জাহীদ রেজা নূর

ত্রোৎস্কির কথা বলছিলাম আমরা। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের নায়ক তিনি। এমনিতে আমাদের দেশে ট্রটস্কি নামে পরিচিত। লিয়েভ ত্রোৎস্কি বিয়ে করেছিলেন দুবার। তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দ্বিতীয় স্ত্রী নাতালিয়া সেদোভা তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু জীবনের সন্ধ্যাবেলায় তিনি অন্য নারীর প্রতি আকর্ষিত হয়েছিলেন। এমন বাধভাঙা প্রেমে পড়েছিলেন যে, মনে হচ্ছিল তিনি প্রেমে দিওয়ানা হয়ে গেছেন।
এই প্রেম হয়েছিল ম্যাক্সিকান শিল্পী ফ্রিদা কাহলোর সঙ্গে, যা নিয়ে একটু আগেই আমরা কথা বলছিলাম। তবে ব্যাপারটাকে প্রেম, নাকি একপক্ষীয় ভালোবাসা বলা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কেন এ কথা বলছি, তা বুঝতে পারা যাবে আরেকটু পড়লে।
রুশ ইতিহাসের দিকে আমরা যদি একটু তাকাই, তাহলে দেখব ১৯২৯ সালের দিকে স্তালিন সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বের লড়াইয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আর এই দ্বন্দ্বে লিয়েভ ত্রোৎস্কিকে ছাড়তে হলো সোভিয়েত ইউনিয়ন। ত্রোৎস্কি সোভিয়েত সরকারের সমালোচনা করছিলেন সামনাসামনি, একবারও ভাবেননি, বিপদ ঘনিয়ে আসছে। সোভিয়েত সরকার যে ধীরে ধীরে একনায়কতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে, বিরোধী মত যে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য হয়ে যাচ্ছে, সে কথা বুঝে ওঠার পর দেশ ছাড়া হওয়া ছাড়া আর কোনো পছন্দ তাঁর ছিল না। দ্বিতীয় পথ ছিল একটাই—সরকারি হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া।
শুরুতে দেশ ছাড়ার পর তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন তুরস্কে, এর পর গেলেন ফ্রান্সে, তারপর নরওয়েতে; আর ১৯৩৬ সালে তিনি শিল্পী দিয়েগো রিভেরার কাছ থেকে মেক্সিকো যাওয়ার আমন্ত্রণ পেলেন। সস্ত্রীক। ভালো লাগল ত্রোৎস্কির। স্ত্রীকে নিয়ে চললেন মেক্সিকো।
দিয়েগো রিভেরা যে কমিউনিস্ট ছিলেন, আর ১৯১৭ সালের বিপ্লবের পক্ষে ছিলেন, সেটা কারও অজানা নয়। ত্রোৎস্কির রাজনৈতিক মতবাদের সঙ্গেই ছিল তাঁর সখ্য। ত্রোৎস্কির সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পর ত্রোৎস্কি রিভেরার শিল্পকর্ম সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, ‘এটা সাদাসিধে ছবি নয়। এটি শুধু নিরেট নির্জীব নন্দনতাত্ত্বিক কাজ নয়, এটা জীবন্ত শ্রেণিসংগ্রাম!’
ফ্রিদা কাহলোকে লিয়েভ ত্রোৎস্কি প্রথম দেখেন ১৯৩৭ সালের জানুয়ারি মাসে। কিডনির অসুখে ফ্রিদার স্বামী দিয়েগো রিভেরা তখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মেক্সিকোর বন্দরে তাঁকে গ্রহণ করেছিলেন ফ্রিদা। তাদের বাড়িতেই জায়গা হলো সস্ত্রীক ত্রোৎস্কির। আমরা সবাই জানি, ফ্রিদার শারীরিক গঠনে সমস্যা ছিল, কিন্তু ত্রোৎস্কির চোখে তা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। নিজের আচরণ ও বিচরণে ফ্রিদা যেন গ্রাস করলেন বিপ্লবীকে।
যখনকার কথা বলছি, তখন ত্রোৎস্কির বয়স ৫৮। ফ্রিদার বয়স ২৯। বয়সের এই ব্যবধান যে কথোপকথনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না, সেটা বুঝতে পারছিলেন ত্রোৎস্কি। যেকোনো বিষয়েই ভাব বিনিময় করা যাচ্ছিল ফ্রিদার সঙ্গে। সব বিষয়েই কথা বলার মতো যোগ্যতা রাখেন ফ্রিদা। তাঁদের এই প্রেম শুরু হয়েছিল ছোটখাটো রসিকতার মধ্য দিয়ে। এর পর বইয়ের পাতায় আড়াল করে ছোট ছোট চিরকুট বিনিময় হতে লাগল। কিছুদিনের মধ্যেই ফ্রিদার প্রেমে দিওয়ানা হয়ে গেলেন ত্রোৎস্কি। এমনকি নিজের স্ত্রীর সামনেও এমন কিছু করতে লাগলেন, যা তাঁর স্ত্রী নাতালিয়ার চোখেও পড়ল। চিরকুটে তিনি ফ্রিদাকে উদ্দেশ করে লিখতেন, ‘ও আমার ভালোবাসা’। ত্রোৎস্কি নিজের গভীর অনুভূতির প্রকাশ ঘটাতেন চিরকুটে।
আর ফ্রিদা? ফ্রিদার মন কিন্তু ত্রোৎস্কির জন্য উথাল–পাথাল হয়নি। এই প্রেমের আবেশ কাটাতে খুব বেশি সময় নেননি ফ্রিদা। একজন পুরুষকেই তিনি বিনা শর্তে হৃদয়ে ঠাঁই দিয়েছিলেন, তিনি হলেন স্বামী রিভেরা। বন্ধুদের কাছে ত্রোৎস্কি সম্পর্কে বলেছেন, ‘এই বুড়োর ব্যবহারে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ছি!’
আসলে ফ্রিদা ত্রোৎস্কির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন শুধু স্বামীকে শায়েস্তা করতে। বারবার অন্য নারীর প্রতি স্বামীর আসক্তি, বিশেষ করে ফ্রিদার ছোট বোন ক্রিস্তিনার দিকেও হাত বাড়িয়ে দেওয়া সহ্য করতে পারেননি ফ্রিদা। এ কারণেই এই প্রেম। কোনো কোনো গবেষক বলে থাকেন, ফ্রিদা আসলে কমিউনিজমের প্রেমে পড়েছিলেন, এ কারণেই কমিউনিজমের দিশারি ত্রোৎস্কির দিকে চোখ পড়েছিল তাঁর।
ত্রোৎস্কির জীবনীকার চেরনিয়াভ্স্কি লিখেছেন, ফ্রিদা কখনোই ত্রোৎস্কিকে ভালো বাসেননি। কিন্তু একজন খ্যাতনামা মানুষ হিসেবে পরিচিত ত্রোৎস্কি সম্পর্কে তাঁর ছিল আগ্রহ। দিয়েগোর অসংখ্য পরকীয়ার প্রতিশোধ ছিল ত্রোৎস্কির সঙ্গে ক্ষণিকের এই প্রেম।
দিয়েগো রিভেরা টেরই পাননি যে, তাঁর অগোচরে বেড়ে উঠছে একটা প্রেমকাহিনি। কিন্তু তা ত্রোৎস্কির স্ত্রী নাতালিয়া সেদোভার চোখ এড়ায়নি। যখন ত্রোৎস্কি–ফ্রিদার প্রেম সবার চোখের সামনে এল, তখন দিয়েগো রিভেরা আর ফ্রিদা কাহলোর বাড়ি ছাড়তে হলো ত্রোৎস্কিকে। এর পর নাতালিয়ার সঙ্গে বোঝাপড়ায় বসতে হলো তাঁকে। নাতালিয়া চাইছিলেন বিবাহবিচ্ছেদ। কিন্তু ত্রোৎস্কি তাঁর স্ত্রীকে বারবার বিবাহবিচ্ছেদ না করার জন্য অনুরোধ করতে লাগলেন। ত্রোৎস্কির চিঠি এখনো সংরক্ষণ করা আছে, যেখানে তিনি তাঁর স্ত্রীকে লিখেছেন, ‘এমন কোনো নারীর সঙ্গে নিজের তুলনা কোরো না, আমাদের জীবনে যার মূল্য খুবই কম।’
নাতালিয়া তাঁর স্বামীকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। বিদায়বেলায় ফ্রিদা কাহলো ত্রোৎস্কিকে একটি সেলফ পোট্রেট উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা যে সেই বাড়িতেই ফেলে রেখে আসা হয়েছে, সে কথা না বলে দিলেও চলে।
১৯৩৯ সালে সোভিয়েত নেতা স্তালিন আদেশ দিলেন ত্রোৎস্কিকে শেষ করে দেওয়ার। ত্রোৎস্কির ওপর প্রথম হামলা হলে তিনি সে যাত্রা বেঁচে যান। ১৯৪০ সালের আগস্ট মাসে স্প্যানিশ কমিউনিস্টের গুলিতে গুরুতর আহত হন ত্রোৎস্কি। পরদিন তিনি মারা যান। ত্রোৎস্কির মৃত্যুর কিছুদিন পরই ফ্রিদা কাহলো আর রিভেরোর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। নাতালিয়া সেদোভা–ত্রোৎস্কায়া স্বামীর মৃত্যুর পর আরও বাইশ বছর বেঁচেছিলেন। তাঁর মৃত্যু হয় ১৯৬২ সালে, প্যারিসে। তাঁকে সমাহিত করা হয় মেক্সিকোর কোইওআকানে, স্বামীর পাশেই।
আর ফ্রিদা–রিভেরা? বিবাহবিচ্ছেদের কিছুদিন পর আবারও তাঁরা এক হন। তবে সারাটা জীবনই তারা কাটিয়েছেন দ্বন্দ্ব–সংঘাতময় পরিবেশে।

ত্রোৎস্কির কথা বলছিলাম আমরা। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের নায়ক তিনি। এমনিতে আমাদের দেশে ট্রটস্কি নামে পরিচিত। লিয়েভ ত্রোৎস্কি বিয়ে করেছিলেন দুবার। তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দ্বিতীয় স্ত্রী নাতালিয়া সেদোভা তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু জীবনের সন্ধ্যাবেলায় তিনি অন্য নারীর প্রতি আকর্ষিত হয়েছিলেন। এমন বাধভাঙা প্রেমে পড়েছিলেন যে, মনে হচ্ছিল তিনি প্রেমে দিওয়ানা হয়ে গেছেন।
এই প্রেম হয়েছিল ম্যাক্সিকান শিল্পী ফ্রিদা কাহলোর সঙ্গে, যা নিয়ে একটু আগেই আমরা কথা বলছিলাম। তবে ব্যাপারটাকে প্রেম, নাকি একপক্ষীয় ভালোবাসা বলা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কেন এ কথা বলছি, তা বুঝতে পারা যাবে আরেকটু পড়লে।
রুশ ইতিহাসের দিকে আমরা যদি একটু তাকাই, তাহলে দেখব ১৯২৯ সালের দিকে স্তালিন সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বের লড়াইয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আর এই দ্বন্দ্বে লিয়েভ ত্রোৎস্কিকে ছাড়তে হলো সোভিয়েত ইউনিয়ন। ত্রোৎস্কি সোভিয়েত সরকারের সমালোচনা করছিলেন সামনাসামনি, একবারও ভাবেননি, বিপদ ঘনিয়ে আসছে। সোভিয়েত সরকার যে ধীরে ধীরে একনায়কতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে, বিরোধী মত যে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য হয়ে যাচ্ছে, সে কথা বুঝে ওঠার পর দেশ ছাড়া হওয়া ছাড়া আর কোনো পছন্দ তাঁর ছিল না। দ্বিতীয় পথ ছিল একটাই—সরকারি হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া।
শুরুতে দেশ ছাড়ার পর তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন তুরস্কে, এর পর গেলেন ফ্রান্সে, তারপর নরওয়েতে; আর ১৯৩৬ সালে তিনি শিল্পী দিয়েগো রিভেরার কাছ থেকে মেক্সিকো যাওয়ার আমন্ত্রণ পেলেন। সস্ত্রীক। ভালো লাগল ত্রোৎস্কির। স্ত্রীকে নিয়ে চললেন মেক্সিকো।
দিয়েগো রিভেরা যে কমিউনিস্ট ছিলেন, আর ১৯১৭ সালের বিপ্লবের পক্ষে ছিলেন, সেটা কারও অজানা নয়। ত্রোৎস্কির রাজনৈতিক মতবাদের সঙ্গেই ছিল তাঁর সখ্য। ত্রোৎস্কির সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পর ত্রোৎস্কি রিভেরার শিল্পকর্ম সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, ‘এটা সাদাসিধে ছবি নয়। এটি শুধু নিরেট নির্জীব নন্দনতাত্ত্বিক কাজ নয়, এটা জীবন্ত শ্রেণিসংগ্রাম!’
ফ্রিদা কাহলোকে লিয়েভ ত্রোৎস্কি প্রথম দেখেন ১৯৩৭ সালের জানুয়ারি মাসে। কিডনির অসুখে ফ্রিদার স্বামী দিয়েগো রিভেরা তখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মেক্সিকোর বন্দরে তাঁকে গ্রহণ করেছিলেন ফ্রিদা। তাদের বাড়িতেই জায়গা হলো সস্ত্রীক ত্রোৎস্কির। আমরা সবাই জানি, ফ্রিদার শারীরিক গঠনে সমস্যা ছিল, কিন্তু ত্রোৎস্কির চোখে তা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। নিজের আচরণ ও বিচরণে ফ্রিদা যেন গ্রাস করলেন বিপ্লবীকে।
যখনকার কথা বলছি, তখন ত্রোৎস্কির বয়স ৫৮। ফ্রিদার বয়স ২৯। বয়সের এই ব্যবধান যে কথোপকথনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না, সেটা বুঝতে পারছিলেন ত্রোৎস্কি। যেকোনো বিষয়েই ভাব বিনিময় করা যাচ্ছিল ফ্রিদার সঙ্গে। সব বিষয়েই কথা বলার মতো যোগ্যতা রাখেন ফ্রিদা। তাঁদের এই প্রেম শুরু হয়েছিল ছোটখাটো রসিকতার মধ্য দিয়ে। এর পর বইয়ের পাতায় আড়াল করে ছোট ছোট চিরকুট বিনিময় হতে লাগল। কিছুদিনের মধ্যেই ফ্রিদার প্রেমে দিওয়ানা হয়ে গেলেন ত্রোৎস্কি। এমনকি নিজের স্ত্রীর সামনেও এমন কিছু করতে লাগলেন, যা তাঁর স্ত্রী নাতালিয়ার চোখেও পড়ল। চিরকুটে তিনি ফ্রিদাকে উদ্দেশ করে লিখতেন, ‘ও আমার ভালোবাসা’। ত্রোৎস্কি নিজের গভীর অনুভূতির প্রকাশ ঘটাতেন চিরকুটে।
আর ফ্রিদা? ফ্রিদার মন কিন্তু ত্রোৎস্কির জন্য উথাল–পাথাল হয়নি। এই প্রেমের আবেশ কাটাতে খুব বেশি সময় নেননি ফ্রিদা। একজন পুরুষকেই তিনি বিনা শর্তে হৃদয়ে ঠাঁই দিয়েছিলেন, তিনি হলেন স্বামী রিভেরা। বন্ধুদের কাছে ত্রোৎস্কি সম্পর্কে বলেছেন, ‘এই বুড়োর ব্যবহারে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ছি!’
আসলে ফ্রিদা ত্রোৎস্কির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন শুধু স্বামীকে শায়েস্তা করতে। বারবার অন্য নারীর প্রতি স্বামীর আসক্তি, বিশেষ করে ফ্রিদার ছোট বোন ক্রিস্তিনার দিকেও হাত বাড়িয়ে দেওয়া সহ্য করতে পারেননি ফ্রিদা। এ কারণেই এই প্রেম। কোনো কোনো গবেষক বলে থাকেন, ফ্রিদা আসলে কমিউনিজমের প্রেমে পড়েছিলেন, এ কারণেই কমিউনিজমের দিশারি ত্রোৎস্কির দিকে চোখ পড়েছিল তাঁর।
ত্রোৎস্কির জীবনীকার চেরনিয়াভ্স্কি লিখেছেন, ফ্রিদা কখনোই ত্রোৎস্কিকে ভালো বাসেননি। কিন্তু একজন খ্যাতনামা মানুষ হিসেবে পরিচিত ত্রোৎস্কি সম্পর্কে তাঁর ছিল আগ্রহ। দিয়েগোর অসংখ্য পরকীয়ার প্রতিশোধ ছিল ত্রোৎস্কির সঙ্গে ক্ষণিকের এই প্রেম।
দিয়েগো রিভেরা টেরই পাননি যে, তাঁর অগোচরে বেড়ে উঠছে একটা প্রেমকাহিনি। কিন্তু তা ত্রোৎস্কির স্ত্রী নাতালিয়া সেদোভার চোখ এড়ায়নি। যখন ত্রোৎস্কি–ফ্রিদার প্রেম সবার চোখের সামনে এল, তখন দিয়েগো রিভেরা আর ফ্রিদা কাহলোর বাড়ি ছাড়তে হলো ত্রোৎস্কিকে। এর পর নাতালিয়ার সঙ্গে বোঝাপড়ায় বসতে হলো তাঁকে। নাতালিয়া চাইছিলেন বিবাহবিচ্ছেদ। কিন্তু ত্রোৎস্কি তাঁর স্ত্রীকে বারবার বিবাহবিচ্ছেদ না করার জন্য অনুরোধ করতে লাগলেন। ত্রোৎস্কির চিঠি এখনো সংরক্ষণ করা আছে, যেখানে তিনি তাঁর স্ত্রীকে লিখেছেন, ‘এমন কোনো নারীর সঙ্গে নিজের তুলনা কোরো না, আমাদের জীবনে যার মূল্য খুবই কম।’
নাতালিয়া তাঁর স্বামীকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। বিদায়বেলায় ফ্রিদা কাহলো ত্রোৎস্কিকে একটি সেলফ পোট্রেট উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা যে সেই বাড়িতেই ফেলে রেখে আসা হয়েছে, সে কথা না বলে দিলেও চলে।
১৯৩৯ সালে সোভিয়েত নেতা স্তালিন আদেশ দিলেন ত্রোৎস্কিকে শেষ করে দেওয়ার। ত্রোৎস্কির ওপর প্রথম হামলা হলে তিনি সে যাত্রা বেঁচে যান। ১৯৪০ সালের আগস্ট মাসে স্প্যানিশ কমিউনিস্টের গুলিতে গুরুতর আহত হন ত্রোৎস্কি। পরদিন তিনি মারা যান। ত্রোৎস্কির মৃত্যুর কিছুদিন পরই ফ্রিদা কাহলো আর রিভেরোর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। নাতালিয়া সেদোভা–ত্রোৎস্কায়া স্বামীর মৃত্যুর পর আরও বাইশ বছর বেঁচেছিলেন। তাঁর মৃত্যু হয় ১৯৬২ সালে, প্যারিসে। তাঁকে সমাহিত করা হয় মেক্সিকোর কোইওআকানে, স্বামীর পাশেই।
আর ফ্রিদা–রিভেরা? বিবাহবিচ্ছেদের কিছুদিন পর আবারও তাঁরা এক হন। তবে সারাটা জীবনই তারা কাটিয়েছেন দ্বন্দ্ব–সংঘাতময় পরিবেশে।
জাহীদ রেজা নূর

ত্রোৎস্কির কথা বলছিলাম আমরা। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের নায়ক তিনি। এমনিতে আমাদের দেশে ট্রটস্কি নামে পরিচিত। লিয়েভ ত্রোৎস্কি বিয়ে করেছিলেন দুবার। তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দ্বিতীয় স্ত্রী নাতালিয়া সেদোভা তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু জীবনের সন্ধ্যাবেলায় তিনি অন্য নারীর প্রতি আকর্ষিত হয়েছিলেন। এমন বাধভাঙা প্রেমে পড়েছিলেন যে, মনে হচ্ছিল তিনি প্রেমে দিওয়ানা হয়ে গেছেন।
এই প্রেম হয়েছিল ম্যাক্সিকান শিল্পী ফ্রিদা কাহলোর সঙ্গে, যা নিয়ে একটু আগেই আমরা কথা বলছিলাম। তবে ব্যাপারটাকে প্রেম, নাকি একপক্ষীয় ভালোবাসা বলা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কেন এ কথা বলছি, তা বুঝতে পারা যাবে আরেকটু পড়লে।
রুশ ইতিহাসের দিকে আমরা যদি একটু তাকাই, তাহলে দেখব ১৯২৯ সালের দিকে স্তালিন সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বের লড়াইয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আর এই দ্বন্দ্বে লিয়েভ ত্রোৎস্কিকে ছাড়তে হলো সোভিয়েত ইউনিয়ন। ত্রোৎস্কি সোভিয়েত সরকারের সমালোচনা করছিলেন সামনাসামনি, একবারও ভাবেননি, বিপদ ঘনিয়ে আসছে। সোভিয়েত সরকার যে ধীরে ধীরে একনায়কতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে, বিরোধী মত যে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য হয়ে যাচ্ছে, সে কথা বুঝে ওঠার পর দেশ ছাড়া হওয়া ছাড়া আর কোনো পছন্দ তাঁর ছিল না। দ্বিতীয় পথ ছিল একটাই—সরকারি হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া।
শুরুতে দেশ ছাড়ার পর তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন তুরস্কে, এর পর গেলেন ফ্রান্সে, তারপর নরওয়েতে; আর ১৯৩৬ সালে তিনি শিল্পী দিয়েগো রিভেরার কাছ থেকে মেক্সিকো যাওয়ার আমন্ত্রণ পেলেন। সস্ত্রীক। ভালো লাগল ত্রোৎস্কির। স্ত্রীকে নিয়ে চললেন মেক্সিকো।
দিয়েগো রিভেরা যে কমিউনিস্ট ছিলেন, আর ১৯১৭ সালের বিপ্লবের পক্ষে ছিলেন, সেটা কারও অজানা নয়। ত্রোৎস্কির রাজনৈতিক মতবাদের সঙ্গেই ছিল তাঁর সখ্য। ত্রোৎস্কির সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পর ত্রোৎস্কি রিভেরার শিল্পকর্ম সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, ‘এটা সাদাসিধে ছবি নয়। এটি শুধু নিরেট নির্জীব নন্দনতাত্ত্বিক কাজ নয়, এটা জীবন্ত শ্রেণিসংগ্রাম!’
ফ্রিদা কাহলোকে লিয়েভ ত্রোৎস্কি প্রথম দেখেন ১৯৩৭ সালের জানুয়ারি মাসে। কিডনির অসুখে ফ্রিদার স্বামী দিয়েগো রিভেরা তখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মেক্সিকোর বন্দরে তাঁকে গ্রহণ করেছিলেন ফ্রিদা। তাদের বাড়িতেই জায়গা হলো সস্ত্রীক ত্রোৎস্কির। আমরা সবাই জানি, ফ্রিদার শারীরিক গঠনে সমস্যা ছিল, কিন্তু ত্রোৎস্কির চোখে তা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। নিজের আচরণ ও বিচরণে ফ্রিদা যেন গ্রাস করলেন বিপ্লবীকে।
যখনকার কথা বলছি, তখন ত্রোৎস্কির বয়স ৫৮। ফ্রিদার বয়স ২৯। বয়সের এই ব্যবধান যে কথোপকথনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না, সেটা বুঝতে পারছিলেন ত্রোৎস্কি। যেকোনো বিষয়েই ভাব বিনিময় করা যাচ্ছিল ফ্রিদার সঙ্গে। সব বিষয়েই কথা বলার মতো যোগ্যতা রাখেন ফ্রিদা। তাঁদের এই প্রেম শুরু হয়েছিল ছোটখাটো রসিকতার মধ্য দিয়ে। এর পর বইয়ের পাতায় আড়াল করে ছোট ছোট চিরকুট বিনিময় হতে লাগল। কিছুদিনের মধ্যেই ফ্রিদার প্রেমে দিওয়ানা হয়ে গেলেন ত্রোৎস্কি। এমনকি নিজের স্ত্রীর সামনেও এমন কিছু করতে লাগলেন, যা তাঁর স্ত্রী নাতালিয়ার চোখেও পড়ল। চিরকুটে তিনি ফ্রিদাকে উদ্দেশ করে লিখতেন, ‘ও আমার ভালোবাসা’। ত্রোৎস্কি নিজের গভীর অনুভূতির প্রকাশ ঘটাতেন চিরকুটে।
আর ফ্রিদা? ফ্রিদার মন কিন্তু ত্রোৎস্কির জন্য উথাল–পাথাল হয়নি। এই প্রেমের আবেশ কাটাতে খুব বেশি সময় নেননি ফ্রিদা। একজন পুরুষকেই তিনি বিনা শর্তে হৃদয়ে ঠাঁই দিয়েছিলেন, তিনি হলেন স্বামী রিভেরা। বন্ধুদের কাছে ত্রোৎস্কি সম্পর্কে বলেছেন, ‘এই বুড়োর ব্যবহারে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ছি!’
আসলে ফ্রিদা ত্রোৎস্কির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন শুধু স্বামীকে শায়েস্তা করতে। বারবার অন্য নারীর প্রতি স্বামীর আসক্তি, বিশেষ করে ফ্রিদার ছোট বোন ক্রিস্তিনার দিকেও হাত বাড়িয়ে দেওয়া সহ্য করতে পারেননি ফ্রিদা। এ কারণেই এই প্রেম। কোনো কোনো গবেষক বলে থাকেন, ফ্রিদা আসলে কমিউনিজমের প্রেমে পড়েছিলেন, এ কারণেই কমিউনিজমের দিশারি ত্রোৎস্কির দিকে চোখ পড়েছিল তাঁর।
ত্রোৎস্কির জীবনীকার চেরনিয়াভ্স্কি লিখেছেন, ফ্রিদা কখনোই ত্রোৎস্কিকে ভালো বাসেননি। কিন্তু একজন খ্যাতনামা মানুষ হিসেবে পরিচিত ত্রোৎস্কি সম্পর্কে তাঁর ছিল আগ্রহ। দিয়েগোর অসংখ্য পরকীয়ার প্রতিশোধ ছিল ত্রোৎস্কির সঙ্গে ক্ষণিকের এই প্রেম।
দিয়েগো রিভেরা টেরই পাননি যে, তাঁর অগোচরে বেড়ে উঠছে একটা প্রেমকাহিনি। কিন্তু তা ত্রোৎস্কির স্ত্রী নাতালিয়া সেদোভার চোখ এড়ায়নি। যখন ত্রোৎস্কি–ফ্রিদার প্রেম সবার চোখের সামনে এল, তখন দিয়েগো রিভেরা আর ফ্রিদা কাহলোর বাড়ি ছাড়তে হলো ত্রোৎস্কিকে। এর পর নাতালিয়ার সঙ্গে বোঝাপড়ায় বসতে হলো তাঁকে। নাতালিয়া চাইছিলেন বিবাহবিচ্ছেদ। কিন্তু ত্রোৎস্কি তাঁর স্ত্রীকে বারবার বিবাহবিচ্ছেদ না করার জন্য অনুরোধ করতে লাগলেন। ত্রোৎস্কির চিঠি এখনো সংরক্ষণ করা আছে, যেখানে তিনি তাঁর স্ত্রীকে লিখেছেন, ‘এমন কোনো নারীর সঙ্গে নিজের তুলনা কোরো না, আমাদের জীবনে যার মূল্য খুবই কম।’
নাতালিয়া তাঁর স্বামীকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। বিদায়বেলায় ফ্রিদা কাহলো ত্রোৎস্কিকে একটি সেলফ পোট্রেট উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা যে সেই বাড়িতেই ফেলে রেখে আসা হয়েছে, সে কথা না বলে দিলেও চলে।
১৯৩৯ সালে সোভিয়েত নেতা স্তালিন আদেশ দিলেন ত্রোৎস্কিকে শেষ করে দেওয়ার। ত্রোৎস্কির ওপর প্রথম হামলা হলে তিনি সে যাত্রা বেঁচে যান। ১৯৪০ সালের আগস্ট মাসে স্প্যানিশ কমিউনিস্টের গুলিতে গুরুতর আহত হন ত্রোৎস্কি। পরদিন তিনি মারা যান। ত্রোৎস্কির মৃত্যুর কিছুদিন পরই ফ্রিদা কাহলো আর রিভেরোর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। নাতালিয়া সেদোভা–ত্রোৎস্কায়া স্বামীর মৃত্যুর পর আরও বাইশ বছর বেঁচেছিলেন। তাঁর মৃত্যু হয় ১৯৬২ সালে, প্যারিসে। তাঁকে সমাহিত করা হয় মেক্সিকোর কোইওআকানে, স্বামীর পাশেই।
আর ফ্রিদা–রিভেরা? বিবাহবিচ্ছেদের কিছুদিন পর আবারও তাঁরা এক হন। তবে সারাটা জীবনই তারা কাটিয়েছেন দ্বন্দ্ব–সংঘাতময় পরিবেশে।

ত্রোৎস্কির কথা বলছিলাম আমরা। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের নায়ক তিনি। এমনিতে আমাদের দেশে ট্রটস্কি নামে পরিচিত। লিয়েভ ত্রোৎস্কি বিয়ে করেছিলেন দুবার। তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দ্বিতীয় স্ত্রী নাতালিয়া সেদোভা তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু জীবনের সন্ধ্যাবেলায় তিনি অন্য নারীর প্রতি আকর্ষিত হয়েছিলেন। এমন বাধভাঙা প্রেমে পড়েছিলেন যে, মনে হচ্ছিল তিনি প্রেমে দিওয়ানা হয়ে গেছেন।
এই প্রেম হয়েছিল ম্যাক্সিকান শিল্পী ফ্রিদা কাহলোর সঙ্গে, যা নিয়ে একটু আগেই আমরা কথা বলছিলাম। তবে ব্যাপারটাকে প্রেম, নাকি একপক্ষীয় ভালোবাসা বলা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কেন এ কথা বলছি, তা বুঝতে পারা যাবে আরেকটু পড়লে।
রুশ ইতিহাসের দিকে আমরা যদি একটু তাকাই, তাহলে দেখব ১৯২৯ সালের দিকে স্তালিন সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বের লড়াইয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আর এই দ্বন্দ্বে লিয়েভ ত্রোৎস্কিকে ছাড়তে হলো সোভিয়েত ইউনিয়ন। ত্রোৎস্কি সোভিয়েত সরকারের সমালোচনা করছিলেন সামনাসামনি, একবারও ভাবেননি, বিপদ ঘনিয়ে আসছে। সোভিয়েত সরকার যে ধীরে ধীরে একনায়কতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে, বিরোধী মত যে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য হয়ে যাচ্ছে, সে কথা বুঝে ওঠার পর দেশ ছাড়া হওয়া ছাড়া আর কোনো পছন্দ তাঁর ছিল না। দ্বিতীয় পথ ছিল একটাই—সরকারি হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া।
শুরুতে দেশ ছাড়ার পর তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন তুরস্কে, এর পর গেলেন ফ্রান্সে, তারপর নরওয়েতে; আর ১৯৩৬ সালে তিনি শিল্পী দিয়েগো রিভেরার কাছ থেকে মেক্সিকো যাওয়ার আমন্ত্রণ পেলেন। সস্ত্রীক। ভালো লাগল ত্রোৎস্কির। স্ত্রীকে নিয়ে চললেন মেক্সিকো।
দিয়েগো রিভেরা যে কমিউনিস্ট ছিলেন, আর ১৯১৭ সালের বিপ্লবের পক্ষে ছিলেন, সেটা কারও অজানা নয়। ত্রোৎস্কির রাজনৈতিক মতবাদের সঙ্গেই ছিল তাঁর সখ্য। ত্রোৎস্কির সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পর ত্রোৎস্কি রিভেরার শিল্পকর্ম সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, ‘এটা সাদাসিধে ছবি নয়। এটি শুধু নিরেট নির্জীব নন্দনতাত্ত্বিক কাজ নয়, এটা জীবন্ত শ্রেণিসংগ্রাম!’
ফ্রিদা কাহলোকে লিয়েভ ত্রোৎস্কি প্রথম দেখেন ১৯৩৭ সালের জানুয়ারি মাসে। কিডনির অসুখে ফ্রিদার স্বামী দিয়েগো রিভেরা তখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মেক্সিকোর বন্দরে তাঁকে গ্রহণ করেছিলেন ফ্রিদা। তাদের বাড়িতেই জায়গা হলো সস্ত্রীক ত্রোৎস্কির। আমরা সবাই জানি, ফ্রিদার শারীরিক গঠনে সমস্যা ছিল, কিন্তু ত্রোৎস্কির চোখে তা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। নিজের আচরণ ও বিচরণে ফ্রিদা যেন গ্রাস করলেন বিপ্লবীকে।
যখনকার কথা বলছি, তখন ত্রোৎস্কির বয়স ৫৮। ফ্রিদার বয়স ২৯। বয়সের এই ব্যবধান যে কথোপকথনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না, সেটা বুঝতে পারছিলেন ত্রোৎস্কি। যেকোনো বিষয়েই ভাব বিনিময় করা যাচ্ছিল ফ্রিদার সঙ্গে। সব বিষয়েই কথা বলার মতো যোগ্যতা রাখেন ফ্রিদা। তাঁদের এই প্রেম শুরু হয়েছিল ছোটখাটো রসিকতার মধ্য দিয়ে। এর পর বইয়ের পাতায় আড়াল করে ছোট ছোট চিরকুট বিনিময় হতে লাগল। কিছুদিনের মধ্যেই ফ্রিদার প্রেমে দিওয়ানা হয়ে গেলেন ত্রোৎস্কি। এমনকি নিজের স্ত্রীর সামনেও এমন কিছু করতে লাগলেন, যা তাঁর স্ত্রী নাতালিয়ার চোখেও পড়ল। চিরকুটে তিনি ফ্রিদাকে উদ্দেশ করে লিখতেন, ‘ও আমার ভালোবাসা’। ত্রোৎস্কি নিজের গভীর অনুভূতির প্রকাশ ঘটাতেন চিরকুটে।
আর ফ্রিদা? ফ্রিদার মন কিন্তু ত্রোৎস্কির জন্য উথাল–পাথাল হয়নি। এই প্রেমের আবেশ কাটাতে খুব বেশি সময় নেননি ফ্রিদা। একজন পুরুষকেই তিনি বিনা শর্তে হৃদয়ে ঠাঁই দিয়েছিলেন, তিনি হলেন স্বামী রিভেরা। বন্ধুদের কাছে ত্রোৎস্কি সম্পর্কে বলেছেন, ‘এই বুড়োর ব্যবহারে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ছি!’
আসলে ফ্রিদা ত্রোৎস্কির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন শুধু স্বামীকে শায়েস্তা করতে। বারবার অন্য নারীর প্রতি স্বামীর আসক্তি, বিশেষ করে ফ্রিদার ছোট বোন ক্রিস্তিনার দিকেও হাত বাড়িয়ে দেওয়া সহ্য করতে পারেননি ফ্রিদা। এ কারণেই এই প্রেম। কোনো কোনো গবেষক বলে থাকেন, ফ্রিদা আসলে কমিউনিজমের প্রেমে পড়েছিলেন, এ কারণেই কমিউনিজমের দিশারি ত্রোৎস্কির দিকে চোখ পড়েছিল তাঁর।
ত্রোৎস্কির জীবনীকার চেরনিয়াভ্স্কি লিখেছেন, ফ্রিদা কখনোই ত্রোৎস্কিকে ভালো বাসেননি। কিন্তু একজন খ্যাতনামা মানুষ হিসেবে পরিচিত ত্রোৎস্কি সম্পর্কে তাঁর ছিল আগ্রহ। দিয়েগোর অসংখ্য পরকীয়ার প্রতিশোধ ছিল ত্রোৎস্কির সঙ্গে ক্ষণিকের এই প্রেম।
দিয়েগো রিভেরা টেরই পাননি যে, তাঁর অগোচরে বেড়ে উঠছে একটা প্রেমকাহিনি। কিন্তু তা ত্রোৎস্কির স্ত্রী নাতালিয়া সেদোভার চোখ এড়ায়নি। যখন ত্রোৎস্কি–ফ্রিদার প্রেম সবার চোখের সামনে এল, তখন দিয়েগো রিভেরা আর ফ্রিদা কাহলোর বাড়ি ছাড়তে হলো ত্রোৎস্কিকে। এর পর নাতালিয়ার সঙ্গে বোঝাপড়ায় বসতে হলো তাঁকে। নাতালিয়া চাইছিলেন বিবাহবিচ্ছেদ। কিন্তু ত্রোৎস্কি তাঁর স্ত্রীকে বারবার বিবাহবিচ্ছেদ না করার জন্য অনুরোধ করতে লাগলেন। ত্রোৎস্কির চিঠি এখনো সংরক্ষণ করা আছে, যেখানে তিনি তাঁর স্ত্রীকে লিখেছেন, ‘এমন কোনো নারীর সঙ্গে নিজের তুলনা কোরো না, আমাদের জীবনে যার মূল্য খুবই কম।’
নাতালিয়া তাঁর স্বামীকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। বিদায়বেলায় ফ্রিদা কাহলো ত্রোৎস্কিকে একটি সেলফ পোট্রেট উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা যে সেই বাড়িতেই ফেলে রেখে আসা হয়েছে, সে কথা না বলে দিলেও চলে।
১৯৩৯ সালে সোভিয়েত নেতা স্তালিন আদেশ দিলেন ত্রোৎস্কিকে শেষ করে দেওয়ার। ত্রোৎস্কির ওপর প্রথম হামলা হলে তিনি সে যাত্রা বেঁচে যান। ১৯৪০ সালের আগস্ট মাসে স্প্যানিশ কমিউনিস্টের গুলিতে গুরুতর আহত হন ত্রোৎস্কি। পরদিন তিনি মারা যান। ত্রোৎস্কির মৃত্যুর কিছুদিন পরই ফ্রিদা কাহলো আর রিভেরোর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। নাতালিয়া সেদোভা–ত্রোৎস্কায়া স্বামীর মৃত্যুর পর আরও বাইশ বছর বেঁচেছিলেন। তাঁর মৃত্যু হয় ১৯৬২ সালে, প্যারিসে। তাঁকে সমাহিত করা হয় মেক্সিকোর কোইওআকানে, স্বামীর পাশেই।
আর ফ্রিদা–রিভেরা? বিবাহবিচ্ছেদের কিছুদিন পর আবারও তাঁরা এক হন। তবে সারাটা জীবনই তারা কাটিয়েছেন দ্বন্দ্ব–সংঘাতময় পরিবেশে।

আজ আপনার রাগের তেজ এতটা বাড়বে যে আপনি ভুল করে নিজের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলটাই ডিলিট করে দিতে পারেন। শুধু তা-ই নয়, রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে পড়লে মনে হবে যেন পৃথিবীর সব গাড়ি একজোট হয়ে শুধু আপনার কাজেই বাগড়া দিতে এসেছে। আবেগের বশে আজ ভুলেও অনলাইনে কিছু অর্ডার করবেন না, কারণ আপনি এমন কিছু কিনে ফেলবেন, যা আসলে
১ ঘণ্টা আগে
তুক-অ-দামতুয়া নামটির মাঝেই রয়েছে অদ্ভুত এক রহস্য। তার ওপর এটি একটি ঝরনার নাম। এমনিতেই পাহাড়প্রেমীদের ছোট-বড় যেকোনো ঝরনার প্রতি রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা। সেটা যদি হয় দৈত্যাকার, তাহলে তো কথাই নেই।
১ দিন আগে
গত রোববার ১৯ অক্টোবর, সকাল ৯টা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। নিরাপত্তাপ্রহরীরা ইগল দৃষ্টিতে চারদিকে খেয়াল রাখছেন, পাহারা দিচ্ছেন। বহু স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা সর্বত্র। তার মধ্যেই চুরি হয়ে গেল বিশ্বের এক নম্বর জাদুঘর প্যারিসের লুভর। তখন সকাল ৯টা ৩৭ মিনিট। মাত্র সাত মিনিটে চুরি...
১ দিন আগে
জাপান শিগগির বিদেশি পর্যটকদের জন্য ব্যয়বহুল গন্তব্যে পরিণত হতে পারে। কারণ, প্রায় ৪৮ বছর পর দেশটির সরকার ভিসা ফি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়া জানিয়েছেন, বিস্তারিত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ভিসা ফি বাড়ালে পর্যটনে কী প্রভাব পড়তে পারে, কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখছে। অন্যান্য দেশের ভি
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মেষ
আজ আপনার রাগের তেজ এতটা বাড়বে যে আপনি ভুল করে নিজের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলটাই ডিলিট করে দিতে পারেন। শুধু তা-ই নয়, রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে পড়লে মনে হবে যেন পৃথিবীর সব গাড়ি একজোট হয়ে শুধু আপনার কাজেই বাগড়া দিতে এসেছে। আবেগের বশে আজ ভুলেও অনলাইনে কিছু অর্ডার করবেন না। কারণ, আপনি এমন কিছু কিনে ফেলবেন, যা আসলে আপনার দরকার নেই। প্রেমের ক্ষেত্রেও ‘আমিই ঠিক’ এই মনোভাব ত্যাগ করুন, নইলে আজকের সন্ধ্যাটা সাইলেন্ট ট্রিটমেন্টে কাটবে। আজ আপনার রাগ নয়, আপনার মাউস এবং গাড়ির হর্ন কন্ট্রোল করুন।
বৃষ
আজ সারা দিন আপনার ডায়েট প্ল্যান আপনাকে ৫০ বার ফোন করবে, কিন্তু আপনি প্রতিবারই ফোন কেটে দিয়ে ফ্রিজের দিকে দৌড়াবেন। কাজকর্মে গতি খুবই কম থাকবে। ছুটির দিনেও আজ অফিস থাকলে আপনার বস মনে করবেন আপনি বুঝি ধ্যানে বসেছেন, কিন্তু আসলে আপনি ভাবছেন লাঞ্চে কী খাবেন। বিকেলে টাকাপয়সার একটা ভালো সুযোগ আসতে পারে, তবে সেটা এত ধীরে আসবে যে আপনি সেটাকে উপেক্ষা করে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। শুভ রং: আলুর চিপসের প্যাকেটের রং! আর হ্যাঁ, আজ কারও ধার শোধ করবেন না। কারণ, টাকাটা পকেটে কিছুক্ষণ রেখে নির্ভার অনুভব করাও জরুরি!
মিথুন
আপনার মস্তিষ্ক আজ দুটো চরম বুদ্ধি দেবে: এক, একটি পডকাস্ট শুরু করা; আর দুই, পুরো দিনটি ঘুমিয়ে কাটানো। দুঃখের খবর হলো, দুটোই আপনি করতে পারবেন না। সারা দিন শুধু ‘কী করব, কী করব না’ করে কাটিয়ে দেবেন। কোনো একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনি কমপক্ষে তিনজন বন্ধুকে ফোন করে বিভ্রান্ত হবেন এবং শেষে গিয়ে প্রথম যে আইডিয়া এসেছিল, সেটাই করবেন। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা জমার সম্ভাবনা আছে, কিন্তু কোন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতেই রাত কাবার হয়ে যাবে।
কর্কট
আজ আপনার ওভার থিংকিং ক্ষমতা তুঙ্গে! আপনি এক ঘণ্টা ধরে চিন্তা করবেন যে আপনার ঘরের মানিপ্ল্যান্টটা কেন বিষণ্ন দেখাচ্ছে, কিংবা পাঁচ বছর আগে বলা একটা কথার আসল মানে কী ছিল। কর্মক্ষেত্রে কেউ একটু কড়া কথা বললেই আপনি মনে করবেন, পৃথিবীর সবথেকে খারাপ লোক আপনিই! আবেগের এমন বাড়াবাড়ি হবে যে, আপনি হয়তো দুপুরের খাবারে সামান্য লবণ কম থাকার কারণে কেঁদেও ফেলতে পারেন। সমাধান একটাই: বালিশ জড়িয়ে ধরুন অথবা পছন্দের খাবার খান। পৃথিবীর সব দুঃখ আপনার একার নয়, আর রান্নাতেও সামান্য ভুল হতেই পারে।
সিংহ
আজকে স্পটলাইট আপনার দিকেই। যদি কেউ আপনার নতুন পোশাকটা লক্ষ না করে, তাহলে নাটকীয় ভঙ্গিতে একবার হোঁচট খান বা টেবিলের ওপর উঠে নাচতে শুরু করুন। নিশ্চিত থাকুন, মনোযোগ আপনার দিকে আসবেই! কর্মক্ষেত্রে আপনার ধারণাগুলো খুবই ভালো, কিন্তু সেগুলোকে এমন ভাবে পরিবেশন করবেন যেন আপনি কোনো হলিউড ব্লকবাস্টারের স্ক্রিপ্ট বলছেন। প্রেমের ক্ষেত্রেও আজ সামান্য সমস্যাকে ‘টাইটানিক ডুবছে’ এমন রূপ দেবেন। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত আলো মাঝে মাঝে চোখ ধাঁধিয়ে দেয়!
কন্যা
আপনি আজ রাস্তায় একটি টাইপো খুঁজে পাবেন এবং স্থানীয় পৌরসভার সঙ্গে সারা দিন সেটার বানান সংশোধন নিয়ে ঝগড়া করবেন। শান্ত হোন, মহাবিশ্বও আপনার ওয়ারড্রবের মতোই অগোছালো। আজকের দিনে আপনার স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত উদ্বেগ একটু বাড়বে। সামান্য কাশি হলেই গুগল করে ক্যানসারর বা দুর্লভ রোগের লক্ষণ খুঁজবেন। আর্থিক দিক দিয়ে আপনি খুব হিসাবি, কিন্তু সেই হিসাবের খাতা মেলাতে গিয়ে এত মানসিক চাপ হবে যে, এক প্যাকেট রসগোল্লা কিনে সেই স্ট্রেস কমাতে হবে।
তুলা
চা না কফি, এ নিয়েই ৪৫ মিনিট ধরে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবেন। এই তীব্র দ্বিধার ফলস্বরূপ যে তৃষ্ণা পাবে, সেটাই হবে আপনার আজকের দিনের আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা। কেউ ঝগড়া করলে মধ্যস্থতা করতে যাবেন, কিন্তু এমন নিরপেক্ষ হতে চাইবেন যে দুই পক্ষই আপনাকে ভুল বুঝবে। তাই অন্যের সমস্যা সমাধান নয়, বরং নিজের জীবনে সৌন্দর্য খুঁজুন। ধরুন, একটা নতুন পর্দা কিনবেন। ব্যস, নীল না সবুজ, এই ভাবতে ভাবতেই আপনার দিন শেষ! ভারসাম্য খুঁজুন, পানীয় বা রং নয়!
বৃশ্চিক
কেউ আপনার নামে আজ বাজে কথা বলার চেষ্টা করবে। কিন্তু তারা জানে না, আপনার প্রতিশোধ নেওয়ার দরকার নেই। গ্রহ-নক্ষত্ররাই সেই কাজটা আপনার হয়ে গুছিয়ে দেবে। আপনি সারা দিন এমন এক গভীর চাহনি নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন যে সবাই আপনাকে দেখে ভাববে, আপনি হয় কোনো গুপ্তচর বা কোনো গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। বসের ওপর রাগ হলে মুখে কিছু বলবেন না, শুধু ডায়েরিতে তার নামটা লিখে লাল কালিতে ক্রস চিহ্ন দিয়ে রাখুন। রহস্যময় থাকুন, চুপ থাকুন, আর মজা দেখুন। প্রেমিকার প্রশ্নের উত্তর দেবেন একটি রহস্যময় হাসি দিয়ে, তাহলেই কেল্লা ফতে!
ধনু
আজ আপনার মধ্যে উগান্ডাতে ফ্লাইট বুক করার এক নিয়ন্ত্রণহীন তাগিদ জন্মাবে! মানিব্যাগ হাতে নিয়ে একবার আকাশের দিকে তাকান—সে আপনাকে থামতে বলছে। আজ আপনার মন থাকবে চরম বোহেমিয়ান। হয় আপনি বিশ্বের সবথেকে অনুপ্রেরণামূলক দার্শনিক হয়ে উঠবেন, নয়তো গভীর রাতে পাড়ার মোড়ে ফুচকা খেতে যাবেন। সাবধান: বসের কাছে একদম সত্যি কথা বলতে যাবেন না। আপনার ‘সৎ’ মন্তব্য আজ বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে।
মকর
আরে বাবা, কাজপাগল মানুষ! একটা দিন বিশ্রাম নিন। আপনার বস আপনাকে আজ এই ছুটির দিনেও ই-মেইল করবে। আপনি রোববার উত্তর দিন। আজকের দিনটির একমাত্র চ্যালেঞ্জ—কাজ না করে বসে থাকা। যদি আপনি আজ কোনো পার্টির আমন্ত্রণ পান, আপনি সেখানেও নেটওয়ার্কিংয়ের চেষ্টা করবেন। আপনার মস্তিষ্ক ছুটি চায় না, সে শুধু প্রমোশনের কথা ভাবে। প্রেমিকার দেওয়া উপহারের দাম হিসাব করা বন্ধ করুন। মনে রাখবেন, শুধু টাকা দিয়ে নয়, জীবনটা মাঝেমধ্যে একটু ‘ফালতু’ কাজ করেও উপভোগ করা যায়।
কুম্ভ
আপনার আজকের বিপ্লবী আইডিয়া হলো, পুরোনো মোজাগুলোকে থালা ধোয়ার কাজে লাগানো! এই ধরনের উদ্ভাবন আপাতত স্থগিত রাখুন। দয়া করে পরিষ্কার করার জন্য প্রচলিত জিনিস ব্যবহার করুন। আজ আপনার বন্ধুরা আপনাকে ‘এলিয়েন’ বলে ডাকলে অবাক হবেন না। কারণ, আপনার আইডিয়াগুলো আজকের দিনের তুলনায় ১০০ বছর এগিয়ে থাকবে! কারও সঙ্গে তর্ক হলে যুক্তি দিয়ে নয়, বরং আপনার উদ্ভট তত্ত্ব দিয়ে তাকে চুপ করিয়ে দেবেন। এটাই আপনার স্পেশালিটি!
মীন
আজ আপনি স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তব গুলিয়ে ফেলবেন। স্বপ্নে পাওয়া জাদুর আলু-পটোল দিয়ে মুদি দোকানের বিল মেটানোর চেষ্টা করবেন না। দিনের বেলায় দিবাস্বপ্ন দেখার জন্য আপনি নোবেল পুরস্কার পেলে পেতেও পারেন! আপনার মন আজ কল্পনার জগতে এমনভাবে ডুবে থাকবে যে আপনি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের সময়ও হয়তো রংধনু দেখতে পাবেন। জরুরি ফোনকলের উত্তর দিন, কিন্তু ‘এই মুহূর্তে উড়ন্ত গালিচায় করে যাচ্ছিলাম’—দয়া করে এমন উদ্ভট কথা বলবেন না। বাস্তব জগতে ফিরে আসুন—আজকে কিছু বিল মেটাতে হবে।

মেষ
আজ আপনার রাগের তেজ এতটা বাড়বে যে আপনি ভুল করে নিজের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলটাই ডিলিট করে দিতে পারেন। শুধু তা-ই নয়, রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে পড়লে মনে হবে যেন পৃথিবীর সব গাড়ি একজোট হয়ে শুধু আপনার কাজেই বাগড়া দিতে এসেছে। আবেগের বশে আজ ভুলেও অনলাইনে কিছু অর্ডার করবেন না। কারণ, আপনি এমন কিছু কিনে ফেলবেন, যা আসলে আপনার দরকার নেই। প্রেমের ক্ষেত্রেও ‘আমিই ঠিক’ এই মনোভাব ত্যাগ করুন, নইলে আজকের সন্ধ্যাটা সাইলেন্ট ট্রিটমেন্টে কাটবে। আজ আপনার রাগ নয়, আপনার মাউস এবং গাড়ির হর্ন কন্ট্রোল করুন।
বৃষ
আজ সারা দিন আপনার ডায়েট প্ল্যান আপনাকে ৫০ বার ফোন করবে, কিন্তু আপনি প্রতিবারই ফোন কেটে দিয়ে ফ্রিজের দিকে দৌড়াবেন। কাজকর্মে গতি খুবই কম থাকবে। ছুটির দিনেও আজ অফিস থাকলে আপনার বস মনে করবেন আপনি বুঝি ধ্যানে বসেছেন, কিন্তু আসলে আপনি ভাবছেন লাঞ্চে কী খাবেন। বিকেলে টাকাপয়সার একটা ভালো সুযোগ আসতে পারে, তবে সেটা এত ধীরে আসবে যে আপনি সেটাকে উপেক্ষা করে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। শুভ রং: আলুর চিপসের প্যাকেটের রং! আর হ্যাঁ, আজ কারও ধার শোধ করবেন না। কারণ, টাকাটা পকেটে কিছুক্ষণ রেখে নির্ভার অনুভব করাও জরুরি!
মিথুন
আপনার মস্তিষ্ক আজ দুটো চরম বুদ্ধি দেবে: এক, একটি পডকাস্ট শুরু করা; আর দুই, পুরো দিনটি ঘুমিয়ে কাটানো। দুঃখের খবর হলো, দুটোই আপনি করতে পারবেন না। সারা দিন শুধু ‘কী করব, কী করব না’ করে কাটিয়ে দেবেন। কোনো একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনি কমপক্ষে তিনজন বন্ধুকে ফোন করে বিভ্রান্ত হবেন এবং শেষে গিয়ে প্রথম যে আইডিয়া এসেছিল, সেটাই করবেন। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা জমার সম্ভাবনা আছে, কিন্তু কোন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতেই রাত কাবার হয়ে যাবে।
কর্কট
আজ আপনার ওভার থিংকিং ক্ষমতা তুঙ্গে! আপনি এক ঘণ্টা ধরে চিন্তা করবেন যে আপনার ঘরের মানিপ্ল্যান্টটা কেন বিষণ্ন দেখাচ্ছে, কিংবা পাঁচ বছর আগে বলা একটা কথার আসল মানে কী ছিল। কর্মক্ষেত্রে কেউ একটু কড়া কথা বললেই আপনি মনে করবেন, পৃথিবীর সবথেকে খারাপ লোক আপনিই! আবেগের এমন বাড়াবাড়ি হবে যে, আপনি হয়তো দুপুরের খাবারে সামান্য লবণ কম থাকার কারণে কেঁদেও ফেলতে পারেন। সমাধান একটাই: বালিশ জড়িয়ে ধরুন অথবা পছন্দের খাবার খান। পৃথিবীর সব দুঃখ আপনার একার নয়, আর রান্নাতেও সামান্য ভুল হতেই পারে।
সিংহ
আজকে স্পটলাইট আপনার দিকেই। যদি কেউ আপনার নতুন পোশাকটা লক্ষ না করে, তাহলে নাটকীয় ভঙ্গিতে একবার হোঁচট খান বা টেবিলের ওপর উঠে নাচতে শুরু করুন। নিশ্চিত থাকুন, মনোযোগ আপনার দিকে আসবেই! কর্মক্ষেত্রে আপনার ধারণাগুলো খুবই ভালো, কিন্তু সেগুলোকে এমন ভাবে পরিবেশন করবেন যেন আপনি কোনো হলিউড ব্লকবাস্টারের স্ক্রিপ্ট বলছেন। প্রেমের ক্ষেত্রেও আজ সামান্য সমস্যাকে ‘টাইটানিক ডুবছে’ এমন রূপ দেবেন। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত আলো মাঝে মাঝে চোখ ধাঁধিয়ে দেয়!
কন্যা
আপনি আজ রাস্তায় একটি টাইপো খুঁজে পাবেন এবং স্থানীয় পৌরসভার সঙ্গে সারা দিন সেটার বানান সংশোধন নিয়ে ঝগড়া করবেন। শান্ত হোন, মহাবিশ্বও আপনার ওয়ারড্রবের মতোই অগোছালো। আজকের দিনে আপনার স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত উদ্বেগ একটু বাড়বে। সামান্য কাশি হলেই গুগল করে ক্যানসারর বা দুর্লভ রোগের লক্ষণ খুঁজবেন। আর্থিক দিক দিয়ে আপনি খুব হিসাবি, কিন্তু সেই হিসাবের খাতা মেলাতে গিয়ে এত মানসিক চাপ হবে যে, এক প্যাকেট রসগোল্লা কিনে সেই স্ট্রেস কমাতে হবে।
তুলা
চা না কফি, এ নিয়েই ৪৫ মিনিট ধরে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবেন। এই তীব্র দ্বিধার ফলস্বরূপ যে তৃষ্ণা পাবে, সেটাই হবে আপনার আজকের দিনের আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা। কেউ ঝগড়া করলে মধ্যস্থতা করতে যাবেন, কিন্তু এমন নিরপেক্ষ হতে চাইবেন যে দুই পক্ষই আপনাকে ভুল বুঝবে। তাই অন্যের সমস্যা সমাধান নয়, বরং নিজের জীবনে সৌন্দর্য খুঁজুন। ধরুন, একটা নতুন পর্দা কিনবেন। ব্যস, নীল না সবুজ, এই ভাবতে ভাবতেই আপনার দিন শেষ! ভারসাম্য খুঁজুন, পানীয় বা রং নয়!
বৃশ্চিক
কেউ আপনার নামে আজ বাজে কথা বলার চেষ্টা করবে। কিন্তু তারা জানে না, আপনার প্রতিশোধ নেওয়ার দরকার নেই। গ্রহ-নক্ষত্ররাই সেই কাজটা আপনার হয়ে গুছিয়ে দেবে। আপনি সারা দিন এমন এক গভীর চাহনি নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন যে সবাই আপনাকে দেখে ভাববে, আপনি হয় কোনো গুপ্তচর বা কোনো গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। বসের ওপর রাগ হলে মুখে কিছু বলবেন না, শুধু ডায়েরিতে তার নামটা লিখে লাল কালিতে ক্রস চিহ্ন দিয়ে রাখুন। রহস্যময় থাকুন, চুপ থাকুন, আর মজা দেখুন। প্রেমিকার প্রশ্নের উত্তর দেবেন একটি রহস্যময় হাসি দিয়ে, তাহলেই কেল্লা ফতে!
ধনু
আজ আপনার মধ্যে উগান্ডাতে ফ্লাইট বুক করার এক নিয়ন্ত্রণহীন তাগিদ জন্মাবে! মানিব্যাগ হাতে নিয়ে একবার আকাশের দিকে তাকান—সে আপনাকে থামতে বলছে। আজ আপনার মন থাকবে চরম বোহেমিয়ান। হয় আপনি বিশ্বের সবথেকে অনুপ্রেরণামূলক দার্শনিক হয়ে উঠবেন, নয়তো গভীর রাতে পাড়ার মোড়ে ফুচকা খেতে যাবেন। সাবধান: বসের কাছে একদম সত্যি কথা বলতে যাবেন না। আপনার ‘সৎ’ মন্তব্য আজ বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে।
মকর
আরে বাবা, কাজপাগল মানুষ! একটা দিন বিশ্রাম নিন। আপনার বস আপনাকে আজ এই ছুটির দিনেও ই-মেইল করবে। আপনি রোববার উত্তর দিন। আজকের দিনটির একমাত্র চ্যালেঞ্জ—কাজ না করে বসে থাকা। যদি আপনি আজ কোনো পার্টির আমন্ত্রণ পান, আপনি সেখানেও নেটওয়ার্কিংয়ের চেষ্টা করবেন। আপনার মস্তিষ্ক ছুটি চায় না, সে শুধু প্রমোশনের কথা ভাবে। প্রেমিকার দেওয়া উপহারের দাম হিসাব করা বন্ধ করুন। মনে রাখবেন, শুধু টাকা দিয়ে নয়, জীবনটা মাঝেমধ্যে একটু ‘ফালতু’ কাজ করেও উপভোগ করা যায়।
কুম্ভ
আপনার আজকের বিপ্লবী আইডিয়া হলো, পুরোনো মোজাগুলোকে থালা ধোয়ার কাজে লাগানো! এই ধরনের উদ্ভাবন আপাতত স্থগিত রাখুন। দয়া করে পরিষ্কার করার জন্য প্রচলিত জিনিস ব্যবহার করুন। আজ আপনার বন্ধুরা আপনাকে ‘এলিয়েন’ বলে ডাকলে অবাক হবেন না। কারণ, আপনার আইডিয়াগুলো আজকের দিনের তুলনায় ১০০ বছর এগিয়ে থাকবে! কারও সঙ্গে তর্ক হলে যুক্তি দিয়ে নয়, বরং আপনার উদ্ভট তত্ত্ব দিয়ে তাকে চুপ করিয়ে দেবেন। এটাই আপনার স্পেশালিটি!
মীন
আজ আপনি স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তব গুলিয়ে ফেলবেন। স্বপ্নে পাওয়া জাদুর আলু-পটোল দিয়ে মুদি দোকানের বিল মেটানোর চেষ্টা করবেন না। দিনের বেলায় দিবাস্বপ্ন দেখার জন্য আপনি নোবেল পুরস্কার পেলে পেতেও পারেন! আপনার মন আজ কল্পনার জগতে এমনভাবে ডুবে থাকবে যে আপনি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের সময়ও হয়তো রংধনু দেখতে পাবেন। জরুরি ফোনকলের উত্তর দিন, কিন্তু ‘এই মুহূর্তে উড়ন্ত গালিচায় করে যাচ্ছিলাম’—দয়া করে এমন উদ্ভট কথা বলবেন না। বাস্তব জগতে ফিরে আসুন—আজকে কিছু বিল মেটাতে হবে।

ত্রোৎস্কির কথা বলছিলাম আমরা। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের নায়ক তিনি। এমনিতে আমাদের দেশে ট্রটস্কি নামে পরিচিত। জীবনের সন্ধ্যাবেলায় তিনি অন্য নারীর প্রতি আকর্ষিত হয়েছিলেন। এমন বাধভাঙা প্রেমে পড়েছিলেন যে, মনে হচ্ছিল তিনি প্রেমে দিওয়ানা হয়ে গেছেন। এই প্রেম হয়েছিল ম্যাক্সিকান শিল্পী ফ্রিদা কাহলোর সঙ্গে।
২২ জুলাই ২০২১
তুক-অ-দামতুয়া নামটির মাঝেই রয়েছে অদ্ভুত এক রহস্য। তার ওপর এটি একটি ঝরনার নাম। এমনিতেই পাহাড়প্রেমীদের ছোট-বড় যেকোনো ঝরনার প্রতি রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা। সেটা যদি হয় দৈত্যাকার, তাহলে তো কথাই নেই।
১ দিন আগে
গত রোববার ১৯ অক্টোবর, সকাল ৯টা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। নিরাপত্তাপ্রহরীরা ইগল দৃষ্টিতে চারদিকে খেয়াল রাখছেন, পাহারা দিচ্ছেন। বহু স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা সর্বত্র। তার মধ্যেই চুরি হয়ে গেল বিশ্বের এক নম্বর জাদুঘর প্যারিসের লুভর। তখন সকাল ৯টা ৩৭ মিনিট। মাত্র সাত মিনিটে চুরি...
১ দিন আগে
জাপান শিগগির বিদেশি পর্যটকদের জন্য ব্যয়বহুল গন্তব্যে পরিণত হতে পারে। কারণ, প্রায় ৪৮ বছর পর দেশটির সরকার ভিসা ফি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়া জানিয়েছেন, বিস্তারিত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ভিসা ফি বাড়ালে পর্যটনে কী প্রভাব পড়তে পারে, কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখছে। অন্যান্য দেশের ভি
১ দিন আগেমুহাম্মদ জাভেদ হাকিম

তুক-অ-দামতুয়া নামটির মাঝেই রয়েছে অদ্ভুত এক রহস্য। তার ওপর এটি একটি ঝরনার নাম। এমনিতেই পাহাড়প্রেমীদের ছোট-বড় যেকোনো ঝরনার প্রতি রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা। সেটা যদি হয় দৈত্যাকার, তাহলে তো কথাই নেই।
বান্দরবানের গহিনে থাকা তুক-অ-দামতুয়া ইদানীং সাধারণ পর্যটকদের ভ্রমণ তালিকায় উঠে এসেছে। সে কারণেই একদিন বন্ধুরা মিলে হাঁড়ি-পাতিল আর বোঁচকা নিয়ে রাতের গাড়িতে উঠে খুব ভোরে গিয়ে নামলাম চকরিয়া। তারপর চান্দের গাড়িতে আলীকদম উপজেলার সতেরো কিলো নামক জায়গায়। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে নাজেম নামের চালকটি হেলিকপ্টারের গতিতেই নিয়ে গেলেন আমাদের! আড়াই ঘণ্টার পথ চলতে কখনো কখনো মনে হয়েছে, এই বুঝি চান্দের গাড়ি উড়াল দিল আকাশে।
দশ কিলো থ্যিঙ্কু পাড়া এসে কষে ব্রেক করে দাঁড়াল আমাদের গাড়ি। আর্মি চেকপোস্ট। নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ করে অনুমতি নেওয়া হলো। তারপর আবার ছুট। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম সতেরো কিলো। গাইড আগেই উপস্থিত ছিলেন সেখানে। পরিচয় পর্ব শেষে তাঁর পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করলাম আমরা। যাচ্ছি আদু পাড়ার দিকে। পাড়ায় গিয়ে তাঁর ঘরে বাড়তি মালপত্র রেখে, পাহাড়ের পরম বন্ধু নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের বাঁশ নিয়ে সবাই ছুটলাম দামতুয়ার দিকে।
কথা সেই একটিই, দেখতে হলে হাঁটতে হবে। রীতিমতো মন ও দেহের সঙ্গে লড়াই করে হাঁটতে হচ্ছে। মাথার ওপর প্রখর রোদ। চোখের সামনে শুধুই উঁচু উঁচু পাহাড়। হাঁটছি, উঠছি, নামছি! মাঝেমধ্যে ঝিরির পানি চোখে-মুখে ছিটিয়ে জিরিয়ে নিচ্ছি।
দূর পাহাড়ের নয়ন জুড়ানো সৌন্দর্য মনের শক্তি বাড়িয়েছিল বহুগুণ। প্রায় তিন ঘণ্টা ট্রেকিং করার পর কানে ভেসে এল ঝরনার পানির শব্দ! কিন্তু চোখের সামনে বাঁশবন আর নানান গাছে ঘেরা খাড়া পিচ্ছিল পথ। নামতে হবে নিচের দিকে। একটু এদিক-সেদিক হলেই সুচালো বাঁশ দেহের কোথায় গিয়ে গেঁথে যাবে, কেউ জানে না। তবু পেতে হবে দামতুয়ার কোমল পরশ।
বহু কষ্টে নিচে নেমে চক্ষু একেবারে ছানাবড়া! বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম বিশালা ঝরনার দিকে, একেবারে হাঁ করে। দুপাশ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। একেবারে বুনো পরিবেশে দামতুয়া চোখের সামনে! নির্বাক হয়ে যাওয়ার আগে এর উচ্চতা মাপি মনে মনে।
নব্বই থেকে এক শ ফুট উঁচু না হয়েই যায় না দামতুয়া।
বর্ষা শেষে শরৎ পেরিয়ে হেমন্ত।
তুক-অ-দামতুয়ার উচ্ছলতা এখনো কমেনি। গাইড জানালেন, সারা বছর এ ঝরনায় পানির প্রবাহ থাকে। বেশ উচ্চতা আর অনেকখানি জায়গাজুড়ে প্রচণ্ড বেগে পানি নেমে আসে এখানে।
এই কারণে ঝরনার সামনে বিশাল জলাশয় তৈরি হয়েছে। সেই প্রাকৃতিক সুইমিংপুলে সাঁতার না কাটলে চলে! বান্দরবানের অন্যান্য ঝরনার চেয়ে দামতুয়ার ভৌগোলিক আকৃতি ভিন্ন রকম। অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয়েছে। মুরং ভাষা থেকে আসা ‘তুক-অ-দামতুয়া’ শব্দের অর্থটাও বেশ চমৎকার। তুক অর্থ ব্যাঙ, অ অর্থ ঝিরি আর দামতুয়া মানে খাড়া। অর্থাৎ এই খাড়া ঝিরির উজান ঠেলে ব্যাঙ বা মাছ ওপরের দিকে উঠতে পারে না বলে এই ঝরনার এমন নাম। আমাদের গাইড ছিলের মুরং সম্প্রদায়ের মানুষ। তিনিই জানালেন এসব।
ঝরনার উৎস দেখার পালা এবার। চরাই-উতরাই পেরিয়ে দেখা গেল এক সবুজে ঘেরা ঝিরি। বড় বড় কিছু পাথর পেরিয়ে একেবারে তার কাছে চলে গেলাম। বেশ চমৎকার একটা জায়গা। এই ঝিরির পানি দামতুয়া হয়ে ঝরে পড়ে নিচের প্রাকৃতিক সুইমিংপুলে।
এই ঝিরির নাম ব্যাঙ ঝিরি। সাধারণত ঝিরির নাম অনুসারে ঝরনাগুলোর নামকরণ হয়।
ব্যাঙ ঝিরির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সময়জ্ঞান প্রায় ভুলতে বসেছিলাম সবাই। গাইডের ডাকে আবার শুরু হলো ট্রেকিং। এই পাহাড়-জঙ্গলের গহিনে গাইডই তখন ক্যাপ্টেন। তাঁর নির্দেশ অমান্য করার উপায় নেই। আমরা আদুপাড়ার পথ ধরি। গাইড জানালেন, আবারও প্রায় নয় মাইল চড়াই-উতরাই পেরোতে হবে!
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। এমনিতেই পাহাড়ে সন্ধ্যা আসে ঝুপ করে। দুপুরে শুকনো দুই-চার পিস বিস্কুট ছাড়া তেমন কিছুই পড়েনি পেটে। তাই খিচুড়ির এন্তেজাম হবে রাতে। হাঁটছি ধীরে ধীরে, একেবারে উদ্দেশ্যপূর্ণ কারণে। আজ পূর্ণিমা। পাহাড়ের নির্জনতায় ভরা জোছনার আলো সঙ্গী করে হাঁটব। পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই আমি মনে মনে কিছুটা উদ্দীপিত। এ রকম সুযোগ সব সময় মেলে না।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। আকাশছোঁয়া পাহাড় টপকে গোলাকার চাঁদ উঁকি দিল আকাশে। নিঝুম অন্ধকার পাহাড়ের চারপাশ আলোকিত হয়ে পড়ল। গাছের পাতাগুলো সবুজের মাঝে সোনালি বর্ণ ধারণ করল। অসাধারণ এক অনুভূতি। সবার মনে বিস্ময়ের দোলা। এখন আর কারও ফেরার তাড়া নেই। তবু ফিরতে হচ্ছে এই অলৌকিক রাতে।
যাবেন যেভাবে
ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবানের আলীকদমে বাস যায়। সেখান থেকে মোটরবাইক কিংবা চান্দের গাড়িতে যেতে হবে সতেরো কিলো এলাকায়। সেখানকার চা-দোকানিদের সহায়তা নিয়ে পেয়ে যাবেন গাইড। তাঁকে ছাড়া পাহাড়ে যাওয়া ঠিক হবে না।

তুক-অ-দামতুয়া নামটির মাঝেই রয়েছে অদ্ভুত এক রহস্য। তার ওপর এটি একটি ঝরনার নাম। এমনিতেই পাহাড়প্রেমীদের ছোট-বড় যেকোনো ঝরনার প্রতি রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা। সেটা যদি হয় দৈত্যাকার, তাহলে তো কথাই নেই।
বান্দরবানের গহিনে থাকা তুক-অ-দামতুয়া ইদানীং সাধারণ পর্যটকদের ভ্রমণ তালিকায় উঠে এসেছে। সে কারণেই একদিন বন্ধুরা মিলে হাঁড়ি-পাতিল আর বোঁচকা নিয়ে রাতের গাড়িতে উঠে খুব ভোরে গিয়ে নামলাম চকরিয়া। তারপর চান্দের গাড়িতে আলীকদম উপজেলার সতেরো কিলো নামক জায়গায়। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে নাজেম নামের চালকটি হেলিকপ্টারের গতিতেই নিয়ে গেলেন আমাদের! আড়াই ঘণ্টার পথ চলতে কখনো কখনো মনে হয়েছে, এই বুঝি চান্দের গাড়ি উড়াল দিল আকাশে।
দশ কিলো থ্যিঙ্কু পাড়া এসে কষে ব্রেক করে দাঁড়াল আমাদের গাড়ি। আর্মি চেকপোস্ট। নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ করে অনুমতি নেওয়া হলো। তারপর আবার ছুট। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম সতেরো কিলো। গাইড আগেই উপস্থিত ছিলেন সেখানে। পরিচয় পর্ব শেষে তাঁর পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করলাম আমরা। যাচ্ছি আদু পাড়ার দিকে। পাড়ায় গিয়ে তাঁর ঘরে বাড়তি মালপত্র রেখে, পাহাড়ের পরম বন্ধু নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের বাঁশ নিয়ে সবাই ছুটলাম দামতুয়ার দিকে।
কথা সেই একটিই, দেখতে হলে হাঁটতে হবে। রীতিমতো মন ও দেহের সঙ্গে লড়াই করে হাঁটতে হচ্ছে। মাথার ওপর প্রখর রোদ। চোখের সামনে শুধুই উঁচু উঁচু পাহাড়। হাঁটছি, উঠছি, নামছি! মাঝেমধ্যে ঝিরির পানি চোখে-মুখে ছিটিয়ে জিরিয়ে নিচ্ছি।
দূর পাহাড়ের নয়ন জুড়ানো সৌন্দর্য মনের শক্তি বাড়িয়েছিল বহুগুণ। প্রায় তিন ঘণ্টা ট্রেকিং করার পর কানে ভেসে এল ঝরনার পানির শব্দ! কিন্তু চোখের সামনে বাঁশবন আর নানান গাছে ঘেরা খাড়া পিচ্ছিল পথ। নামতে হবে নিচের দিকে। একটু এদিক-সেদিক হলেই সুচালো বাঁশ দেহের কোথায় গিয়ে গেঁথে যাবে, কেউ জানে না। তবু পেতে হবে দামতুয়ার কোমল পরশ।
বহু কষ্টে নিচে নেমে চক্ষু একেবারে ছানাবড়া! বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম বিশালা ঝরনার দিকে, একেবারে হাঁ করে। দুপাশ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। একেবারে বুনো পরিবেশে দামতুয়া চোখের সামনে! নির্বাক হয়ে যাওয়ার আগে এর উচ্চতা মাপি মনে মনে।
নব্বই থেকে এক শ ফুট উঁচু না হয়েই যায় না দামতুয়া।
বর্ষা শেষে শরৎ পেরিয়ে হেমন্ত।
তুক-অ-দামতুয়ার উচ্ছলতা এখনো কমেনি। গাইড জানালেন, সারা বছর এ ঝরনায় পানির প্রবাহ থাকে। বেশ উচ্চতা আর অনেকখানি জায়গাজুড়ে প্রচণ্ড বেগে পানি নেমে আসে এখানে।
এই কারণে ঝরনার সামনে বিশাল জলাশয় তৈরি হয়েছে। সেই প্রাকৃতিক সুইমিংপুলে সাঁতার না কাটলে চলে! বান্দরবানের অন্যান্য ঝরনার চেয়ে দামতুয়ার ভৌগোলিক আকৃতি ভিন্ন রকম। অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয়েছে। মুরং ভাষা থেকে আসা ‘তুক-অ-দামতুয়া’ শব্দের অর্থটাও বেশ চমৎকার। তুক অর্থ ব্যাঙ, অ অর্থ ঝিরি আর দামতুয়া মানে খাড়া। অর্থাৎ এই খাড়া ঝিরির উজান ঠেলে ব্যাঙ বা মাছ ওপরের দিকে উঠতে পারে না বলে এই ঝরনার এমন নাম। আমাদের গাইড ছিলের মুরং সম্প্রদায়ের মানুষ। তিনিই জানালেন এসব।
ঝরনার উৎস দেখার পালা এবার। চরাই-উতরাই পেরিয়ে দেখা গেল এক সবুজে ঘেরা ঝিরি। বড় বড় কিছু পাথর পেরিয়ে একেবারে তার কাছে চলে গেলাম। বেশ চমৎকার একটা জায়গা। এই ঝিরির পানি দামতুয়া হয়ে ঝরে পড়ে নিচের প্রাকৃতিক সুইমিংপুলে।
এই ঝিরির নাম ব্যাঙ ঝিরি। সাধারণত ঝিরির নাম অনুসারে ঝরনাগুলোর নামকরণ হয়।
ব্যাঙ ঝিরির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সময়জ্ঞান প্রায় ভুলতে বসেছিলাম সবাই। গাইডের ডাকে আবার শুরু হলো ট্রেকিং। এই পাহাড়-জঙ্গলের গহিনে গাইডই তখন ক্যাপ্টেন। তাঁর নির্দেশ অমান্য করার উপায় নেই। আমরা আদুপাড়ার পথ ধরি। গাইড জানালেন, আবারও প্রায় নয় মাইল চড়াই-উতরাই পেরোতে হবে!
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। এমনিতেই পাহাড়ে সন্ধ্যা আসে ঝুপ করে। দুপুরে শুকনো দুই-চার পিস বিস্কুট ছাড়া তেমন কিছুই পড়েনি পেটে। তাই খিচুড়ির এন্তেজাম হবে রাতে। হাঁটছি ধীরে ধীরে, একেবারে উদ্দেশ্যপূর্ণ কারণে। আজ পূর্ণিমা। পাহাড়ের নির্জনতায় ভরা জোছনার আলো সঙ্গী করে হাঁটব। পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই আমি মনে মনে কিছুটা উদ্দীপিত। এ রকম সুযোগ সব সময় মেলে না।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। আকাশছোঁয়া পাহাড় টপকে গোলাকার চাঁদ উঁকি দিল আকাশে। নিঝুম অন্ধকার পাহাড়ের চারপাশ আলোকিত হয়ে পড়ল। গাছের পাতাগুলো সবুজের মাঝে সোনালি বর্ণ ধারণ করল। অসাধারণ এক অনুভূতি। সবার মনে বিস্ময়ের দোলা। এখন আর কারও ফেরার তাড়া নেই। তবু ফিরতে হচ্ছে এই অলৌকিক রাতে।
যাবেন যেভাবে
ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবানের আলীকদমে বাস যায়। সেখান থেকে মোটরবাইক কিংবা চান্দের গাড়িতে যেতে হবে সতেরো কিলো এলাকায়। সেখানকার চা-দোকানিদের সহায়তা নিয়ে পেয়ে যাবেন গাইড। তাঁকে ছাড়া পাহাড়ে যাওয়া ঠিক হবে না।

ত্রোৎস্কির কথা বলছিলাম আমরা। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের নায়ক তিনি। এমনিতে আমাদের দেশে ট্রটস্কি নামে পরিচিত। জীবনের সন্ধ্যাবেলায় তিনি অন্য নারীর প্রতি আকর্ষিত হয়েছিলেন। এমন বাধভাঙা প্রেমে পড়েছিলেন যে, মনে হচ্ছিল তিনি প্রেমে দিওয়ানা হয়ে গেছেন। এই প্রেম হয়েছিল ম্যাক্সিকান শিল্পী ফ্রিদা কাহলোর সঙ্গে।
২২ জুলাই ২০২১
আজ আপনার রাগের তেজ এতটা বাড়বে যে আপনি ভুল করে নিজের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলটাই ডিলিট করে দিতে পারেন। শুধু তা-ই নয়, রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে পড়লে মনে হবে যেন পৃথিবীর সব গাড়ি একজোট হয়ে শুধু আপনার কাজেই বাগড়া দিতে এসেছে। আবেগের বশে আজ ভুলেও অনলাইনে কিছু অর্ডার করবেন না, কারণ আপনি এমন কিছু কিনে ফেলবেন, যা আসলে
১ ঘণ্টা আগে
গত রোববার ১৯ অক্টোবর, সকাল ৯টা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। নিরাপত্তাপ্রহরীরা ইগল দৃষ্টিতে চারদিকে খেয়াল রাখছেন, পাহারা দিচ্ছেন। বহু স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা সর্বত্র। তার মধ্যেই চুরি হয়ে গেল বিশ্বের এক নম্বর জাদুঘর প্যারিসের লুভর। তখন সকাল ৯টা ৩৭ মিনিট। মাত্র সাত মিনিটে চুরি...
১ দিন আগে
জাপান শিগগির বিদেশি পর্যটকদের জন্য ব্যয়বহুল গন্তব্যে পরিণত হতে পারে। কারণ, প্রায় ৪৮ বছর পর দেশটির সরকার ভিসা ফি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়া জানিয়েছেন, বিস্তারিত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ভিসা ফি বাড়ালে পর্যটনে কী প্রভাব পড়তে পারে, কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখছে। অন্যান্য দেশের ভি
১ দিন আগেমইনুল হাসান, ফ্রান্স

গত রোববার ১৯ অক্টোবর, সকাল ৯টা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। অফিস পাড়ায় ভিড় নেই। রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। সকালের ঠান্ডা এ সময়ে তীব্র নয়। পুব আকাশে তখনো সূর্য অনেকটাই রক্তিম। নগরজীবনের প্রাণচাঞ্চল্য প্রকৃতির উষ্ণতায় আচ্ছাদিত। চারদিকে সুনসান। সবেমাত্র ঐতিহাসিক লুভর জাদুঘরের প্রধান ফটক দর্শনার্থীর জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে কৌতূহলী দর্শনার্থীরা অতীত ইতিহাসের বর্ণাঢ্য জগতে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে নানান ভাষাভাষী দর্শনার্থীর ভিড় জমতে শুরু করেছে কাচ আর ইস্পাতে ঘেরা অনুপম পিরামিডের চৌদিকে, নেপোলিয়ন চত্বরে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ক্যামেরার চোখ সর্বত্র। নিরাপত্তাপ্রহরীরা ইগল দৃষ্টিতে চারদিকে খেয়াল রাখছেন, পাহারা দিচ্ছেন। বহু স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা সর্বত্র।
বিশ্বের এক নম্বর জাদুঘর প্যারিসের এই লুভর। বলা যায় জাদুঘরের এক উজ্জ্বল আইকন। অনেক কিংবদন্তি আছে এই বিস্ময়কর রহস্যময় স্থাপত্য সৌকর্যের অনুপম দৃষ্টান্ত এই রাজপ্রাসাদ নিয়ে। ১৫৪৬ সালে ফরাসি রাজা প্রথম ফ্রঁসোয়া এই ভবন ফরাসি রাজাদের মূল বাসভবনে রূপান্তর করেন। এরপর বহুবার ভবনটি সম্প্রসারণ করা হলে বর্তমান রূপ পায়। ১৬৮২ সালে ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুই তাঁর বাসভবন ভার্সাই প্রাসাদে স্থানান্তর করেন। তখন এই প্রাসাদ রাজকীয় সংগ্রহশালার চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্যের প্রদর্শনী কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

ফরাসি বিপ্লবের চার বছর পর, ১৭৯৩ সালে ৫৩৭টি শিল্পকর্ম নিয়ে লুভর প্রাসাদটি ‘কেন্দ্রীয় শিল্পকলা জাদুঘর’ নামে উদ্বোধন করা হয়। সেই থেকে বর্তমান জাদুঘরের যাত্রা শুরু। এখানে রক্ষিত আছে মোট ৪ লাখ ৬০ হাজার বস্তু-প্রদর্শনী। এর মধ্যে হাজার পঁয়ত্রিশেক বস্তু দর্শনার্থীর প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে। একনাগাড়ে এর প্রতিটি বস্তু দেখতে ১০ সেকেন্ড করে ব্যয় করলেও শেষ করতে সময় লাগবে তিন থেকে চার দিন। লুভর প্রাসাদে কক্ষ আছে ৪০৩টি, মেঝের আয়তন ২৬ লাখ বর্গফুটের বেশি। সব কটি করিডর ঘুরে এলে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ হাঁটা হবে। সিঁড়িতে আছে ১০ হাজার ধাপ এবং ৭০টির মতো লিফট। এই জাদুঘর পরিচালনায় আছেন প্রায় ২ হাজার কর্মচারী। তাঁদের মধ্যে শুধু নিরাপত্তাপ্রহরীর সংখ্যাই হচ্ছে ১ হাজার ৩৬৬ জন। এটি বর্তমান সময়ে বিশ্বের বৃহত্তম জাদুঘর হিসেবে বিখ্যাত। গত বছর প্রায় ৯০ লাখ দর্শনার্থী প্রবেশ করেছিল এই জাদুর জাদুঘরে।
তবে ১৯ অক্টোবর এই জাদুঘরে ঢুকেছিলেন দুজন বিশেষ ব্যক্তি। তাঁরা দর্শনার্থী ছিলেন না, ছিলেন না কোনো সাধারণ চোর। অনেকে বলেন, রাজরত্ন চুরি করতে সবার চোখে ধুলো দিয়ে প্রাসাদে প্রবেশ করেছিলেন ‘চোরের রাজা’ কিংবা ‘জাদুকর চোর’। ঘড়ির কাঁটা যখন সকাল ৯টার ঘরে, তখন সেন নদীর ডান তীরের রাস্তা ধরে ধীরে ধীরে বিশ্বের সেরা জাদুঘর লুভর প্রাসাদের দিকে এগিয়েছেন দুটি টিম্যাক্স ইয়ামাহা মোটরবাইকে করে দুজন চালক। আর তাঁদের পেছনে ধাতব মইবাহী একটি লরি। তাতে সাধারণ শ্রমিকের পোশাকে আরও দুজন ব্যক্তি। মই বহনকারী লরিটি রাস্তার পাশে, লুভর জাদুঘরের এক কোণ ঘেঁষে থামল। লরি থেকে মুখ ঢাকা দুজন ব্যক্তি নেমে এলেন। একজনের পরনে উজ্জ্বল হলুদ এবং অন্যজন গায়ে চড়িয়েছেন উজ্জ্বল কমলা রঙের পোশাক। নগরীর বিভিন্ন স্থানে এমন পোশাক পরা, কাজে ব্যস্ত শ্রমিকদের দেখতে সবাই অভ্যস্ত। তাই তাঁদের দেখে কেউ তেমন সন্দেহ করেনি। তখন ঠিক ৯টা ৩০ মিনিট।

দুজন তস্কর কাচ ও ইস্পাত কাটার যন্ত্র হাতে, মই দিয়ে তরতর করে উঠে গেলেন প্রথম তলায়। একটি জানালার কাচ আর গ্রিল কেটে ঢুকে গেলেন অ্যাপোলো গ্যালারিতে। সে সময়ে গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন জনা দশেক দর্শনার্থী। তখন ৯টা ৩৪ মিনিট। প্রচণ্ড ক্ষিপ্রতায় দুটি কাচের প্রদর্শনী বাক্স কেটে হাতিয়ে নেওয়া হলো ফরাসি রাজপরিবারের বহু পুরোনো বহুরত্নখচিত ৮টি অমূল্য অলংকার—নীলকান্তমণি, পান্না আর হীরার বহুপ্রাচীন সব গয়না। মোট ৮ হাজার হীরা ছিল তাতে! রানি মেরি-অ্যামেলির নেকলেসে ছিল ৮টি নীলকান্তমণি আর ৬৩১টি হীরা। তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রী সম্রাজ্ঞী ইউজেনির মুকুটে খচিত ছিল ২ হাজার হীরা। এর মধ্যে সব থেকে বড় হীরা ১৪০ ক্যারেটের।
ইতিমধ্যে, জাদুঘরের বাইরে অপেক্ষমাণ ডিউটি টিম্যাক্স ইয়ামাহা মোটরবাইকের দুই স্মার্ট চালক অস্থির হয়ে উঠলেন। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই, রাজরত্ন চুরি করে অতি নিপুণ, দুর্ধর্ষ চারজন তস্কর মোটরবাইকে করে লাপাত্তা হয়ে গেলেন। তীব্র শব্দে বেজে উঠল সতর্কসংকেত। সেই সংকেত সরাসরি পৌঁছে গেল ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। নগরীর শান্ত প্রভাতের নীরবতায় ছেদ ঘটিয়ে চারদিকে পুলিশের সাইরেন। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তখন সকাল ৯টা ৩৭ মিনিট। মাত্র সাত মিনিটে ঘটল শতাব্দীর সেরা চুরি!

ফরাসি জাতির ইতিহাসের অংশ অমূল্য ধন, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির এমন চুরির খবর আলোর গতিতে ছড়িয়ে পড়ল পৃথিবীর সব প্রান্তে। চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলো সংবাদমাধ্যমে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরব হলো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভিরমি খেলেন। রোববারে একটু আলস্য করবেন বলে ঠিক করেছিলেন সদা ব্যস্ত সংস্কৃতিমন্ত্রী। তা না করে ছুটে গেলেন ক্ষয়ক্ষতি সরেজমিনে দেখতে। বাঘা বাঘা বিশেষজ্ঞ চুরি যাওয়া রত্ন ও অলংকারের অর্থমূল্য নির্ধারণ না করতে পেরে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ‘অমূল্য’—অর্থ দিয়ে কেনা যায় না ইতিহাস। সাংবাদিকদের প্রশ্নের বিষমাখা তির বিদ্ধ হয়ে কাতরাতে কাতরাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশেষে স্বীকার করলেন, ‘সুবিশাল এই প্রাসাদের ৮ হাজার দরজা, জানালা পাহারা দেওয়া সত্যিই কঠিন কাজ’। তিনি আরও জানিয়েছেন, এর আগে যে চুরির ঘটনাটি ঘটেছিল, তা সেই ১৯৯৮ সালে, আজ থেকে ২৭ বছর আগে। ক্যামিল কোরোতের একটি তেলচিত্র চুরি হয়েছিল। আজও তা উদ্ধার হয়নি।
দুর্ধর্ষ এই চুরির ঘটনা দেশটির রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বিরোধীরা এই ঘটনাকে ‘জাতির মুখে কালিমা লেপন’ বলে অভিহিত করে বর্তমান সরকারের পরনের কাপড় নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশটির প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, অচিরেই তাঁর দক্ষ গোয়েন্দারা তস্করদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবে এবং জড়িত সবাইকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ছাড়বেন। সরকার মোট ৬০ জন বাছাই করা তদন্তকারী গোয়েন্দাকে দায়িত্ব দিল চোরাই মালপত্রসহ চোরদের পাকড়াও করার। এসব গোয়েন্দার আছে সারমেয় নাসিকা আর তাঁদের হাতে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ইতিমধ্যে তাঁদের হাতে অনেক আলামত জমা হয়েছে।

যাঁরা অপরাধজগতের খবর রাখেন, তাঁরা এমন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ উচ্চারণে আস্থা রাখতে পারছেন না। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যাঁরা চুরি করেছেন, তাঁরা কোনো সাধারণ চোর বা ডাকাত নন। অত্যন্ত ঝানু এবং বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তস্কর। অঢেল সম্পদশালী কোনো সংগ্রাহক মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তাঁদের ঐতিহাসিক অলংকার চুরি করার কাজে লাগিয়েছে। কিংবা বিদেশি কোনো রাষ্ট্র তাদের দিয়ে এই কাজ করিয়েছে। হতে পারে, অলংকার থেকে হীরা, জহরত আলাদা করে, খুচরা বিক্রির জন্য চুরি করা হয়েছে। তাই যতই সময় গড়াবে, ততই এই রাষ্ট্রীয় সম্পদ উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসবে।
এদিকে এমন দুর্ধর্ষ চুরির কাহিনি নিয়ে বলিউড চলচিত্র নির্মাণ শুরু করলে, তাতে বিস্মিত হওয়ার কোনো কারণ থাকবে না। সে ছায়াছবির শিরোনাম হতে পারে, ‘সাত মিনিটে চুরি হলো সাত রাজার ধন’।

গত রোববার ১৯ অক্টোবর, সকাল ৯টা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। অফিস পাড়ায় ভিড় নেই। রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। সকালের ঠান্ডা এ সময়ে তীব্র নয়। পুব আকাশে তখনো সূর্য অনেকটাই রক্তিম। নগরজীবনের প্রাণচাঞ্চল্য প্রকৃতির উষ্ণতায় আচ্ছাদিত। চারদিকে সুনসান। সবেমাত্র ঐতিহাসিক লুভর জাদুঘরের প্রধান ফটক দর্শনার্থীর জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে কৌতূহলী দর্শনার্থীরা অতীত ইতিহাসের বর্ণাঢ্য জগতে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে নানান ভাষাভাষী দর্শনার্থীর ভিড় জমতে শুরু করেছে কাচ আর ইস্পাতে ঘেরা অনুপম পিরামিডের চৌদিকে, নেপোলিয়ন চত্বরে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ক্যামেরার চোখ সর্বত্র। নিরাপত্তাপ্রহরীরা ইগল দৃষ্টিতে চারদিকে খেয়াল রাখছেন, পাহারা দিচ্ছেন। বহু স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা সর্বত্র।
বিশ্বের এক নম্বর জাদুঘর প্যারিসের এই লুভর। বলা যায় জাদুঘরের এক উজ্জ্বল আইকন। অনেক কিংবদন্তি আছে এই বিস্ময়কর রহস্যময় স্থাপত্য সৌকর্যের অনুপম দৃষ্টান্ত এই রাজপ্রাসাদ নিয়ে। ১৫৪৬ সালে ফরাসি রাজা প্রথম ফ্রঁসোয়া এই ভবন ফরাসি রাজাদের মূল বাসভবনে রূপান্তর করেন। এরপর বহুবার ভবনটি সম্প্রসারণ করা হলে বর্তমান রূপ পায়। ১৬৮২ সালে ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুই তাঁর বাসভবন ভার্সাই প্রাসাদে স্থানান্তর করেন। তখন এই প্রাসাদ রাজকীয় সংগ্রহশালার চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্যের প্রদর্শনী কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

ফরাসি বিপ্লবের চার বছর পর, ১৭৯৩ সালে ৫৩৭টি শিল্পকর্ম নিয়ে লুভর প্রাসাদটি ‘কেন্দ্রীয় শিল্পকলা জাদুঘর’ নামে উদ্বোধন করা হয়। সেই থেকে বর্তমান জাদুঘরের যাত্রা শুরু। এখানে রক্ষিত আছে মোট ৪ লাখ ৬০ হাজার বস্তু-প্রদর্শনী। এর মধ্যে হাজার পঁয়ত্রিশেক বস্তু দর্শনার্থীর প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে। একনাগাড়ে এর প্রতিটি বস্তু দেখতে ১০ সেকেন্ড করে ব্যয় করলেও শেষ করতে সময় লাগবে তিন থেকে চার দিন। লুভর প্রাসাদে কক্ষ আছে ৪০৩টি, মেঝের আয়তন ২৬ লাখ বর্গফুটের বেশি। সব কটি করিডর ঘুরে এলে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ হাঁটা হবে। সিঁড়িতে আছে ১০ হাজার ধাপ এবং ৭০টির মতো লিফট। এই জাদুঘর পরিচালনায় আছেন প্রায় ২ হাজার কর্মচারী। তাঁদের মধ্যে শুধু নিরাপত্তাপ্রহরীর সংখ্যাই হচ্ছে ১ হাজার ৩৬৬ জন। এটি বর্তমান সময়ে বিশ্বের বৃহত্তম জাদুঘর হিসেবে বিখ্যাত। গত বছর প্রায় ৯০ লাখ দর্শনার্থী প্রবেশ করেছিল এই জাদুর জাদুঘরে।
তবে ১৯ অক্টোবর এই জাদুঘরে ঢুকেছিলেন দুজন বিশেষ ব্যক্তি। তাঁরা দর্শনার্থী ছিলেন না, ছিলেন না কোনো সাধারণ চোর। অনেকে বলেন, রাজরত্ন চুরি করতে সবার চোখে ধুলো দিয়ে প্রাসাদে প্রবেশ করেছিলেন ‘চোরের রাজা’ কিংবা ‘জাদুকর চোর’। ঘড়ির কাঁটা যখন সকাল ৯টার ঘরে, তখন সেন নদীর ডান তীরের রাস্তা ধরে ধীরে ধীরে বিশ্বের সেরা জাদুঘর লুভর প্রাসাদের দিকে এগিয়েছেন দুটি টিম্যাক্স ইয়ামাহা মোটরবাইকে করে দুজন চালক। আর তাঁদের পেছনে ধাতব মইবাহী একটি লরি। তাতে সাধারণ শ্রমিকের পোশাকে আরও দুজন ব্যক্তি। মই বহনকারী লরিটি রাস্তার পাশে, লুভর জাদুঘরের এক কোণ ঘেঁষে থামল। লরি থেকে মুখ ঢাকা দুজন ব্যক্তি নেমে এলেন। একজনের পরনে উজ্জ্বল হলুদ এবং অন্যজন গায়ে চড়িয়েছেন উজ্জ্বল কমলা রঙের পোশাক। নগরীর বিভিন্ন স্থানে এমন পোশাক পরা, কাজে ব্যস্ত শ্রমিকদের দেখতে সবাই অভ্যস্ত। তাই তাঁদের দেখে কেউ তেমন সন্দেহ করেনি। তখন ঠিক ৯টা ৩০ মিনিট।

দুজন তস্কর কাচ ও ইস্পাত কাটার যন্ত্র হাতে, মই দিয়ে তরতর করে উঠে গেলেন প্রথম তলায়। একটি জানালার কাচ আর গ্রিল কেটে ঢুকে গেলেন অ্যাপোলো গ্যালারিতে। সে সময়ে গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন জনা দশেক দর্শনার্থী। তখন ৯টা ৩৪ মিনিট। প্রচণ্ড ক্ষিপ্রতায় দুটি কাচের প্রদর্শনী বাক্স কেটে হাতিয়ে নেওয়া হলো ফরাসি রাজপরিবারের বহু পুরোনো বহুরত্নখচিত ৮টি অমূল্য অলংকার—নীলকান্তমণি, পান্না আর হীরার বহুপ্রাচীন সব গয়না। মোট ৮ হাজার হীরা ছিল তাতে! রানি মেরি-অ্যামেলির নেকলেসে ছিল ৮টি নীলকান্তমণি আর ৬৩১টি হীরা। তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রী সম্রাজ্ঞী ইউজেনির মুকুটে খচিত ছিল ২ হাজার হীরা। এর মধ্যে সব থেকে বড় হীরা ১৪০ ক্যারেটের।
ইতিমধ্যে, জাদুঘরের বাইরে অপেক্ষমাণ ডিউটি টিম্যাক্স ইয়ামাহা মোটরবাইকের দুই স্মার্ট চালক অস্থির হয়ে উঠলেন। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই, রাজরত্ন চুরি করে অতি নিপুণ, দুর্ধর্ষ চারজন তস্কর মোটরবাইকে করে লাপাত্তা হয়ে গেলেন। তীব্র শব্দে বেজে উঠল সতর্কসংকেত। সেই সংকেত সরাসরি পৌঁছে গেল ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। নগরীর শান্ত প্রভাতের নীরবতায় ছেদ ঘটিয়ে চারদিকে পুলিশের সাইরেন। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তখন সকাল ৯টা ৩৭ মিনিট। মাত্র সাত মিনিটে ঘটল শতাব্দীর সেরা চুরি!

ফরাসি জাতির ইতিহাসের অংশ অমূল্য ধন, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির এমন চুরির খবর আলোর গতিতে ছড়িয়ে পড়ল পৃথিবীর সব প্রান্তে। চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলো সংবাদমাধ্যমে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরব হলো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভিরমি খেলেন। রোববারে একটু আলস্য করবেন বলে ঠিক করেছিলেন সদা ব্যস্ত সংস্কৃতিমন্ত্রী। তা না করে ছুটে গেলেন ক্ষয়ক্ষতি সরেজমিনে দেখতে। বাঘা বাঘা বিশেষজ্ঞ চুরি যাওয়া রত্ন ও অলংকারের অর্থমূল্য নির্ধারণ না করতে পেরে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ‘অমূল্য’—অর্থ দিয়ে কেনা যায় না ইতিহাস। সাংবাদিকদের প্রশ্নের বিষমাখা তির বিদ্ধ হয়ে কাতরাতে কাতরাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশেষে স্বীকার করলেন, ‘সুবিশাল এই প্রাসাদের ৮ হাজার দরজা, জানালা পাহারা দেওয়া সত্যিই কঠিন কাজ’। তিনি আরও জানিয়েছেন, এর আগে যে চুরির ঘটনাটি ঘটেছিল, তা সেই ১৯৯৮ সালে, আজ থেকে ২৭ বছর আগে। ক্যামিল কোরোতের একটি তেলচিত্র চুরি হয়েছিল। আজও তা উদ্ধার হয়নি।
দুর্ধর্ষ এই চুরির ঘটনা দেশটির রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বিরোধীরা এই ঘটনাকে ‘জাতির মুখে কালিমা লেপন’ বলে অভিহিত করে বর্তমান সরকারের পরনের কাপড় নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশটির প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, অচিরেই তাঁর দক্ষ গোয়েন্দারা তস্করদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবে এবং জড়িত সবাইকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ছাড়বেন। সরকার মোট ৬০ জন বাছাই করা তদন্তকারী গোয়েন্দাকে দায়িত্ব দিল চোরাই মালপত্রসহ চোরদের পাকড়াও করার। এসব গোয়েন্দার আছে সারমেয় নাসিকা আর তাঁদের হাতে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ইতিমধ্যে তাঁদের হাতে অনেক আলামত জমা হয়েছে।

যাঁরা অপরাধজগতের খবর রাখেন, তাঁরা এমন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ উচ্চারণে আস্থা রাখতে পারছেন না। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যাঁরা চুরি করেছেন, তাঁরা কোনো সাধারণ চোর বা ডাকাত নন। অত্যন্ত ঝানু এবং বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তস্কর। অঢেল সম্পদশালী কোনো সংগ্রাহক মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তাঁদের ঐতিহাসিক অলংকার চুরি করার কাজে লাগিয়েছে। কিংবা বিদেশি কোনো রাষ্ট্র তাদের দিয়ে এই কাজ করিয়েছে। হতে পারে, অলংকার থেকে হীরা, জহরত আলাদা করে, খুচরা বিক্রির জন্য চুরি করা হয়েছে। তাই যতই সময় গড়াবে, ততই এই রাষ্ট্রীয় সম্পদ উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসবে।
এদিকে এমন দুর্ধর্ষ চুরির কাহিনি নিয়ে বলিউড চলচিত্র নির্মাণ শুরু করলে, তাতে বিস্মিত হওয়ার কোনো কারণ থাকবে না। সে ছায়াছবির শিরোনাম হতে পারে, ‘সাত মিনিটে চুরি হলো সাত রাজার ধন’।

ত্রোৎস্কির কথা বলছিলাম আমরা। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের নায়ক তিনি। এমনিতে আমাদের দেশে ট্রটস্কি নামে পরিচিত। জীবনের সন্ধ্যাবেলায় তিনি অন্য নারীর প্রতি আকর্ষিত হয়েছিলেন। এমন বাধভাঙা প্রেমে পড়েছিলেন যে, মনে হচ্ছিল তিনি প্রেমে দিওয়ানা হয়ে গেছেন। এই প্রেম হয়েছিল ম্যাক্সিকান শিল্পী ফ্রিদা কাহলোর সঙ্গে।
২২ জুলাই ২০২১
আজ আপনার রাগের তেজ এতটা বাড়বে যে আপনি ভুল করে নিজের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলটাই ডিলিট করে দিতে পারেন। শুধু তা-ই নয়, রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে পড়লে মনে হবে যেন পৃথিবীর সব গাড়ি একজোট হয়ে শুধু আপনার কাজেই বাগড়া দিতে এসেছে। আবেগের বশে আজ ভুলেও অনলাইনে কিছু অর্ডার করবেন না, কারণ আপনি এমন কিছু কিনে ফেলবেন, যা আসলে
১ ঘণ্টা আগে
তুক-অ-দামতুয়া নামটির মাঝেই রয়েছে অদ্ভুত এক রহস্য। তার ওপর এটি একটি ঝরনার নাম। এমনিতেই পাহাড়প্রেমীদের ছোট-বড় যেকোনো ঝরনার প্রতি রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা। সেটা যদি হয় দৈত্যাকার, তাহলে তো কথাই নেই।
১ দিন আগে
জাপান শিগগির বিদেশি পর্যটকদের জন্য ব্যয়বহুল গন্তব্যে পরিণত হতে পারে। কারণ, প্রায় ৪৮ বছর পর দেশটির সরকার ভিসা ফি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়া জানিয়েছেন, বিস্তারিত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ভিসা ফি বাড়ালে পর্যটনে কী প্রভাব পড়তে পারে, কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখছে। অন্যান্য দেশের ভি
১ দিন আগেফিচার ডেস্ক

জাপান শিগগির বিদেশি পর্যটকদের জন্য ব্যয়বহুল গন্তব্যে পরিণত হতে পারে। কারণ, প্রায় ৪৮ বছর পর দেশটির সরকার ভিসা ফি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়া জানিয়েছেন, বিস্তারিত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ভিসা ফি বাড়ালে পর্যটনে কী প্রভাব পড়তে পারে, কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখছে। অন্যান্য দেশের ভিসা ফি এবং বর্তমান পরিস্থিতিও তাঁরা বিবেচনায় রাখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে জাপানের ভিসা ফি অনেক কম।
এখন জাপানের একক এন্ট্রি ভিসার
ফি বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ১ হাজার ৭০০ টাকা। মাল্টিপল ভিসা ফি প্রায় ৩ হাজার ৫০০ টাকা। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অধিকাংশ দেশের ভিসা ফির তুলনায় অনেক কম। জি-সেভেন এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার গড় ভিসা চার্জের তুলনায় জাপানের ফি এখনো অনেক নিচে।
চলতি সময়ে জাপানে পর্যটকের ভিড় বেড়েছে ব্যাপক। এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৩১ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন বিদেশি পর্যটক জাপান ভ্রমণ করেছে। এটি ২০২৪ সালের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, এ বছরের শেষ নাগাদ দেশটিতে পর্যটকের সংখ্যা ৪০ মিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছাবে।
ভিসা ফি বাড়ানোর পাশাপাশি জাপান ‘ডিপারচার ট্যাক্স’ বা আন্তর্জাতিক পর্যটক
ফি বাড়ানোর বিষয় নিয়েও ভাবছে। বর্তমানে এর পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮০৫ টাকা। জাপানি নাগরিক ও বিদেশি পর্যটক উভয়কেই এই ফি দিতে হয়। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে জাপানে ভ্রমণ তুলনামূলক ব্যয়বহুল হতে পারে। কারণ, প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে বিদেশি পর্যটকদের জাপানে প্রবেশ করতে এখনকার চেয়ে বেশি ব্যয় করতে হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিবর্তন দেশের পর্যটনশিল্পকে দুর্বল করবে না। জাপানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, ইতিহাস ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধার কারণে পর্যটকেরা সব সময় দেশটি ভ্রমণে আগ্রহী থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জাপানের বিশ্বমানের পর্যটন অভিজ্ঞতা ও নিরাপদ পরিবেশের কারণে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়বে। এর পাশাপাশি, পর্যটন থেকে পাওয়া রাজস্বও বাড়বে, যা দেশটির জাতীয় অর্থনীতি ও পরিষেবা খাতকে আরও বড় করবে। ফলে জাপান অন্য অনেক দেশের মতো ব্যয়বহুল হলেও পর্যটকদের ভ্রমণ আনন্দে ঘাটতি পড়বে না।
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

জাপান শিগগির বিদেশি পর্যটকদের জন্য ব্যয়বহুল গন্তব্যে পরিণত হতে পারে। কারণ, প্রায় ৪৮ বছর পর দেশটির সরকার ভিসা ফি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়া জানিয়েছেন, বিস্তারিত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ভিসা ফি বাড়ালে পর্যটনে কী প্রভাব পড়তে পারে, কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখছে। অন্যান্য দেশের ভিসা ফি এবং বর্তমান পরিস্থিতিও তাঁরা বিবেচনায় রাখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে জাপানের ভিসা ফি অনেক কম।
এখন জাপানের একক এন্ট্রি ভিসার
ফি বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ১ হাজার ৭০০ টাকা। মাল্টিপল ভিসা ফি প্রায় ৩ হাজার ৫০০ টাকা। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অধিকাংশ দেশের ভিসা ফির তুলনায় অনেক কম। জি-সেভেন এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার গড় ভিসা চার্জের তুলনায় জাপানের ফি এখনো অনেক নিচে।
চলতি সময়ে জাপানে পর্যটকের ভিড় বেড়েছে ব্যাপক। এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৩১ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন বিদেশি পর্যটক জাপান ভ্রমণ করেছে। এটি ২০২৪ সালের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, এ বছরের শেষ নাগাদ দেশটিতে পর্যটকের সংখ্যা ৪০ মিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছাবে।
ভিসা ফি বাড়ানোর পাশাপাশি জাপান ‘ডিপারচার ট্যাক্স’ বা আন্তর্জাতিক পর্যটক
ফি বাড়ানোর বিষয় নিয়েও ভাবছে। বর্তমানে এর পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮০৫ টাকা। জাপানি নাগরিক ও বিদেশি পর্যটক উভয়কেই এই ফি দিতে হয়। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে জাপানে ভ্রমণ তুলনামূলক ব্যয়বহুল হতে পারে। কারণ, প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে বিদেশি পর্যটকদের জাপানে প্রবেশ করতে এখনকার চেয়ে বেশি ব্যয় করতে হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিবর্তন দেশের পর্যটনশিল্পকে দুর্বল করবে না। জাপানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, ইতিহাস ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধার কারণে পর্যটকেরা সব সময় দেশটি ভ্রমণে আগ্রহী থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জাপানের বিশ্বমানের পর্যটন অভিজ্ঞতা ও নিরাপদ পরিবেশের কারণে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়বে। এর পাশাপাশি, পর্যটন থেকে পাওয়া রাজস্বও বাড়বে, যা দেশটির জাতীয় অর্থনীতি ও পরিষেবা খাতকে আরও বড় করবে। ফলে জাপান অন্য অনেক দেশের মতো ব্যয়বহুল হলেও পর্যটকদের ভ্রমণ আনন্দে ঘাটতি পড়বে না।
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

ত্রোৎস্কির কথা বলছিলাম আমরা। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের নায়ক তিনি। এমনিতে আমাদের দেশে ট্রটস্কি নামে পরিচিত। জীবনের সন্ধ্যাবেলায় তিনি অন্য নারীর প্রতি আকর্ষিত হয়েছিলেন। এমন বাধভাঙা প্রেমে পড়েছিলেন যে, মনে হচ্ছিল তিনি প্রেমে দিওয়ানা হয়ে গেছেন। এই প্রেম হয়েছিল ম্যাক্সিকান শিল্পী ফ্রিদা কাহলোর সঙ্গে।
২২ জুলাই ২০২১
আজ আপনার রাগের তেজ এতটা বাড়বে যে আপনি ভুল করে নিজের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলটাই ডিলিট করে দিতে পারেন। শুধু তা-ই নয়, রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে পড়লে মনে হবে যেন পৃথিবীর সব গাড়ি একজোট হয়ে শুধু আপনার কাজেই বাগড়া দিতে এসেছে। আবেগের বশে আজ ভুলেও অনলাইনে কিছু অর্ডার করবেন না, কারণ আপনি এমন কিছু কিনে ফেলবেন, যা আসলে
১ ঘণ্টা আগে
তুক-অ-দামতুয়া নামটির মাঝেই রয়েছে অদ্ভুত এক রহস্য। তার ওপর এটি একটি ঝরনার নাম। এমনিতেই পাহাড়প্রেমীদের ছোট-বড় যেকোনো ঝরনার প্রতি রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা। সেটা যদি হয় দৈত্যাকার, তাহলে তো কথাই নেই।
১ দিন আগে
গত রোববার ১৯ অক্টোবর, সকাল ৯টা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। নিরাপত্তাপ্রহরীরা ইগল দৃষ্টিতে চারদিকে খেয়াল রাখছেন, পাহারা দিচ্ছেন। বহু স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা সর্বত্র। তার মধ্যেই চুরি হয়ে গেল বিশ্বের এক নম্বর জাদুঘর প্যারিসের লুভর। তখন সকাল ৯টা ৩৭ মিনিট। মাত্র সাত মিনিটে চুরি...
১ দিন আগে