
দক্ষিণ কোরিয়া সরকার আয়োজিত উৎসব ‘দেইগু কালারফুল ফেস্টিভ্যাল ২০২২’-এ অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশের তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটার। দক্ষিণ কোরিয়ার দেইগু শহরে গত ৮ থেকে ১০ জুলাই এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তুরঙ্গমীর আর্টিস্টিক ডিরেক্টর নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্ত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মন্টি বৈষ্ণব।
আজকের পত্রিকা: একজন নারী হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে নাচের মানুষ হিসেবে পরিচিতি তৈরি করা কতটা কঠিন বলে মনে হয়েছে আপনার?
পূজা সেনগুপ্ত: আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে কাজের সুযোগ পাবার একটাই মাপকাঠি, আর তা হলো যোগ্যতা। তবে আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরেকটু জটিল ছিল। কারণ আমি যখন নাচকে পেশা হিসেবে নেবার সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমাদের দেশে নাচের কোনো পেশাদার ক্ষেত্র তৈরি হয়নি। তাই নিজের নাচের চর্চা আর সৃজনশীলতার পাশাপাশি আমাকে আমার নাচের মার্কেটও তৈরি করতে হয়েছে। আমাদের দেশে নাচের পরিধি অনেক ছোট। আবার সংগীতের পরিধি অনেক বড়। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে আবার নাচের পরিধিটা অনেক বেশি প্রসারিত ও শক্তিশালী। কারণ নাচের ভাষা বিশ্বজনীন। তাই আমি শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক মানের কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমি যখন দেশে কাজ শুরু করি, তখন এখানে নাচের কোনো মার্কেট ছিল না। যে অনুষ্ঠানগুলো আয়োজন করা হতো, সেখানে গান বা অন্য জনপ্রিয় মাধ্যমের শিল্পীদের প্রাধান্য থাকত। হয়তো কোনো শিল্পীর সংগীত সন্ধ্যা হবে, শুরুতে একটা নাচ। গান আমরা শুনি আর নাচ দেখি। নাচ করার সময় যদি পেছনে যন্ত্রপাতি থাকে, সেটা দেখতে ভালো দেখাবে না। সে সময় আয়োজকদের বিষয়টা বোঝানো খুব কঠিন বিষয় ছিল। আরেকটা জিনিস লক্ষ করলাম, নাচের শিল্পীদের সম্মানী অনেক কম। আমি শুরুতেই একটা স্ট্যান্ড নিলাম। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমার নাচকে ঠিকমতো তুলে ধরার জন্য যে রকম আয়োজন প্রয়োজন, আয়োজকেরা সেটা নিশ্চিত করতে পারলেই কাজ করব, আর আমি উপযুক্ত বাজেটে কাজ করব। আমি অনেক কাজ ফিরিয়ে দিলাম, কম কাজ করলাম, কিন্তু যে কাজগুলো করলাম সেগুলো ভালো হলো। সবচেয়ে বড় কথা, আমি ‘না’ বলতে শিখলাম। এতে আমার লাভ হলো। দেখা গেল, কিছুদিনের মধ্যেই আমার শর্তেই সবাই আমাকে কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। কারণ, তত দিনে আসলে আমাদের দর্শক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। শিল্পের মানের সঙ্গে আমি কখনোই আপস করিনি। অবস্থান আর সম্মান জোর করে আদায় করা যায় না, অর্জন করে নিতে হয়। কাজের মানের কারণে দেশের বাইরে মূলধারার আয়োজনেও অংশগ্রহণের জন্য সরাসরি আমন্ত্রণ পেলাম। দেশের বাইরে পারফর্ম করার সময় চেষ্টা করেছি বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করতে। সেখানে আরেকটা বিষয় সমস্যা তৈরি করে। সেটা হলো, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের নামটা অনেক কম পরিচিত। অনেকে আমাদের ভারতের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলতেন। বাংলাদেশের একটা স্বতন্ত্র পরিচিতি তৈরি করা ছিল আমার জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তাই আমি সব সময় আমার কাজে এমন শিল্প উপকরণ আর শৈলী প্রয়োগ করেছি, যা সম্পূর্ণ আমাদের নিজস্ব, যা বাংলাদেশি। তবে লোকসংস্কৃতির এই উপকরণগুলো তো তৈরি থাকে না, খুঁজে নিতে হয়, বারবার খুঁজতে হয়—এটাই রিসার্চ। আমাকেও দেশের মূল সংস্কৃতির বিষয়গুলো খুঁজে খুঁজে বের করতে হয়েছে। আমার মূল বিষয়টা ছিল বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির রূপ তুলে ধরা। আসলে আমি একজন সামান্য ফেরিওয়ালা, আমার দেশের সংস্কৃতি নিয়ে সারা বিশ্বে ফেরি করছি।
আজকের পত্রিকা: সৃষ্টিশীল ভুবনে আমাদের নারীদের অবস্থান তৈরিতে সমস্যা আছে কি না? আপনার কী মনে হয়?
পূজা: প্রত্যেক মানুষের মধ্যে শক্তি আর সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে। প্রয়োজন সেটাকে জাগিয়ে তোলা। মানুষের ভেতরে লুকিয়ে থাকা শক্তিটা কিন্তু অনেক বড়। সেই শক্তিটাকে সবাই আবিষ্কার করতে পারেন না। যাঁরা পারেন, তাঁরা কোনো না কোনাভাবে সফল হন। এ বিষয়ে আমাদের দেশের নারীদের বলতে চাই, প্রতিবাদ করতে জানতে হবে। অন্যায় মুখ বুঝে সহ্য না করে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত। প্রতিবাদের মাধ্যমেই প্রতিকার আসবে।
আজকের পত্রিকা: দক্ষিণ কোরিয়ায় নিজের দেশের সংস্কৃতিকে উপস্থাপনের অনুভূতি কেমন মনে হচ্ছে? উৎসবে আরতি নাচের আইডিয়াটা কীভাবে এল?
পূজা: দেশের বাইরে যখন নিজেদের কোনো পারফরম্যান্স বা পরিবেশনা নিয়ে যাই, তখন আমাদের বিবেচনায় থাকে কীভাবে দেশের সংস্কৃতিকে সেই দেশের মাটিতে তুলে ধরব। এ ক্ষেত্রে শুধু পারফরম্যান্সের সময় নয়, আমাদের কথাবার্তায়, চলাফেরায়, পোশাকে, কস্টিউম-প্রপ্স—সবকিছুর মাধ্যমেই কীভাবে দেশকে তুলে ধরব সে বিষয়েও আমরা সব সময় সচেতন থাকি। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এই আমন্ত্রণ ২০১৯ সালের শেষের দিকে এসেছিল। তখন করোনার কারণে ফেস্টিভ্যালটা হলো না। আর আমাদেরও যাওয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করার ক্ষেত্রে দুটি চ্যালেঞ্জ কাজ করে। এক হলো, নিজের দেশের সংস্কৃতিকে খুঁজে বের করা। দুই হলো, সেটিকে ঠিক রেখে আন্তর্জাতিক দর্শকের উপযোগী করে নিজের কাজকে উপস্থাপন করা। এ বিষয় দুটিকে বিবেচনায় রেখেই আরতি নাচকে বেছে নিয়েছিলাম। আমি বিভিন্ন সময়ে দেখেছি, আরতি নাচ আমাদের লোকসংস্কৃতির অংশ। তবে এটা পুরোপুরি নাচ না, এর সাথে অ্যাক্রোবেটিক কৌশলও মিশে আছে। আমি এই নাচের নতুন স্টেপ বানানোর জন্য কাজ করতে শুরু করলাম, এটাকে একটা মূলধারায় পরিবেশনযোগ্য নাচের কাঠামো দেবার চেষ্টা করলাম। ভাবলাম, আমাদের মৃত্তিকাসংলগ্ন মানুষের নাচের আঙ্গিকের সঙ্গে যদি আরতি নাচকে ফিউশন করি, তাহলে এই নাচের পরিধি অনেক বেড়ে যাবে। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্যারেডে রাস্তায় নাচটা পরিবেশন করতে হবে আর নাচের মধ্য দিয়ে দেশের আরতি করব, তাই রবীন্দ্রনাথের ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ গানটি বেছে নিলাম। এই নাচ পরিবেশনের পর আমরা অনেক বেশি প্রশংসিত হয়েছি। নিজেরাও অনেক আনন্দিত ছিলাম।
আজকের পত্রিকা: আপনার শৈশব সম্পর্কে জানতে চাই। ছোটবেলা থেকেই কি নাচের প্রতি আগ্রহী ছিলেন?
পূজা: ছোটবেলা থেকে আমার ছকে বাঁধা জীবন ছিল। নিয়মের মধ্যে যে ধরাবাঁধা জীবন, সেই জীবনের বাইরেও যে সুন্দর একটা জীবন আছে, সেটা আমি প্রথম বুঝতে পারি যখন আমি আমার নেশাকে পেশা হিসেবে বেছে নেবার সিদ্ধান্ত নিই। নাচ নিয়ে ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাই। আমার আসলে যাওয়ার কথা ছিল জার্মানিতে। পদার্থবিজ্ঞানের ওপর পিএইচডি করার জন্য। কিন্তু তখন আমার শিক্ষক কবির স্যারের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে নাচকে আমি আমার ভবিষ্যৎ হিসেবে বেছে নিলাম। আমার স্যার বলতেন, ‘যে কাজে তোমার আনন্দ আছে, সেটাই যদি পেশা হয়, তাহলে তোমার জীবনটা আনন্দের হবে। তা না হলে একটা অনুশোচনা থেকে যাবে।’
তবে নিজের এই পেশাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করাটা সহজ ছিল না। আমি পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে যেতাম না। কারণ যেখানেই যাই না কেন, আমি নাচ করি বা নিজেকে কোরিওগ্রাফার হিসেবে পরিচয় দিলে সবাই আরও জানতে চাইত নাচের পাশাপাশি আমি আর কী করি। এরপর যখন দেশে-বিদেশে অনেক কাজ করতে শুরু করলাম, পত্র-পত্রিকায় ভালো নিউজ হলো, স্বীকৃতি পেলাম, তখন আবার এই মানুষগুলোই আমার বাবা-মায়ের কাছে জানতে চান, পূজা কেন আজকের অনুষ্ঠানে এল না? এরপর দেখা গেল, আমাদের বাসায় দুটো আমন্ত্রণ কার্ড আসতে লাগল। একটা আমার পরিবারের নামে, আরেকটা আলাদা কার্ড, আমার নামে।
আজকের পত্রিকা: কেমন হতে পারে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
পূজা: আমি কখনো পরিচিত বা বিখ্যাত হওয়ার জন্য কাজ করিনি। আমি আমার কাজটা ভালোবেসেই করেছি। আমার ফোকাস হলো ভালো কাজ করা। মহাভারতের দ্রোণাচার্য যেমন সবাইকে তির-ধনুক হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কী দেখতে পাও। একেকজন একেকটা বললেন, কেউ আকাশ, কেউ গাছ, কেউ পাখি দেখেন। কিন্তু অর্জুন বলেছিলেন আমি পাখির চোখ দেখি। সে রকম আমি আমার লক্ষ্যটাই দেখি। বাংলাদেশের নাচের অনেক ভালো একটা ভবিষ্যৎ হবে। আন্তর্জাতিক মূলধারায় বাংলাদেশের নিজস্ব নৃত্যধারাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা আর দেশে নাচের পেশাদার ক্ষেত্রকে আরও বিস্তৃত করাই আমার লক্ষ্য।
আজকের পত্রিকা: দেইগু কালারফুল ফেস্টিভ্যালে আপনারা বাংলাদেশের তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটারের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই থিয়েটার সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।
পূজা: আমার দাদু আমার নাম তুরঙ্গমী রাখতে চেয়েছিলেন। কোনো কারণে আমার এই নাম রাখা হয়নি। তুরঙ্গমী নামের অর্থ ‘যে মেয়ে ঘোড়া চালাতে পারে’। অর্থাৎ অশ্বারোহী, ঘোড়সওয়ার। যখন এ ঘটনার কথা শুনেছি, তখন থেকে মনে মনে ভাবলাম, আমি নিজে এই নামে পরিচিত হইনি, কিন্তু বড় হয়ে যে কাজগুলো করব, সেই কাজগুলো তুরঙ্গমী নামে পরিচিত হবে। ২০১৪ সালে তুরঙ্গমীর জন্ম। এটি তরুণদের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম। এই মুহূর্তে এই প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা আছে। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে এখানকার নৃত্যশিল্পী ও কলাকুশলীদের চাকরি দেওয়া।
দক্ষিণ কোরিয়ার উৎসবে আমাদের দুটি পরিবেশনা ছিল—একটি ‘পাঁচফোড়ন’, আরেকটি ‘নন্দিনী’। আমরা পাঁচফোড়নের পরিবেশনায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে দেখিয়েছি, যাদের ওপর ভিত্তি করে আমাদের দেশের অর্থনীতি টিকে আছে। যেমন–কৃষক, শ্রমিক, জেলে, মাঝি, মৌয়াল, গার্মেন্টসকর্মী। সব পেশার লোকের সমাবেশ আমাদের এই দেশ। সেটাই পাঁচফোড়নের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আরেকটা পরিবেশনা ছিল, যেটা আমরা প্যারেডে করেছি। সেটার নাম নন্দিনী। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে আরতি নৃত্য। আমরা আমাদের দেশমাতৃকাকে নন্দিনীরূপেই দেখানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের সর্বমোট ১০ জনের একটা দল ছিল।
আজকের পত্রিকা: আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনটা কেমন মনে হয় আপনার?
পূজা: আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনটা আসলে শৌখিন, কিন্তু অপেশাদারদের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। যদি এভাবে চলতে থাকে, তবে এখান থেকে ভালো কাজ হবে না। দুই-চারজন নিজের মতো করে ভালো কাজ করলেও সামগ্রিকভাবে কোনো লাভ হবে না। নাচ এ দেশে অনেক বড় কাজের ক্ষেত্র হতে পারে। কারণ এ দেশের প্রচুর মানুষ নাচ করে। কিন্তু তাদের সঠিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। শুধু নাচতে জানলেই হবে না। নাচের জন্য আলো, সেট, মিউজিকের দরকার হয়। মঞ্চে সেট ব্যবহার করব কি না, সেই সেটের আঙ্গিকটা কেমন হবে, মিউজিকটা কেমন হবে—নাচকে শিল্প হিসেবে তুলে ধরার জন্য এই বিষয়গুলো জানা খুব জরুরি। একজন কোরিওগ্রাফারের এই বিষয়গুলো জানা থাকলে তাঁর কাজ মানসম্পন্ন হবে। আরেকটা বিষয় হলো, এ দেশে নকল করার প্রবণতা অনেক বেশি। এটা যে একটি অপরাধ, সেটা অনেকে বুঝতে চান না। কপিরাইট আইনের সচেতনতা প্রয়োজন। তবে আমাদের তরুণ প্রজন্ম অনেক সম্ভাবনাময়। তাদের যদি সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া যায়, তাহলে নাচের সেক্টরে আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব। সরকার যদি এ দিকটায় মনোযোগ দেয়, তাহলে ভালো হবে। আর এতে তো আসলে সরকারের লাভ হবে। কারণ দেশে শিল্প-সংস্কৃতির কাজের চর্চা যতই বাড়বে, অপরাধের মাত্রা ততই কমে আসবে। এ ছাড়া এটা একটা লাভজনক খাত হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। তখন সরকারকে আর শেষ বয়সে দুস্থ শিল্পীদের অনুদান দিতে হবে না, বরং শিল্পীরাই আয়কর দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে পারবেন।

দক্ষিণ কোরিয়া সরকার আয়োজিত উৎসব ‘দেইগু কালারফুল ফেস্টিভ্যাল ২০২২’-এ অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশের তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটার। দক্ষিণ কোরিয়ার দেইগু শহরে গত ৮ থেকে ১০ জুলাই এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তুরঙ্গমীর আর্টিস্টিক ডিরেক্টর নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্ত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মন্টি বৈষ্ণব।
আজকের পত্রিকা: একজন নারী হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে নাচের মানুষ হিসেবে পরিচিতি তৈরি করা কতটা কঠিন বলে মনে হয়েছে আপনার?
পূজা সেনগুপ্ত: আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে কাজের সুযোগ পাবার একটাই মাপকাঠি, আর তা হলো যোগ্যতা। তবে আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরেকটু জটিল ছিল। কারণ আমি যখন নাচকে পেশা হিসেবে নেবার সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমাদের দেশে নাচের কোনো পেশাদার ক্ষেত্র তৈরি হয়নি। তাই নিজের নাচের চর্চা আর সৃজনশীলতার পাশাপাশি আমাকে আমার নাচের মার্কেটও তৈরি করতে হয়েছে। আমাদের দেশে নাচের পরিধি অনেক ছোট। আবার সংগীতের পরিধি অনেক বড়। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে আবার নাচের পরিধিটা অনেক বেশি প্রসারিত ও শক্তিশালী। কারণ নাচের ভাষা বিশ্বজনীন। তাই আমি শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক মানের কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমি যখন দেশে কাজ শুরু করি, তখন এখানে নাচের কোনো মার্কেট ছিল না। যে অনুষ্ঠানগুলো আয়োজন করা হতো, সেখানে গান বা অন্য জনপ্রিয় মাধ্যমের শিল্পীদের প্রাধান্য থাকত। হয়তো কোনো শিল্পীর সংগীত সন্ধ্যা হবে, শুরুতে একটা নাচ। গান আমরা শুনি আর নাচ দেখি। নাচ করার সময় যদি পেছনে যন্ত্রপাতি থাকে, সেটা দেখতে ভালো দেখাবে না। সে সময় আয়োজকদের বিষয়টা বোঝানো খুব কঠিন বিষয় ছিল। আরেকটা জিনিস লক্ষ করলাম, নাচের শিল্পীদের সম্মানী অনেক কম। আমি শুরুতেই একটা স্ট্যান্ড নিলাম। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমার নাচকে ঠিকমতো তুলে ধরার জন্য যে রকম আয়োজন প্রয়োজন, আয়োজকেরা সেটা নিশ্চিত করতে পারলেই কাজ করব, আর আমি উপযুক্ত বাজেটে কাজ করব। আমি অনেক কাজ ফিরিয়ে দিলাম, কম কাজ করলাম, কিন্তু যে কাজগুলো করলাম সেগুলো ভালো হলো। সবচেয়ে বড় কথা, আমি ‘না’ বলতে শিখলাম। এতে আমার লাভ হলো। দেখা গেল, কিছুদিনের মধ্যেই আমার শর্তেই সবাই আমাকে কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। কারণ, তত দিনে আসলে আমাদের দর্শক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। শিল্পের মানের সঙ্গে আমি কখনোই আপস করিনি। অবস্থান আর সম্মান জোর করে আদায় করা যায় না, অর্জন করে নিতে হয়। কাজের মানের কারণে দেশের বাইরে মূলধারার আয়োজনেও অংশগ্রহণের জন্য সরাসরি আমন্ত্রণ পেলাম। দেশের বাইরে পারফর্ম করার সময় চেষ্টা করেছি বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করতে। সেখানে আরেকটা বিষয় সমস্যা তৈরি করে। সেটা হলো, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের নামটা অনেক কম পরিচিত। অনেকে আমাদের ভারতের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলতেন। বাংলাদেশের একটা স্বতন্ত্র পরিচিতি তৈরি করা ছিল আমার জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তাই আমি সব সময় আমার কাজে এমন শিল্প উপকরণ আর শৈলী প্রয়োগ করেছি, যা সম্পূর্ণ আমাদের নিজস্ব, যা বাংলাদেশি। তবে লোকসংস্কৃতির এই উপকরণগুলো তো তৈরি থাকে না, খুঁজে নিতে হয়, বারবার খুঁজতে হয়—এটাই রিসার্চ। আমাকেও দেশের মূল সংস্কৃতির বিষয়গুলো খুঁজে খুঁজে বের করতে হয়েছে। আমার মূল বিষয়টা ছিল বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির রূপ তুলে ধরা। আসলে আমি একজন সামান্য ফেরিওয়ালা, আমার দেশের সংস্কৃতি নিয়ে সারা বিশ্বে ফেরি করছি।
আজকের পত্রিকা: সৃষ্টিশীল ভুবনে আমাদের নারীদের অবস্থান তৈরিতে সমস্যা আছে কি না? আপনার কী মনে হয়?
পূজা: প্রত্যেক মানুষের মধ্যে শক্তি আর সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে। প্রয়োজন সেটাকে জাগিয়ে তোলা। মানুষের ভেতরে লুকিয়ে থাকা শক্তিটা কিন্তু অনেক বড়। সেই শক্তিটাকে সবাই আবিষ্কার করতে পারেন না। যাঁরা পারেন, তাঁরা কোনো না কোনাভাবে সফল হন। এ বিষয়ে আমাদের দেশের নারীদের বলতে চাই, প্রতিবাদ করতে জানতে হবে। অন্যায় মুখ বুঝে সহ্য না করে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত। প্রতিবাদের মাধ্যমেই প্রতিকার আসবে।
আজকের পত্রিকা: দক্ষিণ কোরিয়ায় নিজের দেশের সংস্কৃতিকে উপস্থাপনের অনুভূতি কেমন মনে হচ্ছে? উৎসবে আরতি নাচের আইডিয়াটা কীভাবে এল?
পূজা: দেশের বাইরে যখন নিজেদের কোনো পারফরম্যান্স বা পরিবেশনা নিয়ে যাই, তখন আমাদের বিবেচনায় থাকে কীভাবে দেশের সংস্কৃতিকে সেই দেশের মাটিতে তুলে ধরব। এ ক্ষেত্রে শুধু পারফরম্যান্সের সময় নয়, আমাদের কথাবার্তায়, চলাফেরায়, পোশাকে, কস্টিউম-প্রপ্স—সবকিছুর মাধ্যমেই কীভাবে দেশকে তুলে ধরব সে বিষয়েও আমরা সব সময় সচেতন থাকি। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এই আমন্ত্রণ ২০১৯ সালের শেষের দিকে এসেছিল। তখন করোনার কারণে ফেস্টিভ্যালটা হলো না। আর আমাদেরও যাওয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করার ক্ষেত্রে দুটি চ্যালেঞ্জ কাজ করে। এক হলো, নিজের দেশের সংস্কৃতিকে খুঁজে বের করা। দুই হলো, সেটিকে ঠিক রেখে আন্তর্জাতিক দর্শকের উপযোগী করে নিজের কাজকে উপস্থাপন করা। এ বিষয় দুটিকে বিবেচনায় রেখেই আরতি নাচকে বেছে নিয়েছিলাম। আমি বিভিন্ন সময়ে দেখেছি, আরতি নাচ আমাদের লোকসংস্কৃতির অংশ। তবে এটা পুরোপুরি নাচ না, এর সাথে অ্যাক্রোবেটিক কৌশলও মিশে আছে। আমি এই নাচের নতুন স্টেপ বানানোর জন্য কাজ করতে শুরু করলাম, এটাকে একটা মূলধারায় পরিবেশনযোগ্য নাচের কাঠামো দেবার চেষ্টা করলাম। ভাবলাম, আমাদের মৃত্তিকাসংলগ্ন মানুষের নাচের আঙ্গিকের সঙ্গে যদি আরতি নাচকে ফিউশন করি, তাহলে এই নাচের পরিধি অনেক বেড়ে যাবে। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্যারেডে রাস্তায় নাচটা পরিবেশন করতে হবে আর নাচের মধ্য দিয়ে দেশের আরতি করব, তাই রবীন্দ্রনাথের ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ গানটি বেছে নিলাম। এই নাচ পরিবেশনের পর আমরা অনেক বেশি প্রশংসিত হয়েছি। নিজেরাও অনেক আনন্দিত ছিলাম।
আজকের পত্রিকা: আপনার শৈশব সম্পর্কে জানতে চাই। ছোটবেলা থেকেই কি নাচের প্রতি আগ্রহী ছিলেন?
পূজা: ছোটবেলা থেকে আমার ছকে বাঁধা জীবন ছিল। নিয়মের মধ্যে যে ধরাবাঁধা জীবন, সেই জীবনের বাইরেও যে সুন্দর একটা জীবন আছে, সেটা আমি প্রথম বুঝতে পারি যখন আমি আমার নেশাকে পেশা হিসেবে বেছে নেবার সিদ্ধান্ত নিই। নাচ নিয়ে ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাই। আমার আসলে যাওয়ার কথা ছিল জার্মানিতে। পদার্থবিজ্ঞানের ওপর পিএইচডি করার জন্য। কিন্তু তখন আমার শিক্ষক কবির স্যারের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে নাচকে আমি আমার ভবিষ্যৎ হিসেবে বেছে নিলাম। আমার স্যার বলতেন, ‘যে কাজে তোমার আনন্দ আছে, সেটাই যদি পেশা হয়, তাহলে তোমার জীবনটা আনন্দের হবে। তা না হলে একটা অনুশোচনা থেকে যাবে।’
তবে নিজের এই পেশাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করাটা সহজ ছিল না। আমি পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে যেতাম না। কারণ যেখানেই যাই না কেন, আমি নাচ করি বা নিজেকে কোরিওগ্রাফার হিসেবে পরিচয় দিলে সবাই আরও জানতে চাইত নাচের পাশাপাশি আমি আর কী করি। এরপর যখন দেশে-বিদেশে অনেক কাজ করতে শুরু করলাম, পত্র-পত্রিকায় ভালো নিউজ হলো, স্বীকৃতি পেলাম, তখন আবার এই মানুষগুলোই আমার বাবা-মায়ের কাছে জানতে চান, পূজা কেন আজকের অনুষ্ঠানে এল না? এরপর দেখা গেল, আমাদের বাসায় দুটো আমন্ত্রণ কার্ড আসতে লাগল। একটা আমার পরিবারের নামে, আরেকটা আলাদা কার্ড, আমার নামে।
আজকের পত্রিকা: কেমন হতে পারে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
পূজা: আমি কখনো পরিচিত বা বিখ্যাত হওয়ার জন্য কাজ করিনি। আমি আমার কাজটা ভালোবেসেই করেছি। আমার ফোকাস হলো ভালো কাজ করা। মহাভারতের দ্রোণাচার্য যেমন সবাইকে তির-ধনুক হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কী দেখতে পাও। একেকজন একেকটা বললেন, কেউ আকাশ, কেউ গাছ, কেউ পাখি দেখেন। কিন্তু অর্জুন বলেছিলেন আমি পাখির চোখ দেখি। সে রকম আমি আমার লক্ষ্যটাই দেখি। বাংলাদেশের নাচের অনেক ভালো একটা ভবিষ্যৎ হবে। আন্তর্জাতিক মূলধারায় বাংলাদেশের নিজস্ব নৃত্যধারাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা আর দেশে নাচের পেশাদার ক্ষেত্রকে আরও বিস্তৃত করাই আমার লক্ষ্য।
আজকের পত্রিকা: দেইগু কালারফুল ফেস্টিভ্যালে আপনারা বাংলাদেশের তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটারের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই থিয়েটার সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।
পূজা: আমার দাদু আমার নাম তুরঙ্গমী রাখতে চেয়েছিলেন। কোনো কারণে আমার এই নাম রাখা হয়নি। তুরঙ্গমী নামের অর্থ ‘যে মেয়ে ঘোড়া চালাতে পারে’। অর্থাৎ অশ্বারোহী, ঘোড়সওয়ার। যখন এ ঘটনার কথা শুনেছি, তখন থেকে মনে মনে ভাবলাম, আমি নিজে এই নামে পরিচিত হইনি, কিন্তু বড় হয়ে যে কাজগুলো করব, সেই কাজগুলো তুরঙ্গমী নামে পরিচিত হবে। ২০১৪ সালে তুরঙ্গমীর জন্ম। এটি তরুণদের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম। এই মুহূর্তে এই প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা আছে। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে এখানকার নৃত্যশিল্পী ও কলাকুশলীদের চাকরি দেওয়া।
দক্ষিণ কোরিয়ার উৎসবে আমাদের দুটি পরিবেশনা ছিল—একটি ‘পাঁচফোড়ন’, আরেকটি ‘নন্দিনী’। আমরা পাঁচফোড়নের পরিবেশনায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে দেখিয়েছি, যাদের ওপর ভিত্তি করে আমাদের দেশের অর্থনীতি টিকে আছে। যেমন–কৃষক, শ্রমিক, জেলে, মাঝি, মৌয়াল, গার্মেন্টসকর্মী। সব পেশার লোকের সমাবেশ আমাদের এই দেশ। সেটাই পাঁচফোড়নের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আরেকটা পরিবেশনা ছিল, যেটা আমরা প্যারেডে করেছি। সেটার নাম নন্দিনী। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে আরতি নৃত্য। আমরা আমাদের দেশমাতৃকাকে নন্দিনীরূপেই দেখানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের সর্বমোট ১০ জনের একটা দল ছিল।
আজকের পত্রিকা: আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনটা কেমন মনে হয় আপনার?
পূজা: আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনটা আসলে শৌখিন, কিন্তু অপেশাদারদের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। যদি এভাবে চলতে থাকে, তবে এখান থেকে ভালো কাজ হবে না। দুই-চারজন নিজের মতো করে ভালো কাজ করলেও সামগ্রিকভাবে কোনো লাভ হবে না। নাচ এ দেশে অনেক বড় কাজের ক্ষেত্র হতে পারে। কারণ এ দেশের প্রচুর মানুষ নাচ করে। কিন্তু তাদের সঠিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। শুধু নাচতে জানলেই হবে না। নাচের জন্য আলো, সেট, মিউজিকের দরকার হয়। মঞ্চে সেট ব্যবহার করব কি না, সেই সেটের আঙ্গিকটা কেমন হবে, মিউজিকটা কেমন হবে—নাচকে শিল্প হিসেবে তুলে ধরার জন্য এই বিষয়গুলো জানা খুব জরুরি। একজন কোরিওগ্রাফারের এই বিষয়গুলো জানা থাকলে তাঁর কাজ মানসম্পন্ন হবে। আরেকটা বিষয় হলো, এ দেশে নকল করার প্রবণতা অনেক বেশি। এটা যে একটি অপরাধ, সেটা অনেকে বুঝতে চান না। কপিরাইট আইনের সচেতনতা প্রয়োজন। তবে আমাদের তরুণ প্রজন্ম অনেক সম্ভাবনাময়। তাদের যদি সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া যায়, তাহলে নাচের সেক্টরে আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব। সরকার যদি এ দিকটায় মনোযোগ দেয়, তাহলে ভালো হবে। আর এতে তো আসলে সরকারের লাভ হবে। কারণ দেশে শিল্প-সংস্কৃতির কাজের চর্চা যতই বাড়বে, অপরাধের মাত্রা ততই কমে আসবে। এ ছাড়া এটা একটা লাভজনক খাত হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। তখন সরকারকে আর শেষ বয়সে দুস্থ শিল্পীদের অনুদান দিতে হবে না, বরং শিল্পীরাই আয়কর দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে পারবেন।

দক্ষিণ কোরিয়া সরকার আয়োজিত উৎসব ‘দেইগু কালারফুল ফেস্টিভ্যাল ২০২২’-এ অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশের তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটার। দক্ষিণ কোরিয়ার দেইগু শহরে গত ৮ থেকে ১০ জুলাই এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তুরঙ্গমীর আর্টিস্টিক ডিরেক্টর নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্ত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মন্টি বৈষ্ণব।
আজকের পত্রিকা: একজন নারী হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে নাচের মানুষ হিসেবে পরিচিতি তৈরি করা কতটা কঠিন বলে মনে হয়েছে আপনার?
পূজা সেনগুপ্ত: আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে কাজের সুযোগ পাবার একটাই মাপকাঠি, আর তা হলো যোগ্যতা। তবে আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরেকটু জটিল ছিল। কারণ আমি যখন নাচকে পেশা হিসেবে নেবার সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমাদের দেশে নাচের কোনো পেশাদার ক্ষেত্র তৈরি হয়নি। তাই নিজের নাচের চর্চা আর সৃজনশীলতার পাশাপাশি আমাকে আমার নাচের মার্কেটও তৈরি করতে হয়েছে। আমাদের দেশে নাচের পরিধি অনেক ছোট। আবার সংগীতের পরিধি অনেক বড়। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে আবার নাচের পরিধিটা অনেক বেশি প্রসারিত ও শক্তিশালী। কারণ নাচের ভাষা বিশ্বজনীন। তাই আমি শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক মানের কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমি যখন দেশে কাজ শুরু করি, তখন এখানে নাচের কোনো মার্কেট ছিল না। যে অনুষ্ঠানগুলো আয়োজন করা হতো, সেখানে গান বা অন্য জনপ্রিয় মাধ্যমের শিল্পীদের প্রাধান্য থাকত। হয়তো কোনো শিল্পীর সংগীত সন্ধ্যা হবে, শুরুতে একটা নাচ। গান আমরা শুনি আর নাচ দেখি। নাচ করার সময় যদি পেছনে যন্ত্রপাতি থাকে, সেটা দেখতে ভালো দেখাবে না। সে সময় আয়োজকদের বিষয়টা বোঝানো খুব কঠিন বিষয় ছিল। আরেকটা জিনিস লক্ষ করলাম, নাচের শিল্পীদের সম্মানী অনেক কম। আমি শুরুতেই একটা স্ট্যান্ড নিলাম। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমার নাচকে ঠিকমতো তুলে ধরার জন্য যে রকম আয়োজন প্রয়োজন, আয়োজকেরা সেটা নিশ্চিত করতে পারলেই কাজ করব, আর আমি উপযুক্ত বাজেটে কাজ করব। আমি অনেক কাজ ফিরিয়ে দিলাম, কম কাজ করলাম, কিন্তু যে কাজগুলো করলাম সেগুলো ভালো হলো। সবচেয়ে বড় কথা, আমি ‘না’ বলতে শিখলাম। এতে আমার লাভ হলো। দেখা গেল, কিছুদিনের মধ্যেই আমার শর্তেই সবাই আমাকে কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। কারণ, তত দিনে আসলে আমাদের দর্শক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। শিল্পের মানের সঙ্গে আমি কখনোই আপস করিনি। অবস্থান আর সম্মান জোর করে আদায় করা যায় না, অর্জন করে নিতে হয়। কাজের মানের কারণে দেশের বাইরে মূলধারার আয়োজনেও অংশগ্রহণের জন্য সরাসরি আমন্ত্রণ পেলাম। দেশের বাইরে পারফর্ম করার সময় চেষ্টা করেছি বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করতে। সেখানে আরেকটা বিষয় সমস্যা তৈরি করে। সেটা হলো, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের নামটা অনেক কম পরিচিত। অনেকে আমাদের ভারতের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলতেন। বাংলাদেশের একটা স্বতন্ত্র পরিচিতি তৈরি করা ছিল আমার জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তাই আমি সব সময় আমার কাজে এমন শিল্প উপকরণ আর শৈলী প্রয়োগ করেছি, যা সম্পূর্ণ আমাদের নিজস্ব, যা বাংলাদেশি। তবে লোকসংস্কৃতির এই উপকরণগুলো তো তৈরি থাকে না, খুঁজে নিতে হয়, বারবার খুঁজতে হয়—এটাই রিসার্চ। আমাকেও দেশের মূল সংস্কৃতির বিষয়গুলো খুঁজে খুঁজে বের করতে হয়েছে। আমার মূল বিষয়টা ছিল বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির রূপ তুলে ধরা। আসলে আমি একজন সামান্য ফেরিওয়ালা, আমার দেশের সংস্কৃতি নিয়ে সারা বিশ্বে ফেরি করছি।
আজকের পত্রিকা: সৃষ্টিশীল ভুবনে আমাদের নারীদের অবস্থান তৈরিতে সমস্যা আছে কি না? আপনার কী মনে হয়?
পূজা: প্রত্যেক মানুষের মধ্যে শক্তি আর সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে। প্রয়োজন সেটাকে জাগিয়ে তোলা। মানুষের ভেতরে লুকিয়ে থাকা শক্তিটা কিন্তু অনেক বড়। সেই শক্তিটাকে সবাই আবিষ্কার করতে পারেন না। যাঁরা পারেন, তাঁরা কোনো না কোনাভাবে সফল হন। এ বিষয়ে আমাদের দেশের নারীদের বলতে চাই, প্রতিবাদ করতে জানতে হবে। অন্যায় মুখ বুঝে সহ্য না করে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত। প্রতিবাদের মাধ্যমেই প্রতিকার আসবে।
আজকের পত্রিকা: দক্ষিণ কোরিয়ায় নিজের দেশের সংস্কৃতিকে উপস্থাপনের অনুভূতি কেমন মনে হচ্ছে? উৎসবে আরতি নাচের আইডিয়াটা কীভাবে এল?
পূজা: দেশের বাইরে যখন নিজেদের কোনো পারফরম্যান্স বা পরিবেশনা নিয়ে যাই, তখন আমাদের বিবেচনায় থাকে কীভাবে দেশের সংস্কৃতিকে সেই দেশের মাটিতে তুলে ধরব। এ ক্ষেত্রে শুধু পারফরম্যান্সের সময় নয়, আমাদের কথাবার্তায়, চলাফেরায়, পোশাকে, কস্টিউম-প্রপ্স—সবকিছুর মাধ্যমেই কীভাবে দেশকে তুলে ধরব সে বিষয়েও আমরা সব সময় সচেতন থাকি। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এই আমন্ত্রণ ২০১৯ সালের শেষের দিকে এসেছিল। তখন করোনার কারণে ফেস্টিভ্যালটা হলো না। আর আমাদেরও যাওয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করার ক্ষেত্রে দুটি চ্যালেঞ্জ কাজ করে। এক হলো, নিজের দেশের সংস্কৃতিকে খুঁজে বের করা। দুই হলো, সেটিকে ঠিক রেখে আন্তর্জাতিক দর্শকের উপযোগী করে নিজের কাজকে উপস্থাপন করা। এ বিষয় দুটিকে বিবেচনায় রেখেই আরতি নাচকে বেছে নিয়েছিলাম। আমি বিভিন্ন সময়ে দেখেছি, আরতি নাচ আমাদের লোকসংস্কৃতির অংশ। তবে এটা পুরোপুরি নাচ না, এর সাথে অ্যাক্রোবেটিক কৌশলও মিশে আছে। আমি এই নাচের নতুন স্টেপ বানানোর জন্য কাজ করতে শুরু করলাম, এটাকে একটা মূলধারায় পরিবেশনযোগ্য নাচের কাঠামো দেবার চেষ্টা করলাম। ভাবলাম, আমাদের মৃত্তিকাসংলগ্ন মানুষের নাচের আঙ্গিকের সঙ্গে যদি আরতি নাচকে ফিউশন করি, তাহলে এই নাচের পরিধি অনেক বেড়ে যাবে। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্যারেডে রাস্তায় নাচটা পরিবেশন করতে হবে আর নাচের মধ্য দিয়ে দেশের আরতি করব, তাই রবীন্দ্রনাথের ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ গানটি বেছে নিলাম। এই নাচ পরিবেশনের পর আমরা অনেক বেশি প্রশংসিত হয়েছি। নিজেরাও অনেক আনন্দিত ছিলাম।
আজকের পত্রিকা: আপনার শৈশব সম্পর্কে জানতে চাই। ছোটবেলা থেকেই কি নাচের প্রতি আগ্রহী ছিলেন?
পূজা: ছোটবেলা থেকে আমার ছকে বাঁধা জীবন ছিল। নিয়মের মধ্যে যে ধরাবাঁধা জীবন, সেই জীবনের বাইরেও যে সুন্দর একটা জীবন আছে, সেটা আমি প্রথম বুঝতে পারি যখন আমি আমার নেশাকে পেশা হিসেবে বেছে নেবার সিদ্ধান্ত নিই। নাচ নিয়ে ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাই। আমার আসলে যাওয়ার কথা ছিল জার্মানিতে। পদার্থবিজ্ঞানের ওপর পিএইচডি করার জন্য। কিন্তু তখন আমার শিক্ষক কবির স্যারের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে নাচকে আমি আমার ভবিষ্যৎ হিসেবে বেছে নিলাম। আমার স্যার বলতেন, ‘যে কাজে তোমার আনন্দ আছে, সেটাই যদি পেশা হয়, তাহলে তোমার জীবনটা আনন্দের হবে। তা না হলে একটা অনুশোচনা থেকে যাবে।’
তবে নিজের এই পেশাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করাটা সহজ ছিল না। আমি পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে যেতাম না। কারণ যেখানেই যাই না কেন, আমি নাচ করি বা নিজেকে কোরিওগ্রাফার হিসেবে পরিচয় দিলে সবাই আরও জানতে চাইত নাচের পাশাপাশি আমি আর কী করি। এরপর যখন দেশে-বিদেশে অনেক কাজ করতে শুরু করলাম, পত্র-পত্রিকায় ভালো নিউজ হলো, স্বীকৃতি পেলাম, তখন আবার এই মানুষগুলোই আমার বাবা-মায়ের কাছে জানতে চান, পূজা কেন আজকের অনুষ্ঠানে এল না? এরপর দেখা গেল, আমাদের বাসায় দুটো আমন্ত্রণ কার্ড আসতে লাগল। একটা আমার পরিবারের নামে, আরেকটা আলাদা কার্ড, আমার নামে।
আজকের পত্রিকা: কেমন হতে পারে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
পূজা: আমি কখনো পরিচিত বা বিখ্যাত হওয়ার জন্য কাজ করিনি। আমি আমার কাজটা ভালোবেসেই করেছি। আমার ফোকাস হলো ভালো কাজ করা। মহাভারতের দ্রোণাচার্য যেমন সবাইকে তির-ধনুক হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কী দেখতে পাও। একেকজন একেকটা বললেন, কেউ আকাশ, কেউ গাছ, কেউ পাখি দেখেন। কিন্তু অর্জুন বলেছিলেন আমি পাখির চোখ দেখি। সে রকম আমি আমার লক্ষ্যটাই দেখি। বাংলাদেশের নাচের অনেক ভালো একটা ভবিষ্যৎ হবে। আন্তর্জাতিক মূলধারায় বাংলাদেশের নিজস্ব নৃত্যধারাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা আর দেশে নাচের পেশাদার ক্ষেত্রকে আরও বিস্তৃত করাই আমার লক্ষ্য।
আজকের পত্রিকা: দেইগু কালারফুল ফেস্টিভ্যালে আপনারা বাংলাদেশের তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটারের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই থিয়েটার সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।
পূজা: আমার দাদু আমার নাম তুরঙ্গমী রাখতে চেয়েছিলেন। কোনো কারণে আমার এই নাম রাখা হয়নি। তুরঙ্গমী নামের অর্থ ‘যে মেয়ে ঘোড়া চালাতে পারে’। অর্থাৎ অশ্বারোহী, ঘোড়সওয়ার। যখন এ ঘটনার কথা শুনেছি, তখন থেকে মনে মনে ভাবলাম, আমি নিজে এই নামে পরিচিত হইনি, কিন্তু বড় হয়ে যে কাজগুলো করব, সেই কাজগুলো তুরঙ্গমী নামে পরিচিত হবে। ২০১৪ সালে তুরঙ্গমীর জন্ম। এটি তরুণদের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম। এই মুহূর্তে এই প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা আছে। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে এখানকার নৃত্যশিল্পী ও কলাকুশলীদের চাকরি দেওয়া।
দক্ষিণ কোরিয়ার উৎসবে আমাদের দুটি পরিবেশনা ছিল—একটি ‘পাঁচফোড়ন’, আরেকটি ‘নন্দিনী’। আমরা পাঁচফোড়নের পরিবেশনায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে দেখিয়েছি, যাদের ওপর ভিত্তি করে আমাদের দেশের অর্থনীতি টিকে আছে। যেমন–কৃষক, শ্রমিক, জেলে, মাঝি, মৌয়াল, গার্মেন্টসকর্মী। সব পেশার লোকের সমাবেশ আমাদের এই দেশ। সেটাই পাঁচফোড়নের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আরেকটা পরিবেশনা ছিল, যেটা আমরা প্যারেডে করেছি। সেটার নাম নন্দিনী। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে আরতি নৃত্য। আমরা আমাদের দেশমাতৃকাকে নন্দিনীরূপেই দেখানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের সর্বমোট ১০ জনের একটা দল ছিল।
আজকের পত্রিকা: আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনটা কেমন মনে হয় আপনার?
পূজা: আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনটা আসলে শৌখিন, কিন্তু অপেশাদারদের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। যদি এভাবে চলতে থাকে, তবে এখান থেকে ভালো কাজ হবে না। দুই-চারজন নিজের মতো করে ভালো কাজ করলেও সামগ্রিকভাবে কোনো লাভ হবে না। নাচ এ দেশে অনেক বড় কাজের ক্ষেত্র হতে পারে। কারণ এ দেশের প্রচুর মানুষ নাচ করে। কিন্তু তাদের সঠিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। শুধু নাচতে জানলেই হবে না। নাচের জন্য আলো, সেট, মিউজিকের দরকার হয়। মঞ্চে সেট ব্যবহার করব কি না, সেই সেটের আঙ্গিকটা কেমন হবে, মিউজিকটা কেমন হবে—নাচকে শিল্প হিসেবে তুলে ধরার জন্য এই বিষয়গুলো জানা খুব জরুরি। একজন কোরিওগ্রাফারের এই বিষয়গুলো জানা থাকলে তাঁর কাজ মানসম্পন্ন হবে। আরেকটা বিষয় হলো, এ দেশে নকল করার প্রবণতা অনেক বেশি। এটা যে একটি অপরাধ, সেটা অনেকে বুঝতে চান না। কপিরাইট আইনের সচেতনতা প্রয়োজন। তবে আমাদের তরুণ প্রজন্ম অনেক সম্ভাবনাময়। তাদের যদি সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া যায়, তাহলে নাচের সেক্টরে আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব। সরকার যদি এ দিকটায় মনোযোগ দেয়, তাহলে ভালো হবে। আর এতে তো আসলে সরকারের লাভ হবে। কারণ দেশে শিল্প-সংস্কৃতির কাজের চর্চা যতই বাড়বে, অপরাধের মাত্রা ততই কমে আসবে। এ ছাড়া এটা একটা লাভজনক খাত হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। তখন সরকারকে আর শেষ বয়সে দুস্থ শিল্পীদের অনুদান দিতে হবে না, বরং শিল্পীরাই আয়কর দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে পারবেন।

দক্ষিণ কোরিয়া সরকার আয়োজিত উৎসব ‘দেইগু কালারফুল ফেস্টিভ্যাল ২০২২’-এ অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশের তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটার। দক্ষিণ কোরিয়ার দেইগু শহরে গত ৮ থেকে ১০ জুলাই এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তুরঙ্গমীর আর্টিস্টিক ডিরেক্টর নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্ত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মন্টি বৈষ্ণব।
আজকের পত্রিকা: একজন নারী হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে নাচের মানুষ হিসেবে পরিচিতি তৈরি করা কতটা কঠিন বলে মনে হয়েছে আপনার?
পূজা সেনগুপ্ত: আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে কাজের সুযোগ পাবার একটাই মাপকাঠি, আর তা হলো যোগ্যতা। তবে আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরেকটু জটিল ছিল। কারণ আমি যখন নাচকে পেশা হিসেবে নেবার সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমাদের দেশে নাচের কোনো পেশাদার ক্ষেত্র তৈরি হয়নি। তাই নিজের নাচের চর্চা আর সৃজনশীলতার পাশাপাশি আমাকে আমার নাচের মার্কেটও তৈরি করতে হয়েছে। আমাদের দেশে নাচের পরিধি অনেক ছোট। আবার সংগীতের পরিধি অনেক বড়। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে আবার নাচের পরিধিটা অনেক বেশি প্রসারিত ও শক্তিশালী। কারণ নাচের ভাষা বিশ্বজনীন। তাই আমি শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক মানের কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমি যখন দেশে কাজ শুরু করি, তখন এখানে নাচের কোনো মার্কেট ছিল না। যে অনুষ্ঠানগুলো আয়োজন করা হতো, সেখানে গান বা অন্য জনপ্রিয় মাধ্যমের শিল্পীদের প্রাধান্য থাকত। হয়তো কোনো শিল্পীর সংগীত সন্ধ্যা হবে, শুরুতে একটা নাচ। গান আমরা শুনি আর নাচ দেখি। নাচ করার সময় যদি পেছনে যন্ত্রপাতি থাকে, সেটা দেখতে ভালো দেখাবে না। সে সময় আয়োজকদের বিষয়টা বোঝানো খুব কঠিন বিষয় ছিল। আরেকটা জিনিস লক্ষ করলাম, নাচের শিল্পীদের সম্মানী অনেক কম। আমি শুরুতেই একটা স্ট্যান্ড নিলাম। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমার নাচকে ঠিকমতো তুলে ধরার জন্য যে রকম আয়োজন প্রয়োজন, আয়োজকেরা সেটা নিশ্চিত করতে পারলেই কাজ করব, আর আমি উপযুক্ত বাজেটে কাজ করব। আমি অনেক কাজ ফিরিয়ে দিলাম, কম কাজ করলাম, কিন্তু যে কাজগুলো করলাম সেগুলো ভালো হলো। সবচেয়ে বড় কথা, আমি ‘না’ বলতে শিখলাম। এতে আমার লাভ হলো। দেখা গেল, কিছুদিনের মধ্যেই আমার শর্তেই সবাই আমাকে কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। কারণ, তত দিনে আসলে আমাদের দর্শক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। শিল্পের মানের সঙ্গে আমি কখনোই আপস করিনি। অবস্থান আর সম্মান জোর করে আদায় করা যায় না, অর্জন করে নিতে হয়। কাজের মানের কারণে দেশের বাইরে মূলধারার আয়োজনেও অংশগ্রহণের জন্য সরাসরি আমন্ত্রণ পেলাম। দেশের বাইরে পারফর্ম করার সময় চেষ্টা করেছি বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করতে। সেখানে আরেকটা বিষয় সমস্যা তৈরি করে। সেটা হলো, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের নামটা অনেক কম পরিচিত। অনেকে আমাদের ভারতের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলতেন। বাংলাদেশের একটা স্বতন্ত্র পরিচিতি তৈরি করা ছিল আমার জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তাই আমি সব সময় আমার কাজে এমন শিল্প উপকরণ আর শৈলী প্রয়োগ করেছি, যা সম্পূর্ণ আমাদের নিজস্ব, যা বাংলাদেশি। তবে লোকসংস্কৃতির এই উপকরণগুলো তো তৈরি থাকে না, খুঁজে নিতে হয়, বারবার খুঁজতে হয়—এটাই রিসার্চ। আমাকেও দেশের মূল সংস্কৃতির বিষয়গুলো খুঁজে খুঁজে বের করতে হয়েছে। আমার মূল বিষয়টা ছিল বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির রূপ তুলে ধরা। আসলে আমি একজন সামান্য ফেরিওয়ালা, আমার দেশের সংস্কৃতি নিয়ে সারা বিশ্বে ফেরি করছি।
আজকের পত্রিকা: সৃষ্টিশীল ভুবনে আমাদের নারীদের অবস্থান তৈরিতে সমস্যা আছে কি না? আপনার কী মনে হয়?
পূজা: প্রত্যেক মানুষের মধ্যে শক্তি আর সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে। প্রয়োজন সেটাকে জাগিয়ে তোলা। মানুষের ভেতরে লুকিয়ে থাকা শক্তিটা কিন্তু অনেক বড়। সেই শক্তিটাকে সবাই আবিষ্কার করতে পারেন না। যাঁরা পারেন, তাঁরা কোনো না কোনাভাবে সফল হন। এ বিষয়ে আমাদের দেশের নারীদের বলতে চাই, প্রতিবাদ করতে জানতে হবে। অন্যায় মুখ বুঝে সহ্য না করে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত। প্রতিবাদের মাধ্যমেই প্রতিকার আসবে।
আজকের পত্রিকা: দক্ষিণ কোরিয়ায় নিজের দেশের সংস্কৃতিকে উপস্থাপনের অনুভূতি কেমন মনে হচ্ছে? উৎসবে আরতি নাচের আইডিয়াটা কীভাবে এল?
পূজা: দেশের বাইরে যখন নিজেদের কোনো পারফরম্যান্স বা পরিবেশনা নিয়ে যাই, তখন আমাদের বিবেচনায় থাকে কীভাবে দেশের সংস্কৃতিকে সেই দেশের মাটিতে তুলে ধরব। এ ক্ষেত্রে শুধু পারফরম্যান্সের সময় নয়, আমাদের কথাবার্তায়, চলাফেরায়, পোশাকে, কস্টিউম-প্রপ্স—সবকিছুর মাধ্যমেই কীভাবে দেশকে তুলে ধরব সে বিষয়েও আমরা সব সময় সচেতন থাকি। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এই আমন্ত্রণ ২০১৯ সালের শেষের দিকে এসেছিল। তখন করোনার কারণে ফেস্টিভ্যালটা হলো না। আর আমাদেরও যাওয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করার ক্ষেত্রে দুটি চ্যালেঞ্জ কাজ করে। এক হলো, নিজের দেশের সংস্কৃতিকে খুঁজে বের করা। দুই হলো, সেটিকে ঠিক রেখে আন্তর্জাতিক দর্শকের উপযোগী করে নিজের কাজকে উপস্থাপন করা। এ বিষয় দুটিকে বিবেচনায় রেখেই আরতি নাচকে বেছে নিয়েছিলাম। আমি বিভিন্ন সময়ে দেখেছি, আরতি নাচ আমাদের লোকসংস্কৃতির অংশ। তবে এটা পুরোপুরি নাচ না, এর সাথে অ্যাক্রোবেটিক কৌশলও মিশে আছে। আমি এই নাচের নতুন স্টেপ বানানোর জন্য কাজ করতে শুরু করলাম, এটাকে একটা মূলধারায় পরিবেশনযোগ্য নাচের কাঠামো দেবার চেষ্টা করলাম। ভাবলাম, আমাদের মৃত্তিকাসংলগ্ন মানুষের নাচের আঙ্গিকের সঙ্গে যদি আরতি নাচকে ফিউশন করি, তাহলে এই নাচের পরিধি অনেক বেড়ে যাবে। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্যারেডে রাস্তায় নাচটা পরিবেশন করতে হবে আর নাচের মধ্য দিয়ে দেশের আরতি করব, তাই রবীন্দ্রনাথের ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ গানটি বেছে নিলাম। এই নাচ পরিবেশনের পর আমরা অনেক বেশি প্রশংসিত হয়েছি। নিজেরাও অনেক আনন্দিত ছিলাম।
আজকের পত্রিকা: আপনার শৈশব সম্পর্কে জানতে চাই। ছোটবেলা থেকেই কি নাচের প্রতি আগ্রহী ছিলেন?
পূজা: ছোটবেলা থেকে আমার ছকে বাঁধা জীবন ছিল। নিয়মের মধ্যে যে ধরাবাঁধা জীবন, সেই জীবনের বাইরেও যে সুন্দর একটা জীবন আছে, সেটা আমি প্রথম বুঝতে পারি যখন আমি আমার নেশাকে পেশা হিসেবে বেছে নেবার সিদ্ধান্ত নিই। নাচ নিয়ে ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাই। আমার আসলে যাওয়ার কথা ছিল জার্মানিতে। পদার্থবিজ্ঞানের ওপর পিএইচডি করার জন্য। কিন্তু তখন আমার শিক্ষক কবির স্যারের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে নাচকে আমি আমার ভবিষ্যৎ হিসেবে বেছে নিলাম। আমার স্যার বলতেন, ‘যে কাজে তোমার আনন্দ আছে, সেটাই যদি পেশা হয়, তাহলে তোমার জীবনটা আনন্দের হবে। তা না হলে একটা অনুশোচনা থেকে যাবে।’
তবে নিজের এই পেশাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করাটা সহজ ছিল না। আমি পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে যেতাম না। কারণ যেখানেই যাই না কেন, আমি নাচ করি বা নিজেকে কোরিওগ্রাফার হিসেবে পরিচয় দিলে সবাই আরও জানতে চাইত নাচের পাশাপাশি আমি আর কী করি। এরপর যখন দেশে-বিদেশে অনেক কাজ করতে শুরু করলাম, পত্র-পত্রিকায় ভালো নিউজ হলো, স্বীকৃতি পেলাম, তখন আবার এই মানুষগুলোই আমার বাবা-মায়ের কাছে জানতে চান, পূজা কেন আজকের অনুষ্ঠানে এল না? এরপর দেখা গেল, আমাদের বাসায় দুটো আমন্ত্রণ কার্ড আসতে লাগল। একটা আমার পরিবারের নামে, আরেকটা আলাদা কার্ড, আমার নামে।
আজকের পত্রিকা: কেমন হতে পারে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
পূজা: আমি কখনো পরিচিত বা বিখ্যাত হওয়ার জন্য কাজ করিনি। আমি আমার কাজটা ভালোবেসেই করেছি। আমার ফোকাস হলো ভালো কাজ করা। মহাভারতের দ্রোণাচার্য যেমন সবাইকে তির-ধনুক হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কী দেখতে পাও। একেকজন একেকটা বললেন, কেউ আকাশ, কেউ গাছ, কেউ পাখি দেখেন। কিন্তু অর্জুন বলেছিলেন আমি পাখির চোখ দেখি। সে রকম আমি আমার লক্ষ্যটাই দেখি। বাংলাদেশের নাচের অনেক ভালো একটা ভবিষ্যৎ হবে। আন্তর্জাতিক মূলধারায় বাংলাদেশের নিজস্ব নৃত্যধারাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা আর দেশে নাচের পেশাদার ক্ষেত্রকে আরও বিস্তৃত করাই আমার লক্ষ্য।
আজকের পত্রিকা: দেইগু কালারফুল ফেস্টিভ্যালে আপনারা বাংলাদেশের তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটারের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই থিয়েটার সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।
পূজা: আমার দাদু আমার নাম তুরঙ্গমী রাখতে চেয়েছিলেন। কোনো কারণে আমার এই নাম রাখা হয়নি। তুরঙ্গমী নামের অর্থ ‘যে মেয়ে ঘোড়া চালাতে পারে’। অর্থাৎ অশ্বারোহী, ঘোড়সওয়ার। যখন এ ঘটনার কথা শুনেছি, তখন থেকে মনে মনে ভাবলাম, আমি নিজে এই নামে পরিচিত হইনি, কিন্তু বড় হয়ে যে কাজগুলো করব, সেই কাজগুলো তুরঙ্গমী নামে পরিচিত হবে। ২০১৪ সালে তুরঙ্গমীর জন্ম। এটি তরুণদের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম। এই মুহূর্তে এই প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা আছে। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে এখানকার নৃত্যশিল্পী ও কলাকুশলীদের চাকরি দেওয়া।
দক্ষিণ কোরিয়ার উৎসবে আমাদের দুটি পরিবেশনা ছিল—একটি ‘পাঁচফোড়ন’, আরেকটি ‘নন্দিনী’। আমরা পাঁচফোড়নের পরিবেশনায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে দেখিয়েছি, যাদের ওপর ভিত্তি করে আমাদের দেশের অর্থনীতি টিকে আছে। যেমন–কৃষক, শ্রমিক, জেলে, মাঝি, মৌয়াল, গার্মেন্টসকর্মী। সব পেশার লোকের সমাবেশ আমাদের এই দেশ। সেটাই পাঁচফোড়নের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আরেকটা পরিবেশনা ছিল, যেটা আমরা প্যারেডে করেছি। সেটার নাম নন্দিনী। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে আরতি নৃত্য। আমরা আমাদের দেশমাতৃকাকে নন্দিনীরূপেই দেখানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের সর্বমোট ১০ জনের একটা দল ছিল।
আজকের পত্রিকা: আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনটা কেমন মনে হয় আপনার?
পূজা: আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনটা আসলে শৌখিন, কিন্তু অপেশাদারদের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। যদি এভাবে চলতে থাকে, তবে এখান থেকে ভালো কাজ হবে না। দুই-চারজন নিজের মতো করে ভালো কাজ করলেও সামগ্রিকভাবে কোনো লাভ হবে না। নাচ এ দেশে অনেক বড় কাজের ক্ষেত্র হতে পারে। কারণ এ দেশের প্রচুর মানুষ নাচ করে। কিন্তু তাদের সঠিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। শুধু নাচতে জানলেই হবে না। নাচের জন্য আলো, সেট, মিউজিকের দরকার হয়। মঞ্চে সেট ব্যবহার করব কি না, সেই সেটের আঙ্গিকটা কেমন হবে, মিউজিকটা কেমন হবে—নাচকে শিল্প হিসেবে তুলে ধরার জন্য এই বিষয়গুলো জানা খুব জরুরি। একজন কোরিওগ্রাফারের এই বিষয়গুলো জানা থাকলে তাঁর কাজ মানসম্পন্ন হবে। আরেকটা বিষয় হলো, এ দেশে নকল করার প্রবণতা অনেক বেশি। এটা যে একটি অপরাধ, সেটা অনেকে বুঝতে চান না। কপিরাইট আইনের সচেতনতা প্রয়োজন। তবে আমাদের তরুণ প্রজন্ম অনেক সম্ভাবনাময়। তাদের যদি সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া যায়, তাহলে নাচের সেক্টরে আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব। সরকার যদি এ দিকটায় মনোযোগ দেয়, তাহলে ভালো হবে। আর এতে তো আসলে সরকারের লাভ হবে। কারণ দেশে শিল্প-সংস্কৃতির কাজের চর্চা যতই বাড়বে, অপরাধের মাত্রা ততই কমে আসবে। এ ছাড়া এটা একটা লাভজনক খাত হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। তখন সরকারকে আর শেষ বয়সে দুস্থ শিল্পীদের অনুদান দিতে হবে না, বরং শিল্পীরাই আয়কর দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে পারবেন।

প্রতিবছর, অক্টোবরের শেষ শনি ও রোববার, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এই ছোট্ট নির্জন গ্রামের নৈঃশব্দ্য ভেঙে ভিড় করে বহু মানুষ। দূরদূরান্ত থেকে দেশ-বিদেশের মরিচপ্রেমীরা এখানে ভিড় করেন—বসে এক মহা মিলনমেলা। ৫৬ বছর ধরে, অর্থাৎ ১৯৬৯ সাল থেকে এমনটাই চলে আসছে। এমন জাঁকজমক আর জমজমাট আয়োজনের কেন্দ্রে আছে এই বিশেষ...
১০ ঘণ্টা আগে
যাঁরা প্রতিদিন ওয়ার্কআউট করেন, তাঁদের মনে একটা প্রশ্ন রয়েই যায়, প্রতিদিনই কি চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত? আবার কী করে চুল বাঁধলে ব্যায়ামের ফলে চুলের গোড়ায় বেশি ঘাম জমবে না, এ নিয়েও অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। আন্তর্জাতিক ‘ভোগ’ ম্যাগাজিন...
১১ ঘণ্টা আগে
শহরের অলিগলিতে এখন কতবেল মাখা বিক্রি হচ্ছে। ঝাল বাড়িয়ে জম্পেশ করে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে প্রশ্ন থাহলে ঘরেই তৈরি করে নিন জিবে জল আনা কতবেল মাখা। আপনাদের জন্য একটু ভিন্ন স্বাদের কতবেল মাখার রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন ‘সেরা রাঁধুনি ১৪২৭’ প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় রানার্সআপ...
১২ ঘণ্টা আগে
তিতাস একটি নদীর নাম। এই নদীতীরে গোকর্ণ গ্রাম। এখন অবশ্য তা গোকর্ণ ঘাট নামে পরিচিত। সেই ঘাটে এসে ভিড়ল আমাদের বহনকারী বোট। তবে যাত্রার শুরুটা হয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আনন্দবাজার ঘাট থেকে। সেখান থেকে শুরু করে কুরুলিয়া নদী হয়ে আবার তিতাসে—কিছুটা শর্টকাট রাস্তা।
১৬ ঘণ্টা আগেমইনুল হাসান, ফ্রান্স

ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমে একদম স্পেনের সীমান্ত ঘেঁষে পিরিনিজ পর্বতমালা। এই পর্বতমালার পাদদেশে দুই দেশ মিলিয়ে ছবির মতো বিশাল পাহাড়ি উপত্যকায় প্রাচীনকাল থেকে বসবাস বাস্ক জাতির মানুষেরা। নিজস্ব ভাষা, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ধারক এ জাতির মানুষ নিজেদের বাস্ক হিসেবে পরিচয় দিতেই গর্ববোধ করে।

একদিকে পর্বত, অন্যদিকে অতল অতলান্তিক মহাসাগরের বিশাল জলরাশির মিলে অপার্থিব নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সবটুকু যেন এখানেই ঘনীভূত হয়েছে। এই অঞ্চলেই ফ্রান্সের বাইওন শহর থেকে ২২ কিলোমিটার বা ১৮ মাইল দূরে পর্বতের কোলে আছে নির্জন, নিভৃত ছোট্ট একটি গ্রাম—স্পোলেত।
প্রায় ৪০০ বছর ধরে এই অঞ্চলের মানুষের জীবন, সমাজ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে জড়িয়ে আছে একটি বিশেষে জাতের মরিচ। ফরাসি ভাষায় এর নাম দেওয়া হয়েছে, ‘পিমো দ্য স্পোলেত’ অর্থাৎ স্পোলেতের মরিচ। উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা এর একটি খটমটে নাম দিয়েছেন, তা হলো ক্যাপসিকাম অ্যানুয়াম, প্রকরণ গোরিয়া। ১৬ শতকে স্প্যানিশ পরিব্রাজক খুয়ান সেবাস্তিয়ান এলকানো মেক্সিকো থেকে এই মরিচ ইউরোপের নিয়ে আসেন। সেই ১৬৫০ থেকে এই অঞ্চলের কৃষকেরা পিমো দ্য স্পোলেত নামে এই মরিচ চাষ করতে শুরু করেন।

উজ্জ্বল লাল রঙের, চমৎকার ঘ্রাণের, একটু মিষ্টি ও হালকা ঝালের এই বিশেষ জাতের মরিচ প্রথম দিকে শুধু ঔষধি এবং কাঁচা মাংস সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হতো। পরে গোলমরিচের অভাব পূরণে রান্না করা খাদ্যের স্বাদে আলাদা ব্যঞ্জনা আর ঝাঁজের জন্য ব্যবহার হতে শুরু করলে ফরাসি ও স্প্যানিশদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পিমো দ্য স্পোলেতকে ঘিরে গড়ে ওঠে আলাদা মাত্রার রন্ধনকৌলীন্য, এক সমৃদ্ধ ও সম্পূর্ণ ভিন্ন খাদ্যসংস্কৃতি। এই অঞ্চলের জীবন আবর্তিত হয় এই মরিচ ঘিরে। ফ্রান্স ও স্পেনের মানুষ এবং শেফদের খুব প্রিয় এই বিশেষ জাতের মসলা।
প্রতিবছর, অক্টোবরের শেষ শনি ও রোববার, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এই ছোট্ট নির্জন গ্রামের নৈঃশব্দ্য ভেঙে ভিড় করে বহু মানুষ। দূরদূরান্ত থেকে দেশ-বিদেশের মরিচপ্রেমীরা এখানে ভিড় করেন—বসে এক মহা মিলনমেলা। ৫৬ বছর ধরে, অর্থাৎ ১৯৬৯ সাল থেকে এমনটাই চলে আসছে। এমন জাঁকজমক আর জমজমাট আয়োজনের কেন্দ্রে আছে এই বিশেষ জাতের মরিচ।

২৫ অক্টোবর শনিবার, সকাল থেকে স্পোলেত গ্রামে ভিড় বাড়তে থাকে। পাহাড়ি পথ ধরে সারি সারি গাড়ির বহর। বিশাল অঙ্গনে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং চলাচলের সুবিধার জন্য সরকারি বাহিনীর সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকদের দল গলদঘর্ম হচ্ছে। তারপরেও তাদের মুখে হাসির ঝিলিক। আমরাও মিশে গেলাম বহু ভিনদেশির সঙ্গে। বাদকদের দল বাদ্য বাজিয়ে বিয়েবাড়ির আমেজ সৃষ্টি করছিল। বাস্ক তরুণ-তরুণীরা ঐতিহ্যবাহী নাচে মুগ্ধ করছে আগতদের।
অনেকটা উঁচু এক বিশাল জায়গাজুড়ে স্পোলেতের মরিচ এবং মরিচজাত নানান পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন উৎপাদনকারীরা। হাসিমুখে উৎসুক দর্শনার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন তাঁরা। দেখা হলো মসিয়ঁ পিয়ের ডিহার্চের সঙ্গে। তিনি এসেছেন স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে। বহু বছর ধরে তিনি এই মরিচের চাষ করেন এবং তা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করেন নিজ হাতে। তিনি জানালেন, মোট ১০টি গ্রামে এই মরিচের চাষ হয়। ১৫০ জন কৃষক বছরে প্রায় ১০০ টন মরিচ উৎপাদন করেন। আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ফলন হয়। আরও বললেন, ভিটামিনের ভালো উৎস এই মরিচ হজমশক্তি বাড়ায়। ওজন কমাতে, বিপাকে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

আমাদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল দুই মরিচকন্যার—ক্লারা ও রেবেকা। ছবি তুলতে চাইলে মিষ্টি হেসে রাজি হয়ে গেলেন। বাস্ক তরুণী জুলি, তাঁর মরিচ ও মরিচের পণ্য নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন উৎসবে। অনেকের সঙ্গে দেখা হলো, আলাপ হলো। সবাই খুব আন্তরিক।
পরদিন রোববার একই রকম আয়োজন। শেষ হলো পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে। সেরা মরিচ উৎপাদনকারীকে পুরস্কারের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়।

এ বছর, ২০২৫-এ মরিচের তীর্থে এসেছিলেন প্রায় ২৫ হাজার মরিচ ভোক্তা ও ভক্ত। এমন করেই প্রতিবছর মরিচের প্রার্থনাসংগীত দিয়ে শুরু হয় দুদিনব্যাপী জমজমাট উৎসবের। উদ্যাপিত হয় মরিচের রাজধানীতে পৃথিবীর একমাত্র মরিচ উৎসব।

ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমে একদম স্পেনের সীমান্ত ঘেঁষে পিরিনিজ পর্বতমালা। এই পর্বতমালার পাদদেশে দুই দেশ মিলিয়ে ছবির মতো বিশাল পাহাড়ি উপত্যকায় প্রাচীনকাল থেকে বসবাস বাস্ক জাতির মানুষেরা। নিজস্ব ভাষা, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ধারক এ জাতির মানুষ নিজেদের বাস্ক হিসেবে পরিচয় দিতেই গর্ববোধ করে।

একদিকে পর্বত, অন্যদিকে অতল অতলান্তিক মহাসাগরের বিশাল জলরাশির মিলে অপার্থিব নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সবটুকু যেন এখানেই ঘনীভূত হয়েছে। এই অঞ্চলেই ফ্রান্সের বাইওন শহর থেকে ২২ কিলোমিটার বা ১৮ মাইল দূরে পর্বতের কোলে আছে নির্জন, নিভৃত ছোট্ট একটি গ্রাম—স্পোলেত।
প্রায় ৪০০ বছর ধরে এই অঞ্চলের মানুষের জীবন, সমাজ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে জড়িয়ে আছে একটি বিশেষে জাতের মরিচ। ফরাসি ভাষায় এর নাম দেওয়া হয়েছে, ‘পিমো দ্য স্পোলেত’ অর্থাৎ স্পোলেতের মরিচ। উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা এর একটি খটমটে নাম দিয়েছেন, তা হলো ক্যাপসিকাম অ্যানুয়াম, প্রকরণ গোরিয়া। ১৬ শতকে স্প্যানিশ পরিব্রাজক খুয়ান সেবাস্তিয়ান এলকানো মেক্সিকো থেকে এই মরিচ ইউরোপের নিয়ে আসেন। সেই ১৬৫০ থেকে এই অঞ্চলের কৃষকেরা পিমো দ্য স্পোলেত নামে এই মরিচ চাষ করতে শুরু করেন।

উজ্জ্বল লাল রঙের, চমৎকার ঘ্রাণের, একটু মিষ্টি ও হালকা ঝালের এই বিশেষ জাতের মরিচ প্রথম দিকে শুধু ঔষধি এবং কাঁচা মাংস সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হতো। পরে গোলমরিচের অভাব পূরণে রান্না করা খাদ্যের স্বাদে আলাদা ব্যঞ্জনা আর ঝাঁজের জন্য ব্যবহার হতে শুরু করলে ফরাসি ও স্প্যানিশদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পিমো দ্য স্পোলেতকে ঘিরে গড়ে ওঠে আলাদা মাত্রার রন্ধনকৌলীন্য, এক সমৃদ্ধ ও সম্পূর্ণ ভিন্ন খাদ্যসংস্কৃতি। এই অঞ্চলের জীবন আবর্তিত হয় এই মরিচ ঘিরে। ফ্রান্স ও স্পেনের মানুষ এবং শেফদের খুব প্রিয় এই বিশেষ জাতের মসলা।
প্রতিবছর, অক্টোবরের শেষ শনি ও রোববার, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এই ছোট্ট নির্জন গ্রামের নৈঃশব্দ্য ভেঙে ভিড় করে বহু মানুষ। দূরদূরান্ত থেকে দেশ-বিদেশের মরিচপ্রেমীরা এখানে ভিড় করেন—বসে এক মহা মিলনমেলা। ৫৬ বছর ধরে, অর্থাৎ ১৯৬৯ সাল থেকে এমনটাই চলে আসছে। এমন জাঁকজমক আর জমজমাট আয়োজনের কেন্দ্রে আছে এই বিশেষ জাতের মরিচ।

২৫ অক্টোবর শনিবার, সকাল থেকে স্পোলেত গ্রামে ভিড় বাড়তে থাকে। পাহাড়ি পথ ধরে সারি সারি গাড়ির বহর। বিশাল অঙ্গনে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং চলাচলের সুবিধার জন্য সরকারি বাহিনীর সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকদের দল গলদঘর্ম হচ্ছে। তারপরেও তাদের মুখে হাসির ঝিলিক। আমরাও মিশে গেলাম বহু ভিনদেশির সঙ্গে। বাদকদের দল বাদ্য বাজিয়ে বিয়েবাড়ির আমেজ সৃষ্টি করছিল। বাস্ক তরুণ-তরুণীরা ঐতিহ্যবাহী নাচে মুগ্ধ করছে আগতদের।
অনেকটা উঁচু এক বিশাল জায়গাজুড়ে স্পোলেতের মরিচ এবং মরিচজাত নানান পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন উৎপাদনকারীরা। হাসিমুখে উৎসুক দর্শনার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন তাঁরা। দেখা হলো মসিয়ঁ পিয়ের ডিহার্চের সঙ্গে। তিনি এসেছেন স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে। বহু বছর ধরে তিনি এই মরিচের চাষ করেন এবং তা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করেন নিজ হাতে। তিনি জানালেন, মোট ১০টি গ্রামে এই মরিচের চাষ হয়। ১৫০ জন কৃষক বছরে প্রায় ১০০ টন মরিচ উৎপাদন করেন। আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ফলন হয়। আরও বললেন, ভিটামিনের ভালো উৎস এই মরিচ হজমশক্তি বাড়ায়। ওজন কমাতে, বিপাকে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

আমাদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল দুই মরিচকন্যার—ক্লারা ও রেবেকা। ছবি তুলতে চাইলে মিষ্টি হেসে রাজি হয়ে গেলেন। বাস্ক তরুণী জুলি, তাঁর মরিচ ও মরিচের পণ্য নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন উৎসবে। অনেকের সঙ্গে দেখা হলো, আলাপ হলো। সবাই খুব আন্তরিক।
পরদিন রোববার একই রকম আয়োজন। শেষ হলো পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে। সেরা মরিচ উৎপাদনকারীকে পুরস্কারের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়।

এ বছর, ২০২৫-এ মরিচের তীর্থে এসেছিলেন প্রায় ২৫ হাজার মরিচ ভোক্তা ও ভক্ত। এমন করেই প্রতিবছর মরিচের প্রার্থনাসংগীত দিয়ে শুরু হয় দুদিনব্যাপী জমজমাট উৎসবের। উদ্যাপিত হয় মরিচের রাজধানীতে পৃথিবীর একমাত্র মরিচ উৎসব।

দক্ষিণ কোরিয়া সরকার আয়োজিত উৎসব ‘দেইগু কালারফুল ফেস্টিভ্যাল ২০২২’-এ অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশের তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটার। দক্ষিণ কোরিয়ার দেইগু শহরে গত ৮ থেকে ১০ জুলাই এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তুরঙ্গমীর আর্টিস্টিক ডিরেক্টর নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্ত
০৩ আগস্ট ২০২২
যাঁরা প্রতিদিন ওয়ার্কআউট করেন, তাঁদের মনে একটা প্রশ্ন রয়েই যায়, প্রতিদিনই কি চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত? আবার কী করে চুল বাঁধলে ব্যায়ামের ফলে চুলের গোড়ায় বেশি ঘাম জমবে না, এ নিয়েও অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। আন্তর্জাতিক ‘ভোগ’ ম্যাগাজিন...
১১ ঘণ্টা আগে
শহরের অলিগলিতে এখন কতবেল মাখা বিক্রি হচ্ছে। ঝাল বাড়িয়ে জম্পেশ করে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে প্রশ্ন থাহলে ঘরেই তৈরি করে নিন জিবে জল আনা কতবেল মাখা। আপনাদের জন্য একটু ভিন্ন স্বাদের কতবেল মাখার রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন ‘সেরা রাঁধুনি ১৪২৭’ প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় রানার্সআপ...
১২ ঘণ্টা আগে
তিতাস একটি নদীর নাম। এই নদীতীরে গোকর্ণ গ্রাম। এখন অবশ্য তা গোকর্ণ ঘাট নামে পরিচিত। সেই ঘাটে এসে ভিড়ল আমাদের বহনকারী বোট। তবে যাত্রার শুরুটা হয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আনন্দবাজার ঘাট থেকে। সেখান থেকে শুরু করে কুরুলিয়া নদী হয়ে আবার তিতাসে—কিছুটা শর্টকাট রাস্তা।
১৬ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

জিমে ওয়ার্কআউট সেরে বাড়ি ফিরে চুল না ধোয়া পর্যন্ত শান্তি থাকে না। যাঁরা প্রতিদিন ওয়ার্কআউট করেন, তাঁদের মনে একটা প্রশ্ন রয়েই যায়, প্রতিদিনই কি চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত? আবার কী করে চুল বাঁধলে ব্যায়ামের ফলে চুলের গোড়ায় বেশি ঘাম জমবে না, এ নিয়েও অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। আন্তর্জাতিক ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের একটি প্রতিবেদনে মিলল এসব প্রশ্নের সমাধান। দেখে নিন একনজরে।
ঢিলেঢালা বেণি করুন

জিম করার সময় অনেকে চুল খোলা রাখেন। এতে করে চুল ভাঙার আশঙ্কা থাকে। আবার যাঁদের মুখে ব্রণ রয়েছে, বারবার চুল মুখে এসে লেগে যাওয়ার ফলে সংক্রমণও হতে পারে। অনেকে আবার খুব টাইট করে উঁচু পনিটেইল করে জিমে যান। তাঁদের চুলের গোড়া বেশি ঘাম জমে। এর ফলে মাথার ত্বকে চুলকানি ও অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর চেয়ে জিমে যাওয়ার সময় যদি ঢিলেঢালা বেণি বা খোঁপা করে নেওয়া যায়, তাহলে চুলের ভেতর বাতাস চলাচল করতে পারে। এতে চুল খুব বেশি ঘামবে না, আবার চুল ভাঙার আশঙ্কাও থাকবে না।
ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করুন
ঘামের কারণে প্রতিদিন শ্যাম্পু করতে গিয়ে চুল রুক্ষ হয়ে উঠলে ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। ড্রাই শ্যাম্পু স্প্রে করার সময় তালুর এমন জায়গায় স্প্রে করুন যে অংশ বেশি তৈলাক্ত। ড্রাই শ্যাম্পুর বোতল মাথার ত্বক থেকে অন্তত ৯ ইঞ্চি দূরে ধরে স্প্রে করুন। এরপর আঙুলের ডগা দিয়ে মাথার ত্বকে হালকা ম্যাসাজ করে নিন। এতে শ্যাম্পু আরও ভালোভাবে মিশে যাবে। ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করলে সপ্তাহে তিন দিন চুল ধুয়ে নেওয়াই যথেষ্ট।

ভেজা চুলে ব্যায়াম করবেন না
ওয়ার্কআউটের ঠিক আগে গোসল করেছেন? বৃষ্টিতে ভিজে গেছেন? আপনার দিনের ব্যায়াম এখানেই শেষ। কারণ, ভেজা চুলে ব্যায়াম করা ঠিক নয়। ভেজা চুলে ব্যায়াম করার সময় যদি মাথার ত্বক ঘামে, তাহলে চুলের গোড়া নরম হয়ে চুল ঝরে পড়ার আশঙ্কা থাকে। আমাদের চারপাশের দূষণের কারণে বৃষ্টির পানিও ততটা পরিষ্কার নয় এবং এটি আপনার মাথার ত্বকে বসতে দিলে চুলের গোড়ার ক্ষতি এবং খুশকির মতো আরও সমস্যা হতে পারে।
মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখুন
চুলের রুক্ষতা ও শুষ্কতা এড়াতে প্রতিদিন ওয়ার্কআউটের পরে চুল ধুতে নিষেধ করা হয়। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, না ধোয়া চুল ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের উৎস হতে পারে। এ জন্য মাথার ত্বকের ঘাম মুছে ফেলার জন্য আলাদা তোয়ালে বা টিস্যু ব্যবহার করা জরুরি। যাঁরা ওয়ার্কআউটের পর চুল না ধুয়ে থাকতে পারেন না, তাঁরা সালফেটমুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। প্রতিবার ধোয়ার পর চুলে স্মুথিং সেরাম ব্যবহার করুন।
ব্যায়াম শেষে চুল ছেড়ে বাতাসে শুকাতে হবে
ওয়ার্কআউটের পর চুল বেঁধে রাখবেন। তখন আপনার মাথার ত্বককে শ্বাস নিতে দিতে হবে এবং ওয়ার্কআউটের সময় তৈরি হওয়া আর্দ্রতা বের করে দিতে হবে। ব্যায়াম শেষে মাথার ত্বকে তাপ ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। সে জন্য ড্রায়ার ব্যবহারের পরিবর্তে ফ্যানের বাতাসে চুল শুকানোর চেষ্টা করুন। এ সময় আঙুল দিয়ে চুলের জট ছাড়ানোর পর চওড়া দাঁতের চিরুনি দিয়ে একবার আঁচড়ে নিন। যদি আপনি ব্লো-ড্রায়ার ব্যবহার করতেই চান, তাহলে কুল এয়ার ব্যবহার করুন। এটি আপনার মাথার ত্বকের আর্দ্রতা শুষে নেবে, কিন্তু চুলকে অতিরিক্ত শুষ্ক করবে না।
জেনে রাখা ভালো
ছবি: পেক্সেলস

জিমে ওয়ার্কআউট সেরে বাড়ি ফিরে চুল না ধোয়া পর্যন্ত শান্তি থাকে না। যাঁরা প্রতিদিন ওয়ার্কআউট করেন, তাঁদের মনে একটা প্রশ্ন রয়েই যায়, প্রতিদিনই কি চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত? আবার কী করে চুল বাঁধলে ব্যায়ামের ফলে চুলের গোড়ায় বেশি ঘাম জমবে না, এ নিয়েও অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। আন্তর্জাতিক ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের একটি প্রতিবেদনে মিলল এসব প্রশ্নের সমাধান। দেখে নিন একনজরে।
ঢিলেঢালা বেণি করুন

জিম করার সময় অনেকে চুল খোলা রাখেন। এতে করে চুল ভাঙার আশঙ্কা থাকে। আবার যাঁদের মুখে ব্রণ রয়েছে, বারবার চুল মুখে এসে লেগে যাওয়ার ফলে সংক্রমণও হতে পারে। অনেকে আবার খুব টাইট করে উঁচু পনিটেইল করে জিমে যান। তাঁদের চুলের গোড়া বেশি ঘাম জমে। এর ফলে মাথার ত্বকে চুলকানি ও অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর চেয়ে জিমে যাওয়ার সময় যদি ঢিলেঢালা বেণি বা খোঁপা করে নেওয়া যায়, তাহলে চুলের ভেতর বাতাস চলাচল করতে পারে। এতে চুল খুব বেশি ঘামবে না, আবার চুল ভাঙার আশঙ্কাও থাকবে না।
ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করুন
ঘামের কারণে প্রতিদিন শ্যাম্পু করতে গিয়ে চুল রুক্ষ হয়ে উঠলে ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। ড্রাই শ্যাম্পু স্প্রে করার সময় তালুর এমন জায়গায় স্প্রে করুন যে অংশ বেশি তৈলাক্ত। ড্রাই শ্যাম্পুর বোতল মাথার ত্বক থেকে অন্তত ৯ ইঞ্চি দূরে ধরে স্প্রে করুন। এরপর আঙুলের ডগা দিয়ে মাথার ত্বকে হালকা ম্যাসাজ করে নিন। এতে শ্যাম্পু আরও ভালোভাবে মিশে যাবে। ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করলে সপ্তাহে তিন দিন চুল ধুয়ে নেওয়াই যথেষ্ট।

ভেজা চুলে ব্যায়াম করবেন না
ওয়ার্কআউটের ঠিক আগে গোসল করেছেন? বৃষ্টিতে ভিজে গেছেন? আপনার দিনের ব্যায়াম এখানেই শেষ। কারণ, ভেজা চুলে ব্যায়াম করা ঠিক নয়। ভেজা চুলে ব্যায়াম করার সময় যদি মাথার ত্বক ঘামে, তাহলে চুলের গোড়া নরম হয়ে চুল ঝরে পড়ার আশঙ্কা থাকে। আমাদের চারপাশের দূষণের কারণে বৃষ্টির পানিও ততটা পরিষ্কার নয় এবং এটি আপনার মাথার ত্বকে বসতে দিলে চুলের গোড়ার ক্ষতি এবং খুশকির মতো আরও সমস্যা হতে পারে।
মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখুন
চুলের রুক্ষতা ও শুষ্কতা এড়াতে প্রতিদিন ওয়ার্কআউটের পরে চুল ধুতে নিষেধ করা হয়। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, না ধোয়া চুল ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের উৎস হতে পারে। এ জন্য মাথার ত্বকের ঘাম মুছে ফেলার জন্য আলাদা তোয়ালে বা টিস্যু ব্যবহার করা জরুরি। যাঁরা ওয়ার্কআউটের পর চুল না ধুয়ে থাকতে পারেন না, তাঁরা সালফেটমুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। প্রতিবার ধোয়ার পর চুলে স্মুথিং সেরাম ব্যবহার করুন।
ব্যায়াম শেষে চুল ছেড়ে বাতাসে শুকাতে হবে
ওয়ার্কআউটের পর চুল বেঁধে রাখবেন। তখন আপনার মাথার ত্বককে শ্বাস নিতে দিতে হবে এবং ওয়ার্কআউটের সময় তৈরি হওয়া আর্দ্রতা বের করে দিতে হবে। ব্যায়াম শেষে মাথার ত্বকে তাপ ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। সে জন্য ড্রায়ার ব্যবহারের পরিবর্তে ফ্যানের বাতাসে চুল শুকানোর চেষ্টা করুন। এ সময় আঙুল দিয়ে চুলের জট ছাড়ানোর পর চওড়া দাঁতের চিরুনি দিয়ে একবার আঁচড়ে নিন। যদি আপনি ব্লো-ড্রায়ার ব্যবহার করতেই চান, তাহলে কুল এয়ার ব্যবহার করুন। এটি আপনার মাথার ত্বকের আর্দ্রতা শুষে নেবে, কিন্তু চুলকে অতিরিক্ত শুষ্ক করবে না।
জেনে রাখা ভালো
ছবি: পেক্সেলস

দক্ষিণ কোরিয়া সরকার আয়োজিত উৎসব ‘দেইগু কালারফুল ফেস্টিভ্যাল ২০২২’-এ অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশের তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটার। দক্ষিণ কোরিয়ার দেইগু শহরে গত ৮ থেকে ১০ জুলাই এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তুরঙ্গমীর আর্টিস্টিক ডিরেক্টর নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্ত
০৩ আগস্ট ২০২২
প্রতিবছর, অক্টোবরের শেষ শনি ও রোববার, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এই ছোট্ট নির্জন গ্রামের নৈঃশব্দ্য ভেঙে ভিড় করে বহু মানুষ। দূরদূরান্ত থেকে দেশ-বিদেশের মরিচপ্রেমীরা এখানে ভিড় করেন—বসে এক মহা মিলনমেলা। ৫৬ বছর ধরে, অর্থাৎ ১৯৬৯ সাল থেকে এমনটাই চলে আসছে। এমন জাঁকজমক আর জমজমাট আয়োজনের কেন্দ্রে আছে এই বিশেষ...
১০ ঘণ্টা আগে
শহরের অলিগলিতে এখন কতবেল মাখা বিক্রি হচ্ছে। ঝাল বাড়িয়ে জম্পেশ করে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে প্রশ্ন থাহলে ঘরেই তৈরি করে নিন জিবে জল আনা কতবেল মাখা। আপনাদের জন্য একটু ভিন্ন স্বাদের কতবেল মাখার রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন ‘সেরা রাঁধুনি ১৪২৭’ প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় রানার্সআপ...
১২ ঘণ্টা আগে
তিতাস একটি নদীর নাম। এই নদীতীরে গোকর্ণ গ্রাম। এখন অবশ্য তা গোকর্ণ ঘাট নামে পরিচিত। সেই ঘাটে এসে ভিড়ল আমাদের বহনকারী বোট। তবে যাত্রার শুরুটা হয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আনন্দবাজার ঘাট থেকে। সেখান থেকে শুরু করে কুরুলিয়া নদী হয়ে আবার তিতাসে—কিছুটা শর্টকাট রাস্তা।
১৬ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

শহরের অলিগলিতে এখন কতবেল মাখা বিক্রি হচ্ছে। ঝাল বাড়িয়ে জম্পেশ করে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে প্রশ্ন থাহলে ঘরেই তৈরি করে নিন জিবে জল আনা কতবেল মাখা। আপনাদের জন্য একটু ভিন্ন স্বাদের কতবেল মাখার রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন ‘সেরা রাঁধুনি ১৪২৭’ প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় রানার্সআপ ও রন্ধনশিল্পী মরিয়ম হোসেন নূপুর।
উপকরণ
পাকা কতবেল ১টি, লেবুর রস ১ চা-চামচ, চিনি ১ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ মিহি কুচি ১টি, লবণ এক চিমটি, বিট লবণ ১ চা-চামচের ৪ ভাগের ১ ভাগ, ধনেপাতাকুচি ১ চা-চামচ, পুদিনাপাতার কুচি আধা চা-চামচ, সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ।

প্রণালি
একটি পাত্রে কতবেল ও লেবুর রস বাদে বাকি উপকরণ একসঙ্গে মেখে নিতে হবে। এরপর মসলার মিশ্রণের সঙ্গে কতবেল আর লেবুর রস দিয়ে মেখে পরিবেশন করতে হবে।

শহরের অলিগলিতে এখন কতবেল মাখা বিক্রি হচ্ছে। ঝাল বাড়িয়ে জম্পেশ করে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে প্রশ্ন থাহলে ঘরেই তৈরি করে নিন জিবে জল আনা কতবেল মাখা। আপনাদের জন্য একটু ভিন্ন স্বাদের কতবেল মাখার রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন ‘সেরা রাঁধুনি ১৪২৭’ প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় রানার্সআপ ও রন্ধনশিল্পী মরিয়ম হোসেন নূপুর।
উপকরণ
পাকা কতবেল ১টি, লেবুর রস ১ চা-চামচ, চিনি ১ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ মিহি কুচি ১টি, লবণ এক চিমটি, বিট লবণ ১ চা-চামচের ৪ ভাগের ১ ভাগ, ধনেপাতাকুচি ১ চা-চামচ, পুদিনাপাতার কুচি আধা চা-চামচ, সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ।

প্রণালি
একটি পাত্রে কতবেল ও লেবুর রস বাদে বাকি উপকরণ একসঙ্গে মেখে নিতে হবে। এরপর মসলার মিশ্রণের সঙ্গে কতবেল আর লেবুর রস দিয়ে মেখে পরিবেশন করতে হবে।

দক্ষিণ কোরিয়া সরকার আয়োজিত উৎসব ‘দেইগু কালারফুল ফেস্টিভ্যাল ২০২২’-এ অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশের তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটার। দক্ষিণ কোরিয়ার দেইগু শহরে গত ৮ থেকে ১০ জুলাই এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তুরঙ্গমীর আর্টিস্টিক ডিরেক্টর নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্ত
০৩ আগস্ট ২০২২
প্রতিবছর, অক্টোবরের শেষ শনি ও রোববার, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এই ছোট্ট নির্জন গ্রামের নৈঃশব্দ্য ভেঙে ভিড় করে বহু মানুষ। দূরদূরান্ত থেকে দেশ-বিদেশের মরিচপ্রেমীরা এখানে ভিড় করেন—বসে এক মহা মিলনমেলা। ৫৬ বছর ধরে, অর্থাৎ ১৯৬৯ সাল থেকে এমনটাই চলে আসছে। এমন জাঁকজমক আর জমজমাট আয়োজনের কেন্দ্রে আছে এই বিশেষ...
১০ ঘণ্টা আগে
যাঁরা প্রতিদিন ওয়ার্কআউট করেন, তাঁদের মনে একটা প্রশ্ন রয়েই যায়, প্রতিদিনই কি চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত? আবার কী করে চুল বাঁধলে ব্যায়ামের ফলে চুলের গোড়ায় বেশি ঘাম জমবে না, এ নিয়েও অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। আন্তর্জাতিক ‘ভোগ’ ম্যাগাজিন...
১১ ঘণ্টা আগে
তিতাস একটি নদীর নাম। এই নদীতীরে গোকর্ণ গ্রাম। এখন অবশ্য তা গোকর্ণ ঘাট নামে পরিচিত। সেই ঘাটে এসে ভিড়ল আমাদের বহনকারী বোট। তবে যাত্রার শুরুটা হয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আনন্দবাজার ঘাট থেকে। সেখান থেকে শুরু করে কুরুলিয়া নদী হয়ে আবার তিতাসে—কিছুটা শর্টকাট রাস্তা।
১৬ ঘণ্টা আগেরজত কান্তি রায়, ঢাকা

তিতাস একটি নদীর নাম। এই নদীতীরে গোকর্ণ গ্রাম। এখন অবশ্য তা গোকর্ণ ঘাট নামে পরিচিত। সেই ঘাটে এসে ভিড়ল আমাদের বহনকারী বোট। তবে যাত্রার শুরুটা হয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আনন্দবাজার ঘাট থেকে। সেখান থেকে শুরু করে কুরুলিয়া নদী হয়ে আবার তিতাসে—কিছুটা শর্টকাট রাস্তা। কুরুলিয়া নদী যেখানে তিতাসের সঙ্গে মিলিত হলো, সেটাই গোকর্ণ গ্রাম তথা এখনকার গোকর্ণ ঘাট—অদ্বৈত মল্লবর্মণের জন্মভিটা। এখন আর বস্তুগত চিহ্ন নেই, আছে স্মৃতি। শোনা গেল, তাঁর দূরসম্পর্কের এক নাতি আছেন সেখানে। আর কেউ নেই। মল্লবাবু বহু আগে তখনকার রাজধানী শহর কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন, ভাগ্যের অন্বেষণে। আমরা যেমন এখন দূরদূরান্ত থেকে রাজধানী ঢাকায় এসে ভিড় জমাই।
এখানে নদীর ওপর মস্ত প্রাচীরঘেরা গুদাম। সেটির ছোট ছোট মিনারে বসে আছে তিনটি বালক আর একটি কাক। অদ্বৈত মল্লবর্মণ একদিন সম্ভবত এই বালকদের মতোই ছিলেন—দুরন্ত। অথবা এই বালকেরাই হয়তো তাঁর কিশোর, সুবল, অনন্ত কিংবা বনমালীদের এই প্রজন্মের সংস্করণ।
কেমন ছিল অদ্বৈতের তিতাস? তিনি লিখেছেন, ‘তার কূলজোড়া জল, বুকভরা ঢেউ, প্রাণভরা উচ্ছ্বাস। স্বপ্নের ছন্দে সে বহিয়া যায়। ভোরের হাওয়ায় তার তন্দ্রা ভাঙ্গে, দিনের সূর্য তাকে তাতায়; রাতে চাঁদ ও তাঁরারা তাকে নিয়া ঘুম পাড়াইতে বসে, কিন্তু পারে না।’ বর্ষা থেকে হেমন্ত তিতাস হয়তো তেমনই থাকে। অন্তত হেমন্তের তিতাস দেখে তাই মনে হলো। কিন্তু বছরের বাকি সময় সে যক্ষ্মার রোগী—শুনেছি তার বুকে তখন গরু চরে।
গোকর্ণ ঘাট ছাড়তেই তিতাসের আকার সাগরের মতো! সঙ্গে মিশেছে হাওর। স্থানীয়দের সহায়তা ছাড়া চেনার উপায় নেই—কোনটা হাওর আর কোনটা নদী। এই বিশাল বিস্তারেই বসতি ছিল অদ্বৈত মল্লবর্মণের। নইলে তেমন নভেল লেখা যায়!
আমরা এগিয়ে চলেছি। সূর্য তখনো কুয়াশা আর মেঘের সঙ্গে লড়াই করছে। সকাল আটটাও বাজেনি। আমাদের পাড়ি দিতে হবে প্রায় ১২০ কিলোমিটার পথ। তিতাস থেকে বুড়িগঙ্গা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকার সদরঘাট। এত দীর্ঘ পথ এর আগে কখনো পাড়ি দিইনি নৌকায়। ভয়, উত্তেজনা আর রোমাঞ্চ—সব একসঙ্গে ঘিরে আছে। কারণ, সামনে পাড়ি দিতে হবে মেঘনা—দ্য গ্রেট মেঘনা!
নদীর নাম পাগলা। তিতাসের শরীর থেকে বেরিয়ে ডানে চলে গেছে। এখানে গ্রামের নাম রসুলপুর, রতনপুর ইত্যাদি। নদী থেকে আটপৌরে দৃশ্যের বাইরে গ্রাম বা শহর দেখা যায়। তার একটা মজা আছে। তবে নদীতে বসে জলজ জীবন দেখাই দস্তুর। তাই দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে চলেছি।
পাগলা নদী পেরিয়ে গেলাম। তিতাস এখানে বেশ প্রশস্ত। আমাদের উল্টো দিক থেকে অনেক নৌকা আসছে। গতিতে আমাদের পেছনে ফেলেও এগিয়ে যাচ্ছে অনেক নৌকা। তার বেশির ভাগই মালবাহী। প্রচুর কচুরিপানা। তাতে এখনো ফুল ফোটেনি। কৌতূহলী হয়ে দেখলাম, সেগুলো মূলত ঘের। মাছ ধরার প্রাকৃতিক ব্যবস্থা। ছোট ছোট নৌকায় জেলেরা সেগুলোতে মাছ ধরছে।
আমরা এগিয়ে চলেছি সদরঘাটের দিকে। ইঞ্চি ইঞ্চি করে দূরত্ব কমছে। কমলে কী হবে, এ পথ ফুরোতে সময় লাগবে পাক্কা দশ ঘণ্টা। মোবাইল ফোনের ঘড়ি দেখি—মাত্র ঘণ্টাখানেক এগিয়েছি। শোনা গেল, সামনেই মেঘনা। উত্তেজনার পারদ বাড়ল খানিক।
এই যাত্রার আয়োজন করেছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নদী রক্ষা আন্দোলনের অনন্যসাধারণ সংগঠন ‘তরী’। তাদের দাবি, পুরোনো এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌপথ আবার সচল করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে নৌপথের দৈর্ঘ্য কত কিলোমিটার? আইইউসিএনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬০ সালে দেশে নৌপথের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার। পরের তিন দশকে তা কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার কিলোমিটারে। বিআইডব্লিউটিএর তথ্য, ষাটের দশকে নদীপথের দৈর্ঘ্য ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটার। গত ছয় দশকে তা নেমে এসেছে মাত্র ৬ হাজার কিলোমিটারে। শুকনো মৌসুমে তা-ও কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩৪৭ কিলোমিটারে। তরীর দাবি, নৌপথগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে, দেশ বাঁচাতে। সেই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঢাকা থেকে ট্রেনযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সেখান থেকে নৌকাযোগে ঢাকা উদ্দেশে যাত্রা।
জায়গাটা বিশাল। চারদিকে পানি আর পানি। বাল্কহেডের সংখ্যা যেন বেড়ে গেছে হঠাৎ করে। মাছ ধরার নৌকাগুলোর আকারও বদলেছে। বোটের অভিজ্ঞরা জানালেন, আমরা মেঘনায় চলে এসেছি। অর্থাৎ তিতাস পাড়ি দেওয়া শেষ। এখন আমাদের মেঘনা পাড়ি দিতে হবে।
অথই জলে এখানে ভাসছে প্লাস্টিকের তৈরি দিকনির্দেশক। রাতে তাতে বাতি জ্বলে। বড় বড় ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে বাল্কহেডে ভরা হচ্ছে। শত শত বাল্কহেড সেই বালু নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে বিভিন্ন দিকে। বেশির ভাগের গন্তব্য ঢাকা। আমাদের বোট এগিয়ে চলেছে। মহাসড়কে যেমন বাস-ট্রাক আর ছোট ছোট ব্যক্তিগত গাড়ির সারি থাকে, এখানে বাল্ডহেডের সারিও অনেকটা তেমনই। একটার পেছনে একটা, শত শত! মাঝি দক্ষ হাতে বোট সামলে চলেছেন। মাঝে কদাচিৎ দেখা যাচ্ছে যাত্রী ও পণ্যবাহী ইঞ্জিনচালিত নৌকা আর স্পিডবোট। কোথাও ঘাটে বাঁধা দেখলাম পুরোনো এক গয়না নৌকা। একসময় এগুলো নদীপথে দাপিয়ে বেড়াত পণ্য নিয়ে। এখন সে বিগত যৌবনা।
মেঘনা এক পবিত্র নদী। বরাক উপত্যকার সুরমা ও কুশিয়ারা এক হয়ে যে প্রবাহ তৈরি করেছে, তার নাম কালনী। ভাটিতে এর নাম মেঘনা। তাতে এসে মিশেছে হিমালয়ের মানস সরোবরের জল, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র হয়ে। তারও ভাটিতে মেঘনার সঙ্গে মিলেছে পদ্মা। তারপর চলে গেছে সাগরপানে। আমরা এই পদ্মাসঙ্গমের আগেই হাতের ডানে চলে গেলাম। সেখানে দুটি নদী দুদিকে বেরিয়ে গেছে—একটি শীতলক্ষ্যা, অন্যটি ধলেশ্বরী। এখানে অসংখ্য বাল্কহেড আর মাদার ভ্যাসেলের টার্মিনাল। ধলেশ্বরী ধরে এগিয়ে গিয়ে পড়লাম বুড়িগঙ্গায়। সে পথে সদরঘাট।
টানা ১০ ঘণ্টার যাত্রা। পথে নৌকাতেই রান্না ও খাওয়া। সদরঘাটের দিকে যতই এগিয়ে চলেছি, পানির রং ততই কালো হয়ে উঠছে। বুঝতে পারছি, বহু ব্যবহারে জীর্ণ বুড়িগঙ্গা। কিন্তু নদী থেকে রাজধানী শহর দেখতে সুন্দর।

তিতাস একটি নদীর নাম। এই নদীতীরে গোকর্ণ গ্রাম। এখন অবশ্য তা গোকর্ণ ঘাট নামে পরিচিত। সেই ঘাটে এসে ভিড়ল আমাদের বহনকারী বোট। তবে যাত্রার শুরুটা হয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আনন্দবাজার ঘাট থেকে। সেখান থেকে শুরু করে কুরুলিয়া নদী হয়ে আবার তিতাসে—কিছুটা শর্টকাট রাস্তা। কুরুলিয়া নদী যেখানে তিতাসের সঙ্গে মিলিত হলো, সেটাই গোকর্ণ গ্রাম তথা এখনকার গোকর্ণ ঘাট—অদ্বৈত মল্লবর্মণের জন্মভিটা। এখন আর বস্তুগত চিহ্ন নেই, আছে স্মৃতি। শোনা গেল, তাঁর দূরসম্পর্কের এক নাতি আছেন সেখানে। আর কেউ নেই। মল্লবাবু বহু আগে তখনকার রাজধানী শহর কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন, ভাগ্যের অন্বেষণে। আমরা যেমন এখন দূরদূরান্ত থেকে রাজধানী ঢাকায় এসে ভিড় জমাই।
এখানে নদীর ওপর মস্ত প্রাচীরঘেরা গুদাম। সেটির ছোট ছোট মিনারে বসে আছে তিনটি বালক আর একটি কাক। অদ্বৈত মল্লবর্মণ একদিন সম্ভবত এই বালকদের মতোই ছিলেন—দুরন্ত। অথবা এই বালকেরাই হয়তো তাঁর কিশোর, সুবল, অনন্ত কিংবা বনমালীদের এই প্রজন্মের সংস্করণ।
কেমন ছিল অদ্বৈতের তিতাস? তিনি লিখেছেন, ‘তার কূলজোড়া জল, বুকভরা ঢেউ, প্রাণভরা উচ্ছ্বাস। স্বপ্নের ছন্দে সে বহিয়া যায়। ভোরের হাওয়ায় তার তন্দ্রা ভাঙ্গে, দিনের সূর্য তাকে তাতায়; রাতে চাঁদ ও তাঁরারা তাকে নিয়া ঘুম পাড়াইতে বসে, কিন্তু পারে না।’ বর্ষা থেকে হেমন্ত তিতাস হয়তো তেমনই থাকে। অন্তত হেমন্তের তিতাস দেখে তাই মনে হলো। কিন্তু বছরের বাকি সময় সে যক্ষ্মার রোগী—শুনেছি তার বুকে তখন গরু চরে।
গোকর্ণ ঘাট ছাড়তেই তিতাসের আকার সাগরের মতো! সঙ্গে মিশেছে হাওর। স্থানীয়দের সহায়তা ছাড়া চেনার উপায় নেই—কোনটা হাওর আর কোনটা নদী। এই বিশাল বিস্তারেই বসতি ছিল অদ্বৈত মল্লবর্মণের। নইলে তেমন নভেল লেখা যায়!
আমরা এগিয়ে চলেছি। সূর্য তখনো কুয়াশা আর মেঘের সঙ্গে লড়াই করছে। সকাল আটটাও বাজেনি। আমাদের পাড়ি দিতে হবে প্রায় ১২০ কিলোমিটার পথ। তিতাস থেকে বুড়িগঙ্গা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকার সদরঘাট। এত দীর্ঘ পথ এর আগে কখনো পাড়ি দিইনি নৌকায়। ভয়, উত্তেজনা আর রোমাঞ্চ—সব একসঙ্গে ঘিরে আছে। কারণ, সামনে পাড়ি দিতে হবে মেঘনা—দ্য গ্রেট মেঘনা!
নদীর নাম পাগলা। তিতাসের শরীর থেকে বেরিয়ে ডানে চলে গেছে। এখানে গ্রামের নাম রসুলপুর, রতনপুর ইত্যাদি। নদী থেকে আটপৌরে দৃশ্যের বাইরে গ্রাম বা শহর দেখা যায়। তার একটা মজা আছে। তবে নদীতে বসে জলজ জীবন দেখাই দস্তুর। তাই দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে চলেছি।
পাগলা নদী পেরিয়ে গেলাম। তিতাস এখানে বেশ প্রশস্ত। আমাদের উল্টো দিক থেকে অনেক নৌকা আসছে। গতিতে আমাদের পেছনে ফেলেও এগিয়ে যাচ্ছে অনেক নৌকা। তার বেশির ভাগই মালবাহী। প্রচুর কচুরিপানা। তাতে এখনো ফুল ফোটেনি। কৌতূহলী হয়ে দেখলাম, সেগুলো মূলত ঘের। মাছ ধরার প্রাকৃতিক ব্যবস্থা। ছোট ছোট নৌকায় জেলেরা সেগুলোতে মাছ ধরছে।
আমরা এগিয়ে চলেছি সদরঘাটের দিকে। ইঞ্চি ইঞ্চি করে দূরত্ব কমছে। কমলে কী হবে, এ পথ ফুরোতে সময় লাগবে পাক্কা দশ ঘণ্টা। মোবাইল ফোনের ঘড়ি দেখি—মাত্র ঘণ্টাখানেক এগিয়েছি। শোনা গেল, সামনেই মেঘনা। উত্তেজনার পারদ বাড়ল খানিক।
এই যাত্রার আয়োজন করেছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নদী রক্ষা আন্দোলনের অনন্যসাধারণ সংগঠন ‘তরী’। তাদের দাবি, পুরোনো এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌপথ আবার সচল করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে নৌপথের দৈর্ঘ্য কত কিলোমিটার? আইইউসিএনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬০ সালে দেশে নৌপথের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার। পরের তিন দশকে তা কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার কিলোমিটারে। বিআইডব্লিউটিএর তথ্য, ষাটের দশকে নদীপথের দৈর্ঘ্য ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটার। গত ছয় দশকে তা নেমে এসেছে মাত্র ৬ হাজার কিলোমিটারে। শুকনো মৌসুমে তা-ও কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩৪৭ কিলোমিটারে। তরীর দাবি, নৌপথগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে, দেশ বাঁচাতে। সেই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঢাকা থেকে ট্রেনযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সেখান থেকে নৌকাযোগে ঢাকা উদ্দেশে যাত্রা।
জায়গাটা বিশাল। চারদিকে পানি আর পানি। বাল্কহেডের সংখ্যা যেন বেড়ে গেছে হঠাৎ করে। মাছ ধরার নৌকাগুলোর আকারও বদলেছে। বোটের অভিজ্ঞরা জানালেন, আমরা মেঘনায় চলে এসেছি। অর্থাৎ তিতাস পাড়ি দেওয়া শেষ। এখন আমাদের মেঘনা পাড়ি দিতে হবে।
অথই জলে এখানে ভাসছে প্লাস্টিকের তৈরি দিকনির্দেশক। রাতে তাতে বাতি জ্বলে। বড় বড় ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে বাল্কহেডে ভরা হচ্ছে। শত শত বাল্কহেড সেই বালু নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে বিভিন্ন দিকে। বেশির ভাগের গন্তব্য ঢাকা। আমাদের বোট এগিয়ে চলেছে। মহাসড়কে যেমন বাস-ট্রাক আর ছোট ছোট ব্যক্তিগত গাড়ির সারি থাকে, এখানে বাল্ডহেডের সারিও অনেকটা তেমনই। একটার পেছনে একটা, শত শত! মাঝি দক্ষ হাতে বোট সামলে চলেছেন। মাঝে কদাচিৎ দেখা যাচ্ছে যাত্রী ও পণ্যবাহী ইঞ্জিনচালিত নৌকা আর স্পিডবোট। কোথাও ঘাটে বাঁধা দেখলাম পুরোনো এক গয়না নৌকা। একসময় এগুলো নদীপথে দাপিয়ে বেড়াত পণ্য নিয়ে। এখন সে বিগত যৌবনা।
মেঘনা এক পবিত্র নদী। বরাক উপত্যকার সুরমা ও কুশিয়ারা এক হয়ে যে প্রবাহ তৈরি করেছে, তার নাম কালনী। ভাটিতে এর নাম মেঘনা। তাতে এসে মিশেছে হিমালয়ের মানস সরোবরের জল, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র হয়ে। তারও ভাটিতে মেঘনার সঙ্গে মিলেছে পদ্মা। তারপর চলে গেছে সাগরপানে। আমরা এই পদ্মাসঙ্গমের আগেই হাতের ডানে চলে গেলাম। সেখানে দুটি নদী দুদিকে বেরিয়ে গেছে—একটি শীতলক্ষ্যা, অন্যটি ধলেশ্বরী। এখানে অসংখ্য বাল্কহেড আর মাদার ভ্যাসেলের টার্মিনাল। ধলেশ্বরী ধরে এগিয়ে গিয়ে পড়লাম বুড়িগঙ্গায়। সে পথে সদরঘাট।
টানা ১০ ঘণ্টার যাত্রা। পথে নৌকাতেই রান্না ও খাওয়া। সদরঘাটের দিকে যতই এগিয়ে চলেছি, পানির রং ততই কালো হয়ে উঠছে। বুঝতে পারছি, বহু ব্যবহারে জীর্ণ বুড়িগঙ্গা। কিন্তু নদী থেকে রাজধানী শহর দেখতে সুন্দর।

দক্ষিণ কোরিয়া সরকার আয়োজিত উৎসব ‘দেইগু কালারফুল ফেস্টিভ্যাল ২০২২’-এ অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশের তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটার। দক্ষিণ কোরিয়ার দেইগু শহরে গত ৮ থেকে ১০ জুলাই এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তুরঙ্গমীর আর্টিস্টিক ডিরেক্টর নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্ত
০৩ আগস্ট ২০২২
প্রতিবছর, অক্টোবরের শেষ শনি ও রোববার, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এই ছোট্ট নির্জন গ্রামের নৈঃশব্দ্য ভেঙে ভিড় করে বহু মানুষ। দূরদূরান্ত থেকে দেশ-বিদেশের মরিচপ্রেমীরা এখানে ভিড় করেন—বসে এক মহা মিলনমেলা। ৫৬ বছর ধরে, অর্থাৎ ১৯৬৯ সাল থেকে এমনটাই চলে আসছে। এমন জাঁকজমক আর জমজমাট আয়োজনের কেন্দ্রে আছে এই বিশেষ...
১০ ঘণ্টা আগে
যাঁরা প্রতিদিন ওয়ার্কআউট করেন, তাঁদের মনে একটা প্রশ্ন রয়েই যায়, প্রতিদিনই কি চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত? আবার কী করে চুল বাঁধলে ব্যায়ামের ফলে চুলের গোড়ায় বেশি ঘাম জমবে না, এ নিয়েও অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। আন্তর্জাতিক ‘ভোগ’ ম্যাগাজিন...
১১ ঘণ্টা আগে
শহরের অলিগলিতে এখন কতবেল মাখা বিক্রি হচ্ছে। ঝাল বাড়িয়ে জম্পেশ করে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে প্রশ্ন থাহলে ঘরেই তৈরি করে নিন জিবে জল আনা কতবেল মাখা। আপনাদের জন্য একটু ভিন্ন স্বাদের কতবেল মাখার রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন ‘সেরা রাঁধুনি ১৪২৭’ প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় রানার্সআপ...
১২ ঘণ্টা আগে