েন্ট টুটু রাইফেলে। সারাটা দিন রোদে রোদে টোটো করে ঘুরে, ত্রিশ থেকে পঞ্চাশটা পাখি মারতাম আমরা। দুপুরের খাওয়াটা কোনো গাছের নিচে সেরে নিয়ে ঘণ্টাখানেক চলত গল্পগুজব, বিশ্রাম। তারপর আরও কিছুক্ষণ পাখির পেছনে ঘুরে রাস্তার ধারের কোনো দোকানে বসে চা-নাশতা খেয়ে সন্ধের পর ফিরে আসতাম পাখি নিয়ে। এই ছিল আমাদের শিকার বা আউটিং।’
শেষ দেখা
আমার খুব আফসোস ছিল একটি বিষয়ে। টুকটাক কয়েকটা বই রূপান্তর করা হলেও কাজীদাকে কোনো বই উৎসর্গ করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁকে একটি বই উৎসর্গ করতে পারি। সেবা প্রকাশনী থেকেই শাহনূর ভাই জেমস হিলটনের ‘লস্ট হরাইজন’ বইটি রূপান্তর করেছিলেন। একটু সংক্ষিপ্তভাবে রূপান্তর করা তিব্বতের পটভূমিতে লেখা বইটি খুব টেনেছিল তখন। চার-পাঁচবার পড়া হয়ে গিয়েছিল। পরে ঐতিহ্য থেকে ২০২০ সালে পূর্ণাঙ্গ রূপান্তর করি বইটি। এটি উৎসর্গ (অনুবাদকের উৎসর্গ) করি কাজী আনোয়ার হোসেনকে। বইটি কাজীদাকে দিতে স্ত্রী-মেয়েসহ দেখা করেছিলাম তাঁর সঙ্গে। অনেক গল্পই হয়েছিল তখন। মেয়ে ওয়াফিকাকে কোলে নিয়ে বইটার একটু অংশ পড়েছিলেনও কাজীদা। তখন অবশ্য কল্পনাও করতে পারিনি তাঁর সঙ্গে এই আমার শেষ দেখা। আফসোস হয়... যদি সেদিন কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে আরেকটু সময় কাটাতে পারতাম।
সিভিতে নাম...
আমার সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে দিতে চাইলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। বললেন, কোনো সমস্যা নেই। আমার সিভিতে তারপর অনেকগুলো দিন রেফারেন্সের জায়গায় এক নম্বরে ছিল কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। তারপর ২০২২-এর ১৯ জানুয়ারি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন কাজীদা। তাঁর নামটা বাদ দিয়ে সিভিটা ঠিক করার সময় মনটা অনেক কেঁদেছিল। এখনো লেখাটা লিখতে গিয়ে বারবার মনে পড়ছে তাঁর কথা... কাজী আনোয়ার হোসেন আপনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মতো পাঠকদের মনে।
ইশতিয়াক হাসান

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নিয়েছি। আজ কাজীদার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা, সেই সঙ্গে কাজী আনোয়ার হোসেন থেকে জানা তাঁর কিছু বিষয় ভাগাভাগি করছি পাঠকদের সঙ্গে।
বইয়ের জগতে প্রবেশ তাঁর কারণে
ক্লাস ফোরে-ফাইভে পড়ি। আব্বুর স্টিলের আলমারির নিচে গাদাগাদি করে রাখা ছিল অনেক বই। সেবা প্রকাশনী, ভারতীয় নানা লেখকের উপন্যাস আরও কত কী! আব্বুকে বললে চাবি দিয়ে খুলে দিতেন। তারপর নাওয়া-খাওয়া ভুলে হামলে পড়তাম বই নিয়ে। তবে আমাকে টানত সেবা প্রকাশনীর বইগুলোই। মাসুদ রানার বই থাকলেও তখন ওগুলো পড়া বারণ ছিল। তাতে কী! আরও কত্ত বই। ছয় রোমাঞ্চ, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, কুয়াশা সিরিজের বই, জঙ্গল, শিকার-১, শিকার-২, শিকার-৩, রুদ্র প্রয়াগের চিতা, জুলভার্নের নাইজারের বাঁকে, মরু শহর—এমনই সব বই বলা চলে নতুন এক পৃথিবীর সন্ধান দিয়ে দিল আমাকে। আজ এই আধবুড়ো বয়সেও বইয়ের প্রতি আগ্রহ কমেনি একটুও। আর বইয়ের প্রতি আমার এই ভালোবাসার জন্ম, বই পড়ে পাহাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর আগ্রহ সৃষ্টি—এই সবকিছু কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্যই। তিনি না থাকলে যে সেবা প্রকাশনী হতো না। আমারও বই পড়ে অন্য এক জগতে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ মিলত না।
রহস্যমানব
স্কুলে পড়ার সময় সেবার বই পড়ুয়া অনেক বন্ধুবান্ধবও জুটে যায়। আমাদের কাছে সেবার বিভিন্ন বইয়ের চরিত্রগুলোর মতো কাজী আনোয়ার হোসেনও তখন রহস্যঘেরা এক চরিত্র। আমাদের বই পড়ুয়াদের দলে এক বড় ভাই ছিলেন, নোমান ভাই। তিনি মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলতেন, আমরা পুরোপুরি বিশ্বাসও করতে পারতাম না, আবার অবিশ্বাস করতে পারতাম না। একবার যেমন বললেন, মাসুদ রানা সিরিজের বিসিআই (বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স) ঢাকায় সত্যি আছে। আর কাজী আনোয়ার হোসেন বড় একটা পদে আছেন। তবে এটা একেবারেই গোপনীয়! তাই কেউ জানে না। কাজী আনোয়ার হোসেন আমাদের কাছে এমনই এক রহস্যঘেরা মানুষ ছিলেন, আমরা তাঁর এ কথা বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। তখন একবারও মনে হয়নি, এত গোপনীয় বিষয়টি আমাদের চেয়ে কয়েক বছরের বড় নোমান ভাই জানলেন কীভাবে?
দুরু দুরু বুকে
২০০৫-০৬ সালের ঘটনা। রহস্য পত্রিকায় লিখছি নিয়মিত। তবে তখন পর্যন্ত কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা হয়নি। রহস্য পত্রিকার অফিস ২৪/৪ সেগুনবাগিচার দোতলায়। কাজী আনোয়ার হোসেন বসেন তৃতীয় তলায়। আমার দৌড় তখন পর্যন্ত ওই দোতলা পর্যন্ত। সেখানে গিয়ে লেখা জমা দিই। আর হাকিম আংকেল (শেখ আবদুল হাকিম) ও শাহনূর ভাইয়ের (কাজী শাহনূর হোসেন) সঙ্গে গল্প করি, নতুন নতুন লেখার পরিকল্পনা করি। একদিন শাহনূর ভাইকে সাহস করে বললাম, কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে চাই। পরদিন সকালেই ডাক পড়ল। আমার মনে হলো বিসিআই চিফ রাহাত খানের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।
দোতলা থেকে তৃতীয় তলা ওঠার পথে একটি তালা মারা দরজা। দালানের এই পাশ দিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায় যেতে হলে ওই দরজা খুলেই যেতে হয়। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে শেষ পর্যন্ত দুরু দুরু বুকে ঢুকলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায়। আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। বসতে বললেন। শুরুতে কেমন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কাজী আনোয়ার হোসেনের সামনে বসে আছি।
তারপর অনেকবারই গিয়েছি কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে। বেশির ভাগ সময় কোনো না কোনো কাজে। বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারও নিয়েছি তাঁর। তবে ওই প্রথম দিনের অনুভূতি আজও অটুট আমার মনে। এখনো মনে পড়লে কেমন ভয়-রোমাঞ্চের একটি শিহরণ খেলে যায় শরীরে।
সেই ক্যামেরা
পরের বছরের ঘটনা। তখন বনে, পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর নেশা প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে আমার ওপর। সেই সঙ্গে ছবি তোলার আগ্রহ পেয়ে বসেছে। সমস্যা হলো, ভালো ক্যামেরা নেই। একদিন কথায় কথায় শাহনূর ভাইকে বললাম, ক্যামেরা না থাকায় ভালো ছবি তুলতে পারছি না। একটা ক্যামেরা কিনতে হবে।
কয়েক দিন পরের কথা। সেবা প্রকাশনীতে গেলাম আবার। কোনো একটা লেখা নিয়ে কিংবা নিছক আড্ডা দিতে। কতক্ষণ গল্প করার পর চলে আসতে যাব, এমন সময় শাহনূর ভাই বললেন, ‘একটু দাঁড়াও।’ একটু পর ফিরে এলেন। হাতে একটা ব্যাগ। আমাকে চমকে দিয়ে ভেতর থেকে বের করলেন একটি নাইকন ক্যামেরা। বললেন, ‘আব্বাকে বলেছিলাম তোমার ছবি তোলার আগ্রহের কথা। তখন বললেন তাঁর এই ক্যামেরাটা পড়ে আছে। কী অবস্থা এটার জানেন না। চাইলে তুমি এটা নিতে পারো, যদি কোনো কাজে লাগে।’
আমার তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না, কাজীদা আমাকে তাঁর ব্যবহার করা ক্যামেরা দিয়েছেন! তাঁর মনে আমার জন্য আলাদা একটি জায়গা আছে ভেবে খুব ভালো লাগছিল।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই ক্যামেরাটা দিয়ে পরে আর ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। অনেক দিন পড়ে থেকে এটার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সযতনে ক্যামেরাটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। এখন আমার কাছে একটি মোটামুটি ভালো একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে, বাড়তি লেন্সসহ আমেরিকা থেকে আনিয়েছি আমার বোনকে দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে ওই ক্যামেরার থেকেও বেশি প্রিয় কাজীদার দেওয়া সেই পুরোনো ক্যামেরাটি।
পরে ক্যামেরা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে কাজীদার সঙ্গে। এক সাক্ষাৎকারে যেমন আমাকে বলেছিলেন, ‘বহু বছর ধরে ক্যামেরা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, যদিও শিল্প সৃষ্টির তাগিদে নয়। আমি মুহূর্তকে ধরতে চেয়েছি। যেই শাটারে চাপ দিলাম, থমকে দাঁড়িয়ে গেল একটা মুহূর্ত। স্থির হয়ে গেল একটা নাটকের ছোট্ট এক অংশ। যখন খুশি, যতবার খুশি দেখব আমি ওটা। স্মৃতি মলিন হয়ে যায়, কিন্তু ছবি বহু বছর পর্যন্ত জলজ্যান্ত থাকে। ফটোগ্রাফির এই গুণটাই আমাকে আকর্ষণ করেছিল সবচেয়ে বেশি। মাঝে মাঝে এক-আধটা ফটোগ্রাফ দারুণ হয়ে যায়। তখন খুব ভালো লাগে, নিজেকে বিরাট শিল্পী মনে হয়। ছবি তোলার মোটামুটি নিয়মগুলো শেখা থাকলে, দূরত্ব আর আলোছায়ার হিসাব ঠিক থাকলে, সেই সঙ্গে কম্পোজিশন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকলে মাঝারি মানের একটা ছবি নিশ্চিতভাবেই আশা করা যায়। তাই ফটোগ্রাফিকে আমি একান্ত বিশ্বস্ত ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম।
...কত্তো কষ্ট করেছি ফটোগ্রাফির জন্য! অথচ এখন? একদম সোজা। মোবাইল ফোনের কল্যাণে এখন টিপ দিলেই ছবি। অহরহ ইনস্ট্যান্ট ছবি তুলে নিজে দেখা যাচ্ছে, মানুষকে দেখানো যাচ্ছে, ফেসবুকে পোস্ট করা যাচ্ছে। এটা যে কত বিরাট অগ্রগতি, ভাবলে বিশ্বাস হতে চায় না। মনে হয় জাদুমন্ত্র! কোথা থেকে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে এসেছে আজ মানুষ!’
রানা গিয়েছে কত দেশে...কাজীদা?
কাজী আনোয়ার হোসেন তাঁর সৃষ্টি চরিত্রগুলোকে পৃথিবীর অনেক দেশ, দুর্গম সব জায়গায় ঘুরিয়ে এনেছেন। কিন্তু নিজে কি খুব বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন? জানতে চেয়েছিলাম এক সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়। কাজী আনোয়ার হোসেনের উত্তর, ‘না, ভাই। কোথাও না। আমি আর্মচেয়ার ট্রাভেলার। চৌদ্দ-পনেরো বছর বয়সে একবার শুধু বিহারের কয়লা শহর গিরিডিতে গিয়েছিলাম আমার আব্বুর সঙ্গে। স্মৃতি নেই কোনো। শুধু মনে আছে রাতে ঘুমোতে দেওয়া হয়েছিল দোতলার খোলা বারান্দায়; অসংখ্য উজ্জ্বল তারা ছিল আকাশে, আর বেশ দূরের শহর থেকে ভেসে আসছিল মোহাম্মাদ রফির গাওয়া সিনেমার গান: দিল্মে ছুপাকে পেয়ার কা তুফান লে চ্যলে/ হ্যম আজ আপনি মওতকা সামান লে চ্যলে...’
মাছ শিকারে কাজীদার গুরু জিম করবেট
কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কিংবা সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে অনেক মজার সব ঘটনাও জানতে পারতাম। কাজী আনোয়ার হোসেনের মাছ শিকারের বাতিক ছিল। একবার মাছ শিকারের একটা সাক্ষাৎকার নিই। সেখানে কাজীদা বলেন, মাছ ধরায় তাঁর গুরু বিখ্যাত শিকারি ও পরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ জিম করবেট।
‘১৯৭৭ কি ’৭৮ সাল। মশারির নিচে বন্দী হয়েছিলাম তিন সপ্তাহের জন্য। চিকেন পক্স। আমার প্রথম পুত্র স্কুল থেকে বয়ে এনে উপহার দিয়েছিল ওটা আমাকে। আমার সঙ্গেই ঘুমাত ও, নিজে দু-চারটে গোটার ওপর দিয়ে পার পেয়ে গেল, কিন্তু আমার শরীর ছেয়ে গেল পানিভরা ফোসকায়, আধ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা থাকল না কোথাও। লোকজন ভয়ে কাছে আসে না...অবশ্য, আমিই বারণ করেছি। শুয়ে শুয়ে একের পর এক বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে পেয়ে গেলাম জিম করবেটের লেখা সেই বইটা। নাম আজ আর মনে নেই। বাঘ শিকার করতে করতে একবার উত্তর ভারতের চমৎকার এক পাহাড়ি জলাশয় দেখে ছিপ-বড়শি নিয়ে বসে গিয়েছিলেন তিনি মাছ ধরতে। কী অপূর্ব বর্ণনা! কীভাবে ঠোকর দিল মাছ, তিনিও ছিপে মারলেন টান। কেমনভাবে বড়শিতে গাঁথল মাছ, ছুট দিলেন তিরবেগে, পাথরে বাঁধিয়ে সুতো ছেঁড়ার চেষ্টা করল, তিনিই বা কী কায়দায় তাকে মতলব হাসিল করতে না দিয়ে আস্তে আস্তে খেলিয়ে তীরে নিয়ে এসে নেট করলেন। এসবের জলজ্যান্ত, পুঙ্খানুপুঙ্খ, লোভনীয় বর্ণনা পড়ে আমার তো পাগল হবার দশা। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে তাঁকে ১০-১২ কেজি ওজনের কয়েকটা ‘মহাশের’ মাছ মারতে দেখে আমি মশারির নিচে শুয়ে ছটফট করতে থাকলাম...কবে সেরে উঠব!’
ওই সময় কিছু পুকুর বা দিঘিতে মাঝে মাঝে মাছ ধরার টিকিট দেওয়া হতো, কিন্তু ওসব জায়গায় সচরাচর তেমন সুবিধে হতো না। কাজীদার পছন্দ ছিল ধানমন্ডি লেক।
তাঁর মাছ শিকারের বন্ধুদের নিয়ে বলেছিলেন, ‘সে সময় ধানমন্ডি লেকে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, ছেলে-বুড়ো, ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী-পেশাজীবী সব মিলিয়ে আমরা মৎস্যশিকারি ছিলাম তিন শর ওপরে। স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা যে-যার মনপছন্দের মানুষ খুঁজে নিয়ে ছোট ছোট দল গড়ে এক-একটা এলাকা দখল করতাম। আমি গিয়ে জুটেছিলাম স্বর্ণহ্নদয় দুই শিকারি কালা ভাই (গোলাম রশিদ কালা, আচার প্রস্তুতকারক) ও রব ভাই (আবদুর রব, রঙের কনট্রাক্টর)—এঁদের গ্রুপে। এই গ্রুপে একে একে এসে জুটেছিলেন শামসু ভাই (জনকণ্ঠ পত্রিকার সিনিয়র সহকারী সম্পাদক এ টি এম শামসুদ্দীন), সোশোলজিতে মাস্টার্স লুডু খান (গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক), ইসহাক ভাই (মোজাইকের ঠিকাদার), মোসলেম ভাই (পিঁপড়ার ডিম ও মাছের চার বিক্রেতা), শফি সাহেব (ঠিকাদার), মোবারক ভাই (বাচ্চাদের রাবারের বল তৈরি করে পাইকারি বেচতেন চকবাজারে) ...এরকম আরও বেশ কয়েকজন। মাছ ধরার পাশাপাশি লেকের ধারে বসে চা-নাশতার ফাঁকে হাসি-তামাশা-গল্প চলত আমাদের হাজারো বিষয়ে। গল্পের টানে পুব পাড় থেকে প্রায়ই আমাদের পশ্চিমে চলে আসতেন একজন কোটিপতি মৎস্যশিকারি, তোপখানা রোডের ক্রিসেন্ট কোম্পানির মালিক খলিলুর রহমান। আমি নানাভাই বলতাম, তিনিও আমাকে তা-ই ডাকতেন; আমেরিকা থেকে আমার জন্য একটা মাল্টিপ্লাইং হুইল আর রিডিং ল্যাম্প এনে উপহার দিয়েছিলেন। আর আসতেন নিতাইদা, ঢাকা বেতারের ক্ল্যাসিক্যাল কণ্ঠশিল্পী নিতাই রায়, বড় সজ্জন ছিলেন ভদ্রলোক। রোজ এসে হাজির হতেন শিকারি নন এমন অনেকেও। তাঁদেরই একজন ছিলেন ঢাকা রাইফেল ক্লাবের এয়ার পিস্তল শুটার শারফুদ্দীন টিপু।’
‘আমাদের ছোট্ট গ্রুপের বাইরেও আরও কয়েকজনের কথা না বললেই নয়। তাদের একজন হচ্ছে শাহনেওয়াজ ভুঁইয়া দি গ্রেট, এত বড় মৎস্যশিকারি আমি আর দেখিনি। ওর মতো বড় মাপের শিকারি যেকোনো দেশেই দুর্লভ...নিত্যনতুন টেকনিক তার, সেই সঙ্গে ইমপ্রোভাইজেশন। কোথাও শিকারে গিয়ে কেউ যদি একটা মাছও না পায়, দেখা যাবে ও ধরে বসে আছে বড়সড় পাঁচ-ছয়টা রুই-কাতলা।
আমার হাতে বিদঘুটে আকৃতির স্পিনিং রিল দেখে যে সময় সবাই হাসাহাসি করত, ডিম বিক্রেতা আবদুল মিঞা বলত: ওই ইচার (চিংড়ি মাছের) ঠ্যাংডা হালান দি, আনুয়ার সাপ, বালা হুইল লন। সবাই যখন ছ্যা-ছ্যা করছে, তখন একদিন শাহনেওয়াজ এসে বলল: আনোয়ার ভাই, আপনার এই স্পিনিং হুইল দিয়ে কী করে বেইট থ্রো করতে হয় একটু দেখিয়ে দেবেন? আমি খুশি মনে শিখিয়ে দিলাম। বার কয়েক থ্রো করেই আয়ত্ত করে ফেলল ও কায়দাটা। আর ওরই হাত ধরে গোটা বাংলাদেশে আজ স্পিনিং হুইলের ছড়াছড়ি...মানুষ প্রায় ভুলেই গেছে সেদিনের সেই সিঙ্গেল অ্যাকশন হুইলের কথা...আর একজনের কথা বলব: মোস্তফা সাহেব। প্রথম দিন লেকে গিয়ে তাঁকেই ওস্তাদ ধরেছিলাম। তিনিই কিনিয়ে দিয়েছিলেন ছিপ, বড়শি, কয়েক শ গজ চৌদ্দ পাউন্ডের ভালো জাতের সুতো, আর আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কলকাতার উমাচরণ কর্মকারের তৈরি আদ্যিকালের একটা চার ইঞ্চি বেয়ারিং হুইল।’
কাজীদা বলেছিলেন, নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় মাছটিও শিকার করেছিলেন ধানমন্ডি লেকে। আধা মণের এক-আধ সের বেশি বা কম ছিল ওটা।
শিকারে যেতেন...
বন্যপ্রাণীর প্রতি আমার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। পুরোনো দিনের জঙ্গল আর বন্যপ্রাণীর অবস্থা জানতে শিকারের বই বড় ভরসা। তাই ছোটবেলা থেকেই জিম করবেট, কেনেথ এন্ডারসন কিংবা জন হান্টারের বইয়ের বড় পোকা আমি। তাই যখন শুনলাম মাছ ধরার পাশাপাশি কাজী আনোয়ার হোসেনের শিকারের নেশাও ছিল, তখন এক সাক্ষাৎকারে চেপে ধরলাম।
তখন বলেন, ‘শিকারের নেশা বলতে যা বোঝায়, তা কিন্তু কোনো দিনই পুরোপুরি ছিল না আমার। বাঘটাঘ টানেনি আমাকে। এমনকি রাজহাঁস বা চখা শিকারেও গিয়েছি মাত্র অল্প কয়েকবার। আমার মূল আকর্ষণ ছিল আউটিং। কয়েকজন বন্ধু মিলে শুক্রবারগুলোতে গাড়ি নিয়ে চলে যেতাম যেদিকে খুশি, একেকদিন একেক রাস্তায়। দলের বেশির ভাগই ছিলাম আমরা ধানমন্ডি লেকের মৎস্যশিকারি। আমাদের মধ্যে পাখি শিকারের পাগল ছিল আসলে লুডু খান। আমি ষাটের দশকেই পাখির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। আশির দশকে রব ভাই, কালা ভাই আর আমি ছিলাম জেনুইন মৎস্যশিকারি।...লুডু ভাইয়ের এক নিপাট ভদ্রলোক বন্ধু শারফুদ্দীন টিপুও জুটে গিয়েছিলেন আমাদের সঙ্গে। রব ভাই তো উৎসাহের আতিশয্যে বন্দুক-রাইফেল-পিস্তল কিনে রীতিমতো বন্দুকবাজই বনে গিয়েছিলেন। তবে, প্রতিটা ট্রিপে আমাদের সঙ্গে থাকলেও জীবনে একটি গুলিও ছোড়েননি আমাদের সবার প্রিয় গোলাম রসুল কালা ভাই। টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে যাওয়ার এবং শিকার শেষে সবার মধ্যে পাখি ভাগ করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর।’
কাজীদা বলেন, ‘চলতে চলতেই থেমে রাস্তার দুপাশের ডালে বসা ঘুঘু, হরিয়াল, কবুতর বা বক মারতাম আমরা পয়েন্ট টুটু রাইফেল দিয়ে। তার আগে অবশ্য থাকত একটা প্রস্তুতিপর্ব: ছুটির আগের দিন রাইফেল নিয়ে গুলশানের শুটিং রেঞ্জে গিয়ে নিখুঁতভাবে রাইফেলগুলো জিরো করে রাখা একটা বড় কাজ ছিল। একমাত্র তাহলেই নিশ্চিত হওয়া যেত যেদিকে তাক করেছি, গুলিটা সেই জায়গায় গিয়ে লাগবে। সবাই আমরা সিঙ্গাপুর থেকে দামি টেলিস্কোপ আনিয়ে ফিট করে নিয়েছিলাম যার যার পয়েন্ট টুটু রাইফেলে। সারাটা দিন রোদে রোদে টোটো করে ঘুরে, ত্রিশ থেকে পঞ্চাশটা পাখি মারতাম আমরা। দুপুরের খাওয়াটা কোনো গাছের নিচে সেরে নিয়ে ঘণ্টাখানেক চলত গল্পগুজব, বিশ্রাম। তারপর আরও কিছুক্ষণ পাখির পেছনে ঘুরে রাস্তার ধারের কোনো দোকানে বসে চা-নাশতা খেয়ে সন্ধের পর ফিরে আসতাম পাখি নিয়ে। এই ছিল আমাদের শিকার বা আউটিং।’
শেষ দেখা
আমার খুব আফসোস ছিল একটি বিষয়ে। টুকটাক কয়েকটা বই রূপান্তর করা হলেও কাজীদাকে কোনো বই উৎসর্গ করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁকে একটি বই উৎসর্গ করতে পারি। সেবা প্রকাশনী থেকেই শাহনূর ভাই জেমস হিলটনের ‘লস্ট হরাইজন’ বইটি রূপান্তর করেছিলেন। একটু সংক্ষিপ্তভাবে রূপান্তর করা তিব্বতের পটভূমিতে লেখা বইটি খুব টেনেছিল তখন। চার-পাঁচবার পড়া হয়ে গিয়েছিল। পরে ঐতিহ্য থেকে ২০২০ সালে পূর্ণাঙ্গ রূপান্তর করি বইটি। এটি উৎসর্গ (অনুবাদকের উৎসর্গ) করি কাজী আনোয়ার হোসেনকে। বইটি কাজীদাকে দিতে স্ত্রী-মেয়েসহ দেখা করেছিলাম তাঁর সঙ্গে। অনেক গল্পই হয়েছিল তখন। মেয়ে ওয়াফিকাকে কোলে নিয়ে বইটার একটু অংশ পড়েছিলেনও কাজীদা। তখন অবশ্য কল্পনাও করতে পারিনি তাঁর সঙ্গে এই আমার শেষ দেখা। আফসোস হয়... যদি সেদিন কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে আরেকটু সময় কাটাতে পারতাম।
সিভিতে নাম...
আমার সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে দিতে চাইলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। বললেন, কোনো সমস্যা নেই। আমার সিভিতে তারপর অনেকগুলো দিন রেফারেন্সের জায়গায় এক নম্বরে ছিল কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। তারপর ২০২২-এর ১৯ জানুয়ারি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন কাজীদা। তাঁর নামটা বাদ দিয়ে সিভিটা ঠিক করার সময় মনটা অনেক কেঁদেছিল। এখনো লেখাটা লিখতে গিয়ে বারবার মনে পড়ছে তাঁর কথা... কাজী আনোয়ার হোসেন আপনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মতো পাঠকদের মনে।

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নিয়েছি। আজ কাজীদার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা, সেই সঙ্গে কাজী আনোয়ার হোসেন থেকে জানা তাঁর কিছু বিষয় ভাগাভাগি করছি পাঠকদের সঙ্গে।
বইয়ের জগতে প্রবেশ তাঁর কারণে
ক্লাস ফোরে-ফাইভে পড়ি। আব্বুর স্টিলের আলমারির নিচে গাদাগাদি করে রাখা ছিল অনেক বই। সেবা প্রকাশনী, ভারতীয় নানা লেখকের উপন্যাস আরও কত কী! আব্বুকে বললে চাবি দিয়ে খুলে দিতেন। তারপর নাওয়া-খাওয়া ভুলে হামলে পড়তাম বই নিয়ে। তবে আমাকে টানত সেবা প্রকাশনীর বইগুলোই। মাসুদ রানার বই থাকলেও তখন ওগুলো পড়া বারণ ছিল। তাতে কী! আরও কত্ত বই। ছয় রোমাঞ্চ, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, কুয়াশা সিরিজের বই, জঙ্গল, শিকার-১, শিকার-২, শিকার-৩, রুদ্র প্রয়াগের চিতা, জুলভার্নের নাইজারের বাঁকে, মরু শহর—এমনই সব বই বলা চলে নতুন এক পৃথিবীর সন্ধান দিয়ে দিল আমাকে। আজ এই আধবুড়ো বয়সেও বইয়ের প্রতি আগ্রহ কমেনি একটুও। আর বইয়ের প্রতি আমার এই ভালোবাসার জন্ম, বই পড়ে পাহাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর আগ্রহ সৃষ্টি—এই সবকিছু কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্যই। তিনি না থাকলে যে সেবা প্রকাশনী হতো না। আমারও বই পড়ে অন্য এক জগতে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ মিলত না।
রহস্যমানব
স্কুলে পড়ার সময় সেবার বই পড়ুয়া অনেক বন্ধুবান্ধবও জুটে যায়। আমাদের কাছে সেবার বিভিন্ন বইয়ের চরিত্রগুলোর মতো কাজী আনোয়ার হোসেনও তখন রহস্যঘেরা এক চরিত্র। আমাদের বই পড়ুয়াদের দলে এক বড় ভাই ছিলেন, নোমান ভাই। তিনি মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলতেন, আমরা পুরোপুরি বিশ্বাসও করতে পারতাম না, আবার অবিশ্বাস করতে পারতাম না। একবার যেমন বললেন, মাসুদ রানা সিরিজের বিসিআই (বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স) ঢাকায় সত্যি আছে। আর কাজী আনোয়ার হোসেন বড় একটা পদে আছেন। তবে এটা একেবারেই গোপনীয়! তাই কেউ জানে না। কাজী আনোয়ার হোসেন আমাদের কাছে এমনই এক রহস্যঘেরা মানুষ ছিলেন, আমরা তাঁর এ কথা বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। তখন একবারও মনে হয়নি, এত গোপনীয় বিষয়টি আমাদের চেয়ে কয়েক বছরের বড় নোমান ভাই জানলেন কীভাবে?
দুরু দুরু বুকে
২০০৫-০৬ সালের ঘটনা। রহস্য পত্রিকায় লিখছি নিয়মিত। তবে তখন পর্যন্ত কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা হয়নি। রহস্য পত্রিকার অফিস ২৪/৪ সেগুনবাগিচার দোতলায়। কাজী আনোয়ার হোসেন বসেন তৃতীয় তলায়। আমার দৌড় তখন পর্যন্ত ওই দোতলা পর্যন্ত। সেখানে গিয়ে লেখা জমা দিই। আর হাকিম আংকেল (শেখ আবদুল হাকিম) ও শাহনূর ভাইয়ের (কাজী শাহনূর হোসেন) সঙ্গে গল্প করি, নতুন নতুন লেখার পরিকল্পনা করি। একদিন শাহনূর ভাইকে সাহস করে বললাম, কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে চাই। পরদিন সকালেই ডাক পড়ল। আমার মনে হলো বিসিআই চিফ রাহাত খানের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।
দোতলা থেকে তৃতীয় তলা ওঠার পথে একটি তালা মারা দরজা। দালানের এই পাশ দিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায় যেতে হলে ওই দরজা খুলেই যেতে হয়। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে শেষ পর্যন্ত দুরু দুরু বুকে ঢুকলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায়। আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। বসতে বললেন। শুরুতে কেমন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কাজী আনোয়ার হোসেনের সামনে বসে আছি।
তারপর অনেকবারই গিয়েছি কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে। বেশির ভাগ সময় কোনো না কোনো কাজে। বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারও নিয়েছি তাঁর। তবে ওই প্রথম দিনের অনুভূতি আজও অটুট আমার মনে। এখনো মনে পড়লে কেমন ভয়-রোমাঞ্চের একটি শিহরণ খেলে যায় শরীরে।
সেই ক্যামেরা
পরের বছরের ঘটনা। তখন বনে, পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর নেশা প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে আমার ওপর। সেই সঙ্গে ছবি তোলার আগ্রহ পেয়ে বসেছে। সমস্যা হলো, ভালো ক্যামেরা নেই। একদিন কথায় কথায় শাহনূর ভাইকে বললাম, ক্যামেরা না থাকায় ভালো ছবি তুলতে পারছি না। একটা ক্যামেরা কিনতে হবে।
কয়েক দিন পরের কথা। সেবা প্রকাশনীতে গেলাম আবার। কোনো একটা লেখা নিয়ে কিংবা নিছক আড্ডা দিতে। কতক্ষণ গল্প করার পর চলে আসতে যাব, এমন সময় শাহনূর ভাই বললেন, ‘একটু দাঁড়াও।’ একটু পর ফিরে এলেন। হাতে একটা ব্যাগ। আমাকে চমকে দিয়ে ভেতর থেকে বের করলেন একটি নাইকন ক্যামেরা। বললেন, ‘আব্বাকে বলেছিলাম তোমার ছবি তোলার আগ্রহের কথা। তখন বললেন তাঁর এই ক্যামেরাটা পড়ে আছে। কী অবস্থা এটার জানেন না। চাইলে তুমি এটা নিতে পারো, যদি কোনো কাজে লাগে।’
আমার তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না, কাজীদা আমাকে তাঁর ব্যবহার করা ক্যামেরা দিয়েছেন! তাঁর মনে আমার জন্য আলাদা একটি জায়গা আছে ভেবে খুব ভালো লাগছিল।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই ক্যামেরাটা দিয়ে পরে আর ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। অনেক দিন পড়ে থেকে এটার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সযতনে ক্যামেরাটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। এখন আমার কাছে একটি মোটামুটি ভালো একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে, বাড়তি লেন্সসহ আমেরিকা থেকে আনিয়েছি আমার বোনকে দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে ওই ক্যামেরার থেকেও বেশি প্রিয় কাজীদার দেওয়া সেই পুরোনো ক্যামেরাটি।
পরে ক্যামেরা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে কাজীদার সঙ্গে। এক সাক্ষাৎকারে যেমন আমাকে বলেছিলেন, ‘বহু বছর ধরে ক্যামেরা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, যদিও শিল্প সৃষ্টির তাগিদে নয়। আমি মুহূর্তকে ধরতে চেয়েছি। যেই শাটারে চাপ দিলাম, থমকে দাঁড়িয়ে গেল একটা মুহূর্ত। স্থির হয়ে গেল একটা নাটকের ছোট্ট এক অংশ। যখন খুশি, যতবার খুশি দেখব আমি ওটা। স্মৃতি মলিন হয়ে যায়, কিন্তু ছবি বহু বছর পর্যন্ত জলজ্যান্ত থাকে। ফটোগ্রাফির এই গুণটাই আমাকে আকর্ষণ করেছিল সবচেয়ে বেশি। মাঝে মাঝে এক-আধটা ফটোগ্রাফ দারুণ হয়ে যায়। তখন খুব ভালো লাগে, নিজেকে বিরাট শিল্পী মনে হয়। ছবি তোলার মোটামুটি নিয়মগুলো শেখা থাকলে, দূরত্ব আর আলোছায়ার হিসাব ঠিক থাকলে, সেই সঙ্গে কম্পোজিশন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকলে মাঝারি মানের একটা ছবি নিশ্চিতভাবেই আশা করা যায়। তাই ফটোগ্রাফিকে আমি একান্ত বিশ্বস্ত ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম।
...কত্তো কষ্ট করেছি ফটোগ্রাফির জন্য! অথচ এখন? একদম সোজা। মোবাইল ফোনের কল্যাণে এখন টিপ দিলেই ছবি। অহরহ ইনস্ট্যান্ট ছবি তুলে নিজে দেখা যাচ্ছে, মানুষকে দেখানো যাচ্ছে, ফেসবুকে পোস্ট করা যাচ্ছে। এটা যে কত বিরাট অগ্রগতি, ভাবলে বিশ্বাস হতে চায় না। মনে হয় জাদুমন্ত্র! কোথা থেকে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে এসেছে আজ মানুষ!’
রানা গিয়েছে কত দেশে...কাজীদা?
কাজী আনোয়ার হোসেন তাঁর সৃষ্টি চরিত্রগুলোকে পৃথিবীর অনেক দেশ, দুর্গম সব জায়গায় ঘুরিয়ে এনেছেন। কিন্তু নিজে কি খুব বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন? জানতে চেয়েছিলাম এক সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়। কাজী আনোয়ার হোসেনের উত্তর, ‘না, ভাই। কোথাও না। আমি আর্মচেয়ার ট্রাভেলার। চৌদ্দ-পনেরো বছর বয়সে একবার শুধু বিহারের কয়লা শহর গিরিডিতে গিয়েছিলাম আমার আব্বুর সঙ্গে। স্মৃতি নেই কোনো। শুধু মনে আছে রাতে ঘুমোতে দেওয়া হয়েছিল দোতলার খোলা বারান্দায়; অসংখ্য উজ্জ্বল তারা ছিল আকাশে, আর বেশ দূরের শহর থেকে ভেসে আসছিল মোহাম্মাদ রফির গাওয়া সিনেমার গান: দিল্মে ছুপাকে পেয়ার কা তুফান লে চ্যলে/ হ্যম আজ আপনি মওতকা সামান লে চ্যলে...’
মাছ শিকারে কাজীদার গুরু জিম করবেট
কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কিংবা সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে অনেক মজার সব ঘটনাও জানতে পারতাম। কাজী আনোয়ার হোসেনের মাছ শিকারের বাতিক ছিল। একবার মাছ শিকারের একটা সাক্ষাৎকার নিই। সেখানে কাজীদা বলেন, মাছ ধরায় তাঁর গুরু বিখ্যাত শিকারি ও পরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ জিম করবেট।
‘১৯৭৭ কি ’৭৮ সাল। মশারির নিচে বন্দী হয়েছিলাম তিন সপ্তাহের জন্য। চিকেন পক্স। আমার প্রথম পুত্র স্কুল থেকে বয়ে এনে উপহার দিয়েছিল ওটা আমাকে। আমার সঙ্গেই ঘুমাত ও, নিজে দু-চারটে গোটার ওপর দিয়ে পার পেয়ে গেল, কিন্তু আমার শরীর ছেয়ে গেল পানিভরা ফোসকায়, আধ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা থাকল না কোথাও। লোকজন ভয়ে কাছে আসে না...অবশ্য, আমিই বারণ করেছি। শুয়ে শুয়ে একের পর এক বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে পেয়ে গেলাম জিম করবেটের লেখা সেই বইটা। নাম আজ আর মনে নেই। বাঘ শিকার করতে করতে একবার উত্তর ভারতের চমৎকার এক পাহাড়ি জলাশয় দেখে ছিপ-বড়শি নিয়ে বসে গিয়েছিলেন তিনি মাছ ধরতে। কী অপূর্ব বর্ণনা! কীভাবে ঠোকর দিল মাছ, তিনিও ছিপে মারলেন টান। কেমনভাবে বড়শিতে গাঁথল মাছ, ছুট দিলেন তিরবেগে, পাথরে বাঁধিয়ে সুতো ছেঁড়ার চেষ্টা করল, তিনিই বা কী কায়দায় তাকে মতলব হাসিল করতে না দিয়ে আস্তে আস্তে খেলিয়ে তীরে নিয়ে এসে নেট করলেন। এসবের জলজ্যান্ত, পুঙ্খানুপুঙ্খ, লোভনীয় বর্ণনা পড়ে আমার তো পাগল হবার দশা। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে তাঁকে ১০-১২ কেজি ওজনের কয়েকটা ‘মহাশের’ মাছ মারতে দেখে আমি মশারির নিচে শুয়ে ছটফট করতে থাকলাম...কবে সেরে উঠব!’
ওই সময় কিছু পুকুর বা দিঘিতে মাঝে মাঝে মাছ ধরার টিকিট দেওয়া হতো, কিন্তু ওসব জায়গায় সচরাচর তেমন সুবিধে হতো না। কাজীদার পছন্দ ছিল ধানমন্ডি লেক।
তাঁর মাছ শিকারের বন্ধুদের নিয়ে বলেছিলেন, ‘সে সময় ধানমন্ডি লেকে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, ছেলে-বুড়ো, ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী-পেশাজীবী সব মিলিয়ে আমরা মৎস্যশিকারি ছিলাম তিন শর ওপরে। স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা যে-যার মনপছন্দের মানুষ খুঁজে নিয়ে ছোট ছোট দল গড়ে এক-একটা এলাকা দখল করতাম। আমি গিয়ে জুটেছিলাম স্বর্ণহ্নদয় দুই শিকারি কালা ভাই (গোলাম রশিদ কালা, আচার প্রস্তুতকারক) ও রব ভাই (আবদুর রব, রঙের কনট্রাক্টর)—এঁদের গ্রুপে। এই গ্রুপে একে একে এসে জুটেছিলেন শামসু ভাই (জনকণ্ঠ পত্রিকার সিনিয়র সহকারী সম্পাদক এ টি এম শামসুদ্দীন), সোশোলজিতে মাস্টার্স লুডু খান (গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক), ইসহাক ভাই (মোজাইকের ঠিকাদার), মোসলেম ভাই (পিঁপড়ার ডিম ও মাছের চার বিক্রেতা), শফি সাহেব (ঠিকাদার), মোবারক ভাই (বাচ্চাদের রাবারের বল তৈরি করে পাইকারি বেচতেন চকবাজারে) ...এরকম আরও বেশ কয়েকজন। মাছ ধরার পাশাপাশি লেকের ধারে বসে চা-নাশতার ফাঁকে হাসি-তামাশা-গল্প চলত আমাদের হাজারো বিষয়ে। গল্পের টানে পুব পাড় থেকে প্রায়ই আমাদের পশ্চিমে চলে আসতেন একজন কোটিপতি মৎস্যশিকারি, তোপখানা রোডের ক্রিসেন্ট কোম্পানির মালিক খলিলুর রহমান। আমি নানাভাই বলতাম, তিনিও আমাকে তা-ই ডাকতেন; আমেরিকা থেকে আমার জন্য একটা মাল্টিপ্লাইং হুইল আর রিডিং ল্যাম্প এনে উপহার দিয়েছিলেন। আর আসতেন নিতাইদা, ঢাকা বেতারের ক্ল্যাসিক্যাল কণ্ঠশিল্পী নিতাই রায়, বড় সজ্জন ছিলেন ভদ্রলোক। রোজ এসে হাজির হতেন শিকারি নন এমন অনেকেও। তাঁদেরই একজন ছিলেন ঢাকা রাইফেল ক্লাবের এয়ার পিস্তল শুটার শারফুদ্দীন টিপু।’
‘আমাদের ছোট্ট গ্রুপের বাইরেও আরও কয়েকজনের কথা না বললেই নয়। তাদের একজন হচ্ছে শাহনেওয়াজ ভুঁইয়া দি গ্রেট, এত বড় মৎস্যশিকারি আমি আর দেখিনি। ওর মতো বড় মাপের শিকারি যেকোনো দেশেই দুর্লভ...নিত্যনতুন টেকনিক তার, সেই সঙ্গে ইমপ্রোভাইজেশন। কোথাও শিকারে গিয়ে কেউ যদি একটা মাছও না পায়, দেখা যাবে ও ধরে বসে আছে বড়সড় পাঁচ-ছয়টা রুই-কাতলা।
আমার হাতে বিদঘুটে আকৃতির স্পিনিং রিল দেখে যে সময় সবাই হাসাহাসি করত, ডিম বিক্রেতা আবদুল মিঞা বলত: ওই ইচার (চিংড়ি মাছের) ঠ্যাংডা হালান দি, আনুয়ার সাপ, বালা হুইল লন। সবাই যখন ছ্যা-ছ্যা করছে, তখন একদিন শাহনেওয়াজ এসে বলল: আনোয়ার ভাই, আপনার এই স্পিনিং হুইল দিয়ে কী করে বেইট থ্রো করতে হয় একটু দেখিয়ে দেবেন? আমি খুশি মনে শিখিয়ে দিলাম। বার কয়েক থ্রো করেই আয়ত্ত করে ফেলল ও কায়দাটা। আর ওরই হাত ধরে গোটা বাংলাদেশে আজ স্পিনিং হুইলের ছড়াছড়ি...মানুষ প্রায় ভুলেই গেছে সেদিনের সেই সিঙ্গেল অ্যাকশন হুইলের কথা...আর একজনের কথা বলব: মোস্তফা সাহেব। প্রথম দিন লেকে গিয়ে তাঁকেই ওস্তাদ ধরেছিলাম। তিনিই কিনিয়ে দিয়েছিলেন ছিপ, বড়শি, কয়েক শ গজ চৌদ্দ পাউন্ডের ভালো জাতের সুতো, আর আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কলকাতার উমাচরণ কর্মকারের তৈরি আদ্যিকালের একটা চার ইঞ্চি বেয়ারিং হুইল।’
কাজীদা বলেছিলেন, নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় মাছটিও শিকার করেছিলেন ধানমন্ডি লেকে। আধা মণের এক-আধ সের বেশি বা কম ছিল ওটা।
শিকারে যেতেন...
বন্যপ্রাণীর প্রতি আমার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। পুরোনো দিনের জঙ্গল আর বন্যপ্রাণীর অবস্থা জানতে শিকারের বই বড় ভরসা। তাই ছোটবেলা থেকেই জিম করবেট, কেনেথ এন্ডারসন কিংবা জন হান্টারের বইয়ের বড় পোকা আমি। তাই যখন শুনলাম মাছ ধরার পাশাপাশি কাজী আনোয়ার হোসেনের শিকারের নেশাও ছিল, তখন এক সাক্ষাৎকারে চেপে ধরলাম।
তখন বলেন, ‘শিকারের নেশা বলতে যা বোঝায়, তা কিন্তু কোনো দিনই পুরোপুরি ছিল না আমার। বাঘটাঘ টানেনি আমাকে। এমনকি রাজহাঁস বা চখা শিকারেও গিয়েছি মাত্র অল্প কয়েকবার। আমার মূল আকর্ষণ ছিল আউটিং। কয়েকজন বন্ধু মিলে শুক্রবারগুলোতে গাড়ি নিয়ে চলে যেতাম যেদিকে খুশি, একেকদিন একেক রাস্তায়। দলের বেশির ভাগই ছিলাম আমরা ধানমন্ডি লেকের মৎস্যশিকারি। আমাদের মধ্যে পাখি শিকারের পাগল ছিল আসলে লুডু খান। আমি ষাটের দশকেই পাখির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। আশির দশকে রব ভাই, কালা ভাই আর আমি ছিলাম জেনুইন মৎস্যশিকারি।...লুডু ভাইয়ের এক নিপাট ভদ্রলোক বন্ধু শারফুদ্দীন টিপুও জুটে গিয়েছিলেন আমাদের সঙ্গে। রব ভাই তো উৎসাহের আতিশয্যে বন্দুক-রাইফেল-পিস্তল কিনে রীতিমতো বন্দুকবাজই বনে গিয়েছিলেন। তবে, প্রতিটা ট্রিপে আমাদের সঙ্গে থাকলেও জীবনে একটি গুলিও ছোড়েননি আমাদের সবার প্রিয় গোলাম রসুল কালা ভাই। টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে যাওয়ার এবং শিকার শেষে সবার মধ্যে পাখি ভাগ করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর।’
কাজীদা বলেন, ‘চলতে চলতেই থেমে রাস্তার দুপাশের ডালে বসা ঘুঘু, হরিয়াল, কবুতর বা বক মারতাম আমরা পয়েন্ট টুটু রাইফেল দিয়ে। তার আগে অবশ্য থাকত একটা প্রস্তুতিপর্ব: ছুটির আগের দিন রাইফেল নিয়ে গুলশানের শুটিং রেঞ্জে গিয়ে নিখুঁতভাবে রাইফেলগুলো জিরো করে রাখা একটা বড় কাজ ছিল। একমাত্র তাহলেই নিশ্চিত হওয়া যেত যেদিকে তাক করেছি, গুলিটা সেই জায়গায় গিয়ে লাগবে। সবাই আমরা সিঙ্গাপুর থেকে দামি টেলিস্কোপ আনিয়ে ফিট করে নিয়েছিলাম যার যার পয়েন্ট টুটু রাইফেলে। সারাটা দিন রোদে রোদে টোটো করে ঘুরে, ত্রিশ থেকে পঞ্চাশটা পাখি মারতাম আমরা। দুপুরের খাওয়াটা কোনো গাছের নিচে সেরে নিয়ে ঘণ্টাখানেক চলত গল্পগুজব, বিশ্রাম। তারপর আরও কিছুক্ষণ পাখির পেছনে ঘুরে রাস্তার ধারের কোনো দোকানে বসে চা-নাশতা খেয়ে সন্ধের পর ফিরে আসতাম পাখি নিয়ে। এই ছিল আমাদের শিকার বা আউটিং।’
শেষ দেখা
আমার খুব আফসোস ছিল একটি বিষয়ে। টুকটাক কয়েকটা বই রূপান্তর করা হলেও কাজীদাকে কোনো বই উৎসর্গ করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁকে একটি বই উৎসর্গ করতে পারি। সেবা প্রকাশনী থেকেই শাহনূর ভাই জেমস হিলটনের ‘লস্ট হরাইজন’ বইটি রূপান্তর করেছিলেন। একটু সংক্ষিপ্তভাবে রূপান্তর করা তিব্বতের পটভূমিতে লেখা বইটি খুব টেনেছিল তখন। চার-পাঁচবার পড়া হয়ে গিয়েছিল। পরে ঐতিহ্য থেকে ২০২০ সালে পূর্ণাঙ্গ রূপান্তর করি বইটি। এটি উৎসর্গ (অনুবাদকের উৎসর্গ) করি কাজী আনোয়ার হোসেনকে। বইটি কাজীদাকে দিতে স্ত্রী-মেয়েসহ দেখা করেছিলাম তাঁর সঙ্গে। অনেক গল্পই হয়েছিল তখন। মেয়ে ওয়াফিকাকে কোলে নিয়ে বইটার একটু অংশ পড়েছিলেনও কাজীদা। তখন অবশ্য কল্পনাও করতে পারিনি তাঁর সঙ্গে এই আমার শেষ দেখা। আফসোস হয়... যদি সেদিন কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে আরেকটু সময় কাটাতে পারতাম।
সিভিতে নাম...
আমার সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে দিতে চাইলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। বললেন, কোনো সমস্যা নেই। আমার সিভিতে তারপর অনেকগুলো দিন রেফারেন্সের জায়গায় এক নম্বরে ছিল কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। তারপর ২০২২-এর ১৯ জানুয়ারি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন কাজীদা। তাঁর নামটা বাদ দিয়ে সিভিটা ঠিক করার সময় মনটা অনেক কেঁদেছিল। এখনো লেখাটা লিখতে গিয়ে বারবার মনে পড়ছে তাঁর কথা... কাজী আনোয়ার হোসেন আপনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মতো পাঠকদের মনে।

বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ বা শহর নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোতে শহরের আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেসব গ্রামে আলাদা করে কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই পরিষ্কার রাখার জন্য। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে পরিচ্ছন্ন...
৪ ঘণ্টা আগে
এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির ঋতু হেমন্ত। নীরব আবেগে ঠাসা। শেষ শরতে ছাতিমের গন্ধে হেমন্ত আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের ঘ্রাণ নিয়ে। ধান উৎপাদনের ঋতু বলে একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। বর্ষার শেষের দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে উঠত, আর হেমন্তের অঘ্রানে পেকেও যেত।
৮ ঘণ্টা আগে
আপনার অর্থভাগ্য আজ ‘খুব খারাপ’ ঘোষণা হয়ে গেছে (সূত্রমতে, ঋণগ্রস্ত হতে পারেন)। এর অর্থ, ওয়ালেট আজ আন্তর্জাতিক ছুটি ঘোষণা করেছে এবং পকেটের অবস্থা ম্যালেরিয়া রোগীর মতো—একেবারে রুগ্ণ। আজ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন।
৯ ঘণ্টা আগে
অতিথি আপ্যায়নে পাতে আমিষের এক পদ তুলে না দিলে আপ্যায়ন যেন অপূর্ণ থাকে। রাঁধতে যখন হবে, একটু ভিন্ন স্বাদের আমিষ রেঁধে মন ভরিয়ে দিতে পারেন অতিথির। চেনা আমিষের ভিন্ন পদের রেসিপি...
৯ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ বা শহর নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোতে শহরের আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেসব গ্রামে আলাদা করে কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই পরিষ্কার রাখার জন্য। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। এই গ্রামগুলো শুধু সুন্দর নয়, একই সঙ্গে সামাজিক ও পরিবেশগত সচেতনতার অনন্য উদাহরণ।
পেংলিপুরান, ইন্দোনেশিয়া
বালির ব্যাংলি জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম পরিচ্ছন্ন গ্রাম পেংলিপুরান। এখানে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের বাড়ি, পাথরের রাস্তা, ফুল-বাগানসহ গ্রামীণ পরিবেশ অত্যন্ত যত্নসহকারে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। গ্রামটির প্রতিটি পরিবারের সবাই পরিবেশ বিষয়ে সচেতন। তারা বর্জ্য পুনর্ব্যবহার এবং জৈব বর্জ্য সার ব্যবহার করে। সেখানে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ। গ্রামটিতে গাড়ি প্রবেশ নিষিদ্ধ। এর পাশাপাশি পর্যটকের সংখ্যা সীমিত রাখার কারণে সেখানকার পরিবেশ ও শান্তি ঠিক নির্বিঘ্ন আছে। পেংলিপুরান গ্রামের অধিবাসীদের ঐতিহ্যের অংশ পেনজোর ও বান্টেন উৎসব। এসব গ্রামের হোমস্টেগুলোতে থাকলে স্থানীয়দের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া যায়। সুযোগ পাওয়া যায় তাদের সংস্কৃতি ও জীবনধারা দেখার। সব মিলিয়ে পরিচ্ছন্নতা ধরে রাখায় পেংলিপুরান গ্রাম পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
গিয়েথুর্ন, নেদারল্যান্ডস

‘উত্তরের ভেনিস’ বলে খ্যাত নেদারল্যান্ডসের গিয়েথুর্ন গ্রাম। সেখানে পাওয়া যায় না গাড়ির শব্দ, নেই রাস্তাঘাটে ব্যস্ততা। আছে শুধু শান্ত পানিপথ, ফুলে ভরা বাগান আর ছোট ছোট বাড়ি। গ্রামটিতে চলাচলের জন্য পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় নৌকার ওপর। আরেকটি ব্যবস্থা আছে, সেটা হলো হাঁটা। স্থানীয়রা পরিবেশ রক্ষায় বেশ সচেতন। গ্রামটির খালে পানিও থাকে বারো মাস। পুরো গ্রাম ঘুরেও কোনো প্লাস্টিক বর্জ্য চোখে পড়বে না। এ গ্রামের মানুষ প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট না করতে পর্যটকদের অনুরোধ করে থাকে সব সময়। শীতকালে বরফে জমে যাওয়া খালে জমে ওঠে স্থানীয় মানুষদের স্কেটিং। গিয়েথুর্ন যেন আধুনিক সভ্যতার কোলাহলের বাইরে প্রকৃতির কোলে শান্ত জীবনের এক নিদর্শন।
মাওলাইনং, ভারত
এশিয়ার পরিচ্ছন্নতম গ্রাম হিসেবে খ্যাত মাওলাইনং। গ্রামটিতে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হয় এবং ব্যবহার করা হয় বাঁশের ডাস্টবিন। স্থানীয়রা নিয়মিত গ্রামের সবকিছু পরিষ্কার রাখে। গ্রামের প্রতিটি রাস্তা দেখলেই সেখানকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতার কথা উপলব্ধি করা যায়। গ্রামীণ সৌন্দর্যের উপভোগের পাশাপাশি সেখানকার পরিবেশ-সচেতনতা দেখতেও পর্যটকেরা ভিড় জমায় প্রতিবছর।

ইয়ানা, ভারত
দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের আছে ইয়ানা নামের এই গ্রাম। ঘন জঙ্গলের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা কালো চুনাপাথরের বিশাল শিলাখণ্ড ভৈরবেশ্বর ও মহাশক্তি শিখর গ্রামটির প্রধান আকর্ষণ। এখানের বাতাসে ভেসে বেড়ায় আসে বৃষ্টির গন্ধ আর পাখির ডাক। ইয়ানার বাসিন্দারা পরিচ্ছন্নতা ও প্রকৃতি রক্ষায় অত্যন্ত সচেতন। গ্রামটিতে প্লাস্টিক ব্যবহারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পর্যটকদেরও বর্জ্য নিজের সঙ্গে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। স্থানীয়রা পরিবেশবান্ধব পর্যটনকে উৎসাহিত করে, যাতে গ্রামের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিক থাকে। গ্রামজুড়ে হাঁটার পথগুলো ঝকঝকে পরিষ্কার। আশপাশের ঝরনা ও পাহাড়ের দৃশ্য মিলিয়ে ইয়ানা ভ্রমণ বেশ উপভোগ্য অভিজ্ঞতা দেয়।
খোনোমা, ভারত

‘গ্রিন ভিলেজ’ নামে পরিচিত ভারতের নাগাল্যান্ডের খোনোমা গ্রাম। এটি ভারতের প্রথম পরিবেশবান্ধব গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। পাহাড় ঘেরা এই গ্রামের জনগণ একসময় শিকারনির্ভর জীবনে অভ্যস্ত ছিল। এখন গ্রামজুড়ে পরিষ্কার রাস্তা, কাঠের ছাদের ঐতিহ্যবাহী ঘর আর সবুজ ধানখেত মিলে তৈরি করেছে পোস্টকার্ডের মতো দৃশ্য। গ্রামটির মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে বসবাস করে, তারা অতিথিপরায়ণ এবং নিজেদের সংস্কৃতি গর্বের সঙ্গে তুলে ধরে।
এই গ্রামগুলো শুধু ভ্রমণের জন্যই পরিচিতি পায়নি। এসব গ্রাম আমাদের শিখিয়েছে, আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শুধু সরকারের নির্দেশ থাকলেই হয় না। কমিউনিটি উদ্যোগ, সচেতনতা ও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে পরিবেশ ও জীবনধারা পরিচ্ছন্ন তো বটেই, উন্নত করাও সম্ভব।
সূত্র: ট্রিপ অ্যাডভাইজার, ফোর্বস, ইন্ডিয়া ট্রাভেল

বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ বা শহর নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোতে শহরের আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেসব গ্রামে আলাদা করে কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই পরিষ্কার রাখার জন্য। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। এই গ্রামগুলো শুধু সুন্দর নয়, একই সঙ্গে সামাজিক ও পরিবেশগত সচেতনতার অনন্য উদাহরণ।
পেংলিপুরান, ইন্দোনেশিয়া
বালির ব্যাংলি জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম পরিচ্ছন্ন গ্রাম পেংলিপুরান। এখানে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের বাড়ি, পাথরের রাস্তা, ফুল-বাগানসহ গ্রামীণ পরিবেশ অত্যন্ত যত্নসহকারে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। গ্রামটির প্রতিটি পরিবারের সবাই পরিবেশ বিষয়ে সচেতন। তারা বর্জ্য পুনর্ব্যবহার এবং জৈব বর্জ্য সার ব্যবহার করে। সেখানে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ। গ্রামটিতে গাড়ি প্রবেশ নিষিদ্ধ। এর পাশাপাশি পর্যটকের সংখ্যা সীমিত রাখার কারণে সেখানকার পরিবেশ ও শান্তি ঠিক নির্বিঘ্ন আছে। পেংলিপুরান গ্রামের অধিবাসীদের ঐতিহ্যের অংশ পেনজোর ও বান্টেন উৎসব। এসব গ্রামের হোমস্টেগুলোতে থাকলে স্থানীয়দের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া যায়। সুযোগ পাওয়া যায় তাদের সংস্কৃতি ও জীবনধারা দেখার। সব মিলিয়ে পরিচ্ছন্নতা ধরে রাখায় পেংলিপুরান গ্রাম পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
গিয়েথুর্ন, নেদারল্যান্ডস

‘উত্তরের ভেনিস’ বলে খ্যাত নেদারল্যান্ডসের গিয়েথুর্ন গ্রাম। সেখানে পাওয়া যায় না গাড়ির শব্দ, নেই রাস্তাঘাটে ব্যস্ততা। আছে শুধু শান্ত পানিপথ, ফুলে ভরা বাগান আর ছোট ছোট বাড়ি। গ্রামটিতে চলাচলের জন্য পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় নৌকার ওপর। আরেকটি ব্যবস্থা আছে, সেটা হলো হাঁটা। স্থানীয়রা পরিবেশ রক্ষায় বেশ সচেতন। গ্রামটির খালে পানিও থাকে বারো মাস। পুরো গ্রাম ঘুরেও কোনো প্লাস্টিক বর্জ্য চোখে পড়বে না। এ গ্রামের মানুষ প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট না করতে পর্যটকদের অনুরোধ করে থাকে সব সময়। শীতকালে বরফে জমে যাওয়া খালে জমে ওঠে স্থানীয় মানুষদের স্কেটিং। গিয়েথুর্ন যেন আধুনিক সভ্যতার কোলাহলের বাইরে প্রকৃতির কোলে শান্ত জীবনের এক নিদর্শন।
মাওলাইনং, ভারত
এশিয়ার পরিচ্ছন্নতম গ্রাম হিসেবে খ্যাত মাওলাইনং। গ্রামটিতে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হয় এবং ব্যবহার করা হয় বাঁশের ডাস্টবিন। স্থানীয়রা নিয়মিত গ্রামের সবকিছু পরিষ্কার রাখে। গ্রামের প্রতিটি রাস্তা দেখলেই সেখানকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতার কথা উপলব্ধি করা যায়। গ্রামীণ সৌন্দর্যের উপভোগের পাশাপাশি সেখানকার পরিবেশ-সচেতনতা দেখতেও পর্যটকেরা ভিড় জমায় প্রতিবছর।

ইয়ানা, ভারত
দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের আছে ইয়ানা নামের এই গ্রাম। ঘন জঙ্গলের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা কালো চুনাপাথরের বিশাল শিলাখণ্ড ভৈরবেশ্বর ও মহাশক্তি শিখর গ্রামটির প্রধান আকর্ষণ। এখানের বাতাসে ভেসে বেড়ায় আসে বৃষ্টির গন্ধ আর পাখির ডাক। ইয়ানার বাসিন্দারা পরিচ্ছন্নতা ও প্রকৃতি রক্ষায় অত্যন্ত সচেতন। গ্রামটিতে প্লাস্টিক ব্যবহারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পর্যটকদেরও বর্জ্য নিজের সঙ্গে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। স্থানীয়রা পরিবেশবান্ধব পর্যটনকে উৎসাহিত করে, যাতে গ্রামের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিক থাকে। গ্রামজুড়ে হাঁটার পথগুলো ঝকঝকে পরিষ্কার। আশপাশের ঝরনা ও পাহাড়ের দৃশ্য মিলিয়ে ইয়ানা ভ্রমণ বেশ উপভোগ্য অভিজ্ঞতা দেয়।
খোনোমা, ভারত

‘গ্রিন ভিলেজ’ নামে পরিচিত ভারতের নাগাল্যান্ডের খোনোমা গ্রাম। এটি ভারতের প্রথম পরিবেশবান্ধব গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। পাহাড় ঘেরা এই গ্রামের জনগণ একসময় শিকারনির্ভর জীবনে অভ্যস্ত ছিল। এখন গ্রামজুড়ে পরিষ্কার রাস্তা, কাঠের ছাদের ঐতিহ্যবাহী ঘর আর সবুজ ধানখেত মিলে তৈরি করেছে পোস্টকার্ডের মতো দৃশ্য। গ্রামটির মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে বসবাস করে, তারা অতিথিপরায়ণ এবং নিজেদের সংস্কৃতি গর্বের সঙ্গে তুলে ধরে।
এই গ্রামগুলো শুধু ভ্রমণের জন্যই পরিচিতি পায়নি। এসব গ্রাম আমাদের শিখিয়েছে, আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শুধু সরকারের নির্দেশ থাকলেই হয় না। কমিউনিটি উদ্যোগ, সচেতনতা ও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে পরিবেশ ও জীবনধারা পরিচ্ছন্ন তো বটেই, উন্নত করাও সম্ভব।
সূত্র: ট্রিপ অ্যাডভাইজার, ফোর্বস, ইন্ডিয়া ট্রাভেল

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নি
১৯ জানুয়ারি ২০২৩
এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির ঋতু হেমন্ত। নীরব আবেগে ঠাসা। শেষ শরতে ছাতিমের গন্ধে হেমন্ত আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের ঘ্রাণ নিয়ে। ধান উৎপাদনের ঋতু বলে একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। বর্ষার শেষের দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে উঠত, আর হেমন্তের অঘ্রানে পেকেও যেত।
৮ ঘণ্টা আগে
আপনার অর্থভাগ্য আজ ‘খুব খারাপ’ ঘোষণা হয়ে গেছে (সূত্রমতে, ঋণগ্রস্ত হতে পারেন)। এর অর্থ, ওয়ালেট আজ আন্তর্জাতিক ছুটি ঘোষণা করেছে এবং পকেটের অবস্থা ম্যালেরিয়া রোগীর মতো—একেবারে রুগ্ণ। আজ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন।
৯ ঘণ্টা আগে
অতিথি আপ্যায়নে পাতে আমিষের এক পদ তুলে না দিলে আপ্যায়ন যেন অপূর্ণ থাকে। রাঁধতে যখন হবে, একটু ভিন্ন স্বাদের আমিষ রেঁধে মন ভরিয়ে দিতে পারেন অতিথির। চেনা আমিষের ভিন্ন পদের রেসিপি...
৯ ঘণ্টা আগেছন্দা ব্যানার্জি

এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির ঋতু হেমন্ত। নীরব আবেগে ঠাসা। শেষ শরতে ছাতিমের গন্ধে হেমন্ত আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের ঘ্রাণ নিয়ে। ধান উৎপাদনের ঋতু বলে একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। বর্ষার শেষের দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে উঠত, আর হেমন্তের অঘ্রানে পেকেও যেত। এই রূপ শুধু প্রকৃতিতেই নয়, বাঙালির খাবারের ঐতিহ্যেও ফুটে উঠেছে।
হেমন্তের খাবার বাঙালির কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। এই সময় নতুন ফসলের আমেজ নিয়ে আসে নতুন স্বাদ ও গন্ধ। নতুন চালের ভাত বাঙালির কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। এখন যে সবজির ফলন হয়, ফুল ফোটে, ফল হয়, তা দুই বাংলার মানুষের বিশেষ আকর্ষণ আর ঐতিহ্যেরও বটে।
বাংলায় হেমন্তের খাদ্য উৎসব শুরু হয় আশ্বিনের সংক্রান্তি থেকে। কথায় আছে, আশ্বিনে রাঁধে কার্তিকে খায়। কেউ কেউ বলেন ডাকসংক্রান্তি, আবার কেউ নলসংক্রান্তি। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে রাঢ়বঙ্গের দেশঘরে, ব্রত আর পার্বণের দিন শুরু হয় সে সময় থেকে। কৃষিজীবন আর অ-কৃষিজাত শাকসবজি, আনাজের কাছে ফিরে যাওয়ার দিন শুরু হয়। প্রায় হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাসের মধ্যে ভেসে ওঠে খানিকটা খড়কুটোর মতো—গাডুর ডাল, সজলান্ন কিংবা ব্রতের ভাত।
গোলাভরা আউশের আশ্বাস আর খেতভরা আমনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে গর্ভিণী ধানের সাধভক্ষণ—নলসংক্রান্তি। এই ধান্য লক্ষ্মীর পূজা আসলে পৃথিবীর কাছে ফিরে যাওয়ার দিন। গ্রাম-বাংলার অ-কৃষিজাত কন্দমূল ও গাছগাছালিকে চিনে নেওয়ার সময়ও হেমন্তকাল। বাংলাদেশে কত রকমের যে কচু ছিল, সেই সব দিয়ে, শালুকের গোড়া, মটর বা খেসারির ডাল দিয়ে যে গাডুর ডাল রান্না হয়, সেই ডালকে মানুষ বলে ‘আসমবারি’।
এই হেমন্তের শুরুতে আসে ধন্বন্তরি বা অশ্বিনী দেবের পূজা। এদের ডাকপুরুষও বলে। সেই পূজার উপোস ভাঙতে এই ডাল আর ব্রতের ভাত খাওয়া হয়। ব্রতের ভাত রান্না হয় শ্যামা চালে। রেসিপি আলাদা। এই ভাতের সঙ্গে ডাল, নারকেল, পাকা কলা, গুড়, গ্রাম-বাংলার চালের পিঠা সব দেবতাকে নিবেদন করে তারপর খাওয়া হয়। আসলে হেমন্ত ঋতুতে এই পূজাগুলো আমাদের শেখায়, কোন শস্য কখন খেতে হয়, কোন শস্য বিষাক্ত কোন সময়ে।
হেমন্ত ঋতুতে ফসল কাটাকে কেন্দ্র করে নবান্ন উৎসব হয়। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব এই নবান্ন। নতুন আমন ধান কাটার পর তা থেকে চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব এটি। কাঁচা দুধ, ছোট-বড় ছোলা, মটর, গোটা মটর, গোটা সবুজ মুগসহ ভেজানো ডালজাতীয় সব শস্যদানা, কামরাঙা, পানিফল, পেয়ারা, কমলালেবু, নারকেল ইত্যাদি হেমন্তে উৎপাদিত নানান ফলের টুকরা আর আমন ধান থেকে হওয়া নতুন চাল দিয়ে নবান্ন উৎসব হয়।
বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ফসল তোলার পরের দিনেই নতুন চালের পায়েস, ক্ষীর, পিঠা আত্মীয়স্বজন এবং পড়শিদের ঘরে ঘরে বিতরণ করা হয়। হেমন্ত ঋতুর শুরুতে খেজুর ও তালগাছের রস গ্রাম-বাংলার অত্যন্ত প্রিয় পানীয়। ভোরে সূর্যের তেজ বাড়ার আগেই তা করতে হয় এই পানীয়। এই রস জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় খেজুর বা তালের গুড়।
হেমন্তে নতুন চাল থেকে তৈরি হয় খই। নতুন গুড় ও খই তৈরি হয় মোয়া, খেজুরের নতুন গুড়ের পায়েস, ক্ষীর, পিঠের আয়োজনে উৎসব শুরু হয়ে যায় পৌষ পার্বণের আগেই। এ ছাড়া হেমন্তকালের শুরুতে নদী, নালা, পুকুর, খাল, বিল—এসবের জল শুকিয়ে যেতে শুরু করে। এই সময় অন্যান্য পরিচিত মাছের সঙ্গে পুঁটি, চাঁদা, খলসে, গেঁড়ি গুগলি এবং কাঁকড়া পাওয়া যায় প্রচুর। তাই সাধারণ বাঙালি ঘরে এসব দিয়ে রান্না করা হয় বিভিন্ন পদ। এসব খাবার শরীরে পুষ্টি ও প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করে পুরো বছরের জন্য।
এই সবকিছু মিলিয়ে হেমন্তের সুঘ্রাণ দুই বাংলায় ছড়িয়ে থাকে।
ছন্দা ব্যানার্জি, রন্ধনশিল্পী ও খাদ্যবিষয়ক লেখক

এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির ঋতু হেমন্ত। নীরব আবেগে ঠাসা। শেষ শরতে ছাতিমের গন্ধে হেমন্ত আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের ঘ্রাণ নিয়ে। ধান উৎপাদনের ঋতু বলে একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। বর্ষার শেষের দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে উঠত, আর হেমন্তের অঘ্রানে পেকেও যেত। এই রূপ শুধু প্রকৃতিতেই নয়, বাঙালির খাবারের ঐতিহ্যেও ফুটে উঠেছে।
হেমন্তের খাবার বাঙালির কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। এই সময় নতুন ফসলের আমেজ নিয়ে আসে নতুন স্বাদ ও গন্ধ। নতুন চালের ভাত বাঙালির কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। এখন যে সবজির ফলন হয়, ফুল ফোটে, ফল হয়, তা দুই বাংলার মানুষের বিশেষ আকর্ষণ আর ঐতিহ্যেরও বটে।
বাংলায় হেমন্তের খাদ্য উৎসব শুরু হয় আশ্বিনের সংক্রান্তি থেকে। কথায় আছে, আশ্বিনে রাঁধে কার্তিকে খায়। কেউ কেউ বলেন ডাকসংক্রান্তি, আবার কেউ নলসংক্রান্তি। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে রাঢ়বঙ্গের দেশঘরে, ব্রত আর পার্বণের দিন শুরু হয় সে সময় থেকে। কৃষিজীবন আর অ-কৃষিজাত শাকসবজি, আনাজের কাছে ফিরে যাওয়ার দিন শুরু হয়। প্রায় হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাসের মধ্যে ভেসে ওঠে খানিকটা খড়কুটোর মতো—গাডুর ডাল, সজলান্ন কিংবা ব্রতের ভাত।
গোলাভরা আউশের আশ্বাস আর খেতভরা আমনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে গর্ভিণী ধানের সাধভক্ষণ—নলসংক্রান্তি। এই ধান্য লক্ষ্মীর পূজা আসলে পৃথিবীর কাছে ফিরে যাওয়ার দিন। গ্রাম-বাংলার অ-কৃষিজাত কন্দমূল ও গাছগাছালিকে চিনে নেওয়ার সময়ও হেমন্তকাল। বাংলাদেশে কত রকমের যে কচু ছিল, সেই সব দিয়ে, শালুকের গোড়া, মটর বা খেসারির ডাল দিয়ে যে গাডুর ডাল রান্না হয়, সেই ডালকে মানুষ বলে ‘আসমবারি’।
এই হেমন্তের শুরুতে আসে ধন্বন্তরি বা অশ্বিনী দেবের পূজা। এদের ডাকপুরুষও বলে। সেই পূজার উপোস ভাঙতে এই ডাল আর ব্রতের ভাত খাওয়া হয়। ব্রতের ভাত রান্না হয় শ্যামা চালে। রেসিপি আলাদা। এই ভাতের সঙ্গে ডাল, নারকেল, পাকা কলা, গুড়, গ্রাম-বাংলার চালের পিঠা সব দেবতাকে নিবেদন করে তারপর খাওয়া হয়। আসলে হেমন্ত ঋতুতে এই পূজাগুলো আমাদের শেখায়, কোন শস্য কখন খেতে হয়, কোন শস্য বিষাক্ত কোন সময়ে।
হেমন্ত ঋতুতে ফসল কাটাকে কেন্দ্র করে নবান্ন উৎসব হয়। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব এই নবান্ন। নতুন আমন ধান কাটার পর তা থেকে চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব এটি। কাঁচা দুধ, ছোট-বড় ছোলা, মটর, গোটা মটর, গোটা সবুজ মুগসহ ভেজানো ডালজাতীয় সব শস্যদানা, কামরাঙা, পানিফল, পেয়ারা, কমলালেবু, নারকেল ইত্যাদি হেমন্তে উৎপাদিত নানান ফলের টুকরা আর আমন ধান থেকে হওয়া নতুন চাল দিয়ে নবান্ন উৎসব হয়।
বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ফসল তোলার পরের দিনেই নতুন চালের পায়েস, ক্ষীর, পিঠা আত্মীয়স্বজন এবং পড়শিদের ঘরে ঘরে বিতরণ করা হয়। হেমন্ত ঋতুর শুরুতে খেজুর ও তালগাছের রস গ্রাম-বাংলার অত্যন্ত প্রিয় পানীয়। ভোরে সূর্যের তেজ বাড়ার আগেই তা করতে হয় এই পানীয়। এই রস জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় খেজুর বা তালের গুড়।
হেমন্তে নতুন চাল থেকে তৈরি হয় খই। নতুন গুড় ও খই তৈরি হয় মোয়া, খেজুরের নতুন গুড়ের পায়েস, ক্ষীর, পিঠের আয়োজনে উৎসব শুরু হয়ে যায় পৌষ পার্বণের আগেই। এ ছাড়া হেমন্তকালের শুরুতে নদী, নালা, পুকুর, খাল, বিল—এসবের জল শুকিয়ে যেতে শুরু করে। এই সময় অন্যান্য পরিচিত মাছের সঙ্গে পুঁটি, চাঁদা, খলসে, গেঁড়ি গুগলি এবং কাঁকড়া পাওয়া যায় প্রচুর। তাই সাধারণ বাঙালি ঘরে এসব দিয়ে রান্না করা হয় বিভিন্ন পদ। এসব খাবার শরীরে পুষ্টি ও প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করে পুরো বছরের জন্য।
এই সবকিছু মিলিয়ে হেমন্তের সুঘ্রাণ দুই বাংলায় ছড়িয়ে থাকে।
ছন্দা ব্যানার্জি, রন্ধনশিল্পী ও খাদ্যবিষয়ক লেখক

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নি
১৯ জানুয়ারি ২০২৩
বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ বা শহর নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোতে শহরের আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেসব গ্রামে আলাদা করে কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই পরিষ্কার রাখার জন্য। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে পরিচ্ছন্ন...
৪ ঘণ্টা আগে
আপনার অর্থভাগ্য আজ ‘খুব খারাপ’ ঘোষণা হয়ে গেছে (সূত্রমতে, ঋণগ্রস্ত হতে পারেন)। এর অর্থ, ওয়ালেট আজ আন্তর্জাতিক ছুটি ঘোষণা করেছে এবং পকেটের অবস্থা ম্যালেরিয়া রোগীর মতো—একেবারে রুগ্ণ। আজ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন।
৯ ঘণ্টা আগে
অতিথি আপ্যায়নে পাতে আমিষের এক পদ তুলে না দিলে আপ্যায়ন যেন অপূর্ণ থাকে। রাঁধতে যখন হবে, একটু ভিন্ন স্বাদের আমিষ রেঁধে মন ভরিয়ে দিতে পারেন অতিথির। চেনা আমিষের ভিন্ন পদের রেসিপি...
৯ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মেষ
আপনার অর্থভাগ্য আজ ‘খুব খারাপ’ ঘোষণা হয়ে গেছে (সূত্রমতে, ঋণগ্রস্ত হতে পারেন)। এর অর্থ, ওয়ালেট আজ আন্তর্জাতিক ছুটি ঘোষণা করেছে এবং পকেটের অবস্থা ম্যালেরিয়া রোগীর মতো—একেবারে রুগ্ণ। আজ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন। যদি ভাবা সম্ভব না হয়, তবে ভাবুন, ‘হতে পারে এটা আমার জীবনের সেরা কেনাকাটা!’ জ্যোতিষীরা বলছেন, প্রিয়জনের কুকর্মের জন্য বাড়িতে বিবাদ হতে পারে। সম্ভবত আপনার প্রিয়জন লুকিয়ে রাখা চকলেট বা রিমোট কন্ট্রোল চুরি করেছে—এর চেয়ে বড় কুকর্ম আর কী হতে পারে! কেউ যদি ‘বিনিয়োগ করুন, দ্বিগুণ হবে’ বলে, তবে দৌড়ে পালান। দৌড়াতে না পারলে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকুন।
বৃষ
অফিসে কোনো সহকর্মীর সঙ্গে বিবাদ হতে পারে। মনে রাখবেন, বৃষ রাশির জাতক হিসেবে আপনার জেদ বা একগুঁয়েমি ষাঁড়ের মতোই খ্যাত! অফিসের ঝগড়াটা সম্ভবত বড় কোনো বিষয় নিয়ে হবে না—হতে পারে কে এসির তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি কমিয়েছিল, অথবা কে শেষ বিস্কুটটা খেলো। যদি কেউ কোনো ‘অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে অধিক চর্চা’ করতে নিষেধ করে, তবে ধরে নিন সে আপনার নতুন প্রতিভাবান সহকর্মী, যে আপনার কফির বয়াম চুরি করতে পারে। অবসাদ এড়াতে, দুপুরে একটা শর্ট ন্যাপ নিন। যদি বস ধরে ফেলে, বলুন—ধ্যান করছিলাম, নক্ষত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছিলাম। আজ শান্ত থাকুন। যদি খুব রাগ হয়, তবে চেঁচানোর বদলে মনে মনে রবীন্দ্রসংগীত শুনুন।
মিথুন
নতুন প্রকল্পে কাজ শুরুর আগে ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করে নিন। আপনার শত্রু আজ সক্রিয় থাকবে, কিন্তু আর্থিক লাভের সম্ভাবনাও রয়েছে। আপনার ‘নতুন প্রকল্প’ যদি হয় ফ্রিজের পুরোনো খাবার পরিষ্কার করা, তবে সত্যিই ভালোভাবে চিন্তা করুন—গ্যাস মাস্ক লাগবে কি না। বন্ধুরা আজ আপনার সঙ্গে ভালো সময় কাটাবে, কারণ আপনার নতুন আয়ের খবর তারা জেনে গেছে। শত্রু সক্রিয় মানে এই নয় যে কেউ আপনার ক্ষতি করবে; হতে পারে সে শুধু আপনার ফেসবুক পোস্টগুলোতে ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দিয়ে যাবে। এর চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক আর কী আছে! আজ দ্বৈত-চরিত্রটি কাজে লাগান। এক মিথুন কাজ করবে, অন্য মিথুন হিসাব রাখবে।
কর্কট
দাম্পত্য জীবন সুখে কাটবে এবং প্রায় সব কাজই পূর্ণ হবে। তবে কথা বলার সময় সাবধান থাকুন। আপনার দাম্পত্য জীবন সুখে কাটবে কারণ...সম্ভবত সঙ্গী আজ সারা দিন ব্যস্ত থাকবেন এবং রিমোট কন্ট্রোলটির ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য পাবেন। আপনার সব কাজ পূর্ণ হবে, এমনকি সেই কাজটিও—যেটা গত তিন সপ্তাহ ধরে ‘পরে করব’ বলে ফেলে রেখেছিলেন। সাবধানতা অবলম্বন করে কথা বলুন—বিশেষ করে যখন কেউ জিজ্ঞেস করবে, ‘তুমি কি আমার জন্য কিছু কিনেছ?’ মিথ্যা বলা বারণ। যাত্রা শুভ।
সিংহ
পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন। অন্য কারও বিবাদে জড়াবেন না। আয় বাড়বে। আয় বাড়ার সুসংবাদ শুনেছেন, তাই আজ নিজেকে রাজা বা রানির মতো অনুভব করবেন। তবে অন্য কারও বিবাদে জড়াবেন না। কারণ, যেই মুহূর্তে মাঝখানে মধ্যস্থতা করতে যাবেন, সবাই আপনার বিরুদ্ধেই জোট বাঁধবে—সিংহ মশাই, সাবধান! ‘সামাজিক কাজে অংশ নিতে পারেন’ মানে সম্ভবত পাড়ার কোনো জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রচুর খাবার খেতে পারেন। আপনার মনোমুগ্ধকর মনোভাব আজ কাজে লাগান—কিন্তু বিল মেটানোর সময় ভেজা বিড়াল হয়ে থাকুন।
কন্যা
আলস্য করবেন না। অচেনা ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকুন। ব্যবসা সংক্রান্ত কাজ পূর্ণ হবে। গ্রহরা যেন আজ আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে শাসিয়ে গেছে—‘আলস্য নৈব নৈব চ!’ যদি সকালে অ্যালার্ম বাজানোর পরও বিছানায় থাকার চেষ্টা করেন, তবে ধরে নিন, গ্রহদের কাছ থেকে কড়া বার্তা আসবে। অচেনা ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকুন, কারণ আজকের দিনে আপনার সবচেয়ে অচেনা ব্যক্তিটি হতে পারে সেই যিনি নিজেকে ‘ডায়েট চার্ট’ বা ‘ব্যালেন্স শিট’ বলে দাবি করছেন। আলস্য না করে অন্তত একবার টেবিল গুছিয়ে নিন—সেটাই আজ আপনার সবচেয়ে বড় সাফল্য। পরিবারে আনন্দের পরিবেশ থাকবে, কারণ আপনি অবশেষে কাজ শুরু করেছেন!
তুলা
চাকরিজীবীরা সুখবর পাবেন। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। ঝুঁকি নেবেন না। চাকরিজীবীরা সুখবর পাবেন, যেমন—বস অবশেষে আপনার পাঠানো ই-মেলের রিপ্লাই দিয়েছেন। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন, কিন্তু সাবধান—সেটা যেন টিভি দেখার প্রতিযোগিতা না হয়। ‘ঝুঁকি নেবেন না’ মানে হলো, আজ কোনোমতেই সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করবেন না যে তার ওজন বেড়েছে কিনা। নতুন মানুষদের সঙ্গে দেখা হতে পারে, কিন্তু তারা আপনাকে নতুন দায়িত্বের ফাঁদে ফেলতে পারে—তাই হাসি-খুশি থাকুন, কিন্তু নীরব। আনন্দে দিন কাটবে, যদি আপনি মনের ভেতরের বিচারপতিকে আজ ছুটি দিতে পারেন।
বৃশ্চিক
আবেগগত যোগাযোগে আরও ভালো থাকবেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হবে এবং শুভ সংবাদ পাবেন। আজ আবেগগতভাবে এত ভালো থাকবেন যে পথে কুকুর দেখলেও তাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করতে পারে! আপনার ‘শুভ সংবাদ’ সম্ভবত এটাই যে আপনি পুরোনো প্যান্টের পকেটে কিছু টাকা খুঁজে পেয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হবে—যেমন ধরুন, আপনি ইউটিউবের শর্টস দেখা শেষ করে অবশেষে মূল বা লং ভিডিও দেখা শুরু করবেন। অন্যদের আকৃষ্ট করার জন্য কথা বলার সময় সুন্দর থাকুন। তবে সুন্দর কথাগুলো যেন লোন বা ধার চাওয়ার জন্য ব্যবহার না হয়। আর্থিক বিষয়গুলো গতি পাবে, তাই আজই পুরোনো লোনগুলো পরিশোধ করার কথা ভাবুন...যদি পকেটে কিছু থাকে।
ধনু
নিজেকে অস্বস্তিকর ও চাপের মধ্যে অনুভব করতে পারেন। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকুন এবং খাওয়া-দাওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন। আপনি অস্বস্তিকর বোধ করবেন কারণ আপনার মন আপনাকে সারা বিশ্বে ঘোরার জন্য চাপ দিচ্ছে, কিন্তু আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ঘরে বসে নেটফ্লিক্স দেখতে বলছে। ‘খাওয়া-দাওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন’ এই পরামর্শটি আপনার জন্য আজ সম্পূর্ণ হাস্যকর। গ্রহরা কি জানে না যে, পৃথিবীতে এত মুখরোচক খাবার থাকতে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব? নেতিবাচক আবেগ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন, যেমন ধরুন—অন্যের খাবার শেষ হয়ে গেলেও আপনার প্লেটে আরও আছে, এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকুন। ইতিবাচক থাকুন! আজ আপনি যা কিছু খাবেন, সেটাই আপনার জন্য শক্তি—এই সহজ সত্যিটা মেনে নিন।
মকর
লক্ষ্যের ওপর মনোযোগ বজায় থাকবে। কাঙ্ক্ষিত অফার পাবেন এবং কর্মক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। মকর রাশির জাতক হিসেবে আপনার লক্ষ্যের ওপর মনোযোগ বজায় থাকবে—বিশেষ করে, যদি লক্ষ্যটি হয় সময়মতো রাতের খাবার খাওয়া। আর আপনি কাঙ্ক্ষিত অফার পাবেন! সম্ভবত কোনো প্রিয় রেস্টুরেন্টে বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি-এর অফার। কাজের গতি কার্যকর থাকবে, যার ফলে অফিস থেকে সবার আগে বেরোনোর সুযোগ পাবেন। পেশাগত স্বাচ্ছন্দ্য বাড়বে— চেয়ারটা আজ আপনাকে সবচেয়ে বেশি আরাম দেবে। ব্যক্তিগত জীবনে ধৈর্য ও ধর্ম নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে—বিশেষ করে যখন কেউ আপনাকে কাজ শেখাতে আসে।
কুম্ভ
কাজের ব্যস্ততা বাড়তে পারে। স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন এবং পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নিন। কাজের ব্যস্ততা বাড়বে, কারণ সমস্ত কাজ ফেলে রেখে নতুন করে কাজ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আজ যোগব্যায়াম করুন। যদি যোগব্যায়াম করতে আলস্য লাগে, তবে অন্তত ফ্রিজ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করুন, সেটাও একপ্রকার ব্যায়াম। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নিন—কিন্তু তার আগে নিশ্চিত হন যে, তাদের টিভি সিরিয়ালের সময়টা নষ্ট করছেন না। আজকের দিনটি স্বাভাবিক হতে চলেছে, মানে কোনো অলৌকিক ঘটনা না ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। ক্যারিয়ারে রাজনীতির শিকার হওয়া এড়িয়ে চলুন। অর্থাৎ, বসের কানের কাছে কোনো গসিপ করতে যাবেন না।
মীন
প্রেমের জীবনে আজ একটি চমকের সম্মুখীন হতে পারেন। আর্থিক দিক থেকে দিনটি ভালো। শরীরকে বিশ্রাম দিন। প্রেমের জীবনে ‘চমক’ হয়তো এটাই যে, আপনার সঙ্গী আজ নিজেই শেষ চকলেটটি না খেয়ে আপনার জন্য রেখে দিয়েছে। আপনার আর্থিক দিক থেকে দিনটি ভালো, কিন্তু সেটার ব্যবহার করে একটা লটারি না কেটে বরং নিজের জন্য একটা ভালো কফি কিনুন। শরীরকে বিশ্রাম দিন—কিন্তু বিশ্রাম নিতে নিতে যদি ঘুমিয়ে পড়েন, তবে গ্রহরা আপনাকে দোষ দেবে না। কর্মক্ষেত্রের কাজ দ্রুত শেষ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরুন। জ্যোতিষীরা বলছেন, পরিবারের সঙ্গে পার্কে বা সিনেমা দেখতে যেতে পারেন। যদি সিনেমা দেখতে ভালো না লাগে, তবে একাই বারান্দায় বসে প্রকৃতির নাটক দেখতে পারেন! আপনার নেওয়া একটি দৃঢ় পদক্ষেপ আজ ইতিবাচক ফল দেবে। হয়তো অবশেষে জামাকাপড় কাচার কাজটা শুরু করে দিয়েছেন!

মেষ
আপনার অর্থভাগ্য আজ ‘খুব খারাপ’ ঘোষণা হয়ে গেছে (সূত্রমতে, ঋণগ্রস্ত হতে পারেন)। এর অর্থ, ওয়ালেট আজ আন্তর্জাতিক ছুটি ঘোষণা করেছে এবং পকেটের অবস্থা ম্যালেরিয়া রোগীর মতো—একেবারে রুগ্ণ। আজ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন। যদি ভাবা সম্ভব না হয়, তবে ভাবুন, ‘হতে পারে এটা আমার জীবনের সেরা কেনাকাটা!’ জ্যোতিষীরা বলছেন, প্রিয়জনের কুকর্মের জন্য বাড়িতে বিবাদ হতে পারে। সম্ভবত আপনার প্রিয়জন লুকিয়ে রাখা চকলেট বা রিমোট কন্ট্রোল চুরি করেছে—এর চেয়ে বড় কুকর্ম আর কী হতে পারে! কেউ যদি ‘বিনিয়োগ করুন, দ্বিগুণ হবে’ বলে, তবে দৌড়ে পালান। দৌড়াতে না পারলে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকুন।
বৃষ
অফিসে কোনো সহকর্মীর সঙ্গে বিবাদ হতে পারে। মনে রাখবেন, বৃষ রাশির জাতক হিসেবে আপনার জেদ বা একগুঁয়েমি ষাঁড়ের মতোই খ্যাত! অফিসের ঝগড়াটা সম্ভবত বড় কোনো বিষয় নিয়ে হবে না—হতে পারে কে এসির তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি কমিয়েছিল, অথবা কে শেষ বিস্কুটটা খেলো। যদি কেউ কোনো ‘অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে অধিক চর্চা’ করতে নিষেধ করে, তবে ধরে নিন সে আপনার নতুন প্রতিভাবান সহকর্মী, যে আপনার কফির বয়াম চুরি করতে পারে। অবসাদ এড়াতে, দুপুরে একটা শর্ট ন্যাপ নিন। যদি বস ধরে ফেলে, বলুন—ধ্যান করছিলাম, নক্ষত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছিলাম। আজ শান্ত থাকুন। যদি খুব রাগ হয়, তবে চেঁচানোর বদলে মনে মনে রবীন্দ্রসংগীত শুনুন।
মিথুন
নতুন প্রকল্পে কাজ শুরুর আগে ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করে নিন। আপনার শত্রু আজ সক্রিয় থাকবে, কিন্তু আর্থিক লাভের সম্ভাবনাও রয়েছে। আপনার ‘নতুন প্রকল্প’ যদি হয় ফ্রিজের পুরোনো খাবার পরিষ্কার করা, তবে সত্যিই ভালোভাবে চিন্তা করুন—গ্যাস মাস্ক লাগবে কি না। বন্ধুরা আজ আপনার সঙ্গে ভালো সময় কাটাবে, কারণ আপনার নতুন আয়ের খবর তারা জেনে গেছে। শত্রু সক্রিয় মানে এই নয় যে কেউ আপনার ক্ষতি করবে; হতে পারে সে শুধু আপনার ফেসবুক পোস্টগুলোতে ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দিয়ে যাবে। এর চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক আর কী আছে! আজ দ্বৈত-চরিত্রটি কাজে লাগান। এক মিথুন কাজ করবে, অন্য মিথুন হিসাব রাখবে।
কর্কট
দাম্পত্য জীবন সুখে কাটবে এবং প্রায় সব কাজই পূর্ণ হবে। তবে কথা বলার সময় সাবধান থাকুন। আপনার দাম্পত্য জীবন সুখে কাটবে কারণ...সম্ভবত সঙ্গী আজ সারা দিন ব্যস্ত থাকবেন এবং রিমোট কন্ট্রোলটির ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য পাবেন। আপনার সব কাজ পূর্ণ হবে, এমনকি সেই কাজটিও—যেটা গত তিন সপ্তাহ ধরে ‘পরে করব’ বলে ফেলে রেখেছিলেন। সাবধানতা অবলম্বন করে কথা বলুন—বিশেষ করে যখন কেউ জিজ্ঞেস করবে, ‘তুমি কি আমার জন্য কিছু কিনেছ?’ মিথ্যা বলা বারণ। যাত্রা শুভ।
সিংহ
পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন। অন্য কারও বিবাদে জড়াবেন না। আয় বাড়বে। আয় বাড়ার সুসংবাদ শুনেছেন, তাই আজ নিজেকে রাজা বা রানির মতো অনুভব করবেন। তবে অন্য কারও বিবাদে জড়াবেন না। কারণ, যেই মুহূর্তে মাঝখানে মধ্যস্থতা করতে যাবেন, সবাই আপনার বিরুদ্ধেই জোট বাঁধবে—সিংহ মশাই, সাবধান! ‘সামাজিক কাজে অংশ নিতে পারেন’ মানে সম্ভবত পাড়ার কোনো জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রচুর খাবার খেতে পারেন। আপনার মনোমুগ্ধকর মনোভাব আজ কাজে লাগান—কিন্তু বিল মেটানোর সময় ভেজা বিড়াল হয়ে থাকুন।
কন্যা
আলস্য করবেন না। অচেনা ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকুন। ব্যবসা সংক্রান্ত কাজ পূর্ণ হবে। গ্রহরা যেন আজ আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে শাসিয়ে গেছে—‘আলস্য নৈব নৈব চ!’ যদি সকালে অ্যালার্ম বাজানোর পরও বিছানায় থাকার চেষ্টা করেন, তবে ধরে নিন, গ্রহদের কাছ থেকে কড়া বার্তা আসবে। অচেনা ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকুন, কারণ আজকের দিনে আপনার সবচেয়ে অচেনা ব্যক্তিটি হতে পারে সেই যিনি নিজেকে ‘ডায়েট চার্ট’ বা ‘ব্যালেন্স শিট’ বলে দাবি করছেন। আলস্য না করে অন্তত একবার টেবিল গুছিয়ে নিন—সেটাই আজ আপনার সবচেয়ে বড় সাফল্য। পরিবারে আনন্দের পরিবেশ থাকবে, কারণ আপনি অবশেষে কাজ শুরু করেছেন!
তুলা
চাকরিজীবীরা সুখবর পাবেন। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। ঝুঁকি নেবেন না। চাকরিজীবীরা সুখবর পাবেন, যেমন—বস অবশেষে আপনার পাঠানো ই-মেলের রিপ্লাই দিয়েছেন। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন, কিন্তু সাবধান—সেটা যেন টিভি দেখার প্রতিযোগিতা না হয়। ‘ঝুঁকি নেবেন না’ মানে হলো, আজ কোনোমতেই সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করবেন না যে তার ওজন বেড়েছে কিনা। নতুন মানুষদের সঙ্গে দেখা হতে পারে, কিন্তু তারা আপনাকে নতুন দায়িত্বের ফাঁদে ফেলতে পারে—তাই হাসি-খুশি থাকুন, কিন্তু নীরব। আনন্দে দিন কাটবে, যদি আপনি মনের ভেতরের বিচারপতিকে আজ ছুটি দিতে পারেন।
বৃশ্চিক
আবেগগত যোগাযোগে আরও ভালো থাকবেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হবে এবং শুভ সংবাদ পাবেন। আজ আবেগগতভাবে এত ভালো থাকবেন যে পথে কুকুর দেখলেও তাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করতে পারে! আপনার ‘শুভ সংবাদ’ সম্ভবত এটাই যে আপনি পুরোনো প্যান্টের পকেটে কিছু টাকা খুঁজে পেয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হবে—যেমন ধরুন, আপনি ইউটিউবের শর্টস দেখা শেষ করে অবশেষে মূল বা লং ভিডিও দেখা শুরু করবেন। অন্যদের আকৃষ্ট করার জন্য কথা বলার সময় সুন্দর থাকুন। তবে সুন্দর কথাগুলো যেন লোন বা ধার চাওয়ার জন্য ব্যবহার না হয়। আর্থিক বিষয়গুলো গতি পাবে, তাই আজই পুরোনো লোনগুলো পরিশোধ করার কথা ভাবুন...যদি পকেটে কিছু থাকে।
ধনু
নিজেকে অস্বস্তিকর ও চাপের মধ্যে অনুভব করতে পারেন। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকুন এবং খাওয়া-দাওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন। আপনি অস্বস্তিকর বোধ করবেন কারণ আপনার মন আপনাকে সারা বিশ্বে ঘোরার জন্য চাপ দিচ্ছে, কিন্তু আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ঘরে বসে নেটফ্লিক্স দেখতে বলছে। ‘খাওয়া-দাওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন’ এই পরামর্শটি আপনার জন্য আজ সম্পূর্ণ হাস্যকর। গ্রহরা কি জানে না যে, পৃথিবীতে এত মুখরোচক খাবার থাকতে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব? নেতিবাচক আবেগ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন, যেমন ধরুন—অন্যের খাবার শেষ হয়ে গেলেও আপনার প্লেটে আরও আছে, এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকুন। ইতিবাচক থাকুন! আজ আপনি যা কিছু খাবেন, সেটাই আপনার জন্য শক্তি—এই সহজ সত্যিটা মেনে নিন।
মকর
লক্ষ্যের ওপর মনোযোগ বজায় থাকবে। কাঙ্ক্ষিত অফার পাবেন এবং কর্মক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। মকর রাশির জাতক হিসেবে আপনার লক্ষ্যের ওপর মনোযোগ বজায় থাকবে—বিশেষ করে, যদি লক্ষ্যটি হয় সময়মতো রাতের খাবার খাওয়া। আর আপনি কাঙ্ক্ষিত অফার পাবেন! সম্ভবত কোনো প্রিয় রেস্টুরেন্টে বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি-এর অফার। কাজের গতি কার্যকর থাকবে, যার ফলে অফিস থেকে সবার আগে বেরোনোর সুযোগ পাবেন। পেশাগত স্বাচ্ছন্দ্য বাড়বে— চেয়ারটা আজ আপনাকে সবচেয়ে বেশি আরাম দেবে। ব্যক্তিগত জীবনে ধৈর্য ও ধর্ম নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে—বিশেষ করে যখন কেউ আপনাকে কাজ শেখাতে আসে।
কুম্ভ
কাজের ব্যস্ততা বাড়তে পারে। স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন এবং পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নিন। কাজের ব্যস্ততা বাড়বে, কারণ সমস্ত কাজ ফেলে রেখে নতুন করে কাজ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আজ যোগব্যায়াম করুন। যদি যোগব্যায়াম করতে আলস্য লাগে, তবে অন্তত ফ্রিজ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করুন, সেটাও একপ্রকার ব্যায়াম। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নিন—কিন্তু তার আগে নিশ্চিত হন যে, তাদের টিভি সিরিয়ালের সময়টা নষ্ট করছেন না। আজকের দিনটি স্বাভাবিক হতে চলেছে, মানে কোনো অলৌকিক ঘটনা না ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। ক্যারিয়ারে রাজনীতির শিকার হওয়া এড়িয়ে চলুন। অর্থাৎ, বসের কানের কাছে কোনো গসিপ করতে যাবেন না।
মীন
প্রেমের জীবনে আজ একটি চমকের সম্মুখীন হতে পারেন। আর্থিক দিক থেকে দিনটি ভালো। শরীরকে বিশ্রাম দিন। প্রেমের জীবনে ‘চমক’ হয়তো এটাই যে, আপনার সঙ্গী আজ নিজেই শেষ চকলেটটি না খেয়ে আপনার জন্য রেখে দিয়েছে। আপনার আর্থিক দিক থেকে দিনটি ভালো, কিন্তু সেটার ব্যবহার করে একটা লটারি না কেটে বরং নিজের জন্য একটা ভালো কফি কিনুন। শরীরকে বিশ্রাম দিন—কিন্তু বিশ্রাম নিতে নিতে যদি ঘুমিয়ে পড়েন, তবে গ্রহরা আপনাকে দোষ দেবে না। কর্মক্ষেত্রের কাজ দ্রুত শেষ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরুন। জ্যোতিষীরা বলছেন, পরিবারের সঙ্গে পার্কে বা সিনেমা দেখতে যেতে পারেন। যদি সিনেমা দেখতে ভালো না লাগে, তবে একাই বারান্দায় বসে প্রকৃতির নাটক দেখতে পারেন! আপনার নেওয়া একটি দৃঢ় পদক্ষেপ আজ ইতিবাচক ফল দেবে। হয়তো অবশেষে জামাকাপড় কাচার কাজটা শুরু করে দিয়েছেন!

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নি
১৯ জানুয়ারি ২০২৩
বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ বা শহর নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোতে শহরের আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেসব গ্রামে আলাদা করে কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই পরিষ্কার রাখার জন্য। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে পরিচ্ছন্ন...
৪ ঘণ্টা আগে
এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির ঋতু হেমন্ত। নীরব আবেগে ঠাসা। শেষ শরতে ছাতিমের গন্ধে হেমন্ত আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের ঘ্রাণ নিয়ে। ধান উৎপাদনের ঋতু বলে একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। বর্ষার শেষের দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে উঠত, আর হেমন্তের অঘ্রানে পেকেও যেত।
৮ ঘণ্টা আগে
অতিথি আপ্যায়নে পাতে আমিষের এক পদ তুলে না দিলে আপ্যায়ন যেন অপূর্ণ থাকে। রাঁধতে যখন হবে, একটু ভিন্ন স্বাদের আমিষ রেঁধে মন ভরিয়ে দিতে পারেন অতিথির। চেনা আমিষের ভিন্ন পদের রেসিপি...
৯ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

অতিথি আপ্যায়নে পাতে আমিষের এক পদ তুলে না দিলে আপ্যায়ন যেন অপূর্ণ থাকে। রাঁধতে যখন হবে, একটু ভিন্ন স্বাদের আমিষ রেঁধে মন ভরিয়ে দিতে পারেন অতিথির। চেনা আমিষের ভিন্ন পদের রেসিপি ও ছবি দিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
উপকরণ
ইলিশের রিং পিস ৫ থেকে ৬ টুকরা, হলুদগুঁড়া এক চা-চামচ, শুকনা মরিচ ৭ থেকে ৮টি, রসুনের কোয়া ১২ থেকে ১৪টি, সিরকা ৬ থেকে ৭ টেবিল চামচ, সরিষাবাটা ৪ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, সরিষার তেল ৬ থেকে ৭ টেবিল চামচ।
প্রণালি
রিং পিস করা ইলিশ মাছ লবণ মাখিয়ে নেওয়ার পর ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর শুকনা মরিচ, রসুনের কোয়া, সরিষাবাটা, লবণ, হলুদগুঁড়া, সিরকা দিয়ে ব্লেন্ডারে অথবা পাটায় পেস্ট করে নিন। এবার হাঁড়িতে সরিষার তেল দিন। তারপর পেস্ট করা মিশ্রণটি দিয়ে নেড়ে নিন। এরপর লবণ দিয়ে মাখা মাছ দিয়ে এপিঠ-ওপিঠ করে হালকা ভেজে ঢাকনা দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে রান্না করুন ১০ মিনিট। তারপর নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন ইলিশের উল্লাস।

অতিথি আপ্যায়নে পাতে আমিষের এক পদ তুলে না দিলে আপ্যায়ন যেন অপূর্ণ থাকে। রাঁধতে যখন হবে, একটু ভিন্ন স্বাদের আমিষ রেঁধে মন ভরিয়ে দিতে পারেন অতিথির। চেনা আমিষের ভিন্ন পদের রেসিপি ও ছবি দিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
উপকরণ
ইলিশের রিং পিস ৫ থেকে ৬ টুকরা, হলুদগুঁড়া এক চা-চামচ, শুকনা মরিচ ৭ থেকে ৮টি, রসুনের কোয়া ১২ থেকে ১৪টি, সিরকা ৬ থেকে ৭ টেবিল চামচ, সরিষাবাটা ৪ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, সরিষার তেল ৬ থেকে ৭ টেবিল চামচ।
প্রণালি
রিং পিস করা ইলিশ মাছ লবণ মাখিয়ে নেওয়ার পর ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর শুকনা মরিচ, রসুনের কোয়া, সরিষাবাটা, লবণ, হলুদগুঁড়া, সিরকা দিয়ে ব্লেন্ডারে অথবা পাটায় পেস্ট করে নিন। এবার হাঁড়িতে সরিষার তেল দিন। তারপর পেস্ট করা মিশ্রণটি দিয়ে নেড়ে নিন। এরপর লবণ দিয়ে মাখা মাছ দিয়ে এপিঠ-ওপিঠ করে হালকা ভেজে ঢাকনা দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে রান্না করুন ১০ মিনিট। তারপর নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন ইলিশের উল্লাস।

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নি
১৯ জানুয়ারি ২০২৩
বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ বা শহর নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোতে শহরের আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেসব গ্রামে আলাদা করে কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই পরিষ্কার রাখার জন্য। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে পরিচ্ছন্ন...
৪ ঘণ্টা আগে
এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির ঋতু হেমন্ত। নীরব আবেগে ঠাসা। শেষ শরতে ছাতিমের গন্ধে হেমন্ত আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের ঘ্রাণ নিয়ে। ধান উৎপাদনের ঋতু বলে একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। বর্ষার শেষের দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে উঠত, আর হেমন্তের অঘ্রানে পেকেও যেত।
৮ ঘণ্টা আগে
আপনার অর্থভাগ্য আজ ‘খুব খারাপ’ ঘোষণা হয়ে গেছে (সূত্রমতে, ঋণগ্রস্ত হতে পারেন)। এর অর্থ, ওয়ালেট আজ আন্তর্জাতিক ছুটি ঘোষণা করেছে এবং পকেটের অবস্থা ম্যালেরিয়া রোগীর মতো—একেবারে রুগ্ণ। আজ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন।
৯ ঘণ্টা আগে